খুনী - পর্ব ০৪ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৭!!

চারদিকে আলোটা ফুরিয়ে গিয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে এমন সময় সারিকার ঘুমটা ভেঙে গেল। বেশিক্ষণ ঘুম হয় নি। তাই মাথার ভিতরে ঝিমঝিম করছে। উঠতে যাবে এমন সময় টের পেল কেউ একজন ওর পেটে আলতো করে হাত রেখে শক্ত করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। সারিকা মুখ ঘুরিয়েই চমকে উঠলো। অয়ন এই ভর সন্ধ্যায় ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে এটা সারিকার বিশ্বাসই হচ্ছে না। মানুষটা না দুপুরে ওকে খাইয়ে দিয়েই চলে গেল? আবার কখন এলো? আর কেনই এলো? 

সারিকা একটু সরে বিছানায় উঠে বসলো। প্রেগনেন্সির তৃতীয় মাস চলছে সারিকার। একটু পর পর গা গুলিয়ে আসছে। কখনো মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে। আবার কখনো প্রচন্ড রকমের খিদে লাগছে। এই মূহুর্তেও প্রচুর খিদে লেগেছে সারিকার। অয়নকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। মানুষটা ঘুমাচ্ছে যখন ঘুমাক। কখন ঘুমিয়েছে কে জানে। তার উপরে অয়নের মুখটায় ক্লান্তির ভাবটা স্পষ্ট। হয়তো কাজের প্রেশার বেড়েছে। অয়নের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে সারিকা নিচে রান্নাঘরে এলো। কাজের মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পেল না৷ তাই সারিকা নিজেই ফ্রিজে কি আছে দেখতে লাগলো। ফ্রিজে ক্রিম কেক রাখা। দেখেই এক পিস কেক বের করে ডাইনিং টেবিলে বসে আস্তে আস্তে খাওয়া ধরলো৷ 

খাওয়া শেষে কি করা যায় সেটা ভাবতেই মাথায় এলো অয়নের জন্য একটু আদা চা করলে কেমন হয়! কাজের প্রেশারে নিশ্চয়ই লোকটার মাথা ধরেছে! আদা চা হলে মন্দ হয় না। সারিকা দু- তিন কাপ মতো পানি চুলায় বসিয়ে ফ্রিজ থেকে আদা বের করে কুচিকুচি করে পানিতে দিয়ে দিলো। সাথে লবণ, চিনি, কটা এলাচ আর এক স্টিক দারচিনি। পানিটা ফুটে উঠেছে দেখে অল্প করে চা পাতা দিয়ে দিলো। চায়ের পানির রঙটা লাল হতে হতে লেবু টুকরো করে পিরিচে নিলো। আর দুটো কাপ পিরিচ নিয়ে ট্রেতে রাখলো। সুন্দর একটা রঙ এসেছে চায়ের। এই সময় চুলোটা বন্ধ করে একটু ঢেকে দিলো যাতে চায়ের পাতাগুলো নিচে বসে যায়। একটু পর ঢাকনা খুলে দুটো কাপে চা নিয়ে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো সারিকা৷ শাশুড়ি শুয়ে আছে দেখে ইতস্তত করে রুমে ঢুকলো।

-মা? জেগে আছেন?

-সারু মা? আয় আয়? কি রে হঠাৎ চা কেন? লাল চা?

-হ্যাঁ মা--। আপনাকে দিই?

-তুই করেছিস যখন দিয়ে যা---। আর কাজলকে বল একটু বিস্কিট দিয়ে যেতে---।

-ওকে তো রান্নাঘরে দেখলাম না---। আচ্ছা আমি অয়নকে চা দিয়ে এসে আপনাকে বিস্কিট দিয়ে যাচ্ছি---।

-আচ্ছা মা---।

রুমে আসতেই থমকে গেল সারিকা। কাজল মানে ওদের নতুন কাজের মেয়েটা অয়নের মুখের কাছে ঝুঁকে নিচু হয়ে আছে। অয়নের মুখটা দেখা যাচ্ছে না। সারিকার মনে হলো পায়ের নিচের মাটিটা সরে গেছে। কোনমতে এক হাতে ট্রেটা ধরে অন্য হাতে দেয়াল ধরে পড়ে যাওয়া আটকালো। একটু ধাতস্থ হয়ে আবার দরজার সামনে থেকেই বিছানার দিকে তাকালো সারিকা। এবার যা দেখলো সেটা আরো ভয়ংকর মনে হলো সারিকার কাছে। অয়ন চোখ লাল করে কাজলের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কাজলের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে অয়ন। আর মেয়েটা হাত ছোটানোর জন্য ছটফট করছে। এবার আর সহ্য করতে পারলো না সারিকা। 

-কি হচ্ছে কি এখানে?

-ম্যাডাম দেখুন না? স্যার ---। স্যার আমার হাতটা ছাড়ছেনই না--।

-অয়ন---। ছাড়ো ওকে---?

-দেখুন না ম্যাডাম---। স্যার সেদিনের মতো আজও কিসব বাজে বাজে কথা বলছিলেন--। আমি রাজি হই নি দেখে----। সেদিন রাতে রান্নাঘরেও---।

অয়ন রেগে গিয়ে কাজলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই মেয়েটা তড়িঘড়ি করে সারিকার পিছনে এসে লুকালো৷ অয়নও বিছানা থেকে উঠে এসে সারিকার সামনে দাঁড়িয়েছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে৷ সারিকা এক মনে অয়নের দিকে তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করছে৷ অয়ন কি আসলেই এমন করেছে? বউ প্রেগন্যান্ট হওয়ায় অন্য মেয়ের সান্নিধ্য এতোটাই দরকার হয়ে গেছে ওর? শেষে কিনা শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য রাত বিরেতে কাজের মেয়ের উপর----? না না।  এসব কি ভাবছে! এসব একদমই সম্ভব নয়। আর যাই হোক অয়নের চরিত্র নিয়ে সারিকার কোন সন্দেহ নেই। ছয়টা বছর ধরে এই মানুষটাকে চিনে সারিকা। বিয়ের আগেও বহুভাবে পাশে পেয়েও কখনো বাজে একটা কথাও বলে নি অয়ন। কিন্তু কাজল! একটা মেয়েই বা কেন নিজের চরিত্রে দাগ লাগাবে! কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করবে সারিকা?

সারিকা মূর্তির মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে অয়ন একটু এগিয়ে এসে সারিকার মুখটা তুলে ধরলো দুহাতে। তখনই সারিকার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

-সারু? বিশ্বাস করো আমাকে?

-নিজের চেয়েও বেশি----।

-ওকে-----।

অয়ন সারিকার হাতের ট্রে টা পাশের ওয়ারড্রবের ওপরে রেখে দিয়ে কাজলের দিকে তাকালো।

-কাজল? তুই বলতে চাচ্ছিস আমি একটু আগে তোকে জড়িয়ে ধরেছি--। ছাড়ছিলাম না? তোকে আজেবাজে প্রস্তাব দিই? কোনদিন রাতে মিসবিহেভ করেছি---। তাই তো?

-স্যার-----।

-কেন মিথ্যে কথাগুলো বলছিস? কে পাঠিয়েছি এসব বলার জন্য তোকে? সত্যি করে বল নইলে এক্ষুণি পুলিশে দিবো বলে দিলাম--।

-আমাকে কেউ--কেউ পাঠায় নি--। আর আপনি একটু আগেই তো---।

-একটু আগেই তো কি? তুই কি মনে করেছিস তুই একটা কথা বললেই সেটা সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে? এখন দেখতে পাবি কে কার সাথে কি করেছে---। ফুটেজ চেক করি---। তুমিও দেখো সারু---।

-কি-কিসের--কিসের ফুটেজ স্যার?

-তোর উপরে তো আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল--। কি নাটকটা করে কেঁদে টেঁদে বাসায় চাকরি নিলি--। তখনই ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই চুরি টুরি করে পালাবি--। তাই আমদের বেডরুমে সি সি ক্যামেরা লাগিয়েছি আমি--। সেটারই ফুটেজ---। ফুটেজ দেখে মা ই তোকে যেমন করে আদর করে বাসায় ঢুকিয়েছে তেমন করেই পুলিশে দিবে--। দাঁড়া তুই-।

-স্যার স্যার স্যার---। আমি এখনই চলে যাব--। ভুল হয়ে গেছে স্যার--। আমি বুঝতে পারি নি----।

-কে তোকে এসব করতে বলেছে বল? আমার ব্যাপারে সারুর মাথায় কেন এসব ঢুকাচ্ছিস? কি চাস কি তোরা?

-স্যার---। আমি কিছু জানি না স্যার---।

কথাটা বলেই কাজল ছুটে বেরিয়ে গেল। সারিকা পিছনে যেতে লাগলেই অয়ন ওর হাত ধরে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো।

-ওকে যেতে দাও সারু---।

-ওকে তো পুলিশে দিতে হবে---।

-দিয়েও কাজ হবে না রে--। কোন প্রুভ তো নেই।

-সি সি টিভি ফুটেজ?

-আরে ওটা তো ওর মুখ থেকে সত্যিটা বের করতে বললাম----।

-------------------------------

-সারু? তোমার মনে হয় তোমার অয়ন এমন কোন কাজ করতে পারে?

-উহু----। আমি ভিষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম অয়ন--। সরি---।

অয়ন সারিকার মুখটা মুছে আলতো করে কপালে চুমো খেল।

-তুমি কোথায় গেছো?

-খিদে পেয়েছিল--। 

-আহারে পিচ্চি বউটা---। 

-এই চা টা খাও না?

-বউ চা করেছে বুঝি?

-হুম----।

-তোমাকে না মানা করলাম রুম থেকে বেরুতে-।

-খাও না?

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সারিকাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চায়ের চুমুক দিলো অয়ন। কে ওদের দুজনের ভিতরে ভাঙন ধরাতে চাইছে বুঝতে পারছে না৷ যেই করুক না কেন তার পরের প্ল্যানিংটা কি হবে! ভাবতে ভাবতেই অয়নের মাথাটা আরো ধরছে। তবুও সারিকার দিকে মুখ ফিরিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে চা খাওয়ার মন দিলো। বাকিটা পরে ভাববে। আপাতত মেয়েটাকে সময় দিয়ে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝিগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। আবার একটা ভুল বোঝার আগেই এই কাজটা করাই বেশি জরুরি মনে হচ্ছে অয়নের। 

০৮!!

দেখতে দেখতে আরো কটা মাস কেটে গেল। সারিকা আগের চেয়ে একটু সহজ হয়েছে অয়নের সাথে। অয়নও নিজের সমস্ত সময় শুধু সারিকার জন্যই বরাদ্দ রেখেছে। বস ওকে বলে দিয়েছে আর্জেন্ট না হলে অফিসে আসতে হবে না৷ বাসায় বসেই কাজ করলে চলবে। আর মেইল করে দিবে বসের আইডিতে৷ তাই অয়নও সারিকার ঠিক ঠাক মতো দেখাশোনা করতে পারছে। মাঝে মাঝে সারিকার ডাক্তারের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে নিচ্ছে৷ আর সারাটা দিন সারিকাকে এটা ওটা করে খাওয়াচ্ছে। কিছুতেই রুমের বাইরে আসতেই দিচ্ছে না অয়ন সারিকাকে। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে সারিকা রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আর সে রাগ ভাঙাতে অয়ন সারিকার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠেছে। 

রাতে সারিকার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল অয়ন। এমন সময় কল এলো অয়নের মোবাইলে। সারিকার গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো অয়ন। কল লিস্টে ডাক্তারের নাম্বারটা কল ব্যাক করলো অয়ন। 

-হ্যালো ডক্টর? কেমন আছেন?

-আম ফাইন। আপনারা কেমন আছেন?

-জি ভালো। সারিকাও এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে। থ্যাংকস টু ইউ---।

-ওহ--। মেনশন নট মিস্টার অয়ন। শুনুন সকালে আপনার কাছে একটা পার্সেল আসবে৷ সারিকার ডায়েরিটা পাঠিয়েছি--। পড়ে দেখবেন।

-ইয়েস ডক---। আর আমার ডায়েরি?

-সেটাও জায়গা মতো পৌঁছে যাবে সকালে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে আসতেই কলিংবেল বাজলো। অয়ন দরজা খুলতেই একজন একটা প্যাকেট দিল। আর বললো ডাক্তার সাহেব পাঠিয়েছে। অয়ন রুমে এসে দেখলো সারিকা এখনো ঘুমাচ্ছে। সারিকাকে না জাগিয়ে অয়ন ডায়েরিটা নিয়ে বারান্দায় এলো। বারান্দার রকিং চেয়ারে বসে ডায়েরিটা খুললো অয়ন। অয়নের সাথে প্রথম পরিচয়ের ঘটনা, প্রথম কথা, ওদের ভালোবাসার দিনগুলো, বিয়ে সবগুলো ঘটনাই লেখা আছে সারিকার ডায়েরিতে। বিয়ের পরের ঘটনাগুলোও মন দিয়ে পড়লো অয়ন। একটা পেইজে এসে থমকে গেল অয়ন।

"জানো?
গত দুমাস পিরিয়ড মিস হচ্ছে দেখে রহিমা খালাকে দিয়ে দুটো প্রেগন্যান্সি স্টিক কিনে এনেছিলাম৷ দুটোই পজিটিভ রেজাল্ট দিয়েছে। মানে বুঝতে পারছো? আমাদের ছোট্ট গলুমলু একটা পরী আসবে। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমাকে পরীটা গিফ্ট করার জন্য। তোমাকে কতবার বলতে গেলাম। কিন্তু লজ্জা করছে। মাকে বলেছি জানো? মা কত্তো খুশি হয়েছে---।"

অয়ন ভ্রু কুঁচকে পরের লেখাটা পড়ায় মন দিলো। 

"তোমাকে বাবুটার কথা বলতে এসে যেটা শুনলাম সেটা কখনোই আশা করি নি অয়ন। বিয়ের তিনটা বছর পার হয়েছে অয়ন৷ তবু তুমি বাচ্চাটা চাও না? তোমাকে এখন আমার পরীটার কথা কি করে বলি?"

কয়েকটা পেইজ পরে আরেকটা লেখা।

"তুমি খুনী অয়ন। তুমি প্রতিটা দিন খুন করেছ আমার প্রতিটা ছোট্ট স্বপ্নের টুকরোকে। প্রতিটা দিন তোমার মধ্যে আমি আমার সন্তানের খুনীকে দেখতে পাই। দেখতে পাই নিজের সন্তানকে খুন করেও কিভাবে একজন মানুষ দিব্যি হেসে ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে সম্ভব? তোমাকেই কি পাগলের মতো ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলাম আমি? কেন করলে এমনটা অয়ন?? কি হতো আমার ছোট্ট পরীটা থাকলে? তুমি চাও নি ও আসুক দুনিয়ায়? কেন? দায়িত্ব এড়াতে? আমি নাহয় ওকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে চলে যেতাম? কেন পরীটাকে আমার থেকে দূর করে দিলে? কি দোষ ছিল আমার পরীটার? তোমাকে কখনো মাফ করবো না আমি অয়ন৷ কখনো না। পরীটা চলে গেছে। আমিও চলে যাবো। তোমার থেকে অনেক অনেক দূরে।"

মাঝখানে অনেকগুলো পৃষ্ঠা আবার খালি। এর ওর নতুন একটা লেখা ডায়েরিটায়। 

"আমি কেবল তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছের মহতাজ নই অয়ন- আমারও কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে-ভালো লাগা মন্দ লাগা আছে। আমারও মন খারাপ হয়। আমারও রাগ হয়। বিরক্ত লাগে। আমারও কষ্ট হয়-কান্না আসে। আমি তোমার ওয়াইফ হয়েছি বলে কি আমার সেসব দেখানোর কোন অধিকার নেই? স্ত্রী হয়েছি বলে তোমার প্রতিটা কথা আমার শুনতেই হবে?! আর আমার কথাটা তুমি কানেও তুলবে না-এ কেমন যুক্তি? তুমি স্বামী বলে কি সবসময় তোমার প্রভুত্ব স্বীকার করে নিবো? নিজের কোন আত্মসম্মান থাকতে নেই আমার নাকি? নিজের কোন অস্তিত্ব নেই আমার?

আরেকটা ছোট্ট চাঁদের টুকরো বাড়ছে আমার পেটে। ওর কথাটাও তোমাকে ছুটে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভয় করছে ভিষণ। ওকে হারাতে হলে মরে যাবো আমি।"

অয়ন ডায়েরিটা বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে ধরলো একবার। মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেল। তার ছোট্ট পাগলিটা কতো কথাই না মনের ভেতর চেপে রেখেছিল। কত কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা! তাও কিচ্ছু বলে নি। ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সারিকাকে প্রায় হারাতে বসেছিল সে৷ এখন বাকি কয়েকটা মাস মেয়েটা একেবারে সামলে রাখা দরকার। ডায়েরিটা নিয়ে রুমে এসে সারিকাকে না দেখে ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে দিলো। রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যাবে এমন সময় সারিকা ওয়াশরুম থেকে বের হলো ফ্রেশ হয়ে।

-আরে? সারু? তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছি আমি--।

-ইশ! নিজেই রুমে ছিল না-। হুহ। সে নাকি আমাকে খুঁজছে--। সরো তো? আমি নিচে যাবো।

-মাইর দিবো একটা---। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামার কথা ভাবলেই ঠ্যাং ভেঙে রুমে বসিয়ে দিবো বলে দিলাম---।

-উহু---। তুমি আমাকে এভাবে গৃহবন্দী করে রেখেছো কেন? নিজেকে কারাগারে বন্দী বন্দী লাগছে---।

-লাগুক--।

-আচ্ছা নিচে যাবো না--। সিঁড়ি পর্যন্ত যাই না? আর মা কি ভাবছে বলো তো? পৃথিবীতে মনে হয় খালি আমার একলাই বেবি হবে? আর কেউ যেন কখনো মা হয় নি??

-তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না পরী---। 

-তোমরা দুই বাপ বেটায় মিলে আমাকে এতো জ্বালাও কেন হ্যাঁ? একজন পেটের ভেতর ফুটবল খেলতেসে দু মিনিট পর পর--। আর একজন আমাকে বের হতেই দিচ্ছে না----।

অয়ন হাঁটু গেঁড়ে সারিকার সামনে বসে পেটে আলতো করে হাত রাখলো। বাচ্চাটাও যেন স্পর্শ টের পেয়ে নড়ে উঠলো। 

-দেখেছ? আবার?

-ওলে বাবুটা--। বাবাইয়ের ছোঁয়া চিনতে পারো? আর কয়েকটা মাস তো সোনা? তারপর বাবাই আর তুমি অনেক খেলবো--। ওকে? ---কি বলছো? মাম্মা বকবে? উমমম--। বকবে না। আমার বাবাইটাকে বকলে আমরা দুজন মিলে মাম্মাকে বকে দেবো--। কেমন?

-দুজন মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছো না? দেখাবো দুটোকেই দাঁড়াও না---।

-হা হা হা--। পাগলি একটা--। 

অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে সারিকার কপালে চুমো খেল। 

-তুমি বসো? আমি নাস্তা নিয়ে আসছি--। ওকে?

-হুম----।

অয়ন বেরিয়ে যেতে সারিকা একটা প্যাকেট বালিশের নিচ থেকে বের করলো৷ সকালে রহিমা খালা এসে বললো ডাক্তার সাহেবের একজন লোক এসে প্যাকেটটা সারিকাকে দিতে বলেছে। অয়ন রুমে ছিল না তখন। তাই প্যাকেট খুলে দেখেছে সারিকা।  অয়নের ডায়েরি পাঠিয়েছে ডাক্তার। কি করে পেল বা কেন সেটা সারিকা ভাবছে না। সারিকার ভাবনা একটাই। ডায়েরিটা পড়তে হবে। আর সেটা অয়নের আড়ালে। কিন্তু সেটা কি করে! ওই ছেলে তো এক পা ও নড়ছে না বাসা থেকে! ওকে বাসার বাইরে কি করে পাঠাবে! ভাবতেই সুপার একটা আইডিয়া পেল সারিকা। সারিকা পেটে হাত রেখে একটা শয়তানী হাসি দিলো।

-উই আর সো জিনিয়াস! কি বলিস পিচ্চু?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন