বসন্তের ফুল - পর্ব ১৪ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


২৭!!

সকালে মিষ্টি রোদ শরীরে জড়িয়ে নিচ্ছে প্রেমা।সাথে রয়েছে শীতল বাতাস। ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে সকালটা উপভোগ করছে। মনটা তার বড্ড অশান্ত।চারপাশের সবকিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে তার।

কাল মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার পর বাকিটা সময় নির্ঘুমে কাটিয়েছে প্রেমা।মনের মধ্যে এক অজানা অনুভূতিতে মরিমরি অবস্থা হয়েছিলো তার।
ঘুমানোর জন্য চোখজোড়া বন্ধ করলেই একজনের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসছিলো বারেবারে। 

"প্রেমা,(অভ্রের নানি)
" নানু, তুমি? 
"চলো নাস্তা করবা।(নানি)
প্রেমা হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে অভ্রের নানির পেঁছন পেঁছন নিচে নেমে যায়।
নাস্তার টেবিলে সকলে উপস্থিত ছিলো।অভ্র বাদে।তাই প্রেমা জিজ্ঞেস করে বসে,
" অভ্রে কোথায় আন্টি?দেখছি না! (প্রেমা)
"কি জানি একটা কাজে গিয়েছে মা,বলেনি!(অভ্রের মা মুচকি হেসে উত্তর দেয়)
 প্রেমা মাথা নিচু করে খাওয়ায় মন দেয়।একটু বাদে সবার দিকে তাকিয়ে প্রেমা আমতা আমতা করে বলে,
" দাদু,আমি বাড়ি চলে যেতে চাই,(প্রেমা)
প্রেমা কথাটা বলেই সবার দিকে তাঁকায়।অভ্রের মা কিছুক্ষণ প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন,
"কেন মা আমাদের সাথে থাকতে ভালো লাগছে না?
" না,আন্টি আসলে বাড়ির কথা মনে পরছে তাই(প্রেমা)
 "তো মা বিয়ের পর শশুর বাড়িতে গেলে কী করবে শুনি? তখন বাড়ির কথা মনে পরবে না? এখন থেকে অভ্যাস করে নাও সুবিধা হবে।(অভ্রের মা)

প্রেমা কোনো রকম ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করে।এরপর তার দাদির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে কিছু বলতে।তখনি উনি বলে উঠেন,
" তোর যাওয়ার ইচ্ছে হইলে তুই যা।আমি আরো মেলা দিন আমার বান্ধবীর সাথে কাটামো।দুজনেই একা।দুজনেরই পরাণ পাখি চইলা গেছে।শেষ কালে দুই বান্ধবী একলগেই থাকমো।ঠিক শৈশবকালে যেমনে ছিলাম। এখন থেকে ভিন্য জায়গায়ও ঘুরতে যামু আমরা।যা তুই চইলা যা।(প্রেমার দাদি)

কথাগুলো শুনে প্রেমা চোখ ছোটছোট করে তাঁকায়।এবং ভেবে নেয়। সে একাই প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাবে।
"ঠিক আছে,আমি আর প্রিয়া চলে যাবো।(প্রেমা)
মুচকি হেসে কথাটা বলে প্রেমা নাস্তায় মনোযোগ দেয়।

ফোনে কল আসতেই অভ্র থেমে যায়।ফোন বের করে দেখে তার নানির নাম্বার।
" হ্যাঁ,নানু বলো?(অভ্র)
"শুন অভ্র প্রেমা তো চলে যেতে চাইছে,কি করবো?
" আটকাও' যে কোন একটা বাহানা দিয়ে।

কথাটা বলেই অভ্র ফোনটা কেটে দেয়।সামনের দিকে এগোবে ঠিক সে সময় কারো সাথে একটা ধাক্কা খায়।
অভ্র দ্রুতগতিতে সে ব্যাক্তিতে ধরে ফেলে।
দ্রুত কন্ঠে বলে উঠে, 
"আন্টি আপনি ঠিক আছেন?(অভ্র)

কুচকুচে কালো বোরকা পরিহিতা মহিলাটি ভেজা চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।
অতৃপ্ত চোখজোড়া আজ তৃপ্তি পেয়েছে মহিলাটির।
কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,
" বাবা তোমার নাম কি?(মহিলাটি)
"জ্বি! অভ্র,(মহিলাটিকে দাড় করাতে করাতে বলে)
" বাবা আমাকে একটু বড় রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে? আমার শরীরটা বিষণ খারাপ।(মহিলাটি)
অভ্র মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।
এরপর অভ্র মহিলাটির হাত ধরে বড় রাস্তায় নিয়ে আসে।এবং একটা রিক্সা ডেকে মহিলাটিকে রিক্সায় তুলে দেয়।তখনি মহিলাটি অভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠে-
"সুখী হও বাবা! অনেক দোয়া করি।তুমি না থাকলে আমি এতোটা পথ আসতে পারতাম না।
" অভ্র মুচকি হাসি দিয়ে বলে -
"জ্বি! ভালো থাকবেন।
ঘুরে অভ্র হাঁটা দেয় নিজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।অপরদিকে মহিলাটি অভ্রের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে এবং নিঃশব্দে কেঁদে উঠে।
___________________________

সকাল গড়িয়ে এখন প্রায় দুপুর।অভ্রের বাড়ি আসার কোন নামগন্ধ নেই।প্রেমা এবার বিষণ বিরক্ত হচ্ছে।অভ্র থাকলে অভ্রের সাথে গল্প করে সময়টা কাটানো যেতো।অভ্রকে ছাড়া প্রেমার ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।
এখন রাগও হচ্ছে অভ্রের উপর প্রেমার।হুট করে না বলে ঘায়েব হওয়ায়। বাড়ি যেতে চেয়েছে তাও পারছে না।অভ্রের নানি আটকে ফেলেছে।

তাই অাদ্র এবং প্রিয়ার সাথে বসে আছে। তারা দুজনেই গেম খেলছে ওর ফোনে।আর প্রেমা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তাদের দিকে তাকিয়ে। 

শেষ বিকেলের দিকে প্রেমার ফোনে কল আসতেই ঘুম ভেঙে যায়।ফোন হাতে নিয়ে দেখে অভ্রের কল।তাই রিসিভ করে।
" প্রেমা! (অভ্র)
"হ্যাঁ অভ্র বলো,আর কোথায় তুমি? সকাল থেকে বাসায় আসোনি কেন?(এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে)
অভ্র হালকা হাসে,কিন্তু প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কথাটা বলে,
" তোমার জন্য একটা সাপ্রাইজ আছে সন্ধ্যার পর।এড্রেস সেন্ড করছি মেসেজে।চলে এসো। (অভ্র)
"আমি একা?  কীভাবে?(প্রেমা)
" না নানুর সাথে।তোমাকে এনে দিবে।(অভ্র)
"ওহ,বলছি কি দিবে বাসায় নিয়ে এসোনা আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।(প্রেমা)
প্রেমার কথাটা অভ্র শুনলেও কোনো উত্তর দেয়নি।ফোন কেটে দেয়। ফোন পকেটে রেখে,চুল হাত দিয়ে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে আলতো হেসে অভ্র বলে উঠে-
" এতোদিন আমি ছটপট করেছি।এবার তোমার পালা! ডিয়ার প্রে..মা..ভ্র!। কথাটা বলে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে শুয়ে পরে অভ্র।
_____________________

সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে প্রেমার মনটা খুশীতে বাকবাকুম। সারাদিনের উদাসীনতা কেটে যায় নিমিষেই। কিন্তু এখন বিষণ ভয় করছে তার।অভ্রের নানি হঠাৎ এমন একটা জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে যে জায়গাটা বেশ নিস্তব্ধ।কোনো মানবের চিন্হ নেই। চারোশটায় চাঁদের আলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।

"নানু,এখানে এনেছেন কেন?অভ্র কোথায়? 
" জানিনা,এখানে আসতে বলেছে আমাকে।
দুজনে চুপ মেরে যায়। একটু পর পাশে একটা নদীর দিকে চোখ যায় অভ্রের নানুর।তখনি অভ্রের নানু হেসে বলে ওইতো অভ্র আসছে।
পেঁছন ফিরে তাকায় প্রেমা।নদীতে একটা ছোট নৌকা।হালকা আলোতে অভ্রের মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।প্রেমা সেদিকে তাকানোর পর চোখ ফেরাতে পারছিলো না।প্রেমা দৃষ্টি অভ্রের অমায়িক সুন্দর চেহারাতে নিবদ্ধ।প্রেমা নিজেও মুচকি হেসে উঠে।

নৌকা থেকে অভ্র এক লাফে নেমে প্রেমার সামনে এসে দাঁড়ায়। অভ্রের চোখে মুখে আলাদা এক খুশীর চাপ দেখা যাচ্ছে। নানুর দিকে তাকিয়ে অভ্র একটা হাসি দেয়। উনিও প্রতিউত্তরে হেসে দেন,
"অল দ্যা বেস্ট,অভু! আমি আসছি তাহলে,
" আপনি কোথায় যাচ্ছেন নানু,আমাদের সাথে চলেন!
"না, তুমি আর অভ্র যাও,ফেরার সময় আমরা একসাথেই বাড়ি ফিরবো। আমার আরেকটা কাজ আছে সেটা সেরে ফেলি ততক্ষণে।তোমরা যাও,

কথাটা বলে উনি চলে যন।আর অভ্র প্রেমার হাতটা শক্ত করে ধরে।তখনি প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়। 
" চলো!(অভ্র)
"কোথায় যাবো,ওইদিকে কি? আর বেশি অন্ধকার দেখাচ্ছে।(প্রেমা)
প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে হাঁটা দেয় অভ্র।সে জানে প্রেমার প্রশ্নের ঝুড়ি থেকে প্রশ্ন কমবার নয়।

প্রেমাকে নিয়ে অভ্র নদীর কিনারায় এসে দাড়ায়। 
" পায়ের জুতা খুলে এখানে রেখে দাও।(অভ্র)
"জু....(প্রেমা)
" যেটা বলেছি করো।কোনো প্রশ্ন না করে,
অভ্রের তীক্ষ্ণ স্বরে বলা কথায় প্রেমায় দ্রুত জুতা খুলে ফেলে। আবারও অভ্র প্রেমার হাত ধরে নৌকার কাছে নিয়ে যায়।এবং প্রেমাকে নৌকায় তুলে দেয়।পেঁছন পেঁছন অভ্র ও উঠে যায়। নৌকার মধ্যে পা রাখতোই প্রেমার পায়ে সুরসুরি অনুভব হয়।সাথে সাথে প্রেমা পিছিয়ে যায়।
"কি হয়েছে? 
" অভ্র এখানে কি আছে? আমার পায়ে সুরসুরি লাগছে।
প্রেমার কথায় অভ্র শব্দ করে হেসে উঠে,
"হাকিম ভাই লাইটটা জ্বালান।
সঙ্গে সঙ্গে চার্জের লাইট জ্বালান নৌকায় থাকায় অপর ব্যাক্তিটি।প্রেমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।এখানে অভ্র বাদে আরো একজন ছিলো সে বুঝতেও পারেনি।লাইট জ্বলতেই প্রেমার প্রথম দৃষ্টি যায় নৌকার মধ্যে থাকা ফুলগুলোর দিকে।এবার প্রেমার চোখ ছানাবড়া। অবাকের স্বরে বলে উঠে,
" এত্তোফুল?? 
প্রেমা ফুলগুলোর মাঝে বসে যায়।এতোক্ষণে তার নাকে ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ্য প্রবেশ করে।নৌকা ভর্তি ফুল দেখে সে নিজেই ফুলের ঘ্রাণে মাতাল প্রায়।সব ফুলের নামও জানেনা সে।তবে চিরচেনা  ফুলগুলোর মাঝে অচেনা ফুলগুলো প্রেমার অতিথি মনে হচ্ছিলো।আমোদিত দৃষ্টি নিয়ে প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।
"এখানে যতগুলো ফুল আছে ততগুলা ধন্যবাদ তোমাকে।(প্রেমা)
অভ্র মৃদু হেসে প্রেমার সোজাসোজি বসে ফুল হাতে নিয়ে প্রেমার দিকে ছুঁড়ে মারে।অভ্রের থেকে দেখে প্রেমাও হাতে ফুল নিয়ে অভ্রের দিকে ছুড়ে মারে।পরমুহূর্তে প্রেমা শব্দ করে হেসে উঠে। প্রেমার নিষ্পাপ হাসিটাকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে অভ্র।হাসি এবং হাসির শব্দ দু'টোই সোজা অভ্রের বুকে গিয়ে লাগছে।ঘন নিঃশ্বানের মধ্যে লুপে নিচ্ছে নিজের সেই অনুভূতি গুলোকে। চাঁদের জ্বলমলে আলো এবং হাজারো ফুলের মধ্যে বসে থাকা মেয়েটিকেই সে চাই,খুব করে চাই,যতদিন পর্যন্ত নিঃশ্বাস থাকবে ততদিন পর্যন্ত চাই।

অবশেষে নৌকা এসে থামে অপর প্রান্তের কিনারায়।সিমেন্টের ঘাট থাকায় তেমন একটা অসুবিধা হয়নি উঠতে। প্রেমাকে নিয়ে অভ্র সিঁড়ির দিকে উঠতে উঠতে একবার পিছু তাঁকায়।অভ্রের হালকা ইশারা বুঝতে পেরে হাকিম ভাই মাথা নাড়ায়।

২৮!!

আকাশে মস্ত বড় চাঁদ। রাতের সৌন্দর্য্যকে হাজারগুন সৈন্দর্য্যে রুপ দেয় চাঁদনির রাত। নদীর ঘাটের উপর পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে প্রেমা আর অভ্র। প্রেমার খুব ভালো লাগছে নদী,নদীর ঘাট,এবং সঙ্গে থাকা অভ্রকেও।সেও মনকোটরে চেপে রেখে দেয় নিজের ভালোলাগার অনুভূতি।কী হবে অনিশ্চিত একটা সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে।

প্রেমার মৌনতা অভ্রের মস্তিষ্কে না না রকমের প্রশ্ন সৃষ্টি করে। সে বুঝতেও পারছে প্রেমার মনের অস্বাভাবিক কথোপকথনে। কি অদ্ভুত! 
নিঃশ্বাসের শব্দে প্রেমার মনের কথা বুঝতে সক্ষম অভ্র।
বারেবারে ভাবাই তাঁকে,আসলে কোনো কানেকশন নেই তো ওর মনের সাথে।যার সূত্রে সে প্রতিবার প্রেমার মনের অভ্যক্ত কথা বুঝতে পারে।
 
শীতল বাতাস এবং চাঁদের কিরণ,মিলে বেশ উপভোগ্য করে তুলে পরিবেশটাকে। চারপাশে কৃত্রিম আলোর কোনো ছড়াছড়ি ও নেই।একটু পর প্রেমা পাশে তাঁকাতেই দেখে অভ্র নেই।মুহুর্তে শরীরে পশম দাঁড়িয়ে যায়। চারিদিকে নিজের ভিতূ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। 

পেঁছন ফিরতেই সাদা হালকা আলো জ্বলে উঠে।এবার কিছুটা স্বস্তি ফিরে পাই।কিন্তু যেখানে আলো জ্বলছে তা ওর সন্নিকট থেকে অনেকটা দূরে। ঘাট থেকে পা নিচে রাখতেই এবার আবারও সুরসুরি অনুভব হয়।ভয়ের বদলে এবার হেসে দেয়। হাসিকে সে কোনো রকম কাবু করতে পারছে না।নরম ফুলের পাপড়ি পায়ের তলায় স্পর্শ হচ্ছে।সুতরাং এ হাসি থামার নয়।

প্রেমা দৃঢ় পায়ে এগোচ্ছে সেই হালকা আলোর দিকে নিজের গন্তব্যে স্থির করে। গন্তব্যের কাছাকাছি আসতেই মাঝখানে মাথার উপরে গাছের সাথে ঝুলানো সাদা বাল্বটা জ্বলে উঠে। 

প্রেমা দ্রুত মাথা তুলে উপরে তাকায়।উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে তাকায়।অন্ধকার; সাথে অভ্রের কোনো ছায়াও দেখা যাচ্ছেনা।এখন যেহেতু আলো জ্বলছে প্রেমার ভয় পাওয়ার কোনো কারন ও নেই।

নিচের দিকে তাকাতেই প্রেমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। নৌকায় যত ফুল ছিলো তার চেয়ে দশগুন ফুলের মাঝো সে দাড়িয়ে আছে। পুরো একটা গোল ফুলের চক্রের  মধ্যখানে প্রেমা দাঁড়ানো। 
খুশীতে আত্মহারা হয়ে যায় প্রেমা।এসব কিছুই ওর কাছে নতুন।এর আগে কারো সাথে ওর তেমনটা সম্পর্কই হয়নি যে এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দিবে।শুধুই কি বন্ধুত্বের খাতিরে এতো কিছু করছে অভ্র?প্রশ্নটা নিজমনেই করে প্রেমা।

হাঁটু মোড়ে ফুলের মাঝে বসে যায় প্রেমা আবারও।একবার ফুলের দিকে একবার নিজের দিকে তাকায়।পরনে হালকা গোলাপি রঙের থ্রি-পিছ পরা।আর মাটিতে বিছানো  হালকা গোলাপি এবং সাদা গোলাপ ফুল। বিস্ময়ের শেষ সীমান্ত।কাপড়ের সাথে ম্যাচ করে কিভাবে এই ফুলের সন্ধ্যান পেয়েছে সে।আর সাদা গোলাপ? হাতে নিয়ে প্রেমার মনে পরে অভ্রের গায়ের শার্টটাও সাদা ছিলো। উত্তেজনায় নিজের ঠোঁট আপনা-আপনি হা হয়ে যায় প্রেমার।অভ্র কী করতে চাইছে তার কূলকিনারা ও সে ভেবে পাচ্ছে না।

ফুল থেকে চোখ সরলেই প্রেমার অনুভব করে ওর সামনে কেউ বসে আছে।চট করে মাথা তুলে তাকায়।দেখে অভ্রও ওর মতো হাঁটু মোড়ে সামনা-সামনি বসে আছে। আকর্ষনিয় লাল অধরজোড়ায় আগের ন্যায় মৃদু হাসি ঝুলানো। আচমকা প্রেমার চোখ যায় অভ্রের বুকের দিকে। শার্টের দু'টো বোতাম খুলা।লোমহীন বুক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সাথে সাথ চোখ সরিয়ে ফেলে। নিজের মধ্যে অদ্ভুত কাঁপুনি অনুুুুভব করছে সে।কোনো রকম ঠোঁট টেনে মুচকি হাসি দেয় প্রেমা।

"অভ অভ্র! এতো ফুল কোথায় থেকে আন আনিয়েছো?(প্রেমা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে)
প্রেমার কন্ঠনালী শুকিয়ে যাচ্ছিলো বারবার।প্রেমার গলায় আজ অন্যরকম সূর শুনে অভ্র হাসে।
" জেনে কি করবে? (অভ্র)
প্রেমা অভ্রের পাল্টা প্রশ্নের উত্তর কী দিবে ভেবে পাই না। তাই কথা অন্যদিকে ঘুরায়। 
"আমি বাড়ি যাবো অভ্র। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(আল্লাহ কেন যে আসলাম।ভয় করছে খুব)
প্রেমা মনেমনে কথাটা বলে আশেপাশে তাকাতে শুরু করে।
" পালানোর পথ খুঁজছো নাকি?(অভ্র)
এবার প্রেমা বিস্ফোরিত চোখে অভ্রের দিকে তাঁকায়।
"আসলেই আমি পালানোর পথ খুঁজছি।(প্রেমা)
" তাহলে??(অভ্র)
"না মানে এমনি,বলছি যে,আসলে কিছু না!(প্রেমা)
 ব্যস্ত গলায় বলে উঠে কথাগুলো,এরপর নিজেই তব্দা খেয়ে যায়। 

" জানো প্রেমা, আমি কখনো কোনো মেয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলিনি,সেই তোমার সাথেই  হাজারও কথা বলেছি,বকবক করেছি।কোনো মেয়ে কে নিজের সামনে দেখলেই বারবার বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে যেতো আমার। কিন্তু তোমার দিকে বারবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।একটু নয় তীব্র ইচ্ছে এটা। মেয়েদের সাথে সবসময় দূরত্ব রেখে চলেছি।কিন্তু তোমার হাত অনেকবার ধরেছি,এবং জড়িয়েও ধরেছি। হ্যাঁ,আমার প্রেমাকে আমি ধরবোই।"

অভ্র কথাগুলো বলার সময় নিজের সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রেমার দিকেই ছিলো। আর প্রেমা অভ্রের প্রতিটা বাক্যের অর্থ উদ্ধার কাজেই ব্যস্ত ছিলো এতক্ষণ। কথাগুলো অদ্ভুদ ভাবে ওর শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছিলো।কান গরম হয়ে যাচ্ছিলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।অভ্রের কথাগুলো কেন বলেছে তাও পাল্টা প্রশ্নে জিজ্ঞেস করার শক্তিও অবশিষ্ট নেয় তার।আশ্চর্যের বিষয় প্রেমার সামাম্য রাগ ও হয়নি।বরং প্রতিটা কথায়  অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো। প্রেমা নিজেও অভ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতোটা সময়। তবুও কথার মানে বুঝে উঠতে পারেনি।
আচমকা প্রেমা উঠে যেতে নিলেই অভ্র প্রেমার হাত ধরে ফেলে। টেনে আবারও ওর মুখোমুখি বসায়। প্রেমা তখন আর অভ্রের দিকে দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস পাচ্ছিলো না।অজানা অনুভূতিতে নুইয়ে যাচ্ছিলো সে।কিন্তু লাগামহীন চোখ বারবার অভ্রকে দেখতে চাইছিলো।তাই চোখ বন্ধ করে ফেলে।

একটু পর হাতের বাঁধন আলগা হয়ে যায়। তাই প্রেমা চোখ খুলে তাঁকায়। দেখে অভ্র পাশ থেকে ফুল সরিয়ে একটা সাদা পেপার মোড়ানো বড় বাক্স বের করে। এবং বাক্সটা অভ্র প্রেমার সামনে রাখে। একরাশ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।কিন্তু অভ্র তখন আর প্রেমার দিকে তাঁকায়নি।দৃষ্টি সোজা বাক্সটির উপরে ছিলো। কি আছে এতে? সেটা জানার প্রবল ইচ্ছে জাগে প্রেমার মনে।

"খুলো বাক্সটা। (অভ্র)
" ক কী আছে এতে? তুমি খুলো।(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র চোখ তুলে তাকায়। সে দৃষ্টি দেখে প্রেমা দ্রুত বাক্স খুলতে শুরু করে।অভ্রের দৃষ্টিতে কোনো রাগ ছিলোনা।তবুও প্রেমা ভয় পেয়ে যায়। আলতো হাসে অভ্র।এরপর কী হতে পারে সে সম্পর্কে ওর পুরোপুরি ধারনা আছে।তাই মৌন থেকে প্রেমাকে দেখে যাচ্ছে সে।
প্রেমা কাঁপা হাতে বাক্সটি খুলতে লাগে।খুলা শেষ হলেই অভ্রের দিকে তাঁকায়। অভ্র তখনো কোনো কথা না বলে প্রেমাকে দেখছিলো। চোখ দিয়ে ইশারা করে।

প্রেমা কাঁপা হাতে বাক্সটির উপরের ঢালটা সরায়।ভ্রু আপনা-আপনি কু্ঁচকে যায় ওর। বাক্সটিতে অনেকগুলো ছবির পেছনের সাদা অংশ দেখা যাচ্ছে।তাই ছবি গুলো দেখার জন্যে সে হাতো নেয়। একটা ছবির দিকে তাঁকাতেই প্রেমা ভয়ংকর ভাবে কেঁপে উঠে।স্পন্দনের গতি যেনো পাহাড়ের তুঙে পৌঁছায়।
সাথে সাথে বাক্সের সব ছবি বের করে ফুলের উপর রাখে।সব গুলো ছবি দ্রুত হাতে দেখতে শুরু করে।সব তো ওরই ছবি।কিন্তু অভ্রের কাছে কিভাবে এসেছে? প্রশ্নটা মনে আসতেই ক্ষ্রীপ্তগতিতে অভ্রের দিকে তাঁকায়। দেখে অভ্র মিটিমিটি হাসছে।

এবার প্রেমার মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছেনা।অভ্রকেই বা কী জিজ্ঞেস করবে তা নিয়ে চিন্তায় মাথা ব্যথা শুরু করে দেয় প্রেমার।উত্তেজনা এবং ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম পরতে শুরু করছে তার।কিন্তু অভ্র স্বাভাবিক ভঙিতেই বসে মিটিমিটি হাসছে।ওর মধ্যে ডর ভয়ের ছিঁটেফুটাও দেখা যাচ্ছেনা।প্রেমাকে আরেকটু দেখে নেয় অভ্র।প্রেমার চোখেমুখে ঘাম দেখে ঘার বাঁকা করে ডানপাশে তাঁকায়। এরপর প্রেমার আরো কাছে গিয়ে চুলের কাটাটা নিয়ে নেয়।সাথে সাথে শাঁ শাঁ শব্দ করে বাতাস আসতে শুরু করে। মুহুর্তে এমন কান্ডে প্রেমা হকচকিয়ে যায়।এবং আশেপাশে তাকায়।বাতাসের সেই উৎসটা ওর নজরে আসেনি।
প্রেমার কাটাটা অভ্র প্রেমার উরনার সাথে আটকে দেয়।
এরপর নিজের এলোমেলো চুল ঠিক করে নেয়।

"তুমি যদি চাও এসব ছবি আমি তোমার জন্য বড় ফ্রেমে বাঁধিয়ে দিতে পারি।আমার জন্যে অবশ্যই বাঁধবো তবে এখন না।এগুলোর সাথে আরো ছবি এড করে।" (অভ্র)

"মানে?? (ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করে)

" এখনো বুঝতে পারোনি? আসলেই পারোনি?। 

প্রেমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।মনে প্রানে চাইছে যাতে ওর ভাবনাটা সত্যিতে রুপ না নিক।ওর মনে বিশ্বাস করাতে চাইছে যে অভ্র এসব করেনি।অভ্র এসব করতেই পারেনা।নতজানু হয়ে মনেমনে বলে যাচ্ছে প্রেমা।প্রেমার অবস্থায় দেখে অভ্র হাসে।

"হ্যাঁ,আমিই করেছি সব প্রেমা,কলেজের " বসন্ত বরণ" উৎসব থেকে শুরু করে দু'বছর ধরে যা হয়েছে সব আমিই করেছি। তোমাকে ফুল,এবং ফুলের টব দেওয়া,রোজ ছবি তুলা,মেসেঞ্জারের সেই মেসেজ সব আমি দিয়েছি,"আমি!
ইনফ্যাক্ট তোমার তিনটে বিয়ে আমিই ভেঙেছি।বলতে গেলে তোমার সাথে যা হয়েছে এতোদিন সব আমি করেছি।(অভ্র কথাগুলো বলে একটা শ্বাস নেয়)

অভ্রের কথায় প্রেমা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।ক্ষ্রীপ্তগতিতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এবং দু পা পিছিয়ে যায়।বিশ্বাস করতে পারছে না প্রেমা, যে এতোদিন অভ্রই ওর সাথে এসব করেছে।ওর তিন তিন বার বিয়ে ভাঙার পেছনেও অভ্রের হাত ছিলো।ভাবতেও অবাক হচ্ছে প্রেমা যে অভ্রকে সে এতোদিন ভালো মনে করে এসেছে।সেই আজ ওর বিশ্বাস ভেঙেছে।গলায় কাটা আটকে আছে মনে হচ্ছে ওর।চোখমুখ জ্বলতে শুরু করছে।অভ্রের প্রতি সব ভালোলাগ এখন মাটিতে মিশে গিয়েছে। ইতিমধ্যে আষাঢ়ের বৃষ্টি হানা দিয়ে উঠে প্রেমার চোখে।তীক্ষ্ণ শ্বাস টেনে নিচ্ছে নিজের মধ্যে।খুব করে চাইছে অভ্রের প্রতি ওর রাগ হোক। কি নিষ্টুর সময়রটা।কোনো মতেই প্রেমার মনের মধ্যেই রাগ সৃষ্টি হচ্ছেনা।তবে কী রাগের ঊর্ধ্বে সে অনুভূতি দখল করে নিয়েছে তার মনেজুরে।অভ্রই ওকে দুর্বল করে দিয়েছে।

শরীরে আর অবশিষ্ট শক্তি নেয় প্রেমার।ঠায় দাড়িয়ে বিনাবাক্যে কেঁদে চলেছে সে। এমন একটা সময়ের মুখোমুখি হবে জানলে হয়তো সে কখনো অভ্রদের বাড়িতে আসতো না।অভ্র এবার প্রেমার দিকে এগিয়ে আসে। মাঝপথে দাঁড়িয়ে যায়। প্রেমার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়ায়। প্রেমা নিজেকে সামলায়।কষ্ট করেই।মনের মধ্যে সাহস এবং ক্রোধ নিয়ে প্রেমা অভ্রের দিকে এগিয়ে আসে। মনের মধ্যে অনেক কথা তৈরি করে ফেলেছে কিন্তু মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে পারছেনা।
" কে কেন করেছো এমনটা?(কান্না মিশ্রত কন্ঠে) 

প্রেমাকে কাঁদতে এই প্রথম দেখছে অভ্র। পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে প্রেমার।ঠোঁট কামড়ে কাঁদার দৃশ্যটা দেখেই পাগল হয়ে যাচ্ছে।প্রেমার এই সৌন্দর্য অভ্রের চোখে এসে বারবার ঠেকছে। 
প্রেমার করা প্রশ্ন তার কান অবধি পৌছাইনি।অভ্র নিজেই বলে বসলো-
"কাঁদলে তোমাকে এতো সুন্দরী লাগে জানলে,আমি তোমাকে আরো আগে কাঁদাতাম।যাইহোক এবার থেকে চেষ্টা করবো তোমাকে কাঁদানো।(অভ্র)

পকেট থেকে রুমাল বের অভ্র প্রমার দিকে এগিয়ে দেয়।প্রেমা সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
তাই অভ্র নিজে প্রেমার আরো কাছে যায়।চোখ মুছার জন্য হাত তুলতেই।প্রেমা অভ্রের হাতটা ধরে ফেলে।চোখ গরম করে তাঁকায়।

" খবরদার,এ সাহস আর দ্বিতীয় বার দেখাবে না।টকবাজ কোথাকার।(প্রেমা হুংকার দিয়ে বলে)

প্রেমার হুংকারে অভ্র হেসে দেয়।সে চাই প্রেমা ওর সাথে রাগ করুক।চেঁচামেচি করুক।কারন ও যা করেছে তার জন্য প্রেমার রাগ স্বাভাবিক। 

"সব তো বলেছি,তবুও টকবাজ? (অভ্র)
" এখন বলে লাভ কী? যা করার তো করেছো।বিশ্বাসঘাতক।(প্রেমা)
"আচ্ছা তাহলে তো তোমার ভাই আর ভাবিও সমান দোষী। তারা তো জানতো সব,বলেনি কেন তোমাকে?
" মানে?  কি বলতে চাইছো?(প্রেমা)
"তোমার ভাইয়ের নাম কী যেনো? হ্যাঁ মনে পরেছে পিয়াস! সে যদি তোমাকে আমার থেকে দূর করার জন্য মরিয়া না হতো।এতোদিনে আমি তোমাকে সব বলে দিতাম।(অভ্র)
" আমার ভাইয়ের নামে আজেবাজে বলবে না একদম?সবাইকে নিজের মতো ভাবা বন্ধ করো।(দাঁত কটমট করে বলে উঠে প্রেমা)
এবার অভ্র প্রেমার চুল কানে গুজে দেয়।এবং বলে উঠে-"
 আমি আজেবাজে বকছি না।আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরানোর জন্য তোমার ভাইয়া পরপর তিনটে বিয়ে ঠিক করেছিলো তোমার জন্য।কিন্তু আমি থাকতে এটা ইম্পসিবল। তিনজনকেই পিটিয়ে হসপিটাল ভর্তি করে দিয়েছি।মজার বিষয় কী জানো? ওরা মার খাওয়ার পর তিনজনের পরিবার বলেছিলো তিনজনেই নাকি মারা গিয়েছে,যেটা আমি ওদের বলতে বাধ্য করেছি।তারা তো মরেনি বরং উল্টো গ্রাম ছাড়া করেছি। (অভ্র)
প্রেমা এতক্ষণ রাগ না হলেও,এবার রাগে ফোঁসফোঁস করে বলে-
"বারবার কিসব আমার তোমার করছো।তুমি কেমন জানা হয়ে গেছে আমার।দয়া করে চুপ করো। নিজের কুকর্মের কথা আমাকে আর বলতে এসো না।তোমার মুখ ও আমি দেখতে চাই না।(প্রেমা)

কথাগুলো বলে প্রেমা পেঁছন ফিরে চলে যাওয়ার জন্য।চোখের পানি লুকানো চেষ্টায় মত্ত প্রেমা। অভ্রকে এতোগুলো কথা বলায় সে নিজেও কষ্ট মরে যাচ্ছে।
" নিশ্চয় কালোজাদু করেছে এই ছেলে,আমি কেন পারলাম না আরো কটু কথা বলতে।কেন কষ্ট হচ্ছে আমার।(মনেমনে বলছে প্রেমা)

"হেই! নৌকা নেই কিভাবে যাবে? (অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা থেমে যায়।যতোই  পালাতে চাচ্ছে ততই অভ্র ওকে আঁকড়ে ধরছে।পেঁছন ফিরতেই দেখে অভ্র ওর সামনে দাড়ানো।ভয় পেয়ে যায় প্রেমা।এই ছেলে ভূত-টূত নয়তো? 

" আমি জানতাম,তুমি ঢং দেখাবে,তাই নৌকাওয়ালাকে বলেছি চলে যেতে।এখন এখান থেকে তুমি আমাকে ছাড়া বের হতে পারবে না।কারন এখান থেকে বের হওয়ার পথ শুধু আমিই জানি।(অভ্র)

প্রেমা এবার আশেপাশে তাকায়।এখন ওর এখানের থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।অভ্রের সামনে তো না-ই।যদি আরো দুর্বল হয়ে যায় অভ্রের প্রতি।
তাই মৃদু স্বরে বলে উঠে-
"আমি বাড়ি যেতে চাই।(প্রেমা)
" তো যাও আমাকে বলছো কেন?(অভ্র,)
অভ্রের এমন কথায় প্রেমা তব্দা খেয়ে যায়।কিছু তার আগেই অভ্র প্রেমাকে রেখে হাঁটা দেয়।এবং মিটিমিটি হাসছে।অভ্রকে হাঁটতে দেখে প্রেমাও অভ্রের পেঁছন পেঁছন হাঁটতে শুরু করে।

ঘন জঙ্গল এবং গাছ-গাছালির মধ্যে দিয়ে হেঁটে প্রায় ২০ মিনিট পর তারা বড় রাস্তায় এসে পৌঁছায়। রাস্তায় দেখে প্রেমা অবাক হয়ে যায়। গাড়ি কাছাকাছি আসতেই অভ্রের নানু বের হয়ে আসে।
"এসেছো তোমরা? (নানু)
" প্রেমা চুপচাপ মাথা নাড়ায়।সে বুঝতে পেরেছে এই নানুটাও সব জানে।প্রেমা আর অভ্রের নানু দুজনে গাড়িতে বসে যায়।
"কি তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? বাড়ি চল?(নানু)
" তোমরা যাও আমি আ বাড়ি ফিরবো না।(অভ্র)
অভ্রের কথাটা শুনার সাথে সাথে প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।বারবার অবাক হচ্ছে।এতো কথা বলেছে তবুও অভ্র স্বাভাবিক ব্যাবহার করছে।
গাড়ি স্টার্ট দিতেই প্রেমা অভ্রকে দেখার জন্য জানালার দিয়ে তাকায়।কিন্তু অভ্র আর প্রেমার দিকে তাকায়নি।ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।যা প্রেমার রাগকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

কাঁধে কারো স্পর্শ ফেতেই ঘাড় বাঁকা করে তাকায় অভ্র। দেখে সাইকান দাঁড়ানো।
"এরপর কি করবি অভ্র।(সাইকান)
সাইকানের কথাটা শুনার পর অভ্র ফোনের দিকে তাকায়। প্রেমার ছবির দিকে। আজ সাইকান কে দিয়ে তুলিয়েছিলো। এরপর একটু হেসে বলে,
" এবার আমি আর কিছু করবো না,যা করার........।
"সত্যিই তুই অনেক ধৈর্যশীল মানুষ।
তোর জয় অনিবার্য। "
সাইকানের কথা শেষ হতেই অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।দুজনে দুজনের প্রাণভোমরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন