১৩!!
-এই ভোর পাখি? আর কতোক্ষণ আমার বুকের মাঝেই লুকিয়ে থাকবি? তুই এভাবে বুকের মধ্যে ঘাপটি মেরে মুখ লুকিয়ে রাখলে তো আমার বেহায়া ইচ্ছেগুলো আরো বেশি আস্কারা পেয়ে যাবে। তখন তো আরো পাগলের মতো তোকে নিজের করে পেতে ইচ্ছে হবে রে ভোরপাখি। তখন তো আবার বলবি রোদ ছেলেটা ভিষণ খারাপ! উঁহু! সেটা তো হবে না। ওঠ বলছি। ভোর? উঠবি নাকি-----?
কানের কাছে ফিসফিসে কণ্ঠে কথাগুলো শুনে ভোর ঘুমের ঘোরের মধ্যেই লাফিয়ে উঠে বসলো। কোনোমতে দু হাতে চোখ ডলে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করলো চোখ থেকে। ঘুম কাটানোর আগেই রোদের দিকে চোখ পড়তেই থতমত খেয়ে গেল ভোর। ও তো পড়ছিল! তাহলে রোদের বুকে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে গেল কি করে! আর রোদও তো এখনো ঘুমিয়েই আছে! তাহলে ডাকলো কে! নাকি সবটাই ভোরের মনের ভুল! ভোর কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটু এগিয়ে এসে রোদের মুখের কাছে এসে বোঝার চেষ্টা করলো রোদ আসলেই ঘুমিয়ে আছে কিনা। রোদ ঘুমিয়ে আছে বুঝতে পেরে সরে আসার আগেই রোদের দু হাতের বাঁধনে আটকা পড়লো ভোর। ভোর ভ্রু কুঁচকে রোদের বুক থেকে মুখটা বের করে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের।
-বাহ! আমার ভোরপাখিটা তো দেখছি লক্ষী মেয়ে হয়ে গেছে! এতোক্ষণ ধরে পড়ছিলি! বাব্বাহ! গিফ্টটা দেখছি তোর সত্যি সত্যিই পাওনা রে ভোর----।
-না মানে---। আসলে----।
-অনেক আসলে নকলে হয়েছে ম্যাডাম। অনেক পড়ালেখা হলো। এখন রেস্ট করুন কিছুক্ষণ। আর আমার বুকে চুপ করে লুকিয়ে থাকুন। এ কি! মাথা সরাচ্ছিস কেন ভোর?
-অনেকক্ষণ তো ঘুমিয়েছ! এবার ওঠো না? আর কত ঘুমাবে?
-হুম। কথাটা ঠিক বলেছিস। এতো ঘুম পাচ্ছে কেন আজকে বল তো? তোর ঘ্রাণ নাকে লাগতেই চোখ মেলা ভার হয়েছে আমার। কি মেখেছিস গায়ে? নাকি বশীকরণ মন্ত্র শিখছিস? যাতে আমি না যাই? কোনটা?
-দুনিয়ার সব অদ্ভুত কথা তোমার কাছে না? ওঠো বলছি ওঠো?
-আরে! তাড়িয়ে দিচ্ছিস তো? ঠিক আছে--আমি চলেই যাবো। এক্ষুণি চলে যাবো। এবার তুই কাঁদলেও থাকবো না।
-তাই নাকি? চলে যাবে? যাও না। কে ধরে রেখেছে!
-সত্যিই যাবো?
-মিথ্যে মিথ্যি যায় কি করে? আর এই শোনো না? যাওয়ার আগে তোমার বন্ধুকে বলে যেও কেমন? উনি যেন মাঝেমাঝে আমাদের বাসায় আসে--। তুমি তো আসবে না তাহলে----।
-বন্ধু! কার কথা বলছিস?
-ওই যে! কি যেন নাম! সুন্দর করে লম্বা ভাইয়াটা! উমমম। কোঁকড়া চুলওয়ালা..। ইশ! কি সুইট দেখতে! আমার তো ভিষণ পছন্দ হয়েছে জানো!
-মেঘ! মেঘকে কেন আসতে বলবো! তাও এই বাসায়?
-ওমা! এতো সুন্দর দেখতে একটা ছেলেকে দেখতেও সুখ সুখ লাগে না? নামটাও কি সুন্দর! মেঘ---! ইশ!
ভোরের দুষ্টু হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রোদ দাঁতে দাঁত চেপে এতোক্ষণ নিজের রাগটা হজম করে নিলেও এবারে তার ধৈর্য্যের বাঁধটা ভেঙ্গে গেল। ভোরকে বিছানায় ফেলে দু হাতে ভোরের হাত চেপে ধরে রাগী চোখে তাকালো রোদ। ভোরের ঠোঁটের কোণে এখনো আগের দুষ্টু হাসিটা খেলা করছে দেখেও রোদ সামলাতে পারছে না। তাতে ভোর অবশ্য একটুও ভয় পেল বলে মনে হলো না।
-এবারে কিন্তু তুই একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস ভোর। তোর সাহস হয় কি করে আমার বুকে থেকে তুই অন্য কারো কথা বলছিস? হ্যাঁ? খুব সাহস হয়েছে না তোর?
-আমি কি ভিতু নাকি? তুমিই বলো মেঘ ভাইয়া কতো সুইট না? কোঁকড়া ছাঁকড়া চুল। তার উপরে কাল যে কালো শার্টটা পড়লো সেটায় তো-----।
ভোরের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই রোদ ভোরের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভোরকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। রোদ একটু পরেই সরে এসে ভোরের মুখে দিকে তাকিয়ে ভোরের গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিলো। ভোর ভয় পেয়ে চোখ বুজে নিলেও ঠোঁটের কোণের হাসিটা ঠিকই ঝুলে আছে। রোদ এবারে একটু এগিয়ে এসে ভোরের ঠোঁটে ছোট্ট করে একটা আদরের চুমো এঁকে দিয়ে ভোরের বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ভোর রোদের বাঁধন আলগা হতেই পিটপিট করে তাকিয়ে রোদকে দেখার চেষ্টা করতেই রোদ হাত বাড়িয়ে ভোরকে বুকে টেনে নিলো।
-কেন রাগাতে চাইছিস আমাকে ভোর? তুই আমাকে এভাবে কেন যন্ত্রণা দিচ্ছিস বল তো ভোর? আমার বুকে শুয়ে থেকে তুই কিনা----। দুষ্টুমি করে হলেও কথাগুলো বলতে একবারও বুক কাঁপছে না তোর?
-না। কাঁপছে না।
-আচ্ছা? তোর বুঝি মেঘকে খুব ভালো লাগে?
-উমমম। এখনো তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু ধরো--তুমি দু তিন বছর থাকবে না যখন, তখন তো আমার তোমার কথা খুব মনে পড়বে। আর তখন ধরো যদি মেঘ ভাইয়া আমাকে এসে মন খারাপ করতে বারণ করে, আমার মন ভালো করার জন্য ধরো----।
-তুই থামবি ভোর? যা বলার সোজাসুজি বল। এতো ধরতে পারবো না।
-বলছি তখন তো মেঘ ভাইয়ার সাথে আমার ভালো ফ্রেন্ডশিপ হতে পারে তাই না? বা অন্য কারো সাথে---। তো তারপর ধরো সে একদিন আমাকে প্রপোজ করে বসলে? তখন আমি কি জবাব দিবো বলো তো?
-কি! আমি এখনো জ্বলজ্যান্ত তোর সামনে বসে আছি, আর তুই কে কবে কখন তোকে প্রপোজ করবে সেসব ভাবছিস!
-ওমা! এতোদিন তো তুমি আমার সব খেয়াল রেখেছ। কে কখন আমার দিকে তাকিয়েছে স্কুল থেকে আসার সময় সেটা তুমি সবার আগেই জেনে গেছ। এমন কি আমি জানার আগেই তুমি জেনে গেছ। এখন তো তুমি থাকবে না, আর আমিও সামনে কলেজে উঠবো। তখন তো------।
-আমি না থাকলেও তোর প্রত্যেকটা কাজের হিসেব আমার কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে ভোর----।
-পৌঁছে গেলেও হুট করে তো চলে আসতে পারবে না এখনের মতো। আমি যদি ভয় পেয়ে কাঁদি, তুমি কি আমাকে এমন শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার কান্না থামাতে পারবে বলো?
-কি বলতে চাইছিস বল তো?
-বলছি যে এর চেয়ে না গেলে হয় না? তুমি আমাকে ডেইলি কলেজে দিয়ে আসবে। কেউ আমাকে তাহলে তোমার থেকে চুরিও করতে পারবে না। তুমি গেলে যদি কেউ তোমার ভোরকে চুরি করে নিয়ে যায় তখন?
ভোরের এতোক্ষণের উদ্ভট কথাবার্তার মানে এতোক্ষণে রোদের মাথায় ঢুকলো। ভোরের কথাগুলোর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে এবারে রোদ হেসে উঠে ভোরকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো। ভোরও শোয়া থেকে উঠে বসে রোদের হাসিমুখটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-হাসছ কেন এভাবে? আমি কি হাসির কথা বলেছি তোমাকে?
-হাসির কথা নয়? কয়টা বছরের জন্য চোখের আড়াল হলেই যার চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তাকে কি আর পাহারা দিয়ে আগলে রাখা যায় বল? নাকি জোর করে আটকে রাখা যায়? যার থাকার ইচ্ছে আছে ভালোবাসা থাকলে সে কয়েক যুগও অপেক্ষা করে থাকবে, আর থাকারই নয় সে চোখের আড়াল হলেই অন্য কারো হয়ে যাবে। বুঝলি? এসব ছোটোখাটো কারণে যাওয়াটা ক্যানসেল করাটা ঠিক হবে না।
-এসব তোমার কাছে ছোটোখাটো কারণ মনে হচ্ছে তোমার কাছে? আমি যে এতো করে বলছি তবুও তুমি যাবেই?
-তুই তো আমি কেন যাবো না সেই কারণটাই বলতে পারছিস না। বলতে পারলে হয়তো নাও যেতে পারি। আরো পাঁচ ছয়দিন সময় আছে। ভাবতে থাক।
-কি ভাববো?
-আমি কেন যাবো না বা আমার কেন যাওয়া উচিত না।
-আমি মানা করছি তাই যাবে না।
-এহ! কি আমার মহারাণী এসেছেন রে! আপনি বলবেন আর আমি যাবো না? মগেরমুল্লুক আর কি!
-রোদ ভাইয়া? আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি।তুমি গেলে কিন্তু আমি----।
-বহু বকবক করেছিস। এখন একটু রেস্ট নে ভোরপাখি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ততক্ষণ ভাবতে থাক কি বলা যায়---।
-কোথায় যাচ্ছ?
-আমার রুমে। তুই ভাবতে থাক। আমি এক্ষুণি আসছি।
ভোরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ বেরিয়ে গেছে ভোরের রুম ছেড়ে। রুম থেকে বেরিয়েই রোদ আর নিজের হাসিটা আটকাতে পারলো না। কি মনে হতে রোদ একবার ভোরের রুমের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো ভোর একমনে কিছু ভাবছে। পাগলিটার চিন্তিত মুখটা দেখে রোদের আজ প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করছে। রোদ নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে তখনো হাসছে। পাগলিটা ওকে আটকাতে আর কি কি অদ্ভুত কান্ড করবে দেখতে ইচ্ছে করছে রোদের। ভোরের পাগলামির কথা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে এসে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে রোদ। নিজের মনেই কিছু কথা আওড়ে যাচ্ছে রোদ।
"দুনিয়ার যত অদ্ভুত যুক্তি খেলা করে যাচ্ছে তোর মাথায় ভোর। শুধু যে কথাটা শোনার জন্য আমি অধীর হয়ে বসে আছি সেটাই বলতে পারছিস না তুই। কেন একবার আমাকে জাপটে ধরে বলছিস না, রোদ তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। যেও না। তাহলেই তো পৃথিবীর আর কোনো শক্তি তোর থেকে আমাকে দূরে সরাতে পারবে না। কাজের কথা তো সহজে বলবি না। বলবি তো দুনিয়ার উদ্ভট যত কথাবার্তা। আমার ভোরকে নাকি কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে! পাগলি রে! তুই কি জানিস আমার নামের মোহর তোর আদুরে শরীরে বহু আগেই আঁকা হয়ে গেছে? দুটো নাম মিলেমিশে আজ এতোগুলো বছর পর যে ভালোবাসার নতুন বীজ হয়ে একটু একটু করে কুঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে সেটা কি জানিস? এখন শুধু আমার অপেক্ষার পালা কবে সেই অনুভূতিটা তুই নিজে উপলব্ধি করিস। আর কবে ছুটে আসিস আমার কাছে। তোকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে যে আমারও নেই রে ভোর। শুধু তোর বলার অপেক্ষা। তারপর নাহয় ভোরের রোদ ভোরের মাঝেই বিলিন হয়ে যাবে। "
১৪!!
রোদ ফ্রেশ হয়ে নিজের লাগেজ থেকে একটা র্যাপিং করা বক্স নিয়ে ভোরের রুমে ফিরে এলো। ভোরকে এখনো ভাবনার জগতে হারিয়ে থাকতে দেখে রোদ হেসে ফেললো। বক্সটা ভোরের কোলে রেখে রোদ বিছানায় আয়েশ করে বসলো ভোরের পাশে। ভাবনায় ছেদ পড়তেই ভোর চমকে রোদের দিকে তাকালো। রোদ ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছে দেখে ভোর চোখ নামিয়ে নিলো। রোদ এবারে ভোরের কোলের উপর থেকে র্যাপিং করা বক্সটা ভোরের হাতে ধরিয়ে দিলো। ভোরের এতোক্ষণে বক্সটার দিকে নজর পড়লো। রোদ সেটা বুঝতে পেরে আরেকবার হাসলো। আর ভোর বক্সটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে চুপচাপ। কেন যেন মনে হচ্ছে রোদের এই গিফ্টটা পাওয়াই উচিত নয়। কিন্তু কেন!
-অনেক তো ভাবা হলো ম্যাডাম। এবারে ভাবনাগুলোকে একটু সাইডে সরিয়ে রেখে গিফ্টটাতেও একটু নজর দিন। আমি কতো কষ্ট করে ম্যাডামের জন্য গিফ্টটা আনলাম, আর উনি কিনা কোন দুনিয়ায় হারিয়েছেন।
-রোদ? একটা কথা ছিল।
-বলে ফেলুন ম্যাডাম।
-আসলে---। এই গিফ্টটা আমার নেয়া ঠিক হবে না। আমি তোমার কথা মানি নি। পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম---। আম সরি---।
ভোরের কাঁদোকাঁদো মুখটা দেখে রোদ ভোরকে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে ভোরের মুখটা দু হাতে তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো। ভোরও একটু ফুঁপিয়ে উঠে রোদের দিকে তাকালো।
-আমার পাগলিটা রে! তুই আমার বুকের উপরে পড়ে ঘুমাবি সেটা বুঝি আমি টের পাবো না?
-হুম? কি?
-সারা রাত তো টেনশনে আমার পিচ্চিটার একটুও ঘুম হয়নি। জানি তো আমি। তাই একটুও রাগ করি নি রে পাগলি বউটা। আর শোন? এই গিফ্টটা আজকের পড়ার জন্য না। এই গিফ্টটা অন্য কারণে দিচ্ছি। ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে দিবো। পরে ভেবে দেখলাম, দিবো যখন এখনই দিই--। এখন পেলেও যে তুই পাবি, এক সপ্তাহ পরে পেলেও সে তুইই পাবি। তাহলে দেরি করে লাভ কি বল?
-কি আছে এই বক্সে? বলো না বলো না?
-নিজেই খুলে দেখে নে।
-ওকে---।
ভোর এবারে চোখে মুখে রাজ্যের কৌতূহল আর আনন্দ ফুটিয়ে ধীর হাতে বক্সটার র্যাপারটা খোলায় মন দিলো। রোদ কয়েক মিনিট ভোরের এমন পাগলামি দেখে হাত বাড়িয়ে বক্সটা নেয়ার চেষ্টা করতেই ভোর বক্সটা নিয়ে এমনভাবে ছিটকে সরে এলো যে রোদ নিজেও চমকে উঠলো। ভোর একবার বিরক্তিমাখা চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। এবারে অবশ্য রোদের থেকে কিছুটা সরে বসে বক্সটা আনপ্যাক করছে ভোর। রোদ আলতো করে হাত বাড়িয়ে ভোরের গাল ছুঁইয়ে দিলো।
-এটা কি হলো ভোর? এভাবে টুকটুক করে কতোক্ষণে আনপ্যাক করবি বক্সটা? এতো কষ্ট করে টেপগুলো না খুলে একেবারে-----।
-না না না। এতো সুন্দর র্যাপারটা তুমি ছিঁড়ে ফেলবা? না না না। আমার এটা খুব পছন্দ হয়েছে। এটা আমি যত্ন করে রাখবো।
-আরে বাবা! এরকম আরো দশটা র্যাপার তোকে কিনে দেবো যা। এখন তো খোল বক্সটা?
-না।
-ভোর?
-একটুই তো সময় লাগবে? এমন করছ কেন?
-আচ্ছা বাবা। যা। তোর যা ইচ্ছে কর।
-হুম।
রোদ আর কিছু না বলে ভোরের মুখের এক্সপ্রেশনের পরিবর্তনগুলো একমনে খেয়াল করার চেষ্টা করছে। পাতলা র্যাপারটা অক্ষতভাবে পুরোটা খুলতে যতটা আনন্দ খেলা করছে, ঠিক ততটাই আনন্দ বক্সের ভিতরের বস্তুটা দেখলে ভোরের চোখেমুখে ফুটে উঠবে কিনা সেটাই দেখার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে রোদের চোখ জোড়া।
-আচ্ছা? আমি তো পড়া কমপ্লিট করি নি। তাহলে গিফ্টটা কিসের? পড়ায় ফাঁকিবাজি করলে তো তুমি বকো সবসময়। আজ হঠাৎ গিফ্ট দিচ্ছ যে?
-তোকে বকছি না সেটার জন্য আফসোস করছিস? নাকি গিফ্টটা দিলাম বলে?
-আরে! না না। আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
-হুম। তাড়াতাড়ি কর না ভোর? দুপুর হয়ে যাচ্ছে। একটু পরই দেখবি ছোটোমা লাঞ্চের জন্য ডাকাডাকি শুরু করবে।
-এই তো। আর একটু বাকি---।
-ভোর?
-হুম?
রোদ ভোরের গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে নাম ধরে ডাকতেই ভোর রোদের দিকে তাকালো। রোদ একটু হেসে ভোরের কপালে একটা চুমো এঁকে দিলো। ভোর রোদের এমন ব্যবহারের আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে রোদের মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলো।
-সবসময়ই আমার এমন পাগলিটা হয়েই থাকিস ভোর। কখনো যেন একটুও বদলে যাস না। সবসময় একটা কথা মনে রাখিস। আর কেউ তোর পাশে থাক বা না থাক, তোর রোদ সবসময় সব পরিস্থিতিতে তোর পাশে থাকবে, তোকে সাপোর্ট করবে। তাই মনে যাই আসুক না কেন, কারো সাথে শেয়ার করতে না পারলেও আমাকে একবার হলেও বলিস।
-আচ্ছা। বলবো।
-আর শোন? শুধু যে ইম্পরট্যান্ট কথাই শেয়ার করতে বলছি তা কিন্তু না ভোর। তোর যা ইচ্ছে হয় আমাকে বলবি, যা কিছু লাগে, যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হয়, সব--সব বলবি। ওকে?
-ওকে।
ভোর 'ওকে' বলে আবার র্যাপিং করা বক্সটা বের করে আনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর রোদ ভোরকে দেখতে দেখতে ভাবছে মেয়েটা কতোটুকু বুঝেছে ওর কথাগুলো কে জানে! রোদ তো চায় ভোর তার নিজের সমস্ত ইচ্ছেগুলো, কষ্টগুলো, আনন্দগুলো রোদের সাথেই ভাগাভাগি করে নিক। মেয়েটা কি কথাটা বুঝতে পেরেছে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভোরের বিস্মিত কণ্ঠস্বর শুনে রোদের হুঁশ হলো। ভোর তখনো চোখ বড় বড় করে একবার রোদকে দেখছে আর একবার হাতে ধরা বক্সটা।
-কি রে ভোরপাখি? পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ? এই এই? এই মোবাইলটা সত্যি আমার? নাকি মজা করছ তুমি? বলো না বলো না প্লিজ?
-আগে বল তোর পছন্দ হয়েছে কি না।
-শুধু পছন্দ! ইশ! কি সুন্দর! তুমি জানো ব্ল্যাক কালারটা কি সুন্দর! আমার কত্তো পছন্দ----।
-তোর ওই মেঘের কালো শার্টের মতো?
ভোর একবার ভ্রু কুঁচকে রোদের দিকে তাকিয়ে আবার স্মার্টফোনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখায় মন দিলো। রোদ এবারে হেসে ভোরকে টেনে নিজের সামনে বসিয়ে পিছন থেকে ভোরকে জড়িয়ে ধরে ভোরের চুলে মুখ গুঁজলো। ভোর একটু ঘাড় বাঁকিয়ে রোদের দিকে ফিরলো।
-সত্যি করে বলো না? এই মোবাইলটা তুমি আমাকে দিয়েছ? সত্যি সত্যিই! নাকি দুষ্টুমি করছ?
-মোবাইলটা তুই পাবি ভোর। তবে একটা শর্তে।
-শর্ত! কি শর্ত? বলো না বলো না?
-শর্ত হলো এই মোবাইলের কথা তুই কাউকে বলবি না। আর আমার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলতে পারবি না এই মোবাইলটা দিয়ে। ওকে?
-ওকে ওকে ওকে। ইয়েএএএএ। আমারও একটা মোবাইল হয়েছে কি মজা! আমি আভাকে দেখাবো কালই। এখন মাকে দেখিয়ে আসি----।
-ভোর? এক্ষুণি তোকে কি বললাম আমি? মোবাইলের কথা কাউকে বলবি না বললাম না তোকে?
-ওমা! বলবো না তো। আমি তো শুধু দেখাবো----।
-ভোর! আল্লাহ! এই বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি কি করবো! উফ!
-দেখানোও যাবে না?
-না।
রোদের থমথমে কণ্ঠে 'না' শুনেও ভোরের কোনো হেলদোল হলো না। মেয়েটা আপাতত নতুন মোবাইলটা হাতে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে এমন খুশিতে ডগমগ করতে করতে মোবাইলটা দেখছে। রোদও ভোরের খুশিটা অনুভব করতে পেরে ভোরের কানে আলতো করে কামড় বসালো। ভোর একটু কেঁপে উঠলেও কিছু বললো না।
-সামনেই তোর পরীক্ষা ভোর পাখি। পরীক্ষাটা শেষ হলে যত ইচ্ছে মোবাইল নিয়ে বসে থাকিস। কেউ কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু এখন তোকে আমি মোবাইল দিয়েছি জানলে কাল সকালেই আমাকে দেশ ছাড়া করবে তোর বড়আব্বু। সেটা কি তুই চাস বল?
-না না না।
-তাহলে পরীক্ষাটা শেষ হওয়া পর্যন্ত এই গিফ্টটা তোর আর আমার সিক্রেট থাকুক। কেমন ভোরপাখি? যাতে হুটহাট আমার ভোরপাখিটাকে আমি দেখতে পারি। কেমন? প্রমিস?
-ওকে। প্রমিস।
ভোর আবার আগ্রহ নিয়ে মোবালটা দেখছে দেখে রোদের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে গেল। চট করে ভোরের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিতেই ভোর রোদের দিকে তাকালো। রোদ ভোরকে নিজের একদম বুকের কাছে টেনে নিয়ে।কানে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
-একটা গেমস খেলি আয় ভোর।
-গেমস! মোবাইলে?
-উমমম। মোবাইলেই বলা যায়। তবে একটু অন্যরকম গেমস।
-কি গেমস বলো না?
-নতুন মোবাইল পেলি। ফোনের ক্যামেরাটা কেমন চেক করা যাক। সাথে।এই মূহুর্তটাকেও ক্যামেরাবন্দী করা যাক। কি বলিস?
-তো? গেমসের কি হবে?
-খেলাটাও এই ক্যামেরাতেই। দেখা যাক আমাদের মধ্যে কে দুজনের একসাথে কতোগুলো সুন্দর ছবি তুলতে পারে। কেমন?
-উমমমম। ওকে। আগে আমি আগে আমি তুলবো।
-ওকে ম্যাডাম। এজ ইওর উইশ!
ভোর মোবাইলটা উঁচিয়ে দুজনের সেলফি নেয়ার আগেই রোদ ভোরকে টেনে নিজের একদম কাছে এনে ভোরের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দুষ্টুমিতে মেতেছে। ভোর আর ছবি তুলবে কি! সে বেচারি ভোরের প্রত্যেকটা স্পর্শে কেঁপে উঠছে প্রত্যেকবার। আর সেটা দেখে রোদ তার দুষ্টুমির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। ভোর রোদের গায়ে পিঠ ঢেকিয়ে রোদের স্পর্শগুলো হজম করার চেষ্টা করছে। কতটুকু সফল হচ্ছে কে জানে!