একটু ভালোবাসা - পর্ব ০৫ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


০৯!!

আজ তিতলির বিয়ে। লাল বেনারসী পরে বিছানার ওপর বসে আছে। রাতের অন্ধকারে পুরো বাড়িটা আলোয় আলোকিত করা। শুধু তিতলির মনের দহনটাই সকলের অজানা। কত ইচ্ছে ছিল অরণ্যর সঙ্গে সংসার করবে। নিজেদের সুখের একটা সংসার হবে। যেখানে দুজন ঝগড়া করবে, খুনসুটি করবে। আর দিনেশেষে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হবে। সেসব স্বপ্ন আজ অধরাই রয়ে গেল। একটু পরই বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। মন বলছে, শুধু একবার যদি অরণ্য এখন এসে বলত চলো আমার সাথে। তাহলে তিতলি আর অন্য কিছুই ভাবত না। অরণ্যর হাত দূরে অনেক অনেক দূরে চলে যেত। অরণ্য এখন কী করছে? অরণ্য কি আসবে না? 

"দিদি।"
অশ্রুশিক্ত চোখে তিতলি সামনের পানে তাকায়। প্রিয়ু দাঁড়িয়ে আছে। তিতলি বিছানা থেকে দৌঁড়ে দরজার কাছে যায়। এদিক-সেদিক অরণ্যকে খুঁজে বলে,
"অরণ্য কোথায় প্রিয়ু? অরণ্য আমায় নিতে এসেছে তাই না? বল না ও কোথায়?"
"আসেনি ভাইয়া।"
"আসেনি!"
"না, আসেনি। আমিও আসতাম না। আসলে কী বলো তো যাকে ভাইয়ের বউ হিসেবে কল্পনা করে এসেছি এতদিন তাকে অন্য কারো বউ হতে দেখতে কষ্ট হবে আমার। যেখানে আমি নিজেই সহ্য করতে পারব না সেখানে ভাইয়া কীভাবে সহ্য করবে? কীভাবে ভাবো ভাইয়া আসবে?"
"আমি তো চেয়েছিলাম অরণ্য একবার এসে আমায় বলুক ও আমায় এখনো ভালোবাসে। বিশ্বাস কর, সবকিছু ত্যাগ করে আমি ওর সাথে চলে যেতাম।"
"তুমি বিশ্বাস করো ভাইয়া আর তোমায় ভালোবাসে না?"

পূজা সরকার রুমে প্রবেশ করেন। প্রিয়ুকে দেখে বলেন,
"এত লেট করে এসেছ কেন?"
প্রিয়ু কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। ঘরে আরো কয়েকজন ছেলে আসে পিড়ি নিয়ে। তিতলিকে পিড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায়। পান পাতা দিয়ে মুখ ঢাকার আগে টলমল করা নয়নে শুধু একবার তাকায় প্রিয়ুর দিকে।

বিয়ের মণ্ডপে যাওয়ার আগেই তিতলি পান পাতা ফেলে দেয়। চিৎকার করে বলে,
"আমায় নামাও।"
উপস্থিত সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। পূজা সরকার ফিসফিস করে বলেন,
"কী সিনক্রিয়েট শুরু করলে?"
"আমি বিয়ে করব না মা। আমি অরণ্যকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না।" কাঁদতে কাঁদতে বলে তিতলি। সবাই তিতলির কথা শুনে কানাঘুষা করছে। লজ্জায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা তিতলির পরিবারের। বরপক্ষরা অনেক কথা শুনিয়েছে তিতলির পরিবারকে। বরপক্ষের সাথে সাথে মেহমানরাও সবাই চলে যাচ্ছে। মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হয়েছে বলে ছিঃ ছিঃ করছে লোকজন। কয়েকজন বেশ কড়া কড়া কথাও বলছেন। রাগে সহ্য করতে না পেরে তিতলির বাবা তিতলিকে মারধোর শুরু করে। আত্মীয়-স্বজনরা তাকে থামান। মার বন্ধ করলেও তিনি তিতলিকে অরণ্যর কাছে যেতে দেন না। ঘরে বন্দি করে রাখেন। একদিক থেকে প্রিয়ুর খারাপ লাগলেও এটা ভেবে ভালো লাগছে যে বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তিতলির সাথে অরণ্যর মিল হবে বলেই হয় তো আল্লাহ্ বিয়েটা হতে দেননি। কথায় তো আছে, আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। খবরটা অরণ্যকে দেওয়ার জন্য তিতলির বাড়ি থেকে সোজা অরণ্যর বাসায় যাবে বলে ঠিক করে। তিতলির বাড়িতে আসার সময়ও ব্যথিত চোখে একবার রিশাদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়েছে। যাওয়ার সময়ও দেখতে হবে। অবাধ্য মন একটা বার চায় রিশাদের দেখা পেতে। রিশাদের দেখা তো পায়নি আর বাড়িতেও যায়নি। রিশাদের সাথে মান-অভিমান সব পরে হবে। আগে অরণ্যকে খবরটা জানাতে হবে। দৌঁড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায় প্রিয়ু। লোকজনের সামনে এভাবে পড়ে যাওয়া খুবই লজ্জাজনক। হাঁটুতে বোধ হয় ছিলেও গেছে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে রিশাদ আর অনিক বসা ছিল। প্রিয়ুকে দেখেই ওরা এগিয়ে আসে। প্রিয়ু উঠে দাঁড়িয়ে ওদেরকে দেখতে পায়। রিশাদকে দেখে একটু বেশিই লজ্জা লাগে। কী ভাবল কে জানে! 
"এভাবে দৌঁড়াচ্ছিলে কেন?" জিজ্ঞেস করে রিশাদ।
"একটু তাড়া আছে তাই।" মাথা নিচু করে বলে প্রিয়ু।
রিশাদ মশকরা করে বলে,
"বয়ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে নাকি?"
প্রিয়ু এবার চোখ রাঙিয়ে বলে,
"আলতু-ফালতু কথা বলবে না একদম। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই এটা তুমি ভালো করেই জানো।"
"জানতাম নাকি?"
"ঢং করা হচ্ছে?"
"ঢং তো মেয়েরা করে।"
"তোমার ঢং এর কাছে মেয়েদের ঢং ফেইল।"
"আচ্ছা ঝগড়া পরে করব। কোথায় যাচ্ছ এখন?"
"অরণ্য ভাইয়ার বাসায়।"
"এত রাতে?"
"তিতলি দি'র বিয়ে হবে না। এটাই ভাইয়াকে বলতে যাচ্ছি। তিতলি দি ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড। বেশিকিছু বলার সময় নেই এখন। যেতে হবে আমায়।"
"আমরা কি সাথে আসতে পারি?" জানতে চায় অনিক। 
প্রিয়ু একবার রিশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
"পারেন।"

একটা অটো ডেকে তিনজনে অরণ্যর বাসায় চলে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখে দরজায় তালা দেওয়া। রিশাদ বলে,
"বাড়িতে তো কেউই নেই।"
"হু। কিন্তু এত রাতে সবাই গেল কোথায়?"
"সেটা আমি কী করে জানব? এক কাজ করো, তোমার ভাইয়াকে ফোন দাও।"
"আমার তো ফোন নেই। আর ভাইয়ার নাম্বার আপুর ফোনে সেভ করা আছে। মুখস্ত নেই আমার।"
"তাহলে কী করবে?"
"দাঁড়াও, কাউকে জিজ্ঞেস করি।"

পাশের এপার্টমেন্টে গিয়ে অরণ্যদের কথা জিজ্ঞেস করায় তারা জানায় যে অরণ্যকে নিয়ে সবাই হাসপাতালে গেছে। প্রিয়ুর মনে এবার ভয়ের দানা বাঁধতে শুরু করে। অরণ্য কি তাহলে সুইসাইড? না! অরণ্য তো কখনো এমন কিছু করতে পারে না। রিশাদ প্রিয়ুকে শান্তনা দিয়ে বলে,
"রিল্যাক্স! হতে পারে সামান্য কিছু হয়েছে। এত ভয় পাচ্ছ কেন?"
"আমার মন কেমন যেন কু ডাকছে রিশাদ।"
"তুমি দিনদিন বড় হও নাকি ছোট? মাথা ঠান্ডা রাখো আর মনকে শান্ত করো।"
"আমি পারছি না।"
"আচ্ছা কোন হাসপাতালে নিয়ে গেছে তারা বলেছে?"
"জানে না তারা।"
"জানলে হাসপাতালে যাওয়া যেত। চলো তাহলে বাসায় ফিরি। সকালে না হয় এসো আবার।"
"না। আমি এখানেই থাকব। তোমরা যাও।"
"পাগলের মতো কথা বোলো না। রাতে একা একটা মেয়ে বাড়ির সামনে একা থাকবে?"

প্রিয়ু কিছু বলতে যাবে তার আগেই এম্বুলেন্সের শব্দ পায়। দৌঁড়ে একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় এম্বুলেন্সটা এদিকেই আসছে। ঠিক প্রিয়ুর সামনে এসে দাঁড়ায়। কাঁদতে কাঁদতে এম্বুলেন্স থেকে নেমে আসে অরণ্যর বাবা-মা। সাথে আরো দুজন মহিলা আর পুরুষ রয়েছে। মহিলাগুলো অরণ্যর মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। প্রিয়ু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্ট্রেচারে করে সাদা কাপড়ে ঢেকে কাউকে নামানো হয়। কে সে? লাশ রেখে এম্বুলেন্স চলে যায়। অরণ্যর আত্মীয়-স্বজন, আশেপাশের মানুষজন আসতে থাকে। ভীড়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়ু। মাটি যেন পা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। অরণ্য ভাইয়া কোথায়? রিশাদ আর অনিক ভীড় ঢেলেই এগিয়ে যায়। অরণ্যর লাশ বুকে জড়িয়ে কাঁদছে অরণ্যর মা। সবার কথায় জানা যায় হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে অরণ্য। বেশিক্ষণ লাশ দেখার সাহস হয় না রিশাদের। সেখান থেকে চলে আসে। প্রিয়ু রিশাদকে জিজ্ঞেস করে,
"কার লাশ ঐটা?"
রিশাদ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রিশাদকে চুপ থাকতে দেখে প্রিয়ু নিজেই সবাইকে সরিয়ে সামনে যায়।এক পলক অরণ্যর মৃত দেহ দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

যখন জ্ঞান ফিরে তখন ভোরের আলো ফুঁটেছে। চারপাশে মানুষের কান্না আর আহাজারি। লাশ কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সবাই। লাশ বেশিক্ষণ এভাবে না রাখাই ভালো। অরণ্যর সামনে বসে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদছে তিতলি। তিতলিকে মানানোর চেষ্টা করছে পূজা সরকার। তিতলি কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
"আমার অরণ্যর মৃত্যুর জন্য একমাত্র তুমিই দায়ী মা! কেন তুমি ও'কে মেনে নিলে না? তুমি যদি আমাদের আলাদা না করতে তাহলে অরণ্যকে হারাতে হতো না।"
প্রিয়ুর বুক ফেঁটে যাচ্ছে কান্নায়। কিন্তু কান্না কেন আসছে না? চোখের পানি ফুরিয়ে গেল? ভাইয়ের জন্য কাঁদবে না প্রিয়ু? দরজার সামনে হাঁটু গেড়ে চুপচাপ বসে থাকে। চারদিকে তাকিয়ে সবার কান্না দেখছে। ওরা সবাই ওদের কষ্টগুলো চোখের পানির মাধ্যমে দূর করতে পারছে। প্রিয়ু সেটাও পারছে না। এত অসহায়বোধ মনে হচ্ছে এত! লাশের খাঁটিয়া যখন তুলতে যাবে তখন প্রিয়ু অরণ্যর বাবার হাত ধরে বলে,
"ভাইয়াকে নিয়ে যেও না বাবা!"

ইশ! কী কষ্ট, কী বেদনা সে কথায়! বাবারও যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এই কঠিন সত্য উপেক্ষা করার ক্ষমতা যে কারো নেই। লাশ নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে প্রিয়ু। 
"ভাইয়া এভাবে যেতে পারে না। কখনো না। ভাইয়া না বলেছিল সারাজীবন পাশে থাকবে?"
অরণ্যর মা এগিয়ে এসে প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে তা কেউ কাউকে বোঝাতে পারছে না। কিছু কষ্ট আছে না একান্তই নিজের? এই কষ্টটাও ঠিক তেমন।

সময় থেমে থাকেনি। কারো জীবনও থেমে থাকেনি। শুধু থেমে গেছে কিছু মানুষের ভালোবাসা, খুনসুটি, বিশ্বাস। শুধু থেমেই যায়নি বরং হারিয়ে গেছে সারাজীবনের জন্য। এখন আর রাতের আকাশে তারা গুণতে গুণতে ভাই-বোনের দুঃখের গল্প করা হয় না। এখন আর মেইন রাস্তার পাশে ধাবায় বসে আলু কাবলী, চা খাওয়া হয় না। শীত আসলেই এখন আর ভাইয়া আইসক্রিম কিনে দেবে না। মজার মজার কথা বলে হাসাবে না। সারাজীবন ছায়ার মতো পাশে থাকবে এই প্রতিশ্রুতিও রাখল না। এখন যা আছে সব স্মৃতি! এই স্মৃতিগুলোই কষ্ট বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তিতলি সবার সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছে। শুধু অরণ্যর সঙ্গে কথা বলে। অন্ধকার ঘরে একা একা। আলো দেখলেই তিতলি এখন ভীষণ ভয় পায়। অরণ্যর মৃত্যুর পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল তিথি। আস্তে আস্তে তা চরম পর্যায়ে এসে পড়েছে। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েও কোনো উপায় হয়নি। একটা সময় তিতলি নিজেই কারো কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কাউকে সহ্য হয় না ওর। তিতলির অবস্থা এখন পাগল প্রায়। প্রিয়ু আসে মাঝে মাঝে। তখন কত গল্প তিতলির! সব কথায় শুধু অরণ্য অরণ্য আর অরণ্য। প্রিয়ু শোনে। তিতলির সব কয়টা কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। কখনো কথা বলতে বলতে তিতলি খিলখিল করে হেসে ফেলে। কখনো কেঁদে ফেলে। প্রিয়ুর অনুভূতিগুলো তখন হয় নামহীন। চোখ থেকে পানি পড়লেও ঠোঁট হাসতে চায়। এমন অনুভূতির নাম হয় বুঝি? আজও প্রিয়ু এসেছে তিতলির বাসায়। দরজায় নক করে বলে,
"আসব দি?"
তিতলি গলার স্বর চেনে প্রিয়ুর। বিষাদিতভাবে বলে,
"না! চলে যা। এখন আমি অরণ্যর সাথে কথা বলব।"
প্রিয়ু কথা বাড়ায় না। বুকচিরে কান্না চলে আসে। কাউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। প্রস্থান করে প্রিয়ু সে জায়গা। মমতা বেগমের কবরের কাছে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। অভিযোগ করে বলে,
"সবসময় আমার সাথেই কেন এমন হয় মা? আল্লাহ্ আর কত কেড়ে নেবে আমার কাছ থেকে? আমাকে যারা ভালোবাসে কেন তাদের আমার থেকে কেড়ে নেয় বলো? একটু ভালোবাসাও কি আমার ভাগ্যে থাকবে না? আমার না বাঁচতে ইচ্ছে করে না আর! এত দুঃখ আমি আর সইতে পারি না। কেন হয় আমার সাথে এমন? বলো না মা! বলো! আমি তোমার কাছে যাব। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তির ঘুম ঘুমাব। নেবে আমায়? মা!"

মা তো উত্তর দেয় না। কিছুক্ষণ কেঁদে নিজেকে হালকা করে। গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে থাকে। কোথায় যাওয়া যায়? কার কাছে গেলে একটু শান্তি পাওয়া যাবে? রিশাদ? হ্যাঁ, ওর কাছেই যাওয়া যায়। রিশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে সালাম চাচার সাথে কথা হয়।
"কেমন আছেন চাচা?"
"ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"
"আল্লাহ্ রেখেছে। রিশাদ বাড়িতে?"
"না মা। তার কাজের ব্যস্ততা অনেক। অনেক রাত করে অফিস থেকে বাড়িতে আসে।"
"ওহ্।"
"তোমার মন খারাপ মা?"
"আর মন খারাপ! আর বাঁচতে ইচ্ছে হয় না চাচা। খুব কষ্ট গো চাচা আমার খুব!"
"দুঃখ কইর না মা। আল্লাহ্ একদিন সুখের দেখা মিলাইব দেইখো।"
"আর কবে? বিশ্বাস করেন চাচা, আমি এবার সত্যিই মরিয়া হয়ে আছি একটু সুখের দেখা পাওয়ার জন্য। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি কষ্টের মধ্যে। যাদের আমি ভালোবাসি তারাই আমায় একা করে চলে যায়। আমার মা আমায় ছেড়ে গেছে। বাবা থেকেও নেই। রক্তের সম্পর্ক না থেকেও অরণ্য ভাইয়া আমার মাথার ওপর ছায়া হয়ে ছিল। সেই ছায়াটাও আল্লাহ্ কেড়ে নিল। আপা সুখে নাই আমার। একটু দেখাও পাই না আমি। যেন অনন্তকাল দূরে থাকে আমার বড় আপা।আপন বলতে এখন আমার আশা আপুই আছে। আমার খুব ভয় করে চাচা! এদিকে আমি এমন একজন মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি যার আমার প্রতি সামান্য পরিমাণ ভালোবাসাটুকুও নেই। আমি কখনো ভাবিইনি কাউকে এভাবে ভালোবেসে ফেলব। কিন্তু আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানিনা কবে সে আমার ভালোবাসা বুঝবে বা আদৌ বুঝবে কী না! আমি শুধু জানি আমি তাকে ভালোবাসি। খুব করে চাই আমি তারে।"
সালাম চাচা মর্মাহত হয়ে বলেন,
"আল্লাহ্ যেন তোমার মনের আশা পূরণ করে মা। আমি আল্লাহ্-র কাছে দোয়া করে বলব।" 
সালাম চাচার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সময় কেটে গেছে। বুঝেনি কেউ। অনেকদিন পর মন খুলে কারো সাথে কথা বলা গেল। এর মাঝেই রিশাদ চলে আসে। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। তবুও প্রিয়ুকে দেখে হাসে। জিজ্ঞেস করে,
"কখন এসেছ?"
"অনেক আগেই। চাচার সাথে গল্প করছিলাম।"
"বাসায় চলে যাবে নাকি ভেতরে যাবে?"
"বাসায় যাব না এখন।"
"তাহলে ভেতরে চলো।"
"হুম।"

ভেতরে গিয়ে প্রিয়ুকে বসতে বলে রিশাদ ফ্রেশ হতে চলে যায়। সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকে প্রিয়ু।ছোটবেলার কথা, মায়ের কথা, অরণ্য ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়ছে। ঠোঁট উল্টে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। রিশাদ গোসল করে এসে ভাত বসিয়ে দেয় চুলোয়। ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে গরম করে নেয়। সেই যে সন্ধ্যায় হালকা নাশতা করেছিল তারপর থেকে আর কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। এদিকে রাত ১১টা বাজতে চলল। পেটের ভেতর খিদেয় ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে। এক চুলায় ভাত বসিয়ে অন্য চুলায় চা বসিয়ে দেয়। দুই মগ চা বানিয়ে আনে ড্রয়িংরুমে। এক মগ প্রিয়ুকে দেয়। প্রিয়ু চা হাতে নিয়ে বসে থাকে। চোখের কার্ণিশে পানি চিকচিক করছে।
"মন খারাপ?" জিজ্ঞেস করে রিশাদ।
প্রিয়ু দু'দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
"উঁহু।"
"শিওর?"
"হু।"
মগটা টেবিলের ওপর রেখে রিশাদ বলে,
"ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়ছে?"
প্রিয়ু এবার ঠোঁট বাঁকিয়ে কেঁদে ফেলে। প্রিয়ুর কষ্ট বুঝতে পারে রিশাদ। কিন্তু এই কষ্ট দূর করার উপায় কী? কেউ কষ্ট পেলে রিশাদেরও যে খুব কষ্ট হয়। 
"কেঁদো না প্লিজ!"
প্রিয়ু দু'হাতে চোখের পানি মুছে বলে,
"মানুষের এক জীবনে নাকি সুখ হয়? আমি তো কোনো জীবনেই সুখ পেলাম না রিশাদ!"
"প্লিজ এভাবে বোলো না! কষ্ট হয়।"
"একটু ভালোবাসবে রিশাদ? এই অসহায় মেয়েটাকে ভালোবাসা যায় না?"
রিশাদ কথা ঘুরিয়ে বলে,
"ভাত বোধ হয় হয়ে গেছে।দেখে আসি আমি।"
প্রিয়ু সোফার সাথে মাথা ঢেকিয়ে বলে,
"ভেবেছিলাম তোমায় আঁকরে ধরে সব কষ্ট ভুলে যাব। আমার জীবনেও সুখ আসবে। কিন্তু তুমি তো আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। একটু ভালোবাসা কি যায় না?"
"নিজেকে সামলাও প্লিজ!"
"একটু আগে বললে আমি কাঁদলে নাকি তোমার কষ্ট হয়। সত্যিই কষ্ট হয়?"
"কষ্ট হয় বলতে খারাপ লাগে।"
"কষ্ট পাওয়া আর খারাপ লাগাটা এক নয় রিশাদ। খারাপ লাগাটা মায়ানুভূতি আর কষ্ট পাওয়াটা ভালোবাসানুভূতি। আমার জন্য স্রেফ তোমার মায়া-ই হয়। কোনো কষ্ট নয়!"

১০!!

সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে প্রিয়ু। কানে ভেসে আসছে গিটারের টুংটাং শব্দ। এক পলক তাকিয়ে দেখে রিশাদ অন্য সোফায় বসে গিটার নিয়ে বসে আছে। ভাসা ভাসা চোখদুটোর দিকে একবার তাকিয়ে রিশাদ গান ধরে
"Jab Jab Tere Paas Main
Aaya , Ek Sukoon Mila,
Jise Main Tha Bhoolta
Aaya, Woh Wajood Mila,
Jab Aaye Mausam Gham
Ke, Tujhe Yaad Kiya,
Hooo
Jab Sehme Tanhapan Se, Tujhe Yaad Kiya,

Dil, Sambhal Ja Zara, Phir
Mohabbat Karne Chala Hain Tu,
Dil, Yahi Ruk Ja Zara, Phir
Mohabbat Karne Chala Hain Tu."

প্রিয়ু শোয়া থেকে বসে পড়ে। ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে বলে,
"গান গাইছ কেন?"
"গান শুনতে ভালো লাগছে না?"
"লাগছে।"
"তাহলে?"
"কিছু না।"
"গাইব না আর?"
"গাও।"
 
রিশাদ আবার গান শুরু করে,
"Ab jaane hum yeh pyaar kya hai
Dard-e-jigar mushkil bada hai
Sunta nahin kehna koi bhi
Dil bekhabar zid pe adaa hai
Samjhaaun kaise ise jaan-e-jaan
Haare haare haare hum to dil se haare
Hare hare hare hum to dil se haare."

রিশাদ এত সুন্দর করে গায় প্রিয়ুর ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলতে। কিন্তু গানটা মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। বেহায়া হয়ে একটা আবদার করে বসে প্রিয়ু। আবেগময় কণ্ঠে প্রিয়ু বলে,
"একবার জড়িয়ে ধরতে দেবে তোমায়?"

রিশাদ কী বলবে বুঝতে পারছে না। এমনভাবেই বলছে যে না করার মতো পরিস্থিতিও নেই।
"প্লিজ!" করুণস্বরে বলে প্রিয়ু।

রিশাদ গিটারটা একপাশে রেখে বলে,
"গানটা কিন্তু অনেক সুন্দর। কিন্তু গাইতে ভালো লাগছে না। দাঁড়াও সাউন্ডবক্সে দেই। তাহলে ভালো লাগবে।"
রিশাদ বক্সে গান অন করে। প্রিয়ু চুপ করে বসে থাকে। ওর উত্তর ও পেয়ে গেছে। তাচ্ছিল্যর হাসি ঠোঁটে। এটা কি শুধুই তাচ্ছিল্য? নাকি কষ্টের অংশবিশেষও রয়েছে? গানটা কেন জানি মনের দহনটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। প্রিয়ু বাড়িতে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। অবাধ্য চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। ডান হাতে চোখের পানি মুছে শুধু "আসছি" বলে চলে যাওয়া ধরে প্রিয়ু। পেছন থেকে রিশাদ ডাকে। "দাঁড়াও।" 
প্রিয়ু দাঁড়িয়ে পড়ে কিন্তু পেছনে তাকায় না। কান্না, কষ্টগুলোকে আড়াল করার চেষ্টা। যে মানুষটা ভালোবাসা, কষ্ট বুঝতেই চায় না তাকে দেখিয়ে কী হবে? আর কখনো ভালোবাসা, কষ্ট এগুলো কিচ্ছু দেখাবে না। কিচ্ছু বলবে না। যত কষ্টই হোক সব নিজের মধ্যেই রাখবে। যদি সইতেই না পারে তাহলে এই পৃথিবীতে সেদিনই হবে প্রিয়ুর শেষ দিন।
"তাকাবে না আমার দিকে?" জিজ্ঞেস করে রিশাদ।
না তাকিয়েই প্রিয়ু বলে,
"শুনছি। বলো।"
"আমি তো কিছু বলব না। তোমায় তাকাতে হবে। নয়তো বুঝতে পারবে না।"
দু'হাতে চোখের পানি মুছে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিরে তাকায় প্রিয়ু। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রিশাদ বলে,
"নিচের দিকে নয়, আমার দিকে তাকাতে হবে।"

ভাসা ভাসা অশ্রুশিক্ত নয়নে প্রিয়ু রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদ দু'হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ু ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে। বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। রিশাদের মুখে মুচকি হাসি। তার মানে কি রিশাদ অনুমতি দিচ্ছে জড়িয়ে ধরার? প্রিয়ু দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে। রিশাদের হাসি আরো প্রশস্ত হয়। প্রিয়ু কিছুই বুঝতে পারছে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন ঝাপিয়ে পড়ে রিশাদের বুকে। শার্ট খামচে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে বাচ্চাদের মতো। যতটা শক্তিতে কুলোয় ঠিক ততটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ু। অনেক অনেক বছর পর মনে হলো শান্তির একটা জায়গা পেয়েছে প্রিয়ু। যাকে ভরসা করে সব দুঃখ বলা যায় সব! রিশাদ আলতো করে প্রিয়ুর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।

-----------------------------------

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। শুধু আমিন নেই বাসায়। মনসুর আলী বলেন,
"নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ কাল থেকে শুরু হবে। আমি আর তোর মা খেয়েই রওনা দেবো তোর খালার বাসায়।"
উত্তরে আশা বলে,
"ফিরবে কবে?"
"ফিরব বলতে কয়েকদিন পরপর আসব আবার যাব। নিজেরা সাথে থেকে কাজ করালে বাড়ির কাজ ভালো হবে।"
"আচ্ছা।"
আলেয়া বেগম প্রিয়ুকে ঠেস দিয়ে বলেন,
"বেশি উড়িস না আবার। তোর জন্য আশাও না জানি কবে বিগড়ে যায়।"

প্রিয়ু কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। আলেয়া বেগম প্রিয়ুকে বেশি কিছু বলেন না। তিনি আছেন অন্য আমদে। নতুন বাড়ি করার আনন্দ তো আছেই সাথে মাথার ভেতর ঘুরছে অন্য আমদ। বোনের বাসায় গিয়ে তিনি প্রিয়ুর বিয়ের কথাবার্তা বলে এসেছেন। ছেলের আগের বউ মারা গেছে। ৫ বছরের একটা মেয়ে আছে শুধু। বিষয়সম্পত্তি অনেক। তাদের শুধু একটা মেয়ে চাই। এমন পয়সাওয়ালা ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়া মানে নিজেরাও বিত্তবান হয়ে যাওয়া। তবে তিনি নিজের মেয়েকে নয় সৎ মেয়েকে বিয়ে দিবেন। প্রথমে এই প্রস্তাবে মনসুর আলী রাজি না হলেও আলেয়া বেগমের কানপড়ায় ঠিকই রাজি হয়ে যায়। টাকার লোভ থাকে না কার? ছেলে আর কী'বা খারাপ? বিবাহিত, একটা মেয়ে আছে এইতো! বিয়ে দিলে জমিদারি সব তো মেয়ের হাতেই আসবে। মেয়ে সুখী মানে নিজেরাও সুখী। টাকার সুখ! জমি কেনার অর্ধেক টাকা তারা ঐ ছেলের থেকেই নিয়েছে। প্রিয়ুর ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে ছেলে। তাই আলেয়া বেগম আর মনসুর আলীকে হাতে রাখার জন্য নিজে থেকেই টাকা দিয়ে রেখেছেন। শুধু তাই নয়। আরো বলেছে, প্রিয়ুর সাথে বিয়ে দিলে আরো জায়গা-জমি এমনকি একটা ডুপ্লেক্স বাড়িও করে দিবেন। যাকে বলে সোনায় সোহাগা!
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে মনসুর আলী আর আলেয়া বেগম চলে যান। আশা রেডি হচ্ছে ওর বান্ধবীর জন্মদিনে যাওয়ার জন্য। প্রিয়ু শুয়ে শুয়ে রিশাদের কথা ভাবছে। রেডি হতে হতেই আশা বলে,
"চল আমার সাথে।"
"না, আপু। ভালো লাগছে না।"
"আমি কিন্তু আজ রাতে ফিরব না। একা থাকতে পারবি তো?"
"পারব। আমিন ভাইয়া তো আছেই।"
"আচ্ছা। তাহলে সাবধানে থাকিস। আমার আসতে আসতে কাল বিকাল হবে।"
"তুমি সাবধানে যেও।"

আশা রেডি হয়ে চলে যায়। প্রিয়ু কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ঘরদোর পরিষ্কার করার কাজে লেগে পড়ে। রাতের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করে।


বাজারে চায়ের দোকানে বসে আছে আমিন। নেশা করার মতো টাকা নেই। নেশা না করলে মাথা ঠিক থাকে না আমিনের। পাগল পাগল লাগে। বাবা-মায়ের কাছে টাকা চেয়েছিল। দেয়নি। এত বড় ছেলে কাজ করতে পারে না? চায়ের দোকানে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর ভাবছে কীভাবে টাকা জোগার করা যায়। তখন দোকানে আসে আমিনের বন্ধু হানিফ। আমিনকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
"কী হইছে?"
আমিন একবার তাকিয়ে বলে,
"কিছু না।"
"আরে ক ব্যাটা! কী হইছে? সমস্যা কী?"
"কইলে কি তুই সমাধান করবি?"
"ক দেহি।"
"আমার টাকা লাগব। দিবি?"
"নেশা করার জন্য?"
"জানোসই তো! নেশা না করতে পারলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।"
"টাকা! এ আর এমন কি? দিমু।"

আমিনের চোখদুটো চকচক করে ওঠে। জিজ্ঞেস করে,
"সত্যিই দিবি?"
"হ। তয় একটা শর্ত আছে।"
"কী শর্ত?"
"এইহানে কওন যাইব না। চল নিরিবিলি জায়গায় যাই।"
মানুষজনহীন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় দুজন। আমিনের আর তর সইছে না। কখন টাকা পাবে আর কখন নেশা করবে! তাড়া দিয়ে বলে,
"ক কী শর্ত?"
হানিফ একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে বলে,
"তোর সৎ বইনটা আছে না? প্রিয়ু! ওরে আমার খুব ভাল্লাগে। একটা রাইত ওর লগে থাকতে দিতে হইব।"
"এগুলা কী কস তুই? ওয় জানলে তোরে বটি দিয়া কোপাই মারব।"
"ধুর ব্যাটা! এত কাঁচা কাম হানিফ করে না। আমার কাছে খবর আছে তোদের বাড়িতে কেউ নাই আজ। কোনো অসুবিধা হবে না।"
"আব্বায় জানলে মাইরা ফেলব আমারে।"
"জানব না। ঘুমের ওষুধ খাওয়াই দিবি। ও নিজেও টের পাইব না। এত কথা বাদ! টাকা দরকার তোর। এখন তুই রাজি হবি নাকি হবি না এইটা তোর ব্যাপার। টাকা দিলে আমারও মাইয়া মানুষের অভাব হইব না। শুধু প্রিয়ুরে আমার ভালো লাগে বইলাই তোরে এত তোষামোদ করতাছি।"

কিছুক্ষণ মৌনতা বজায় রেখে আমিন রাজি হয়। নেশাখোর মানুষের কাছে সম্পর্কের আগে টাকা বেশি দামি। 'টাকা হইলে সব সম্পর্ক নষ্ট করা যায়। তাছাড়া প্রিয়ু তো আর আপন বোন না। যা খুশি হোক তাতে আমার কী? আব্বায় জানলে না হয় দুই/চারটা থাপ্পড়ই দিব? জানলে আমি ফাঁসাই দিমু। বলমু প্রিয়ুই হানিফরে একা বাসায় ডাইকা আনছে।' মনে মনে এমনটাই হিসাব কষে নেয় আমিন। টাকা আর একটা কোকের বোতল নিয়ে বাসায় যায় আমিন। সন্ধ্যা ছয়টা বাজে তখন। কোকের বোতলে ঘুমের ওষুধ মেশানো। অর্ধেক কোক খেয়ে বাকি অর্ধেকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নেয়। বাড়িতে গিয়ে দেখে প্রিয়ু থালাবাসন ধুয়ে ঘরে যাচ্ছে। আমিনও পিছু পিছু যায়। প্রিয়ুর দিকে কোকের বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,
"নে, খা।"
প্রিয়ু অবাক হয়ে তাকায়। আমিন বলে,
"ভাত খাইয়া ঘুমাই থাকিস। আমার আসতে দেরি হইব।"

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আমিন চলে যায়। রাত দশটার দিকে হানিফ আসবে বাড়িতে। এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে যাবে। কেউ টেরও পাবে না হানিফের উপস্থিতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন