ভোরের রোদ - পর্ব ১১ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


২১!! 

-কাজী সাহেব? আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। ভোর তো চলেই এসেছে। আর কার জন্য অপেক্ষা?

বয়স্ক কাজী এক দৃষ্টিতে ভোরের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে তাসমিদ একটু তাগাদা দেয়ার চেষ্টা করলো। বয়স্ক ভদ্রলোকটি এবার ভোরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তাসমিদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ভোরের দিকে তাকিয়েছেন। ভোর কি করবে বুঝতে পারছে না। এই লোকটার কাছে সাহায্য চাইলে কি লোকটা ভোরকে সাহায্য করবে? নাকি এই লোকটাও তাসমিদের লোক? দেখে তো কিছুই বুঝতে পারছে না ও। আর এভাবে এতোক্ষণ ধরে তাকিয়ে কি দেখছে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবার বয়স্ক কাজীর চোখাচোখি হয়ে গেল ভোরের। এদিকে তাসমিদও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরে ভোর নিজের চো নামিয়ে নিয়েছে ততক্ষণে।

-আসসালামু আলাইকুম আম্মু। আপনার নামটা যদি বলতেন?

-ওর নাম ভোর। আপনাকে তো আগেই বললাম।

-তাসমিদ সাহেব। আমি কন্যার সাথে কথা বলছি। দয়া করে তাকেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিন? এটাও কিন্তু বিয়েরই একটা অংশ। 

-কিন্তু হুজুর আমি তো আপনাকে-----?

-এভাবে আমার কাজের মাঝে বাধা দিলে আমি কিন্তু এই মূহুর্তে এইখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো। আপনি কি সেটাই চাইছেন জনাব?

কাজীসাহেবের কথায় তাসমিদ এবারে চুপ করে গেল। এই বয়স্ক লোকটা এবারে কি ঝামেলা করবে সেটাই ভাবছে তাসমিদ। এদিকে কাজীসাহেব তাসমিদকে চুপ করিয়ে দিয়েছে সেটাই ভোর অবাক হয়ে দেখছিল। কাজী সাহেব এবারে একটু হাসিহাসি মুখে ভোরের দিকে তাকালেন।

-বলুন আম্মু? কি নাম আপনার?

-আম--আফিয়া ইবনাত ভোর।

-মাশাল্লাহ! আপনার এতো সুন্দর নামটার মতো আল্লাহ যেন আপনাকে পূণ্যবতী কন্যা রূপে কবুল করে। আমিন। তা আম্মু, কিসে পড়েন আপনি? স্কুল ড্রেস পড়ে আছেন তো তাই জিজ্ঞেস করছি। আব্বু আম্মু বাসায় চিন্তা করছেন নিশ্চয়ই আপনার জন্য। তাই না? তাদের মতামত নিয়ে-------।

-আমি তো------।

ভোরের কথাটা আর বলা হলো না। তার আগেই তাসমিদ ভোরের একটা হাত চেপে ধরে ভোরকে টেনে কিছুটা সরিয়ে আনলো। ভোর ভয় পেয়ে গেল তাসমিদের হঠাৎ এমন কাজে। কাজী সাহেবকে কিছু বলার সুযোগটুকুও পেল না বেচারি।

-কাজী সাহেব? আপনি দয়া করে আপনার নিজের কাজ করুন। বিয়ে পড়াতে এসেছেন বিয়ে পড়ান। আমার আর ভোরের পরিবার মেনে নিলে এভাবে নিশ্চয়ই বিয়েটা করতে হতো না? আর দয়া করে তাড়াতাড়ি করুন একটু। বেশ তো রাত হয়ে গেছে? আপনার তো বাড়ি ফিরতে সময় লাগবে----।

-তা সাক্ষীর কি ব্যবস্থা? পাত্র পাত্রীর দুজন করে চারজন সাক্ষী লাগবে। আর মেয়ে সাক্ষী হলে একজন বেশি----।

-সাক্ষীর ব্যবস্থা আছে। ওরা বাইরেই অপেক্ষা করছে। আপনি ডাকলেই সাইন করতে চলে আসবে----।

কাজী সাহেব নিজের কাগজপত্র বের করতে করতে কিছু একটা ভেবে আবার ভোরের দিকে তাকালেন। 

-আপনার কত বয়স হয়েছে আম্মু?

-১৫ শেষ। ১৬------।

-ভোর? তুমি থামবে? কি যা তা বলছ এসব?

পাশ থেকে তাসমিদ ভোরকে ধমকে দিয়ে উঠতেই ভোর ভয়ে আবার চুপসে গেল। কাজী সাহেব ততক্ষণে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেছেন। তাসমিদ একটু ইতস্তত করে উনার দিকে তাকালো।

-ছোটো মানুষ তো। কি বলতে কি বলছে। আপনি বিয়েটা পড়ানো শুরু করুন হুজুর।

-এই বিয়েটা কিছুতেই আমি পড়াতে পারবো না। মেয়ের ১৮ বছরই হয় নি। তার উপরে পরিবারের কেউ নেই। এই বিয়ে কিছুতেই হওয়া সম্ভব না।

-দেখুন হুজুর। ধর্মমতে ১৪ বছর হলে মেয়ের বিয়ে দেয়া জায়েজ আছে। তাই না? ওর বাবা মার এই বিয়েতে মত নেই আপনাকে তো আগেই বলেছি। আর বিয়ে করেই আমি ভোরকে নিয়ে সোজা ওর বাবা মায়ের-----।

-বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়া একটা নাবালেগ মেয়ের বিয়ে আমি করাতে পারবো না। আমাকে মাফ করবেন। আর কত বয়সে বিয়ে করানোর নিয়ম আছে সেটা আমি কাজীকে আপনার শেখাতে হবে না। 

-দেখুন হুজুর। আপনি নাহয় কিছু টাকা বেশি নিবেন। দয়া করে কাগজে ওর বয়স ১৮ করে দিয়ে-------।

-একটা পবিত্র সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছেন, সেখানেও এতো বড় মিথ্যে দিয়ে শুরু? মাফ করবেন। এই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। আপনারা অন্য কাজী দেখুন যে কিনা টাকার কাছে নিজের ঈমান বিক্রি করতে পারবে। আমাকে মাফ করুন। আমি পারবো না। আর ভোর? আপনিও নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যান। 

কাজী সাহেব কথাগুলো বলে একবার ভোরের দিকে তাকিয়ে রুমটা থেকে বেরিয়ে যেতেই তাসমিদ রাগে ফুঁসতে শুরু করেছে। বদি সহ আরো তিনজন প্রায় হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো। কাজী সাহেবকে এভাবে চলে যেতে দেখে তাদের চক্ষু ছানাবড়া টাইপের অবস্থা। এতো খুঁজে একজন কাজীকে ম্যানেজ করে আনার পরও ওদের কাজটা এভাবে ভেস্তে যাবে সেটা হয়তো তারা আশাও করে নি। তাসমিদ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ সামলে নিজের লোকদের দিকে তাকালো। 

-কাজী সাহেব বয়স্ক মানুষ। উনাকে সম্মানের সাথে উনার অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসবে। আর খেয়াল রাখবে যাতে কোনোরকমের কোনো চালাকি করতে না পারে। আর পুলিশের সাথে কন্টাক করার চেষ্টা করলে কি করতে হবে আশা করি সেটা তোমাদেরকে বলে দিতে হবে না।

-জি স্যার। আমরা এখনি যাইতাসি। 

তাসমিদের কথায় দুজন বাইরে বেরিয়ে যেতেই তাসমিদ ইশারায় বদি আর একজনকে চলে যেতে বলতেই লোকদুটো বেরিয়ে গেল। তাসমিদ এবারে এক পা দু পা করে ভোরের দিকে এগিয়ে এসে ভোরের একটা হাত মচকে ধরে ভোরকে নিজের কাছে টেনে নিলো। ভোর তাসমিদের কাছ থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই তাসমিদ ধাক্কা দিয়ে ভোরকে সামনে থাকা চেয়ারটায় বসিয়ে ভোরের দিকে বেশ কিছুটা ঝুঁকলো। 

-কি ভেবেছিস কি তুই? এতো সহজেই আমার কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবি? আর তোর ওই রোদের কাছে ফিরে যাবি তাই না? সেটা তো হচ্ছে না ভোর। রোদ তো তোকে পাবে না, কিছুতেই না। চেয়েছিলাম বৈধ উপায়ে তোকে নিজের কাছে আটকে রাখতে। কিন্তু সেটা তো চাস ন। তুই তাই না? তাহলে এবার এমন কিছু হবে যার পর তোর রোদও তোকে কখনো গ্রহণ করবে না। অন্যায়টা আমি করতে চাই নি, তুমি নিজে আমাকে কাজটা করতে বাধ্য করলে ভোর।

-কি? কি করবেন? আপনি এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন?

-হা হা। বাচ্চা মেয়েটা এখনো এসব কিছু বুঝো না। নো প্রবলেম। আমি বুঝিয়েই দিচ্ছি। 

ভোর কিছু বলার আগেই তাসমিদ ভোরের ক্রসবেল্ট আর স্কার্ফটা একটানে খুলে নিলো। ভোর বাধা দেয়ার জন্য হাত পা ছুড়ছে দেখে তাসমিদ এবারে ভোরের হাত দুটো চেয়ারের সাথে চেপে ধরে ভোরের মুখের দিকে এগিয়ে এলো। ভোর মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই তাসমিদ ভোরের একটা হাত ছেড়ে ভোরের চুল চেপে মুখটা নিজের মুখের কাছে আনা শুরু করলো। লোকটার চোখেমুখে যে পাশবিক হিংস্রতা ফুটে উঠেছে তার দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য কোনো মেয়ের আছে কিনা সন্দেহ। ভোর ততক্ষণে ভয়ে, আতঙ্কে আবার কেঁদে ফেলেছে। সেই কান্না ভেজা মুখটা দেখেও তাসমিদের মনে বিন্দুমাত্রও মায়া জন্মালো না। তার মনে মস্তিষ্কে আজ শুধু ঘৃণার রাজত্ব।

-আমাকে যেতে দিন প্লিজ? এতো বড় অন্যায়টা করবেন না প্লিজ স্যার। 

-তোমাকে তো আমি টাইম দিয়েছিলাম চেইঞ্জ করার জন্য। একবার নয়, দুবার সময় পেয়েছ তুমি। বাট তুমি চেইঞ্জ করলে না। চেইঞ্জ করে নিলে এতো পিচ্চি বাচ্চা যে সেটা অন্তত বোঝা যেত না। আর বিয়েটাও এতোক্ষণে হয়ে যেত ভোর। তাহলে অন্যায়টা কে করেছে বলো? তুমি নাকি আমি?

-আমাকে যেতে দিন---। আমাকে যেতে দিন। আমাকে------।

-শশশস। আরে? আবার কেন কাঁদছ? বিয়েটা এখন হয়নি তাতে কি হয়েছে? তোমাকে নিজের করে নেয়ার তাড়াটা শেষ হলেও বিয়ে আমি তোমাকে করবোই। তোমার রোদের মতো ছেড়ে দিবো না মাঝপথেই। বিলিভ মি।

-ছাড়ুন।

-উফফ! এতো জোর কেমনে গলায় তোমার বলো তো? জানো আমার পিচ্চিটা যখন কাঁদত আমি টেরই পেতাম না কখনো। আর তুমি তো মাশাল্লাহ পুরো দুনিয়ার সবাই মরে গেছে এমনভাবে কাঁদছ। কিন্তু এতো চিৎকার করে কেঁদেও তো লাভ নেই বিউটিফুল। এই ইন্ড্রাস্টিয়াল এরিয়ার কয়েক মাইলের মধ্যে কেউ নেই যে আসবে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে। তবে তোমার রোদ তো আসবে। হাতে তো বেশি সময় নেই। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই রওনা হয়ে গেছে। আমরাও আর দেরি না করি সুইটহার্ট। প্রমিস একটুও কষ্ট দিবো না। লেটস হ্যাভ সাম ফান বিউটিফুল।

-না। প্লিজ এমন করবেন না। 

ভোরের যে হাতটা তাসমিদের হাত থেকে আগেই ছাড়া পেয়েছিল সেই হাতটা দিয়েই ভোর তাসমিদকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাসমিদের শক্তিশালী শরীরটা ঠেলে সরিয়ে দেয়া কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছে না বাচ্চা মেয়েটার কাছে। এদিকে বাইরে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ হলেও তাসমিদ সেটায় পাত্তা না দিয়ে ভোরকে।আরো শক্ত করে চেপে ধরে ভোরের দিকে এগোলো। তাসমিদের এখন অন্য কোনোদিকে মন দেয়ার সময় নেই। তার এখন নেশা হয়ে গেছে, ভোরকে পাওয়ার নেশা, অথবা রোদকে হারানোর। ভোরকে পাওয়ার নেশায় এতোটা মত্ত না হলে টের পেত ততক্ষণে রুমের বাইরে তার দুজন ভাড়াটে মাস্তান বেধড়ক মার খেয়ে কুপোকাত হয়ে গেছে। 

ভোরের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েই হঠাৎ একটা বিকট শব্দে থমকে গেছে তাসমিদ। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ভোরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে পিছনের দিকে তাকাতেই মুখে একটা প্রকান্ড ঘুষি লেগে ছিটকে বেশ অনেকটা দূরে গিয়ে পড়লো তাসমিদ। ঘুষিটা এতো জোরে লেগেছে যে ফ্লোরে পড়ে ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে তাসমিদ। কি ঘটেছে সেটা বোঝার জন্য ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল ভোরের সামনে একটা অবয়র। অবয়বটা ভোরের মুখটা দু হাতে তুলে ধরে ভোরের মুখটা পাগলের মতো চুমোয় ভরিয়ে দিচ্ছে। আর ভোরও যেন সেই স্পর্শে কেঁপে উঠছে বারবার। তাসমিদ শক্ত করে চোখ বুজে চোখের ঝাপসা ভাবটা কাটানোর চেষ্টা করলো। তবু দৃশ্যটা যেন তাসমিদের চোখের সামনেই ভেসে রইলো। এই অবয়বটা কার তাসমিদ না দেখেও বলে দিতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এতো তাড়াতাড়ি কি করে ভেতরে এলো? এতোগুলো বাধা পেরিয়ে এতো তাড়াতাড়ি আসলো কি করে?

২২!! 

রোদ হঠাৎ করে কোথা থেকে ঝড়ের মতো এসে ভোরের সামনে দাঁড়িয়েছে সেটা ভোর টেরই পায়নি। তাসমিদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টায় রোদকে খেয়ালই করে নি মেয়েটা। এখন তাই রোদ যখন আচমকা ভোরের মুখে এলোপাথাড়ি চুমুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছে তখন ভোর পুরোই থতমত খেয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর রোদ শান্ত হয়ে ভোরের মুখটা দু হাতে তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো। ভোরও ততক্ষণে ঘোর কাটিয়ে রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিয়েছে। রোদ তাতে কিছুটা ভয়ে পেয়েই ভোরকে নিজের সাথে আকঁড়ে ধরলো।

-ভোরপাখি? তুই ঠিক আছিস? এই দেখ আমি চলে এসেছি না? আর কোনো ভয় নেই পাখিটা। তাকা আমার দিকে? আর এই মেয়ে? এভাবে কাঁদছিস কেন বল তো? মরে গেছি নাকি আমি হ্যাঁ? এতো দেরি করে আসায় ভয় পেয়ে গেছিল বুঝি আমার পিচ্চিটা? হুম? বল না ভোর? রাগ করেছিস তার জন্য? প্লিজ সোনাপাখি? কথা বল? বল না কিছু ভোর?

-বাহ! ইম্প্রেসিভ মিস্টার রোদ! এতো তাড়াতাড়ি তুমি ভোরের খোঁজে এখান পর্যন্ত চলে আসবে আমি সেটা মোটেও আশা করি নি মিস্টার রোদ। বাট! চলে যখন এসেছ তখন কি আর করার আছে? নিজের চোখের সামনেই তোমার ভোর, তোমার প্রাণভোমরাকে তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতেই নাহয় দেখো। 

ফ্লোর থেকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়েছে তাসমিদ নিজেও। চোখের সামনে আবছা ধোঁয়াশা কেটে যেতেই আবার নিজের আগের রূপে ফিরে এসেছে সে। তার রোদকে ধ্বংস করে দেয়ার পণটা যেন নতুন উদ্দমে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আবার। আর এতোক্ষণে তাসমিদের কথাটা মনে পড়তেই মাথায় রক্ত উঠে গেছে রোদের। ভোরও তাসমিদের কথায় ভয়ে কেঁপে উঠতেই রোদের নজর গেল ভোরের দিকে। মেঝে থেকে ভোরের স্কার্ফটা তুলে ভোরের গায়ে পেঁচিয়ে দিয়ে তাসমিদের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একপা একপা করে এগোতে শুরু করেছে রোদ। 

-তাসমিদ? তোকে তো আমি-----। তোর সাহস হয় কি করে আমার ভোরের গায়ে হাত দেয়ার?

-সাহস? সাহসের দেখলিটা কি? সময়ের আগেই পৌঁছে গেছিস বলে ভাবিস না তুই এখান থেকে ভোরকে নিয়ে চলে যাবি,  আর আমি হা করে সেটা দেখবো। আজ এখানে হয় তোর লাশ পড়বে, নয়তো আমার। আর ভোরকে পাবার কথা তো তুই ভুলেই যা।

-আমার ভোরের দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ জোড়া উপড়ে নেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে সবসময়ই ঠিক ওর কাছে পাঠিয়ে দিবে তাসমিদ। তুই আমার ভোরকে কষ্ট দিয়েছিস, ওর দিকে কুনজরে দেখেছিস, তবু তোর চোখ জোড়া এখনো ভালো আছে কি করে বল তো? উঁহু। এটা তো আমি মানবো না। আর ভোরের দিকে হাত বাড়ানোর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে। যাতে এরপর থেকে অন্য কেউ আমার ভোরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাবতেও শিউরে ওঠে।

কথাগুলো বলেই রোদ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তাসমিদের পেটে ঘুষি বাগিয়ে দিয়েছিল। তাসমিদও ছিটকে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে পড়লেও প্রায় সাথেসাথেই উঠে রোদের দিকে তেড়ে এলো। রোদ এবারে তাসমিদের দিকে এক পা এগিয়ে এসে তাসমিদের একটা হাত টেনে ধরে এলোপাথাড়ি ঘুষি বসালে তাসমিদের নাক বরাবর। তাসমিদের নাক মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে দেখেও থামছে না রোদ। দৃশ্যটা দেখেই ভোর ভয় পেয়ে গেল। রোদকে দেখে মনে হচ্ছে আজ রোদ হয়তো তাসমিদকে মেরেই ফেলবে। রোদ এবারে তাসমিদকে আরেকটা ঘুষি মারতেই তাসমিদ ছিটকে কিছুটা দূরে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো। রোদ সেদিকেই পা বাড়িয়েছে দেখে ভোর ছুটে এসে রোদকে পিছন থেকে জাপটে ধরে ফেলায় রোদ থেমে গেল। রোদ ভোরের দিকে ঘুরে ভোরকে আলতো করে জড়িয়ে নিলো রোদের সাথে। রোদ ভোরের কপাল ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে কিছু বলার আগেই আবার পিছন থেকে খচখচ আওয়াজ হতেই রোদ বিরক্তভরা চোখে তাসমিদের দিকে ফিরে তাকালো।

-তুই কি আজ আমার হাতে মরবি বলেই ঠিক করেছিস তাসমিদ? এখনও সময় আছে আমার সামনে থেকে চলে যা।

-যার জন্য তুই আমার বোনকে ধোঁকা দিয়েছিস তার সাথে সুখে শান্তিতে থাকবি, আর আমি ভাই হয়ে সেটা দেখার পরও কিছু করবো না কথাটা ভাবলি কি করে রোদ? যার জন্য আমার বোনটাকে আমি হারিয়েছি তাকে তো সুখে থাকতে দিবো না আমি রোদ। অন্তত আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তাকে আমি বরবাদ করার চেষ্টা করেই যাবো।

-বোন? আমি কাকে ধোঁকা দিয়েছি?

রোদের প্রশ্নে তাসমিদ যেন একটু মজাই পেয়ে হাসলো। রক্তাক্ত ঠোঁটের কোণে সেই ব্যঙ্গের হাসিটা ভয়াবহ দেখালো। রোদ ভ্রু কুঁচকে তাসমিদের এই ভয়ংকর রূপটাই দেখছে।

-কাউকেই ঠকাস নি তুই? রশ্নি, নামটা মনে আছে রোদ? রশ্নি, আমার ছোটো বোন।

-ওহ! ওই মেয়েটা এখনো পিছা ছাড়ে নি? ওফ! মেয়েটার অত্যাচারে রীতিমতো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।

-রোদ! মুখ সামলে কথা বল। আমার বোনকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বললে খুন করে ফেলবো তোকে আমি। তোকে পাগলের মতো ভালোবাসার এই পুরস্কার দিয়েছিস তুই মেয়েটাকে? আবার বলছিস ও তোকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছিলো? কাউকে ধোঁকা দেয়ার পরও সে যে তোকে ফিরে পেতে চেয়েছিল সেটাই কি ওর অপরাধ ছিল? এতো বড় অপরাধ যে ওকে-------।

-ধোঁকা? তাও আবার আমি দিয়েছি রশ্নিকে? ধোঁকা কখন দেয় সেটা জানেন তো মিস্টার তাসমিদ? ধোঁকা তখন দেয়া হত যদি ওকে আমি কখনো 'ভালোবাসি' বলেও অন্য কারো দিকে আকৃষ্ট হতাম। ধোঁকা তখন হত যদি ওকে হাজারটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দিতাম। একটু আগে আপনি বললেন না ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে? সেটাই আপনার বোনের জীবনের একমাত্র সত্য, আর বাকি সব হলো ওর অসুস্থ মস্তিষ্কের কল্পনা।

-নিজের দোষ ঢাকতে আর কত মিথ্যে গল্প ফাঁদবে মিস্টার রোদ? তুমি কি ভাবো আমার বোনের কথার চেয়ে আমি তোমার বলা গল্পটা বিশ্বাস করবো?

-গল্প ভাবলে গল্প ভাবতেই পারেন। তবু সত্যিটা আপনারও জানা দরকার। আমি রশ্নিকে বহুবার বলেছি ওর ফ্যামেলির কারো কন্টাক নাম্বার দেয়ার জন্য। ও দেয় নি। ও নিজের দুনিয়ায় নিজের কল্পনাগুলো নিয়েই ছিল। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল ওর এসব পাগলামিগুলো মেনে নেয়া। তাই আর কোনো যোগাযোগই রাখি নি ওর সাথে। 

-মানে? কি বলতে চাইছ তুমি?

-ওদের ব্যাচটা যখন ভার্সিটিতে এডমিট হয় তখন আমাদের ফাইনাল ইয়ার চলছিল। একে তো সারাদিনের ক্লাস, তার উপরে বিকেল থেকে একটা পার্টটাইম জব। সব মিলিয়ে ব্যস্ততায় সময় কাটছিল আমার। এর মধ্যে একদিন রশ্নি আমাকে নক করে এফবিতে। ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র জানার পর প্রায়ই মাঝেমাঝে ওর সাথে মেসেজিং হতো। ঠিক মেসেজিং হতো বললে ভুল হবে। সারাদিনের ক্লান্তির পর ঘুমানোর সময় মেসেজ চেক করে ওর মেসেজ দেখলে রিপ্লাই করতাম। এর মধ্যে রশ্নি যে আমাকে প্রায় সারাদিন মেসেজ করত সেটা আমার চোখেই পড়ে নি কখনো। ঝামেলা শুরু হলো আমার অনার্স ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পর। ক্লাসের টেনশন নেই, জবটা পার্মানেন্ট হয়েছে। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ভোরকে নিয়ে, আর এদিকে মেসেঞ্জারবক্স রশ্নির মেসেজে ভর্তি হয়ে আছে সেটা আমি জানিও না। 

-মানে কি? যদি কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে রশ্নি কেন বললো আমাকে----?

-বলছি শুনুন। ফাইনালের মাস খানেক পর মাস্টার্সে এডমিশন নেয়ার নোটিশ হলে ক্যাম্পাসে গেলাম ভর্তি হওয়ার জন্য। সেখানে হঠাৎই রশ্নির সাথে দেখা। ও আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে ভালোবাসার কথাটা বলে। আমিও সোজা 'না' বলে দিই। ওকে ভোরের কথাও বলি। কিন্তু রশ্নি মানতেই নারাজ। মাস্টার্সে এডমিশন নেয়ার পরও আমি স্টাডি কন্টিনিউ করতে পারি নি একমাত্র রশ্নির জন্য। প্রায় প্রতিদিনই ও কোনো না কোনো ঘটনা ঘটাতো। হয় আমার ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো, কখনো প্লেগ্রাউন্ডে, কখনো লাইব্রেরিতে। 

-কি যা তা বলছেন?

-যা তা বলছি না। আমার কথাগুলো সত্য না মিথ্যে ভার্সিটিতে খবর নিলেই জানতে পারবেন। এসবের পর আমি ক্যাম্পাসে যাওয়া অফ করে দিলাম। রশ্নি কোথা থেকে আমার নাম্বারও জোগাড় করে ফেললো। এরপর শুরু হলো ওর অদ্ভুত মেসেজের। ওর আচরণ যে নরমাল নয় সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই পরিচিত একজন সাইকায়েটিস্টের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলাম। উনি বললেন রশ্নিকে সামনাসামনি দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন ওর কি সমস্যা হয়েছে। এর মধ্যে একদিন রশ্নির মেসেজ পেলাম। কল রিসিভ না করলে সুইসাইড করবে, এমন একটা মেসেজ। আমি রশ্নিকে কল করে দেখা করতে বলি। পরেরদিন দুজনে মিট করি, ওকে ডক্টরের কাছে নিয়েও যাই। ওর সাথে কথা বলে ডক্টর কিছু মেডিসিনও প্রেসক্রাইব করে। ইমিডিয়েটলি ওর ফ্যামিলির কারো সাথে কথা বলে কাউন্সিলিং শুরু করতে বলে।

-কি হয়েছিল রশ্নির? এখন কি মেয়েটাকে পাগল বলে নিজে বাঁচতে চাইছ তুমি?

-আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিছুই বলছি না মিস্টার তাসমিদ। ডক্টর আমাকে যা বলেছে আমি আপনাকে শুধু সেটুকুই বলছি। রশ্নির অ্যাডেল সিনড্রোম নামের একটা সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম ছিল। সমস্যাটা কি পরিমাণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সাধারণত এই রোগটায় যাকে রোগী ভালোবাসে, তার দিকে এতোটা আকৃষ্ট হয় যে অন্য কারো কথা ভাবতেও পারে না। স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে অনেকটাই দূরে সরে যায়। রিজেক্ট করে দেয়ার পরও সেই স্পেসিফিক মানুষটাকে নিয়েই নিজের দুনিয়া সাজায়, তাকে কল্পনা করে, তার সাথে কথা বলে। আরও বিপদজনক হয় যখন রিজেকশান মেনে নিতে পারে না। তখন সে নিজের উপরে বেপরোয়া আচরণ কর, ইভেন সুইসাইডও করার চেষ্টা করে ডিপ্রেশন থেকে। 

-এখন আমার সুস্থ স্বাভাবিক বোনটাকে তুমি পাগল প্রমাণ করতে চাইছ রোদ? তুমি হেনতেন কথাগুলো বললেই আমি মেনে নিবো ভেবেছ? আমার বোনটা মরে গেছে বলে কি আমি তোমার এসব তত্ত্ব শুনে চুপ করে যাবো?

-হোয়াট?

তাসমিদের মুখে রশ্নির মৃত্যুর খবরটা শুনে রোদ চমকে গেছে দেখে তাসমিদ একটু শ্লেষ করে হাসলো। রোদকে তার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হচ্ছে না এই মূহুর্তে। আর রোদ! সে অবাক চোখে তাসমিদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার ভাষাই যেন খুঁজে পাচ্ছে না ছেলেটা।

-আমার কথাগুলো আপনি বিশ্বাস করবেন না জানি। তবু বলছি। সেদিন রশ্নিকে ডাক্তার দেখিয়ে আনার পর ওর সাথে আমার দেখা হয়নি। ও প্রায়ই কল করত। আমি কয়েকবাট চেষ্টা করেছি ওর কাছ থেকে ফ্যামেলির কারো নাম্বার কালেক্ট করার জন্য। তাতে হিতে বিপরীত হওয়া যাকে বলে সেটাই হলো। ও আরো অধিকার নিয়ে আমাকে চাইতে শুরু করেছে তখন। হয়তো ওর মাথায় চলছিল যে আমি ওর কেয়ার করি, ওর ডেইলি খোঁজ নিচ্ছি। একদিন ও আমাকে আর ভোরকে কোথাও একটা দেখে কল দিয়ে রীতিমতো মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। ওর লাস্ট কথা ভোর অথবা ওর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। এখন আপনি বলুন, আপনি হলে কাকে বাছতেন? যাকে বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে ভালোবেসে এসেছেন, তাকে? নাকি যে ক্ষণিকের আবেগে আপনাকে ভালোবাসত তাকে?

-আমার বোনের ভালোবাসাটা তোমার কাছে ক্ষণিকের আবেগ?

-আপনার বোন যেমন আমাকে ভালোবেসেছে, তার চেয়ে কয়েক হাজার লক্ষ কোটি গুণ আমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসি। আপনার বোনের ভালোবাসাটাকে আমি সম্মান করি ঠিক আছে। কিন্তু তার জন্য তো আমি নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে পারবো না। 

-হুম। বুঝলাম। কিন্তু ও মরে যাবে কথাটা জানার পরও একবারের জন্যেও মনে হয় নি মেয়েটাকে বাঁচানোর একটা চেষ্টা করতে? ওর বাড়িতে খবর দিতে? তুমি তো বললে যে রোগটা হয়েছিল তাতে ডিপ্রেশনে চলে যায়। তবু কেন একবার চেষ্টা করলে না বাসায় খবর দেয়ার?

-দেখুন তাসমিদ সাহেব। আমি---। রশ্নির সাথে আমার কোনো যোগাযোগই ছিল না। ও মারা গেছে সেই খবরটাই আমি এখন আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। আর ওকে যোগাযোগ করতে নিষেধ করার পর আমি ওর নাম্বারটার মেসেজ ব্লক করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ইগনোর করলে একসময় ও নিজেই বুঝতে পারবে। কিন্তু এমনটা হবে আমি ভাবতে পারি নি বিশ্বাস করুন।

-তুমি তো বলেই খালাস, সরি আমি বুঝতে পারি নি। কিন্তু আমি যে আমার বোনটাকে হারিয়ে ফেললাম? তোমার ভুলটাও কি কম ছিল রোদ? তুমি হয়তো সত্যিই বলছ, হয়তো নতুন গল্প সাজাচ্ছ। কিন্তু আমার বোনটাকে তো আমি হারিয়ে ফেললাম। আর সেটাও শুধু তোমার জন্য। 

-ভুলটা স্বীকার করছি তাসমিদ সাহেব। কিন্তু আমি এক বিন্দুও মিথ্যে বলছি না। আপনি আমার আর রশ্নির চ্যাটগুলো দেখুন, ডক্টরের সাথে ওর ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলুন-----।

-মানলাম তুমি সব সত্যি বলছ। আসলেই আমার বোনের মানসিক রোগ ছিল। কিন্তু তাতে কি সব মিটে যাবে মিস্টার রোদ? 

-মানে?

-মানে হলো তোমার জন্য আমার বোনটা মরেছে। কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে মরেছে। গত ছয়টা মাস কোমায় ছিল মেয়েটা। একবারের জন্যও চোখ মেলে তাকায় নি আমার পিচ্চিটা। আর যার জন্য ওর এই পরিণতি হয়েছে তাকে আমি এমনি এমনিই ছেড়ে দিবো? তাহলে মরার পর বোনের সামনে কোন মুখ নিয়ে গিয়ে দাঁড়াবো বলো তো? তুমি যার জন্য আমার বোনকে দূরে সরিয়ে দিলে বা গ্রহণ করলে না, তোমরা দুজন সুখে শান্তিতে থাকবে, সেটা আমি ভাই হয়ে মেনে নিবো? অসম্ভব। আমার বোন যে ভালোবাসা না পেয়ে হাহাকার করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে সেই একই অতৃপ্তি নিয়েই তোমার ভোরকে বেঁচে থাকতে হবে রোদ। আমার বোনের যে ভালোবাসাটা পূর্ণতা পায় নি, তোমারও সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না রোদ। আজ এখানেই তোমার সাথে সাথে সেই ভালোবাসার ইতি ঘটবে। ইতি ঘটবে ভোরের রোদের। ভয় নেই। তোমার ভোরকে আমি স্পর্শও করবো না। ওর উপরে আমার আর কোনো রাগ নেই। ওকে সসম্মানে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো। তবে শুধু একা ভোরকে। এখানেই সমাপ্তি রচিত হোক ভোরের রোদের। 

তাসমিদের কথাগুলো শুনে রোদ যেমন চমকে গেছে, তেমনি ভোরেরও ভয় করতে শুরু করেছে। ভয়ের চোটেই ভোর আবার রোদের একটা হাত চেপে ধরলো। রোদ ভোরকে একটু সাহস দেয়ার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করলো। তাসমিদের দিক থেকে চোখ সরাতেও কেমন একটা ইতস্তত হচ্ছে রোদের। মনে হচ্ছে তাসমিদের মাথায় আজ খুন চেপেছে। লোকটা আজ কিছু না কিছু একটা করে বসবেই। লোকটাকে আটকাতে পারবে তো রোদ? নাকি সত্যি সত্যি এখানেই সমাপ্তি ঘটবে ভোরের রোদের গল্পটার?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন