আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

ভোরের রোদ - পর্ব ১৭ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


৩৩!! 

-আমাকে ছেড়ে তুই চলে যাবি ভোর? তুই চলে গেলে মরে যাবো বিশ্বাস কর? তোর থেকে দূরে যাওয়ার চেয়ে আমার মরে যাওয়াই ভালো রে ভোরপাখি। তুই প্লিজ যাস না আমাকে ছেড়ে ভোর? প্লিজ ভোর?

রোদ হুট করে বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ভোরকে বুকে জাপটে ধরে কথাগুলো বলছে। ছেলেটা পারলে ভোরকে এতোক্ষণে নিজের বুকের মধ্যেই লুকিয়ে ফেলতো এমন করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ভোরকে। ভোর এবারে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদতে শুরু করেছে। ভোরের কান্নার শব্দে রোদ মুখ তুলে ভোরের মুখটা দুহাতে আগলে নিয়ে ভোরের চোখে চোখ রাখলো। এবারে রোদের কান্নাভেজা চোখ জোড়া ভোরের চোখে ধরা পড়লো। আর ভোর রোদের চোখের সেই ভিজেভাবটা দেখেই থমকে তাকিয়ে রইলো। গলা দিয়ে টু শব্দটাও যেন বের হচ্ছে না মেয়েটার। এই পাগল মানুষটার পাগলের মতো ভালোবাসার বাঁধন ছেড়ে ভোর দূরে গিয়ে থাকবে কি করে? কি করেই বা তাকে দূরে যেতে দেখে সহ্য করে থাকবে?

-ভোর? কাঁদছিস কেন তুই? আচ্ছা যা। তুই তোর বড়আব্বুর সাথেই চলে যা। থাকতে হবে না তোকে আমার কাছে। আমি দূর থেকেই নাহয় আমার ভোরকে ভালোবেসে যাবো আজীবন। যদি আসলেই তুই আমার ভাগ্যে থাকিস তাহলে কেউ সেটা আটকাতে পারবে না ভোর। তোর বড়আব্বুও নয়। এখন আর কাঁদিস না প্লিজ? তোর কান্না আমার সহ্য হয়না জানিস না তুই?

-কি বললে তুমি? আমি? আমি চলে যাওয়ার জন্য কাঁদছি? তুমি কথাটা বলতে পারলে রোদ?

ভোর প্রচন্ড অভিমানে রোদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু সরে এসে আবার ফোঁপাচ্ছে দেখে রোদ আবার ভোরকে নিজের বুকে টেনে নিলো। 

-যেতে বারণ করছি বলেও কাঁদছিস। যেতে বললাম বলেও কাঁদছিস। তুই আসলে চাইছিস টা কি ভোর? আর এতো কাঁদছিসই বা কেন তুই? আমি কি মরে গেছি নাকি রে হ্যাঁ? এভাবে কাঁদছিস যেন আমি তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চলে গেছি? আজব তো!

-ছাড়ো তো তুমি। ছাড়ো। একদম ধরবা না তুমি আমাকে। আমি--। আমি থাকবোই না তোমার কাছে। বিয়ে করার শখ হয়েছে না তোমার? তো কর না বিয়ে? কে ধরে রেখেছে তোমাকে? ছাড়ো আমাকে ছাড়ো?

-তোর এতো সাহস! তুই আমার মুখের উপরে বলছিস থাকবি না আমার কাছে! 

-একশো বার বলবো, হাজার বার বলবো। ছাড়ো তুমি আমাকে।

-ভোর? আরে বাবা! এতো সাংঘাতিক টেনশনের মাঝেও তোর আমাকে রাগ দেখাতে হবে? পায়ে পা বেঁধে ঝগড়া না করলে কি এখন চলছে না তোর?

-কি বললে তুমি? আমি ঝগড়ুটে! ওহ! বুঝেছি তো আমি। এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবে না তোমার। আমি কে তোমার? বলবেই তো এখন এসব। চলে যেতে বলবে একবার, ঝগড়া করছি, জ্বালাচ্ছি, আরো কতো কি শুনবো এখন---।

ভোরের কাঁদোকাঁদো মুখটা দেখে আর মেয়েটাকে রাগানোর সাহস হলো না রোদের। দু্ষ্টুমি না বুঝে পাগলিটা যে খেঁপে গেছে সেটা বেশ ভালোই টের পাচ্ছে রোদ। তাই রোদ এবারে আর বাড়াবাড়ি না করে ভোরের কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। ভোর তখনো অভিমানে মুখ কালো করে নিজেকে রোদের উষ্ণ বাঁধনটা থেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।

-ওলে বাবা লে। আমার পিচ্চি বউটা দেখি খুব রাগ আজকে আমার উপরে? কি গো বউসোনা? এমন করছ কেন গো? 

-ছাড়ো বললাম না তোমাকে? আমি থাকবোই না। এক্ষুণি আমি বড়আব্বুর সাথে চলে যাবো। তোমাকেও আর আমার ঝগড়া সহ্য করতে হবে না। বিরক্তও হতে হবে না।

-বাহ! কি সুন্দর আবদার! তুই চলে যাবি? যেতে পারবি?

-পারবো না কেন? ১০০ বার পারবো।

-গিয়ে দেখা। এখান থেকে যাওয়ার কথা ভাবলেও খুন করে ফেলবো না তোকে? কি ভেবেছিস তোর বড়আব্বু পুলিশের ভয় দেখাবে আর আমি ওমনি ঘাবড়ে গিয়ে তোকে যেতে দিবো উনার সঙ্গে? হোয়াট এ জোক! শোন ভোর। তোকে নিজের কাছে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে লুকিয়ে রাখার মতো অধিকার আমার আছে। তুই, তোর বড়আব্বু-মানিস বা না মানিস, আই ডোন্ট কেয়ার। তোকে আমি কখনো কোথাও হারিয়ে যেতে দিবো না ভোর। এটাকে তুই জেদ বল, ভালোবাসা বল বা পাগলামি। আমার কিচ্ছু যায় আসে না তাতে। আমার শুধু তোকে চাই। আমার ছোট্ট মিষ্টি ভোরপাখিটাকে।

-রোদ!

-কিন্তু বউসোনা? এটা কিছু হলো বলো তো? এসব কিন্তু ঠিক না বুঝছ?

-কি!

-এই যে তুমি আরেকটা বিয়ের পারমিশন দিয়ে দিলা! এটা কেমন কথা! তোমার সতীন নিয়ে আসলে সহ্য করতে পারবে তো তখন? নেহায়েতই তোমার বরটা লক্ষী ছেলে। আর নিজের বউটাকে বড্ড ভালোবাসে। নইলে তোমার রোদের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতোক্ষণে আরেকটা বিয়ের আসরে পেতে তাকে। হা হা হা।

-কচু ভালোবাসে। এক্ষুণি তাড়িয়ে দিচ্ছে কেমন করে সে নাকি আবার ভালোবাসে। হুহ। এখন বিয়ে করতে যাচ্ছে না ঠিকই। দুদিন পরে তো ঠিকই---।

-পারমিশনটাও তো তুমি নিজেই দিয়ে দিলে---। এখন আমি দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চাইলেও তুমি তো বারণ করতে পারবে না বউ।

-কি বললে তুমি? তুমি বিয়ে করবে আরেকটা? করো দেখি যাও? খুন করে ফেলবো না আমি তোমাকে----।

ভোর রাগে লাল, নীল, বেগুনি হয়ে রোদের শার্টের একটা কোণা চেপে ধরলো। রাগে কি করেছে মেয়েটার হুঁশই নেই। রোদ হেসে ভোরকে আলতো করে জড়িয়ে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ভোর রাগে লাল হয়ে রোদের বুকে ইচ্ছেমতো হাত আছড়ে মারতে গিয়ে ব্যাপারটা খেয়ালই করে নি। রোদ এবারে ভোরকে শক্ত করে চেপে ধরে ভোরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ভোর চমকে উঠে রোদের শার্টের কোণা খামচে ধরে চোখ বুজে নিয়েছে। বেশ কিছুটা সময় পর রোদ মুখ তুলে ভোরের লাল টুকটুকে মুখটা দেখে আলতো করে ভোরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁটজোড়া বুলিয়ে নিলো। ভোর কেঁপে উঠে চোখ মেলে একবার রোদকে দেখার চেষ্টা করে আবার চোখ বুজে নিলো।

-আর কয়বার খুন করবি তুই আমাকে ভোরপাখি? খুন তো তুই আমাকে বহু আগেই করেছিস। যেদিন প্রথমবার ছোটোমার পেটে কান পেতে তোর নড়াচড়া টের পেয়েছিলাম, সেদিনের পর থেকে প্রতিটা মূহুর্ত আমি তোর আসার অপেক্ষা করেছি। তোকে নিয়ে যখন ওই কাঁচের ঘরটায় রেখে দিল ওই খারাপ লোকগুলো, আমি প্রতিটা সেকেন্ড অপেক্ষা করেছি সেই কাঁচেঘেরা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে। তোকে যখন ঘরটা থেকে ছোটোমার কোলে ফিরে এলি তখনও আমি ছোটোমার পাশে বিছানায় বসে তোর ছোটো ছোটো হাত পাগুলোর নড়ন চড়ন দেখতাম। তুই এত্তো ছোট্টো এইটুকুন ছিলি যে কেউ তোকে আমায় দিতোই না। আমি তাই তোর পাশে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। তুই কখন বড় হবি। আজও সেই অপেক্ষাটা আমার শেষ হয়নি জানিস ভোর? তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা না ভোরপাখি। তাহলে আর কেউ আর তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। তোকে যে আমার খুব করে চাই রে ভোরপাখি। সারাজীবনের জন্য তোকে নিজের করে চাই। 

-রোদ?

রোদ আলতো করে ভোরের মুখটা দুহাতে তুলে ধরে ভোরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ অপলকে তাকিয়ে থেকে আলতো করে ভোরের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। ভোর এবারে শক্ত করে রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদও ভোরকে জড়িয়ে ধরলো আবার।

-আমার খুব ভয় করছে রোদ। আমি যাবো না তোমাকে ছেড়ে। প্লিজ?

-আরে পাগলি? তুই না গেলে কার সাধ্য আছে তোকে নিয়ে যাওয়ার? হুম? আর কার ক্ষমতা আছে আমার বুক থেকে তোকে কেড়ে নেয়ার? 

-কিন্তু রোদ? বড়আব্বু? বড়আব্বু যদি সত্যিই পুলিশ নিয়ে আসে?

-আসলে আসবে। তাতে কি? তুই ওদেরকে বলবি তুই যাবি না। তুই আমার কাছেই থাকবি। পারবি না বলতে পাখিটা?

-রোদ?

ভোর কিছু বলার আগেই দরজার বাইরে কেউ টোকা দেয়ার শব্দে ভোর আর রোদ দুজনেই চমকে উঠলো প্রথমে। কিন্তু দরজার বাইরে থেকে মেঘের কণ্ঠটা শুনে রোদ কিছুটা বিরক্তই হলো। ভোরকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে চুপ করে ভোরের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ভোর থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে দেখে রোদ ভোরের একটা হাত টেনে নিজের মাথার উপরে রেখে চোখ বন্ধ করলো।

-রোদ? আমার কথাটা একবার শোন প্লিজ? বিশ্বাস কর ভাই আঙ্কেল কিভাবে এখানে এলো আমি সত্যিই জানি না। 

-বেশ তো। মানলাম জানিস না। খুশি? এবার যা। ভাল্লাগছে না আমার কিছু শুনতে।

-রোদ? প্লিজ লিসেন টু মি। 

-কি শুনবো তোর কথা মেঘ? যাকে পাগলের মতো ভালোবাসি তাকে চলে যেতে দিবো? যাকে আজীবনের জন্য আগলে রাখতে চাই, তার থেকে বহুদূরে চলে যেতে হবে সেই শর্তে রাজি হবো? কি চাস কি তুই মেঘ? আমি তিলে তিলে মরি সেটাই চাস তো তুই? এর চেয়ে ভালো তুই একেবারেই মেরে ফেল আমাকে। মৃত্যু যদি আমাকে এই শাস্তিটা থেকে মুক্তি দিতে পারে, ক্ষতি কি তাতে?

-রোদ!

-তুই জানিস মেঘ? আমি তো ভোরকে নিয়ে বাড়িই ফিরতাম এখন। কিন্তু কথাটা কি তোর আঙ্কেল বিশ্বাস করবে? করবে না। এই যে ভোর আমার পাশে বসে চোখের পানি ফেলছে কি হবে সেই ভয়ে, সেটা কি মানবে উনি? মানবে না। কেন জানিস? তোর মতো উনিও নিজের জেদটাকেই জিতিয়ে দিতে চায়। কেন বল তো মেঘ? আমার ভোরটা আমার কাছে থাকলে খুব কি ক্ষতি হবে বল তো? খুব কি খারাপ থাকবে ও আমার কাছে? আজীবন আগলে রাখবো ওকে। কোনো কষ্ট ওকে ছুঁতে হলে আমাকে পার করতে হবে। এই সামান্য ভরসাটুকু নেই তোদের কারো আমার উপরে?

-জানিস রোদ? সব মেঘের ভাগ্যে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়া থাকে না। কিন্তু সব রোদই জন্ম হয় ভোরের আলো দেখবে বলে। হাহ। শোন ভাই। তোকে নিজের ভাই হিসেবেই মেনে এসেছি এতোগুলো বছর। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোর হারানোর ব্যথাটা সামলাতে পেরেছিলাম তোকে পাশে পেয়ে। তাই আর যাই হোক না কেন তোর ক্ষতিটা অন্তত চাইতে পারবো না কোনোদিন।

-মেঘ? আমার এখন কিচ্ছু শুনতে ইচ্ছে করছে না। তোর আঙ্কেলকে গিয়ে বলে দে ভোর আসছে না। যাবে না ও। উনার যা ইচ্ছে হয় করতে বল। ইচ্ছে হলে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে বল। যা।

-এবার তুই জেদ করছিস রোদ। 

-হ্যাঁ করছি। হাজার বার করবো। এনি প্রবলেম?

-আহ! রোদ! এটা কি ধরনের ছেলেমানুষি রোদ? তুই জানিস আঙ্কেল রেগে গেলে কি সর্বনাশ হতে পারে? কেন জটিল করছিস ব্যাপারটাকে?

-তো কি করবো কি আমি? যেতে দিবো ভোরকে? চলে যাবো ওকে ছেড়ে? তুই জানিস কি বলছিস তুই? আমি একবার চলে গেলে কি হবে জানিস না তুই? একবার গেলে আবার আমি ভোরের কাছে ফিরতে পারবো কি না কে জানে।

-রোদ! কিসব পাগলের মতো বকছিস রোদ? আঙ্কেল তো বলেই দিয়েছে তুই দেশে ফিরে এলে--- তুই ফিরে এলে আর কোনো বাধা দিবে না। তবু কেন জেদ করছিস ভাই? কয়টা বছরেরই তো ব্যাপার? দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। 

-হাহ! মেঘ তুই বাবাকে চিনিস না বলেই কথাগুলো বিশ্বাস করছিস। আমি চলে গিয়েও কোনো কাজই হবে না। ফিরে এলে আরেক গল্প শুনতে পারবি। আমি যা ই করি না কেন তোর আঙ্কেল কনভেন্স হবে না কখনও। 

-আগেই খারাপটা ভেবে নিচ্ছিস কেন তুই পাগল? তাছাড়া ততদিনে তোর ভোরও নিজের ইচ্ছের কথাটা মুখ ফুটে বলতে শিখবে। তখন তো আর আঙ্কেল বাধা দিতে পারবে না।

-মেঘ, তুই বুঝতে পারছিস না।

-আরে বাবা! জীবনে কিছু পেতে গেলে রিস্ক তো নিতেই হয়। তুই নাহয় ভোরকে পেতে এটুকু ঝুঁকি নিলি। আর আঙ্কেল তবু যদি না মানে,--উমমমম আমিই নাহয় তোর ভোরকে চুরি করে তোর হাতে তুলে দিবো। কেমন? এখন প্লিজ রাজি হয়ে যা না ভাই? আন্টিরা সবাই বাসায় টেনশন করছে তোর ভোর ম্যাডামের কল্যাণে। রাতে বাসায় কেউ এক ফোঁটাও ঘুমিয়েছে কি না কে জানে। আর সময় নষ্ট করিস না ভাই। বেশি দেরি হয়ে গেলে আমিও আঙ্কেলকে হয়তো শান্ত করতে পারবো না----।

-কিন্তু-----। ভোর----?

-ভোর তোর মতো ছেলেমানুষ না রোদ। একটু পাগলামি করে ফেলেছে ঠিকই। কিন্তু তোর কোনো ক্ষতি হোক এটা ও নিজেও চাইবে না আমি শিওর। আমার যতটুকু বলা উচিত ছিল আমি বলে গেলাম। এবার তোরা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নে কি করবি। আর এটাও মাথায় রাখিস রোদ সামনেই মেয়েটার পরীক্ষা। বড় জোর পনেরো ষোলো দিন বাকি। এই সময় এতো প্রেশার ওর পড়ায় কতটা ইফেক্ট করছে সেটা অন্য যে কারো চেয়ে তোর ভালো বোঝার কথা। আমি ড্রইংরুমে অপেক্ষা করছি তোদের। শেষ পর্যন্ত কি ঠিক করলি আমাকে জানিয়ে দিস।

মেঘ কথাগুলো বলে চলে যেতেই রোদ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে ভোরের মুখোমুখি হয়ে বসলো। ভোরের চোখেমুখে বিভ্রান্তের দৃষ্টি। দুজনের কেউই বুঝতে পারছে না কি করবে। মেঘের কথা মেনে ফিরে যাবে? নাকি আরো দূরে কোথাও চলে যাবে? যেখানে কেউ ওদের খুঁজে পাবে না। সবার দৃষ্টির অগোচরে! কিন্তু সেটাও সম্ভব হবে কি?

৩৪!! 

সেদিন মেঘের কথা মেনে নিয়ে কত বড় ভুল করেছে সেটা ভেবেই গত চারটা দিন একাকী সময়গুলো চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছে কাটিয়েছে ভোর। সেদিন মেঘ বেরিয়ে যেতেই রোদ ভোরকে আবার নিজের বুকে আলতো করে জড়িয়ে নেয়। ভোর চুপচাপ রোদের বুকে মুখ লুকিয়ে রোদের সিদ্ধান্তটা শোনার অপেক্ষায় ছিল। সেদিন হয়তো রোদ ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে চাইলেও ভোর মানা করতো না। কিন্তু ভোরের কথা ভেবেই হয়তো সেদিন স্বার্থপরের মতো পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে পারে নি রোদ। আর ভোরও সেদিন রোদকে বড়আব্বুর রোশানলে পড়তে হবে ভেবে সিদ্ধান্তটা মেনেও নিয়েছে চুপচাপ। রোদ শুধু ভোরের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস চেপে একটা কথাই বলেছিল ভোরকে।

-তুই পাশে থাকলে আমি তোর বড়আব্বুর কঠিন থেকে কঠিন শর্তগুলোও মানতে রাজি ভোর। তুই ভাল থাকলে সাত সাগর তেরো নদীও পাড়ি দিতে রাজি। শুধু তোকে সত্যি নিজের করে পাবো জানলে হাজারটা দিন নির্ঘুম প্রতীক্ষা করতেও আমি রাজি। তোকে ছাড়া এই এতো বিশাল বড় দুনিয়ায় আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার। 

সেদিন আতিক আহমেদের সব শর্ত মেনে রোদের সাধের স্বপ্নকুটির থেকে একাই বাড়ি ফিরে গেছে ভোর। আতিক আহমেদ রোদকে এলাউ করেন নি ভোরের পাশে। চারদিন আগে সেটাই ছিল রোদের সাথে ভোরের শেষ দেখা। এই চারটা দিন রোদের কেমন করে কেটেছে ভোর জানে না। তবে ওর নিজের কেমন করে কেটেছে সেটাও হয়তো ভোর নিজেও জানে না। ড্রইংরুমের টেলিফোনটা বেজে উঠলেই ছুটে এসে যখন বুঝতে পারে কলটা অন্য কারো ছিল তখন ভোরের ছোট্ট হৃদয়টা ঠিক কত শত টুকরোয় বিক্ষিপ্ত হয় সেটা যদি সে রোদকে বোঝাতে পারত! সবার সামনে ঠোঁটের কোণে অনিচ্ছার একটা হাসির রেখা টেনে থেকে রাতে রোদের গন্ধমাখা টিশার্টগুলো বুকে চেপে নির্ঘুম রাত কাটানোর গল্পগুলো যদি কাউকে শোনাতে পারতো! অথবা পড়ার বা ঘুমের ভান করে ব্যস্ত থাকায় মা, বড়মা যে খাবারটুকু রুমে যায় সেগুলো খেয়ে গলির বেড়ালগুলোর ভোরের বন্ধু হয়ে যাওয়ার ছেলেমানুষিটুকু যদি কারো চোখে ধরা পড়তো তাহলে হয়তো ভোরের রোদের ভালোবাসাটাও সবার চোখে পড়তো। ভোরের এই পাগলামিগুলো কারো চোখে পড়ে নি বলেই আজও খাবারটুকু পাড়ার মিনিবিড়ালটাকে খাইয়ে আদর করে বিদায় করে আবার রোদের টিশার্ট বুকে চেপে কাঁদতে বসেছে। কাঁদতে কাঁদতে অন্য সময় রাত পোহালেও আজ বার বার চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসছে ভোরের। একি ঘুম! নাকি চিরক্লান্তির চিরশান্তির বিদায় কে জানে!

এদিকে ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে রোদ। রাতের এখন কয়টা বাজে বোঝার উপায় নেই। সময়টা দিন নাকি রাত সেটাই খেয়াল করতে পারলো না ছেলেটা। হাত বাড়িয়ে নিজের মোবাইলটা চেক করতেই দেখলো রাতের তিনটা বেজে চল্লিশ মিনিট। স্বাভাবিক হয়ে নিজেকে সামলে নিতে আরো মিনিশ দশেক সময় লাগলো রোদের। কোনোমতে বোতল থেকেই ঢকঢক করে পানিগুলো গলায় ঢেলে দিয়ে গিলে ফেললো। এতো রাতে এই সাাংঘাতিক স্বপ্নটা কেন দেখলো সেটাই বুঝতে পারছে না রোদ। ভোরের কান্নাভেজা মুখ। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে রীতিমতো। রোদ যতই ওকে কাঁদতে বারণ করে ভোরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভোর যেন ততই দূরে চলে যাচ্ছে। রোদ হাজার ছুটেও ভোরের নাগাল পাচ্ছে না কিছুতেই। একটা সময় ভোর এতোটা দূরে চলে গেছে যে ভোরের পড়নের টকটকে লাল শাড়িটাও কেমন সাদাটে লাগছে রোদের কাছে। এই দৃশ্যটা সহ্য হয়নি রোদের। স্বপ্নের মাঝেও ভোরকে চিৎকার করে ডেকে উঠতেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে রোদের। স্বপ্নে ভোরের সেই সাদাটে শাড়িটা আবার চোখের সামনে ফুটে উঠতেই রোদ মোবাইল হাতড়ে মায়ের নাম্বারে কল করলো। এতো রাতে ভোরের সাথে কথা বলতে চাইলে বাবা মা কিভাবে রিএ্যাক্ট করবে রোদ সেটা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছে না। ওর শুধু মনে হচ্ছে এক্ষুণি ভোরের গলাটা না শুনতে পারলে ও নিজেই হয়তো মরে যাবে। 

এতো রাতে হঠাৎ মোবাইলের রিংয়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল শায়লা আহমেদের। এতো রাতে কে কল করলো সেটা ভেবে বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে দিতে গিয়ে রোদের নামটা স্ক্রিনে দেখতে পেয়ে উনার চোখের ঘুমের রেশটুকু যেন নিমিষেই কেটে গেল। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসে একবার স্বামীর ঘুমন্ত মুখের দিকে নজর বুলিয়ে কলটা রিসিভ করে কানে মোবাইলটা চেপে ধরলেন শায়লা। সন্তানের বিপদ আশংকায় কিনা কে জানে উনার নিজেকে কেমন অবশ মনে হচ্ছে। 

-রোদ?

-মা ভোর কেমন আছে মা? ভোর ঠিক আছে তো? একটু ভোরকে মোবাইলটা দিবে প্লিজ? আমি এক মিনিট ওর সাথে কথা বলবো শুধু। প্লিজ মা জাস্ট একটা মিনিট? প্লিজ মা?

রোদের হঠাৎ এমন আবদারে শায়লা আহমেদ কিছু বলার ভাষাই যেন খুঁজে পেলেন না। রোদ খুব একটা এমন পাগলামি করে না। রোদের এমন পাগলামির মানেই হলো ও ভোরকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। অন্য সময় হলে রাত বিরেতেও ভোরকে শুধু এক নজর দেখার জন্য ছুটে চলে আসতো। কিন্তু এখন তো ছেলেটা চাইলেও আর ভোরের দেখা পাবে না।

-মা তুমি শুনছ? ও মা? মাগো? শুনতে পাচ্ছ তুমি? প্লিজ শুধু একবার ভোরের কাছে মোবাইলটা নিয়ে যাও না প্লিজ? আমি প্রমিস করছি ওকে একটুও বিরক্ত করবো না। ও হয়তো একটু আগেই ঘুমিয়েছে না মা? ওকে বেশিক্ষণ কথা বলবো না। শুধু ওর মুখ থেকে 'হ্যালো' শুনেই কলটা কেটে দিবো আমি। প্রমিস মা। প্লিজ একটা বার ভোরের সাথে কথা বলিয়ে দাও প্লিজ?

-রোদ? এমন করছিস কেন বাবা? ভোরের কিছু হয়নি। ও ভালোই আছে। ঘুমিয়েছে তো বেশ কিছুক্ষণ হয়। তুই এমন করছিস কেন? তোরই তো শরীরটা খারাপ হবে রোদ?

-মা তুমি একটু মোবাইলটা ভোরের কাছে নিয়ে যাও না প্লিজ? আমি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি ভোরকে নিয়ে। ওর সাথে এক্ষুণি কথা বলতে না পারলে আমি হয়তো টেনশনে পাগলই হয়ে যাবো মা। সকাল পর্যন্ত ওয়েট করার মতো অবস্থা আমার নেই মা প্লিজ? একবার বোঝার চেষ্টা করো?

-রোদ বাবা? শান্ত হ। এমন করিস না।

-এতো রাতে তোমার ছেলে কি চায় শায়লা? তার কি কোনো কান্ডজ্ঞান বলতে কিছু বাকি নেই নাকি? এতো রাতে কল করে ভোরের সাথে কথা বলতে চায় কোন মুখে সে? তাকে তো বলা হয়েছে ভোরের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ যেন সে না করে? তাহলে এখন এতো রাতে এসব নাটকের মানে কি? সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর তোমার ছেলের জন্য কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না? 

পাশ থেকে আতিক আহমেদের কন্ঠস্বর শুনে শায়লা চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকালো। আতিক আহমেদ হাত বাড়িয়ে ইশারায় করে মোবাইলটা দিতে বলায় শায়লা কি করবে ভাবতে ভাবতে আতিক আহমেদ শায়লার হাত থেকে মোবাইলটা প্রায় ছোঁ মেরে নিয়ে কানে লাগালেন।

-মা? হ্যালো? শুনতে পাচ্ছো? ও মা? ভোরকে একটু দাও না প্লিজ?

-শোনো রোদ। তোমাকে আগেই ওয়ার্ন করেছিলাম আমি। সম্ভবত তুমি আমার কথাগুলো ভুলে গেছ, বা পাত্তাই দাও নি। তবু শেষবারের মতো বলছি। কান খুলে শুনে রাখো। তোমার কারণে ভোরের কোনো ক্ষতি হলে সেটা আমি কিছুতেই বরদাস্ত করবো না। আর মেয়েটা সারাদিন পড়ালেখা করছে। সামনে পরীক্ষা। এইসময়ও ওকে বিরক্ত না করলে কি চলছে না তোমার? 

-বাবা? বাবা আমি জাস্ট এক মিনিট ভোরের সাথে কথা বলবো। নইলে একটা কাজ করো প্লিজ? আমি কথাও বলবো না। তুমি নিজেই একবার ভোরকে ডেকে কথা বলো। আমি ওর কণ্ঠটা শুনেই---।

-যথেষ্ট বাড়াবাড়ি হয়েছে রোদ। আর না। তুমি চাইছো এতো রাতে ওকে ডেকে তুলি আর ওর শরীরটা খারাপ হোক? সেটা হবে না রোদ। ভোরের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আমার থেকে খারাপ কেউ কিন্তু হবে না মনে রেখো। রাখো ফোনটা। আর নিজেও ঘুমাও। আর আমাদেরকেও ঘুমাতে দাও একটু---।

-বাবা? প্লিজ বাবা?

রোদ আকুতি আতিক আহমেদের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও হৃদয় গলাতে পারলো না। রোদ রাগে মোবাইলটা বিছানার উপরে ছুঁড়ে ফেলে নিজের মাথার চুল চেপে ধরে পুরো ঘরময় পায়চারি করলো কিছুক্ষণ। যত সময় পার হচ্ছে রোদের টেনশন যেন আরো বাড়ছে। রোদের কেন জানি মনে হচ্ছে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে আর ভোরের সাথে ওর কোনদিন দেখা হবে না। মনের মধ্যে কিসের একটা কু গাইছে ওর। আর নিজেকে সামলাতে না পেরে মোবাইল আর গাড়ির চাবিটা তুলে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। বাড়ির দরজাটা যে হাট হয়ে খোলা রইলো সেটা নিয়েও যেন ছেলেটার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।

 ফাঁকা রাস্তায় ঠিক কত স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ভোরদের বাড়িতে এসেছে রোদ নিজেও জানে না। ভোরের আলোও ফোটে নি এখন। চারদিকটা সবে আবছা আলোর ভাব ফুটতে শুরু করেছে এমন সময় ভোরদের বাড়ির বাইরে গাড়ি এসে থামলো রোদের। গেইটের বাইরেই ভোরের বাবা অপেক্ষা করছিল রোদের আসার। চাচ্চুকে দেখে রোদ গাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটে এলো। সাদিক আহমেদও ভোরের বিদ্ধস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাকই হলেন। 

-কি হয়েছে রে রোদ? এ কি অবস্থা করেছিস চোখমুখের? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো বিপদ আপদ হয়েছে নাকি? আর এতো রাতে? কি হয়েছে রে বাবা? চাচ্চুকে বল?

-চাচ্চু ভোর কোথায়? কেমন আছে ও? প্লিজ চাচ্চু আমি ওর সাথে একবার দেখা করেই চলে যাবো প্রমিস।

-কি রে ব্যাটা? তুই তোর নিজের বাড়িতে আসবি সেটার জন্য কারো পারমিশন নেয়া লাগবে নাকি? আর ভোরের কি হবে? ঘুমাচ্ছে এখন আর কি। সামনে তো পরীক্ষা। রাত জেগে পড়ার অভ্যেস জানিসই তো--।

-আমি একবার ওর কাছে যাই চাচ্চু প্লিজ? ওকে একটুও বিরক্ত করবো না। সত্যি বলছি-----।

-তোর ছোটোমা আর আমি তো তোকে সেই কবেই তোর ছোট্টো পুতুলটাকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি। এখন তাহলে ওর কাছে যেতে আমার পারমিশন চাচ্ছিস কেন? উল্টো কয়দিন পরে ওর সাথে দেখা করতে হলে তো আমাদের তোর কাছে পারমিশন নেয়া লাগবে জামাই সাহেব।

-চাচ্চু---। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।

-আরে যা রে বাবা। কি অবস্থা করেছিস নিজের। বউকে দেখে নিজেকে শান্ত করো আগে। তারপর ফ্রেশ হয়ে একটু নিজেকে মানুষ করো। আমি কফি বানাচ্ছি যাই।

-আচ্ছা চাচ্চু। অনেকদিন তোমার হাতে কফি খাওয়া হয়না। আমি এক্ষুণি আসছি।

-টেইক ইওর টাইম ইয়াংম্যান। 

রোদ হেসে প্রায় একছুটে ভোরের রুমে চলে এলো। দরজাটা খোলাই ছিল। রোদ রুমের দরজাটা হালকা করে চেপে দিয়ে ভোরের বিছানার সামনে এসে ফ্লোরে ভোরের মাথার কাছে বসে পড়লো রোদ। এতোক্ষণে ভোরের ঘুমন্ত মুখটা দেখে কিছুটা শান্তি লাগছে রোদের। তবু কেমন একটা উদ্ভট ঠেকছে রোদের। একটু ভোরের মুখের দিকে এগিয়ে এসে হালকা করে ভোরের গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে কয়েকবার ডাকলো রোদ। কিন্তু ভোর কোনো রেসপন্সই করলো না। রোদ এবারে ভোরের মাথার পাশে বসে ভোরকে টেনে তুলে নিজের গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে কয়েকবার নাম ধরে ডেকেও সাড়া পেল না। এবারে রোদ ভয়ই পেল। এবারে অজান্তেই ভোরের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলো রোদ। তবুও ভোর একটু নড়লোও না দেখে রোদের ভয়ভয় লাগতে শুরু করেছে আবার। ভোরকে নিয়ে যে স্বপ্নটা দেখেছে ও সেটা কি সত্যি হতে যাচ্ছে? সত্যিই কি ভোর ওর থেকে দূরে বহুদূরে হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতো?
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।