১১!!
আদিত্য প্রিয়াকে ঘুম থেকে জাগিয়ে জানিয়ে দেয় রূপকথার অপারেশন সাক্সেসফুল হয়েছে। তা শুনে প্রিয়ার যেন আনন্দের সীমা নেই। রূপকথার জ্ঞান তখনও না ফেরায় কথা বলতে পারেনি ওর সাথে তবে দূর থেকে দেখেছে।
রূপকথার কেবিন থেকে ফিরে এসে বাহিরের একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে প্রিয়া। আদিত্য তখন বাহিরেই ছিল।
- আর ইউ ওকে প্রিয়া?
- ইয়াহ্!
- চলো বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
- না রূপের জ্ঞান ফেরার পর যাবো।
- কখন না কখন সেন্স আসে ততক্ষণ তুমি এখানে ওয়েট করবে নাকি?
- হ্যাঁ। ও তো যে সে মানুষ নয় ও আমার কলিজা, আমার বোন!
- এত ভালোবাসো?
- কোনো সন্দেহ আছে?
- একদমই না।
চলো বাসায় যাবে এখন।
- না। ওর বাড়ি থেকেও তো কেউ এলো না এখনো।
- কে বলেছে? আঙ্কেল এসেছে তো।
- কোথায়?
- কি একটা ওষুধ যেন হাসপাতালে নেই সেটাই আনতে বাহিরে গিয়েছে।
- আমি তো দেখলাম না।
- কি করে দেখবে? তুমি তো কান্না করতে করতেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছো।
- তবুও আমি যাবো না।
- আরে বাবা! পরে আসবো আমরা সবাই আবার। ফ্রেশ হয়ে তারপর আসি? তাছাড়া তুমি এখনো টায়ার্ড।
- আচ্ছা আংকেল আসুক।
- ওকে।
- স্নেহা কবে আসবে? ওকে বলেছেন?
- হ্যাঁ, অপারেশন সাক্সেসফুল হয়েছে এটাও বলেছি। তাই কাল আসার কথা থাকলেও আসবে না। নানুর শরীর নাকি খারাপ। তারমধ্যে গ্রামে নাকি ওর খালাতো বোনের বিয়ে সপ্তাহ্ খানেক পর তাই কেউই এখনই আসতে দিচ্ছে না।
- ওহ। সমস্যা নেই, আমি তো আছি।
- হুম
২ দিন পার হয়ে গিয়েছে। পরেরদিনই রূপকথার সেন্স ফিরে। তবে খুব একটা কথা বলতে পারে না। আজকে আবার আরিশ আসবে!
আরিশকে একটা খবর জানানো উচিত ছিলো। কিন্তু কোন মাধ্যমে আর কিভাবেই বা জানাবো। আরিশকে যদি কল দিয়ে রূপের এক্সিডেন্টের কথা বলতাম আরিশ জিজ্ঞেস করতো আমি রূপকে কি করে চিনি আবার রূপ জানতে পারলে রূপও জানতে চাইতো আরিশকে কি করে চিনি আমি। দোটানায় পড়ে যাচ্ছি। রূপের এই অবস্থায় আমি সত্যিটা কি করে জানাই রূপকে।
প্রিয়া হাসপাতালে গিয়ে রূপের সাথে দেখা করতে যায়। রূপ তখন গভীর ঘুমে। পাশেই সোফায় মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে রূপের আব্বু। বড্ড ক্লান্তি ধরেছে কি না!!
- আঙ্কেল, আঙ্কেল
- হ্যাঁ? প্রিয়া
- জ্বী আঙ্কেল, কেমন আছেন?
- যেমন থাকা যায় আর কি মা। তোমার খবর কি?
- আপনার মতই।
- আঙ্কেল বলছিলাম কি আপনার বন্ধুর একটা ছেলে আছে না? আরিশ না কি যেন নাম? ঐ যে রূপের নাকি বন্ধুও হয়?
- হ্যাঁ, কেন বলো তো?
- তাদের খবর দেননি?
- হ্যাঁ বলেছি তো। তুমি বাড়ি যাওয়ার পর দেখতে আসছিল।
- আরিশ আসেনি?
- না। ও তো চিটাগাং গিয়েছে, আজ আসবে
- ওহহ। আচ্ছা আঙ্কেল আপনি এখন বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন আর রেষ্ট নিন। আমি এখানে আছি।
- আচ্ছা মা।
প্রিয়া অনেকক্ষণ যাবৎ রূপকথার পাশে বসে আছে। রূপকথার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
জীবনে কি পেলো এই মেয়েটা? সারাজীবন শুধু কষ্ট আর অবহেলাই পেলো। এমন একজন মানুষকে ভালোবাসলো যে মানুষটা অন্য একজনের জন্য পাগল। আর কোনো না কোনো ভাবে সেই মেয়েটি আমিই! রূপ কিভাবে সহ্য করবে এসব!
রূপকথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে খেয়াল করলো বালিশের পাশে ফোন। রূপকথার ফোন এটা। ফোন হাতে নিয়ে সুইচ অন করলো। সাথে সাথে যেন প্রিয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো। ফোনের ওয়ালপেপারে আরিশের ছবি দেওয়া! নিজের অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু জমে প্রিয়ার। ভেবে পায়না কি করে হিংসা করবে রূপকে সে, যেখানে সে রূপকে নিজের বোন ভাবে!
একজন নার্স এসে প্রিয়াকে বাহিরে ডেকে নিয়ে যায়।
প্রিয়া ফিরে এসে রূপের কাছে যাওয়ার সময় দরজায় গিয়ে থমকে যায়। রূপ কথা বলছে কারো সাথে। কার সাথে কথা বলছে এটা বুঝতে একটুও বেগ পেতে হয়নি প্রিয়াকে। পেছন থেকেই দেখে বুঝে ফেলেছে এটা আরিশ!
প্রিয়া দরজায় দাঁড়িয়েই ওদের কথা শুনছে। প্রিয়া স্পষ্ট শুনতে পারছে রূপ কাঁদছে।
- রূপ, তুমি কাঁদছো কেন? কিছু হবে না তো তোমার!
তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
- আরিশ, তুমি আমার পাশে থাকবে তো?
আরিশ রূপকথার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
- অবশ্যই থাকবো পাগলী।
রূপকথা আরিশের হাতের পিঠে চুমু খায়। আরিশ নিজ হাতে রূপের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
নিজ চোখে এসব দেখছে প্রিয়া। নিজের বুকটা যেন কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার নেই। প্রিয়া খুশি হ্যাঁ এটা ভেবে খুশি যে রূপকে মেনে নেওয়া আরিশের পক্ষে অসম্ভব হবে না। আর রূপও খুশি থাকবে।
প্রিয়া আর ভেতরে যায় না। পিছনে পিছাতে থাকে এক পা দু পা করে। চোখের পানিও বাঁধ মানতে চাইছে না। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ঘুরে দাঁড়াতেই ধাক্কা খায় আদিত্যর সাথে। প্রিয়া পড়ে যাওয়ার আগেই ধরে নেয় আদিত্য
- তুমি ঠিক আছো প্রিয়া?
কান্নার জন্য ঠিকমত কথা বলতে পারছে না প্রিয়া। তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
- হু, হু হুম!
- কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছো কেন?
- কই নাতো!
- মিথ্যা বলবা না একদম বলো কি হয়েছে?
সেই মুহুর্তে প্রিয়ার কি হলো সে নিজেও জানেনা। জড়িয়ে ধরে আদিত্যকে। এই মুহুর্তে এমনই একটা শান্তির জায়গা যেন খুব বেশি প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। আদিত্য কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এখনো কেঁদেই যাচ্ছে প্রিয়া। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই মনে হচ্ছে জড়িয়ে ধরেছে প্রিয়া। ধীরে ধীরে হাতটা আলতো হয়ে যাচ্ছে।
- প্রিয়া, এই প্রিয়া?
আদিত্য প্রিয়ার বাহু ধরে ঝুকায়। কোনো রেসপন্স নেই। তার মানে আবারও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে প্রিয়া। এবার আদিত্য সবকিছু পরোয়া করে প্রিয়াকে কোলে তোলে নেয়। পাশে থাকা সিটে বসায় প্রিয়াকে, নিজেও বসে পাশে। প্রিয়ার মাথা নিজের কোলে রেখে মুখে পানির ঝাপটা দেয় আদিত্য। আদিত্য কিছুতেই বুঝতে পারছে না, এই মেয়েটার সাথে এমন হচ্ছে কেন! অনেকক্ষণ পানি ছিটানোর পর একটু একটু করে চোখ খুলে প্রিয়া। আদিত্য প্রিয়াকে ধরে আস্তে আস্তে উঠিয়ে বসায়। নিজ শক্তিতে বসে থাকার মত শক্তিও নেই প্রিয়ার গায়ে। তাই আদিত্য বাধ্য হয়েই নিজের এক হাত দিয়ে প্রিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাথাটা নিজের বুকে রাখে। শরীরটাও কেমন গরম। জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে শরীরটাও কেমন কাঁপছে!
একজন নার্সকে দিয়ে আদিত্য ডাক্তারকে খবর পাঠায়। ডাক্তার তখন রূপকথার কেবিনেই ছিল।
- স্যার (নার্স)
- হ্যাঁ বলো
- এই পেশেন্টের যে বোন আছে না, সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আবার।
- কোথায় সে?
- বাহিরে আছে।
- আশ্চর্য! একজন পেশেন্টকে এভাবে একা বাহিরে রেখে আসছো?
- না স্যার, উনার হাজবেন্ড আছে সাথে।
- আচ্ছা চলো।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর আরিশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় রূপকথার দিকে।
- ওভাবে কি দেখছো?
- তুমি না বলেছিলে তোমার আপুর বিয়ে হয়নি? তাহলে হাজবেন্ড এলো কোথা থেকে?
- আরে ওর বয়ফ্রেন্ড হয় আদিত্য ভাইয়া। হয়তো উনারা স্বামী-স্ত্রী ভেবে নিয়েছে।
- ওহ।
- কত স্বার্থপর ও! আমার সাথে একটু দেখাও করলো না
- তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো, আমি গিয়ে একটু দেখে আসি।
- আচ্ছা।
আরিশ বাহিরে যায় দেখার জন্য। আদিত্য প্রিয়াকে কোলে করে কেবিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মুখটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে আরিশ! এটা কি করে সম্ভব!!
১২!!
আরিশ আর প্রিয়া মুখোমুখি বসে আছে একটি লেকে। নিরবতা ভেঙ্গে প্রিয়াই জিজ্ঞেস করলো,
-আমাকে এখানে ডেকেছো কেন?
-কালকে তোমার পাশে থাকা ছেলেটা তোমার হাজবেন্ড?
- কার কথা বলছো?
আরিশ এবার রাগান্বিত চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
- যার বুকে কাল মাথা রেখেছিলে।
- ওহ, ওটা আদিত্য।
- আদিত্য না স্নেহার বফ ছিল? তোমার হাজবেন্ড হলো কিভাবে?
- তোমাকে কে বললো আদিত্য আমার হাজবেন্ড?
- ডক্টর আর নার্সরাই তো বললো।
- ওহ, হয়তো মিস্টেক করে বলেছে।
- সত্যি তো?
- মিথ্যে হলেই বা তোমার কি?
- তুমি এভাবে কেন কথা বলছো বাবুই?
- কিভাবে কথা বলছি আজিব!
আরিশ প্রিয়ার হাত শক্ত করে ধরে।
-অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
প্রিয়া এবার আরিশের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
- কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না।
- মানে? মজা করছো তাই না?
- আমাকে কি তোমার জোকার মনে হয় যে আমি তোমাকে জোক্স শুনিয়ে মজা করবো! আ'ম সিরিয়াস!
- আমি বিশ্বাস করি না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।
- বাসতাম ভালোবাসতাম! কিন্তু এখন আর বাসিনা। এটাই সত্যি
- আমার অপরাধ?
- তোমার তো কোনো অপরাধ নেই।
- তাহলে আমাকে ছেড়ে যেতে কেন চাইছো?
- ধরে রেখেছিলাম নাকি?
- এসবের মানে কি ক্লিয়ার করবে প্লিজ? এরকম বাঁকা বাঁকা কথা কেন বলছো?
- যে ক্লিয়ার কথা বলতে পারে তুমি বরং তার কাছেই যাও।
- তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছো বাবুই? প্লিজ এমন করো না অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
- আর কিছু বলবে? নাকি চলে যাবো আমি?
- কোথায় যাবে তুমি? কোথাও যেতে দিবো না আমি তোমাকে।
- আমাকে আটকে রাখারই বা কে তুমি?
শুনো আরিশ, ভাঙ্গা জিনিস জোড়া লাগানো খুব কঠিন আর যদিও ভাঙ্গা জিনিসটা জোড়া লাগে তাহলে তার গায়ে দাগ ঠিকই থাকবে। তেমনি তোমার আমার রিলেশনও একটা ভাঙ্গা কাঁচের ন্যায়। যা জোড়া লাগলেও দাগ থেকেও যাবে। আমি, তুমি চাইলেও সম্পর্কটা আর আগের মত হবে না।
- আমরা আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো। ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব রাগ অভিমান আমি দূর করে দিবো।
প্লিজ একটা সুযোগ আমাকে দাও।
- আরিশ, আমাকে জোর করো না। কোনো লাভ নেই। তোমার প্রতি আমার আর কোনো ফিলিংস নেই।
- চলো আমরা বিয়ে করে নিই। তারপর না হয় আস্তে আস্তে আমাকে ভালোবেসো!
- হাহাহা! হাসালে আরিশ। যাকে ভালোইবাসি না তাকে বিয়ে করবো?
যাই হোক অনেক কথা হয়েছে, আমি এখন আসি।
প্রিয়া চলে যাওয়া ধরলে, আরিশ হেঁচকা টান দিয়ে প্রিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
- তুমি যতই বলো আমাকে ভালোবাসো না, আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।
- ভুল জানো তুমি। আমি নয় অন্য কেউ তোমাকে ভালোবাসে।
- অন্য কেউ!
- হ্যাঁ অন্য কেউ।
- কে সে?
- যদি বলি রূপকথা?
- অসম্ভব! এটা কিছুতেই হতে পারে না। রূপকথা আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। আমি ওকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখি
- কিন্তু ও তোমাকে ভালোবাসে আরিশ খুব ভালোবাসে।
- আর আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- পাগলামি করো না আরিশ। তোমার তাকেই ভালোবাসা উচিত যে তোমাকে ভালোবাসে।
- তুমি কেন বুঝতে চাইছো না আমি রূপকে ভালোবাসি না।
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি না।
- এটা মিথ্যা।
- এটাই সত্যি।
- এক মিনিট, তুমি রূপকে চিনো কিভাবে?
- রূপ আমার বান্ধবী আমার বোন। আমরা একই কলেজে, একই ইয়ারে পড়ি।
- এতক্ষণে বিষয়টা ক্লিয়ার হলো।
- কি?
- রূপকথা তোমার ফ্রেন্ড, নিজের বোন ভাবো আর তাই রূপের জন্য নিজের ভালোবাসা বির্সজন দিচ্ছো?
- আরিশ, আমি এতটাও মহৎ নই যে কারো জন্য নিজের ভালোবাসাকে বির্সজন দিবো।
- তুমি চাইছো টা কি?
- তুমি রূপকে নিয়ে ভালো থাকো, সুখে থাকো আমি এটাই চাই।
- পারবো না, আমি পারবো না শ্রুতি। কেন বুঝতে চাইছো না তোমায় ছাড়া আমার চলবে না। অনেক বেশিই ভালোবাসি। কেন অবহেলা করছো আমাকে? কেন অবহেলিত হতে হচ্ছে আমাদের সম্পর্ক?
- মনের উপর কারো জোর চলে না। আমিও পারবো না, ভুলে যাও আমাকে। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।
তোমার কাছে আমার একটাই শেষ রিকোয়েস্ট, রূপকথাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। মেয়েটা সারাজীবনে কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। নিজের অজান্তেই ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমাকে আঁকরে ধরে বাঁচতে চাইছে।ওকে তোমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করো না। জানি এত সহজে মানতে পারবে না তবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। রূপ তোমাকে অনেক সুখে রাখবে। ঐ মেয়েটা যে তোমার ভালোবাসার পাগল। ভালো রেখো রূপকথাকে।
আর একটা কথা রূপ যেন না জানে যে আমিই সেই শ্রুতি। আরিশাকেও বলে দিয়ো।
আসছি আমি ভালো থেকো।
কথাগুলো বলেই প্রিয়া হাঁটা শুরু করে আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায়না। তাহলে যে ওর অভিনয়গুলো ধরা পড়ে যাবে।
আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আরিশ। তোমাকে এভাবে কষ্ট আমি দিতে চাইনি। আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কি করবো বলো রূপকে তো আমি মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারিনা। সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পেতে হবে এমনও তো কোনো কথা নেই। আমি না হয় তোমাকে দূর থেকেই ভালোবাসলাম। ভালো থেকো আরিশ, ভালো থেকো আমার ভালোবাসা।
নিজেই নিজের মধ্যে সংলাপ করছে প্রিয়া তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে চোখের পানি। আশেপাশের মানুষগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া একটা রিক্সা ডেকে বাড়িতে চলে যায়।
ঐদিকে এখনো ঠায় বসে আছে আরিশ।
এসব কি বলে গেলো শ্রুতি! ও কি জানে না আমি ওকে কত ভালোবাসি। মানলাম প্রথমবার ওকে ভুল বুঝে অনেক বড় ভুল করেছিলাম আমি তাই বলে কি একটাবার আমাকে ক্ষমা করা যেত না। একটাবার কি পারতো না আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে!
যাওয়ার আগে বলে গেলো ভালো থেকো। চাইলেই কি ভালো থাকা যায়।যাকে নিয়ে ভালো থাকার এত স্বপ্ন সেই মানুষটাই বলে গেল অন্য কাউকে নিয়ে ভালো থাকতে।
একি! আমি কাঁদছি কেন। আমাদের ছেলেদের তো কাঁদতে নেই। না, না কাঁদবো না আমি, কাঁদবো না।
সন্ধার পর বাড়িতে যায় আরিশ। আরিশের রুমের পাশের রুমেই অপেক্ষা করছে রূপকথা। রূপকথার এখন প্রোপার সেবা দরকার যেটা আরিশ করতে পারবে কারণ আরিশ নিজেই তো একজন ডক্টর। আরিশের বাড়িতে রেখে রূপের সেবা করার অফারটা আরিশই দিয়েছিল। রূপকথার আব্বুও মেনে নিয়েছিলো বন্ধুর ছেলে আর থাকবে তো বন্ধুর বাসায়ই। আর রূপকথা, সে তো বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যায়।
বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রূপকথার রুমে যায় আরিশ। রূপকথা তখন খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আরিশার সাথে গল্প করছিল।
আরিশকে দেখে আরিশা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
- কেমন আছো রূপ?
- একটু বেটার। তুমি কেমন আছো? আর কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম জানো
- শ্রুতির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
- কিহ! খুঁজে পেয়েছো ওকে?
- হ্যাঁ।
- সম্পর্ক নিশ্চয় ঠিক হয়ে গিয়েছে তাই না?
- না।
- হয়নি। কিন্তু কেন?
আরিশ খুব ভালো করেই জানে প্রিয়া শুধুমাত্র রূপের জন্যই ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু এটা তো আর রূপকে বলা যাবে না।
- কি হলো চুপ করে আছো কেন?
- কি..কিছুনা, বাদ দাও। আমাকে ছাড়া যে ভালো থাকতে চায় তাকে ভালোথাকতেই দেওয়া উচিত
তুমি এখন বিশ্রাম নাও, আমি পরে আসবো।
রূপকথা খেয়াল করে দেখলো আরিশের চোখ ২টা লাল টকটকে আর বেশ ফুলে আছে। আর এটা যে কান্না করার জন্যই হলো এটাও বুঝতে অসুবিধা হয়নি রূপকথার।
একদিকে রূপকথার খুশি হওয়ার কথা কারণ শ্রুতি আরিশকে ফিরিয়ে দিয়েছে কিন্তু অন্য দিকে আরিশের এত কষ্টও সহ্য হচ্ছে না রূপকথার। তাই অতসত না ভেবে রূপ ফোন দেয় প্রিয়াকে।
রূপের ফোন আসা দেখে প্রিয়াকে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কান্নার স্বর যেন বোঝা না যায় ঠিক সেভাবে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচ্ছে। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারছে না। আরিশের কথা ভাবতেই চোখে অশ্রুর বন্যা শুরু হয়ে যায়। ৪ বারের বেলায় ফোন রিসিভ করে প্রিয়া।
- কিরে কখন থেকে ফোন করছি, ধরছিস না কেন?
- স্যরি রে, ঘুমিয়েছিলাম তো তাই। কেমন আছিস তুই?
- ভালো না রে।
- কেন? খারাপ লাগছে? ডক্টরকে ডাক।
- আরে সেরকম নয়।
- তাহলে?
- আজ আরিশ শ্রুতির সাথে দেখা করেছে। কিন্তু শ্রুতি আরিশকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
- এতে তো তোর খুশি হওয়ার কথা।
- কিন্তু আরিশ যে খুব কষ্ট পাচ্ছে রে। খুব কান্না করছে।
প্রিয়ার বুকটা যেন কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
- আরে চিন্তা করিস না কিছুদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে ওর সব কষ্ট দুঃখ দূর করে দিবি।
বল পারবি না?
- হ্যাঁ পারবো। পারতে তো আমাকে হবেই। আমার আরিশ কষ্ট পাবে এটা আমি মানতে পারবো না!
"আমার আরিশ"! কথাটা বারবার কানে বাজছে প্রিয়ার। কত অধিকার নিয়ে কথাটা বললো রূপকথা। না বলারই বা কি আছে। যাকে ভালোবাসা যায় তার উপর অধিকারও ফলানো যায়।
- হ্যালো!
- হ্যাঁ,, হ্যাঁ রূপ বল
- এরকম চুপ করে থাকিস কেন?
- ভাবছি
- কি?
- কাল তোকে দেখতে আসবো?
- সত্যি?
- ৩ সত্যি।
- ওকে। আর হ্যাঁ শোন আমি কিন্তু আরিশদের বাসায়।
- হোয়াট!
- হ্যাঁ আরিশ নিজেই আমার সেবা করবে বলে ওদের বাসায় নিয়ে এসেছে।
- দেখেছিস কত ভালোবাসে তোকে।
আচ্ছা এখন রাখছি রে পরে কথা হবে।
ফোন কেঁটে দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে প্রিয়া। নিজের ভালোবাসাকে নিজেরই বান্ধবীর হাতে তুলে দেওয়া যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। কষ্ট টা শুধু নিজেই বোঝা যায়।
বাহিরে ভীষণ বাতাস বওয়া শুরু করেছে। কোনো বৃষ্টির কোনো নামগন্ধ নেই। আরিশের হাত থেকে বৃষ্টির মত রক্ত ঝড়ছে।
হ্যাঁ নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করতে ইচ্ছে করছে। সবাই তো শুধু বাহিরের ঝড়-তুফানটাই দেখছে কিন্তু নিজের মনের মধ্যে যে ঝড়-তুফান চলছে সেটা তো কাউকে দেখানো যাচ্ছে না।
রাত অনেক হয়ে গেছে কিন্তু আরিশ এখনো রূপকথার রুমে যায়নি রূপকে দেখতে। আরিশা পাশে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। কিন্তু রূপকথার চোখে ঘুম নেই, এই মহুর্তে খুব ইচ্ছে করছে আরিশের কাছে যেতে। ইচ্ছেটাকে দমন করতে না পেরে বিছানা ছেড়ে উঠে রূপ। দেয়াল ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আরিশের রুমের দিকে।
আরিশের রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। লাইট অন করতেই অবাক হয়ে যায় রূপ। ফ্লোরে রক্ত গড়াগড়ি করছে তাও আরিশের হাত থেকে। রূপকথা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আরিশকে...........