আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রেমাতাল - পর্ব ০২ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


০৩!!

সারাপথ ভালই টুকটাক গল্প হয়েছিল ওদের। কিন্তু গল্প করতে করতে তিতির কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লো। মুগ্ধ অবাক হয়ে ভাবলো একটা মানুষ কিভাবে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারে! তিতির কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছিল তার উত্তর দিয়ে খেয়াল করলো তিতির ঘুমাচ্ছে! খুব হাসি পাচ্ছিল মুগ্ধর। কিন্তু মেয়েটা বেশ! সহজ সরল, কিন্তু ভীষণ সাহসী। মুখটাও খুব মিষ্টি। অন্ধকার আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। ভোরের হালকা আলো এসে পড়েছিল তিতিরের মুখে। সত্যি অনেকদিন পর কোন মেয়েকে দেখে এতটা ভাল লাগছে। কাল রাতে যখন প্রথম দেখেছিল তখন কিন্তু কিছুই ফিল হয়নি। অন্যসব মেয়েদের মতই মনে হয়েছে কিন্তু এখন অন্যরকম লাগছে কেন জানি! হঠাৎ দোলার ফিসফিসানো গলা পাওয়া গেল,
-"হুম! ভাইয়া প্রেম কিন্তু এভাবেই হয়।"
মুগ্ধ আস্তে আস্তে বলল,
-"উফ তোরা না, এমনসব কথাবার্তা বলিস। যা ভাগ এখান থেকে।"
-"তাই? তাহলে ওর দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন? অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছো দেখলাম। ভাল লেগে গেল বুঝি!"
-"হুম! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলে ট্রাভেলারদের ভাল লাগে।"
-"প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানে?"
-"তাকিয়ে দেখ ওর দিকে। তোদের মত এত রংচঙ মাখেনি, একদম ন্যাচারাল। আর তার উপর ভোরের আলো কিভাবে ভরিয়ে দিয়েছে ওকে দেখ।"
-"ওহ বাবা! আমি একটু সাজি বলে এভাবে বলতে পারলে ভাইয়া?"
-"তো এত আটা ময়দা মাখলে কি বলবো?"
-"হুহ!"
দোলা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আচমকা তিতিরের মাথাটা মুগ্ধর কাধে পড়লো। মুগ্ধ অবাক হয়ে দেখলো তিতিরের মাথাটা ওর কাধে একটু বাকা হয়ে আছে। একটু নিচু হয়ে বসলো যাতে তিতিরের কষ্ট না হয়। তাতে তিতিরও আরাম করে মাথাটা রাখতে পারলো। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এল ওর চুলের ভেতর থেকে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো মুগ্ধর। মনে হলো মেয়েটা যদি সারাজীবন এভাবে ওর কাধে শোয়, ব্যাপারটা মন্দ হয়না। কিন্তু মেয়েটা তো বড্ড বাচ্চা।
এভাবে প্রায় আধাঘণ্টা পার হয়ে গেল। মুগ্ধ কখনো বাসে ঘুমাতে পারে না। তাই পুরো বাস যখন ঘুমে বিভোর তখনও ও একা একা জেগে। হঠাৎ বাসটা নড়ে উঠলো। বোধহয় স্পিয়াদ ব্রেকার পার করলো। আর তিতিরের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে দেখে ও মুগ্ধর কাধে শুয়ে আছে! লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি সরে গেল। বলল,
-"সরি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি।"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"ইটস ওকে।"
তারপর থেকে কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করছিল। কিছুই বলতে পারেনি আর। কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ বলল,
-"প্লিজ বি নরমাল, আমি কিছু মনে করিনি।"
তিতির তাকালো। ছেলেটার চোখের মধ্যে যেন কিছু আছে। কিন্তু কি সেটা!"
যখন বাস বান্দরবান পৌঁছল, ঘিড়িতে তখন ভোর ৬ টা। বান্দরবান ঢোকার মুখেই তিতির অবাক হয়ে দেখতে লাগলো আসেপাশের সব গাছপালা অনেক নিচে নিচে। যে রাস্তায় ওদের বাস চলছে রা অনেক উঁচুতে। আর ওদের বাস ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে। অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ বোধ করলো তিতির। পাহাড়ী রাস্তায় ও এই প্রথম। হঠাৎ বাসটা বায়ে মোড় নিল। রাস্তার বাম পাশে একটা সার্কেল শেপের খাদ! আর তা পেরোতেই বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড! বাসস্ট্যান্ডের উল্টোপাশে বড় একটা পাহাড়কে দেখতে দেয়ালের মত লাগছিল। সব মিলিয়ে বান্দরবানের ওকে এভাবে বরণ করে নেয়াটা ভালই লাগলো তিতিরের। বরণই তো, ও তো টিভিতে দেখেছিল বান্দরবান কে। এই বাসস্ট্যান্ড টাও দেখেছিল। সাধারণ মফস্বলের বাসস্ট্যান্ডের মতই মনে হয়েছিল। কিন্তু এটা আদৌ সাধারণ না।
গ্রুপের ২৮ জন মেম্বারের ফ্রেশ হওয়া আর চেঞ্জ করার জন্য সাধারণ একটা হোটেলে ৪ টা রুম বুক করা ছিল। সব মিলিয়ে ৬ জন মেয়ে আর ২২ জন ছেলে। একটা রুম মেয়েদেরকে দেয়া হলো আর বাকি ৩ টা ছেলেরা ভাগাভাগি করে ইউজ করলো। সবাইকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য সময় দেয়া হলো মাত্র ২ ঘন্টা। তিতির সেদিন মাত্র ৫ মিনিটে গোসল করেছিল। বাসায় থাকলে এই সময়ের মধ্যে জীবনেও গোসল করতে পারতো না।
ব্লু জিন্সের উপর ফুল স্লিভ হোয়াইট লেডিস শার্ট পড়লো তিতির। তার উপর ব্ল্যাক হুডি। চুলগুলোকে উপরে উঠিয়ে একটা ঝুটি করলো। তারপর ব্যাগ থেকে ওর প্রিয় ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট কেডস টা বের করে পড়ে ব্যাগপ্যাকটা গুছিয়ে নিল। তারপর সেটাকে কাধে নিতে নিতে রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেল মুগ্ধকে। হোটেলের লম্বা প্যাসেজটা শেষ হয়েছে যেখানে সেখানটার দেয়াল বারান্দার মত খোলা। ওখানেই মুগ্ধ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। কথা বলা শেষ হতেই ডাকলো মুগ্ধ,
-"এই তিতির?"
তিতির মুগ্ধর কাছে গেল। মুগ্ধ বলল,
-"বাহ, একদম ট্রেকার লুক!"
তিতিরে হাসলো। মুগ্ধ বলল,
-"মেয়েরা এত তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারে বলে আমার জানা ছিলনা।"
-"রেডি হতে অবশ্যই টাইম লাগতে পারে। মেয়েদের দোষ দেয়া যায়না। কিন্তু এখানে তো আর আমি বিয়ে খেতে যাচ্ছিনা যে সাজুগুজু করবো আর লেট হবে। আমি জাস্ট শাওয়ার নিয়েছি। ঘুরতে এসে আর কিছুর প্রয়োজন দেখছিনা।"
-"তোমাকে যতটা ছোট ভেবেছিলাম ততটা ছোট কিন্তু তুমি নও।"
-"ছোট ভেবেছিলেন? কেন?"
-"তুমি আমার থেকে তো অনেক ছোটই, আর দেখতেও তুমি ছোট, তাই আর কি! বাট তুমি ম্যাচিওর।"
তিতির হেসে বলল,
-"আজকাল মেয়েরা ১৪,১৫ বছর বয়সে ম্যাচিওর হয়ে যায়।"
-"তাই নাকি? তা হতে পারে অবশ্য।"
মুগ্ধই আবার বলল,
-"বাই দ্যা ওয়ে, শুনেছিলে তো বলা হয়েছিল ফ্রেশ হয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে নিতে?"
-"হ্যা"
-"চলো নাস্তা করে আসি। আমি আবার একা খেতে পারিনা, তাই সঙ্গী খুঁজছিলাম আই মিন সাফির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অন্যদের কাউকে তো চিনিনা। কিন্তু ওর কোন খবর নেই, তুমি যখন চলে এসেছো ভালই হলো তুমিও একা।"
-"কিন্তু সবার তো হয়নি। সবাই একসাথে খেতে যাবেনা?"
-"আরে নাহ! যার আগে হবে সে আগে খেয়ে নেবে তাতে চাপ কম থাকবে, এজন্যই তো রেস্টুরেন্ট ঠিক করে রেখেছে আগে থেকে।"
-"ওহ, ঠিকাছে তাহলে চলুন"
দুজনেই চুপচাপ খাচ্ছিল। হঠাৎ মুগ্ধ খেতে খেতেই বলল,
-"বাঁশ কুরুইল খেয়েছো কখনো?"
-"সেটা আবার কি?"
-"বাঁশ।"
বলেই মুগ্ধ হেসে দিল। তিতির অবাক হয়ে চেয়ে রইল। বলল,
-"বাঁশ আবার কিভাবে খায়?"
-"বাঁশ যখন খুব কচি থাকে তখন ওটাকে মাটির হাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখে। তারপর ওই কচি বাঁশ কুচি করে কেটে চিংড়িমাছ অথবা মুরগী দিয়ে রান্না করে। পৃথিবীর অন্যতম সুস্বাদু খাবার। গ্রামঞ্চলে মানুষ খায় তবে কম। কিন্তু পাহাড়িদের এটা নিত্যখাবার।"
-"ওহ! বাট বাঁশ কিভাবে ভাল লাগতে পারে আমি বুঝতে পারছি না।"
-"এখানে কয়েকটা রেস্টুরেন্টে রান্না করে তবে এখন পাওয়া যাবে না। দুপুরে হয়। থানচি বাজার থেকে বাঁশ কুরুইল কিনে নিবনে। তারপর রান্না করে খাওয়াব। তখন দেখো কেমন লাগে!"
-"আপনি রান্না করতে পারেন?"
-"না পারার কি হলো? ব্যাচেলর তো।"
-"ওহ!"
মুগ্ধর খাওয়া শেষ। উঠে হাত ধুতে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে তিতিরেরও খাওয়া শেষ হয়ে গেল। ওরা হোটেলের বাইরে গেল। হাঁটতে হাঁটতে তিতির বলল,
-"ব্যাচেলর তো বুঝলাম কিন্তু ফ্যামিলি? আই মিন বাবা মা?"
-"ওহ, ওনারা চিটাগাং থাকে।"
-"আপনাদের বাড়ি চিটাগাং এ?"
-"না না। বাবার পোস্টিং ওখানে।"
-"ওহ। আপনার ভাইবোন নেই?"
-"একটা ছোট বোন আর একটা ছোটভাই। বাবা মায়ের সাথে থাকে। ভাই স্কুলে আর বোন কলেজে পড়ে। তোমার?"
-"বড় ভাই একটা।"
-"ওহ!"
-"আর আপনি ঢাকায় কোথায় থাকেন?"
-"ধানমন্ডি।"
-"ধানমন্ডি? কত নাম্বারে?"
-"১১/এ, তুমিও কি ধানমন্ডিতে নাকি?"
তিতির হেসে ফেলল,
-"আমার বাসাও ১১/এ তে। আপনার কত নাম্বার বাসা?"
-"৩১২"
-"হোয়াট এ কো-ইন্সিডেন্স!"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"তুমিও কি ৩১২ তে?"
-"নাহ। ৩১০ নাম্বার টা আমাদের বাসা।"
মুগ্ধ এবার হো হো করে হেসে দিল। তারপর বলল,
-"এত কাছাকাছি থাকি আর পরিচয় হলো কিনা এই পাহাড়ে এসে!"
তিতিরও হাসছিল।
-"আপনি ওখানে কতদিন ধরে থাকেন?"
-"৫ বছর ধরে। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর থেকে। তুমি?"
-"ছোটবেলা থেকেই।"
-"ওহ।"
-"আচ্ছা, আপনি কি এধনের ট্রিপে আগেও এসেছেন?"
-"আমি টিওবি'র সব ট্রিপে থাকি।"
-"টিওবি?"
-"ওহ! ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ।"
-"ওহ।"
-"তবে সাফিদের সাথে ছোটখাটো ট্রিপে গিয়েছি। বড় ট্রিপে এই প্রথম।"
-"মানে? টিওবি আর সাফি ভাইরা কি আলাদা?"
-"আলাদা বলতে সাফি অথরিটির কেউনা। বাট প্রায়ই এরকম ট্যুর এরেঞ্জ করে। গ্রুপে ইভেন্ট খুলে। গ্রুপের মেম্বাররাও ভালই এটেন্ড করে।"
তার মানে এটা কোন অফিসিয়াল ট্যুর না। তিতিরের মনের মধ্যে এবার একটু ভয় ঢুকলো। মুগ্ধ বলল,
-"ভয় পাচ্ছো?"
তিতির ভাঙবে তবু মচকাবে না টাইপ মেয়ে তাই বলল,
-"ভয়ের কি আছে?"
-"ভয় পেতেই পারো। যেহেতু তুমি ভেবেছিলে এটা টিওবি'র অফিসিয়াল ট্যুর!"
তিতির অবাক! হায়রে! এই ছেলে কি মনের মধ্যে ঢুকে ওর ভালনাটাও পড়ে ফেলল নাকি!
-"হ্যা তা ভেবেছিলাম কিন্তু তার সাথে ভয় পাওয়ার কি সম্পর্ক?"
-"না মানে, ওদের অভিজ্ঞতা তো আর টিওবি'র অথরিটির মত না। আর সাফির ট্যুরগুলো খুব অল্প খরচে হয় আর মনের মত ঘোরা যায় ঠিকই তবে ম্যানেজমেন্টে কিছু কিছু প্রব্লেম থাকে। একটা মানুষের পক্ষে এতদিক সামলানো ডিফিকাল্টও বটে। তবে এবার তো সাথে দোলা আছে। হোপফুলি আগের গুলো থেকে এটা বেটার হবে।"
তিতিরের বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো। জীবনে পাহাড়ে আসেনি ও, ঘুরাঘুরি বলতে ফ্যামিলি ট্যুরে কক্সবাজার আর ফ্রেন্ডদের সাথে সিলেট। এছাড়া ঢাকার বাইরে কোথাও তো তেমন যাওয়া হয়নি। কি যে আছে কপালে! বলল,
-"আমরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি। চলুন ফিরে যাওয়া যাক।"
-"ও হ্যা, চলো।"
ওদের দুটো জিপ ঠিক করা ছিল। বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার কথা আরো ১০ মিনিট পরে। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখলো ওদের ঠিক করা জিপ দুটো নেই। লোকজনকে জিজ্ঞেস করতেই বলল সেখান থেকে কোন জিপ এখনো ছাড়েনি আজ। ওরা নিশ্চিন্তে হোটেলে গেল। হয়তো হোটেলের সামনে থেকে ছাড়বে। কিন্তু হোটেলের সামনে কোন জিপ দেখা গেলনা। হোটেলের ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করতেই বলল দুটো জিপ তো প্রায় ১ ঘন্টা আগে ছেড়ে গেছে।
মাথায় বাজ পড়লো মুগ্ধ তিতিরের। সাথে সাথে মুগ্ধ ফোন করলো সাফি কে। সাফির মোবাইল বন্ধ। তিতির বলল,
-"মোবাইল বন্ধ কেন?"
-"বন্ধ না। নেটওয়ার্ক প্রব্লেম হবে। ১ ঘন্টা আগে ছাড়লে তো এখন ওরা পাহাড়ে। ওকে বলেছিলাম শহরের বাইরে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক থাকে না, অন্য সিম যেন নিয়ে নেয়।"
-"কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না। যে টাইমে জিপ ছাড়ার কথা সেটা হতে তো আরো ৫ মিনিট বাকি। এত আগে কেন ছাড়লো! আর যদি ছাড়েই তবে দেখবে না সব মেম্বার্স আছে কিনা?"
-"তোমাকে বলেছিলাম না ওদের ম্যানেজমেন্টে প্রব্লেম আছে।"
-"যাই হোক, এখন কি করবো?"
-"ঢাকা ফিরে যাবে?"
-"নো ওয়ে!!! একবার যখন ঠিক করেছি নাফাখুম যাব। না যেতে পারলে আমি পাগল হয়ে যাব।"
-"কিন্তু জেদ করাটা আই থিংক ঠিক হবেনা। অনেক দূরের রাস্তা।"
-"এখন বাসায় ফিরলে বাবা আমাকে আর কখনো একধরনের ট্রিপে যেতে দেবে না। বাবা চাইছিল না এবারও, ভাইয়া রাজী করিয়েছে। আমি ফিরে যাবনা।"
পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ ভাবছিল কি করা যায়। এরমধ্যেই তিতির বলল,
-"আচ্ছা আমরা দুজন একটা জিপ ভাড়া করে চলে যাই?"
-"সেটা সম্ভব না। থানচির জিপভাড়া ৮/৯ হাজার টাকা। অত টাকা আমার কাছে নেই। ট্রিপের টাকা তো পুরোটাই দিয়ে দিয়েছি রেজিস্ট্রেশনের সময়। আর ওরা থানচি পৌঁছানোর আগে আমরা ওদের কানেক্ট করতে পারবো না কারন, রাস্তার নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবেনা।"
তিতির অবাক হয়ে বলল,
-"ভাড়া এত বেশি?"
-"হ্যা, অনেক দূর না? তার উপর পাহাড়ী রাস্তা। আর ভাড়া সিস্টেম আপ-ডাউন। তুমি ফিরে না আসলেও ভাড়া দিতে হবে।
-"আমার কাছে ২ হাজার টাকার মত আছে।"
-"আমার কাছে ৪/৫ হাজার হবে। কিন্তু তাতেও জিপ পাওয়া যাবে না।"
তিতির টেনশনে পড়ে গেল। বাসায় ও ১০ দিনের আগে ফিরবে না এটা কনফার্ম। আর নাফাখুম ওকে যেতেই হবে। কিন্তু কি করবে এখন? মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখলো খুব সিরিয়াসলি কিছু চিন্তা করছে।

০৪!!

মুগ্ধ চিন্তা করতে করতে একসময় বলল,
-"তুমি সিওর যে তুমি আমার সাথে থানচি পর্যন্ত যাবে?"
-"হ্যা। কিন্তু কিভাবে?"
-"সেটা দেখছি তুমি আরেকবার ভেবে বল তুমি সিওর তো?"
-"১০০%"
-"ওকে,এসো আমার সাথে।"
মুগ্ধ বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাটা শুরু করলো। ২ মিনিটের রাস্তা। বাসস্ট্যান্ডের একপাশে অনেকগুলো সিএনজি। মুগ্ধ একজনকে জিজ্ঞেস করলো,
-"মামা থানচি যাবা?"
-"মাহাজনের লগে কতা কুইন।"
মুগ্ধ সিএনজির মহাজনকে খুঁজতে লাগলো। পেয়ে যেতেই তাকে বলল,
-"মামা, থানচি যাব। একটা সিএনজি লাগবে।"
-"আমরা তো মামা নিলগিরি পর্যন্ত যাই। থানচি গেলে পোষায় না।"
-"চলো না মামা। আমাদের গাড়িটা আমাদের রেখে চলে গেছে। মহাবিপদে পড়সি। তোমাদের পাহাড়ে আসছি, তোমরা সাহায্য না করলে কই যামু কও।"
-"মামা, বুঝেন না ক্যা? যাইতে যাইতেই সন্ধ্যা অইয়া যায়। তহন তো আর্মিরা আটকাইয়া দেয়, গাড়ি চালাইতে দেয়না। কাইল্কা ফিরা আওন লাগবো।"
-"ভাড়া একটু বেশি নিও। আর রাতের থাকা খাওয়া আমাদের সাথেই করতে পারবে। ২৮ জনের গ্রুপে আসছি আমরা।"
লোকটা কিচ্ছুক্ষণ ভাবলো তারপর বলল,
-"৩৫০০ টাকা লাগবো।"
-"এত? মামা সিএনজির নিলগিরির ভাড়া তো ১৫০০ টাকা।"
লোকটা হেসে বলল,
-"মামা, আমরা তো ওইদিকে যাই না। অনেক রিস্ক নিয়া যাওন লাগবো। আপনেরা বিপদে আছেন তাই রাজি হইসি।"
-"আচ্ছা, আচ্ছা ৩৫০০ ই দিব।"
লোকটা একজনকে ডেকে বলল,
-"ওই হাসু, দাদারে থানচি লইয়া যা। হেগো লগেই থাকবি খাবি। কাইল্কা আইয়া পড়বি।"
হাসু নামের সেই ছেলেটা বলল,
-"ওস্তাদ, ওইদিকের রাস্তা তো ভালনা। সিওএনজি নিয়া যাওন কি ঠিক অইবো? আর তেলও তো শ্যাষ অইয়া যাইবো।"
-"রাস্তা ভালনা দেইখাই তো তরে কইসি। তুই চালাইলে আমি নিশ্চিত থাকুম। যা ব্যাটা। মেহমানরা বিপদে পড়সে। ত্যাল দুই গ্যালান বেশি লইয়া যা।"
-"আইচ্ছা, কহন যাইবো?"
মুগ্ধ বলল,
-"আমরা এখনি যেতে চাচ্ছি।"
হাসু ছেলেটা বলল,
-"আইচ্ছা, লন।"
মুগ্ধ তিতিরকে অবাক করে দিয়ে মহাজনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"ধন্যবাদ মামা। অনেক উপকার করলা।"
মহাজনও বোধহয় এমন কিছু ভাবতেও পারেনি। খুব অবাক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। তিতিরের কেন জানি খুব ভাল লাগছে। এত স্মার্ট একটা ছেলে কিনা নোংরা শার্ট পড়া একটা সিএনজি ড্রাইভার কে জড়িয়ে ধরলো শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য! এতক্ষণ কিছুটা ভয় কাজ করলেও এখন আর তিতিরের মধ্যে কোন ভয় নেই। এত বড় মনের একটা মানুষের সাথে শুধু থানচি পর্যন্ত না, আরো অনেকদূর যাওয়া যায়। অনেক দূর!
সিএনজিতে ওঠার পর মহাজন কাছে এসে হাসুকে বলল,
-"ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চালাবি, তাড়াহুড়া করবি না।"
সিএনজি ছেড়ে দিল। মুগ্ধ মহাজনকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। তারপর নিজের ব্যাগপ্যাকটা কাধ থেকে নামিয়ে পেছনে রাখতে গিয়েই তিতিরের দিকে চোখ পড়লো। কি যেন ভাবছে মেয়েটা। মুগ্ধ বলল,
-"কি ব্যাপার? ব্যগপ্যাক এখনো কাধে কেন? রিল্যক্সে বসো। ৯০ কিলোমিটার যেতে হবে।"
-"আচ্ছা ঢাকা থেকে বান্দরবান ৩০০ কিমি দূরে না?"
-"৩৩৮ কিমি।"
-"আর বান্দরবান থেকে থানচি ৯০ কিমি?"
-"হুম।"
-"ঢাকা থেকে বাসভাড়া বোধহয় জনপ্রতি ৫০০। তাহলে দুজনের ৩০০ কিমির ভাড়া ১০০০ আর ৯০ কিমির ভাড়া ৩৫০০? এত ডিফারেন্স?"
মুগ্ধ হেসে আস্তে আস্তে বলল,
-"প্রথমত, ওটা সোজা রাস্তা ছিল আর এটা পাহাড়ী রাস্তা। দ্বিতীয়ত, ওটা বাস। দুনিয়ার মানুষকে আনে। আর এটা সিএনজি। শুধু আমাদেরকে নিচ্ছে। এটা অনেকটা প্রাইভেট টাইপ হলোনা?"
তিতির নিজের বোকামি মার্কা প্রশ্নে লজ্জা পেয়ে গেল,
-"ওহ, তাইতো।"
-"বান্দরবান থেকে থানচির বাসভাড়া ১০০-১৫০ টাকা মাত্র।"
-"সেকি! তাহলে বাসেই যেতাম।"
মুগ্ধ আবার হেসে দিল। বলল,
-"একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের জীবন নিয়ে রিস্ক নেয়ার সাহস আমার নেই। তাছাড়া, আমিও বিয়েশাদি করিনি। স্বপ্নের সব যায়গা ঘোরাও হয়নি। এত তাড়াতাড়ি মরার ইচ্ছে নেই।"
তিতিরও হাসলো। বলল,
-"মানুষ বুঝি যায়না?"
-"লোকাল মানুষজন যায়। পিচ্চি পিচ্চি বাস। প্রায়ই এক্সিডেন্ট করে। টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।"
-"হুম! একটা কথা বলব, কিছু মনে করবেন না প্লিজ।"
-"আরে বলো বলো।"
-"ভাড়াটা আমি শেয়ার করবো।"
-"ওহ ওটা পুরোটাই সাফির কাছ থেকে আদায় করবো, ভুলটা ওর। আর ও না দিলেও সমস্যা নাই ছোটভাই তো। তোমার শেয়ার করতে হবে না।"
-"কেন? দিস ইজ নট ফেয়ার!"
-"তুমি যদি আমার সমান হতে, আর্ন করতে তাহলে শেয়ার করতাম। তুমি তো ছোট। এই ব্যাপারে কথা বলে আমাকে আর লজ্জা দিওনা প্লিজ!"
কথাটা শেষ করেই মুগ্ধ হাসলো। কি যে অমায়িক সে হাসি! তিতির আর কিছুই বলতে পারল না।
কিছুদূর যাওয়ার পরেই হঠাৎ গাড়িটা উঁচুতে উঠতে লাগলো। তিতিরের মনে হচ্ছিল গাড়িটা ৬০/৭০ ডিগ্রি এংগেলে উঠছে। সিএনজি উল্টে যাবে মনে হচ্ছে। হঠাৎ ও মুগ্ধর হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভয়ের চোটে নিঃশ্বাস আটকে যাবার মত অবস্থা। উপড়ে উঠে যাওয়ার পরেই ও চোখ খুলল। তারপর দেখলো মুগ্ধ দুহাত দিয়ে ওর দুহাত ধরে হাসছে।
তারপর হঠাৎ মনে পড়ায় জিজ্ঞেস করলো,
-"আচ্ছা তখন সিএনজির মহাজন তেল নেয়ার কথা বলছিল কেন? সিএনজি তো তেলে চলে না।"
-"হ্যা, কিন্তু পাহাড়ে তেলেই চলে তাছাড়া উঁচু রাস্তায় উঠতে পারবে না তো।
তিতির এক ঝটকায় হাত ছেড়ে দিল। বলল,
-"হাসবেন না। রাস্তাটা খুব ভয়ংকর ছিল।"
-"হুম বাচ্চা টাইপের একটা আপহিল ছিল।"
-"এটাকে আপনার বাচ্চা বলে মনে হচ্ছে?"
-"হুম, কারন সামনে আরো বড় বড় আপফিল, ডাউনহিল আছে। আমরা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৮০০ ফিট উপরে উঠছি বুঝতে হবে।"
-"সিরিয়াসলি আমরা এত উপরে উঠছি?"
-"হুম!"
-"আপনি এতকিছু জানেন কি করে?"
-"কিছুক্ষণ পর পরই তো মাইলস্টোন, ওখানে ইনফরমেশন দেয়া আছে না? তাছাড়া একটা যায়গায় গেলে সে যায়গা সম্পর্কে জানবো না? প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখনই সব জেনেছি। তারপর তো কত এলাম। নাফাখুম একবার গেছি মাত্র। কিন্তু এই রাস্তা দিয়েই নিলগিরি, বগালেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং, সাকাহাফং গিয়েছি। কেওক্রাডং ২ বার গিয়েছি। নিলগিরি তো হিসাবই নেই।"
তিতির অবাক হয়ে বলল,
-"আপনি কেওক্রাডং ট্রেকিং করেছেন?"
-"কেওক্রাডং এমন কিছুই না। নিশ্চই মনে পড়ে গেছে ছোটবেলায় পড়েছিলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া কেওক্রাডং। এর উচ্চতা ৩২০০ ফিট। তাই না?"
-"হ্যা।"
-"হুম, কিন্তু ওখানে যাওয়া এমন ডিফিকাল্ট কিছু না। শীতকালে জিপে করে যাওয়া যায়। তবে ওই দিকে কঠিন যা আছে তা হলো জাদিপাই ঝরনা। কেওক্রাডং থেকে ৩ ঘন্টা হেটে যেতে হয়। ৩ ঘন্টা হাটা কোন বিষয় না। কিন্তু ওই রাস্তায় ৩ ঘন্টাকে ৩ দিন মনে হয়। কিন্তু পৌঁছানোর পর সব কষ্ট কোথায় যে যায়। অনেক বড় আর অসম্ভব সুন্দর একটা ঝরনা।"
-"ওহ। আচ্ছা, এখন তাজিংডং এর কথা বলুন। শুনেছিলাম তাজিংডং কেওক্রাডং এর থেকেও উঁচু।"
-"তাজিংডং কেওক্রাডং এর চেয়েও উঁচু আর সবচেয়ে উঁচু সাকাহাফং। আর এদুটোতে উঠতে আমার জান বের হয়ে গেছে। কেওক্রাডং এ তো জিপ যায়, যদিও আমরা বর্ষায় গিয়েছিলাম ঝরনার ভরা রূপ দেখবো বলে। হেটেই যেতে হয়েছিল তখন। কিন্তু এই দুটোতে জিপ তো দূরের কথা হাটা পথও নেই পুরোটা।"
-"তাহলে গিয়েছেন কিভাবে?"
-"ক্লাইম্বিং করে। আর সবচেয়ে বোকামি যেটা করেছিলাম কোন গাইড নেইনি। এক বড় ভাই ছিল। উনি আগে গিয়েছেন, রাস্তা চেনেন গাইড লাগবে না হ্যান ত্যান বলে নিয়ে গেছে। তারপর তো আর রাস্তা চেনে না। হায় খোদা কি বিপদে যে পড়েছিলাম! এক রাস্তায় বারবার হেটেছি অথচ বুঝিনি। বুঝবো কি করে সব তো একই রকম দেখতে পাহাড়, আর একই রকম জঙ্গল। একটা রাস্তা পার হয়েছিলাম মাত্র এক হাত চওড়া। দুইপাশে খাড়া খাদ। একটা পা এদিক সেদিক হলেই ভবলীলা সাঙ্গ!"
-"আপনার অনেক সাহস!"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"অনেক সাহস তো তোমারও। এইটুকু বয়সে তুমি এতগুলো অচেনা মানুষের সাথে পাহাড়ে চলে এলে। আবার এখন একটা অচেনা ছেলের সাথে যাচ্ছো। অনেক রকম বিপদ হতে পারে। ছেলেটা খারাপ হতে পারে। তোমাকে ভুল যায়গায় নিয়ে যেতে পারে। আরো অনেক কিছুই তো হতে পারে।"
একথা শুনে তিতির হেসে দিল। মুগ্ধ বলল,
-"শুধু হাসলে হবে? উত্তর দাও।"
তিতির হেসে উত্তর দিল,
-"বিঃশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!"
মুগ্ধ আর কথা বাড়ালো না। সিএনজি ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে। আবার সামান্য নেমে যাচ্ছে। হঠাৎ করে পাহাড়ের গা ঘেঁষে বায়ে মোড় নিচ্ছে আবার একই ভাবে ডানে। এরকম করতে করতেই ওরা এমন একটা রাস্তায় এল যার ডানপাশে গাছপালা, জঙ্গল। আর বামপাশে খাদ। হঠাৎ মুগ্ধ তিতিরকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখালো,
-"ওই যে দেখছো বাড়িঘর গুলো, ওটা বান্দরবান শহর। একটু আগেই আমরা ওখানে ছিলাম।
-"এত উপরে উঠে গেছি!"
-"হুম!"
ওরা যেখানে ছিল সেখান থেকে শহরটা অনেক নিচে। উপরে খোলা আকাশ। দূরের পাহাড় গুলো দেখে ছোটবেলার আঁকা গ্রামের দৃশ্যের মত লাগছে। পাহাড়গুলোকে একবার মনে হচ্ছে সবুজ, আবার মনে হচ্ছে নীল। রাস্তার পাশে ফুটে আছে অজস্র বুনোফুল। তিতির বলল,
-"অদ্ভুত সুন্দর একটা ঘ্রাণ পাচ্ছি। এটা কিসের ঘ্রাণ জানেন? বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কি ঘ্রাণটা পাচ্ছেন?"
-"পাহাড়ের ঘ্রাণ! বুনো ঘ্রাণ। আমি আসক্ত এ ঘ্রাণে, তাইতো বারবার ছুটে আসি।"
একটু থেমে তিতির আবার বলল,
-"আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি! কি নিশ্চুপ চারপাশ!"
-"সৌন্দর্যের কি দেখেছো? সৌন্দর্য শুরু হবে মিলনছড়ির পর।"
-"ওহ, কিন্তু আমার তো এখানও বেশ লাগছে।"
-"হুম, পাহড়ের বাঁকে বাঁকে সৌন্দর্য!"
-"আসলেই, যা দেখছি তাই ভাল লাগছে। আচ্ছা মিলনছড়ি কতদূর?"
-"২ কিলোমিটার। অলমোস্ট চলে এসেছি।"
কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই মিলনছড়ি এসে পড়লো ওরা। একটু আগে যেখানে ছিল সে যায়গাটা এখন অনেক নিচুতে। রাস্তার একপাশে মিলনছড়ি আর্মিক্যাম্প। তার একটু আগেই অন্যপাশে মিলনছড়ি চেকপোস্ট। চেকপোস্ট বলতে ছোট্ট একটা টিনের ঘর। যার দেয়ালগুলো বারান্দার মত অর্ধেকটা খোলা। পাশেই দুটো গাছ। ভেতরে একটা কাঠের টেবিল, একটা প্লাস্টিকের চেয়ার। একজন আর্মিম্যান খাতা কলম নিয়ে বসে টুরিস্টদের নাম এন্ট্রি করছে। পুরোটাই যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার হাসু আর মুগ্ধ নেমে গিয়ে চেকপোস্টে ঢুকলো। নাম এন্ট্রি করে এসে সিএনজিতে তাকিয়েই মুগ্ধর আত্মা উড়ে গেল। তিতির নেই সিএনজিতে। আশেপাশে তাকাতেই তিতিরকে দেখতে পেল। দৌড়ে কাছে যেতেই দেখলো যে পাশে খাদ সে পাশের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তিতির। আর ওর চোখদুটো ছলছল করছে। মুগ্ধ বলল,
-"এনি প্রব্লেম?"
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
-"এতবড় আকাশ আমি আগে কখনো দেখিনি। দূরের ওই পাহারগুলো যেন আমার সাথে পরিচয় হওয়ার অপেক্ষায় চেয়ে আছে। মেঘের এত কাছে আসিনি কখনো। এত ভাল আগে লাগেনি কখনো। বুকের ভতরটায় কেমন যেন করছে।"
এক্সাইটমেন্টে তিতিরের গলা কাঁপছে। মুগ্ধ পরিচিত এই অনুভূতির সাথে। প্রথমবার এখানে এসে ওরও এরকম অনুভূতিই হয়েছিল। মুগ্ধর মনে হলো, ইশ ও যদি তিতিরকে দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর সুন্দর পাহাড়গুলোতে নিয়ে যেতে পারতো!
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।