০৯!!
আবীরের কথা মনে পড়তে সবার হুঁশ ফিরলো। আসাদ সাহেব বেলার চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন।
-আবীর কোথায় গেছে বেলা মা?
-ওর একটা ইন্টারভিউ ছিল বাবা গতকাল। সকালে বেরিয়েছে। দুপুরবেলাও বাসায় ফিরছে না দেখে কল করলাম ওকে। তখন থেকে ফোন অফ------।
নিশানও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না।
-ভাবি? আবীর ভাই-----।
-ভাইয়া? ও তো আপনার গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছে। ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসে একটু যোগাযোগ করে দেখুন না----।
-ওহ শিট---। আমার একদমই খেয়াল ছিল না---। আমাকে দশ মিনিট সময় দাও ভাবি--। পরিচিত আছে--। খোঁজ নিতে সময় লাগবে না----।
নিশান মোবাইলে কথা বলতে বলতে ছটফট করছে। গাড়ির যাবতীয় ডিটেইল দিচ্ছে কাকে যেন। আসাদ সাহেব আর সায়েরা একে অন্যের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে পাথর হয়ে। এতো বছর পর প্রিয় মানুষটাকে কাছে পাওয়ার আনন্দ যেমন আছে তেমনি আরেকদিকে চাপা একটা কষ্ট। মাইশা বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে বেলার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। বেলাও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিশান কান থেকে ফোন নামিয়েই ছুটে এলো।
-ভাবি? মামা? মামি? আবীরের খোঁজ পাওয়া গেছে--। জলদী যেতে হবে চলো?
-আবীর? নিশান আবীর কোথায়! কেমন আছে?
-কেমন আছে ঠিক বলতে পারব না মামা---। আমার গাড়িটার কাল এক্সিডেন্ট হয়েছে। কিভাবে হয়েছে- কে কে ইনজুরি হয়েছে বলা যাচ্ছে না--। তবে কারো বেশি সমস্যা হয় নি--। সেন্ট্রাল হসপিটালে নেয়া হয়েছে দুজনকে---। আবীরও নাকি ওখানে--। চলো চলো? বাকিটা গিয়ে জানা যাবে----।
এ্যাক্সিডেন্টের কথা শুনে মাইশা, বেলা, সায়েরা সবাই ভেঙে পড়লো। তবু নিশান সবাইকে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হলো। আবীর কেমন আছে জানাটা জরুরী। আবীরের গাড়িটা নিশান চালিয়েই হসপিটালে নিয়ে গেল সবাইকে। আবীরকে একটা কেবিনে দেয়া হয়েছে।
আবীরের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। সবাই মিনিট পনেরো মতো কেবিনে গিয়ে আবীরকে দেখে এসেছে। এখন বেলাই শুধু কেবিনে। আবীরের অবস্থা দেখে বেলা যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না। মাথায় সাদা প্যাঁচানো ব্যান্ডেজও রক্তের দাগে কালচে হয়ে আছে৷ পায়ের হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করা। হাতে স্যালাইনের নল, আর নাকের সামনে অক্সিজেন মাস্ক। এক্সিডেন্টের পর থেকে নাকি আবীরের ঠিক করে জ্ঞান ফিরে নি। যা দু একবার আধো জ্ঞান এসেছে তখন কি বলেছে কেউই কিছু বুঝতে পারে নি। এর মধ্যেই আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে আবীর।
বেলা আবীরের চুলে হাত বুলাচ্ছে আলতো করে। ওর চোখের জলেরা বাধা মানছেই না কোনভাবে।
-প্লিজ? চোখ খোলো না? আমার উচিতই হয় নি তোমাকে এতো জোর করে ইন্টারভিউয়ের জন্য পাঠানো-। কাল তোমাকে ওভাবে জোর করে না পাঠালে তো তোমার এক্সিডেন্টটাও হতো না---। আই এম সো সরি আবীর-------।
বেডের উপর রাখা আবীরের একটা হাত ধরে বেলা কাঁদছে। আর আসাদ সাহেব আর সায়েরা কাঁচের আড়াল থেকে সেটা দেখে চোখের পানি ফেলছে। বসে বসে প্রার্থনা করা ছাড়া যে এখন তাদেরও কিছু করার নেই। ডাক্তার জানিয়ে গেছে আবীরের জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই নার্স এসে খবর দিল আবীরের সাথে যে লোকটার এক্সিডেন্ট হয়েছে তার জ্ঞান ফিরেছে। মাইশা, সায়েরা, আসাদ আর নিশান মানুষটাকে দেখতে গেল। কি অবস্থা, কেমন আছে আর এক্সিডেন্টটা কি করে হল জানা জরুরী।
নার্সের দেখানো রুমটার দিকে ওরা চারজন এগিয়ে গেল। প্রথমে নিশান আর পরে একে একে বাকিরা রুমে ঢুকলো। নিশান মানুষটাকে দেখে একটু অবাক হল। কোথায় যেন দেখেছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। আসাদ সাহেবের কাছাকাছি বয়সের একজন মানুষ। হসপিটালের সাদা চাদর পাতা বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে মাথায় কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা। তবে খুব বেশি আঘাত পায় নি। দেখে এখন অনেকটাই সুস্থ মনে হচ্ছে।
নিশান কিছু বলতে যাবে এমন সময় খেয়াল করলো বয়স্ক মানুষটা নিশানের দিকে না তাকিয়ে অন্য কাউকে দেখে যেন থ হয়ে গেছে। কিছু একটার শব্দ শুনে নিশান পিছনে ফিরে দেখলো ওর সাথের তিনজন মানুষই হা করে তাকিয়ে আছে সামনে।৷ নিশানও থতমত খেয়ে একবার মামা মামিদেরকে দেখছে আর একবার বিছানায় আধশোয়া অসুস্থ মানুষটাকে।
-দিনার?
মাইশা ছুটে এসে মানুষটার বুকে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। ২১টা বছর এই মানুষটার কোনো খোঁজ পায় নি। বেঁচে আছে কি নেই সেটা নিয়েও লোকজনে কানাঘুষা করছিল সেই শুরু থেকেই। আর সেই হুট করে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা আজ সবার চোখের সামনে। মাইশার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না এসব।
নিশান মাথা চুলকে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাপট দিলো।
-উনিই কাজী দিনার? দা ফেমাস রাইটার কাজী দিনার? 'প্রেমময়ী' বইটার আমি হিউজ ফ্যান মামা--। বইটা পড়ে আপনার আরো লেখা পড়ার জন্য একেবারে উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। যদিও আর কোন বই আর পাই নি---।
-নিশান? কি বলছিস এসব?
-সিরিয়াসলি--। আমি কি করে জানবো যে আমার ফেভারিট রাইটার আমার আরেক মামা-।
সবাই নিশানকে ছেড়ে আবার দিনারের দিকে তাকালো।
-দিনার? এতোগুলো বছর! এতো বছর পরেও ফিরতে ইচ্ছে হয় নি তোমার? এতো রাগ? এতো জেদ? আমরা বেঁচে আছি কি নেই-। সেটা জানার জন্যও তো একবার ফিরতে পারতে?
-আই এম সরি মাইশা--। তোমার কান্না কাটি দেখে রাগ করে বের হয়ে গেছি বা সব ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছি তাও কিন্তু না--। তুমি তো জানো? তুমি এভাবে বাড়ির জন্য কান্না করলে আমার নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়--। অপদার্থ মনে হয়--। মনে হয় আমি তোমাকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেও সুখটা দিতে পারি নি---। তাই মাঝেমাঝেই তো এমন হুট করে কয়েক ঘন্টার জন্য গায়েব হয়ে যাই?
-তবে সেদিন কেন ফিরলে না? আমি তো অপেক্ষায় ছিলাম দিনার--। একটা সপ্তাহ---। কিভাবে কেটেছে জানি না----। দুর্বলতায় কি ঘোরে-- কখন কলঘাটে জ্ঞান হারাই আমি জানি না--। যখন জ্ঞান ফিরেছে ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে দিনার----।
দিনার কোনমতে মাইশার মুখটা তুলে ধরলেন দুহাতে। চোখে চোখ স্থির করলেন।
-কি! কি শেষ হয়ে গেছে? আবীর? আর আমাদের ছোট বাবু ভালো আছে? বলো না? কি হয়েছে?
মাইশা আবার দিনারের বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল। কিছু বলার ভাষা তার নেই। আসাদ সাহেব দিনারের হাতে আলতো করে হাত রাখলেন।
-দিনার? আসলে বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে মাইশার--। আমি হসপিটালে গিয়ে ওদের যখন পাই--। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে---।
-আমার একটা ভুলের মাসুল এভাবে দিতে হলো! হে আল্লাহ! এতো বড় শাস্তিটা আমাকে কেন দিলে!
-দিনার? শান্ত হও--। তুমি এমনিতেই ইনজিউর্ড---। সেদিন ফিরলে না কেন সেটা তো বললে না?
-এই ছেলেটা যে বইটার কথা বলছে সেই বইটা ছাপার কাজ চলছিল তখন--। বেশ ধার দেনা করে করা --। আগের বইগুলো ততোটা বিক্রি হয় নি--। তার উপরে সব দিক থেকে ধার দেনায় ডুবে আমি মনে হয় ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম ভাই--। তার উপর মাইশার কান্নাকাটি দেখে নিজেকে একেবারে অকাজের মনে হয়েছিল সেদিন---। তাই রাগের চোটেই প্রকাশনীতে ছুটে যাই--। গিয়ে অবশ্য একটা সুখবর পাই--। 'প্রেমময়ী' বেশ পাঠক পাচ্ছে--। প্রকাশনী থেকে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়েছে--। মনে হল ভাগ্যটা ফিরবে বলে---। ধারের টাকা আলাদা রেখে কিছু কিনাকাটা করবো বলে বাজারে গেলাম। রাগ করে বেরিয়েছি- তাই সুন্দর একটা শাড়ি কিনে মাইশাকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম-। আর আবীরের জন্য জামা আর বল---।
-তাহলে?
-বাজারে ঢুকেই দেখা হলো তানিম ভাইয়ের সাথে। তোমার সাথে এতোবার দেখেছি উনাকে যে আমাদের নিজেদেরই এক প্রকার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে--। তানিম ভাইয়াকে দেখে তো অবাক আমি--। কেমন একটা পাগল পাগল ভাব হয়ে আছে চেহারার--। মনে হয় কয়েকরাত ঘুমাতেও পারে নি---।
-তানিম ভাই!
-হ্যাঁ আসাদ। সাথেও ভাবিও ছিল--। ছেলেকে ভাইয়ার বাবার কাছে রেখে উনারা দুজনে কিছু একটার খোঁজে বেরিয়েছিলেন। আমাকে দেখে তাড়া দিয়ে বললেন সাথে যেতে---। রাস্তায় আমার বাড়ি থেকে হুট করে বের হয়েছি জানতে পেরে একটু বকাবকিও করলেন ভাইয়া--। ভাবিও বুঝালেন যে প্রেগনেন্সির সময়টা জটিল। তাই মাইশার এমন কান্নাকাটি করার ব্যাপারটা স্বাভাবিক--। সেটাকে এতোটা সিরিয়াসলি না নিয়ে ওর মুডটা ভালো রাখার চেষ্টা করতে---।
-তো? সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল ওদের সাথে জানো?
-হুম---। তোমার বাবা যে তোমার আর সায়েরা ভাবির বিয়ের ব্যাপারটা জানতে পেরে বড় রকমের ঘোট পাকিয়েছে তখন জানতে পারি--। সায়েরা ভাবির চলে যাওয়া--। তোমাকে ভুল বোঝানো--। সবটা তানিম ভাইয়ার কাছেই জানলাম তখন---।
-হোয়াট! তানিম ভাইয়া সবটা জানতো?
-জানতো না---। উনার নাকি সন্দেহ হওয়ায় নিজে খোঁজ করে বের করেছে--। সেই সব কথা তোমাকে বলার জন্য চৌধুরী বাড়ি যাচ্ছিল--। আমাকেও যেতে বলায় আমিও রাজি হয়ে গেলাম---। ইচ্ছে ছিল সায়েরাকে নিয়ে একেবারে তোমার সামনে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে দাঁড় করাবো---। বিয়েটা সবাই মিলে দিয়েছিলাম তো বলো? একটা সংসার এভাবে চোখের সামনে ভেসে যেতে তো দিতে পারি না----।
-তা-তার--তারপর?
-ড্রাইভার ড্রাইভ করছিল--। আমি সামনের সিটে বসা---। পিছনের সিটে তানিম ভাই আর ভাবি---। বাজার ছেড়ে শহরের রাস্তার দিকে গাড়ি চলছে--। গ্রামের শেষ মাথায় আসতে বড় একটা খোলা জায়গা আছে না? বড় বড় শতবর্ষী গাছ? ওখানে হঠাৎ ড্রাইভার চলন্ত গাড়ি থেকেই বালির উপরে লাফিয়ে পড়ে--। আমরা তখনো বুঝতে পারি নি হচ্ছেটা কি---। ব্যাপারটা টের পাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আরেকটা ধাক্কায় সমস্ত দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল আমার---। পিছন থেকে একটা ট্রাক আমাদের গাড়িটাকে ধাক্কা মেরে ছিটকে ফেলেছে খোলা জায়গাটায়---। গাড়ি উল্টে গেছে--। গাড়ির দরজাগুলো শক্ত হয়ে আটকে গেছে--। তানিম ভাই, ভাবি আর আমার তিনজনেরই মাথায়, হাতে, পায়ে বেশ লেগেছে ভালো করে--। তবুও হুঁশ ছিল--।
-তারপর?
-ভাবির চিৎকার শুনে সিটবেল্ট আর দরজা নিয়ে ধস্তাধস্তি বাদ দিয়ে সামনে তাকিয়ে কি দেখলাম জানো? ট্রাকটা ফিরে এসেছে---। এবার পাশ থেকে ধাক্কা দিতেই আমাদের গাড়িটা বড় একটা গাছের গায়ে ধাক্কা খেল--। চোখ বোজার আগে টের পেলাম তানিম ভাই আর ভাবির শরীরটা রক্তে একাকার হয়ে গেছে-। উনারা স্পট ডেড। আমার চারপাশ অন্ধকার হওয়ার আগে মানুষজনের চিল্লাচিল্লি শুনছি--। কতো দূর থেকে যেন আসছে সে সব শব্দ ----।
নিশান ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। আসাদ আর সায়েরা ওকে সামলানোর চেষ্টা করছে। আর মাইশা দিনারকে আরো শক্ত করে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছে। এই মানুষটার উপর দিয়ে এতো কিছু গেছে সেটা ভুলেও তো মাথায় আসে নি---। কিছু হয়েছিল সেটা মাইশা ভেবেছিল--। কিন্তু তাই বলে এমন ভয়াবহ কিছু হতে পারে সেটা মাইশা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি। শুধু একা ওরাই কষ্টে ছিল না। মানুষটা যে একেবারো মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এসেছে ওদের কাছে!
১০!!
দিনার মাইশার চুলে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আর ততক্ষণে নিশানকে আসাদ আর সায়েরা সামলে নিয়েছে। তানিমের সাথে যেটা হয়েছে সেটা পূর্বপরিকল্পিত বুঝাই যাচ্ছে। তবে কে কেন করিয়েছে সেটা জানতে হলে বাকিটাও শোনা জরুরি। তাই নিজেদেরকে যথেষ্ট শক্ত করার চেষ্টা করছে সবাই। অনেকক্ষণ পর মাইশাও নিজেকে সামলে নিয়ে সরে বসে দিনারকে বেডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। বাকিরা এসে ঘিরে দাঁড়ালো দিনারকে।
-দিনার? এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট সারভাইভ করলে কি করে? বুঝতে পারছি না--।
-আসাদ--। কথায় আছে না? রাখে আল্লাহ মারে কে! লোকজনের আসার আওয়াজ শুনে ট্রাকের ওরা সটকে পড়ে জায়গা থেকে। আমাদের রক্তাক্ত শরীরগুলো হসপিটালে নিয়ে যায় রাস্তার কয়েকজন। ভেবেছে আমিও বুঝি মরে গেছি। সেই সময় শহরের একজন ডাক্তার উনার ওয়াইফকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন--। এক্সিডেন্টের স্পটের রক্তের ছোপ দেখে নিজের ডাক্তার হওয়ার দায়িত্ব পালন করতেই ছুটে এলেন হসপিটালে। আমার পার্লস তখন চলছে। স্যালাইন, ব্লাড কতোগুলো নল লাগানো---। ডাক্তার কিসব ফর্মালিটি করে আমাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে শহরে নিয়ে আসলেন। তারপর তাদের সন্তান পরিচয়ে নিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখানে রেখে আমার চিকিৎসা করানো হলো। অনেকটা ব্লাড লস হয়ে গিয়েছিল আমার। তার উপরে মাথায় চোট--। রক্ত জমে গিয়েছিল মাথায়। কয়েকবার করে অপারেশন করানো হলো। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। লাস্ট অপারেশনের পর আমি কোমায় চলে যাই--।
-সেকি?
-হুম----। কোমা থেকে জ্ঞান ফিরে হুঁশে আসি ১২ বছর পর---। কিন্তু তখনো ভাগ্য পরিহাস করে--। আমার স্মৃতিশক্তি নেই---। কাউকে চিনি না--। তখন ডাক্তার দম্পতি আমাকে তাদের সন্তান পরিচয় দিয়ে দেশে ফিরে আসেন-। আরও কয়েকটা বছর কাটে---। কয়েকবার বিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেছে--। আমার মন টানে নি তাই জোরও করে নি---। ডাক্তার পরিবার হলেও তাদের বিশাল বিজনেস---। তাদের বিজনেস টেকওভার করি আমি সুস্থ হয়ে--। বছর দুয়েক আগে একটা ছোটখাটো এক্সিডেন্টের কবলে পড়ি--।
-কি! কি হয়েছিল?
-বেশি কিছু হয় নি--। গাড়িটার ব্রেক কাজ করছিল না--। গাড়িটা গিয়ে একটা লাম্পপোস্টে ধাক্কা দেয়--। আমার মাথাটা জোরে গিয়ে গাড়ির সাথে বাড়ি লাগে--। হসপিটালে জ্ঞান ফিরে আসার পর কাউকেই চিনতে পারছিলাম না--। তোমাদের সবাইকে খুঁজছিলাম--। সবাই মিলে শান্ত করে। সুস্থ হলে ডাক্তার ভদ্রলোক আর উনার স্ত্রী এসে বাড়ি নিয়ে যান--। মাঝে কি কি হয়েছিল আমার সেটা তখন জানতে পারি--। উনাদের এক মাত্র ছেলে আমাকে পাবার দু-তিনবছর আগে এভাবে এক গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়। তাই আমাকে বাঁচানো আর সন্তান পরিচয়ে সবটা করেছেন তারা--।
-তারপর?
-মাঝে এতোগুলো বছর পার হয়ে গেছে---। আমি সোজা গ্রামে তোমাদের খুঁজতে যাই--। সেখানে কেউ নেই-। সব ফাঁকা-। চৌধুরী বাড়ি যাই- মাইশাদের বাড়ি যাই। যতখানে খোঁজ নেয়া সম্ভব সবখানে খোঁজ করেছি-। পাই নি কোথাও। একটা মজার ব্যাপার জানো? এতো বছর পর প্রকাশনীতে গিয়ে কি দেখেছি? তারা ঠিকই আমাকে চিনতে পেরেছে। হাতে ১০ লাখ টাকার একটা চেক ধরিয়ে দিয়েছে--। এতোগুলো বছরে বইটা অনেকবার মুদ্রণ হয়েছে--। ব্যবসা সফল বই---। চেকটা হাতে নিয়ে হা করে ছিলাম--। এই খুশি ভাগ করে নেয়ার জন্য তোমাদের আর পেলাম না--।
-বুঝলে দিনার? এই হল ভাগ্য! তোমার নামে লাখে লাখে টাকা প্রকাশনীতে জমা হয়ে ছিল--। অথচ তোমার স্ত্রী সন্তান না খেতে পেয়ে দুটো টাকার অভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে----।
-তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না আসাদ---। তোমরা না থাকলে আমার মাইশা- আবীরের কি যে হতো! একটা ছোট্ট রাগ- ভুল একটা সিদ্ধান্ত আমার জীবন থেকে ২১ টা বছর কেড়ে নিয়েছে--।
-২১ টা বছর আমিও শাস্তি পেয়েছি রে ভাই--। তোমার কষ্টটা তাই আমিও বুঝতে পারছি---।
-মাইশা? আবীর কেমন আছে? কোথায় ও? আর তোমরাই বা হসপিটালে কেন? কার কি হয়েছে?
-আবীর? ওহ শিট! দিনার? তোমার সাথে যাকে হসপিটালে আনা হয়েছে সেই তোমার ছেলে আবীর--।
-কি!
-আমরা আবীরকে দেখতেই এসেছি--। বেলা ওর কাছেই বসা --। কি হয়েছিল একটু বলবে? কিভাবে------?
-মাইশার খোঁজ না পেয়ে আমি আবার ডাক্তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাই। তারা আমকে সন্তানের মতোই স্নেহে কাছে টেনে নেন--। তাদের ব্যবসা সামলাচ্ছি--। কাল একটা জরুরী মিটিং ছিল। কয়েকজন স্টাফ নেয়া হবে কোম্পানীতে-। তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা, এ্যাপয়েনমেন্ট--। ১০ টায় মিটিং ছিল--। সকাল থেকে শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল তাই বের হতেও বেশ দেরি হয়ে গেছে--। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ করেই খেয়াল করে গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না--। এর মধ্যে আবার আমার বিপি লো হতে শুরু করেছে---। ড্রাইভারকে দেখলাম পাশের গাড়ির ছেলেটাকে কি সব যেন বলছে--। ছেলেটা নিজের গাড়ি ঘুরিয়ে আমাদেরটার সামনে মুখোমুখি হয়ে গেল। তারপর ধাক্কা--। এক্সিডেন্টের পর ছেলেটার গাড়ির সামনের দিকটা অনেকটাই দুমড়ে যায়---। আমার আর মনে নেই--।
সবাই থ মেরে বসে আছে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
বেলা আবীরের হাত ধরে মাথা নিচু করে বসেছিল বেশ অনেকক্ষণ। আবীরের হাতের আঙুলগুলোর আলতো কাঁপনে বেলা আবীরের মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঝুঁকলো আবীরের মুখের দিকে৷
-আবীর? তাকাও? দেখো? আমি বেলা? আবীর? এই?
আবীরও ঘোরের মাঝে তাকালো। চারদিকের কেমন কালচে অন্ধকার ভেদ করে মৃদু আলো এসে পড়ছে চোখে। হালকা আলোটা। তবুও যেন চোখে খুব লাগছে। সেই আলোর চাপে চোখ খুলতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আবীরের। তবুও কারো ডাকে চোখ খুলে তাকালো। এই ডাকটা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা স্রষ্টা যে ওকে দেয় নি। কতোগুলো ঘন্টা এই মেয়েটাকে না দেখে কেটেছে আবীর জানে না। কিন্তু ক্লান্ত মুখটা আর ফোলা চোখজোড়া দেখেই বেলার অবস্থাটাও বেশ টের পাচ্ছে আবীর। হাতটায় কোনমতে শক্তি এনে বেলার গালে ছোঁয়ানোর আগেই কিসের যেন টানে ব্যথা লাগলো। আর ছুঁয়ে দেয়া হলো না বেলাকে। বেলাও যেন বুঝতে পেরে ঝুঁকে আবীরের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম জানো? খবরদার চোখ বন্ধ করবে না-। আমি ডাক্তারকে ডেকেই চলে আসবো----।
-বেলা?---যেও না---।
-আমি কোথাও যাব না আবীর--। তুমি ১ মিনিট চুপ করে শোও--।
বেলা ছুটে রুমের দরজার সামনে গিয়েই জোরে চিৎকার করে ডাকলো।
-ডক্টর? নার্স--? কেউ আছো? বাবা? মা? নিশান ভাইয়া?
১ মিনিট ফুরানোর আগেই বেলা আবার আবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখ খুলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে আবীরের। তবুও সমস্ত শক্তি দিয়ে চোখ খোলা রেখে বেলাকে দেখছে। এই দেখাই যদি শেষ দেখা হয়? তাই মন ভরে দেখে নিতে চাইছে সে তার বেলাকে।
বেলার চিৎকারের শব্দে সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। ডাক্তার আর নার্সও এসেছে। সবাইকে বাইরে বের করে দিয়ে আবীরের চেক আপ করলো। ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে ডাক্তার বেরিয়ে এলো।
-কি হয়েছে? আবীর ঠিক আছে?
-জি--। রিস্ক কেটে গেছে। ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে উনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন--।
এক সপ্তাহ বেলার অক্লান্ত সেবায় আর ডাক্তারদের চেষ্টায় আবীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলো। মাথায় আর পায়ের ব্যান্ডেজ বদলে দিয়েছে এর মধ্যেই।
হসপিটালে থাকা অবস্থাতেই আবীর সবটা জানতে পারলো। বেলা আসাদ আর সায়েরার সন্তান, আর নিজের বাবাকেও এতোগুলো বছর পর ফিরে পেয়ে একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবাক হলো। সবই যেন স্বপ্নের মতো লাগছে আবীরের কাছে। কিভাবে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। জীবনে কোইন্সিডেন্ট আসে এটা স্বাভাবিক--। তাই বলে এতো কোইন্সিডেন্ট! তাও আবার একসাথে এতোগুলো! ব্যাপারগুলো হজম করতেই আবীরের বেশ খানিকটা সময় লাগলো।।
আসাদ সাহেবও আবীরের কাছে ক্ষমা চাইলেন বারবার করে। আবীর উনার এতোদিনের ব্যবহারগুলোরও একটা ব্যাখ্যা পেল। প্রিয় মানুষকে হারালে যে মানুষ কতোটা অসহায় হয়ে পড়ে-কতোটা ভেঙে পড়ে-বদলে যায় সেটা আবীরও বুঝতে পারে ভালো করেই। বেলা যখন মাত্র একটা সপ্তাহ ওর থেকে দূরে ছিল সে সময়টার নিজের ফিলিংসগুলো দিয়েই আবীর ব্যাপারটা টের পায় ভালোভাবেই। তাই বাবার কোন কথাই আর আবীর ধরে মন খারাপ করে নেই। সবটা ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এসব খারাপ সময়টা মনে রেখে কষ্ট পেয়ে তো লাভ নেই! যা হওয়ার হয়ে গেছে--। সামনে যা আছে তাকে সুন্দর করে সাজানোই হলো উচিত কাজ--।
২১ বছরের ব্যথা ভুলেই যেন দুটো পরিবার পূর্ণ হয়েছে এই এক সপ্তাহে। দিনারের সেই ডাক্তার দম্পতি হসপিটালে এসে সবার সাথে দেখা করলো। তারাও খুশি। দিনারকে ছেলে হিসেবে পেয়েছিল৷ এবার ছেলের পরিবারও পূর্ণ হলো। তাদের যেন খুশির সীমাই নেই।
আবীরকে আজ হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছে। আসাদ, সায়েরা, মাইশা, দিনার, নিশান, বেলা সবাই এসেছে আবীরকে নিতে। আসাদের পিড়াপিড়িতে সবাই চৌধুরী ম্যানশনে এসেছে। কয়েকটা দিন এখানে কাটিয়ে দিনার স্ত্রী, ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে ডাক্তার দম্পতির বাড়িতে উঠবেন। থাকবেন তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে---।
বেশ রাত পর্যন্ত সবাই মিলে আড্ডা দিল। এতোদিনের জমিয়ে রাখা সব কথা একে অপরকে শেয়ার করে যেন অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছে সবাই। কথার ফাঁকে ফাঁকে প্রিয়ে মানুষটার সাথে চোখাচোখি হচ্ছে। এর মধ্যে নিশান কোথায় চলে গেছে। বেশ অনেকক্ষণ পরে ফিরে আবার আড্ডায় যোগ দিয়েছে।
-মাইশা? তোমার আর আমার ছোটবেলার স্বপ্নটা এভাবে পূরণ হবে ভাবিই নি--। কি বলো? হা হা--।
-কিসের প্ল্যান? এই মাইশা? বলো না?
-শোনো দিনার--। আমি বলছি--। আমি আর আসাদ প্ল্যান করে রেখেছিলাম সেই ছোট্টবেলায়। আমার ছেলের বউ করে আনবো ওর মেয়েকে-। অজান্তেই কেমন মিলে গেল--। আজব কান্ড না?
-একেই বলে ভাগ্য--বুঝলে--? ওদের জন্যই এতোগুলো বছর--এতো কষ্টের পর সবাই আমরা একসাথে আজকে---।
-হুম----।
বেলা আর আবীর পাশাপাশি বসে বাবা মায়েদের কথা শুনে হেসে একে অপরকে দেখছে। ভাগ্য কেমন সত্যিই সবটা গুছিয়ে দেয়। আসলেই নিয়তিকে কেউ খন্ডাতে পারে না।
-এই মামা? অনেক রাত হলো--। যাও যাও--। শরীর খারাপ করবে--। আড্ডা আরো কয়েকদিন চলবে এভাবে--। আজকে আপাতত ঘুমাও----।
-তোর বোধ হয় আজকে বেশিই ঘুম পাচ্ছে?
-হ্যাঁ--। যাও তো--।
সবাই নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে গিয়ে সবার রিএ্যাকশন কি হবে সেটা ভেবেই হেসে নিজেও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো নিশান। পাশাপাশি তিনটা রুমকেই অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়েছে নিশান। ফুলে ফুলে সারা রুমগুলো ভরা। বেড সাইড টেবিলের উপর কয়েকটা মোমবাতি জ্বলছে শুধু। আর মিটমিটিয়ে ডিমলাইটের আলো। সব মিলিয়ে ঘোর লাগানো পরিবেশ। তিন জোড়া ভালোবাসা পাগল মানুষের জন্য নিশানের ছোট্ট উপহার।
বেলার হাত ধরে রুমে এসেই থ হয়ে গেল আবীর। বেলাও হা করে রুমটা দেখছে। ওদের বাসরের দিনও রুমটা এভাবে সাজানোর কথা ছিল। সেটা তখন হয়ে উঠে নি। আবীর আলতো করে বেলার কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করলো।
-আজকের রাতটায় কোলে নিতে পারছি না--। পরের বার পুষিয়ে দেব না হয়--। কি বলো?
বেলা আবীরের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে আবীরের হাত ধরে ফুলে সাজানো বিছানায় গিয়ে বসলো। আবীরও আয়েশ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বেলাকে বুকে টেনে নিলো। নাক ডুবিয়ে বেলার চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আবীর।
-বেলা?
-হুম?
-একটা গান শুনবে? স্পেশাল একটা গান তোমার জন্য জামানো ছিল--। বিয়ের রাতে রাগ করে গাওয়া হয় নি--। আজকে শুনবে?
-হুম---। গাও---।
-"আমি কি দেখিব তোমায় হে?
তোমার সকলি সুন্দর হে-অতি সুন্দর!
তব চরণ সুন্দর, বরণ সুন্দর, সুন্দর তব নয়ন;
তুমি দাঁড়ায়ে সুন্দর, বসিয়া সুন্দর, সুন্দর তব শয়ন।
তব গমন সুন্দর, থমক সুন্দর, সুন্দর তব আলস;
তব গরব সুন্দর, অশ্রু সুন্দর, সুন্দর হাসি-বিকাশ।
তব বাচন সুন্দর, বচন সুন্দর, সুন্দর তব গীতি;
তব মরম সুন্দর, শরম সুন্দর, সুন্দর তব ভীতি।
আমি কত দেখিব তোমায় হে?
তুমি সকল সময়ে মধুর, অতি মধুর!
তুমি দিবসে মধুর, নিশীথে মধুর, মধুর তুমি স্বপনে;
তুমি সজনে মধুর, বিজনে মধুর, মধুর তুমি গোপনে।
তুমি বিপদে মধুর, বিষাদে মধুর, মধুর যবে ভরসা;
তুমি শরতে মধুর, হরষে মধুর, মধুর যবে বরষা।
তুমি সোহাগে মধুর, কলহে মধুর, মধুর যবে অভিমান;
তুমি মিলনে মধুর, বিরহে মধুর, মধুর যবে ভাঙা_প্রাণ।
তুমি মধুর হে যবে আমায় ভালোবাসো, মধুর যবে বাসো অন্যে;
তুমি মধুর যবে বসো কনক-আসনে, আমার কাটে দিন দৈন্যে।।
তোমার সকলি সুন্দর হে, অতি সুন্দর!"
আবীরের গান শুনে বেলার লজ্জায় আবীরের প্রায় বুকের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার অবস্থা। লোকটা এমন দুষ্টু দুষ্টু গান গেয়ে এতো ব্যাকুল করে কেন ওকে সবসময়? আবীরও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বেলার লজ্জা মাখা মুখটা দেখছে। মেয়েটাকে লজ্জায় লাল হতে দেখলে আবীরের নিজের মধ্যে যেন কোন এক ঝড় উঠে। আবীর বেলার মুখটা তুলে ধরে ভ্রু নাচালো। বেলা আবীরের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় গা এলিয়ে দিলো।
পাশাপাশি তিনটা রুম। তিনটা রুমেই ভালোবাসার কাঙাল মানুষগুলো নিজেদের প্রিয়ে মানুষগুলোর ভালোবাসার মায়াজালে ধরা দিয়ে অন্য কোন এক ভালোবাসার জগতে হারিয়ে গেছে। এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে একে অন্যকে ঘিরে ধরেছে ভালোবাসার কোন এক অদৃশ্য মায়াজালে। এভাবেই বন্ধনগুলোয় নাহয় ভালো থাক ভালোবাসারা।
***(সমাপ্ত)***