মোবাইল পাগলী (অন্তিম পর্ব ০৫)


০৯!!

শুভ বাড়িতে এসে সবাইকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে টেস্ট পরীক্ষার পরই আমাদের বিয়ে হবে। যাতে আর কোনো বাধা না আসে বিয়েতে। অবশ্য কেউই এই কারণটা জানে না।

মেঘলা রুমে গিয়ে দেখে আকাশ চুপ করে বসে আছে। মেঘলা আকাশের পাশে বসে আকাশের কাঁধে হাত রাখে।
- কি হয়েছে আকাশ?
- (চুপ)
- বলো না আকাশ কি হয়েছে?
- (চুপ)
- প্লিজ জান বলো।
এভাবে চুপ করে আছো কেন?
- (চুপ)
আকাশ কোনো কথা বলছে না দেখে মেঘলা আকাশের দু গালে হাত রেখে মুখটা মেঘলার দিকে ঘুরায়।
- বলো জান, কি হয়েছে?
রাগে আকাশের চোখ লাল হয়ে আছে। চোখে পানি টলমল করছে।
- এই প্রথম! এই প্রথম প্রিয়া আমার গায়ে হাত তুললো। প্রিয়া আমাকে থাপ্পড় মারলো। যে মেয়ে কোনোদিন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতো না সেই মেয়ে আমাকে মেরেছে। বুঝতে পারছো মেঘলা? প্রিয়া! প্রিয়া আমাকে মেরেছে। তাও কি না ঐ শুভর জন্য? আচ্ছা বলো তো আমরা কি মিথ্যা বলেছিলাম?  আমরা তো মিথ্যা বলিনি। প্রিয়া সব দোষ করেছে আবার প্রিয়াই আমাকে মারলো?
- চিন্তা করো না। এর শোধ আমি ঠিকই নিবো।
- কিন্তু কিভাবে?
- এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
- পারছি না আমি মেঘলা। পারছিনা আমি শান্তিতে থাকতে।
মেঘলা আকাশের হাত শক্তে করে ধরে আকাশের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়।  আকাশকে জড়িয়ে ধরে। এর চেয়ে সহজ উপায় মেঘলার জানা নেই যা দিয়ে আকাশকে শান্ত করা যায়।
আকাশও মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলা এটাই চায়। আকাশ শুধু মেঘলারই থাকুক। আকাশের সব ভালোবাসা মেঘলাতেই আবদ্ধ থাকুক। আর আকাশের সব ভালোবাসা পেতে হলে পথের কাঁটা দূর করতে হবে।

লাস্ট পরীক্ষার দিন:
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাটে কোনো গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই হাঁটতে শুরু করেছি।
পিছনে তাকিয়ে দেখি আকাশও আসছে।
- হায়রে বন্ধুত্ব! একটা সময় আমাকে বৃষ্টির পানি পর্যন্ত ধরতে দিতো না আমার জ্বর আসবে বলে আর সেই আকাশের সামনে দিয়েই আমি ভিজে ভিজে যাচ্ছি। (মনে মনে)
- এই মেয়ের কি কোনোদিন শিক্ষা হবে না। এইরকম বৃষ্টির মধ্যে কেউ ভিজে নাকি। যদি ঠান্ডা লেগে যায়। 
লাগুগ ঠান্ডা। তাতে আমার কি। মরে যাক ও। আমাকে মেরেছে তাই না। ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে দেই।

৪ দিন পর :
আজকে আমাদের গায়ে হলুদ। পার্লার থেকে সাজানোর জন্য কত লোক এসেছে। কিন্তু সেদিকের কোনোদিকেই আমার মন নেই। আমার তো ফোন চাই। কিন্তু কেউই ফোনটা ধরতে দিচ্ছে না। ধরতে দিচ্ছে না বললে ভুল হবে, সকাল থেকেই ফোনটা লুকিয়ে রেখেছে। মহা এক মুশকিলে পড়েছি। পার্লার থেকে যারা সাজাতে এসেছে তাদের একজনকে বললাম,
- আন্টি ফোনটা একটু দিবেন?
- তুমি সাজবে না?
- হ্যাঁ সাজবো তো। আপনারা আসলেন মাত্র। একটু রেস্ট নিন মিষ্টি খান। তারপর না হয় সাজতে বসবো?
- আচ্ছা ঠিক আছে নাও।
- আহ্! কি শান্তি। এতক্ষণ পর মনে হয় প্রাণে শান্তি আসলো। যদিও আমার ফোন না তাতে কি । ফোন হলেই হলো।
আমি ফোনটা নিয়ে বেলকোনিতে চলে গেলাম। হুট করেই তখন আকাশের কথা মনে হলো। আচ্ছা আকাশ কি জানে আজ আমার গায়ে হলুদ?
হয়তো না!
আম্মু বারান্দায় এসে আমার কান ধরে বলে,
- ঐ আজকের দিনেও ফোনটা না ধরলে হয়না? 
- উফ! আম্মু ছাড়ো। লাগছে তো।
- ফোন দে।
- এটা তো আমার ফোন না।
- যারই হোক তুই দে। আর সাজতে বস।
আমিও বাধ্য মেয়ের মত আম্মুর কথা শুনলাম।

বিয়েরদিন:
বউ সাজাতে আসা লোকগুলোর অবস্থা একদম হিমশিম খাওয়ার মত। কারণ আমি কিছুতেই সাজতে বসবো না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার হাতে ফোন দিবে।
শেষমেশ আমার জেদের কাছে হার মেনে আম্মু ফোনটা দিলো।
শুভ ফোন করেছে,
- হ্যালো মোবাইল পাগলী
- হ্যালো অশুভ।
- আজকেও অশুভ? 
- তাহলে কি শুভ ভাইয়া বলবো?
- ধুর ভাল্লাগেনা
- কি ভাল্লাগেনা?
- এমন করো কেন?
- কেমন করলাম?
- কিছুনা। কি করো?
- পুতুল সাজি।
- মানে?
- মানে কি আবার? আজকে বিয়ে না? সাজতে হবে না?
-হু। বউ সাজবা পুতুল কেন?
- যেই পরিমাণ মেকাপ দেয়। পুতুলই লাগে।
- ঘোড়ার ডিম।
- খান
- রান্না করো।
- এনে দেন
- কই পাবো?
- আমি কি জানি?
- ম্যাম আপনি যদি ফোনটা একটু রাখতেন তাহলে আমরা ঠিকমত সাজাতে পারতাম।(পার্লারের লোক)
- আচ্ছা মোবাইল পাগলী, তুমি বরং সাজো এখন। পরে কথা হবে।
- ওকে 
শুভ ফোনটা রেখে দেওয়ার পর গেমস খেলছিলাম চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে।
পার্লারের মেয়েগুলা যে বেশ বিরক্ত হচ্ছে সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। তাতে কি আমার? ফোন তো আমি দেবো না।
অনেক কষ্টে আমাকে সাজানো শেষ হলো।
এবার একটু শান্তিতে ফোন টিপতে পারবো।
মনের শান্তিতে ফোন টিপছিলাম। ছোট কাজিনটা দৌড়াতে দৌড়াতে আমার কাছে এসে বললো,
- জানো আপু আকাশ ভাইয়ার আম্মুকে কে যেন ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
- কিহ্!! কি বলিস এগুলা? আন্টি কই? কবে হইছে এই ঘটনা?
- কালকে রাতে। এখন হসপিটালে আছে। অবস্থা নাকি খুব একটা ভালো না।
আমার মাথায় মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ওর কথা শুনে। এজন্যই কি আন্টি আমার বিয়েতে আসেনি।
আম্মুকে অনেক রিকোয়েস্ট করলাম যে একবার আন্টিকে গিয়ে দেখে আসি। কিন্তু রাজি হলো না। বিয়ের দিন নতুন বউ বিয়ের আগেই বাইরে যাবে এটা ভালো চোখে দেখায় না।
কিন্তু আমার মনটা অস্থির হয়ে রয়েছে। মনকে কিছুতেই স্থির করতে পারছি না। শুভদের আসতেও তো এখনো অনেক সময় বাকি। আমি কি শাড়িটা চেঞ্জ করে পেছনের দরজা দিয়ে বাহিরে যাবো! আন্টিকে একবার দেখে আসতাম। তার আগে দেখতে হবে পেছনের দরজায় কেউ আছে নাকি।
দরজা খুলে দেখলাম নাহ্ কেউ নেই। দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে মাত্র শাড়ির আঁচলটা খুলতে যাবো, তখনি আকাশ রুমে আসে। এভাবে হঠাৎ আকাশকে রুমে দেখে আমি চমকে যাই।
- বাহ্ বাহ্! বিয়ের জন্য বউ সেজে রেডি হয়ে আছিস?
- তুই এখানে?
- কেন? আমাকে প্রত্যাশা করিসনি বুঝি? বিশ্বাস কর আমারও কোনো ইচ্ছে ছিল না তোর বিয়েতে আসার। কিন্তু না এসেও পারলাম না। তোকে তো এত সহজে আমি ছেড়ে দিবো না।
আকাশের চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাতে পারছি না। মনে হয় আগুন জ্বলছে চোখে। আর সেই আগুনেই আমাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে।
- তুই এখান থেকে যা আকাশ।
- যাবো যাবো! এত তাড়া কিসের? 
আকাশ এক পা দু পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
- দেখ আকাশ! আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
- লাভ নেই। তোর বিয়ের আমেজে এই পুরো বাড়িটা মুখরিত হয়ে আছে। এত শব্দ গান বাজনার মধ্যে তোর আওয়াজ কেউ শুনতে পাবে না।
কথাগুলো বলে আমার অনেক কাছে এসেই জড়িয়ে ধরে আমায়। হঠাৎ পেটে কিছুর অস্তিত্ব টের পেলাম। জ্বালা করছে খুব। কি যেন গিয়েছে পেটের ভেতর। কষ্ট হচ্ছে অনেক। তরল জাতীয় কিছু মনে হচ্ছে কোমড় বেয়ে নামছে। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে। তখনো অব্দি আকাশ আমাকে জড়িয়েই ধরে আছে। আকাশ ওর মুখটা আমার কানের কাছে এনে বলে,
- তুই ছিলি আমার জান আর আমার মা হলো আমার পৃথিবী। সে পৃথিবীকেই যখন শেষ করতে চেয়েছিস তাহলে জান থেকে কি হবে?
আকাশ আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা। পেটে হাত দিয়ে দেখি রক্ত। ছুড়ি!  ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে আকাশ! আকাশের কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করতে পারছিনা। আকাশ কি করে এটা করলো। ধীরে ধীরে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। দেহটা লুটিয়ে গেল মাটিতে বন্ধ হয়ে গেল চোখের পাতা...........

১০!!

আকাশের মায়ের চিৎকারে আকাশ পাশের রুম থেকে দৌড়ে আসে।
- কি হয়েছে মা?
- আকাশ! আকাশ প্রিয়া কোথায়?  ওকে তুই মেরে ফেলেছিস? ও কিছু করেনি। প্রিয়া কোথায়?  (অস্থির হয়ে)
- মা শান্ত হও। কি বলছো এসব? প্রিয়াকে মেরে ফেলবো মানে? আজ ওর বিয়ে মা।
- আমি দেখেছি,দেখেছি। প্রিয়া কোথায় আমি প্রিয়ার কাছে যাবো।
- মা?  তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। কি বলছো এসব?  কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো?
- দুঃস্বপ্ন!?
- হ্যাঁ মা। এতক্ষণ তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।
- কিন্তু..
- কি?
- আমি যে দেখলাম?
- কি দেখেছো? আচ্ছা স্বপ্নটা কি বলো তো 
- আমি দেখলাম যে, কে যেন আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। আর মেঘলা তোকে বলেছে যে প্রিয়া নাকি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আর তাই তুই রাগে ওকে মারতে ওর বাড়ি চলে গিয়েছিলি। প্রিয়াকে ওর বোন আমার কথা জানালে ও আমাকে দেখতে আসতে চায়। আর তুই পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ওর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছিস। 
কথাগুলো বলতে বলতে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে আকাশের মা। আকাশ পানির গ্লাস ওর মায়ের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
- মা, পানি খাও। এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর যদি এমন হতোই যে প্রিয়া তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে তাহলে ওকে মেরে ফেলতেও আমি দু'বার ভাববো না।
- প্রিয়া ওরকম মেয়েই না। ও কখনো আমার ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারে না আবার আমাকে খুন করবে!
- তুমি ওকে চিনো না মা। ও অনেক পাল্টে গেছে। ও আর আমাদের আগের প্রিয়া নেই। পরিবর্তনের ঝর বয়ে গিয়েছে ওর ওপর দিয়ে।
-  ভুল বললি আকাশ। বল যে তুই'ই প্রিয়াকে এখনো চিনে ওঠতে পারিসনি। আর পাল্টে, প্রিয়া যায়নি। বরং তুই পাল্টে গিয়েছিস তাও একটা কালসাপের জন্য।
- মানে? কি বলতে চাইছো? কার কথা বলছো?
- মেঘলার কথা বলছি।
- মেঘলা!!!
- হ্যাঁ মেঘলা।
সেদিন প্রিয়া যখন বাড়িতে এসে তোকে মারে আমি রান্নাঘরে ছিলাম। তুই রুমে চলে যাওয়ার পর আমি প্রিয়ার কাছে যাই কি হয়েছে জানার জন্য। কিন্তু ওদের ফ্লাটে গিয়ে দেখি প্রিয়া রুমে নেই। তাই ছাদে যাই।
ছাদে গিয়ে দেখি, শুভ আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদে প্রিয়া আর মেঘলা কথা বলছে। আমি শুভর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে ওদের সব কথা শুনি।
(সেদিন ছাদে প্রিয়া, মেঘলা আর শুভর কথা আপনাদের সবারই জানা)
সবটা শোনার পর আকাশ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
- তুমি সব ঠিক বলছো মা?
- তোর কি মনে হচ্ছে আমি তোকে মিথ্যা বলবো? আকাশ, আমি তোর মা হই। আর মায়েরা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।
আমি জানি মেঘলা যা করেছে তোকে একান্তভাবে পাওয়ার জন্যই করেছে। কিন্তু মেঘলা যা করেছে সব ভুল করেছে। অন্যায় করেছে। এভাবে না ভালোবাসা পাওয়া যায় আর না প্রকাশ পায়। এমনও তো হতে পারে একদিন ও আমাকেই তোর জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে চাইছে!
- মা!! চুপ করো। প্লিজ এসব বলো না। এইসব কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে মেঘলাকে আমি ছাড়বো না। এতদিন মেঘলা আমার ভালোবাসা আর ভালো মানুষের রূপ দেখেছে এবার খারাপ দিকটাও দেখবে।
কলিংবেল বাজছে।
আকাশ গিয়ে দরজা খুলে দেখে মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,
- আকাশ! আকাশ! আমরা জিতে গেছি আকাশ!
- (চুপ)
- প্রতিশোধ নিতে পেরেছি আমি।
- মানে? কিসের প্রতিশোধ?
- তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল না প্রিয়ার? তোমার গায়ে হাত তুলেছে। এখন আবার খুশিতে বিয়েও করবে। এটা তো হতে পারে না। ওর খাবারে আমি বিষ মিশিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতক্ষণে হয়তো বিয়ে বাড়িতে কান্নাকাটির ধুম পড়ে গিয়েছে। 
কথাগুলো বলেই উচ্চস্বরে হাসতে থাকে মেঘলা। আকাশ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় দেয় মেঘলাকে। টাল সামলাতে না পেরে মেঘলা মেঝেতে পড়ে যায়। আকাশ চুলের মুঠি ধরে তুলে মেঘলাকে একটা রুমে বন্দি করে রাখে। আর যাওয়ার আগে বলে যায়,
- তোর মত কালসাপকে বিশ্বাস করে আমি আসলেই ভুল করেছি। আমার প্রিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না। মাইন্ড ইট!!

আকাশ প্রায় পাগলের মত দৌড়াতে দৌড়াতে বিয়ে বাড়িতে যায়। চোখের পানিও কোনো বাঁধা মানছে না। কত অপরাধ করে ফেলেছে নিজের অজান্তেই এটা ভাবতেই যেন চোখের পানি ঝর্ণার স্রোতের মত ভেসে আসছে। প্রিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না আকাশ।
দূর থেকে বিয়ে বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। অনেক ভিড়। বিয়ে বাড়ি ভিড় হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মন কু গাইছে। প্রিয়ার কিছু হলো না তো। দরজার সামনে যেতেই আকাশের পা যেন মাটি আঁকড়ে ধরেছে। কিছুতেই পা আগাতে পারছে না। আকাশের থেকে কিছুটা দূরেই প্রিয়ার  বাবার কোলে প্রিয়া। মুখে হাতে রক্ত লেগে আছে। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, কষ্টে ছটফট করছে প্রিয়া। প্রিয়ার বাবা চোখের পানিতে যেন হাঁটতেই পারছে না প্রিয়াকে নিয়ে। শুভকে দেখা যাচ্ছে না। তার মানে বরপক্ষ এখনো আসেনি। আকাশ দৌড়ে যায় প্রিয়ার কাছে। ওর বাবার কোল থেকে নিজের কোলে নেয় প্রিয়াকে। ছুটতে থাকে প্রিয়াকে নিয়ে। এ্যাম্বুলেন্স এসে পড়েছে। প্রিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে আকাশ, প্রিয়ার আব্বু, আর ওর কাকা, ফুপা। বাড়িতে ওর মাকে সামলাচ্ছেন বাড়ির মহিলা আত্মীয়রা। একটু পরপরই জ্ঞান হারাচ্ছেন উনি। প্রিয়া দু'হাত দিয়ে গলা চেপে ধরছে। 
- বা... বা  বা বা! খু খু ব কষ্ট হচ্ছে আ আমার!!
অস্পষ্ট শব্দে শুধু এতটুকুই বলেছিল প্রিয়া। তারপর ওর শরীরটা যেন নিথর হয়ে গেল। আকাশ প্রিয়ার হাত ধরে ডাকছে। আর অনবিরত চোখের পানি পড়ছে।
খুব তাড়াতাড়ি ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। প্রিয়াকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে যাবে সেই সময় শুভ কান্না করতে করতে দৌড়ে আসে। আকাশের কোল থেকে নিয়ে নিজে কোলে করে হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যায়। আকাশ কিছু বলেনি। কারণ আকাশ জানে, শুভ নামের এই মানুষটার কাছে প্রিয়া অনেক বেশি নিরাপদ আর গুরুত্বপূর্ণ। এই মানুষটা প্রিয়াকে যতটা ভালোবাসে এই কয়েকমাসে আকাশ বোধ হয় এত বছরেও তা পারেনি। না হলে কি আর প্রিয়াকে ভুল বুঝতো আর না এই দিনটা দেখতে হতো। কোথায় ও বউ সেজে শ্বশুরবাড়ি যাবে আর সেখানে ওকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই   আকাশ হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে আর কান্না করতে থাকে পাগলের মত। হঠাৎই মনে পড়ে মেঘলার কথা।
উঠে চলে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে। শুরু হয় অঝর ধারায় বৃষ্টি।কিন্তু এই বৃষ্টি যেন আকাশের বুকের আগুন কিছুতেই নিভাতে পারছে না।

আকাশ বাড়িতে গিয়ে দেখে মেঘলা সোফায় মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। মেঘলার চুলের মুঠি ধরে উঠায় আকাশ
- আহ্! আকাশ লাগছে ছাড়ো 
- এই সামান্যটুকুতেই লাগছে? আর ঐদিকে যে আমার প্রিয়া মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। ওর কষ্ট হচ্ছে না?
- আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি আকাশ। (কান্না করে)
- চুপ! আমার ভালো? আমার ভালো চাস তুই? তুই জানিস আমার ভালো থাকা কি? আমার ভালো থাকা হলো  প্রিয়া। আর সে প্রিয়াকেই তুই আমার থেকে আলাদা করেছিস। তাতেও তোর শান্তি হয়নি। তুই কি করলি? তুই ওকে পৃথিবী থেকেই সরাতে চাইলি। ওর আজকে বধুবেশে শুভ ভাইয়ার ঘরে থাকার কথা আর তোর জন্য ও এখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
- আমি তোমাকে ভালোবাসি আকাশ। তোমার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না আমি। আমি জানতাম তোমার আম্মু সব সত্যিটা জেনে গিয়েছিল। যেকোনো সময় তোমাকে সব বলে দিবে। তখন তুমি আবারও প্রিয়ার কাছে ফিরে যেতে এটা আমি মানতে পারবো না।
আকাশ যেন আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে মেঘলার গলা!
- তোর এই নাটক আর কুমিরের কান্না বন্ধ কর। তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
এই বলেই আকাশ মেঘলার দু গালে থাপ্পড় দিতে থাকে। মেঘলা আকুতি মিনতি করে ওকে যেন না মারে। কিন্তু আকাশ কোনো বাঁধা মানছে না। এবার লাঠি নিয়ে আকাশ এলোপাথাড়ি মারা শুরু করে মেঘলাকে। যার ফলস্বরূপ অনেক জায়গায় কেটে গেছে। এবার আর মেঘলা বাঁধা দিচ্ছে না। দিচ্ছে না বললে ভুল হবে। দিতে পারছে না কারণ সেই শক্তিটুকুও আর নেই মেঘলার।

আকাশের ফোনে ফোন আসে। শুভর ফোন দেখে আকাশ তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে 
- হ্যালো
- হ্যালো শুভ ভাইয়া। প্রিয়া? প্রিয়া কেমন আছে?  ও ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয়নি তো? 
শুভ ভাইয়া চুপ করে থাকবেন না বলেন প্লিজ।
- আকাশ শান্ত হও! প্রিয়া এখন বিপদমুক্ত। কেবিনে শিফ্ট করে দেওয়া হয়েছে ওকে।
- সত্যি বলছন শুভ ভাইয়া? প্রিয়ার কিছু হয়নি?
- না। আকাশ, আমি সব শুনেছি তোমার মায়ের কাছে। 
যখন প্রিয়ার বাড়ি থেকে ফোন আসে আর শুনতে পাই যে প্রিয়া বিষ খেয়েছে। কিছুতেই নিজের কানকে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস ছিল প্রিয়া বিষ খায়নি বরং খাওয়ানো হয়েছে। আর সেটাই হলো।
শুনো তোমার মা এখন হাসপাতালেই আছে। তুমিও চলে আসো।
- না ভাইয়া। আমি পারবোনা। আমি এই মুখ নিয়ে প্রিয়ার সামনে দাঁড়াতে পারবোনা। আর মেঘলাকে খুন না করা পর্যন্ত শান্তি পাবো না 
- পাগলামি করো না আকাশ। শান্ত হও। মেঘলা যা করেছে এর জন্য পুলিশ আছে। আমরা ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিবো।
তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি রাখছি।

ছাদে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে আকাশ। বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে ওর নিজেকে। প্রিয়াকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোন মুখেই বা যাবে ও। 

রাত: ১১:৩০ মিনিট 
আকাশ হাসপাতালে এসেছে। কেবিনে ঢুকে দেখে শুভ একটা চেয়ারে বসে প্রিয়ার পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। আর প্রিয়া শান্ত চোখে ঘুমিয়ে আছে। মুখটা দেখে মনে হচ্ছে কত নিশ্চন্তে ঘুমাচ্ছে।
আকাশ আস্তে করে একটা চেয়ার টেনে প্রিয়ার পাশে বসে। প্রিয়ার হাতটা ধরে আলতো করে চুমু খেয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। কখন যে রাত ৩টা বেজে গিয়েছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই আকাশের। ঐদিকে শুভ বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। নিশ্চয় ক্লান্তি ঝেকে বসায় এভাবে ঘুমুচ্ছে।
আকাশ প্রিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমু খায়।
- আমাকে ক্ষমা করে দিস প্রিয়া। আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তোর মুখোমুখি হওয়ার সাহসটাও পর্যন্ত আমার নেই। আর তাই তো রাতের অন্ধকারে চুরি করে তোকে দেখতে এসেছি। অনেকদূরে চলে যাবো আমি।  যাতে আমার এই অশুভ ছায়া আর তোর ওপর না পড়ে।
কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছিলো  আকাশ। তখন আমি পেছন থেকে ওর হাত আটকে ধরি। ও ভূত দেখার মত চমকে যায়।
- প্রিয়া! ঘুমাসনি তুই?
- উহু! ঘুমিয়েছিলাম তো। কিন্তু তোর পরশে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।
এভাবে না বলে চলে যাচ্ছিস কেন?
- তোর সাথে কথা বলার সাহস যে আমার নেই।
- অধিকার তো আছে।
- কিসের অধিকার?
- বন্ধুত্বের!
- প্রিয়া!!
- হ্যাঁ। তুই আগেও যেমন আমার বন্ধু ছিলি এখনো আছিস আর থাকবি সারাজীবন।
- তোর মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
- হুহ! মেঘলা কোথায়?
- এতকিছুর পরও ঐ ডাইনীর কথা জিজ্ঞেস করছিস তুই?
- হু করছি। কারণ ও তো তোর ভালোবাসা।
- না ও আমার কেউ না। ও নর্দমার কীট। ও এখন জেলে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্স লেটার ওর বাসায় পাঠিয়ে দিবো।
- এভাবে জীবনটা নষ্ট করে দিবি?
- তুই কি ওর সাথে থাকতে বলছিস?
- না সেটা বলছি না। তবে নতুন করে তো জীবনটা শুরু করতে পারিস।
- নিবি সেই দায়িত্বটা তুই?
- অনেক দেড়ি করে ফেলেছিস আকাশ তুই। ঐযে দেখছিস ঐ মানুষটাকে। শুভকে। নিজের অজান্তে যে কিভাবে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি বলে বুঝাতে পারবোনা। আমি পারবোনা মানুষটাকে ঠকাতে। তবে তোর প্রতি বন্ধুত্বের ভালোবাসা সারাজীবনই এক থাকবে।
- আমি জানি পাগলী। আমিও চাইনা শুভ ভাইয়া তোর দ্বারা কষ্ট পাক। আমি চাই তোরা সব সময় সুখে থাক। আর তাই তো তোদের থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।
- কোথায় যাবি? 
- সিঙ্গাপুর চলে যাবো। বাবাকে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই ভিশা পাঠাবে। মাকে নিয়ে চলে যাবো বাবার কাছে সিঙ্গাপুরে। বাকি পড়াশোনা ওখানেই করবো।
- এভাবে সব ছেড়ে চলে যাবি?
- সবচেয়ে মূল্যবান মানুষটার জন্যই যে আমাকে দূরে চলে যেতে হবে। নয়তো তার স্মৃতি যে বড্ড বেশি পোড়াবে আমাকে।
- কার কথা বলছিস?
- মোবাইল পাগলীর কথা।
এখন তুই রেষ্ট নে, আমি আসি। কাল আবার আসবো।

পরেরদিন সকাল: 
শুভ ঘুম থেকে উঠে দেখে আমি ফোনে গেমস খেলছি। শুভ রাগ দেখিয়ে বলে,
- এটা কি হচ্ছে? তুমি না অসুস্থ?  ঘুম বাদ দিয়ে ফোন টিপছো কেন? রাখো ফোন রাখো।
- বাহ্ রে! অসুস্থ হলে কি ফোন ধরা যায় না?
- এত কথা না বলে যেটা বলছি সেটা শুনো।
আমিও শুভর কথামত ফোনটা রেখে দিলাম। শুভ আমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।

৩ দিন পাড় হয়ে গেছে। কিন্তু এই তিনদিনে একবারও আকাশ আমাকে দেখতে আসেনি। তবে শুভকে কল দিয়ে আমার খবর নিয়েছে। ৪ দিনের দিন শুভ আমাকে দেখতে এসেছে। হাতে লাগেজ। সাথে আন্টিও আছে। ভেবেছিলাম অভিমান করে কথা বলবো না। কিন্তু অসময়ে কোথায় যাচ্ছে জানার আগ্রহ আর কৌতুহল আটকে রাখতে না পেরে বলেই ফেললাম,
- কোথায় যাচ্ছিস?
- আগে বল কেমন আছিস?
- হু ভালো। তুই?
- ভালোই। সন্ধ্যায় নাস্তা করেছিস?
- কোথায় যাচ্ছিস? বলিস না কেন? আন্টি তুমি বলো তো কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
- সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছি মা। ভালো থাকিস, নিজের খেয়াল রাখিস।
আন্টির কথা শুনে বুকে মোচর দিয়ে ওঠলো। চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারিনি। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে আকাশকে বললাম,
-এভাবে হঠাৎ করেই চলে যাচ্ছিস? আমাকে জানালিও না?
- জানালে যে তুই এভাবে যেতে দিতি না 
- তাই বলে আমার বিয়েতেও থাকবি না?
- সহ্য করতে পারবো না রে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে যেতে হচ্ছে। 
ভালো থাকিস তুই। নিজের খেয়াল রাখিস।

আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ভাষা যেন সব হারিয়ে গিয়েছে।
আকাশ চলে যাচ্ছিল, পেছন থেকে আমার ডাকে আকাশ দাঁড়িয়ে পড়ে।
- কিছু বলবি? (আকাশ)
- আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি?
আকাশ যেন এই আশাতেই ছিল। তৃষ্ণার্ত পাখির মত জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদতে থাকে।
- তুইও ভালো থাকিস আকাশ। আর নিজের জীবনটা নতুন করে গুছিয়ে নিস প্লিজ। ভালো থাকিস।
- আসি
আমি আর কিছু বলতে পারছিনা। জলভরা চোখ নিয়ে শুধু হাত নাড়িয়ে টাটা দিয়েছি।

আকাশের এয়াপোর্টে পৌঁছাতে একটু লেট হয়ে যায় জ্যামের কারণে। তাই তাড়াহুড়ো করে এয়ারপোর্ট এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। মেয়েটা টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। কিন্তু কি অদ্ভুত বিষয় মেয়েটা না উঠে ফোন টিপছে বসে। সম্ভবত বুঝার চেষ্টা করছে ফোনটার কিছু হয়েছে নাকি। আকাশ এগিয়ে গিয়ে বললো,
- স্যরি। আসলে আমি দেখিনি।
- না। না ঠিক আছে। আসলে আমিও ফোন টিপতে টিপতে খেয়াল করিনি।
কি অদ্ভুত বিষয়! মেয়েটা এতগুলো কথা বললো কিন্তু একবারও আকাশের দিকে তাকায়নি। চোখ দুটো ফোন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এ যেন একদম প্রিয়ার কার্বনকপি। এটা ভেবেই আকাশ অবাক হয়ে যাচ্ছে। একজন মহিলা এসে মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- এই যে মোবাইল পাগলী এখানে বসে কি ফোন টিপবি? নাকি প্লেনে উঠবি?
মোবাইল পাগলী কথাটা শুনে যেন আরেক দফা ধাক্কা খায় আকাশ। ঐদিকে আকাশের মা তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার জন্য।
প্লেনে উঠার পর দেখে সেই মোবাইল পাগলী আর ওর সিট পাশাপাশি। আকাশ মেয়েটাকে দেখছে আর ভাবছে ২টা মানুষের মধ্যে এত মিলও হতে পারে। মেয়েটা এতক্ষণে আকাশের দিকে তাকিয়েছে।
- আরে আপনি সে না? যার সাথে তখন ধাক্কা খেলাম?
- আশ্চর্য! আপনি তো আমার দিকে তাকাননি।
- হিহিহি আমি মোবাইল পাগলী হলেও সব দেখতে পাই। বাই দ্যা ওয়ে আমি প্রেয়সী।
- আপনি?
- আকাশ। 
- নাইস নেম। সিঙ্গাপুর কেন যাচ্ছেন?
- পড়াশোনা করতে। আপনি?
- আমিও।
- আচ্ছা আপনি কথা বলার সময়ও কারো দিকে তাকান না। আপনি কি এমনই?
- হ্যাঁ। এজন্যই তো সবাই মোবাইল পাগলী বলে।
- জানেন, আমারও একটা মোবাইল পাগলী ছিল।
- ছিল? নেই?
- উহু আছে। শুধু আগের মত অধিকারটা নেই।
- কে সে?
- আমার ভালোবাসা। আমার বেষ্টফ্রেন্ড।
- ওহ।
মেয়েটা গেমস খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে আমার কাঁধে মাথা রেখে। প্রেয়সী, প্রিয়া! দুজনই যেন একেকজনের প্রতিচ্ছবি মোবাইল পাগলী! আকাশ প্রিয়ার ছবিগুলো দেখছিল আর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠছিল।

সকালে ওরা সিঙ্গাপুর পৌঁছে যায়। প্রেয়সী আর আকাশদের বাড়ির ঠিকানা পাশাপাশিই। তাই আকাশের গাড়িতেই ওরা একসাথে যাচ্ছে। সামনের সিটে আকাশ আর প্রেয়সী। পেছনের সিটে ওদের মা।
আকাশের ডাটা কানেকশন চালু করতেই শুভর ম্যাসেজ,
- দেখো তোমার মোবাইল পাগলীর কান্ড।
সাথে একটা ভিডিও।
ভিডিওটা অন করে দেখে,
রাতে আকাশ যাওয়ার পর আমি লুকিয়ে আমার ফোন নিয়ে বেডের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে আকাশের ছবি দেখছিলাম। আর কাঁদছিলাম। ঐদিকে পুরো হসপিটালজুড়ে আমাকে খুঁজে শুভ পাগল হয়ে গিয়েছিল। একটা নার্স শুভকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- স্যার বেডের নিচে মনে হয় কিসের যেন আলো আবার কান্নার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। 
শুভ লুকিয়ে লুকিয়ে পর্দা তুলে দেখে আমি ফোনে আকাশের ছবি দেখছি চকোলেট খাচ্ছি আর কাঁদছি। শুভ সেটা ভিডিও করে আকাশকে পাঠিয়ে দেয়।
- কি মোবাইল পাগলী? লুকিয়ে আর কত কাঁদবেন? বাহিরে আসেন আমার বুক যে খালি পড়ে আছে।
আমি বেডের নিচ থেকে বের হয়ে শুভকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি।
- খুব মিস করছি আকাশকে।
- কেঁদো না পাগলী। বিয়ের পর আমরা হানিমুনে সিঙ্গাপুর যাবো। তখন আকাশের সাথে দেখা হবে।
- সত্যি তো?
- তিন সত্যি।
বলেই শুভ আমার কপালে একটা চুমু খায়।

আকাশ ভিডিওটা দেখে হেসে দেয়। চোখের কোনে অশ্রুকণা জড়ো হয়েছে। প্রেয়সীও এতক্ষণ ভিডিওটা দেখছিল। প্রেয়সী আকাশকে জিজ্ঞেস করলো,
- কে?
আকাশ মুচকি হেসে বলে,
- আমার সেই মোবাইল পাগলী!



                               ***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন