ছায়া মানব |
(০১)
"আব্বা ও আব্বা গো দেখো বড়পুর কি যেন হয়ছে৷ কই তোমরা দেখে যাও ৷ " জেরিনের চিৎকার শুনে পুকুর পাড় থেকে দৌড়ে আসে আজহার সাহেব৷ তার সাথে সাথে গোয়াল ঘর থেকে দৌড়ে আসে আলেয়া বেগম৷ বারান্দা পার হয়ে বড় মেয়ে জাবার রুমে ঢুকে স্বামী স্ত্রী দু'জনে স্তম্ভিত ৷ এলোমেলো চুল, রক্তবর্ণ চোখ, ঘাড় বাঁকা পাগলের মতো হাসছে৷ জেরিন দরজার পাশে দাড়িয়ে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে৷
আজহার সাহেব কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে জাবাকে স্পর্শ করতে নিলে জাবা আজহার সাহেবের হাত মুচরে ধরে পুরুষালী গম্ভির ভয়ংকর কন্ঠে বলে ওঠে," মরবি তোরা সবাই মরবি৷ তোদের সবাইকে এক এক করে মারবো হা হা হা৷ " কথা গুলো বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে পড়লো জাবা৷ আজহার সাহেব মুচকে যাওয়া হাতটা ছাড়া পেয়ে দ্রুত ছিটকে সরে যায়৷ আলেয়া বেগম তার স্বামীর দিকে ঘৃনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত তার অচেতন মেয়ের কাছে গিয়ে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানির ছিটে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে জাবার জ্ঞান ফিরে আসে৷ আস্তে আস্তে জাবা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ আলেয়া বেগম ক্ষিপ্ত গলায় তার স্বামীর উদ্দেশ্য বলে ওঠে," জাবার বাপ আমার মাইয়ার যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি নিজে পুলিশের কাছে গিয়া তোমার সব অপকর্মের কথা কইয়া দিমু৷"
" আলেয়া কি কইতাছো তুমি? আমার বিরুদ্ধে তুমি থানায় গিয়া নালিশ করবা?"
" হ করমু৷ যেখানে মোর মাইয়াগো জীবন নিয়া কথা সেখানে মুই চুপ থাকুম না ৷ এইডা বইলা দিলাম জাবার বাপ৷ তাই কইতাছি সময় থাকতে থাকতে সব ঠিক কইরা দেও৷ নয়তো তোমার পাপের শাস্তি মোর নিষ্পাপ মাইয়া দুইটা পাবো৷ এইডাই কি তুমি চাও জাবার বাপ?"
আলেয়া বেগমের কথা শুনে আরো ক্ষেপে গেল আজহার সাহেব৷ " আলেয়া শান্তিনগর গ্রামের মেম্বার আমি, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা তো তোমার নিশ্চয়ই আছে৷ তাই কইতাছি চুপ থাকো৷ আমারে আমার কাজ করতে দেও৷ আর হোন সন্ধায় তান্ত্রিক বাবা আইবো সব কিছু রেডি রাখবা৷ কোন জিনিসের যেন কমতি না থাকে৷ আর তুই (জেরিন) জাবার লগে লগে থাকবি৷ ওরে একা কোথাও ছাড়বি না মনে থাকবো?"
" হ,,হ আব্বা ৷" মাথা নিচু করে উওর দিলো জেরিন৷ আজহার সাহেব কথা না বাড়িয়ে গট গট করে হেটে বেড়িয়ে গেল৷ আজহার সাহেব বেড়িয়ে যেতে আলেয়া বেগম মেয়ের ড্রয়ার থেকে একটা ছবির ফ্রেম বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে৷ বারান্দায় বসে আজহার সাহেব তার স্ত্রীর করুন গলায় কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে৷ এই কান্নার আওয়াজটা আজহার সাহেব যতোবার শুনে ঠিক ততোবার যেন তার বুকে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ হাতে ধারালো দাঁ নিয়ে মাটিতে কোঁপ দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো," সব শেষ করে দিমু৷ কাউরে ছাড়মু না কাউরে না৷ "
(০২)
" বহ্নি মামুনি উঠে পড়ে আসরের আযান দিয়েছে৷ নামাজ পড়তে হবে তো?"
" উমম আম্মু আর একটু ঘুমাই না৷"
" না সোনামা নামাজ কায়জা হয়ে যাবে৷ আর জানো তো যেনে শুনে বা ইচ্ছে করে নামাজ কায়জা করলে আল্লাহ তালা তাকে কঠিন শাস্তি দিবে৷ "
বহ্নির কানে শাস্তির কথা পৌছানো মাত্র চোখের ঘুম এক নিমিশেই পালিয়ে যায়৷ দ্রুত উঠে বসে আর তা দেখে বহ্নির মা নওরিন বেগম মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে," এই তো আমার লক্ষী মেয়ে উঠে পড়েছে৷ যাও গিয়ে ওজু করে নামাজ পড়ো আমি তোমার আর তোমার আব্বুর জন্য নুডুলস বানিয়ে আনছি৷ "
নওরিন বেগম রুম থেকে যাওয়ার পর পর বহ্নি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ বেসিংয়ের সামনে চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতে বহ্নি নিজের প্রতিছবির পরিবর্তে এক ভয়ংকর নারীর প্রতিছবি দেখতে পায় বহ্নি৷ বন্হি চিৎকার করতে চাইলেও বহ্নির গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় না৷ বন্হি চিৎকার করার চেষ্টা করতে করতে সেই ভয়ংকর নারী আয়নার ভেতর থেকে বলতে লাগলো," মরতে হবে৷ তোদের সবাইকে মরতে হবে৷"
হঠাৎ ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে বহ্নি৷ নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে বুঝতে পারে এতোক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো যেটা বিগত দু'মাস ধরে দেখে আসছে৷ দো'তালা বাড়িটা জুড়ে শুধু বহ্নি একাই থাকে৷ দু'মাস পূর্বে বহ্নির বাবা আজমীর সাহেব আর মা নওরিন বেগম গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়৷ বহ্নির আর কোন ভাই-বোন না থাকায় তার বাবার নিজের হাতে গড়া ছোট্ট ব্যবসা এখন বহ্নি চালায় অবশ্যই ম্যানেজার আঙ্কেল শফিক সাহেব বহ্নিকে প্রচুর সাহায্য করেছে সব কিছু বুঝে শুনে নিতে৷
বহ্নি কপালের ঘাম মুছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে৷ মাগরিবের আযান হয়তো আর কিছুক্ষণ পর দিয়ে দিবে৷ বহ্নি সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে৷ বহ্নি একে বারে ওজু করে বের হয়৷ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তার ফোনটা বাজছে৷ বহ্নি তোয়ালেটা ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে ফোন কলটা রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে কেউ রাগি গলায় বলে উঠলো," এই শাকচুন্নি, পেত্নির নানী, মশার বউ, হাতির ছেলের বউ এখনো তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস হাহ! আমি সেই কখন থেকে নিউ মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে আছি৷"
" সাথীর বাচ্চা দম নে আর আমাকে বলার সুযোগ দে শালী৷ এতো বক বক ক্যামনে করিস তুই? শোন আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছি তুই নিউ মার্কেটের সামনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বস কফি খা আমি ততোক্ষণের ভেতর এসে পড়বো৷"
" বিশ মিনিট সময় দিলাম বহ্নি কি বাচ্চি ৷ এর ভিতর যদি তুই না আসিস তো আমি রাফিদ ভাইকে বলবো তুই বিয়ের জন্য রাজি৷ "
" সাথীর বাচ্চা সাথী আমাকে একবার আসতে দে তারপর আমি বলছি কে রাজি আর কে কার সাথে বিয়ে হবে৷"
একটু বেশি বলে ফেলেছে বুঝতে পেরে সাথী ফট করে কল কেটে দিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে যায়৷
বহ্নি তার বোরকা আর হিজাবটা দ্রুত পড়ে নিয়ে পার্স আর ফোনটা নিয়ে দরজা লক করে বেড়িয়ে পড়ে৷
________________
লাল ধুতি পড়া আর গায়ে লাল রঙের কাপড় জড়ানো কাধে একটা বড় পুটলি নিয়ে প্রবেশ করলো মেম্বার বাড়িতে৷ মেম্বার বাড়িতে পা রাখতে বাড়ির ভেতরে থাকা কুকুর চার চিৎকার করতে লাগলো৷ তান্ত্রিক কুকুর গুলোর দিকে তার লাল বর্ণের চোখ জোড়া দিয়ে তাকাতে কুকুর গুলো চুপ হয়ে গেল৷ রুমের জানালা দিয়ে জাবা আর জেরিন সবটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেল৷ তান্ত্রিক যখনি এই বাড়িতে প্রবেশ করে তার পরের দিন গ্রামে দুধের বাচ্চা হাড়িয়ে যায়৷ গততিন মাসে যতোবার তান্ত্রিক তাদের বাসায় এসেছিলো ঠিক ততোবার বাচ্চা হাড়িয়েছে বা চুরি হয়ে গেছে৷ কিন্তু জাবা আর জেরিন খুব ভালো করেই জানে বাচ্চা গুলো কে চুরি করে আর বাচ্চা গুলোকে দিয়ে কি করা হয়৷
তান্ত্রিকের নজর এড়ালো না জাবা জেরিনকে ঠিক দেখতে পেল তান্ত্রিক৷ তান্ত্রিকের চোখে চোখ পড়তে জাবা জেরিন দ্রুত জানালা থেকে সরে গেল ৷ তা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো তান্ত্রিক ৷
___________
দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে বহ্নি৷ সাথী কাচুমাচু করে চুপ করে বহ্নির সামনে বসে আছে আর সাথীর পাশের চেয়ার বসে আছে রাফিদ৷ রাফিদ স্কুল লাইফ থেকে বহ্নিকে ভালোবেসে আসছে৷ অবশ্য বহ্নি রাফিদকে কখনো পাত্তা দিতো না কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রাফিদের জ্বালানো না যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল৷ বহ্নি তার মা বাবাকে বিষয়টা জানাতে তারা রাফিদের বাবা মাকে বিষয় টা জানায়৷ রাফিদ বহ্নি দু'বছরের সিনিয়র সাথে তার বাবার ব্যবসায় দেখা শুনা করে৷ বহ্নি যে রাফিদ ভালোবাসে এটা তারা আগে থেকেই জানতো আর তাই তারা রাফিদ আর বহ্নি বিয়ের প্রপোজাল দেয়৷ বহ্নির বাবা আজমীর সাহেব রাফিদের কোন খারাপ রেকর্ড পেলনা ছেলে ভালো মেয়েকে ভালোবাসে আর কি চাই? আজমীর সাহেব রাফিদের বাবা রাহাত শেখ এর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়৷ কিন্তু দু'মাস পূর্বে বহ্নির বাবা মা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর পর বহ্নি রাফিদের সাথে বিয়েটা ক্যান্সেল করতে চাইলে রাফিদ প্রচন্ড রেগে বহ্নিকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে চায় তখনি হঠাৎ লোডসেডিং হয় ৷ তখনি হঠাৎ রাফিদের বিকট চিৎকার শুনতে পায় বহ্নি৷ ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ধীরে সিড়ির দিকে এগোতে দেখে রাফিদ রক্তাক্ত অবস্থায় সিড়ির নিচে পড়ে আছে৷ আর পাশে দেওয়ালে রাফিদের রক্ত দিয়ে লেখা " আমি ফিরে এসেছি প্রিয়তমা৷ তৈরি থেকো খুব শীগ্রই আমরা এক হবো৷"
ভয়ংকর সব কান্ড দেখে সেখানে বহ্নি সেন্সলেস হয়ে যায়৷ ভাগ্য ভালো ছিলো বিধায় সেদিন সাথী বহ্নির সাথে দেখা করতে আসে ৷ আর এসে রাফিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে এম্বুলেন্সে ফোন করে৷ আর বহ্নির চোখে মুখে পানির ছিটে দিতে বহ্নির জ্ঞান ফিরে আসে৷ সাথীকে সবটা জানাতে চেয়েও জানাতে পারে না বহ্নি৷ তার পর থেকে রাফির দের মাস হসপিটালে ভর্তি ছিলো৷ দুবার বহ্নি রাফিদ কে দেখতে গেলেও এর আর যায় না৷ অবশ্য রাফিদ নিজে থেকে আর বহ্নির সাথে যোগাযোগ করে না৷ কিন্তু আজ দুমাস পর হঠাৎ রাফিদকে সামনে দেখতে পেয়ে বহ্নি অপ্রস্তত হয়ে পড়ে৷ তবুও মুখে মেকি হাসি নিয়ে রাফিদের দিকে তাকায়৷
" কেমন আছো বহ্নি?"
" আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ আপনি কেমন আছেন রাফিদ?"
" যেমনটা দেখছো৷ "
কিছুক্ষণ পিনপান নিরবতা থাকার পর সাথী বলে উঠলো," দোস্ত ভাইয়াকে একটা
চান্স দিতে পারিস তুই কিন্তু তুই সেটা না করে ইগো দেখাচ্ছিস৷ এটা কি তুই ঠিক করছিস?"
বহ্নি আগুন দৃষ্টি সাথীর উপর নিক্ষেপ করে বলে উঠলো," তোর যদি এতোই রাফিদের উপর দরদ উতলে পড়ে৷ তাহলে আমি বলবো তুই রাফিদকে বিয়ে করে নে৷ "
বহ্নির কথা শুনে রাফিদ এবার মুখ খুললো," তাহলে এটাই তোমার শেষ ডিসিশন বহ্নি?"
বহ্নি রাফিদের চোখে চোখ রেখে দৃঢ় গলায় বলে উঠলো," হ্যাঁ, এটাই আমার শেষ ডিসিশন৷"
রাফিদ আর কোন কথা না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেল৷
" সাথী তুই ঠিক কি চাস আমাকে প্লিজ খুলে বল? কারণ তুই যা যা করছি এমনটা চলতে থাকলে আমার হয়তো তোর সাথে আর ফ্রেন্ডশিফ রাখা হবে না৷"
বহ্নির কথা শুনে সাথী হতবিহ্বল হয়ে বন্হির দিকে তাকিয়ে রইল ৷ এই সামান্য বিষয় নিয়ে বহ্নি তাদের এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে ফেলতে চাইবে এটা কখনো ভাবতে পারেনি সাথী৷
বহ্নি সাথীকে আর কিছু না বলে কফির বিল পে করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যায়৷
(০৩)
একটা মেয়ে পুতুলের গায়ে আরবি ভাষায় শূকরের রক্ত দিয়ে কিছু একটা লিখছে তান্ত্রিক৷ আর পাশে হাত জোড় করে বসে আছে আজহার সাহেব৷ আলেয়া বেগম না চাইতেও তান্ত্রিক আর তার স্বামীর পাশে একটা আসনে বসে আছে৷ চোখে মুখে এক রাশ ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে আছে নিজের স্বামীর দিকে;
তান্ত্রিক তার লেখা শেষ করে আজহারকে বলে," এবার আমরা আমাদের দ্বিতীয় ধাপে এসেছি৷ তোরা তৈরি তো? "
" জ্বি বাবা আমরা তৈরি৷"
" কিন্তু মনে রাখিস আজ আমি যাকে হাজির করবো সে তোর ছেলেকে যদি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয় তাহলে তাকে তোর ছেলের প্রানের বিপরিতে আর একটি প্রাণ দিতে হবে৷ কিন্তু সে প্রাণ হতে হবে তোর রক্তের৷"
তান্ত্রিকের কথা শুনে আজহার সাহেবের চোখে মুখে চিন্তার ছাপের পরিবর্তে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বলল," আপনি শুরু করেন বাবা৷ আপনি যেটা বলতাছেন আমি সেটাই করমু৷ প্রাণের পরিবর্তে প্রান দিমু৷"
" এইডা কি কইতাছো জাবার বাপ? তুমি কার প্রানডি দেবার কথা কইতাছো?"
" জাবার মা তুমি চুপ থাকো কইতাছি৷ নয়লে তোমারেও শেষ কইরা দিমু৷"
"আহ! আজহার চুপ থাকো আর আমাকে আমার কাজ করতে দেও৷ আর একটা কথা শুনে রাখো যতো যাই হয়ে যাক না৷ তোমরা কেউ তোমাগো আসন ছাইড়া উঠবা না৷ যদি ওঠো তাহলে তোমাগো বিপদ হইবো৷"
"আচ্ছা বাবা আমরা কেউ উঠমু না আপনি শুরু করেন৷"
__________
নিচতালায় ড্রইংরুমে বসে সোফায় গা এলিয়ে দিতে ক্লান্তিতে দু'চোখের পাতা লেগে আসে বহ্নির৷ তখনি হঠাৎ রান্না ঘর থেকে খটখট আওয়াজ শুনতে পেয়ে ঘুমের রেস কেটে যায় বহ্নির৷ শব্দের উৎস খুজতে খুজতে বহ্নি রান্না ঘরে এসে পৌছে দেখে তার মৃত মা নওরিন রান্না করছে আর হাত মুখ দিয়ে মাংস গলে গলে কড়াইয়ে পড়ছে৷ নওরিন বহ্নির দিকে তাকিয়ে হাসি দিতে বহ্নি দেখে তার মায়ের চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পোকা-মাকড় বের হচ্ছে৷ দাঁত গুলো খুলে খুলে পড়ছে৷ বহ্নি আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে ওঠে দু'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে৷ কিছুক্ষণ পর কোন শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই৷ পুরো রান্না ঘরে বহ্নি একা দাড়িয়ে৷ বহ্নি রান্না ঘর থেকে ছুট্টে বের হয়ে চলে আসে৷ ড্রইংরুমে বসতে বহ্নির বমি আসতে দৌড়ে গিয়ে বেসিংয়ে গিয়ে বমি করতে লাগলো৷ বহ্নি বমি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতে চমকে যায়৷
—————
বহ্নি রান্না ঘর থেকে ছুট্টে বের হয়ে চলে আসে৷ ড্রইংরুমে বসতে বহ্নির বমি আসতে দৌড়ে গিয়ে বেসিংয়ে গিয়ে বমি করতে লাগলো৷ বহ্নি বমি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতে চমকে যায়৷ একটা কুৎচিত মুখ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে৷ বহ্নির পুরো শরীর আবারো গুলিয়ে এলো৷ এবার বহ্নি ভয়কে জয় করে আয়নার দিকে না তাকিয়ে বমি করতে লাগলো৷ হঠাৎ বহ্নির কানে কানে কেউ একটা ফিস ফিস করে বলতে লাগলো," আমি ফিরে এসেছি প্রিয়তমা৷ এবার আর তোমাকে আমার থেকে কেউ দুরে সরাতে পারবে না৷কেউ না হা হা হা৷"
হুট করে বহ্নি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে সোফায় বসে আছে৷ আশে পাশে কেউ নেই৷ তার মানে এতোক্ষণ বহ্নি স্বপ্ন দেখছিলো৷ মানে স্বপ্নের ভেতর আবারও স্বপ্ন দেখছিলো বহ্নি৷ বহ্নি হঠাৎ রান্নাঘর থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে শুকনো ঢোক গিয়ে ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো৷ বহ্নি মনে সাহস নিয়ে হুট করে রান্না ঘরে ঢুকে দেখে একটা পনেরো ষোল বছরের মেয়ে চা বানাচ্ছে৷ এতো বড় বাড়িতে বহ্নি একাই থাকে হঠাৎ মেয়েটাকে দেখে বহ্নি প্রচন্ড অবাক হয়৷ আরো অবাক হয় এটা দেখে মেয়েটি বহ্নিকে দেখেও বিনা সংকোচে চা বানাতে লাগলো৷ চায়ে এক চামচ চিনি দিয়ে গুলিয়ে বহ্নির হাতে তুলে দেয়৷ বহ্নি অবাক হয়ে যায় এটা ভেবে মেয়েটি জানলো কি করে যে সে চায়ে এক চামচ চিনি খায়? বহ্নি এবার রাগি গলায় মেয়েটিকে প্রশ্ন করে৷
" এই মেয়ে কে তুমি? আর এই বাড়িতে বা ঢুকলে কি করে? আমি তো দরজা জানালা বন্ধ করে বাইরে গিয়েছিলাম৷ তাহলে তুমি আমার বাড়িতে ঢুকলে কি করে?"
মেয়েটি ফ্যাল ফ্যাল করে বহ্নির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল৷ মেয়েটার হাবভাব দেখে বহ্নির মেজাজ এবার তুঙ্গে৷ চায়ের কাঁপ ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে ড্রইংরুমে আসে মেয়েটিকে আচ্ছা করে বকে দেওয়ার জন্য কিন্তু ড্রইংরুমে এসে মেয়েটিকে দেখতে না পেয়ে বহ্নি এবার চরম ভাবে অবাকের শিরমনে পৌছে যায়৷ নিচ তালা উপর তালা সব জায়গায় খুজেও মেয়েটিকে খুজে না পেয়ে বহ্নির মনে এবার ভয়টা কাজ করছে৷ এতোদিন সবটা স্বপ্নে ছিলো৷ কিন্তু আজ সেটা আর স্বপ্নে নেই বরং বাস্তবে তার সাথে ঘটছে৷
বহ্নি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তখনি হঠাৎ বহ্নির পুরো রুম কাঁপতে লাগলো৷ বহ্নি কিছু বুঝে ওঠার আগে উপরে ফ্যানটা খুলে পড়ে বহ্নির মাথায়৷
(০৪)
" কাজ শেষ আজহার৷ তোর ছেলের আত্মা পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে৷ তবে মনে রাখিস তুই কথা দিয়েছিস প্রাণের বদলে প্রাণ দিবি৷ আগামি মাসে পূর্ণ চন্দ্র গ্রহনে সেই প্রাণকে বলি দিতে হবে৷ তাহলে তোর সন্তান তোর ছেলে চির দিনের জন্য পৃথিবীতে থেকে যেতে পারবে তবে মানুষ হিসেবে নয় একজন আত্মা হয়ে৷ "
" কিন্তু বাবা আমি ক্যামনে বুঝমু আমার পোলা আমার সামনে আইছে?"
" তোর পোলা আরমান মানুষের শরীরে ভর করে তোদের সাথে কথা বলবে৷ তবে মনে রাখিস এই ধরনের কার্য কলাপ করে কোন আত্মা তার জগত থেকে পৃথিবীতে টেনে আনলে তার ভয়ানক মূল্য চোকাতে হয়৷ সেটা শুধু যে প্রাণ দিতে হবে তা নয় তাদের অন্য কিছু ইচ্ছে হতে পারে৷ "
" যে মূল্য চোকাতে হোক না কেন আমি রাজি বাবা৷ শুধু আমার পোলারে আমার কাছে আইন্না দেন আর ওদের শেষ করে দেন৷"
" আমি যোগ্য মন্ত্রের শুরুতেই কাজটা করে দিসি৷ একটা খারাপ জীন লাগিয়ে দিয়েছি মেয়েটার পেছনে৷ মেয়েটার জীবন অতিষ্ট করে তুলবে জীন টা ৷"
" দেইখেন বাবা মাইয়াডারে যেন একদমি মাইরা না হালায়৷ কারণ ওই মাইয়া'ই আমারে আমার লক্ষ্য পর্যন্ত পূরণ করতে সাহায্য করবে৷"
নিজের স্বামীর কুরুচি ঘৃন্য পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আলেয়া বেগম দাঁত কটমট করে বলতে লাগলো," আপনাগো কি মরা ডর নাই? আল্লাহ কিন্তু আপনাগো কোন দিন ক্ষমা করবো না৷ কুফরী কালাম আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ সেটা কি আপনারা জানেন না? আল্লাহর দোহাই লাগে আপনারা আগুন নিয়া খেইলেন না৷ আমার পোলার আত্মারে ফিরায় দেন৷ আপনারা ওরে মুক্ত করেন৷ "
আলেয়া বেগমের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে আজহার সাহেব তার স্ত্রীর গলা টিপে ধরে বলে," হারামজাদি তোর এতো বড় সাহস আমারে তুই জ্ঞান দিস? এই আজহার শান্তিনগরের মেম্বাররে জ্ঞান দিস?"
বেশ শক্ত করে আলেয়া বেগমের গলা টিপে ধরায় তান্ত্রিক বলে ওঠে," আজহার শান্ত হও আর মা তুমি এখন অন্য রুমে যাও আজহারের সাথে আমার কথা আছে৷ আলেয়া বেগম রাগে ফুসতে ফুসতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল আলেয়া বেগম৷
রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার দুই মেয়ে জাবা আর জেরিন দুজনে দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে৷ মেয়ে দু'টোকে দেখে আলেয়া বেগম যেন আরো রাগে ফেটে পড়লো৷ দুই মেয়ে দুটো থাপ্পর মেরে বসলো আলেয়া বেগম৷ জাবা গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে কাঁদছে কাঁদতে বলে উঠলো," আমারে হুদাই মারলা আম্মা৷ আমি আব্বারে কইয়া দিমু তুমি আমারে মারছো হু৷" বড় মেয়ের এমন বাচ্চামো কথা শুনে আলেয়া বেগম জেরিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিশে বলল," জেরিন তোর বইনরে বোঝা বয়স তো কম হয় নাই৷ এখনো যদি এমন পোলা পাইনের মত করে তাহলে ওরে আর বিয়া দেওন যাইবো না৷ ঘরে খুটি হইয়া থাকন লাগবো৷"
জেরিন কিছু বলবে তার আগে জাবা কাঁদতে থাকার মাঝে হাসতে হাসতে অন্য কন্ঠে বলে ওঠে," তোদের পাপের শাস্তি তোদের সন্তান পাবে৷ আর যতোদিন তোদের শাস্তি দিতে না পারছি ঠিক ততোদিন তোদের জীবন আমি জাহান্নামের থেকে ও আরো জঘন্য করে তুলবো৷ " কথাটা বলে জাবা এই নিকষ কালো অন্ধকার রাতে দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে বড় পুকুরে গিয়ে ঝাপ দেয়৷ আলেয়া বেগমের কিছু বুঝে ওঠার পূর্বে জাবা এমন একটা কাজ করে বসে যেটা জেরিন বা আলেয়া কেউ ভাবতে পারেনি৷
_____________
পিট পিট করে চোখের পাতা মেলে নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে বহ্নি৷ কয়েকটা ভিন্ন গলার আওয়াজ কানে পৌছাতে বহ্নি নিজের আশে পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়৷ কারণ যে মানুষ গুলো বহ্নি তার আশে পাশে দেখছে তারা বহ্নির অতি প্রিয় মানুষ, বহ্নির বেস্টফ্রেন্ড৷
বহ্নির জ্ঞান ফিরে আসতে দেখে সাথী, সুমাইয়া, নিশি,রুপকথা, ইফফাত, লাবিবা,তারিন,মিমি, ফারু বহ্নিকে ঘিরে ধরে বলে," দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো?কি হয়েছিলো তোর? আমরা তোর বাসায় এসে দেখি দরজা খোলা আর তুই ড্রইংরুম মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস৷" রুপকথার কথা শুনে বহ্নি হতভম্ব হয়ে শূন্যে তাকিয়ে রইল৷ বহ্নি বুঝতে পারছে না তার নিজের সাথে ঠিক কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? কে তাকে মারতে চায়? বহ্নি ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে চোখ পড়তে দেখে একজন কালো আলখেল্লা পড়া মহিলা দাড়িয়ে আছে৷ বহ্নি চোখের পলক ফেলে বন্ধুদের কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে দরজার পাশে কেউ দাড়িয়ে নেই৷
বহ্নিকে চুপ থাকতে দেখে ফারু এসে বহ্নির পাশে বসে বলে," দোস্ত আমি জানি না তোর ঠিক কি হয়েছে তবে আমার মনে হচ্ছে তুই কোন বিপদে পড়েছিস৷ তুই হয়তো আমাদের এখন বিশ্বাস করতে পারছিস না৷ তাই হয়তো বুঝতে পারছিস না আমাদের বলা তোর ঠিক হবে কি হবে না? তবে তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে আমাদের বলতে পারিস৷"
ফারু সুমাইয়া আর তারিনের দিকে তাকিয়ে বলে," সুমু(সুমাইয়া) তারু(তারিন) তোরা দু'জন আমার সাথে আয় বহ্নি আর আমাদের রাতের খাবার বানাতে হবে৷ আর নিশি সাথী মিমি ইফু(ইফফাত) লাবু(লাবিবা) তোরা বহ্নির সাথে থাকিস৷ আমরা নিচে রান্না ঘরে যাচ্ছি৷ ততোক্ষণ বহ্নির খেয়াল রাখিস৷"
" ফারু তুই টেনশন করছিস কেন? আমরা আছি তো৷ তুই নিশ্চিন্তে রান্না ঘরে যেতে পারিস৷"
(০৫)
রুপ তারু ফারু তিন জনে মিলে রাতের রান্না করে ফেললো৷ ফ্রিজে মাছ মাংস কাঁচা শাক-সবজি ডিম সব কিছুই ছিল৷ ফারু তারু রুপ রুটি পরোটা সবজি বানিয়ে ফেলে৷ তারু রুপ রান্না ঘর পরিষ্কার করছিলো বিধায় ফারু একা একাই ডাইনিং টেবিলে খাবার গুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে সোফায় চোখ পড়তে দেখে বহ্নি আগুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারু অবাক হয় বহ্নিকে সোফায় বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে বহ্নিকে এখানে কেন এসেছে তার জন্য বকা দেওয়ার জন্য কিছু বলতে নিলে বহ্নি প্রচন্ড গম্ভির গলায় বলে উঠলো," তোরা চলে যা৷ এখুনি চলে যা নাহলে তোরাও মরবি৷" ফারু হাতে থাকা রুটির সবজির বোলটা টেবিলের উপর রেখে বহ্নিকে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে সোফায় বসা বহ্নি নেই৷ ফারু হতবিহ্বল হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বহ্নিকে দেখতে না পেয়ে দৌড়ে বহ্নির রুমে গিয়ে দেখে বহ্নি বিছানায় শুয়ে আছে আর বাকিরা বহ্নিকে ঘিরে বসে কথা বলছে৷ ফারু রুমে ঢুকে লাবিবাকে প্রশ্ন করে," লাবু বহ্নি কি রুম থেকে বের হয়ে ছিলো?"
ফারুর কথা শুনে লাবু কপট রাগ দেখিয়ে ফারুকে বললো," তোর কি মাথায় গ্যাষ্টিক হইলো ফারু? কি আবল তাবল বলছিস? বহ্নি সে কখন থেকে বিছানায় শুয়ে আছে৷ একবারের জন্য বিছানা থেকে উঠেনি৷ আর তুই বলছিস বহ্নি রুম থেকে বের হবে?"
ফারু কিছু একটা ভেবে বলে," আরেহ না লাবু সোনা আমি কি সেটা বলেছি? যাই হোক সবাই সবার বাড়িতে জানিয়ে দে আমরা কিছুদিন বহ্নির সাথে এই বাড়িতে থাকবো৷ আমার মনে হয়না আঙ্কেল আন্টি কিছু বলবে৷ তবুও জানিয়ে দে৷ আর যার বাবা মা রাজি হবে না আমাকে বলবি আমি কথা বলবো৷"
" হু জানি তো আপনি তো লোকদের কনভেন্স করানোর ওস্তাদ৷ আপনার গুন গুলো যদি বাজারে সো করানো যেতো তাহলে দেখতে মাসে মাসে তোর লাখ লাখ টাকা ইনকাম হচ্ছে৷" দাঁত কেলিয়ে বললো নিশি৷ আর তার সাথে সাথে বাকিরা সায় জানিয়ে হাসতে লাগলো৷ ফারু এক ঝলক বহ্নির দিকে তাকিয়ে বললো রাতের খাবার রেডি তোরা নিচে কিছুক্ষণ পর তোরা নিচে চলে আসিস৷ ততোক্ষণে আমি বহ্নির খাবার টা নিয়ে আসি৷"
" হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে৷ ওকে একা ছাড়াটা ঠিক হবে না৷ তুই বরং বহ্নির খাবারটা নিয়ে আয়৷" মিমি কথা গুলো বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ফ্রেস হতে৷ ফারু নিচে চলে যায়৷ এদিকে বহ্নি তার মাথার উপরে ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তখনকার ঘটা তার সাথে ঘটনাটা ভাবতে লাগলো৷
" আমি, আমি তো তখন রুমে ছিলাম৷ আর এই ফ্যানটাই তো আমার মাথার উপর পড়ে গিয়েছিলো! তাহলে আমি ড্রইংরুমে কি করে গেলাম? আর আমার মাথায় কোন আঘাতের চিহ্ন নেই কেন? আমার সাথে এই সব কি হচ্ছে ? কেন হচ্ছে? হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো৷ আমাকে এই রহস্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করো৷ "
মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলো বহ্নি তখনি হুট করে বহ্নির ব্যালকনি থেকে একটা কালো কুচকুচে বিড়াল দৌড়ে এসে বহ্নির কোলে এসে বসে৷ সাথে সাথে বহ্নি চিৎকার করে ওঠে৷ লাবিবা, নিশি, সাথী, মিমি, ইফফাত সুমাইয়া বহ্নির চিৎকার শুনে দেখে বহ্নি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করছে৷ মিমি দ্রুত গিয়ে বহ্নিকে জড়িয়ে ধরে বলে," দোস্ত কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছিস কেন?"
বহ্নি চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো," বিড়াল, আমার কোলের উপর থেকে ওই কুৎচিত বিড়ালটাকে সরা মিমি ইফু আমার ভয় করছে বিড়ালটাকে দেখে; সরা বলছি৷ "
সাথী নিশি সুমাইয়া ইফফাত লাবিবা একে অন্যের মুখের দিকে চেয়ে থেকে বহ্নিকে বলে," দোস্ত একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ৷ তোর কোলের উপর কিচ্ছু নেই৷ যাস্ট একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ বহ্নি৷"
বহ্নি সুমাইয়ার কথা শুনে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সত্যি ওর কোলের উপর কোন বিড়াল নেই৷ মিমি বহ্নিকে ছেড়ে গাল দু'টো ধরে বলে, " সত্যি করে বলতো তো বহ্নি তোর ঠিক কি হয়েছে? তোকে স্বাভাবিক লাগছে না৷ কিছু যদি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বল কি হয়েছে? "
বহ্নি অসহায় দৃষ্টিতে মিমিকে বলে উঠলো," বিশ্বাস কর মিমি আমার সাথে ঠিক কি হচ্ছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না৷ তোদের কি করে বলবো বল?"
বহ্নির কথা শুনে সাথী বলে উঠলো," আই থিং বহ্নির হেলুসিনেশন হচ্ছে৷ "
সাথীর কথা শেষ হতে ফারু তারু রুপ সবার জন্য খাবার নিয়ে আসতে আসতে বলে," কোন হেলুসিনেশন আর হেলুসিনেশন নাকি সত্যি ওটা পড়ে ভাবা যাবে৷ এখন তোরা ঝটপট খেয়ে নে৷ খাওয়া শেষ হলে তোরা প্লেট গুলো ধুয়ে রাখবি বুঝেছিস?"
" জ্বি মহারানী ভিকটোরিয়া বুঝতে পেরেছি৷ দিন প্লেট গুলো দিন আমি সার্ব করে দিচ্ছি৷"
রুপ বহ্নিকে খাইয়ে দিলো৷ আর বাকিরা নিজেরা খেতে লাগলো৷ খাওয়া শেষ হতে লাবিবা সুমাইয়া আর সাথী এটো প্লেট গুলো নিয়ে রান্না ঘরের বেসিংয়ে চলে যায়৷ হঠাৎ রুপ বহ্নি নিশি ইফফাত তারিন ফারু মিমি লাবিবার চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে চলে যায়৷ নিচে গিয়ে দেখে....
—————
রুপ বহ্নিকে খাইয়ে দিলো৷ আর বাকিরা নিজেরা খেতে লাগলো৷ খাওয়া শেষ হতে লাবিবা সুমাইয়া আর সাথী এটো প্লেট গুলো নিয়ে রান্না ঘরের বেসিংয়ে চলে যায়৷ হঠাৎ রুপ বহ্নি নিশি ইফফাত তারিন ফারু মিমি লাবিবার চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে চলে যায়৷ নিচে গিয়ে দেখে লাবিবা সুমাইয়া সাথী ভয়ে থর থর করে কাপঁছে৷ ফারু রুপ আর বাকিরা সাথী লাবিবা সুমাইয়া আর সাথীর কাছে গিয়ে বলে," লাবু সুমু সাথী কি হয়েছে? তোরা এভাবে চিৎকার করলি কেন?"
রুপের প্রশ্নের উওরে লাবিবা হাতের ইশারায় সামনে দেখতে ইশারা করে৷ সেদিকে সবাই তাকাতে খানিকটা ঘাবড়ে যায়৷ কারণ রান্নাঘরের বেসিংয়ের আয়নায় রক্ত দিয়ে লেখা "তোরা সবাই মরবি৷"
ইফফাত প্রচন্ড রেগে যায় এইসব দেখে কারণ ইফফাত মনে করে এটা ফারু রুপ নাহলে তারু করেছে ওদেরকে ভয় দেখানোর জন্য,
" ফারু তারু রুপ তোরাই এটা করেছিস তাই না?"
তারু বেশ রেগে যায় ইফফাতের কথা শুনে ৷ এমন পরিস্থিতিতে কেউ এইসব নিয়ে মজা করতে পারে এটা বা ইফফাত ভাবলো কি করে? তারু কিছু বলার পর্বে ফারু রাগি গলায় ইফফাতকে বলতে লাগলো," ইফু তোর মতো গাধী আমি সত্যি দুটো দেখেনি৷ তুই কি করে ভাবলি আমি বা আমরা এমন সিলি কাজ করবো?"
ইফফাত আর কিছু বললো না ফারু বেসিংয়ের আয়নার দিকে তাকিয়ে বহ্নির কথা মনে পড়তে বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে," আমরা সবাই এখানে তারমানে বহ্নি একা রুমে? ওহ শিট৷"
ফারু দৌড়ে দোতালায় বহ্নির রুমে ঢুকে দেখে বহ্নি রুমের কোথাও নেই৷ ফারুর পেছন পেছন বাকি সবাই রুমে এসে বহ্নিকে দেখতে না পেয়ে ফারুকে বলে," ফারু বহ্নি কোথায়? ও তো রুমে ছিলো৷ "
রুপ সকলকে বলে উঠলো," সুমু লাবু ফারু ইফু মিমি তোরা ছাঁদ আর পুরো দোতালা খুজে দেখ৷ আর আমরা নিচ তালা খুজে দেখছি৷
রুপের কথা মতো সবাই বহ্নিকে খুজতে লাগলো৷ সুমু লাবু ইফু মিমি ফারু দোতালায় বহ্নিকে খুজে না পেয়ে ছাঁদে গিয়ে হঠাৎ দেখতে পায় বহ্নি ছাঁদের রেলিংয়ের উপর দিয়ে হাটছে৷ বহ্নির দৃষ্টি সামনে রেখে কোন দিকে না তাকিয়ে হাটছে৷ ফারু রুপ সুমু দৌড়ে গিয়ে বহ্নির হাত ধরে টান দিয়ে রেলিং থেকে নামিয়ে আনে৷ তখনি বহ্নির হুস ফিরে আসে৷ নিজেকে ছাঁদে দেখে অবাক হয়ে সুমুকে বলে," সুমু আমি ছাঁদে কেন? আমি তো আমার রুমে ছিলাম৷ আমি এখানে কি করে আসলাম?"
" সুমু ফারু রুপ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বলল," আমরাই তোকে রুম থেকে ছাঁদে নিয়ে এসেছিলাম৷ এখন রুমে চল রাত তো অনেক হলো৷"
" হু, কিন্তু আমার তো কিছু মনে পড়ছে না৷ আমি কখন এখানে আসলাম?"
সুমু কপট রাগ দেখিয়ে বহ্নিকে বলে," তোর গবেষণা শেষ হলে আমরা নিচে যেতে পারি? হিম পড়ছে আমার কিন্তু ভিষণ ঠান্ডা লাগছে৷"
বহ্নি আর কথা বাড়ালো না সুমুকে ধরে নিচে যেতে লাগলো৷
(০৬)
মেম্বার বাড়ির বড় উঠান জুড়ে লোকের সমাগম৷ আজহার সাহেবের বড় ছেলের পর মেজ মেয়েটা পানিতে পড়ে মারা গেল৷ কিন্তু কিছু কিছু মহিলা এবং মেয়েরা নিজেদের ভেতর বলতে লাগলো," খালা মাইয়াডা তো সাতার জানতো তাইলে পানিতে পইরা মরলো কেমনে?"
" কেমনে কমু বল আছিয়া? কিন্তু আমার মনে হয় এই কাম কোন জীন ভুতের নাহলে সাতার জানা মাইয়া এমনে মরতে পারে ক তোরা?"
" হ খালা তুমি ঠিক কইছো৷ আচ্ছা চলো জেরিনের কাছে জেরিন হয়তো সব কইতে পারবো৷"
" ঠিক কইছিস আছিয়া৷ চল জেরিনরে গিয়া ধরি৷ ও সব কইবো ভালো করে জিগাইলে৷"
আলেয়া বেগম তার বড় মেয়ের খাটিয়া ধরে চিৎকার করে কাঁদছে৷ একটু দুরে বারান্দায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে৷ এমন অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে এটা আজহার সাহেব কখনো বুঝতে পারে নি৷ কিছুক্ষণ পর সেই তান্ত্রিক আজহারের পেছনে এসে খুব আস্তে করে আজহারকে ডেকে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়৷
" বাবা আপনে? আপনে এহনো যান নাই?"
" না আজহার৷ শোন তোমাকে একটা কথা জানানোর জন্য আমার আবার ফিরে আসা৷"
" কি কথা বাবা?"
" তোর মাইয়ার লাশটা কবর দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই৷ তোর মাইয়ার মৃত শরীরে তোর ছেলের আত্মা প্রবেশ করামু৷ "
তান্ত্রিকের কথা শুনে আজহার অবাক হয়ে বলে," কি কন বাবা এইডা সত্যি করা সম্ভব?"
" হ সম্ভব৷ এক কাজ কর৷ তোর মাইয়ার লাশটা ওই ঘরে নিয়ে আয় আমি বাকি কাজ গুলা কইরা ফেলাই৷"
" আচ্ছা বাবা৷ আপনি যা কইবেন তাই হইবো৷"
আজহার গ্রামের সকলকে বলে জাবার লাশ আগামিকাল দাফন করা হবে৷ তাই সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে বলে৷ আজহারের কথা মত সবাই নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যায়৷ শুধু কয়েকজন গ্রামের মহিলা আলেয়া বেগমের কাছে থেকে যায়৷
রাত প্রায় দু'টোর কাছাকাছি৷ খালি রুমটায় কিছু কালোজাদু করা সামগ্রী ৷ যেমন রক্ত ,ছুড়ি, পুতুল, কিছু কাগজ যে গুলোয় আরবীতে কিছু লেখা আর সিদুর৷
ঘরের লাইট গুলো নিভিয়ে দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো পুরো রুমে৷
তান্ত্রিক জাবার মৃত শরীরটা সাদা কাপড়ে ঢেকে দিয়ে সিদুর হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগলো৷ কিছুক্ষণ পর পুরো রুম কাঁপতে লাগলো৷ রুমের ভেতর যেন ঝড় বইছে৷ আজহার সাহেব খানিকটা ভয় পেয়ে যায়৷ তিনি তান্ত্রিককে কিছু বলতে নিলে তখনি আজহার সাহেব অনুভব করে ওনার কাঁধে কেউ হাত রেখেছে৷ তিনি এবার ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাতে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে৷ এক ভয়ানক বিভৎস চেহারার কুৎসিত একটা মেয়েকে দেখে৷ তান্ত্রিক আজহারের দিকে খেয়াল না দিয়ে হাতে থাকা মুঠো ভর্তি সিদুরটা জাবার মৃত শরীরে ছিটিয়ে দিতে জাবার শরীর টা নরে ওঠে৷ তা দেখে আজহার সাহেব আরো ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যায়৷ আর সেই বিভৎস চেহারার মেয়েটি হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়৷ তান্ত্রিক তার পানির পাত্র থেকে পানি নিয়ে আজহারের শরীরে ছিটিয়ে দিতে আজহার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷
" কিরে আজহার এখন ঠিক আছিস তো?"
" জ্বী বাবা, আমি এখন ঠিক আছি৷ কিন্তু আমার ছেলে আরমান ও কোথায়?"
" তোর পেছনে তাকিয়ে দেখ আজহার৷"
আজহার পেছনে তাকিয়ে দেখে জাবা ছেলেদের পোশাকে দাড়িয়ে আছে৷ আর মুখে সেই মন ভুলানো হাসি৷ যেটা জাবার মনে হলেও আদোতে সেটা আরমানের হাসি ছিলো৷
আজহার উঠে দাড়িয়ে জাবা রুপি আরমানকে জড়িয়ে ধরতে গেলে আরমান বলে ওঠে," আমাকে স্পর্শ করবে না আব্বা৷ এক নরক থেকে টেনে এনে আর এক নরকে টেনে ফেললে তুমি, এর পরিনাম কতোটা ভয়াবহ হতে পারে এর ধরণা তুমি তোমার মেয়েকে হাড়িয়ে বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই?"
" মানে? কি কইতাছোস আরমান? জাবা তো পানিতে ডুবে মরছে৷"
" না জাবাকে তারা মেরেছে৷ শুধু মাত্র তোমার পাপের শাস্তি দেওয়ার জন্য আজ আমার ফুটফুটে বোনটাকে মরতে হলো৷ ওই যে দেখো আমার বোন জাবা ৷ আজহার পেছনে তাকিয়ে দেখে সেই বিভৎস রুপের মেয়েটি আর কেউ নয় তার বড় মেয়ে জাবা৷ জাবার আত্মা আজহারের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলে উঠলো," আব্বা আব্বা ওরা আমাকে মেরে ফেলেছে৷ দেখো দেখো আমাকে কতো কষ্ট দিয়ে মেরেছে৷ আমার ঘাড় মটকে দিয়েছে৷ আমার কলিজা ছিড়ে খেয়েছে৷ দেখো দেখো আব্বা চেয়ে দেখো৷ " জাবার আত্মা কথা গুলো বলতে বলতে আর বিভৎস রুপ ধারন করলো৷ ঘাড় ঘুড়ে পেছনে মুড়ে গেল৷ বুকের বা পাশটা ছিড়ে আদ খাওয়া কলিজা ঝুলে আছে৷ জাবার চোখের মনি জোড়া কালো কুচকুচে রঙ ধারণ করেছে৷ আজহার তার মেয়ের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে ভয়ে দু'পা পিছিয়ে যায়৷ তা দেখে জাবার মৃত শরীরে প্রবেশ করা আরমান পুরো রুম কাপিঁয়ে হাসতে লাগলো৷
জাবার আত্মা আজহারকে ভয় পেতে দেখে বলে উঠলো," আব্বা ও আব্বা আমারে দেখে তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? আমি না তোমার মাইয়া? আব্বা ও আব্বা ভাইয়া তো আমার শরীরটা নিলো আমি কার শরীর নিমু?"
জাবার কথা শুনে আজহার ভিষণ ঘাবড়ে গেল৷ কি বলবে তার মৃত মেয়ে আত্মাকে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না তখনি তান্ত্রিক বলে উঠলো," তোর জন্য নতুন শরীর অপেক্ষা করছে মেয়ে৷"
" কার শরীর বাবা? "
" তোর বোনের শরীর৷ ওটাই হবে আজ থেকে তোর নতুন শরীর৷ যা তুই তোর বোনের শরীরে প্রবেশ কর৷"
জাবার আত্মা আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না ঝড়ের গতিতে জেরিনের শরীরে প্রবেশ করলো৷
আলেয়া বেগম গ্রামের মহিলা মেয়েদের সাথে বসে ছিলো৷ আজহারের নির্দেশ মতো কেউ যেন কিছু বুঝতে না পারে জাবার শরীর নিয়ে তারা কি করছে বা করবে৷ সবাইকে এক রুমে কান্নার জালে আটকে রেখেছে৷ জেরিন রুমের এক কোনে বসে বসে ঝিমাচ্ছিলো হঠাৎ জাবার আত্মা জেরিনের শরীরে প্রবেশ করতে জেরিনের শরীরে ঝাকুনি দিয়ে ওঠে৷ চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারণ করে৷ জেরিনের পাশে থাকা আছিয়া অনেকক্ষণ ধরে বক বক করে যাচ্ছিলো জাবা কি করে মারা গেল সেটা জানার জন্য, কিন্তু হঠাৎ জেরিনের চোখ লাল হতে দেখে জেরিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে," ওই মাইয়া কথা কস না কেন? ক তোর বইন কেমনি মরলো? হেতি তো সাতার জানতো তাইলে মরলো কে...." বাকিটা বলার পূর্বে জেরিনের শরীরে প্রবেশ করা জাবা আত্মা হুট করে আছিয়ার গলা টিপে ধরে বলে," তোর খুব শখ না আছিয়া আমি মরলাম কেমনে হেইডা জানার? চল তোরে মাইরা তারপর দেহামু আমি ক্যামনে মরছি৷ চল আমার লগে চল৷ " জেরিন আছিয়ার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলে আছিয়ার চিৎকারে সবাই এসে জেরিনকে ধরে৷
(০৭)
বহ্নির রুমে সবাই বসে আছে৷ কারোর মুখে কোন কথা নেই৷ বহ্নি তার মা বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ঘটা অস্বাভাবিক ঘটনা গুলো পর পর সবটা বান্ধবীদের জানাতে সবাই চুপ হয়ে যায়৷ ইফু এবার বুঝতে পারে তখনকার রক্ত দিয়ে লেখাটা তাদের মধ্যেকার কোন বান্ধবী কেউ করে নি করেছে সেই না দেখা প্রেতাত্মা৷
" বহ্নি আমার মনে হয় তোর উপর কেউ কালোজাদু করেছে৷" রুপের কথা শুনে মিমি বলে উঠলো," রুপ তুই এটা কি করে বলতে পারিস? তুই তো সবটা জানিস না৷"
" বোকার মত কথা বলিস না মিমি ৷ বহ্নির অবস্থা দেখছিস৷ আজ মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে? সবটা শোনার পর কি করে বলতে পারিস এটা কালোজাদু না?"
রুপের কথা শুনে সুমাইয়া বলে উঠলো," রুপ আমার মনে তোর কথাটাই ঠিক৷ কারণ আজ আমরা এক সেকেন্ড দেরি করলে বাজে কিছু হয়ে যেত৷ আর বহ্নির অবস্থা খুব একটা ভালো না৷ ফারু আমার এক হুজুর মামা আছে৷ ওনার সাথে আমরা যদি যোগাযোগ করি তাহলে কেমন হয়?"
" আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো হবে৷ তুই আগামিকাল সকালে তোর মামাকে ফোন করে সবটা জানাবি৷ আমরা আজ রাতটা এই রুমে থাকবো৷ "
বহ্নি পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল," আমার আলমারিতে দেখ কাঁথা ব্লাংকেট পাবি৷ "
নিশি সাথী দু'জনে বলে উঠলো," বহ্নির বিছানায় রুপ আর ফারু শুয়ে পড় আর আমরা ফ্লোরে শুয়ে পড়ছি৷"
" ঠিক আছে তাই হবে৷"
ফারু মিমি লাবু বহ্নির আলমারি খুলে কাঁথা ব্লাংকেট বের করার সময় আলমারির এক কোনে লাল কাপড় মোড়ানো একটা পোটলা পায় লাবু৷ সেটা বের করে নিয়ে ফারুর হাতে দিতে ফারু দ্রুত পোটলা টা খুলতে লাগলো৷ কয়েকটা কাপড়ের গিট খুলে দেখে....
—————
ফারু মিমি লাবু বহ্নির আলমারি খুলে কাঁথা ব্লাংকেট বের করার সময় আলমারির এক কোনে লাল কাপড় মোড়ানো একটা পোটলা পায় লাবু৷ সেটা বের করে নিয়ে ফারুর হাতে দিতে ফারু দ্রুত পোটলা টা খুলতে লাগলো৷ কয়েকটা কাপড়ের গিট খুলে দেখে একটা মেয়ে পুতুল তার উপর আরবীতে কিছু লেখা৷ কয়েকটা চামড়ার কাপড়ে আরবী হরফে আর কিছু চিত্র আঁকা৷ সব শেষে সবাই বেশ অবাক হয় এটা দেখে সেই পোটলার ভেতর বহ্নির ছবি৷ বহ্নির ছবির উপর ক্রস চিহ্ন আকা সাথে আরবী হরফে ছোট ছোট অক্ষরে কিছু লেখা৷ ফারু রুপ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইল৷ যা বোঝার সেটা বুঝে গেল রুপ ফারু৷
সুমাইয়া বহ্নিকে বলে উঠলো," ডোন্ট ওয়ারি বহ্নি আমরা তোর পাশে আছি৷ তুই চিন্তা করিস না৷ আমি আমার মামাকে সকালে ফোন করবো৷ "
নিশি ভয়ে ভয়ে বিছানার উপর বসে বলে উঠলো, দোস্ত আমার খুব ভয় লাগছে৷ বহ্নির এমন শত্রু কে আছে যে বহ্নিকে কালোজাদু করলো?"
বহ্নি মাথা চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলতে লাগলো," আমি কার ক্ষতি করেছি নিশি? আমিতো কারো কোন ক্ষতি করেনি৷ আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? "
লাবিবা ফারু মিমি সুমাইয়া বহ্নিকে জড়িয়ে ধরে সুমাইয়া বলতে লাগলো," শান্ত হো বহ্নি আমরা থাকতে তোর কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ আমি ,ফারু ,রুপ, নিশি ,সাথী ,লাবু,মিমি, ইফু, তারু সবাই তোর সাথে আছি৷ ইনশাআল্লাহ দেখবি তোর বিপদ থেকে আল্লাহ ঠিক রক্ষা করবে৷ আমি আগামিকাল সকালে মামাকে কল করবো৷"
সুমাইয়ার কথা শেষ হওয়ার পর পরই হঠাৎ ঘরের লাইট গুলো আলো নিভে গেল৷ উদ্ভুত সব ভয়ংকর আওয়াজ হতে লাগলো৷ বহ্নি সহ বাকি দোয়া দুরুত পড়তে লাগলো৷ দোয়া দুরুত পড়তে পড়তে হঠাৎ রুমের লাইট গুলো জ্বলে নিভে যাচ্ছে৷ এর মাঝে রুমের ভেতর ঝড় বইতে লাগলো৷ রুমের সব ফার্নিচার এদিক ওদিক পড়তে লাগলো যেন কেউ রেগে সব কিছু ছুড়ে মারছে৷ ফারু রুপ তারু মিমি জোড়ে জোড়ে দোয়া দুরুত পড়তে লাগলো৷ রুমে যত জোড়ে ঝড় বইছে ঠিক ততো জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে দোয়া পড়তে লাগলো৷
কিছুক্ষণ পর সব হঠাৎ করে স্বাভাবিক হয়ে উঠলো৷ বহ্নির হঠাৎ তার ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ পড়তে দেখে রক্ত দিয়ে লেখা "তোরা সবাই মরবি"
নিশি ইফফাত এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেল৷ সবাই ডিসাইড করলো আজ রাতটা কেউ ঘুমাবে না ৷ সবাই জেগে কোরআন পড়বে৷
(০৮)
জেরিনকে খাটের সাথে বেধে রাখা হয়েছে৷ এদিকে জাবাকে জীবিত অবস্থায় দেখে গ্রামের বাকি মহিলা এবং পুরুষেরা ভুত ভেবে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়৷ জাবার শরীরে অবস্থানরত আরমানের আত্মা গ্রামের মানুষদের ভয় পেতে দেখে হাসতে লাগলো৷
" ভিতু মানুষ আমাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে গেল৷ আম্মা জেরিনের বাধণ খুলে দেও৷ "
আলেয়া বেগম খানিকটা ভিতু গলায় আরমানকে বলতে লাগলো," কিন্তু বাবা জেরিন তো কথা শুনছে না৷ আবার যদি পাগলামো করে?"
আলেয়া বেগম এখন পর্যন্ত টের পাননি যে তার বড় মেয়ের আত্মা তার ছোট মেয়ে জেরিনের শরীরে প্রবেশ করেছে৷ শুধু এতোটুকু জানে তার একমাত্র মৃত ছেলের আত্মা তার বড় মেয়ের শরীরে প্রবেশ করেছে৷
" ভয় নেই আম্মা জেরিন আর পাগলামো করবে না৷ তুমি জেরিনের হাত পায়ের বাধণ খুলে দেও৷"
আলেয়া বেগম ভয়ে ভয়ে জেরিনের হাত পায়ের বাধণ খুলে দেয়৷ জেরিন খুব শান্ত স্থির দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে," আম্মা আমার খিদা লাগছে৷ আমারে ভাত দেও৷ "
আলেয়া বেগম তার মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন," একটু অপেক্ষা কর আমি এখুনি তোর জন্য ভাত লইয়া আইতাছি৷" এই বলে আলেয়া বেগম রুম থেকে বের হতে আরমান রুমের দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দেয়৷ রুমের ভেতর শুধু মাত্র তান্ত্রিক, আজহার সাহেব, আরমান আর জেরিন৷
" আজহার আমাদের হাতে সময় বেশ কম৷ আমাদের যা করা লাগবো তা দু এক দিনের মধ্যে করতে হইবো৷ কারণ ওই মাইয়ার আশে পাশে কিছু শুভ শক্তি আছে৷ যেটা আমার কাজে বড় বাধা হইয়া দাড়াইতাছে৷"
" এহন আমরা কি করমু? ওই মাইয়ারে আমি ছাড়ুম না বাবা৷ ওর জন্য আমার এক মাত্র পোলা মইরা গেছে৷ এখন আমার আর এক মাইয়া মরলো৷ ওরে তো আমি এতো সহজে ছাড়মু না৷"
" তার আগে আমাদের ওই দুই আত্মাকে বন্দি করতে হবে আজহার নাহলে ওরা তোর ক্ষতি করার সাথে সাথে আমারও ক্ষতি করবে৷ "
আরমান তান্ত্রিক আর তার বাবার কথা শুনে গম্ভির গলায় বলে উঠলো," আব্বা ও আমার শিকার ওরে তোমরা কেউ কোন ক্ষতি করবা না৷"
"কিন্তু আব্বা ওই মাইয়া তো বেশি দিন বাঁচবো না৷ ওর উপর বাবা কঠিন জাদু করেছে৷ জাহান্নামের সব চেয়ে জঘন্য এবং ভয়ংকর আঞ্জার বংশের জীন৷ এই জীন ওই মাইয়ারে আস্ত খাইয়া ফেলবো৷"
" না আব্বা তোমরা জাদু নষ্ট করো ৷ ওর জন্য আমি একাই একশ৷ আমাকে প্রত্যাখান করার শাস্তি আমি নিজে ওকে দিবো৷"
বলতে বলতে জাবা শরীর নিয়ে আরমান উধাও হয়ে গেল৷ এদিকে তান্ত্রিক পড়লো মহা চিন্তায় কারণ এই বংশের জীনেরা কখনো খালি হাতে ফিরে যায় না৷
________
রাত প্রায় চারটার কাছাকাছি নিশি সাথী ইফু মিমি তারু রুপ ঘুমিয়ে আছে৷ শুধু সুমু ফারু লাবু বহ্নির চোখে ঘুম নেই৷ তারা বসে বসে কোরআন পড়ছিলো৷ হঠাৎ করে রুমে লাইট অফ হয়ে গেল৷ প্রচন্ড ঘাবড়ে যায় সুমু ফারু লাবু বহ্নি৷
" ফারু লাবু বহ্নি তোরা কেউ দোয়া পড়া থামাবি না৷ আমার মনে হচ্ছে কোন খারাপ জীন আমাদের রুমে উপস্থিত আছে৷ আমার কেমন যেন শরীর ভার লাগছে৷ তোরা জোড়ে জোড়ে দোয়া পড়৷"
সুমুর কথা মতো ফারু লাবু বহ্নি জোড়ে জোড়ে দোয়া দুরুত পড়তে লাগলো৷ তখনি হুট করে ফারু অনুভব করে ওর কাঁধে কেউ হাত রেখেছে৷ ফারু ড্রসিং টেবিলের সোজাসুজি বসা ছিলো বিধায় ফারু সরাসরি আয়নার দিকে চোখ পড়তে দেখে এক জোড়া বড় বড় লাল চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ এটা দেখে ফারুর গলা দিয়ে যেন আওয়াজ বের হচ্ছে না৷ লাবু হাতরে তার ফোন টা নিয়ে ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ফারুর দিকে ফ্লাশের আলো পড়তে সেই খারাপ জীনটা তার ভয়ংকর চেহারা নিয়ে লাবুর দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকাতে লাবু ভয় পেয়ে যায়৷ এদিকে সুমু জীনটাকে দেখে দ্রুত জোড়ে জোড়ে দোয়া পড়তে লাগলো৷ সুমু দোয়া পড়ার সাথে সাথে জীনটা বিকট এক চিৎকার করে উধাও হয়ে যায়৷ আর তখনি রুমের লাইট গুলো জ্বলে ওঠে৷
রুমের আলো জ্বলে উঠতে সুমু লাবু ফারু স্বস্থির শ্বাস ফেলে বহ্নির দিকে তাকাতে দেখে বহ্নি বিছানায় নেই৷ বহ্নিকে দেখতে না পেয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় সবাই৷ দ্রুত বাকিদের ঘুম থেকে তুলে সবটা জানাতে বাকিরা বেশ ভয় পেয়ে যায়৷ সুমু ফারু লাবু আর সময় নষ্ট না করে দল বেধে পুরো বাড়ি সহ ছাঁদে খুজেও বহ্নিকে পায় না৷
" ফারু বহ্নিকে তো কোথাও খুজে পেলাম না৷ এবার আমরা কি করবো?"
ফারু কিছুক্ষণ ভেবে সুমুকে বলে," সুমু এখুনি তোর মামাকে ফোন কর৷ সবটা এখুনি ওনাকে খুলে বল৷ দেখ মামা তোকে কি বলে?"
সুমু সময় নষ্ট না করে দ্রুত তার মামাকে ফোন কল করে৷ কিন্তু প্রথমবার রিং হয়ে বেজে গেল অথচ কেউ কল রিসিভ করে নি৷ তারপর আবারও নাম্বারে ডায়াল করে এবার দুবার রিং বাজতে কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে সুমুর মামা জাফর ইকবাল বললেন," সুমাইয়া মা তুমি এতো রাতে কল করেছো? কোন সমস্যা হয়েছে?"
সুমু এবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার মামা জাফর ইকবালকে জানায় সবটা শুনে তিনি বলেন," সুমাইয়া মা তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে দোয়া পড়তে থাকো৷ আমি এখুনি আসছি আর একটা কথা তোমরা কেউ দলচ্যুত হবে না৷ এক সাথে হাত ধরে থাকবে৷ "
" ওকে মামা৷ "
" আল্লাহ হাফেজ৷"
" আল্লাহ হাফেজ৷"
সুমু কল কেটে সবার উদ্দেশ্য বলল," মামা আমাদের এক সাথে দল বেধে থাকতে বলেছে৷ আর প্রত্যেকে দোয়া পড়ো ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবে৷"
ফারু সুমুর কথা শুনে বলল," তাহলে আমরা এদিক ওদিক না ঘুরে ড্রইংরুমে চল কারণ তোর মামা যে কোন সময় এসে উপস্থিত হবে৷ "
" সেটাই ভালো হবে৷ "
ফারু তারু সুমু বুদ্ধি করে রান্না ঘর থেকে কয়েকটা মোম আর ম্যাচ লাইটার নিজেদের কাছে নিয়ে রাখে৷ কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দিতে সবাই এক এক করে উজু করে ড্রইংরুমে জায়নামাজ বিছিয়ে চারজন চারজন করে নামাজ পড়লো৷ একঘন্টা পর কলিংবেল বেজে উঠতে সুমু উত্তিজিত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখে তার মামা জাফর ইকবাল এসেছে৷ সুমু তার মামাকে দেখে কিছুটা ভয় কাটে তার, সুমু তার মামাকে ভেতরে আসতে বলে সুমু হাটতে লাগলো৷ এদিকে লাবু ইফু ফারুর হঠাৎ চোখ পড়ে সুমুর মামা জাফর ইকবালের পায়ের দিকে; সুমুর মামার পা জোড়া মাটি থেকে কিছুটা উপরে ভাসছে৷ তারু লাবু ফারুর হাত চেপে ধরে ভয়ার্থ চোখে তাকিয়ে থাকে ফারুর দিকে, ফারু কি করবে এটাই বুঝতে পারছে না তবে এটা বুঝতে পারছে ৷ সুমুর মামার রুপে আর কেউ না কোন খারাপ কিছু হবে৷ সুমুর মামার ছদ্মবেশে আসা জীনটা সুমুর কাছাকাছি আসতে ফারু সুমুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে সুমুর মামার ছদ্মবেশে থাকা জীনটাকে বলে," মামা আপনি এতো দুর পর্যন্ত এসেছেন৷ আপনি নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত? আপনি উপরে রুমে গিয়ে রেস্ট নিন৷ "
" ঠিক আছে তবে কিছুক্ষণ পর তোমরা এক এক করে আমার সাথে দেখা করো৷"
" জ্বি মামা কিছুক্ষণ পর আমরা আপনার সাথে এক এক করে দেখা করবো৷"
জীনটা একা একাই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়৷ তিনি যেতেই সুমু ফারুকে প্রশ্ন করে তখন ওভাবে ওকে কেন টেনে আনলো? তার উওরে ফারু বলে," তখন যদি আমি তোকে ওভাবে টেনে নিয়ে না আসতাম তাহলে এখন তোর যে কি অবস্থা হতো তা আমরা কেউ জানি না৷ "
" মানে!"
" মানেটা পড়ে বলছি এখুনি তোর মামাকে কল কর৷"
" আশ্চর্য মামা তো উপরে তাহলে মামাকে কেন ফোন কল করবো?"
ফারু রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে," তোকে যা বলেছি তুই ঠিক তাই করবি৷ এখুনি তোর মামাকে কল করবি আর জানতে চাইবি উনি এখন কোথায় আছে?"
সুমু একটু বিরক্ত হয়ে জাফর ইকবালকে কল করে৷ ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে বলে," সুমাইয়া মা আমার ওই বাড়িতে পৌছাতে আর পাঁচ মিনিট লাগবে৷ ভয় পেও না আল্লাহকে ডাকো আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি৷" বলে কলটা ডিসকানেক্ট করে দিলো জাফর ইকবাল ৷ সুমু অবিশ্বাস্য চোখে ফারুর দিকে তাকিয়ে বলল," ফা,,ফারু মামার আসতে যদি এখনো পাঁচ মিনিট লাগে তাহলে কিছুক্ষণ আগে যে আসলো সে কে?"
" সে কোন আত্মা বা জীন৷ আমাদের ধোকা দিতে এসেছে হয় বা ক্ষতি করতেও৷ তোরা কেউ ভয় পাস না তার চেয়ে বরং দোয়া পড়৷ "
ফারুর কথা মতো সবাই দোয়া পড়তে লাগলো৷ এদিকে ওদের জোড়ে জোড়ে দোয়া পড়ার পর পর ড্রইংরুমে যেন ঝড় উঠে গেল৷ তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ড্রইংরুমে সব আসবাবপত্র একা একাই ভাঙতে লাগলো৷ এই সব দেখে আরো ভয় পেয়ে গেল সবাই৷ তখনি সুমাইয়ার মামা জাফর ইকবাল এসে হাজির হয়৷ তিনি দোয়া দুরুত পড়ে হাতে থাকা পানির বোতল থেকে একটু পানি নিয়ে চারিদিকে ছিটিয়ে দিতে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷
(০৯)
"মামা তুমি এসেছো?"
" মামুনি এখন কথা বলার সময় নয়৷ তোমরা আমার সাথে এসো ৷"
সুমাইয়ার মামার কথা মতো তার পেছন পেছন সবাই যেতে লাগলো৷ জাফর ইকবাল বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে পড়তে বাড়ির পেছনে থাকা ছোট্ট স্টোর রুমের সামনে হাজির হয়৷ তিনি তার হাতে থাকা পানির বোতলের মুখ খুলে কিছুটা পানি স্টোর রুমের দরজার সামনে ছিটিয়ে দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সাথে সাথে বাকিরাও স্টোর রুমে ঢুকে দেখে........
—————
সুমাইয়ার মামার কথা মতো তার পেছন পেছন সবাই যেতে লাগলো৷ জাফর ইকবাল বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে পড়তে বাড়ির পেছনে থাকা ছোট্ট স্টোর রুমের সামনে হাজির হয়৷ তিনি তার হাতে থাকা পানির বোতলের মুখ খুলে কিছুটা পানি স্টোর রুমের দরজার সামনে ছিটিয়ে দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সাথে সাথে বাকিরাও স্টোর রুমে ঢুকে দেখে বহ্নি স্টোর রুমের এক কোণে বসে বিড়বিড় করছে৷ বহ্নির মুখে রক্ত আর দু'হাত গভীর ক্ষত৷ সুমাইয়ার মামা জাফর ইকবাল তিনি সবাইকে রুমে ঢুকতে বারণ করে বলে," আমি না বলা পর্যন্ত তোমরা কেউ এই রুমে ঢুকবে না৷ আর না কেউ কোন কথা বলবে শুধু দোয়া পড়তে থাকো৷"
সবাই কথা না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়৷ সুমাইয়ার মামা ধীর পায়ে বহ্নির কাছে গিয়ে জোড়ে জোড়ে দোয়া পড়ে বহ্নির শরীরে পানির ছিটে দিতে বহ্নি এক ভয়ংকর বিকৃতির চেহারায় তাকায় জাফরের দিকে; জাফর বহ্নির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো," তুই কে আর কেনই বা এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস?"
জাফরের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে বহ্নি জাফরের উপর আক্রমন করে বসে৷ জাফরের গলা চেপে ধরে বলে," নিষ্পাপ কাকে তুই নিষ্পাপ বলছিস হাহ্! এই মেয়েটার জন্য আমি আমার জীবন হাড়িয়েছি ওর প্রত্যাখান সহ্য করতে পারি নি আমি৷ ওর কারণে আমি আত্মহত্যা করেছি৷ ওকে কি করে আমি ভালো থাকতে দি বল? বহ্নিকে তো আমি নিজের সাথে নিয়ে যাবো৷"
জাফর বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে পড়তে হাতে থাকা পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে বহ্নির মাথায় দিয়ে চেপে ধরে৷ সাথে সাথে বহ্নি দূর্বল হয়ে পড়ে৷ তখনি জাফর সুমাইয়া এবং তার বান্ধবীদের ডাকে৷ ফারু সুমাইয়া আর সাথে বাকি ভিতরে ঢুকতে বলে," তোমরা দ্রুত বহ্নিকে নিয়ে বাড়িতে যাও৷ ফারু সুমাইয়া মিমি তারু রুপ সহ বাকিরা বহ্নিকে ধরে স্টোর রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়৷ সুমাইয়া সহ বাকিরা বহ্নিকে নিয়ে স্টোর রুম থেকে বের হতে অটোমেটিক স্টোর রুমের দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়৷ এটা দেখে সবাই বেশ অবাক এবং ভয় পেয়ে যায়৷ ফারু সুমাইয়া বাকিদের কে বলে বহ্নিকে নিয়ে রুমে যেতে আর ওরা দু'জন দরজার বাইরে দাড়িয়ে যায়৷
জাফর ইকবাল রুমের মধ্যেখানে দাড়িয়ে আছে৷ রুমের ভেতর ভাঙা আসবাবপত্র এদিক ওদিক উড়ে উড়ে পড়ছে৷ যেন কেউ রেগে ভাঙা আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে৷ জাফর ইকবাল চিৎকার করে বলতে লাগলো," কে তুই শয়তান সাহস থাকলে আমার সামনে আয়৷ সামনে আয় বলছি৷" কথা গুলো বলে জাফর বিড়বিড় করে কিছু পড়তে লাগলো তখনি হঠাৎ এক মানব ছায়া উপস্থিত হয়৷ জাফর ইকবালের বুঝতে আর বাকি নেই এই মানব ছায়া কে!
" কে তুই আর কেন বহ্নিকে কষ্ট দিচ্ছিস?"
" আমি আরমান বহ্নিকে আমি ছাড়বো না৷ ওকে আমার সাথেই নিয়ে যাবো খুব শীগ্রই৷ তুই যদি বাধা হয়ে দাড়াস তাহলে তোকেও আমি শেষ করে দিবো৷"
" আমি বেঁচে থাকতে শুধু তুই কেন তোর মত আরো কয়েকশ অতৃপ্ত আত্মা বহ্নি বা আমার কারোর কোন ক্ষতি করতে পারবি না৷" বলতে বলতে জাফর কিছু দোয়া পড়ে হাতে পানি নিয়ে সেই মানব ছায়ার দিকে ছুড়ে মারতে আরমান বিকট চিৎকার করে উধাও হয়ে যায়৷
জাফর ইকবাল তখনও দোয়া পড়তে পড়তে পানি নিয়ে চোখে মুখে ছিটিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়৷ তখনি সুমাইয়া আর ফারুকে রুমের বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে," এখুনি আমাদের বহ্নির সাথে দেখা করতে হবে সুমাইয়া মা৷"
" মামা বহ্নিকে বাড়িতে ওর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷"
" এখুনি ওখানে চলো৷ আমাদের সময় নষ্ট করলে চলবে না৷ বহ্নির সামনে ভয়ানক বিপদ ঝুলছে৷"
জাফর ইকবাল আর সুমাইয়া ফারু তৎক্ষনাৎ বাড়িতে ফিরে গিয়ে বহ্নির রুমে চলে যায়৷ বহ্নি সেন্সলেস অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে৷ জাফর হাতে পানি নিয়ে দোয়া পড়ে বহ্নির চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়৷ তার কিছুক্ষণ পর বহ্নির জ্ঞান ফিরে আসে৷ বহ্নি খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে তখন জাফর ইকবাল বহ্নিকে প্রশ্ন করে৷
" মামুনি এখন তোমার কেমন লাগছে?"
" ভা,,,ভালো কিন্তু আপনি কে?"
বহ্নির কথা শুনে সুমাইয়া বলে উঠলো," বহ্নি উনি আমার মামা৷ সকালে এসেছে৷ তোর সমস্যার কথা মামাকে জানিয়েছি৷ ইনশাআল্লাহ মামা তোর সমস্যা সমাধান করে দিবে৷"
বহ্নি কিছু বললো না৷ তখন জাফর ইকবাল আবার বলতে লাগলো," মামনি তুমি একটু ভেবে বলো তো৷ তোমার পরিচিত এমন কেউ আছে যে আত্মহত্যা করেছে? বা তোমাকে প্রপোজ করেছে তুমি প্রত্যাখান করেছো?"
বহ্নি চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে হুট করে আরমানের কথা মনে পড়তে বলে উঠলো," জ্বি আরমান, আরমান আমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে ছিলো কিন্তু এবং আমার মা বাবা আমি কেউ রাজি ছিলাম না৷ কারণ ছিলো আরমান ছিলো একটা লম্পট , চরিত্রহীন ছেলে৷ বিয়ের প্রপোজাল না করে দেওয়ায় আরমান আত্মহত্যার ভয় দেখাতে শুরু করে৷ কিন্তু কোন কিছুতেই যখন আরমান আমাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারছিলো না তখন আরমান সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ "
" আরমানের সাথে তোমার সম্পর্কটা কি ছিলো?"
" আরমান সম্পর্কে আমার কাজিন আমার বড় চাচার ছেলে৷ তারা শান্তিনগর গ্রামে থাকে৷ "
" তাহলে এবার আমাদের যা করতে হবে সেটা শান্তিনগরে হবে৷"
(১০)
আজহার সাহেবের বাড়ির আশে পাশ দিয়ে কোন মানুষ ভয়ে যাওয়া আশা বন্ধ করে দিলো৷ মেম্বার বাড়ির ভুতের বাড়ি বলে পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে৷ আজহার সাহেবের তাতে বিশেষ কিছু যায় আশে না৷ তিনি প্রচন্ড খুশি তার মৃত ছেলে মেয়েকে ফিরে পেয়ে৷
জেরিনের শরীরে অবস্থানরত জাবার আত্মা থেকে সকাল থেকে উল্টা পাল্টা কাজ করে যাচ্ছে৷ আলেয়া বেগম ভেবে পাচ্ছে না এটা তার ছোট মেয়ে জেরিন নাকি মৃত বড় মেয়ে জাবা!
তান্ত্রিক এখনো সেই রুমে বসে আগুন জ্বালিয়ে মৃত মানুষের হাড় খুলি দিয়ে কিছু একটা করছিলো যেটা আজহারের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷
তিনি তেমন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷
অন্যদিকে জাফর ইকবাল ফারু আর সুমাইয়া বহ্নির সাথে থেকে যায় আর বাকিদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলে৷ বাকিরা যেতে না চাইলেও ফারু সুমাইয়া আর জাফর ইকবাল জোড় করে পাঠিয়ে দেয়৷ কারণ সবাইকে নিয়ে শান্তিনগর গ্রামে যাওয়াটা বিপদজনক তাই ওদেরকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে৷ ওরা সবাই চলে যাওয়ার পর পর জাফর ইকবাল ফারু আর সুমাইয়াকে বলে বহ্নিকে তৈরি করে দিতে কারণ তারা আজ এবং কিছুক্ষণ পরই শান্তিনগর গ্রামের উদ্দেশ্য বের হবে৷ ওখানে হবে আসল খেলা কারণ ওখানে সব কিছুর মূল উৎপত্তির শুরু৷
কিছুক্ষণ পর ফারু রান্নাঘরে গিয়ে একটা ছুরি, মোটা দরি, ম্যাচ লাইট, মোম বাতি একটা ব্যাগে ভরে নিয়ে সুমাইয়ার মামা সুমাইয়া বহ্নি আর ফারু বহ্নিদের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷
______
ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় রুমের এক কোনে পড়ে আছে তান্ত্রিক৷ আজহার সাহেব জ্ঞান হাড়িয়ে উল্টো দিকে শুয়ে আছে৷ জেরিন আর আরমান হঠাৎ করে বদ্ধরুমটার ভেতরে প্রবেশ করে৷ তান্ত্রিক আর আজহারকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে পাশে দুজনের মাথায় হাত রাখতে দুজনের জ্ঞান ফিরে আসে৷ তারা আরমান অর্থাৎ জাবাকে আর জাবা অর্থাৎ জেরিনকে দেখে তাদের ভয়টা কাটতে শুরু করে৷ আরমান তার লাল চোখ জোড়া দিয়ে তান্ত্রিকের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো," আপনাকে বলেছিলাম না ওর উপর থেকে জাদু কাটাতে হাহ্! "
" আমি চেষ্টা করেছিলাম আরমান কিন্তু আঞ্জার বংশের জীনেরা খালি হাতে কখনো ফিরে যায় না তাদের জীবনের পরিবর্তে জীবন দিতে হয়৷ এদের কে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে না দিলে তারা কাউকে ছাড়বে না৷ সবাইকে মেরে ফেলবে৷"
" অসম্ভব বাবা৷ ওদের হাতে আমি আমার বহ্নিকে তুলে দিতে পারবো না৷ ওরা জাহান্নামের নিকৃষ্ট জীন ওরা আমার বহ্নিকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে৷ ওকে আর আমার পাওয়া হবে না৷ "
" কিন্তু আমাদের হাতে যে বেশি সময় নেই৷ ওরা খুব শীগ্রই বহ্নিকে তাদের সাথে নিয়ে যাবে৷ "
" ওকে বাঁচানোর কোন উপায় নেই?"
" আছে৷ যদি কোন পবিত্র আত্মা তার শরীরের রক্ত দিয়ে বহ্নিকে গোছল করিয়ে দেয় তাহলে সে জীনেরা বহ্নিকে আর নিতে পারবে না৷ কিন্তু কোন ক্রমে যদি ভুল মানুষের রক্ত দিয়ে বহ্নিকে গোছল করানো হয় তাহলে বহ্নির সাথে সাথে আজহার জেরিন এবং তোমাদের দুই ভাইবোনের আত্মাকে নিয়ে জাহান্নামে চলে যাবে৷"
" তাহলে এখন উপায়?"
" পবিত্র আত্মার মানুষকে খুজতে হবে৷ আর একটা কথা বহ্নি এই শান্তিনগর গ্রামে আসতিছে আরমান৷ তৈরি হও এবার খারাপ এবং ভালোর মধ্যে লড়াই খুব শীগ্রই শুরু হয়ে যাবে৷ আমি আমার শয়তান দেবতাকে ডাকছি তিনি নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে৷ এখন তোমরা সবাই আসতে পারো৷ আর একটা কথা দ্রুত সেই পবিত্র আত্মার খোজ করো৷ কারণ বহ্নি এখন এই শান্তিনগর গ্রামের খুব নিকটে আছে৷ যে কোন সময় গ্রামে ঢুকে যাবে৷ "
" ঠিক আছে বাবা আমি সেই পবিত্র আত্মার মানুষকে খুজে বের করছি৷"
আরমান জাবা দু'জনে উধাও হয়ে যায়৷ আজহার সাহেব ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়৷ আর তান্ত্রিক তার আসনে বসে মন্ত্র পড়তে লাগলো৷
(১১)
শান্তিনগর গ্রামে ঢুকতে বহ্নির শরীর হঠাৎ করে খারাপ হতে লাগলো৷ হঠাৎ বমি পাচ্ছে বহ্নির; জাফর গাড়ি থামাতে বহ্নি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে বমি করতে লাগলো৷ ফারু সুমাইয়া বহ্নিকে ধরে রেখেছে৷ হঠাৎ ফারু সুমাইয়া খেয়াল করে বহ্নির বমির সাথে সাথে রক্ত আর পোঁকা মাকড় বের হচ্ছে৷ নাক, কান, দিয়ে ছোট ছোট পোঁকা আর রক্ত বের হচ্ছে৷ ফারু সুমু দুজনে বেশ ভয় পেয়ে যায়৷ সুমু তার মামাকে ডেকে সবটা বলতে তিনি বলেন দ্রুত বহ্নিকে নিয়ে আসতে বহ্নির হাতে সময় খুব কম৷ খারাপ জীন গুলো ইতিমধ্যে বহ্নির ক্ষতি করা শুরু করে দিসে৷ জাদু না কাটাতে পারলে বহ্নিকে আর বাঁচানো যাবে না৷
ফারু সুমু দু'জনে বহ্নিকে ধরে গাড়িতে বসায়৷ জাফর ইকবাল দ্রুত গাড়ি স্টাট দিয়ে মেম্বারের বাড়ি যেতে লাগলো৷ বহ্নির তার চাচা বাড়ি আগেও এসেছিলো ভিধায় বহ্নি ইশারায় পথ চিনিয়ে দিচ্ছে আর জাফর সে অনুযায়ী গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে৷
কিছুক্ষণের মধ্যে মেম্বার বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় জাফর৷ সুমু ফারু দু'জনে বহ্নিকে ধরে গাড়ি থেকে নামাতে হঠাৎ এক ধমকা হাওয়া এসে বহ্নিকে স্পর্শ করতে, বহ্নির চোখের জোড়ার রঙ পাল্টে পুরো কালো হয়ে গেল ৷ মুখে অজস্র কালো দাঁগ ফুটে উঠলো৷ আচমকা ফারু সুমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে জাফরের গলা চেপে ধরে৷ মাটি থেকে কয়েক পা উপরে উঠে যায় জাফর৷ ফারু সুমু ভয় পেয়ে যায় হঠাৎ বহ্নির এমন ভয়ংকর রুপ দেখে৷ সুমু দ্রুত গাড়ি থেকে জাফরের পানির বোতলটা নিয়ে বহ্নির দিকে পানিটা ছুড়ে মারতে বহ্নি চিৎকার করে ওঠে জাফরের গলা ছেড়ে দেয়৷ বহ্নিকে জাফর ধরতে যাবে তখনি বহ্নি রকেটের স্পিডে দৌড়ে আজহারের বাড়ির সেই তান্ত্রিকের রুমে চলে যায়৷ সেই সাথে সাথে আরমান জাবা উপস্থিত হয় বহ্নির সামনে৷ বহ্নি আরমান জাবাকে দেখে আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে৷ তখন বহ্নির চেহারা পাল্টে কালো কুচকুচে মাথায় শিং আছে এমন এক অদ্ভুত প্রানীতে রুপান্তর হয়৷ এই জীনজাতি অতি নিকৃষ্ট জঘন্য জীন এরা মানুষকে প্রচন্ড ঘৃনা করে৷ এরা শুধু মাত্র মানুষের ক্ষতি করতে চায়৷ আর যারা মানুষের ক্ষতি করে তাদের সাহায্য করে৷
অন্যদিকে জাফর ফারু সুমু দৌড়ে আজহারের বাড়িতে ঢুকতে আলেয়া বেগম আজহার আর সাথে কয়েকজন লোক ওদের পথ আগলে দাড়ায়৷ কিছুক্ষণ আগে আরমান তার বাবা আজহারকে জানিয়ে দেয় এই তিনজন যেন কোন ক্রমে ভেতরে প্রবেশ না করে৷ ছেলে কথা অনুযায়ী জাফর ফারু আর সুমুর পথ আগলে দাড়ায় মানুষ গুলো৷
ফারু লোক গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো," আঙ্কেল আমরা খুব ভালো করেই জানি আপনি কেন আমাদের আটকাছেন৷ তবে আমি আপনাকে বলছি আমাদের ভেতরে বহ্নির কাছে যেতে দিন নাহলে..."
" নাহলে! নাহলে কি করবে খুকি? তুমি জানো আমি তোমাদের সাথে ঠিক কি কি করতে পারি?"
" জানি আপনি ঠিক কি কি করতে পারেন৷ কিন্তু আপনি জানেন আমি আপনাদের সাথে ঠিক কি কি করতে পারি?"
ফারুর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো৷ ফারু সে সুযোগে তার ব্যাগ থেকে ছুরিটা বের করে আজহারের গলায় চেপে ধরে৷
—————
" নাহলে! নাহলে কি করবে খুকি? তুমি জানো আমি তোমাদের সাথে ঠিক কি কি করতে পারি?"
" জানি আপনি ঠিক কি কি করতে পারেন৷ কিন্তু আপনি জানেন আমি আপনাদের সাথে ঠিক কি কি করতে পারি?"
ফারুর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো৷ ফারু সে সুযোগে তার ব্যাগ থেকে ছুরিটা বের করে আজহারের গলায় চেপে ধরে৷
" ওই মাইয়া করো কী? ছুরিডা সরা কইতাছি৷ আমার গলা কাইটা যাইবো৷"
" কেটে যাক তোর গলা৷ তোর মত নিকৃষ্ট লোকের বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজন নেই৷"
" ছাড় কইতাছি৷ আমাকে ছাইড়া দে মাইয়া৷ যদি ছাইড়া দিস তাইলে তগোর আমি ছাইড়া দিমু৷"
আজহারের কথা শুনে ফারুর রাগ কেন যেন তর তর করে বাড়তে লাগলো৷ছুরিটা আজহারের গলা থেকে সরিয়ে বাকি লোক গুলোর দিকে তাক করে বলে," আমাকে ভেতরে যেতে দিবি কিনা বল? আর আজ এখুনি যদি আমাকে ভেতরে যেতে না দিস তাহলে তোদের বস মেম্বারের গলা আমি এখানে কেটে দিবো৷" বলে ফারু আবার আজহারের গলায় চেপে ধরতে আজহার বলে ওঠে " এ,,এই ওদেরকে ভেতরে ঢুকতে দে৷ "
ফারু আজহারের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আজহারকে ধাক্কা দিয়ে একটা পাথরের উপর ফেলে দেয়৷ আজহারের মাথাটা পাথরে উপর পড়ে ফেটে যায়৷ আজহার সেন্সলেস হয়ে যায়৷ লোক গুলো ফারু সুমু আর জাফরের দিকে এগিয়ে আসতে ফারু ছুরি দিয়ে লোক গুলোকে আঘাত করতে থাকে সে সুযোগে সুমু জাফর ভেতরে ঢুকে যায়৷ ভেতরে ঢুকতে আলেয়া বেগম সুমু জাফরের সামনে দাড়িয়ে পড়ে৷
" ভয় পাইবেন না৷ আমি আপনাগো কোন ক্ষতি করবো না তবে একটা কথা আপনাগো জানাই রাখি৷ বহ্নি মাকে আপনারা জীনগো হাত দিয়া একটা মাত্র উপায়ে বাঁচাতে পারবেন৷"
" কি উপায় আন্টি?" তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো সুমু৷
" পবিত্র মানুষ যার আত্মা পবিত্র তার রক্ত দিয়ে বহ্নিকে গোছল করালে বহ্নি জীনের আছর দিয়া মুক্ত হইয়া যাইবো৷ আর ওই জীনেরা অন্য আত্মা লইয়া হেগো দুনিয়ায় চইলা যাইবো৷"
জাফর আলেয়া বেগমকে ধন্যবাদ দিয়ে ভেতরে ঢুকতে নিলে এক অদৃশ্য শক্তি জাফর সুমুকে আটকে দেয়৷ জাফর বিড়বিড় করে কিছু দোয়া পড়ে দরজায় পানির ছিটে দিতে দরজাটা খুলে যায়৷ জাফর সুমু দুজনে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে বহ্নিকে একটা গোল সার্কেলের ভেতর বসা মাথার উপর কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা৷ তান্ত্রিক বহ্নির সামনে আগুন জ্বালিয়ে মন্ত্র পড়তে লাগলো৷ জেরিনের শরীরে অবস্থানরত জাবার আত্মা বা জাবার শরীরে অবস্থানরত আরমানের আত্মা কেউ রুমে উপস্থিত নেই৷ জাফর বহ্নির আশে পাশে ভালো করে খেয়াল করে দেখতে দেখতে রুমের এক কোনে আয়নায় চোখ পড়তে দেখে এক ভয়ংকর মানব ছায়া৷ বহ্নির প্রতিবিম্ব আয়নায় পড়েছে৷ কিন্তু সেখানে বহ্নিকে নয় বরং সেই আঞ্জার জীন বংশের একজন জীন৷ জাফর কিছুটা ঘাবড়ে যায় জীনটাকে দেখে; হঠাৎ তখনি রুমের ভেতর ঝড় বইতে শুরু করলো৷ এর মাঝে আরমান জাবা রুমে এসে হাজির হয়৷ তান্ত্রিক মন্ত্র বলায় এতোটা ব্যস্ত ছিলো যে সুমু বা জাফর যে রুমে প্রবেশ করেছে সেটা টের পায়নি৷ আরমান জাবা রুমে জাফর আর সুমুকে দেখে প্রচন্ড রেগে যায়৷ নিজের ক্ষমতা জাহির করতে থাকে আরমান সুমু একা একাই উড়ে ছিটকে পড়তে৷ জাফর সুমুর দিকে যেতে নিলে জাবা হাতের ইশারায় জাফরকে দেয়ালে ছুড়ে মারে৷ প্রচন্ড ব্যথা পায় জাফর৷
আরমান তান্ত্রিকের কাছে গিয়ে বলে," বাবা আমি এই গ্রামে এমন কাউকে পেলাম না যার আত্মা পবিত্র৷
" সর্বনাশ আরমান৷ তুমি এখন এই সব কি করছো? আর কিছুক্ষণের মধ্যে যদি সেই পবিত্র রক্ত দিয়ে বহ্নিরে গোছল করানো না যায় তাহলে ওরে ওই আঞ্জার বংশের জীনেরা ওদের দুনিয়া নিয়ে যাবে৷"
" এখন আমরা কি করবো বাবা৷"
" ভাবতে দে আমাকে ভাবতে দে৷"
(১২)
সুমু উঠে বসে তার মামার দিকে ধীরে ধীরে যেতে নিলে জাবা দেখে ফেলে৷ জাবা কি বুঝে তান্ত্রিকের সামনে থেকে ছুরিটা নিয়ে সুমুর হাতে আঘাত করে৷ সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো৷ জাবা একটা মাটির পাত্রে রক্ত নিয়ে বহ্নির শরীরে ঢেলে দিতে বহ্নি গর্জে ওঠে৷ এমন ভয়ংকর আওয়াজ করতে লাগলো যেটা শুনে আরমান জাবা তান্ত্রিক সহ জাফর সুমুও ভয়ে আতঁকে উঠলো৷
তান্ত্রিক তখনি বলে উঠলো," ভুল হইলো জাবা মা৷ ওর আত্মা পবিত্র নয়৷ এখন এই জীন আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে৷ ওকে আমি সামলাতে পারবো না৷" তান্ত্রিকের কথা শুনে আরমান জাবা দুজনে রেগে তান্ত্রিকের উপর এট্যাক করে৷ তান্ত্রিক প্রথমবার নিজেকে রক্ষা করতে বিফল হলেও তার পরেরবার সফল হয়৷ মন্ত্র দ্বারা নিজেকে রক্ষা করে ফেলে৷
ফারু বুদ্ধি খাটিয়ে মেম্বারের চমচা গুলোকে বাইরে পরে থাকা দরি গুলো দিয়ে গাছের সাথে বেধে রেখে ভেতরে এসে বহ্নির এমন ভয়ংকর রুপ দেখে ফারু নিজেও ভয়ে থমকে যায়৷ কিন্তু আলেয়া বেগমের বলা কথা গুলো ফারু শুনতে পেয়েছিলো বিধায় ফারু দ্রুত জাফরের কাছে এসে বলে," মামা বহ্নিকে পবিত্র রক্ত দিয়ে গোছল করাতে হবে৷ আর তাহলে বহ্নি এই কালোজাদু থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে৷"
তৎক্ষনাৎ জাফর ইকবাল কি মনে করে ফারুর হাতের ছুরিটা নিয়ে বা হাতটা অনেকটা কেটে ফেললো৷ যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুচকে ফারু সুমুকে বলে," তান্ত্রিকের সামনে থেকে একটা পাত্র নিয়ে আসতে৷ ফারু অতি সাবধানে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে গিয়ে পাত্র নিয়ে জাফরের কাছে দিলো৷ জাফর নিজের রক্ত পাত্রে জমাতে শুরু করলো৷
অন্যদিকে জীনটা আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে সেই গোল সার্কেলের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে আরমান আর জাবার উপর এট্যাক করে৷ বহ্নির কালো কুচকুচে জোড়া আর মুখের ভয়ংকর রুপ দেখে যে কারোর পিলে চমকে যেতে সক্ষম৷ জাবা আরমান তাদের সমস্থ শক্তি দিয়ে বহ্নির আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ৷ বহ্নির দু'হাতে আরমান আর জাবার গলা ধরে রেখেছে৷ বহ্নির তার মুখ দিয়ে কালো কুচকুচে জিব্বাহ্ বের করে আরমানের মুখে স্পর্শ করতে লাগলো৷ আর বিড়বিড় অন্য ভাষায় কি যেন বলতে লাগলো৷ যেটা আরমান জাবা বা সুমু ফারু জাফর কেউ বুঝতে পারলো না কিন্তু রক্তে পাত্র ভরে উঠতে সে পাত্র নিয়ে দোয়া পড়তে পড়তে পাত্রে থাকা রক্ত নিয়ে বহ্নির মাথায় ঢেলে দেয়৷ সাথে সাথে বহ্নি আরমান জাবার গলা ছেড়ে দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে৷ ফারু সুমু বহ্নির কাছে যেতে নিলে জাফর বাধা দিয়ে বলে," এখুনি বহ্নির কাছে যেও না৷ আগে ওই জীনটাকে ওর মধ্যে থেকে বের হতে দেও৷" জাফর ইকবাল বলতে বলতে বহ্নির দিকে তাকাতে দেখে একটা কালো ধোয়া বহ্নির মুখ দিয়ে বেড়িয়ে জাবার শরীরে অবস্থানরত আরমান আছে সে শরীরের ঢুকে গেল৷ সাথে সাথে আরমানের চেহারা রুপ পাল্টে যেতে লাগলো৷ জাফর ইকবাল রুমের কোনে পড়ে থাকা তার পানির বোতলটা নিয়ে এসে দোয়া পড়ে বহ্নির চোখে মুখে ছিটে দিয়ে ফারু সুমুকে বলে," ফারু আর সুমাইয়া মা দ্রুত বহ্নিকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হও৷ "
বহ্নির জ্ঞান ততোক্ষণে ফিরে আশায় ফারু দেরি না করে দ্রুত সুমু আর বহ্নিকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ ওরা বেড়িয়ে যেতে জাফর আরমানের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো," হে আঞ্জার বংশের জীন তুমি তোমার দুনিয়ায় ফিরে যাও৷ এই দুনিয়া তোমার জন্য নয়৷"
জীনটা আরবি ভাষায় কিছু বলে উঠলো যেটা শুনে জাফর বলে উঠলো ," তবে তাই হোক তুমি খালি হাতে নয় বরং ভরা হতে ফিরে যাবে৷ তোমার সামনে দুটো অতৃপ্ত আত্মা রয়েছে তুমি তাদেরকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো৷"
জীনটা মাথা নেরে জেরিনে শরীরে অবস্থানরত জাবার আত্মাটাকে এক টানে বের করে ৷ তখনি রুমটায় আবারো ঝড় বইতে শুরু করলো৷ এই ঝড়ের মাঝে হুট করে জীনটা আরমান আর জাবার আত্মাটাকে নিয়ে উধাও হয়ে গেল৷
জেরিন বেহুস হয়ে মাটিতে পড়ে রইল৷ জাফর জেরিনে পাল্সরেট চেক করে জেরিনকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হতে রুমের দরজা স্বজোড়ে বন্ধ হয়ে যায়৷ আলেয়া বেগম সহ বহ্নি সুমু ফারু জাফরের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলো৷ জাফরকে আসতে দেখে সবার মনের ভয় নিমেশেই দুর হয়ে যায়৷
পরিশিষ্টঃ শান্তিনগর থেকে জাফর বহ্নি সুমাইয়া ফিরে আশার কিছুদিন জানা যায়৷ আজহার বাড়িতে আগুন লেগে যায়৷ আগুনে পোড়া আজহার সাহেবের লাশ পেলেও জেরিন বা আলেয়া বেগমের কোন খোজ পাওয়া যায়নি৷ আর না পাওয়া গেছে জাবার মৃত দেহ৷ পুলিশের তদন্য চলছে৷
শান্তিনগর থেকে ফিরে আশার একমাস পর জাফর ইকবাল নিজে দাড়িয়ে থেকে বহ্নি আর রাফিদের ঘরোয়া বিয়ের আয়োজন করে বিয়ে সম্পূর্ণ করে৷ বহ্নি এবং রাফিদ তারা ভালোই আছে৷ ফারু সুমু মিমি তারু রুপ নিশি সাথী লাবু প্রত্যেকে নিজেদের জীবনে ব্যস্ত তবে মাসের শেষে একটা দিন তারা সব বান্ধবী একত্রিত হয়৷ রাফিদও বহ্নিকে বাধা দেয় না৷ বহ্নি তার সংসার করার পাশাপাশি তার বাবার বিজনেস আর পড়াশুনা দুটোই চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই সব এক সাথে সম্ভব হতো না যদি না রাফিদ বহ্নির পাশে থাকতো৷
ছয়মাস পর.....
আজ প্রচন্ড খুশি বহ্নি এবং রাফিদ৷ তাদের ভালোবাসাময় সংসারে নতুন সদস্যের আগমনের বার্তা জানতে পেরেছে বহ্নি রাফিদ৷ বিষাদময় দিন গুলোর শেষে এই সুসংবাদটা তাদের জীবনে খুশির জোয়ার নিয়ে এসেছে৷ বহ্নির বাড়িতে আজ চাঁদের হাট বসেছে৷ সুমাইয়া, মিমি, লাবিবা, ফারু ,তারিন,নিশি,ইফফাত, রুপ সবাই উপস্থিত শুধু মাত্র সাথী ছাড়া; হঠাৎ বহ্নির ফোনটা বেজে ওঠে৷ বহ্নি সাথীর নম্বর ফোনের স্কিনে ভেসে উঠতে দেখে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে৷ বহ্নি হাসি মাখা মুখে কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো সেটা শুনে বহ্নি ধপ করে বসে পড়ে৷ বহ্নির চোখে মুখে আধার ঘনিয়ে আসতে দেখে রাফিদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো৷ কে জানে সাথীর সাথে ঠিক কী হয়েছে? বা সাথী বহ্নিকে কী জানিয়েছে? নাকি অন্য কেউ ছিলো ফোনের ওপাশে! থাক না কিছু রহস্য, হোক না রহস্যময় খেলা৷ থাক না গোপন কিছু অজানা সত্য৷
***(সমাপ্ত)***