দুষ্টুর ডিব্বা - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - অনু গল্প

পড়ুন মুন্নি আক্তার প্রিয়া'র লেখা একটি অনু গল্প দুষ্টুর ডিব্বা
দুষ্টুর ডিব্বা
দুষ্টুর ডিব্বা by মুন্নি আক্তার প্রিয়া

১!!

:-দরজা খুইলা দেখুম যারে করুম তারে বিয়া, আমায় বউ সাজাইয়া লইয়া যাইবো টপোর মাথায় দিয়া
:- আহারে আহারে! (ছোট কাজিন)

বেসুরো গলায় ছোট কাজিন আর আমি গান গাচ্ছিলাম আর নাচছিলাম।
গানের মাঝখানে আপু দিলো বাম হাত ঢুকিয়ে
:- দরজা খুইলা দেখবি যারে, হইবো সে কুইড়া তোরে বউ সাজাইয়া লইয়া যাইবো ভাঙ্গা রিক্সায় কইরা (আপু)
:- ঐ ছেম্রি, তোর কি আমার সবকিছুতে বেক্ষাত না ঘটাইলে হয় না?
:- যা, বাবা আমি করলাম। আমি তো শুধু সত্যি কথা বললাম
:- আইছে আমার সত্যি কথাওয়ালি।

এর মধ্যেই কে যেন কলিংবেল বাজাচ্ছে। শান্তিতে একটু ঝগরাও করতে দেয়না।
দরজা খুলে দেখি, একটা ছেলে হ্যান্ডসাম বাট একটু সাদাসিধে মনে হলো। জিজ্ঞেস করলাম:
:- কে আপনি?
:- ভাইয়া....
:- আপনি আমার কোন জন্মের ভাইয়া? আমার দুইটা ভাই আছে অলরেডি।
:- না, মানে আসলে ঐ কথা না।
:- তাহলে কোন কথা?
:- ভাইয়া আছে?
:- আরে কখন থেকে কি ভাই ভাই করছেন? নাম বলেন
:- জ্বী। আকাশ ভাইয়া আছে?
:- উনি ঐ ফ্লাটে থাকেন এই ফ্লাটে না।
:- ওহ আচ্ছা ধন্যবাদ
:- স্বাগতম।

:- কিরে দরজা খুলে কাকে দেখলি? (আপু)
:- চিনিনা। আকাশ ভাইয়ার কাছে আসছে।
:- জামাই হওয়ার মত?
:- ঐ সেই কবে শ্বশুর বাড়ি থেকে আসছিস, এখনো শ্বশুরবাড়ি যাস না কেন? মেজাজ খারাপ করিস শুধু।

বিকালে একটু ছাদে গেলাম হাঁটাহাঁটি করার জন্য। এইটা আমার রোজকার রুটিন। ছাদে গিয়ে দেখি ঐ ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে গিয়ে ছেলেটাকে ভয় দেখালাম।
:- ভাউউউউউউ
:- ওরে বাবারে!! (পড়ে গেছে)
:- একি আপনি এত ভীতু, ওঠুন ওঠুন।
:- আপনি এখানে?
:- আমারও তো একই প্রশ্ন।
:- না, এমনি ভালো লাগছিলোনা তাই ছাদে আসলাম।
:- কিন্তু আমি প্রতিদিনই আসি।
:- ওহ আচ্ছা আপনার নামটা কি জানতে পারি?
:- হুম। আমি তানিশা, আপনি?
:- আদিত্য।
:- নাইস নেম।
:- আপনারও
:- থাক, পাম দিতে হবেনা। এসব পাম-টামে আমি ফুলিনা।
:- একটা কথা বলবো?
:- বলেন
:- আপনি এত রাগী কেন?
:- কই আমি রাগী?
:- শুধু রাগী না অনেক দুষ্টুও 
:- ওহ আচ্ছা তাই!
:- হুম তাই।
:- ওকে বাই। পরে কথা হবে।

রুমে গিয়ে কি করবো। কিছুই ভালো লাগছেনা। পায়চারী করছি। যাই একটু টিভি দেখি। টিভিতে গান ছেড়ে গান দেখছি আর ফোন টিপছি।
:- কিরে তোর কি ফোন আর টিভি ছাড়া পড়াশোনা নাই?(আম্মু)
:- না মানে ইয়ে 
:- কি মানে মানে করছিস, উত্তর দে
:- আসলে আম্মু হয়েছে কি বলো তো। তোমাকে তো একটা কথা বলতেই ভূলে গেছি। 
:- কি কথা বলবি তুই আবার? 
:- আম্মু, তুমি না দিনদিন সুন্দর হচ্ছো (আম্মুর গলা জড়িয়ে)
:- দিন দিন কিন্তু তুমি বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো
:- হিহিহি
আম্মুর রাগটা কোনোভাবে কাটাইলাম।
রাতে ডিনার করে একটু ল্যাপটপ নিয়ে বসছি, ফেসবুকে যাবো। টিভিতে গান ছেড়ে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। এরমধ্যেই ফোন আসছে। আমার ক্লাশমেট মিষ্টি ফোন দিয়েছে।
ভাইয়ার আগমণ ঠিক এই সময়েই
:- বাহ্ কি দারুণ দৃশ্য!! (ভাইয়া)
ফোনটা কেটে দিয়ে ল্যাপটপ অফ করলাম, টিভিও বন্ধ করে দিছি।
:- না, মানে ভাইয়া
:- কিসের ভাইয়া আবার? রাত কয়টা বাজে দেখছো?
:- কি বলি এখন, কিছুই মাথায় আসছেনা।(মনে মনে)
ভাইয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আইসক্রিম আর চকোলেট। যাক একটা কিছু বলি এবার। 
:-আমি তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম
:- আমার জন্য কেন?
:- আমি তো জানি,আমার ভাইয়া আমার জন্য আইসক্রিম আর চকোলেট নিয়ে আসবে এজন্যই তো আমি ঘুমোইনি।(আদুরে গলায়)
:- থাক থাক বুঝি আমি । এই নে তোর আইসক্রিম আর চকোলেট। আর বেশি রাত জাগবিনা

সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় হৃদয়ের সাথে দেখা।
:- আরে আদি ভাই যে।
:- আমি আদিত্য, আদি ভাই না।
:- আমি আদি ভাই বলেই ডাকবো
:- না
:- ঐ চুপপপপপপ!!! 
রাগ দেখান কারে? একদম হাত-পা ভাইঙ্গা দিমু
:-কি ডেঞ্জারেস মেয়েরা বাবা। আমার হাত পা ভাঙ্গলে আমার গফের কি হবে?
:- কিহ্!! গফ! তাও আবার আপনার?
:- কেন আমার কি গফ থাকতে পারেনা?
:- না তেমন না। গফ জুটাইলেন কেমনে বুঝিনা 
:- এই মেয়ে আমাকে কি মনে করেন আপনি?
:- কেন মানুষ। (মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকিয়ে)
:- আচ্ছা আপনাকে পরে সব বলবো। এখন আপনি প্রাইভেটে যান।
:- ওকে বাই।

প্রাইভেটে যাওয়ার সময় একটা গাড়ি সামনে এসে পড়লো। গাড়ি থেকে একজন ভদ্রলোক বেরিয়ে এলো।
:- মামনি একটু শুনো তো। (ভদ্রলোক)
:- জ্বী বলেন।
:- আকাশকে চিনো?
:- হিহিহি আকাশকে আবার কে না চিনে।
:- কোথায় আকাশ, আমাকে বলতে পারবে?
:- কেন পারবোনা। ঐতো মাথার ওপর
:- কোথায়?
:- আজিব। এত্তবড় আকাশ আর আপনি চোখে দেখেন না?
:- হাহাহা, দুষ্টুমি করছো মামনি
:- সবাই শুধু বলে আমি নাকি দুষ্টুমি করি। কিন্তু আমি যে কত্ত ইনোসেন্ট তা কেউ বুঝেইনা
:- আচ্ছা মামনি তুমি যাও, আমিই খুঁজে নিচ্ছি। আর হ্যাঁ তুমি কিন্তু সত্যিই দুষ্টু তবে অনেক ভালো
:- হিহিহি ধন্যবাদ চাচ্চু।

প্রাইভেটে গিয়ে স্যারকে সালাম দিয়ে বসলাম।
:- কি ব্যাপার তানিশা, এত লেট কেন?
:- আর বলবেন না স্যার, কত যে কাজ আমার 
:- কিহ্! কাজ করা শুরু করছো কবে থেকে?
:- না স্যার এই কাজ সেই কাজ না। এইটা মানবতার কাজ
:- দুষ্টুমি করা ছেড়ে দিছো তাইলে?
:- কি যে বলেন না স্যার, আমি তো দুষ্টুমিই করিনা। আমি তো ইনোসেন্টের ডিব্বা
পেছনে দাঁড়িয়ে কে যেন বলে ওঠলো, দেখি দেখি ইনোসেন্টের ডিব্বা টা কে!!..........

২!!

পেছনে দাঁড়িয়ে কে যেন বলে ওঠলো, দেখি দেখি ইনোসেন্টের ডিব্বা টা কে!!
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার একমাত্র যম! আমার বেষ্টু জয়। ও সবসময় আমার এই ইনোসেন্টের বিষয় নিয়ে ঝগরা করবেই করবে। না জানি কোন জন্মের শত্রু আমি ওর!
:- কি হইছে? আমাকে এত দেখার কি আছে আগে দেখিসনি কখনো?
:- কে তুই? তানিশা? (জয়)
:- আজব তো! এমন একটা ভাব ধরেছিস মনে হয় তুই আমাকে চিনিসই না।
:- না ব্যাপারটা তেমন না। ব্যাপারটা হলো, আমি কোনো ইনোসেন্ট তানিশাকে চিনিনা। আমি হারামী এবং দুষ্টু তানিশাকে চিনি।
:- দেখ, আমাকে রাগাবিনা একদম, তাহলে পরে বুঝাবো আমি কে!
:- আপনাকে বোঝাতে হবেনা মহারাণী। আমি আপনাকে হারে হারে চিনি।
:- এবার তোকে শিরায় শিরায় চিনাবো।

প্রাইভেট শেষ করে বেরিয়েছি।
:- ঐ জয় শোন
:- কি?
:- আমাকে তোর বাইকে করে বাড়িতে দিয়ে আয় তো।
:- কোন দুঃখে?
:- দুঃখে তো বলিনি, সুখে দিবি।
:- কি সুখ শুনি?
:- ঐটা যেতে যেতে বলবো।
:- ঠিক আছে ওঠ।
:- বইগুলা একটু ধর।
বাইকে ওঠে বসে বসে ভাবছি জয়কে কিভাবে একটু নাজেহাল করা যায়। কি যে করি ধুর কিছুই মাথায় আসছেনা।
:- তানিশা
:- (চুপ)
:- ঐ তানিশা (একটু জোরে)
:- কি...কি!!! এত্তজোরে ষাড়ের মত চিল্লাস কেন?
:- কখন থেকে ডাকছি, শুনছিসনা।
:- হু বল কি বলবি।
:- আমি কি বলবো, বলবি তো তুই। আর কি এত ভাবছিস?
:- জয়, বাইক পিছনে নে।
:- মানে?
:- মানে আবার কি, ব্যাক কর।
:- কিন্তু কেন?
:- ফুসকা খাবো।
:- না, এখন ফুসকা খেতে হবেনা।
:- তুই ফুসকা খাওয়াবি নাকি আমি বাইক থেকে লাফ দেবো? পরে কিন্তু বুঝিসই, আমার ভাইরা তোর কি অবস্থা করবে!
:- ঠিক আছে, ঠিক আছে নিয়ে যাচ্ছি।

অনেকদূর রাস্তা আবার ব্যাক করলো। ভালো হইছে, খুশি হইছি। পেট্রোল তো অপচয় করিয়েছি এবার টাকাও শেষ করবো।
:- ফুসকা দিতে বল
:- তানিশা
:- কি?
:- আমি কি তোর চাকর? (রেগে)
:- এমা!! ছিহ্ ছিহ্ এসব তুই কি বলিস? তুই চাকর কেন হবি? দশটা না পাঁচটা না আমার একটা মাত্র কলিজার টুকরা তুই।
:- পাম দেওয়া টা তো ভালোই শিখছিস দেখছি।
:- হ্যাঁ তোর আর আদিত্যর কাছে শিখেছি হিহি
:- ঐ, আদিত্য কে?
:- আদিত্য কে?
:- প্রশ্নটা আমি তোকে করেছি তানিশা।
:- আরে গাধা, আদিত্য তো সবার মাঝেই আছে।
:- মানে?
:- মানে আদিত্যর আদি আর বজ্জাতের কাদি হিহি। আর সবাই তো বজ্জাত
:- এসবের মানে কি তানিশা? মশকরা করিস?
:- সত্যি বলবো নাকি মিথ্যা?
:- অবশ্যই সত্যি বলবি।
:- তাহলে বলি?
:- বল
:- বললাম।
:- আরে বল
:- বললাম কিন্তু
:- বল না!! (রেগে)
:- আমাদের পাশের ফ্লাটে যে আকাশ ভাইয়ারা থাকে তাদের বাড়িতে একটা ছেলে এসেছে ওর নাম আদিত্য
:- ঐ তোর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নাই তো?
:-উস্টামু। কি বলিস এগুলা।
:- সত্যি তো?
:- আচ্ছা, তুই কি এখন আমায় ফুসকা খাওয়াবি নাকি গোয়েন্দাগিরি করবি?
:- আচ্ছা তুই বস আমি বলে আসি।

গুনেগুনে পুরো তিন প্লেট ফুসকা আর একটা আইসক্রিম খেয়েছি।
:- আহ্ এখন পেট টা শান্তি, জয়!
:- এবার বিলটা দে
:- কিসের বিল?
:- কিসের বিল মানে? এই যে এতক্ষণ যে তুই রাক্ষসের মত গান্ডেপিন্ডে গিললি, এইগুলোর বিল দেবে কে?
:- কে আবার? তুই দিবি
:- আমি কেন দেবো?
:- তো, তুই কি ভেবেছিস আমি দেবো।
:- খাওয়ার সময় তো আমায় একটুও দিলিনা।
:- জয় জানু, তুই তো খুব ভালো করেই জানিস ফুসকা, চকোলেট, আইসক্রিম & আচার এই খাবারগুলোতে নো কম্প্রোমাইজ!
:- তুই সত্যিই একটা চিজ বুঝলি।
:- আমি বুঝে কি করবো? তুই বুঝছিস নাকি সেটা বল।
:- ঐটা আর বলতে হয়!!
:- প্রাইভেটে তখন বলেছিলাম না, আমি কি ঐটা তোকে এবার শিরায় শিরায় বুঝাবো?
:- হ্যাঁ এবার সত্যিই বুঝছি। (অসহায় ভাবে)
:- যা, বিলটা দিয়ে আয় আর আসার সময় দুইটা কিটকাট নিয়ে আসবি।
:- চকোলেট আনতে পারবোনা আমি।
:- তুই পারবি, তোর ভাইসহ পারবে।
:- তাহলে ভাইকেই বল।
:- শোন ভাইকে বললে শুধু চকোলেটের কথা বলবো না, সাথে বলবো যে তুই আমাকে ভালোবাসার কথা বলিস। হিহিহি
:- তুই আর ভালো হলিনা। (রেগে)
:- হিহিহি জয়, তুমি সবসময়ই হবে আমার কাছে পরাজয়।
:- কে বলবে তোকে ইনোসেন্টের ডিব্বা, তুই সত্যিই দুষ্টুর ডিব্বা (মুচকি হেসে)

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে জয় আমাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে চলে গেছে। বাড়িতে ঢোকার আগে ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, আদিত্য তাকিয়ে আছে, ইশারায় জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা কে। আমি কিছু না বলে চুপিচুপি ছাদে চলে গেলাম। আস্তে আস্তে, টিপটিপ পায়ে পেছন থেকে আদিত্যের চোখ ধরায়, আদিত্য একটি মেয়ের নাম বললোঃ
:- অনুগতা?
:- (চুপ)
:- কি হলো বলেছি তো। এবার চোখ খুলো অনুগতা।
:- ধুর হয়নি, আমি কোনো অনুগতা ফনুগতা নই, আমি তানিশা। (চোখ ছেড়ে দিয়ে)
:- ওহ সরি। ভুলে বলে ফেলেছি। (নিচুস্বরে)
:- বুঝলাম কিন্তু এই অনুগতা কে?
:- চিনবানা তুমি।
:- সব মানুষকে যে চিনতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। বলেন আপনি
:- সবকিছু যে জানতে হবে এমনও তো কোনো কথা নেই। সো বাদ দাও
:- ঢং যত্তসব।
বাই বলে চলে আসছিলাম,
:- দাঁড়াও তানিশা। (আদিত্য)
:- কি?
:- ঐ ছেলেটা কে?
:- কোন ছেলেটা?
:- ঐ যে একটু আগে যে তোমাকে বাইকে করে দিয়ে গেলো।
:- কেন?
:- এমনি। 
:- এমনি কেন?
:- এমনি কি বলা যায় না?
:- কি দরকার শুনি? তাছাড়া আপনি ওকে চিনবেন না।
:- তাও বলো শুনি।
:- সবার কথা কেন জানতে হবে শুনি?
:- আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো?
:- মনে করেন তাই!
:- সবাই যে বলে, ঠিকই বলে।
:- সবাই কি বলে?
:- এই যে, তুমি যে দুষ্টুর ডিব্বা।
:- ঐটা তো আমিও জানি (চোখ মেরে)
:-হায় আল্লাহ্ (অবাক হয়ে)

সিড়ি দিয়ে গান গাইতে গাইতে নামতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম।
:- মাআআআআ!!! (চিৎকার দিয়ে)
:- কি, কি হয়েছে তোর তানিশা? (রুম থেকে বেড়িয়ে)
:- সিড়ি থেকে পড়ে গেছি।
:- কি করে পড়লি? (মা)
:- এখন, কি আর একবার পড়ে দেখাবো! (রাগ করে)
:- অযথাই রাগ করিস। আয় আমাকে ধরে ধরে ভেতরে চল।
:- উফফফ, আমি তো ওঠতেই পারছিনা আম্মু।
:- ঐ তো তোর ভাইয়া এসে পড়ছে। (ভাইয়াকে দেখিয়ে)
পরে ভাইয়াই আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখি আদিত্যও ছাদ থেকে নেমেছে হয়তো আমার চিৎকার শুনেছে।

রুমে এসে ডাক্তার পা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে একটু ঘুমোতেও বললো।
বিকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে দেখি,টিভি নাই রুমে। টেবিলে ল্যাপটপও দেখছিনা। ওঠে যে দাঁড়াবো তাও পারছিনা। ফোন দেবো, সারা বিছানা তন্নতন্ন করে খুঁজেও আমার ফোন পাচ্ছিনা। কোথায় গেলো!!!
হায় হায়!!!

৩!!

টিভি, ল্যাপটপ, ফোন কোথাও পাচ্ছি না। কেমনটা লাগে। গেলো কই সব।
:- আম্মু, ও আম্মুউউউ
:- কি হয়েছে? ঘুম থেকে কখন ওঠলি? কিছু লাগবে তোর? (মা)
:- আরে বাপ!! আগে তো শোনো আমি কি বলি।
:- আচ্ছা বল। কিছু খাবি?
:- ধুর!!!! আমার ফোন, ল্যাপটপ, টিভি এইগুলা কই?
:- জানিনা আমি
:- মিথ্যা বলবা না একদম। বলো তাড়াতাড়ি।
পাশের থেকে ভাইয়া এসে বললো,
:- আমি বলছি। টিভি, ফোন, ল্যাপটপ এইগুলো এখন সব বন্ধ।
:- কেন, আমার অপরাধ কি?
:- অপরাধ তো অনেক কিছু, তবে এখন কিছু বলবোনা আগে সুস্থ হও তারপর বলবো। 
:- কিন্তু আমি ঘরে একা বসে করবোটা কি?
:- আমি তোমার ফ্রেন্ডদের ফোন দিচ্ছি, ওদের সাথে আড্ডা দাও।
:- ওদের কি পড়াশোনা নাই যে, সারাক্ষণ আমার কাছে এসে বসে থাকবে।
:- তাহলে গল্পের বই পড়বে।
:- ভাইয়া, এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা। টিভিটা তো দাও।
:- না
:- কেন?
:- টিভিতে এইসব গান-টান দেখার কারণে তোমার আজ এই অবস্থা।
:- আজব তো! টিভির সাথে আমার পড়ে যাওয়ার সম্পর্কটা কি?
:- তুমি নাচতে নাচতে সিড়ি থেকে পড়ে গেছো। রাইট?
:- হুম (নিচুস্বরে)
:- সো, কথা কম। খেয়ে, ওষুধ খাবা। ভালো না লাগলে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ো।

:-কি বোরিং লাইফে পড়লামরে বাবা। সময় কিছুতেই কাটেনা। একটু গান শুনবো তারও কোনো উপায় নেই। কিভাবে যে একটা মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হয়।
:- তানিশা, দেখ কে এসেছে। (আম্মু)
:- আমি কি সং সেজে বসে আছি যে, আমাকে দেখতে আসবে কেউ।
:- আরে দেখনা, আদিত্য এসেছে। ওর সাথে গল্প কর, আমি চা নিয়ে আসি।
:- এখন কেমন আছো? (আদিত্য)
:- ভালো খারাপ দুইটাই।
:- কেন?
:- জানিনা।
:- রাগ করছো 
:- কার ওপর?
:- কারো ওপর না। (নিচুস্বরে)
:- মতলবটা কি আপনার? হঠাৎ আমার কাছে কেন এসেছেন?
:- না, এমনি তোমাকে দেখতে এসেছি।
:- আমাকে দেখার কি আছে? আগে কখনো দেখেননি?
:- তুমি তো অসুস্থ তাই।
:- আমি তো অসুস্থ না।
:- তাহলে?
:- আমার পা অসুস্থ
:- হিহিহি, তুমি এত দুষ্টুমি যে কি করে পারো।
:- আচ্ছা এবার কি বলবেন, অনুগতা কে?
:- অনুগতা আমার জিএফ। ওর সাথে ঝগরা করেই আকাশ ভাইয়াদের বাড়িতে এসেছি।
:- কেন?
:- শুধু শুধু ঝগরা করে আর সন্দেহ করে। তাই আর সহ্য হয়নি।
:- ধুর সন্দেহ করে তাতে কি, সন্দেহ দূর করলেই তো পারেন।
:- হুম, এখন শুধু বারবার ফোন দিয়ে সরি বলে।
:- বাহ্ ভালো তো। তাহলে ক্ষমা করে দিন।
:- হুম ভাবছি, একটা সারপ্রাইজ দিয়ে ক্ষমা করে দেবো তাই কালকে পার্কে আসতে বলেছি, ওকে সারপ্রাইজ দিবো বলে।
:- ওহ আচ্ছা খুব ভালো।
এরমধ্যেই জয় যে কখন এসেছে কে জানে। এসেই বললো,
:- হ্যাঁ ভালোই তো। ভালো না!! তা কবে থেকে এসব চলছে শুনি?
:- জয়, কি বলছিস এসব তুই।
:- এখনো তো কিছুই বলিনি। এই তোর সেই আদিত্য তাই না, যার কথা তখন আমায় বলছিলি।
:- তুই যা ভাবছিস, তা ঠিক না।
:- রাখ তোর ঠিক, বেঠিক আমি চললাম,
বলেই চলে গেলো!!
:- ওর নাম জয়? (আদিত্য)
:- হুম
:- কি হয় তোমার?
:- বেষ্টু আর হাবি
:- কি বলো!
:- হুম ঠিকই বলি। ওর আব্বু আর আমার আব্বু বেষ্টফ্রেন্ড। সেই সূত্রেই জয় আর আমি বেষ্টফ্রেন্ড। জয় আমাকে ভালোবাসে আমি জানি, কিন্তু ভয়ে বলতে পারেনা।
:- ওহহ। এখন যে তোমাকে ভুল বুঝলো
:- কি আর করবো, কাল রাগ ভাঙ্গাতে হবে।
:- ওহ আচ্ছা, তাহলে এখন তুমি রেষ্ট নাও আমি যাই।
:- আচ্ছা

রাতে ডিনার করে শুয়ে আছি। কি করে জয়ের রাগ ভাঙ্গাবো বুঝতেছিনা। এতদিন জানতাম মেয়েরা হিংসুটে হয়, এখন দেখছি ছেলেরাও হিংসুটে হয়। ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি।
সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে, সুন্দর করে বিছানায় বসে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছি,
:- সকালে ওঠে আমি জোড়ে জোড়ে বলি, সারাদিন আমি যেন দুষ্টুমি করতে পারি।
চোখ বন্ধ করে সমানে বলেই যাচ্ছি। কয়েকবার বলার পর চোখ খুলে দেখি,
ভাইয়া, আব্বু, আম্মু, ভাবি, আপু সবাই ঘুমঘুম চোখে রাগ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
:- কি হয়েছে তোমরা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
:- সকাল সকাল কি শুরু করছিস? (আম্মু)
:- কেন, প্রার্থনা করলাম।
:- এইটা কেমন প্রার্থনা? (আপু)
:- দুষ্টুমির প্রার্থনা।
:- সকাল সকাল শুরু করে দিয়েছিস? (ভাইয়া)
:- আরে ভাইয়া, বুঝোনা সকাল সকাল প্রার্থনা করলে মনটা ফ্রেশ হয়।
:- হু বুঝছি। এবার ঘুমাতে দেন আফা।
:- ঐ, আফা কি? (রেগে)
:- ওহ সরি, আমার কলিজা।

সকালে রেডি হয়ে জয়ের বাসায় গেলাম।
গিয়ে দেখি জয় ঘুমুচ্ছে। দাঁড়াও ঘুম ছুটাচ্ছি তোমার মি. জয়! কিন্তু কি করি, কি করি!! হুম পেয়েছি সেফটিপিন। সেফটিপিন দিয়ে দিলাম জোড়ে একটা খোঁচা!!
:- উফফফ!! 
:- ঐ চুপ চেঁচাস কেন? (মুখ চেপে ধরে)
:- তুই এখানে!!
:- আমি আসিনি তোর বউ আসছে।
:- আমার বউ কে?
:- কে আবার! আমি (একটু ভাব নিয়ে)
:- আজ এত ভালোবাসা। মতলবটা কি পাগলী?
:- মতলবটা রাগ ভাঙ্গানো। এখন ওঠ ফ্রেশ হয়ে আয়, কলেজে যাবো। কলেজ শেষ করে ঘুড়তে যাবো।
:- আচ্ছা।
জয় রেডি হওয়ার পর জয়কে নিয়ে কলেজে গেলাম। কলেজে যাওয়ার পথে এক সিনিয়র ভাইয়ার সাথে খেলাম ধাক্কা। সকাল সকাল মেজাজটাই খারাপ করে দিছে, এর মজা তো দেখাতেই হবে। 
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি, ছেলেটি বটগাছের নিচে বসে আছে। সাথে তার কিছু ক্লাশমেট। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি আমার কলমটা ঠিক তার পেছনে ফেললাম। কলম তোলার বাহানায় ওর পেছনে গিয়ে সেফটিপিন দিয়ে জোরে খোঁচা দিয়ে বটগাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছি। কেউ অবশ্য আমাকে দেখেওনি।
:- আল্লাহ্ রে!! (চিৎকার করে)
:- কি হয়েছে তোর? (ভাইয়াটার ফ্রেন্ড)
:- কি যেন পিঠে বিধলো?
:- কি বিধলো?
:- কেউ মনে হয় খোঁচা দিছে।
:- এখানে তো কেউ নাই, কে খোঁচা দিব।
আমি ওদের কথা শুনছি আর হাসছি। কোথথেকে জয় এসে, আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
:- কি হলো জয়, এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
:- (চুপ)
জয় কোনো কথাই বলছেনা। কিছুক্ষণ পর একটা পার্কে নিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড় করালো।
:- কি সমস্যাটা কি তোর? (জয়)
:- কই সমস্যা?
:- তুই কি এই দুস্টুমি ছাড়বিনা?
:- কি করেছি আমি?
:- কি করেছিস মানে। ঐ ভাইয়াটাকে সেফটিপিন দিয়ে খোঁচা দিলি কেন?
:- আমার কোনো দোষ নাই। উনি আগে ধাক্কা দিলো কেন?
:- ঐটা তো উনি ইচ্ছে করে না ও দিতে পারে।
:- তাহলে তো সরি বলতো। সরি বললো না কেন?
:- তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
জয়ের বকাঝকা আর সহ্য হচ্ছেনা। হঠাৎ একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি এলো মাথায়।
সামনে একটা ছেলে আর মেয়ে বসে আছে। পেছনদিকে থেকে ছেলেটাকে ডাক দিলাম।
:- এই যে, এক্সকিউজ মি একটু শুনুন।
ছেলেটা আমার দিকে তাকাতেই আমি জয়ের সামনে ছেলেটাকে একটা ফ্লাই কিস দিলাম!!
ছেলেটার সাথে বসে থাকা মেয়েটা বসা থেকে ওঠে গেলো, ছেলেটিও। মেয়েটি রাগী চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে, আর জয় রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি অবাক চোখে ছেলেটার দিকে আর ছেলেটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ছেলেটা আর কেউ নয়, ছেলেটা আদিত্য!!!!
যাহ্, বাব্বাহ্ এবার তো আদিত্য আর আমার দুইজনের কপালেই দুঃখ আছে। মেয়েটা অলরেডী আদিত্যকে মার দেওয়া শুরু করে দিছে, মেয়েটা মনে হয় অনুগতা। পাশে তাকিয়ে দেখি জয় নাই। হায় হায়, জয় কই গেলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি জয় রাগ করে চলে যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে জয়ের সামনে দাঁড়ালাম।
:- সরি জয়
:- সামনে থেকে সর
:- সরি বললাম তো। তুই একটু বস এখানে আমি তোকে সব বলে বুঝাচ্ছি।
জয়কে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসেছি আর আদিত্য ও অনুগতার কথা বলছি।
:- ঐ তোর মুখে কি? (জয়)
:- সেন্টার-ফ্রুট
:- মুখ থেকে ফেল ঐটা। কি হলো তাকিয়ে আছিস কেন, ফেল ঐটা।
:- হু ফেলছি।
:- হুম বল এইবার।

তারপর আদিত্য আর অনুগতার কথা সব জয়কে বললাম। জয়ের রাগ ভেঙ্গে গেছে। ওখান থেকে ফুসকা খেয়ে আসার পর জয় আমাকে বাড়ির গেটের সামনে নামিয়ে দিয়েছে। ওর মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে গিয়ে দেখে, চুলে চুইঙ্গগাম লাগানো।
ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো সাথে সাথে জয়ের,
:- তুই আর ভালো হবিনা তাইনা, দুষ্টুর ডিব্বা আমার!!
:- হিহিহি।



***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন