পাশের বাড়ির আন্টি - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - অনু গল্প

পড়ুন মুন্নি আক্তার প্রিয়া'র লেখা একটি অনু গল্প পাশের বাড়ির আন্টি
পাশের বাড়ির আন্টি
পাশের বাড়ির আন্টি by মুন্নি আক্তার প্রিয়া

অনলাইনে একটিভ থাকা আমার ফ্রেন্ডগুলা হচ্ছে আমার কলিজা। পরীক্ষার মধ্যেও যখন ওদের অনলাইনে দেখি ইশ! কি যে ভালো লাগে। এটা ভেবে ভালো লাগে যে, ওরাও আমার মত পড়তে বসেনা। এইক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হচ্ছে আরাফ। বান্দায় দিন আর রাত নাই সারাক্ষণই অনলাইনে থাকবে। এজন্যই ওরে আমার এত পছন্দ। আরাফ আমাদের পাশের বাড়িতেই থাকে।
পরীক্ষা চলতেছে আমাদের। রাত পোহালেই পরীক্ষা। কিন্তু মন কিছুতেই পড়ায় বসতেছে না। বইটা বন্ধ করে সব রুমগুলোতে উঁকি দিয়ে দেখে আসলাম কে কি করে! আব্বু রুমে ঘুমাচ্ছে। আর আম্মু, খালামনিরা, নানু টিভিতে সিরিয়াল দেখছে। এখন আর আমার রুমে আসার মত কেউ নেই। তাই চুপিচুপি ফোনটা নিয়ে বসে পড়লাম। অনলাইনে ঢুকেই একটিভ লিষ্টে আমার জান বন্ধু আরাফকে খুঁজলাম। আহ্! চ্যাট লিস্টের প্রথমেই আরাফ। সাথে সাথে ম্যাসেজ দিলাম,
"কিরে আরাফ? কি করিস?"
"বসে আছি রে। তুই কি করিস?"
"আমিও। মামা কাল তো পরীক্ষায় ফেইল করুম নিশ্চিত।"
"হ তা আর বলতে হয়।"
"তুই যে পড়তে বসিস না আন্টি কিছু বলে না?"
"মা তো সিরিয়াল দেখে। তোর মা কিছু বলে না?"
"আরে আমার মাও তো সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত। কি মিল আমগো দেখছোস?"
"হ জানু।"
ঐদিনের মত চ্যাটিং করে, নিউজফিড স্ক্রল করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে রেডি হয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম। প্রশ্ন পাওয়া মাত্রই সবাই লিখা শুরু করে দিছে। অদ্ভুত বিষয়! আরাফও লিখতেছে। কিন্তু ও কি লিখে? নিশ্চয় বানিয়ে বানিয়ে সাহিত্য রচনা করতেছে হাহাহা! আরিব্বাস! ক্রাশ স্যার আজকে গার্ডে আসছে। আজ লেখা বাদ দিয়া স্যাররেই দেখুম। আরাফ আমার সামনের সীটে বসেছিল। কলম দিয়ে খোঁচা দিয়ে বললাম,
"দেখ স্যাররে নীল শার্টে কি সুন্দর লাগতেছে।"
"প্রিয়ু লেখা বাদ দিয়া কি শুরু করলি? চুপচাপ লেখ।"
"এহ্! পারেনা কিছু আবার লিখে। আমাকেও লিখতে বলে হিহিহি।"
এভাবেই দেখতে দেখতে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।

রেজাল্টের দিনঃ
মা আমার সামনে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষুনী প্রকাণ্ড ঝড় শুরু হবে। যাকে বলে কালবৈশাখীর ঝড়। হুট করেই পাশের বাড়ির আন্টি মানে আরাফের মা বাসায় আসে।
"বাসায় ভাবী আছে নাকি?"
আন্টির গলার আওয়াজ পেয়েই খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম। আরাফও নিশ্চয় ফেইল করেছে তাই মায়ের সাথে দুঃখ শেয়ার করতে আসছে।
মা ঝাড়ু রেখে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বললো,
"হ্যাঁ ভাবী বসেন।"
"আপনাদের জন্য মিষ্টি নিয়ে আসলাম।"
"কিসের মিষ্টি?"
"আরাফ পাশ করেছে পরীক্ষায়।"
"আলহামদুলিল্লাহ্‌। "
আন্টি মুখ টিপে হেসে বললো,
"প্রিয়ুর কি অবস্থা?"
আম্মু আমার দিকে একবার রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর জোর করে মুখে হাসি টেনে বললো,
"ঐ আরকি! আপনি বসেন আমি চা নিয়ে আসি।"
মা চলে যেতেই আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম,
"এটা কিভাবে সম্ভব? আরাফ কিভাবে পাশ করলো আন্টি?"
"নিঞ্জা টেকনিক মামনী।"
"এ্যা? সারাদিন রাত অনলাইনে থেকে কিভাবে পাশ করলো?"
"আরে অনলাইনে তো একটিভ আমি ছিলাম। আর আরাফ তো পড়ছিল। ওকে কি আমি ফোন ধরতে দিয়েছি নাকি।"
আন্টির কথা শুনে আমি অবাক হওয়ার চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। আন্টি শয়তানি মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো,
"তোমার সাথে চ্যাটিংও আমিই করেছি। সিরিয়াল দেখতে দেখতে।"
এবার আমার মুখ বড়সড় হা হয়ে গেলো। মুখ টিপে হেসে হেসে জোরে মাকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
"আমি বাসায় যাই ভাবী। আরো মেহমানদের মিষ্টি দিতে হবে। আমি বরং পরে আসবো কেমন! আর প্রিয়ুর দিকে একটু খেয়াল রাইখেন ভাবী। মোবাইলটা পারলে ভাইঙ্গা ফেইলেন।"
আন্টি চলে যাওয়ার পর পিছনে তাকিয়ে দেখি, মা দুই হাতে দুইটা ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর আগে ছিল একটা। এবার আন্টির মশলা মাখায় আরো একটা যোগ হয়েছে। প্রিয়ুরে আজ তুই শেষ! এ কেমন পাশের বাড়ির আন্টি!



***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন