তেলাপোকার অত্যাচার - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - অনু গল্প

পড়ুন মুন্নি আক্তার প্রিয়া'র লেখা একটি অনু গল্প তেলাপোকার অত্যাচার
তেলাপোকার অত্যাচার
তেলাপোকার অত্যাচার by মুন্নি আক্তার প্রিয়া

গাছ থেকে ভাইয়া এক ঝুড়ি লিচু পেরে দিয়েছে। ওগুলোই এখন কাজিনদের সাথে বসে খাচ্ছি। আমি আবার লিচু উল্টো করে ছিলি পোকার ভয়ে। পোকাগুলো দেখলেই গা কেমন ঘিনঘিন করে, প্রচন্ড রকম ভয় পাই।
তো মনের আনন্দে লিচু খাচ্ছিলাম এর মধ্যেই হঠাৎ করে ছোট বোনটা হাত ছিটকে চিৎকার দিয়ে উঠলো। নিশ্চয় লিচুতে পোকা পেয়েছে! হারামজাদী আর মানুষ পেলো না আমার দিকেই ছুড়ে মারলো। ভয়ে পিছাতে গিয়ে ঠাস করে ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খাই। কিন্তু এ কি, এ তো লিচুর পোকা না এটা তো তেলাপোকা!
পিছন ঘুরে ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আমার চোখ যেন ছানাবড়া। ভাইয়ার ফোনটা মাটিতে পড়ে আছে আর ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
- এটা কি করলি? (ভাইয়া)
- আমি তো কিছু করিনি ভাইয়া।
কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফোনটা তুলে দেখি, নাহ্ ফোনটা ভাঙ্গেনি। হাসিমুখ করে ভাইয়াকে বললাম,
-ভাইয়া ফোন তো ভাঙ্গেনি দেখো।
ভাই মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলে,
- কিন্তু রিলেশনটা এবার ভাঙ্গবে আমার তাও তোর জন্য। এমনিতেই স্নিগ্ধা(ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড) সন্দেহবাদী, শুধু সন্দেহ করে। আর এরকম হুটহাট করে কল কেটে যাওয়ায় না জানি কি করে।
কথাগুলো বলেই ভাইয়া মুহূর্তের মধ্যে রাগি দৃষ্টি নিয়ে বলে,
- এই তেলাপোকার ভয়ে এত কিছু না? আজ তোকে এই তেলাপোকাই আমি খাওয়াবো দাঁড়া।

আমি আর সেখানে এক মুহূর্ত দেঁড়ি না করে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলাম। 

নদীর পাড়ে এসে বসে আছি। এখন বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই ভাবলাম নিশানকে(আমার বয়ফ্রেন্ড) ফোন দেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ফোন দেওয়ায় ওপাশ থেকে নিশান বললো,
- হ্যালো বাবু, কেমন আছো?
- ঐ তোমাকে না কতবার বলছি আমাকে বাবু বলবা না। আমার নাম ধরে ডাকবা।
- কিন্তু আমি তো আদর করে বাবু ডাকি বাবু।
- রাখো তোমার আদর। নদীর পাড়ে আসো আমি অপেক্ষা করছি।
- নদীর পাড়ে কেন বাবু?
(বলে রাখা ভালো, নিশান পানি দেখলে ভয় পায়। সাঁতার জানে না। এর আগে একবার নৌকায় ঘুরতে গিয়ে নাকানিচুবানি খেয়েছিল ভাগ্যিস মাঝি বাঁচিয়েছিল)
- এত কথা না বলে ৫ মিনিটের মধ্যে আসো। রাখলাম।

মিনিট দশেক পরেই নিশান আসলো।
- বাবু? (নিশান)
- ফিডার আনছো?
- কেন বাবু ফিডার দিয়ে কি হবে?
রাগে দাঁত কটমট করে বললাম,
- খাবো।
- সে কি বাবু! তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে?
- নাহ্! তুমি যেই পরিমাণ বাবু বাবু করো নিজেকে আমার বাচ্চা বাচ্চা লাগে।
- স্যরি বাবু।
- হায় খোদা কারে যে কি বলি!
বাদ দাও, অফিসে যাও নাই?
- গিয়েছিলাম। তুমি ফোন দিলে তাই চলে আসলাম।
- বাহ্ এত্ত ভালোবাসো আমায়।
আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে নিশানের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছিলাম।
হঠাৎ করেই মনে হলো জামার উপর দিয়েই পিঠে কিছু হাঁটাচলা করছে।
- নিশান দেখো তো আমার পিঠে কি!
নিশান পিঠে তাকিয়ে ওটাকে ধরে আমার সামনে এসে হাসতে হাসতে বলে,
- আরে এটা তো তেলাপোকা
নিশানের হাতে তেলাপোকা দেখেই ভয়ে ওর হাত ঝটকা দিতে গিয়ে ওকেই ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিছি।
- হায় আল্লাহ্ এটা কি হলো। 
ওদিকে আমার নিশান আবারও নাকানিচুবানি খাচ্ছে। নিজেই তো সাঁতার পারিনা, ওকে কি করে বাঁচাবো!
শেষে এক প্রতিবেশী চাচাকে দিয়ে ওকে পানি থেকে তুলেছি। ওর বন্ধুদের ফোন দিয়ে ওকে বাসায় পৌঁছে দিতে বললাম।

বিকালে আরামসে ঘুম দিচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি নিশান ফোন দিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রিসিভ করলাম। মুখে কতগুলা মধু ঠেলে বললাম,
- জান এখন কেমন আছো?
ওপাশ থেকে নিশান কর্কশ কন্ঠে বললো,
- বিশ মিনিটের মধ্যে কলেজ গেটের সামনে আসো।
ওর এমন কর্কশ কন্ঠে কথা শুনে বললাম,
- এই সময়ে কলেজে কেন জান?
- আসতে বলছি আসো,
বলেই ফোনটা রেখে দিছে।

আমি লক্ষী গার্লফ্রেন্ডের মত ওর কথামত পৌঁছে গেলাম
- কি হয়েছে জান? এখন কেমন আছো?
- দেখতে পাচ্ছো না কেমন আছি। আর তেলাপোকা? তেলাপোকা দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে আমায় একটু বলো তো?
- কই আমি তো ভয় পাইনা (কন্ঠস্বর নিচু করে)
- হ্যাঁ তার পরিণতি তো আজ দেখতেই পেলাম। শুনেছি তেলাপোকা দেখে মেয়েরা নাকি ভয়ে ছেলেদের জড়িয়ে ধরে আর তুমি কি করলে? আমাকেই ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলে।
- স্যরি জান। আমি তো ইচ্ছে করে করিনি।
আর কি যেন বললে? জড়িয়ে ধরতে হবে? দাঁড়াও এক্ষুনী ধরছি।
ওর সামনে আগাতে গিয়ে ইটের সাথে উস্টা খেয়ে যেই না পড়ে যাওয়া ধরছি, নিশান আমার হাত ধরলো। নিজেকে সামলাতে গিয়ে নিশানকে ফেলে দিছি।
না, না শুকনো মাটিতে না একদম কাঁদায়।

ওখানে আর দেড়ি না করে পালিয়ে বাসায় চলে আসছি। আমার ব্রেকাপ যে হবেই এটাও কনফার্ম হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যায় নিশান ফোন দিয়েছে। ভয়ে ধরিনি। কিছুক্ষণ পর টেক্সট করেছে,
- তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা সম্ভব না। যে মেয়ে তেলাপোকার ভয়ে বয়ফ্রেন্ডকে পানিতে, কাঁদায় ফেলে দিতে পারে সে যে বিয়ের পর কি করবে তা বুঝতে আর বাকি নেই।
(নিশান)

নিশানের ম্যাসেজটা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। সেই কষ্টে আমি ২ প্লেট বিরিয়ানি, ৩টা সেভেনআপ খেয়ে ভং ধরে বিছানায় পড়ে আছি।
আম্মু এসে বলে,
- কিরে এভাবে শুয়ে আছিস কেন?
- আম্মু নিশান ব্রেকাপ করছে।
- নিশান না একটু আগেই আমাদের বাসায় আসলো।
- কি বলো? কেন? 
- তোর তেলাপোকার ভয় পাওয়া নিয়ে গবেষণা করতে। এখন উঠ তুই পড়তে বস।

আম্মুর কথামত টেবিলে পড়তে বসেছি। কিন্তু ভাবছি নিশান আমার সাথে দেখা করলো না কেন! কেনই বা করবে এখন তো আমি আর ওর কেউ না। বই খুলে পড়তে বসতেই দেখি বইয়ের মধ্যে তেলাপোকা। পাজি বজ্জাত তেলাপোকা এতকিছু করেও তোর শান্তি হয়নি এখন আবার বই ছিড়তে আসছিস।
তেলাপোকাটা উড়ে নিচে নেমে গেল।
- শালার তেলাপোকা বজ্জাত তোর জন্য আমি ভাইয়ার সামনে যেতে পারিনা। তোর জন্য আমার নাদুসনুদুস গুলুগুলু বিএফ টা আমার সাথে ব্রেকাপ করলো।
আজ তোর একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে!

কি দিয়ে মারি কি দিয়ে মারি। পাইছি জুতা। না, না জুতা না স্যান্ডেল দিয়া বাইরামু তোরে। স্যান্ডেল দিয়া উরাধুরা মারা শুরু করছি কিন্তু বিধিবাম তেলপোকাটা পালিয়ে গেল, স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে দেখি, স্যান্ডেল ছিড়ে গেছে। তাও আবার আম্মার স্যান্ডেল।
আম্মু রুমে এসে বলে,
- আমার একটা স্যান্ডেল দেখছিস?

আমি ছেড়া স্যান্ডেলটা আম্মুর সামনে ধরলাম।
- কিরে ছিড়লি কেমনে?
- তেলাপোকা মারতে গিয়া।
- তেলাপোকা কই?
- পালিয়ে গেছে।
- হয় স্যান্ডেল জোরা লাগাবি নয়তো তেলাপোকার লাশ দেখাবি আমায় এখন।

অহন আমি কি করুম!!!!!!



***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন