সৌভিক থতমত খেয়ে মহা বিষ্ময়ে হা করে আছে। তার মাথা ঘোলাটে হয়ে গেছে, চিন্তাশূন্য হয়ে খারাপ অবস্থা। তাড়াতাড়ি ফোন কেটে ড্রাইভ করছে সে, দ্রুত আনসারী নিবাসে পৌঁছে মেহনূরকে সরিয়ে ফেলতে হবে। স্পিড বাড়িয়ে দ্রুততার সাথে গাড়ি ছুটালো, এদিকে মাহতিমের প্রখর বুদ্ধি দেখে প্রশংসা না করে পারলো না। দূর থেকেও সামান্য একটা ফোনকলের মাধ্যমে চরম একটা ব্যাপার ধরে ফেলেছে। ব্যাপারটা সাধারণ মানুষের ধরার কথা না, সামান্য একটা বাক্যের মধ্যে যেভাবে বেফাঁস কথা বেরিয়ে গেছে সেটা ভাবতেও গা ছমছম করছে। মেহনূর তার গলাব্যথার কথা কাউকে জানায়নি, অনেক রাত পযর্ন্ত যে মাহতিমের সাথে কথা বলেছে সেটাও ওই বাক্যের ভেতর স্পষ্ট। তার মানে একটা ব্যাপার পুরোপুরি স্পষ্ট, বাড়িতে কেউ ঘাপটি মেরে বসে আছে, সে টাইম-টু-টাইম বাড়ির ভেতরকার খবর বাইরে চালান দিচ্ছে। মাহতিমের কথামতো, তাড়াতাড়ি সৌভিক বাড়িতে পৌঁছে গেলো। সৌভিককে দেখে সবাই আশ্চর্য হলেও সৌভিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত মেহনূরকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলো। ডাক্তার কোনোভাবেই দূরগামী জার্নির জন্য সম্মতি দিচ্ছিলেন না। এদিকে নাছোড়বান্দা সৌভিক জিদ-ক্ষোভ দেখিয়ে হুঙ্কার করতে-করতে ডাক্তারকে হসপিটালে ফিরতে বললো। এই মূহুর্তে ডাক্তারকে কিছুই বলার সময় নেই। বাড়িতে কে সাধু সেজে বসে আছে সেটা মাহতিমও জানে না। বিপদ কতটা ঘন হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে কে জানে? মেহনূর নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে জেরা করতে শুরু করলে সৌভিক কোনোটাই উত্তর করলো না। চুপচাপ ঠাঁট বজায় রেখে শেষবারের মতো বলে ফেললো,
- সরি ভাবী। এ্যাক্সট্রেমলি ভেরি সরি। আমাকে প্লিজ বাধা দিবেন না, আমি যা করছি, যেমন করছি সবই কারো নির্দেশ মোতাবেক। আশাকরি আপনি আমার কথা বুঝেছেন। আপনি এই মূহুর্তে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি সব সময় মতো বলবো।
সুক্ষ্ম ইঙ্গিতটা বুঝতে দেরি করলো না মেহনূর। কথায়-আভাসে বুঝে গেছে মাহতিম দূর থেকে কড়া নির্দেশ চাপিয়ে দিয়েছে, মাহতিমের কথা অমান্য করা অসম্ভব! মেহনূর অসুস্থ হলেও নার্সের সহযোগিতায় রেডি হয়ে নিলো, মাহতিমের দেওয়া লাগেজটায় সবগুলো শাড়ি গুছিয়ে রুম থেকে বেরুলো। অনামিকা ও রজনী প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে, ড্রয়িংরুমে মেহনূর যখন সবার কাছ থেকে একে-একে বিদায় নিচ্ছে, তখন তারা দুজন একে-অন্যের দিকে বিষ্ময়ে চাওয়াচাইয়ি করছে। অনামিকা চোখ দিয়ে রজনীর দিকে ইশারা করলো, ইশারায় বুঝিয়ে বললো,
- এই গেঁয়োটা কোথায় যায়? হুট করে কোথায় ছুটলো?
রজনী সবার আড়ালে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে ঠোঁট উলটে ফেললো। ইশারায় বুঝিয়ে দিলো,
- জানি না।
অনামিকার কৌতুহল ভাব কাটলো না। সে এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ হলেও ডে-টু-নাইট ডাক্তারের কনসাল্ট মোতাবেক চলা লাগে। রজনী সরু চোখে মেহনূরের ভাবগতিক বোঝার চেষ্টায় আছে। গতরাতে সে ঠিকই মাহতিমকে ভয় দেখানোর জন্য টেক্সট পাঠিয়েছিলো, কিন্তু সেটা কেবল হালকা মতোন ভয় ঢুকানোর জন্য। সে যে কতটা ভয়ংকর মানুষ, সেটাই মাহতিমকে তিলে-তিলে ঠাওরাতে চাচ্ছিলো। অথচ, এখন যে সিন-সিনারি দেখছে তার সাথে একটুও গতরাতের চিন্তাভাবনা মেলাতে পারছেনা রজনী। মাহতিম তো এতো সহজে ভয় পাবার পাত্র নয়। তাকে টলাতে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙার কথা, সেদিকে আরামসে মেহনূর বাড়ি থেকে বিদায় হচ্ছে এটাই বড় চিন্তার বিষয়। মারজা চুপচাপ ভঙ্গিতে নতমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। উনার ভাব-ভঙ্গিতে তীব্র অসন্তুষ্টের ছাপ বোঝা যাচ্ছিলো, তিনি যে নিরুপায় ও নিঃস্ব, ছেলের সাথে কঠিনভাবে পরাজিত, এটা মুখ দিয়ে না বললেও করুণ দৃষ্টি দিয়ে উপচে-উপচে বোঝা যাচ্ছে। মেহনূর যাওয়ার পূর্বে মারজাকে গলা জড়িয়ে ধরলো। অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে জড়িয়ে রাখল। উপস্থিত সবাই নিরব দর্শকের মতো তাকানো ছাড়া হাল দর্শাতে পারছিলো না। অবশ্য কারোর হাতেই কিছু করার মতো স্থিতি নেই। মাহতিম যেখানে জড়িত, সেখানে তার গর্ভধাত্রী মা-ও বিফল। নীতি চুপচাপ সব দেখতে থাকলেও তার মনের কোণে কিছু একটা নিয়ে খটমট লাগছিলো। এভাবে তো মেহনূরকে বাড়ি থেকে পাঠানো যায় না, এর পেছনে কি গুরুতর কারণ আছে? তার ভাই মাহতিমের মাথায় কি গভীর পরিকল্পনা ঘুরছে? নিশ্চয়ই ঘুরছে। নাহলে এমন সিনেমাটিক ঘটনা সে ঘটাতে যেতো না। নীতি খামোশ থাকলেও তার ভেতরটা বলছে সামনে কোনো দূঃসহ পরিণতির জন্য মাহতিম আগেভাগে মাঠে নেমেছে। মাহতিম নির্ঘাত নিরবে-নিরবে দাবার ঘরগুলো উদ্যমের সাথে সাজাচ্ছে। এই খেলাটা বুদ্ধির, আবার অনেকটা কৌশলের। প্রতিপক্ষটা কে, সেটা আপাতদৃষ্টিতে না জানলেও জয়ীটা যেনো মাহতিম হোক। নীতি মনে-মনে তেজের সাথে কথাগুলো আওড়ালো। আজই সে মাহতিমকে কল করবে। কি ধরনের ছলাকলা প্রস্তুত হচ্ছে তা জানা আবশ্যক! আর দেরি নয়।
.
গাড়িটা হাইওয়েতে উঠিয়ে স্পিড আরো দ্বিগুণ করলো। ডানে মুখ ঘুরিয়ে দেখলো সৌভিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে। শীতল এসির ভেতরেও বিন্দু বিন্দু ঘাম কণা তার সুডৌল কপালে চিকচিক করছে। স্টিয়ারিং ধরে খুব তাড়াহুড়োতে আছে সৌভিক। শান্ত দৃষ্টিতে সেটাই মেহনূর চুপ করে দেখছিলো। বন্ধুদেবর সৌভিকের সাথে অতোটা খোশমেজাজের সম্পর্ক নেই, অনেকটা শীতল সম্পর্কের মতোই তারা চলেছে। কিন্তু বিপদে-আপদে এই সৌভিককেই পাশে পেয়েছে সবাই। আজ কেনো জানি চিন্তিত মুখ দেখে একটু ভাবান্তর হলো ওর। সৌভিকের উদ্বিগ্ন হবার কারণ জিজ্ঞেস করতে মন চন্ঞ্চল হয়ে উঠলো,
- ভাইয়া?
হাই স্পিডে ড্রাইভ করা সৌভিক চকিতে মুখ ফেরালো। মেহনূরের উজবুক চাহনিটা দেখতে পেয়ে মিছে-মিছে হাসি টেনে বললো,
- জ্বী ভাবী, কিছু প্রয়োজন? কিছু লাগবে? খারাপ লাগছে?
মেহনূর দ্রুত মাথাটা ' না ' সূচকে নাড়াতে-নাড়াতে বললো,
- না, না ভাইয়া। ওসব কিছু লাগবে না, আমি ঠিক আছি। আপনাকে একটা কথা বলি?
প্রশ্নের আঁচ টের পেয়ে ঢোক গিললো সৌভিক। নাজানি কেমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মুখ থুবড়ে পরতে হয়। স্বাভাবিক থাকার ভান ধরে বললো সে,
- হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই। তা আর বলতে? জিজ্ঞেস করুন।
মেহনূর সিটে গা হেলানো অবস্থায় আস্তে করে বললো,
- উনি আপনাকে কি বলেছেন ভাইয়া? ঠিক কি কথা শুনে আপনি অফিস ফেলে এইভাবে ছুটে এসেছেন? মিথ্যা বলবেন না ভাইয়া, দয়াকরে কোনোকিছু লুকোবেন না। উনি যা বলেছেন সবটুকুই আমি জানতে চাই।
সৌভিক কঠিন অস্বস্তির ভেতর পরে গেলো। ড্রাইভটা ঠিকঠাক মতো করলেও একজোড়া প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি তার দিকে উন্মুখ হয়ে আছে। এখন কি করে আসল কোথাটা বলতে যাবে? সৌভিক ইনিয়ে-বিনিয়ে মিথ্যা বানিয়ে বললো,
- ভাবী, মাহতিম আসলে তেমন কিছুই বলেনি। শুধু বললো সামনে তো আমার কাজের চাপ বাড়বে। তাই যেনো দেরি না করি। তখন নানারকম মিটিংয়ের জন্য এমনেতেও আমি সময় পাবো না। এজন্য এখনই যেনো কাজটা সেরে ফেলি। ব্যস, এটুকুই জোর দিয়ে বলেছে।
মেহনূর কয়েক মূহুর্তের জন্য স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। সৌভিক মনে-মনে ভাবলো মেহনূর বোধহয় বিশ্বাস করে ফেলেছে, তাই সে চুপ করে আছে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বিরোধী গলায় বললো মেহনূর,
- আপনি সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা বলছেন সৌভিক ভাইয়া। উনি কক্ষনো আপনাকে এ ধরনের কথা বলেননি। গতকাল উনি যখন কল দিয়েছিলেন, উনি কিন্তু মোটেই স্বাভাবিক ছিলেন না। আপনিও গড়িমসি করে উত্তরগুলো দিলেন।
অস্বাভাবিক হবার কারন সৌভিকের জানা। তবুও অকাট্য সত্যটা মুখ ফসকে বলতে পারছেনা। সামনেই একটা ট্রাফিক জ্যামে ওদের গাড়িটা থামলো, মেহনূর তার প্রশ্নের জবাব না পেলেও চুপ করে রইলো। জার্নির প্রায় দুটো ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, এরই মধ্যে পকেট থেকে লাগাতার কল বেজেই যাচ্ছে। বাঁ পা-টা এক্সিলেটর থেকে সরিয়ে একটু সোজা করলো সৌভিক। বাঁ পকেটে হাত ঢুকিয়ে বাজতে থাকা ফোনটা বের করতেই রিসিভ করলো সে। সৌভিক মুখটা জানালার দিকে ঘুরিয়ে কাঁচটা একটু নামিয়ে দিলো, আড়চোখে মেহনূর সেটাই তখন বারবার লক্ষ করছিলো। সৌভিক খুবই নিচু কন্ঠে কথা বলছে, ফিসফিসানির মতো শোনালেও মেহনূর কান পেতে ভাসা-ভাসা কিছু শুনতে পেলো,
- সুস্থই আছে। এখনো বমি-টমি করেনি, না কিছুই খায়নি। তুই টেনশন করছিস কেন? জ্যামে পরেছি --
আর শোনার প্রয়োজন নেই। মেহনূর নিশ্চিতরূপে বলতে পারবে এটা কে করেছে। জ্যামের ভেতর উটকো অবস্থায় আঁটকে পরলেও মাহতিম তার খোঁজখবর নিয়েই চলছে। চোখ বন্ধ করে বুকভর্তি নিশ্বাস ছাড়লো মেহনূর, তার জীবনে এমনও মোড় আসবে ভাবতে পারেনি সে। ছোট থেকে গ্রামের দায়বদ্ধ পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। সেখানে সবকিছু শৌখিন ভাবে পেলেও বাইরের আবহাওয়ায় মেলামেশার সুযোগ কম ছিলো। গ্রামের মেয়েরা যেমন চন্ঞ্চল, দক্ষ ও উড়নচণ্ডী স্বভাবের হয়ে থাকে, সেখানে তাদের পরিবারের চারটা মেয়েই সেসব থেকে মুক্ত। কেবল, ঘর-দুয়ারেই তাদের আসল সীমাটা নির্ধারণ করা থাকতো। আজ বহুদিন পর মহিমপুর গ্রামে দাদাভাইয়ের কাছে ফিরছে মেহনূর। ছোট্ট থেকে যার আঙ্গুল ছুঁয়ে বড় হয়েছে তার কাছে যেতে একটুখানি বিরহ লাগছে। এই বিরহ ভাবটা হয়তো মাহতিমের জন্য। উদাসী মুখে জানালার বাইরে দৃষ্টি ফেললো মেহনূর। নীল আকাশের বুকটায় সাদা-সাদা মেঘগুচ্ছ আশ্রয় নিয়েছে, হাওয়ায় ধীরে-ধীরে দূর-দূরান্তে পাড়ি দিচ্ছে সেগুলো, নীল বুকটা যেনো খালি করে হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও। চোখ বন্ধ করলো মেহনূর, চোখের সামনে কালো পর্দা নেমে পরলেও সেখানে সুন্দর-সুন্দর স্মৃতিগুলো দেখতে লাগলো। গ্রামের পরিবেশে সুনশান রাত, চারিদিকে ঘোর বর্ষণে আকাশ কাঁপছে, ঠান্ডা মৌসুমের শীতল হাওয়া রুমে ঢুকছে। বিয়ের প্রথম রাত ছিলো, মনে ছিলো একবুক জড়তাযুক্ত ভয়। সেই ভয়ের ভেতর যুবা পুরুষটা তার কাছে এসে অমোষ আবদার জুড়ে দিলো। সেই আবদারটা ফেলতেও পারলো না, নাকোচও করলো না মেহনূর। তার নিরবতাকে সম্মতি ভেবে সেদিন শুধু ওইটুকু চুমুই কোমরের ক্ষতটায় ছুঁয়ে দিয়েছিলো। বাকিটা রাত সে কিছুই করেনি। সেদিন বৃষ্টিস্নাত রেসোর্টের অন্ধকার কামড়ায় প্রথম অধরযুগলের আচ্ছাদনটা তার জীবনে প্রথম আনন্দানুভূতি ছিলো। মাহতিমের উন্মুক্ত বুকের ভেতর পুরোটা রাত নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলো মেহনূর। মাহতিমও তার দেহের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে ছায়ার মতো আগলে রেখেছে তাকে। কখনো চুলের চামড়ায় আঙ্গুল রেখে বুলিয়ে দিয়েছে, কখনো আধো-আধো বুজে আসা আঁখিপল্লবে চুমু খেয়েছে, কখনোবা বুকের কাছে ছোট্ট মাথাটা দুহাতে ঢেকে রেখেছে সে। এমন রাত বারবার পেতে চায় মেহনূর, যদি এমন রাত পাওয়ার জন্য কষ্টও সহ্য করা লাগে তাও করবে সে। স্বামী-স্বর্গ-সুখ পুরো ব্যাপারটাই সে বারবার-বহুবার-অসংখ্যবার পাওয়ার জন্য চন্ঞ্চল-অস্থির-উন্মাদ হতে প্রস্তুত। দুচোখের পাতা হঠাৎ খুলে ফেললো মেহনূর। কোলের হ্যান্ডব্যাগ থেকে ত্রস্ত হাতে মোবাইল বের করলো, পাশে থাকা সৌভিক একটু জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেও তার মনোযোগ এখন জ্যাম ছুটা উদ্যম রাস্তার দিকে। মেহনূর কাঁপা-কাঁপা আঙ্গুলগুলো কোনোরকমে স্ক্রিনে চালিয়ে দ্রুত একটা কল বসালো। বাঁহাতটা কাঁপতে-কাঁপতে উপরে উঠিয়ে ওমনেই জানালার সাথে কনুই ঠেকিয়ে দিলো, কনুইয়ে ভর রেখে বাঁ-কানে ফোন ধরলো মেহনূর। গলার ঢোক গেলার গতিটা ফোনের প্রতিটা টোনের সাথে বেড়ে চলেছে। একনাগাড়ে বলেই যাচ্ছে, ' একটু যেনো ফোনটা ধরুক, ফোনটা যেনো নি'ষ্ঠুরের মতো না কাটুক। হোক সে ব্যস্ত, তবুও ওই ব্যস্ততা থেকে একটা মিনিট দিলেই চলবে, অন্ততপক্ষে ' হ্যালো ' শোনার সুযোগটা হোক। ' মেহনূরের উৎকন্ঠা দেখে সৌভিক শুধু হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো। ড্রাইভের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিলেও তার ব্রেনের অন্য অংশটা স্মৃতির পাতা ঘাটছে। কতগুলো দিন, কতগুলো মাস পেরিয়ে গেছে, সে ভুলেও পেছনের দিকে ফিরে দেখেনি। পেছনের সেই বর্ণিল সুন্দর সময়গুলো, সেই রেসোর্টের শেষ রাতটায় পুকুরপাড়ে বসে দুজনের গালগল্পটা এখনো বুকের ভেতর হু হু করে আন্দোলন তোলে। শানাজের অশ্রুভরা টলটলে চোখদুটো সৌভিকের চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, সেই শানাজ আজ কোথায়? শানাজ তাকে বলেছিলো, ' তুমি শহরে গেলে আমাকে ভুলে যাবে সৌভিক '। সৌভিক তো সত্যিই ভুলে গেছে, এমন নির্দয়ের মতো কর্মকাণ্ড করার পর আজ কি করে শানাজের মুখোমুখি হবে? সাহসটা কি করে পাবে সৌভিক? শানাজকে সে দূরে সরিয়ে রেখেছে, এতে কি শানাজ কঠিনভাবে মর্মাহত হয়নি? শহরে ফেরার পর শেষ একটা ম্যাসেজ করেছিলো শানাজ, তাও কলেজের বাইরে গিয়ে এক সহপাঠীর চোরা ফোন দিয়ে ম্যাসেজ করেছিলো। সেই ম্যাসেজের উত্তর আজও দেয়নি সৌভিক।
' আমি জানি তোমরা খুব বড়লোক সৌভিক, তোমরা কোনোদিন গ্রামের মেয়েকে বউ হিসেবে ঘরে তুলবে না। তোমার সাথে আমার যে কদিনের সম্পর্ক ছিলো, সেটা যেমনই হোক একটা স্বচ্ছ-সুন্দর সম্পর্ক ছিলো। আমি কষ্ট পাইনি, আমার জন্য চিন্তা কোরো না। তোমার সাথে সুন্দর একটা গোছানো স্বপ্নের জগত এতোদিনে ভেঙ্গে গেছে। তোমাকে কোনোদিন দোষারাপ করবো না। সব সম্পর্কের পরিণতি যদি সুখই হতো, তাহলে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার পর মানুষ প্রচণ্ড খুশীতে হাউমাউ করে কাঁদতো না। আমি আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না, আমার পক্ষ থেকে আর কখনো তুমি বাধা পাবে না, ঝামেলাও যাবে না। তুমি ঘর সংসার করে সুখী হও। তোমার ব্যবসায়িক জীবন, তোমার আগামীর পথচলা যেনো সফলতার হোক সৌভিক, তুমি খুব ভালো থাকো। '
একহাতে স্টিয়ারিং ধরে পকেট থেকে ছোট্ট একটা রুমাল বের করলো সৌভিক। রুমালটা দিয়ে খুব সাবধানে চোখের অসতর্ক বিন্দুটা মুছে নিলো। এমন একটা ভান করলো যেনো চোখে ডাস্ট ঢুকেছে। মেহনূর একপলক সৌভিকের দিকে তাকিয়ে ফের নিজের কাজে ফিরলো। কলটা এখন শেষ টোনের কাছাকাছি এসে গেছে, যেকোনো মূহুর্তেই আপনাআপনি কেটে যাবে। ব্যথা গলাটায় আরেকবার ঢোক গিলে মৃদ্যু ব্যথাটা চোখ খিঁচে সহ্য করলো, তখনই কলটা খট করে রিসিভ হতেই ব্যস্ত সুরে বললো,
- হ্যালো?
কুঁচকানো চোখ খুলে এবার জোরেসোরে ঢোক গিললো সে, গলায় প্রচুর ব্যথা হলেও সেটা পাত্তা দিলোনা মেহনূর। চাপা অস্থিরতায় স্বর নামিয়ে বললো,
- আপনি কোথায় আছেন?
গাড়ির বেদম গতির জন্য সৌভিকের কান পযর্ন্ত কথা যাচ্ছে না। মেহনূরের অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শুনে ফোনের বিপরীতে আশ্চর্য হলো মাহতিম। কপালে অসংখ্য দাগ ফেলে গম্ভীর গলায় বললো,
- কেনো? কোথায় আছি এটা জিজ্ঞেস করছো কেনো? কি হয়েছে তোমার?
মেহনূর সত্য কথাটা বলতে যেয়েও ইতস্তত বোধ করছে। মুখটা জানালার কাছে এনে শূন্য গলায় বললো,
- জানিনা, শুধু জানি আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
কথাটা বলেই চোখ বুজলো মেহনূর, সূর্যের তাপটা সরাসরি জানালার কাঁচ ভেদ করে বদ্ধ চোখের পাতায় পরলো। রৌদ্রের গাঢ় উষ্ণতা টের পেতেই ওপাশ থেকে কন্ঠ নরম করে বললো,
- আমি আসবো তো। আমার বউ আমাকে স্মরণ করছে, ডাকছে, তার কথা কি আমি ফেলে দেবো? নিজের দিকে যত্ন নাও মেহনূর। যেখানে পাঠাচ্ছি সেখানকার আলো-বাতাসে একটু চাঙ্গা হয়ে উঠো। আমি ফ্রি হয়ে তোমাকে রাতে কল করছি। এখন রাখি, ব্যস্ত।
মেহনূরের কথাটা না শুনেই কল কাটলো মাহতিম। কাঁপুনি দেওয়া হাতটা আস্তে করে কোলের উপর রাখলো মেহনূর। হঠাৎ হাতটা কেঁপে উঠতেই জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে কোলে তাকালো সে, স্ক্রিনের নোটিফিকেশনে একটা ম্যাসেজ শো করছে। চলন্ত গাড়ির ঝাঁকুনির ভেতর ম্যাসেজটায় চোখ বুলালো মেহনূর, সাথে-সাথে এক ফালি রোদ্দুরের মতো উজ্জ্বল হলো মুখ। প্রাণবন্ত মিষ্টি হাসিটা তার সারা মুখ রাঙিয়ে রাঙা করে তুললো। বারবার একই ম্যাসেজটা পড়তেই লাগল মেহনূর,
I just want three things Mehnur Afrin,
To see you,
To hug you,
To kiss you.
When you kissed me with love in your heart, you owned my soul.
ILY .
- Mahtim Ansari.
.
খুব ব্যস্ত সময় কাটছে। এবার দেশের ভেতর দামী-দামী ' মাল ' আনার কন্টাক্ট পেয়েছে। এই কন্টাক্টটা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি মোটা অঙ্কের টাকাও পাবে। এই ' বিদেশী মাল ' জায়গা মতো পৌঁছানোর আদেশ পরেছে, কাজটা করতে পারলে বিরাট একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। দেশের ভেতর গুপ্ত ষ'ড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে অনেকেই, কিন্তু তাদের হাতে উপর্যুক্ত মা'ল নেই বলা চলে। মালের মজুদ ঠিকঠাক মতো জোগান পেলেই আবার মাথাচাড়া উঠবে তারা। কালাম সরদার পুরোদমে দলের সাথে লেগে পরেছে, একে-ওকে নানা কাজ চাপিয়ে হিসেব বুঝিয়ে যাচ্ছে। এবারের পরিকল্পনা খুব সহজ, তাদের যাতে কেউ বাগে আনতে না পারে তার জন্য খুব শীঘ্রই হাতের কাছে একজনকে মে-রে ফেলবে তারা। পুরো প্ল্যানও ফিক্সড। তাকে আগে কু'টিকু'টি করে টুকরো করবে, তারপর নিজেদের কাজে মত্ত হবে তারা। রাত এখন বারোটা। গ্রামের সবচেয়ে জঙ্গলপূর্ণ লোকশূন্য জায়গাটা এখন হারিকেনের আলোয় আলোকিত। হারিকেনের পলতেটা ইচ্ছে করে কমানো। যাতে দূর থেকে কোনো মা'তাল গাঁ'জাখোর ভুলেও এখানকার হদিশ না করতে পারে। নিরিবিলি বনভূমিতে গুপ্ত কারবার চালাচ্ছে তারা। একদল বিশ্বস্ত ছেলে-যুবক কা'মলার মতো খেটেখুটে কাজ করছে। গরুর খড়ের মধ্যে কারসাজি করছে তারা। উঠোনের খড় ছড়ানো জায়গাটার একপ্রান্তে দাঁড়ালো কালাম সরদার, তার পড়নে এখন লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেন্ঞ্জি। লুঙ্গিটা হাঁটুতে তুলে ভাঁজ করে রেখেছে, মাথায় একটা গামছা বাঁধা। সে কালচে আকাশে দৃষ্টি তুলে সময়ের হিসাব কষে নিলো, আর মাত্র দুই ঘন্টা পরেই মেহনূর এখানে পৌঁছে যাবে। সৌভিকের শেষ কল মতে তারা এখন নিকটবর্তী গ্রামে চলে এসেছে। কিন্তু গ্রামের ভাঙ্গাচুরা, খাঁজওয়ালা রাস্তার জন্য ইচ্ছে করে আস্তে ধীরে আসছে। মেহনূর ঝাঁকুনি নিথে অসমর্থ বিধায় পন্ঞ্চাশ মিনিটের জায়গায় এখন দুই ঘন্টা লাগবে। আজ যদি মেহনূর এসে যায়, তার মানে বাকি হিসাব খুব সহজ। মেহনূরকে দেখতে আসার জন্য একবার হলেও এখানে আসবে মাহতিম, এই আসার দিনটাই ঘনঘটা করে তাকে স্বাগতম জানাবে।দিনটা যেনো খুব দ্রুত আসুক এটাই চায় হান্নান শেখ। তার মন পৈশাচিক আনন্দে ফুরফুরে হয়ে উঠলো, ফূর্তির মেজাজে লুঙ্গির কোচা থেকে একটা ছোট্ট মোড়ানো কাগজ বের করলো। মোড়ানো কাগজটা সিধা করে খুলতেই সেখান থেকে দু'আঙ্গুলে এক চিমটি মশলা নিলো হান্নান শেখ, মুখ খুলে জিভের উপর ছেড়ে দিতেই স্বাদটা নিতে লাগলেন। সাথে সাথেই তার মাথাটা ঝিলিক দিয়ে উঠলো, এক ঝটকায় মাথাটা দুপাশে নাড়িয়ে চনমনে জিনিসটা উপভোগ করলো সে। বাড়ি ফেরার আগে খুব কৌশলে মুখটা ধুয়েও নিতে হবে।
.
চারপাশে একযোগে ঝিঁঝিপোকা ডাকছে। কান যেনো তাক লাগানোর মতো শব্দ। লম্বা-লম্বা গাছগুলো ভূতুড়ে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝে-মাঝে দমকা হাওয়ায় ডালাপালা নাড়িয়ে আরো ছমছমে ভাব জাগায়। চারিদিকটা আলোহীন, টিনের বাড়িগুলো গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। ফসলী জমি থেকে ধৈ-ধৈ করে অন্ধকার তেঁড়ে আসছে, অন্ধকার মেঠো রাস্তাটা দিয়ে একজোড়া হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলছে। এর আগেরবারও রাস্তাটা এমন জঘন্য ছিলো না, অথচ এখন এটার বেহাল দশা। মেহনূরের দিকে খেয়াল রেখে খুব সাবধানে ড্রাইভ করছে সৌভিক, মেহনূরের ঘুমটাও এমন ঝাঁকুনি খেতে-খেতে একটু আগে ভেঙ্গেছে। মাহতিমের ডিউটি একটু আগে শেষ হলেও তার নাকি জরুরী একটা মিটিং পরেছে। মেহনূর জানালা দিয়ে তাকাতে পারলো না। এই গ্রাম, এই পরিবেশ তার চিরচেনা হলেও আজ বহুদিন পর এসে অচেনা ঠেকছে। রাতের নিরিবিলি অবস্থা দেখে ভয়-ভয় লাগছে। সৌভিকের জায়গায় যদি মাহতিম এখন পাশে থাকতো, সে মাহতিমের কাধে মুখ লুকিয়ে তার বাহুটা শক্ত করে ধরে রাখতো। এখন তার বদলে সিটবেল্টটা খামচে আছে মেহনূর। আরেকটু পথ এগোতেই একটানে পরিষ্কার রাস্তা পেয়ে গাড়ি হাঁকালো সৌভিক। একেবারে অন্ধকার ফুঁড়ে সেই ছেড়ে যাওয়া সদর দরজাটা দূর থেকে দেখতে পেলো, হেডলাইটের আলোয় সম্পূর্ণ দেখতে পাচ্ছে এই রাস্তাটা আগের মতোই আছে। সোজা রাস্তাটা ধরে ডানে মোড় ঘুরিয়ে একদম উঠোনে এসে গাড়িটা থামলো। গাড়ির হর্ণ না বাজালেও হঠাৎ করে বাড়ির সদর দরজাটা ধপাস করে খুললো। হারিকেন হাতে বেড়িয়ে এলো শাড়ি পরা ঘোমটা দেওয়া সুজলা, মাহমুদা। তার পাশে উৎসুক চোখে হাসি-হাসি চোখে ছুটে এলো সাবা, এসেই মেহনূরকে অতি সাবধানে কলপাড়ে নিয়ে হাতমুখ ধুইয়ে দিলো। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে সঙ্কোচ অনুভব করলেও সুজলার সুলভ আচরণে বিগলিত হয়ে প্রবেশ করলো সৌভিক। বুকের ভয়টা দুরুদুরু করছে, চোখদুটো বেহায়ার মতো কাউকে খুঁজে চলেছে। আশেপাশে কোথাও তাকে দেখতে পাচ্ছে সৌভিক। কি আশ্চর্য! এ বাড়িতে অতিথি এলে বউ নাতনীই স্বাগতম-সাদর জানায়, সেখানে আজ সে অনুপস্থিত? প্রচণ্ড খটকা লাগলেও হঠাৎ দুম করে বুকের ভেতর জোরে একটা ধাক্কা লাগলো। শানাজের কি বিয়ে হয়ে গেছে? শানাজকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না কেনো? হাতমুখ ধুয়ে রাতের খাবারটা খেলো সৌভিক। মেহনূরও তার পাশের চেয়ারে বসে খাবার নষ্ট করলো। হান্নান শেখ আজ বাড়িতে নেই। একটা গুরুত্বপূর্ণ তলবের ডাক পেয়ে সেখানে নাকি ছুটে গিয়েছে। সৌভিক একবার চিন্তা করলো সাবাকে সোজাসুজি শানাজের কথাটা জিজ্ঞেস করবে কিনা, পরক্ষণে লজ্জায় পরতে হবে বলে করলো না।
সব আয়োজন শেষে ঘুমানোর জন্য আগের রুমটাই দেখিলো দিলো মাহমুদা। সৌভিক হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে অতীতে থাকা সেই রুমটায় চলে গেলো। সবকিছুই আগের মতথ, আগের জায়গায় রাখা আছে। শুধু পরিবর্তন হিসেবে আলনায় জায়গায় একটা আলমারী দেখতে পাচ্ছে। সাদা ফুল স্লিভের শার্টটা খুলতে-খুলতে নরমাল টিশার্ট পরলো সে। প্যান্টটা বদলাতে গিয়ে সেটা পালটালো না। ঘড়িতে ভদ্র দাগে দুইটা ত্রিশ বাজছে। সৌভিক চুপচাপ কিছুক্ষণ মনস্থির করে বন্ধ দরজাটা খুললো। ডানে-বামে মুখ ঘুরিয়ে দেখলো চারপাশ অন্ধকার। বুকভর্তি দম নিয়ে দরজা ছেড় বেরিয়ে পরলো, অন্ধকারে পা টিপে-টিপে ছুটে গেলো পরিচিত দিকে। ছোট্ট প্রশস্ত জায়গাটা পেরিয়ে অপরপ্রান্ত চলে এলো, দোতলার সিড়ির ধরে সতর্কভাবে উপরে উঠে কাঙ্ক্ষিত রুমটার সামনে দাঁড়ালো। মেঝে ও দরজার যেটুকু ফাঁক থাকে সেখান দিয়ে কমলাভ আলো আসছে। তার মানে ভেতরেই আছে, ইচ্ছে করে বাইরে বেরুয়নি। দরজায় কড়াঘাত করার আগে আরেকবার দম নিলো সে, এরপর টকটক করে মৃদ্যু শব্দ করতেই কয়েক মূহুর্ত নিঃশব্দে কাটলো। এরপর আবার টকটক করলে বিছানা থেকে নামার মতো শব্দ হলো, তখুনি ভেতর থেকে গলা এলো,
- কে? মেহনূর আসলি নাকি?
সৌভিক ইচ্ছে করে দু আঙ্গুল দিয়ে ' টকটক ' জাতীয় শব্দ করেছে। এটা মেহনূরের নিয়ম, এটা সে শানাজের মুখেই শুনেছে। ভেতর থেকে পায়ের আওয়াজটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতেই খট করে ছিটকিনিটা খুললো, দরজাটার মাঝ বরাবর সরু ফাঁক হতেই হারিকেনের আলোটা বেরিয়ে এলো। সরু দরজাটার দুধার একপর্যায়ে খুলে যেতেই শানাজের হাসিটা ঝট করে নিভে গেলো, জুলজুল চোখে সামনের পুরুষ অবয়বটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ জোরে ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে গেলো শানাজ। বুকের ভেতর নিশ্বাস আঁটকে যেতেই কানে দরজা চাপানোর শব্দ পেলো সে। ভয়ে চিৎকার দেওয়ার আগেই তার গলা বন্ধ হয়ে এলো! কন্ঠরোধ হয়ে শ্বাসটান হলেও হাত নাড়াতে পারলো না শানাজ। ঝরঝর করে তার চোখ ভিজে উঠলো!
.
.
.
চলবে..............................