কাঁথা সরিয়ে পিঠের ব্যান্ডেজটা দেখছিলো মেহনূর। নিবিড় দৃষ্টিতে চুপচাপ ব্যান্ডেজের উপর আঙ্গুল ছুঁয়ে চলছিলো। বাঁহাতের তলায় মাহতিমের ঘুমন্ত মাথাটা আগলে রেখেছে, মাঝে-মাঝে চুলের ফাঁকে আঙ্গুল চালাচ্ছিলো সে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাতেই মায়াচ্ছন্ন হলো মেহনূর, ঠোঁট নামিয়ে চুলের উপর ছোট্ট ছোঁয়াটা এঁটে দিতেই হঠাৎ ঠকঠক আওয়াজ হলো। শব্দটা বন্ধ দরজার বাইরে থেকে আসছে। সতর্ক হয়ে দরজার দিকে তাকালো সে, কাঁথা টেনে বুকের উপর ঘুমন্ত মাথাটা ঢেকে দিলো মেহনূর। দৃষ্টি সজাগ করে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলে আগন্তকের মেয়েলি কন্ঠ পাওয়া গেলো,
- দরজাটা খোল্ তো, মেহনূর কি ঘুমাচ্ছিস? এ্যাই মেহনূর? তোকে ছোট মা খুঁজছে, বাইরে বেরিয়ে আয়।
কন্ঠ শুনে শান্ত হলো মেহনূর। গলাটা শানাজের। তার মানে বাড়িতে ডাক এসে পরেছে। মেহনূর আস্তে-আস্তে চোরের মতো নিচু গলায় বললো,
- বুবু মাকে বলো, আমি এখন যেতে পারবো না।
দরজার বাইরে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো শানাজ। এ আবার কেমন কথা? মেহনূর তো এ ধরনের কথার খেলাফ করেনা। শানাজ চট করে বলে ফেললো,
- তুই যাবি না কি জন্যে? দেখি দরজাটা খোল্ তো। দরজাটা খুলে তারপর সরাসরি কথাটা বল্। তোর মা তোকে ডাকছে কথাটা শুনেও ভংচং করছিস?
আক্ষেপে ঠোঁট গোল করলো মেহনূর, নিশ্বাস ছাড়তে গিয়ে হঠাৎ শুনতে পেলো,
- দাঁড়া! তুই যেহেতু দরজা খুলবিনা, আমি জানালা দিয়ে ঢুকবো। তোকে এতো বলার ---
কথা শেষ করার আগেই মাঝপথে থামিয়ে দিলো মেহনূর। শানাজ ধুপধাপ পায়ে এগিয়ে এসেছে। তাড়াহুড়ো কন্ঠে নিচু স্বরে বললো মেহনূর,
- আল্লাহ্ বুবু, বেশি বেশি কোরো না। আমি ঘরে একা নই। উনি ঘুমাচ্ছেন। ঘুমাতে দাও।
জানালার পর্দা খামচে ধরতেই সেটা ছেড়ে দিলো শানাজ। আশ্চর্য হয়ে কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো। কি সাংঘাতিক! ভাইয়া তাহলে এসে পরেছে? কখন আসলো? শানাজ তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলো,
- ভাইয়া এসেছে? সত্যি? তুই উনাকে গোয়ালঘরে ঘুমাতে দিচ্ছিস? তুই কি গা-ধা মেহনূর? এমন বেআক্কেলের মতো কাজ করতে পারলি?
মেহনূর বিরক্ত হয়ে বললো,
- আহ্ বুবু, আস্তে। উনি ঘুমাচ্ছেন। গলা নিচু করো। আর বাড়িতে কাউকে বোলো না।
মেহনূরের কথায় আহাম্মক হয়ে মুখ হা করলো শানাজ। অবাক হয়ে বললো,
- বাড়িতে বলবো না মানে? বুদ্ধির কি মাথা খেয়েছিস? এতোদিন পর বাড়ির নাতজামাই এসেছে, আর সে কিনা গোয়ালঘরে ঘুমাচ্ছে?
শানাজকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে মূল কথায় ফিরলো মেহনূর, ভালোভাবে বুঝিয়ে বললো,
- তোমাকে সব বলবো বুবু, আমাকে একটু সময় দাও। শুধু জেনে রাখো উনি পিঠে ব্যথা পেয়েছেন। ব্যথার ঔষুধের ব্যবস্থা করে দাও। আমি উনাকে বলে-কয়ে ঘুমাতে বলেছি, উনি ঘুমাচ্ছেন। তুমি বাড়িতে সবকিছু সামলাও বুবু, এই মূহুর্ত্তে কিচ্ছু বলা সম্ভব না।
জানালার বাইরে সোনালী পর্দার আড়ালে সব শুনলো শানাজ। সম্মতি জানিয়ে বললো,
- আচ্ছা ঠিক আছে।
মেহনূর এ কথায় খুশি হয়ে পরবর্তী কাজটা দিয়ে ফেলে,
- আরেকটা কাজ আছে বুবু, তুমি সবার আগে আমার রুমে যাবে। আমার রুমে বড় ব্যাগ খুলে ডানদিকে হাত দিবে, ওখানে চার নাম্বার শাড়ির নিচে একটা মেরুন রঙের শার্ট পাবে। ওটা একটু এনে দাও বুবু, উনার শার্টটা বৃষ্টির পানিতে পুরোপুরি ভিজে গেছে।
মেহনূরের কথায় রাজি হয়ে সবকিছুর ব্যবস্থা করতে গেলো শানাজ, বাড়িতে আপাতত কিছুই বলবে না। মেহনূরের কন্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছে জঘন্য কিছুই হয়েছি, যেটা মেহনূর পুরোপুরি চেপে যেতে চাইছে। পিঠে ব্যথা মানে কেমন ব্যথা পেতে পারে একটুখানি আঁচও করলো শানাজ। মাহতিমের মতো পোক্ত শরীরের মানুষ কঠিন আঘাত ছাড়া কাবু হওয়ার কথা না। সেলাই দরকার কিনা সেটাই এখন ভয়। আকাশের চেহারা আজ বেজায় রুক্ষ, আকাশে তাকিয়ে সময়ের আন্দাজ করা মুশকিল। বৃষ্টি পুরোপুরি কমে গেলেও বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ লেগে আছে। উঠোনের জলাবদ্ধ পানি কমতে শুরু করেছে। শাড়িটা একটু উঁচু করে পানি বাঁচিয়ে পা ফেলছে শানাজ, কাদায় কিছু-কিছু জায়গা পিচ্ছিল হয়ে আছে। শানাজ খুব সাবধানে উঠোন মাড়িয়ে বাড়িতে ঢুকলো, দরজায় দাঁড়িয়ে বালতি ভর্তি পানি থেকে মগ নিয়ে নগ্ন পা-টা ধুয়ে ফেললো। আজ শেফালি-সুরাইয়া বাড়ি ফিরছে। একটু আগেই লোক মারফত খবর পেয়েছে সবাই। একদিকে মাহতিম ফিরেছে, অপরদিকে ধূর্তের দল ফিরছে। কেমন হাড্ডাহাড্ডি গ্যান্ঞ্জাম হবে কে জানে? শানাজ একটু বিচলিত ভঙ্গিতে সিড়ি ধরে নিজের ঘরে ঢুকলো। মা, বড়মা বুঝি রান্নাঘরে ব্যস্ত। ঔষুধের ঝুলি থেকে নির্দিষ্ট ঔষুধ বাছাই করতে মনে পরলো গতরাত থেকে দাদাজান ফিরেনি। হঠাৎ দাদাজানের কথা মাহতিমের বেলায় কেনো পরলো বুঝতে পারছেনা শানাজ। গত পরশু দুপুরবেলায় খুবই অদ্ভুত জিনিস দেখেছে। দাদার ঘরটা শলার ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দিতেই বিছানার তলায় সিগারেটের টুকরা পেয়েছে। তার জানামতে, এ বাড়িতে দাদা তো দূর, কেউই সিগারেট খায়না। তাহলে ওই সিগারেটের টুকরো কোত্থেকে এলো? দ্বিতীয় আরেকটা ব্যাপার ইদানিং স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে, যা আগে কখনো উদ্ভট ভাবে নজরে পরেনি। মা কিছু একটা নিয়ে প্রচণ্ড অন্যমনষ্ক থাকেন, বটিতে সবজি কুটতে গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে ফেলেছেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, যেই ছোটমা বাড়িতে থেকেও না-থাকার মতোন জীবন গুজরান করলেন, সেই সরল মহিলাও আজকাল কিছু একটা নিয়ে বিরাট চিন্তিত। এর মধ্যে গ্রামে ফিরতে-না-ফিরতেই মাহতিম আহত। এসবের মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে? মস্তিষ্কের বুনন কায়দা বলছে, এসব নিছক ঘটনা বৈ কিছুই নয়। অন্যদিকে মনের অদ্ভুত কানন থেকে সাড়া আসছে, এতোদিনের শান্ত-নিবিড়-শৃঙ্খল অরণ্যে গভীর কিছু লুকিয়ে রয়েছে, যা এতোদিন খুবই চালাকির সাথে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলো। সাবাও কি এসব ব্যাপার ধরতে পেরেছে? ওর পক্ষে না ধরতে পারাই স্বাভাবিক। সাবার মাথায় অতো গোজামিল প্যাঁচ বুঝার বুদ্ধি নেই। সাবা চালাকচতুর হলেও জায়গা মতো বুদ্ধি খাটাতে পারেনা। ঔষুধের পাতা ও শার্ট নিয়ে পুনরায় বাইরের জন্য পা বাড়ালো শানাজ। সিড়ির শেষ ধাপে পা ফেলতেই মুখোমুখি হলো মায়ের সাথে। সুজলা স্টিলের বোলে শাকপাতা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। শানাজ চটপট চতুরতার সাথে শার্টটা আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেললো, ঔষুধের পাতাটা কোমরের কাছে গুঁজলো, সুজলার দিকে শান্ত ভাব দেখিয়ে বললো,
- কোথায় যাচ্ছো?
সুজলা গুমোর ভাব দেখিয়ে বললেন,
- শাকের বোল নিয়ে কোথায় যাই জানিস না?
একটু নিভলো শানাজ। মায়ের সামনে যুৎসই কথা খুঁজতে গিয়ে মিনমিন সুরে বললো,
- ওকে ডেকে এসেছি। ও ঘুমাচ্ছে। এজন্য আর ডেকে তুলিনি। তোমার কি হয়েছে মা?
সুজলা নাক দিয়ে ভারী নিশ্বাস ছাড়লো। দরজার অভিমুখে দৃষ্টি রেখে বললো,
- আমার কি হবে? কিছু হয়নি। মেহনূর উঠলে ওকে খেতে দিস। ভাতের পাতিল তাকের উপর আছে, নিচে চুলার কাছে খুঁজতে যাস না।
সুজলার গম্ভীর আচরণ সহ্য করাটা নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতোটা গম্ভীর অবস্থায় সুজলাকে কখনো দেখেনি শানাজ। শানাজ চুপচাপ গোয়ালঘরের কাছে গেলো, জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে পর্দা একটুখানি ফাঁক করে হাত ঢুকালো। হাতের বস্তুদুটো বাড়িয়ে দিতেই ভেতর থেকে হাতে নিলো মেহনূর। শানাজ চলে যেতেই মেঘলাটে আকাশটা রঙ পালটে সন্ধ্যার আঁচড় ধরলো। অসীম লীলার আকাশটা সমস্ত জৌলুস হারিয়ে আঁধারে ডুবতে লাগলো। নড়েচড়ে উঠলো মাহতিম, ঘুম-ঘুম চোখ মেলে মাথা তুললো একটু, অন্ধকারে সবকিছু ঢাকা পরলেও একজোড়া প্রসন্ন দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ। আচ্ছন্ন নয়নজোড়াকে উপেক্ষা করতে পারলো না মাহতিম। নিদ্রালু চোখে ঘুম মাখা কন্ঠে বললো,
- অনেক ঘুমিয়েছি?
বালিশে থাকা শ্রান্ত দৃষ্টির মাথাটা আলতো করে ডানে-বামে নড়লো। বুঝিয়ে দিলো সে অনেক ঘুমায়নি। দু'চোখে এখনো ঘুম লেপ্টে আছে, তবুও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে উঠতে চাইলো মাহতিম, কিন্তু তখনই বুঝতে পারলো তার পিঠের বাঁদিকটা ব্যথায় অসাড়। কোনোরকম ঔষুধ না নেওয়ার জন্য বাঁ-হাতটাও এখন ঝিমঝিম করছে। মেহনূর জানালার দিকে হাত বাড়িয়ে পর্দা সরিয়ে দিলো, একঝাঁক কালো মিশেলের আলো এসে রুমে ভেতর ঢুকলো। মাহতিম ঘুম নিংড়ানো চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে, ওর মতিগতি বুঝার আগেই দুহাতে গালদুটো আয়ত্ত করলো মেহনূর। মুখটা টেনে একদম কাছে এনে চোখে-চোখ ফেলে বললো,
- আমি সম্পূর্ণ ঘটনা শুনতে চাই। একদম গোড়া থেকে সব শুনবো। বলুন,
ঘুম থেকে উঠেই এমন কিছুর মুখোমুখি হবে ভাবতে পারেনি মাহতিম। ঘুমের তালটা সামলানোর চাইতে ব্যথার তালটা বিষিয়ে দিচ্ছিলো, মাহতিম গলা ভিজিয়ে মেহনূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
- তোমার কন্ঠ অদ্ভুত শোনাচ্ছে।
তেজের সাথে বললো মেহনূর,
- শোনাচ্ছে শোনাক।
বিষ্ময় ধরতে গিয়ে মুচকি হাসলো মাহতিম। নাকে-নাক ঠেকিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে মৃদ্যু কন্ঠে বললো,
- অদ্ভুত আচরণ কোরো না। খুব কাছে টেনেছো কিন্তু। বেশি এক্সেস করলে কন্ট্রোল করা ইম্পসিব্যাল হবে।
মাহতিমের কথায় টনক নড়লো না। যেভাবে ছিলো সেভাবেই দুগাল ধরে স্থির রইলো মেহনূর। মাহতিম বারবার ঘুমের রেশের জন্য চোখ বন্ধ করছিলো, লম্বা-লম্বা পাপড়িগুলোর অদ্ভুত মায়া মেহনূরকে নাড়িয়ে দিচ্ছিলো। এতো সাহস কখনো দেখায়নি মেহনূর, এভাবে জোর করে মুখটা কাছে টানেনি সে। মাহতিমের ঘুম-ঘুম চোখ, ব্রাশ ছাড়া ঝলমলে চুল, লালচে আভায় মাখামাখি ঠোঁট সবকিছুই অন্ধকারে মায়া বিকিয়ে চলছিলো। জোৎস্নার আদুরে মায়ার মতো স্নিগ্ধ লাগছিলো তাকে, এক পশলা বৃষ্টি শেষে ঠান্ডা হাওয়ার মতো কোমল ঠেকছিলো। মাহতিমের ভেতরের অস্তিত্ব যেনো স্বচ্ছ আয়নার মতো অনুভব করছিলো মেহনূর, এই মাহতিমকেই সে মনেপ্রাণে নিবিড় অঙ্গনে ভালোবেসেছিলো। জীবনের সেই প্রথম রেসোর্টে পুকুরপাড়ের রাতটা স্মরণে স্পষ্ট ভাসছিলো। পরিণীতা বইটা পুড়ে যাওয়ার অভিমানে ঘন জঙ্গলের কাদায় আছড়ে পরেছিলো, কাদায় পাদুটো মাখামাখি হয়ে গেলে ভূতের মতোই উদয় হয় টিশার্ট পরা লোকটা। দীর্ঘকায় লোকটা তার পেশীবহুল হাতদুটো দিয়ে চটান করে কোলে তুলেছিলো, পুকুরের পানি কাদামাখা পা ধুইয়ে দিয়েছিলো, কিচ্ছু ভুলেনি মেহনূর। এই স্মৃতিগুলো ভুলা বড় দায়! কালো শাড়ির সাথে পিঠখোলা লাল ব্লাউজটা কাকতলীয় ভাবে পরতে হয়েছিলো, সেদিন আগুন ধরানো সন্ধ্যায় গানটা কি তার জন্য ছিলো না? ওইযে মন ভোলানো, প্রাণোচ্ছল সুরটা গিটারের তারে তাকে আহ্বান জানিয়েছিলো। বলেছিলো লাইনে-লাইনে, ' তাকে অল্প কাছে ডাকছি, আর আগলে-আগলে রাখছি। তবুও অল্পেই হারাচ্ছি আবার '। আধো অন্ধকারে ঠোঁটে হাসি ফুটলো মেহনূরের, অজানা কারণে চোখ ভিজে উঠতেই লালচে রাঙা ঠোঁটের কাছে নিজের অধর এনে রাখলো, মনের ভেতর সেই বেদনাদায়ক সুরটা বাজলো তখন, ' অল্পেই হারাচ্ছি আবার '। সাথে-সাথে অধরযুগল মিলিয়ে দিলো মেহনূর, শক্ত করে মাহতিমের গলা জড়িয়ে ধরলো সে। পিঠের ব্যথায় চোখ খিঁচুনি দিলেও সামলে নিলো মাহতিম, ভালো হাতটা এগিয়ে মেহনূরের মাথায় স্নেহাস্পর্শ চালালো। বাইরে থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে, জানালা দিয়ে প্রবেশ করলো বৃষ্টি শেষের হাওয়া। মন মাতানো প্রকৃতির নির্যাসে মাটি ভেজা গন্ধ জড়িয়ে আসছিলো, মিষ্টি কোনো ফুলের সুভাষে ম-ম করছিলো আঁধার। ওষ্ঠসিদ্ধি মুক্ত করে পূর্ণচোখে তাকালো মাহতিম, মেহনূরের দিকে তাচ্ছিল্যের ভাব ধরে বললো,
- আমার মতো ঘুমন্ত ব্যক্তিকে দেখে একটুও মায়া-দয়া হলো না? ডাইরেক্ট চুমুর এনকাউন্টার? নিষ্পাপ ঘুমটাকে হত্যা করে ভালো করলে না মেহনূর। কাজটা ঠিক করোনি। ঘায়েল সিংহ সুস্থ হলে তোমার যে কি দশা হবে সেটা তুমি ---।
হঠাৎ অদ্ভুত ভাবে থেমে গেলো মাহতিম। চকিতে জানালার দিকে তাকিয়ে মেহনূরের উপর থেকে সরে গেলো সে! এই মূহুর্ত্তও দেরি না করে তাড়াতাড়ি চৌকি থেকে নামলো। মেহনূর এহেন কান্ড দেখে রীতিমতো অবাক! সে কিছু বলার আগেই নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলো মাহতিম। চুপ থাকার ইশারা করে দ্রুত জানালা বন্ধের ইঙ্গিত দিলো সে। মেহনূর উদভ্রান্তের মতো একবার খোলা জানালায় তাকালো, আরেকবার তাকালো মাহতিমের দিকে। অন্ধকার গোয়ালঘরের জানালা দিয়ে হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ শোনা গেলো, কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ যেনো পরিত্যক্ত গোয়ালঘরটার দিকে তীব্র হচ্ছিলো। অজানা শঙ্কায় ভীত হলো মেহনূর, কি হচ্ছিলো তখন বুঝতে-না-বুঝতেই একটা পুরুষালী কন্ঠ দেমাকের সাথে বললো,
- আপনে চিন্তা কইরেন না চাছা। শা-লার চকচইক্কা গাড়ি এক্কেবারে শ্যাষ কইরা দিছি। ক্ষু-র দিয়া ভালো মতোন ডাবায়া দিছি! শা-লার কইলজাও বহুত বড়, অন্য কেউ হইলে চিক্কুর দিতো। অথচ দ্যাহেন, বিশ্বাস করেন একটা ' উহ্ ' কইরা আমারেই উলটা ক-ষানি ঘুষি মা-র-ছে। তয় টেনশান নাই, এমুন আ-গুন ধরায়া দিছি! শা-লা-র কোনো চিহ্নও খুঁইজ্জা পাইবেন না। আপনেরে এক্কেরে খাঁটি গ্যারান্টি দিতাছি।
.
.
.
চলবে...............................