অবেলার অভিলাষ - পর্ব ১৯ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


__তানু পা‌খি উইল ইউ বি মাই লাভলি ওয়াইফ এভার এভার এন্ড ফর‌এভার?

__‌নো। 

আয়াত বসা থে‌কে উঠে দাড়া‌লো। তানভী মেঘা, দুজনই হা হ‌য়ে তনয়ার দি‌কে তা‌কলো। আয়াত তনয়ার হাত ধ‌রে বলল,
__‌প্লিজ তনয়া আজ মজা ক‌রোনা। আজ আমি মজা করার মু‌ডে নয় তোমাকে ভা‌লোবাসার মু‌ডে আছি।

তনয়া আয়া‌তের থে‌কে নি‌জের হাতটা ঝটকা দি‌য়ে ছা‌ড়ি‌য়ে স‌জো‌ড়ে আয়া‌তের গা‌লে একটা চড় ব‌সি‌য়ে দি‌লো। 

উপ‌স্থিত সবাই হতভম্ভ হ‌য়ে গে‌লো। তনয়া রা‌গে গজগজ কর‌তে কর‌তে বল‌ছে,
__এতটা অভিনয় কী ক‌রে কর‌তে পা‌রো তু‌মি? 

আয়াত যতটানা গা‌লে আঘাত পে‌য়ে‌ছে তার তিনগুন বে‌শি হৃদ‌য়ে আঘাত পে‌য়ে‌ছে। নি‌জে‌কে সামলা‌তে পার‌ছে না। ম‌নে হ‌চ্চে স্বপ্ন দেখ‌ছে। ওর তনয়া ওকে চড় মার‌ছে ব্যাপারটা আয়াত ঠিক হজম কর‌তে পার‌ছে না। গালে হাত দি‌য়ে হা হয়ে তনয়ার ‌দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। বেশ কিছুক্ষন পর নি‌জে‌কে সাম‌লে বল‌লো,

__তনয়া তু‌মি এগু‌লো কী বল‌ছো? আমি তো কিছুই বুঝ‌তে পার‌ছিনা।

__একদম ন্যাকা সাজবা না। আই হেট ইউ আয়াত! আই হেট ইউ। ইউ স্প‌য়েল মাই লাইফ, ইউ ব্র‌কেন মাই মাইন্ড, ইউ অল‌সো ব্র‌কেন মাই ট্রাস্ট। হোয়াই আয়াত হোয়াই? (কেঁ‌দে কেঁ‌দে মা‌টি‌তে ব‌সে পড়‌লো)

আয়াত তনয়ার সাম‌নে ব‌সে হাতটা ধ‌রে বল‌লো,
__‌শোন তনয়া তোমার কোথাও ভুল হ‌চ্ছে। অামি এমন কিছু ক‌রি‌নি যা‌তে তোমার বিশ্বাস ভা‌ঙে। 

তনয়া হাতটা ঝটকা দি‌য়ে ছা‌ড়ি‌য়ে আয়া‌তের শা‌র্টের কলার ধ‌রে বল‌ল,
__কেন আয়াত কেন আমার বিশ্বাস ভে‌ঙে দিলা? ভা‌লোবাসতাম তো তোমায় পাগ‌লের মত। নি‌জের সবটা দি‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম। ত‌বে তু‌মি কেন ঠকা‌লে আমায়?

__‌কী যাতা বল‌ছো?

তনয়া দাঁতে দাঁত চে‌পে বল‌লো,
__যা তা তাই তো আয়াত? রিয়ার সা‌থে ফি‌জিক্যাল‌লি ইনভলবট হ‌য়ে তার পে‌টে বাচ্চা দেয়াকে বু‌ঝি যা তা ব‌লে?

__‌কী? এর ম‌ধ্যে রিয়া কোথা থে‌কে আস‌লো? 

তনয়া আর কিছু বল‌তে পার‌ছেনা। কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে আয়া‌ত জড়ি‌য়ে ধ‌রে ওর বুকে মাথা‌ দি‌য়ে বলল,
__এখানটায় তো শুধু আমার অধিকার ছি‌লো, তবে কেন ‌সেখানে তু‌মি রিয়াকে অধিকার দি‌লে?

__তনয়া আমার বু‌কে শুধু তোমার অধিকার রিয়া কখ‌নোই সেখানে ছিলো না। বিশ্বাস ক‌রো। (তনয়ার মাথায় হাত বুলা‌তে বুলা‌তে)

তনয়া আয়া‌তের বুক থে‌কে মাথাটা তু‌লে দা‌ড়ি‌য়ে বল‌ল,
__‌বিশ্বাসটা তু‌মি ভে‌ঙে দি‌য়েছো আয়াত।

এবার আয়া‌তের রাগ উঠে গে‌লো।

তনয়ার হাত ধ‌রে বলল,
__‌কি‌সের ভি‌ত্তি‌তে তু‌মি আমায় এত বড় অপবাদ দি‌লে? কী প্রমাণ আছে যে, রিয়ার সা‌থে আমি ফি‌জিক্যাল‌লি ইনভলব হ‌য়ে‌ছি, ওর গ‌র্ভে আমার সন্তান?

__রিয়া আমায় ব‌লে‌ছে?

__ক‌বে?

__ছয়‌দিন আগে। র‌শ্মির মা‌য়ের সা‌থে যখন হস‌পিটা‌লে ছিলাম তখন র‌শ্মি নি‌জের চেকাপ করা‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লো, তখনই ও বল‌ল, আমি যে‌নো ওর সংসার না ভা‌ঙি, তাহ‌লে ওর সন্তান তোমার পিতৃ প‌রিচয় পা‌বে না। তু‌মি ওর সা‌থে সম্পর্ক করে ওর বাচ্চা‌কে এখন স্বীকার কর‌তে চাই‌ছো না।

আয়াতের রাগ চরম পর্যা‌য়ে উঠে গে‌লো। হাত শক্ত ক‌রে মুঠ বেঁ‌ধে বল‌লো, 
__রিয়া বলল অার তু‌মি সেটা বিশ্বাস ক‌রে নি‌লে? একবারও আমার উপর বিশ্বাস রাখ‌লে না।

__প্রথ‌মে বিশ্বাস করি‌নি আয়াত! কিন্তু গত দু তিন মাস যাবত তোমা‌দের ভিতর ক‌য়েকবার দেখা হ‌য়ে‌ছে,কখ‌নো তোমরা রেস্টু‌রে‌ন্টে ব‌সে কথা বল‌ছি‌লে কখ‌নো পা‌র্কে। তাও বিশ্বাস ক‌রি‌নি কিন্তু যখন তোমার আর রিয়ার অন্তর‌ঙ্গের মুহূ‌র্তের ভি‌ডিও দেখলাম তখন বিশ্বাস না ক‌রে থাক‌তে পারলাম না। 

আয়াত দা‌ঁতে দাঁত চে‌পে বলল,
__হ্যাঁ ‌রিয়ার সা‌থে লাস্ট ক‌য়েক মা‌সে বেশ ক‌য়েকবার দেখা হ‌য়ে‌ছে যেটা একদম কাকতালীয় ভা‌বে। হ্যাঁ তখন আমরা বেশ ক‌য়েকবার কথা বল‌ছিলাম ফ্রেন্ড হিসা‌বে। কিন্তু তনয়া ভি‌ডিও তো এডিট ক‌রেও বানা‌নো যায়। 

__আয়াত আমি এতটা বোকা না যে, বুঝবো না ‌কোনটা এডিটেড ভি‌ডিও আর কোনটা রিয়াল। এডিট ভি‌ডিও‌তে বু‌ঝি তোমার ধবধ‌বে ফর্সা পি‌ঠের তিলটাও এডিট ক‌রে দি‌য়ে‌ছে? ম‌নে আছে কিছু‌দিন আগে তোমায় খা‌লি পি‌ঠে দে‌খে আমি তোমার তিলটা নি‌য়ে কথা বল‌ছিলাম । বা‌কিটা আর না ব‌লি আয়াত। এই ভি‌ডিওর রেকর্ড নি‌জে থে‌কে দে‌খে নিও। আমি আর কিছু বল‌তে চাইনা। শুধু বল‌বো রিয়া আর রিয়ার সন্তান‌কে স্বীকৃ‌তি দি‌ও। চললাম।

আয়াত নিশ্চুপ হ‌য়ে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো। তখন তানভী বল‌ল,
__কী বল‌ছিস কী তনয়া? তুই ভুল এটা আ‌মি ১০০% শিওর দি‌য়ে বল‌তে পা‌রি। আয়াত ভাইয়ার উপর আমার পু‌রো বিশ্বাস আছে ত‌বে তুই কেন বিশ্বাস রাখ‌তে পার‌ছিস না।

আয়াত নীরবতা ভে‌ঙে বলল, ওকে যে‌তে দে তানভী।
আয়া‌তের চোখ থে‌কে আগুন ঝড়‌ছে অথচ শান্ত গলায় কথা বল‌ছে।
তনয়ার কা‌ছে গি‌য়ে তনয়ার হাতটা কা‌ছে টে‌নে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কানের কা‌ছে মুখ নি‌য়ে বলল, 
__আ‌মি প্রমাণ ক‌রে দি‌বো রিয়া মিথ্যা বল‌ছে, তু‌মি ভুল বুঝ‌ছো। তাও মাত্র দু‌দি‌নের ম‌ধ্যে। কিন্তু তারপর তোম‌ায় কখ‌নো নি‌জের কা‌ছে নি‌বো না। আই উইল ডি‌ভোর্স ইউ। ঠিক যেভা‌বে আমা‌দের বি‌য়ে হ‌য়েছি‌লো সেভা‌বেই ডি‌ভোর্স দি‌বো। শত‌চে‌য়েও তু‌মি আমার কা‌ছে ফির‌তে পার‌বে না। আমা‌কে অবিশ্বাস করার অনু‌শোচনায় রোজ দগ্ধ হ‌বে। জ্ব‌লেপুড়ে রোজ তিল তিল ক‌রে মর‌বে তু‌মি। ‌সে ব্যবস্থা আমি কর‌বো। 
আজ শুধু তু‌মি আমা‌কে না আমার ভা‌লোবাসা‌কেও অপমান ক‌রে‌ছো। এর চরম শা‌স্তি তোমায় আমি দি‌বো। আয়াত তনয়ার কপা‌লে চু‌মো একে দি‌লো, দুজ‌নের চোখ থে‌কে নোনা বৃ‌ষ্টি ঝ‌র‌ছে। এমন ভা‌বেও কোন বি‌চ্ছেদ হ‌তে পা‌রে সেটা তানভী মেঘা কখ‌নো শো‌নে‌নি বা দে‌খে‌নি। আয়াত তনয়া‌কে নি‌জের থে‌কে আলাদা ক‌রে বল‌লো, ঠিক যতটা কষ্ট আজ তু‌মি আমায় দি‌লে, তার তিনগুন আমি তোমায় ফি‌রি‌য়ে দি‌বো তনয়া। জাস্ট গেটলস্ট।

তনয়া কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে চ‌লে গে‌লো। আয়া‌তের রা‌গে শরীর জ্বল‌ছে। রিয়া‌কে কা‌ছে পে‌লে খুন ক‌রে ফেল‌বে এমনটা ওর মন চাই‌ছে। আজ পু‌রো মাঠটা‌কে আয়াত সুন্দরভা‌বে সা‌জি‌য়ে‌ছি‌লো, তনয়া‌কে নি‌জের স্ত্রী হিসা‌বে সামা‌জিকভা‌বে মর্যাদা দি‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু একটা মিথ্যা সব কিছু নষ্ট ক‌রে দি‌লো।

আয়াত গা‌ড়ি‌ নি‌য়ে বেড়ি‌য়ে পড়‌লো, তানভী মেঘা চে‌য়েও কিছু বল‌তে পার‌লো না। দুজন এই প‌রি‌স্থি‌তি‌তে ঠিক কী কর‌বে বুঝ‌তে পার‌ছেনা। তনয়া আয়া‌তের ফ্ল্যা‌টের সাম‌নে এসে ভাব‌ছে এখনই চ‌লে যা‌বে তনয়া। থাক‌বে না এই ঘ‌রে, যেখা‌নের প্র‌তিটা ইটে আয়া‌তের ধোকা লু‌কি‌য়ে আছে। দরজার সাম‌নে যে‌তেই দে‌খে আয়মন দাড়া‌নো। আয়ামনকে দে‌খে তনয়া দৌ‌ড়ে আয়মনকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কাঁদ‌তে থাকে। আয়মন উদ্দিগ্ন হ‌য়ে তনয়া‌কে ‌জি‌জ্ঞেস কর‌লো,
__কী হ‌য়ে‌ছে বাচ্চা? তুই ঠিক আছিস তো?

__আয়াত আমায় ধোকা দি‌য়ে‌ছে আপু। ও চিট ক‌রে‌ছে আমার সা‌থে। 

__কী বল‌ছিস কী এসব? আচ্ছা ভিত‌রে চল তারপর সব শুন‌ছি। 

__হুমম

আয়াত ফুল স্পি‌ডে গা‌ড়ি চালা‌চ্ছে। ‌কিছুক্ষন পর কিছু একটা ভে‌বে গা‌ড়িটা সাইড ক‌রে থা‌মি‌য়ে তানভী‌কে ফোন দ‌িয়ে বলল,
__তানভী তনয়ার কা‌ছে যা। ও হয়ত খুব কান্না কর‌ছে।

__ভাইয়া আপ‌নি এখনও ওর কথা ভাব‌ছেন? 

__ও আমার জান‌রে তানভী। রাগ ক‌রে গে‌ছে কোথাও নি‌জের না ক্ষ‌তি করে ফেলে।

__না ভাইয়া। ওর শা‌স্তি পাওয়া উচিৎ। আমরা সবাই জা‌নি ও ভুল।

__হ্যাঁ ও শা‌স্তি পা‌বে ত‌বে যতটা বুঝ‌তে পার‌ছি ওকে কেউ ভুল বু‌ঝি‌য়ে‌ছে। ওর মন খুব নরম, দু‌নিয়ার কুটনী‌তি এখনও জা‌নে না। তাই আমা‌কে ভুল বু‌ঝে‌ছে। ওর শা‌স্তি নাহয় আমি দি‌বো তুই ওর খেয়াল রা‌খিস। 

__ভাইয়া এতটা ভা‌লোবা‌সেন আমার বোনটা‌কে!

__বললাম তো ও আমার জীবন।

আয়াত ফোনটা কে‌টে হো‌টে‌লে ফোন ক‌রে নি‌জে‌দের বু‌কিং করা রুম ক্যান‌সেল করা‌লো। আজ তনয়া‌কে সুন্দর ভা‌লোবাসাময় এক‌টি রাত উপহার দি‌তে চে‌য়েছি‌লো, যার সবটাই তনয়া নষ্ট ক‌রে দি‌লো। আয়াত একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছে‌ড়ে ভি‌ডিও রেকর্ডটা ল্যাপট‌পে প্লে ক‌রে দেখ‌লো। আয়া‌তের গা ঘিন ঘিন কর‌ছে পু‌রো ভি‌ডিওটা দে‌খে। কোন মে‌য়ে নি‌জের এমন নোংড়া ভি‌ডিও বানা‌তে পা‌রে ব‌লে আয়া‌তের ধারনা ছি‌লো না। অবশ্য রিয়া হয়ত ওর অপমা‌নের শোধ তুল‌ছে। ভি‌ডিও ছে‌লেটা মো‌টেও আয়াত না। পু‌রো ভি‌ডিওটা এত নিপূন ভা‌বে গ্রা‌ফিক্স করা হ‌য়ে‌ছে। যে কেউ মান‌তে বাধ্য হ‌বে এটা আয়াত। আয়াত ভাব‌ছে তনয়া ছাড়া অন্য মে‌য়ে‌কে স্পর্শ করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। ত‌বে এই ভি‌ডিওর সত্যতা বের কর‌তে হ‌বে। আয়াত ওর এক ফ্রেন্ড‌কে ফোন দি‌লো, যে এসব বিষ‌য়ে দক্ষ। তার সা‌থে রা‌তেই দেখা কর‌তে চ‌লে গে‌লো। 

৪৫!!

      তনয়া আয়ম‌নের কো‌লে মাথা দি‌য়ে কাঁদ‌ছে আর পু‌রোটা বল‌ছে। সব শু‌নে আয়মন বল‌ল, 
__আমার মন চা‌চ্ছে তো‌কে ঠা‌টি‌য়ে দু‌টে‌া চড় মা‌রি। রিয়া তোর কা‌ছে কেঁ‌দে কেঁ‌দে বলল, আর কিছু ভি‌ডিও দেখা‌লো ওম‌নি তুই সব কিছু মে‌নে নি‌লি? কেন? 

__আপু আমি সব খোঁজ নি‌য়ে‌ছি। গত ক‌য়েকমা‌সে আয়াত ক‌য়েকবার ওর সা‌থে দেখা কর‌ছে। রিয়ার প্রেগ‌নেন্স‌সি টেস্ট ক‌রি‌য়ে‌ছি, ছ‌বিগু‌লো ভি‌ডিও এডিট করা কিনা সব পরীক্ষা ক‌রে ত‌বে সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি। 

__তনয়া শোন, মানলাম তুই সব নি‌জে পর্য‌বেক্ষন ক‌রে‌ছিস তারপরও তোর ভুল হ‌য়ে‌ছে। আমি গ্যা‌রা‌ন্টি দি‌য়ে বল‌তে পা‌রি। রিয়া মে‌য়েটাই কোন না কোন কার‌নে এসব ক‌রি‌য়ে‌ছে। বড়সড় ধর‌নের ষড়যন্ত্র করা হ‌চ্ছে তো‌দের দুজ‌নের সম্পর্ক ভাঙার জন্য। তুই আয়াত‌কে এভাবে অপমান ক‌রে মস্তবড় ভুল ক‌রে‌ছিস। একবার ভাব আয়াত য‌দি তেমন মান‌সিকতার হ‌তো ত‌বে এত‌দি‌নে তোর সা‌থে কত কি কর‌তে পার‌তো। তুই তো বল‌তি আয়া‌তের সা‌থে রা‌তের পর রাত এক বিছানায় থে‌কে‌ছিস তবুও আয়াত তোর সা‌থে নোংড়া‌মি ক‌রে‌নি। একবার ভা‌ব যে, মানুষটা তো‌কে এতটা বিশ্বাস দি‌য়ে‌ছে তুই তা‌কে একটু বিশ্বাস দি‌তে পার‌লি না?

আয়ম‌নের কথায় যে‌নো তনয়ার টনক নড়‌লো। হ্যাং হ‌য়ে যাওয়া মাথার বু‌দ্ধিটা যে‌নো খুল‌তে শুরু কর‌লো। তনয়া ঠিক কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছেনা। আয়ম‌নের দি‌কে ফ্যালফ্যাল ক‌রে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো। আয়মন অনেক ভা‌বে বুঝা‌লো। সব দিক চিন্তা ক‌রে তনয়া দেখ‌লো স‌ত্যি তে‌া, মস্তবড় ভুল ক‌রে ফেল‌ছে। এরকম সিন‌ক্রি‌য়েট না ক‌রে ওর উচিৎ ছি‌লো আয়া‌তের সা‌থে ঠান্ডা মাথায় ব‌সে কথা বলা। কিন্তু এটা ও কী কর‌লো? নি‌জের পা‌য়ে নি‌জে কুড়াল মার‌লো! অন্যের কথায় নি‌জের সংসা‌রে নি‌জে আগুন দি‌লো! নাহ কিছু ভাব‌তে পার‌ছে না তনয়া। যন্ত্রনায় মাথাটা ছি‌ড়ে যা‌চ্ছে। তনয়ার এখন ম‌নে হ‌চ্ছে লো‌কে স‌ত্যি ব‌লে মে‌য়েরা সবসময় এক লাইন বে‌শি বু‌ঝে, "ক" তে "কলকাতা" না ভে‌বে "করা‌চি" ভে‌বে ফেলে।

‌কিছুক্ষন পর তানভী আস‌লো কিন্তু রাগ ক‌রে তনয়ার সা‌থে একটা কথাও বল‌লো না। সারা রাত তনয়া আয়ম‌নের কো‌লে মাথা দি‌য়ে কান্না কর‌ছে। ইতিম‌ধ্যে তনয়ার মনটা অনু‌শোচনার আগু‌নে দগ্ধ হ‌তে শুরু কর‌ছে।

আয়মন এসে‌ছি‌লো অফি‌সের কিছু কা‌জে ভাব‌লো তনয়ার সা‌থে দেখা ক‌রে যা‌বে। কিন্তু না চাই‌তেও তনয়ার অবস্থা দে‌খে রা‌তে থাক‌তে হ‌লো। প‌রের দিন সকা‌লে অনেকভা‌বে তনয়া‌কে আর আয়াত‌কে আলাদা আলাদা ভা‌বে বু‌ঝি‌য়ে আয়মন চলে গে‌লো। 

আয়মন যাবার কতক্ষন পরই তা‌মিম তনয়ার সা‌থে দেখা ক‌রে অনেক কথা বল‌ল। 

__তনয়া আজ আমি তো‌কে আয়া‌তের বিষ‌য়ে কিছু কথা বল‌বো। তনয়া উৎসুক চো‌খে তা‌মি‌মের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো।

—————

তা‌মিম তনয়ার পা‌শে ব‌সে বলল, 
__‌বোন তোর সা‌থে কিছু কথা আছে?

__হ্যাঁ মেজদাভাই ব‌লো?

__তনয়া আজ আমি তো‌কে আয়া‌তের বিষ‌য়ে কিছু কথা বল‌বো। তনয়া উৎসুক চো‌খে তা‌মি‌মের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। তা‌মিম কী বল‌বে সেটা ভে‌বে তনয়ার খুব ভয় হ‌চ্ছে। কোথাও আয়াতের বিষ‌য়ে নে‌গে‌টিভ কিছু বল‌বে না তো? নি‌জে‌কে ম‌নে ম‌নে প্রস্তুত কর‌ছি‌লো তনয়া। ম‌নে ম‌নে আল্লাহ‌কে ডাক‌ছি‌লো যা‌তে আয়া‌তের বিষ‌য়ে নে‌গি‌টিভ কিছু না শোনা লা‌গে।  তনয়া ম‌নে প্রা‌ণে চায় ও যা‌তে নি‌জে ভুল প্রমা‌ণিত হয় আর আয়াত স‌ঠিক। এতে য‌দি আয়াত তনয়া‌কে শা‌স্তিও দেয় তাও তনয়া মাথা পে‌তে নি‌বে। অনেকটা সাহস নি‌য়ে তনয়া বলল, ব‌লো দাদাভাই।

__তানভী আমা‌কে তোর আর আয়া‌তের বিষয়টা বল‌ছে। তোর কী ম‌নে হয় তু‌ই ঠিক কর‌ছিস?

__তনয়া নিশ্চুপ।

__য‌দি তুই ম‌নে ক‌রিস গতকাল আয়া‌তের সা‌থে যেটা কর‌ছিস সেটা ঠিক কর‌ছিস ত‌বে বল‌বো তুই ভুল শুধু ভুল না মহা অন্যায় কর‌ছিস। একরকম পাঁপ ক‌রে‌ছিস আয়া‌তের ভা‌লোবাসায় স‌ন্দেহ ক‌রে। তনয়া চোখ বড় বড় ক‌রে তা‌মিমের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। তা‌মিম বলল, হ্যাঁ ঠিক শুন‌ছিস আমি আয়াতের সা‌পোর্ট কর‌ছি। জা‌নিস বোন আয়াত হয়ত ভাব‌ছে, তো‌দের সম্পর্ক এত‌দিন হ‌লো আমি সব জে‌নেও চুপ আছি তার মা‌নে আমি বড় কিছু কর‌বো। পাগলটা এটাও জা‌নেনা আমি  তো‌দের সম্পর্ক ক‌বেই মে‌নে নি‌য়ে‌ছি। 

হ্যাঁ ক‌লেজ জীব‌নে আমা‌দের ঝা‌মেলা ছি‌লো। কিন্তু তার শা‌স্তি দুজ‌নেই বরাবর পে‌য়ে‌ছি। ও যেমন ক‌লেজ জীব‌নের ঝামেলা ক‌লে‌জেই ভু‌লে গেছে আমিও তেমন ভু‌লে গে‌ছি। হ্যাঁ ওকে প্রথমব‌ার তোর পিছ‌নে ঘুর‌তে দে‌খে রাগ হ‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু তারপর ভাবলাম আমা‌দের ঘ‌রের পরীটার জন্য আয়া‌তের থে‌কে বেটার কেউ হ‌তে পা‌রেনা। আয়াত সি‌ন্স‌সিয়ার, কেয়া‌রিং, অনেস্ট আর সব থে‌কে যেটা বে‌শি সেটা‌ হ‌লো তো‌কে পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সে। নয়ত আমি ভয় দেখা‌নোর পরও বল‌তে পার‌তো না, তো‌কে জীবন থাক‌তে ছাড়‌বে না। তোর জন্য নি‌জের মা‌য়ের সা‌থে ঝগরা কর‌তে পার‌তো না। ছে‌লেটা তো‌কে পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সে রে। আর তু‌ই তাকে অ‌বিশ্বাস ক‌রে ফেল‌লি। অন্যায় ক‌রে‌ছিস তনয়া, মস্তবড় ভুল ক‌রে‌ছিস। এখন তনয়া নি‌জে‌কে আটকা‌তে পার‌লো না। তা‌মিম‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌বে পাগ‌লের মত ক‌ান্না কর‌তে লাগ‌লো। আর বলতে লাগ‌লো,

__দাদাভাই এখন আমি কী কর‌বো? ও যে বল‌ছে আমায় ডি‌ভোর্স দি‌বে। 

__কী ডি‌ভোর্স মা‌নে? তো‌দের বি‌য়ে ক‌বে হ‌লো?

__গত সপ্তা‌হে। (পু‌রোটা বল‌লো তা‌মিম‌কে)

__কাঁ‌দিসনা পাগলী আয়াত তো‌কে ভয় দে‌খি‌য়ে‌ছে। রা‌গের মাথায় বল‌ছে দেখ‌বি সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। 

তনয়া কিছু‌তেই নি‌জের মন‌কে বুঝা‌তে পার‌ছে না। অনর্গল কেঁ‌দেই যা‌চ্ছে। তা‌মিম অনেক ক‌ষ্টে বুঝি‌য়ে শান্ত ক‌রে তনয়াকে জোড় ক‌রে কিছ‌ু খাই‌য়ে দি‌য়ে চ‌লে গে‌লো। 

৪৬!!

‌সে‌দিন বিকা‌লে, 
সারা‌দিন কান্না করায় তনয়ার খুব মাথা ব্যাথা কর‌ছে। তাই বিকাল বেলা গোসল কর‌তে ঢুক‌লো। আয়াত তনয়ার বাসার সাম‌নে এসে ক‌য়েকবার বেল বাজা‌লো, তনয়া খুল‌ছে না দে‌খে, নি‌জের কা‌ছে থাকা চা‌বি দি‌য়েই দরজা খু‌লে ভিত‌রে ঢু‌কে গে‌লো। তনয়ার রু‌মে যে‌তে দে‌খে তনয়া কেবল গোসল ক‌রে টাও‌য়েল প‌রে বের হ‌য়ে‌ছে। দুজনার চোখাচো‌খি হ‌তেই লজ্জায় তনয়া অন্য দি‌কে ঘু‌রে গে‌লো। আয়াতও অন্য দি‌কে ঘু‌রে বলল, পাঁচ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে রে‌ডি হ‌য়ে এসো। আমার সা‌থে বের হ‌বে। বল‌ছিলাম না দু‌দি‌নের ম‌ধ্যে তোমা‌কে ভুল প্রমা‌ণিত কর‌বো। দু‌দি‌নের প্রয়োজন নেই এখনই চ‌লো। 

‌কিছুক্ষন পর তনয়া রে‌ডি হ‌য়ে বের হ‌তেই আয়াত তনয়া‌কে বাই‌কে ক‌রে নি‌য়ে যা‌চ্ছে। তনয়া এতবার জি‌জ্ঞেস কর‌লো কোথায় যা‌চ্ছি কিন্তু আয়াত কোন উত্তর দিলো না। কিছুক্ষন পর থানার সাম‌নে এসে আয়াত বাইক থামা‌লো। তনয়া থানার সাম‌নে নে‌মে বুঝ‌তে পার‌ছে না আয়াত এখা‌নে কী করতে আস‌ছে। বে‌শি না ভে‌বে আয়া‌তের পিছু পিছু থানার ভিত‌রে গে‌লো। ভিত‌রে গি‌য়ে দে‌খে রিয়া জে‌লের ভিত‌রে আর বাই‌রে আয়াতের কজন বন্ধু নাঈম, রাজু , সা‌থে তানভ‌ী-মেঘা আর তা‌মিমও বসা। সবার মুখ গম্ভীর। আয়াত তনয়াকে সাম‌নে এনে পু‌লিশ অফিসার‌ রা‌সেলকে বলল, 
__স্যার আপ‌নিই পু‌রোটা বলুন প্লিজ।

__মিঃ আয়াত মিস রিয়ার না‌মে মানহা‌নির আর মেন্টাল হ্যারাজ‌মেন্ট এর কেস কর‌ছে। মিঃ আয়া‌তের বয়া‌নের ভি‌ত্তি‌তে গতকাল রাত থে‌কেই আমরা তদন্ত ক‌রি। মিঃ আয়াতই আমা‌দের ১০০% সহ‌যোগীতা ক‌রে। তা‌তে যা প্রমাণ পাই মিস রিয়া আপনা‌কে এটা বল‌ছি‌লো সে আয়াতের বাচ্চার মা হ‌বে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। স‌ত্যি বল‌তে রিয়া প্রেগ‌নেন্টই না। আপনা‌কে হস‌পিটা‌লে বসে যে, ‌প্রেগ‌নে‌ন্সি টেস্ট ক‌রি‌য়ে রি‌পোর্ট দে‌খি‌য়ে‌ছে সেটা বানা‌নো মিথ্যা। ওনি আগে থে‌কেই টাকা দিয়ে ক‌রি‌য়ে‌ছেন। আর ‌ভি‌ডিওটা সম্পূর্ণ ফেইক। মিস রিয়া খুব দক্ষ আর প্র‌ফেশনাল ভি‌ডিও এডিটর‌কে দি‌য়ে ক‌রি‌য়ে‌ছে। সাধারন মানু‌ষের প‌ক্ষে এটা বোঝা  একরকম অসম্ভব যে, ভি‌ডিওটা ভূয়া। আস‌লে আমরা প্রযু‌ক্তির সৎ ব্যবহার না ক‌রে অসৎ ব্যবহারটাই বে‌শি ক‌রি। ‌ভি‌ডিওটা প্রথ‌মে আমরাও বিশ্বাস ক‌রে‌ছিলাম প‌রে ল্যা‌বে পা‌ঠি‌য়ে স‌ত্যিটা জা‌নি। আর সব থে‌কে বড় প্রমাণ মিস রিয়া প্রেগ‌নেন্ট না। সো প্রেগ‌নেন্ট না হ‌লে মিঃ আয়া‌তের বাচ্চা তার পে‌টে থাকা অসম্ভব। 
এখন এসব সে কেন কর‌ছে তা মিস রিয়া নি‌জে বল‌ুক।

পা‌শে বসা ম‌হিলা ক‌ন্টোস‌টেবল রিয়া‌কে ধমক দি‌য়ে পু‌রোটা বল‌তে বল‌ল। রিয়া বলা শুরু কর‌লো,
__আস‌লে আমি আয়া‌তের অপমা‌নের শোধ নি‌তে চাই‌ছিলাম। আর তাছাড়া আমি আয়াত‌কে নি‌জের ক‌রে পে‌তে চাই‌ছিলাম। 

__তনয়া বলল, অপমা‌নের শোধ মা‌নে?

__রাজু বলল, তনয়া শোন আয়া‌তের সা‌থে রিয়ার একটা রি‌লেশন ছি‌লো সেটা তো তুই জা‌নোস। কিন্তু সম্পর্ক গাঢ় হবার আগেই আয়াত সম্পর্ক ভে‌ঙে দেয় কারন রিয়ার সা‌থে ওর যা‌চ্ছিল না। কিন্তু রিয়ার কা‌ছে ম‌নে হচ্ছিল আয়াত ওকে রি‌জেক্ট কর‌ছে। সে জন্য ক‌লে‌জে ব‌সে অনেক সিন‌ক্রি‌য়েট ক‌রে। যার কার‌নে আয়াত সবার সাম‌নে ব‌সে ওকে চড় মে‌রে অপমান ক‌রে। ব্যপারটা ঐ পর্যন্তই ছি‌লো। তারপর এত বছর পর রিয়া কেন এসব কর‌ছে তা বুঝতে পার‌ছিনা। কিরে রিয়া বল?

__আস‌লে ক‌য়েকমাস আগে আয়া‌তের সা‌থে আমার আবার দেখা হয়। আমি আমার লাই‌ফে খুব একা ছিলাম। আয়াত‌কে দে‌খে ওকে আবার ভা‌লোবাস‌তে শুরু ক‌রি। ওর ভিতর বি‌শেষ কিছু আছে যা সবসময় আমা‌কে ওর দিকে টান‌তো। তারপর আয়া‌তের সা‌থে বেশ ক‌য়েকবার দেখা ক‌রি, কিন্তু আয়াত ভাব‌তো কাকতালীয়ভা‌বে দেখা হ‌চ্ছে কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃতভা‌বেই দেখা করতাম। তারপর ওর দি‌কে আমি নি‌জে থে‌কেই বন্ধু‌ত্বের হাত বাড়াই। আয়া‌ত হয়ত ভাব‌ছে পিছ‌নের সবটা ভু‌লে যাওয়াই শ্রেয় তাই আমার সা‌থে বন্ধুত্ব ক‌রে। 
‌কিন্তু যতবারই আয়া‌তের সা‌থে দেখা হত, ওর দশটা কথার নয়টাই বল‌তো তনয়া‌কে নি‌য়ে। ঘৃণা করতে শুরু ক‌রি তনয়াকে। প্রথ‌মে ভাব‌ছিলাম তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে মিথ্যা কিছু আয়াত‌কে বোঝা‌বো। কিন্তু তারপর দেখলাম আয়াত তনয়াকে এত বিশ্বাস ক‌রে যে, তনয়া নি‌জে য‌দি নি‌জের দোষ ব‌লে আয়াত সেটা বিশ্বাস কর‌বে না। 

তারপর তনয়া‌কে ট্রাপ করলাম। কারন ওদের বয়‌সি মেয়ে‌দের মন সে‌সি‌টিভ থা‌কে। ম‌নে অল্প নাড়া পড়‌লেই যে কোন কথা বিশ্বাস ক‌রে। তনয়ার সাম‌নে এমন সিসু‌য়েশন তৈরী করলাম যে, তনয়া বিশ্বাস কর‌তে বাধ্য হ‌লো। 
তারপ‌রের ঘটনা‌তো আপনারা জা‌নেনই।‌ আমি এবারও আয়া‌তের কা‌ছে রি‌জেক্ট হলাম। ব্যার্থ হলাম আমি, হে‌রে গেলাম। কেন বার বার রি‌জেক্ট ক‌রো আয়াত আমায়! কী দি‌য়ে‌ছে ঐ প্র‌তিবন্ধী মে‌য়েটা তোমায়? ও তো আমার মত সুন্দরও না। (ডুকরে কাঁদ‌ছে রিয়া)

আয়াত বলল, তোর সা‌থে কথা বল‌তেও ঘৃণা করে। তনয়া আমায় কী দি‌য়ে‌ছে সেটা আমা‌দের একান্ত ব্য‌ক্তিগত বিষয়। তুই এখন থাক জে‌লে। যখন তোর মান সম্মান পু‌রোটা ধূ‌লোয় মিশে যা‌বে তখন বুঝ‌বি মিথ্যার আশ্রয় নেয়া কত খারাপ। তোর প্ল্যানটা তো ফুলপ্রুভ ছি‌লো, কিন্তু প্ল্যান ভুল লো‌কের উপর প্র‌য়োগ ক‌রে‌ছিস। 

তনয়া রিয়ার কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
__আপ‌নি তো আমার থে‌কে কত বড়। আমার বড় বো‌নের মত। একটা মে‌য়ে হ‌য়ে এমন জঘন্য কাজ কর‌তে আপনার বাঁধ‌লো না। একটা মে‌য়ে হ‌য়ে আরেকটা মে‌য়ের সংসার ভাঙার কথা ভাব‌তে বুক কাপ‌লো না। আল্লাহ জীব‌নে আপনার ভা‌লো কর‌বে না।

তারপর সবাই থানার বাই‌রে চ‌লে আস‌লো। আয়াত তনয়ার সা‌থে একটা কথাও বল‌লো না। বাইক স্ট্রাট দি‌য়ে মেঘা‌কে নি‌য়ে চ‌লে গে‌লো। তনয়া নিথর চো‌খে আয়াতের যাবার পা‌নে তা‌কি‌য়ে রইল। 

৪৭!!

     তেইশ দিন পর।
আয়াত এখনও তনয়ার সা‌থে কথা ব‌লে না। গত তেইশ দি‌নে তনয়া কতবার কতভা‌বে যে, আয়া‌তের কা‌ছে ক্ষমা চে‌য়ে‌ছে তার হিসাব নেই। কিন্তু প্র‌তিবার আয়াত ওকে ফি‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। একবার তনয়া বলল, আমি তোমার বি‌য়ে করা স্ত্রী, আমাকে না মান‌লে থানায় নির্যাতন মামলা কর‌বো। 

আয়াত হে‌সে বলল, কী প্রমাণ তু‌মি আমার স্ত্রী! আমা‌দের কোন রে‌জি‌ট্রেশন হয়‌নি। আর মস‌জি‌দে ব‌সে ঈমা‌মের দেয়া বি‌য়ে আদালত মা‌নে না। তনয়া আয়া‌তের কথা শু‌নে ঠে‌াঁট বা‌কিয়ে কান্না কর‌ছি‌লো। কারন স‌ত্যি ওর কা‌ছে ওর বি‌য়ের কোন প্রামাণ নেই। 

বুধবার বিকা‌লে, 
তনয়া ফোন ক‌রে এমন চিৎকার দি‌লো, যে আয়াত ভাব‌ছে তনয়া কোন ব্যাথা পে‌য়ে‌ছে। বিশ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে আয়াত তনয়ার ফ্ল্যা‌টে এসে পড়‌লো। তনয়া‌ তখন মিট মিট ক‌রে হাস‌ছি‌লো। আয়াত রা‌তে তনয়া‌কে চড় মার‌তে নি‌য়েও আবার থেমে যায়। তনয়া আয়া‌তের হাত ধ‌রে বলল,
__মা‌রো বকা দাও তবুও আর এভা‌বে ইগ‌নোর ক‌রোনা। আর নি‌তে পার‌ছি না। 

__আ‌মি তোমার মত না। কিছু না জে‌নে বু‌ঝেই চড় ব‌সি‌য়ে দিবো। 

তনয়া বুঝ‌লো সে‌দি‌ন আয়াতকে চড় মারায় আয়াত খুব কষ্ট পে‌য়ে‌ছে। তনয়া কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বলল,
__একটা না হয় ভুল ক‌রে‌ছি, তার জন্য রোজ ক্ষমা চা‌চ্ছি, বললাম শা‌স্তি দাও তাও তু‌মি ঠিকভা‌বে কথা বল‌ছো না। আচ্ছা তোমা‌কে এই ডান হাত দি‌য়ে চড় মে‌রে‌ছি তো! দাড়াও ব‌লে দরজার মু‌খে রে‌খে স‌জো‌রে  হা‌তে দরজা দি‌য়ে চাপ দি‌লো। গলগল ক‌রে রক্ত গ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছে তনয়ার হাত থে‌কে। তনয়ার এমন পাগলামী‌তে আয়াত হতভম্ব হ‌য়ে গে‌লো। 

তারাতা‌রি তনয়ার হাত চে‌পে ধ‌রে ফাস্টএইড ক‌রে দি‌লো। তনয়াকে জোড় ক‌রে ধ‌রে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে গে‌লো। কারন ফ্রাকচার হবার সম্ভবনা আছে। আয়াত তবুও তনয়ার সা‌থে একটা কথা বল‌লো না। 

এক্স‌-রে ক‌রে দেখ‌লো ভা‌ঙে নি ত‌বে অনেক চাপ লে‌গে‌ছে। আয়াত ডাক্তার দে‌খি‌য়ে তনয়া‌কে বাসায় পৌঁ‌ছে দি‌য়ে শুধু বলল, ঔষধ ঠিকমত খে‌য়ে নিও।‌ তনয়া মাথা না‌ড়ি‌য়ে সম্ম‌তি জানালো। আয়াত চ‌লে গে‌লো। 
তনয়া রু‌মে ব‌সে হাউমাউ ক‌রে কাঁদ‌ছে। কেউ নেই ওর বড্ড একা। 
তনয়া একটু স্বাভা‌বিক হ‌য়ে ওর মা নয়না‌কে ফোন কর‌লো,
__হ্যা‌লো মা কেমন আছো?

__ভা‌লো তুই?

__হ্যাঁ ভা‌লো। মা বাবা কেমন আছে?

__না‌রে ইদা‌নিং তার প্রেশারটা খুব বে‌ড়েছে। ডাক্তার বল‌ছে টেনশন কমা‌লে ঠিক হ‌য়ে যা‌বে।

__মা বাবা কী আমায় কখ‌নো ক্ষমা কর‌বে না? মা বাবাকে ব‌লোনা, আমা‌কে ক্ষমা ক‌রে দি‌তে। আমার আর একা থাক‌তে ভা‌লো লাগ‌ছে না। 

__হ্যাঁ মা তোর বাবা‌কে বুঝা‌বো। 

__আচ্ছা ব‌লে তনয়া ফোনটা রে‌খে দি‌লো। হা‌তে প্রচন্ড যন্ত্রনা হ‌চ্ছে। মাথাটাও ব্যাথা কর‌ছে। বিছানায় শু‌তেই ঘুম রা‌জ্যে পা‌রি জমা‌লো। রা‌তে হা‌তের যন্ত্রনায় গা কা‌ঁপি‌য়ে জ্বর আস‌লো। কিন্তু উঠে খাবার রান্না ক‌রে ঔষধ খাবার মত শ‌ক্তি তনয়ার নেই। তাই হাল ছে‌ড়ে দি‌য়ে শু‌য়ে পড়‌লো। চো‌খের সাম‌নে ভাস‌ছে ছোট বেলা থে‌কে আয়া‌তের সাথে সম্পর্ক হওয়া পর্যন্ত হাজা‌রো র‌ঙীন স্মৃ‌তি। আর নি‌জের ক‌য়েকমা‌সের সংগ্রাম করা ক‌ষ্টেভে‌জা একা‌কিত্ব।

প‌রের‌দিন বিকা‌লে,
আয়াত দুপুর থে‌কে তনয়া‌কে ফোন কর‌ছে কিন্তু তনয়া ফোন রি‌সিভ কর‌ছে না। কোন উপায় না পে‌য়ে পা‌শের বাসার আন্টির ফো‌নে ফোন কর‌লো। আন্টি ফে‌ান রি‌সিভ কর‌তেই আয়াত তনয়ার কথা জানতে চাইল,

আ‌ন্টি বলল, তনয়ার বোধয় গতকাল রাত থে‌কে খুব জ‌্বর। হা‌তে খুব ব্যাথা ওর, হাত ফু‌লে গে‌ছে অনেক। দুপু‌রে আমা‌দের বাসায় আস‌ছি‌লো, আমার ছে‌লে‌কে দি‌য়ে খাবার কি‌নে আনা‌বে ব‌লে। ওর বাসায় গ্যাস শেষ হ‌য়ে গে‌ছে। আর ওর শরী‌রের যা অবস্থা দেখলাম তা‌তে রান্না ক‌রে খে‌তে পার‌বে না। তাই জোড় ক‌রে আমিই ওকে আমা‌দের বাসায় খাওয়ালাম। আয়াত একটা কথা বলি? তু‌মিই অনেক আগে বল‌ছো তনয়া তোমার স্ত্রী। তা বাবা মু‌খে স্ত্রী বল‌লেই হয় না। স্বামী হবার দা‌য়িত্বও পালন কর‌তে হয়। মে‌য়েটা একা এই শরী‌রে কিভা‌বে কী কর‌ছে বুঝ‌তে পার‌ছো? আন্টি ফোন রাখ‌তেই আয়াত আর এক মুহূর্তও দাড়া‌লো না।
সোজা তনয়ার বাসায় চ‌লে গে‌লো।

দরজা খু‌লে তনয়ার রু‌মে গি‌য়ে দেখ‌লো তনয়া ক‌ম্বোল পে‌চি‌য়ে বে‌ঘো‌রে ঘুমা‌চ্ছে। জ্ব‌রে তা‌পে ম‌নে হ‌চ্ছে তনয়া গা থে‌কে আগুন ঝড়ছে। তনয়ার মাথায় হাত বুলা‌তেই তনয়া চোখ পিট‌পিট ক‌রে আয়া‌তের দি‌কে তাকা‌লো। আয়াত‌কে দে‌খে উঠ‌তে চেষ্টা করে, আয়াত সাহায্য কর‌লো, তনয়া আয়াতকে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে বলল,
__‌প্লিজ আয়াত ক্ষমা করে দাও। আর জীব‌নেও তোমায় ভুল বুঝ‌বো না। 

আয়াত তনয়া‌কে বিছানায় শু‌য়ে দি‌লো।
তারপর তনয়ার গা মু‌ছে পরনের ড্রেস বদ‌লে মাথায় পা‌নি দিলো। ফোন ক‌রে গ্যাস আনি‌য়ে খাবার বানা‌লো। তনয়া‌কে খাই‌য়ে দি‌য়ে ঔষধ খাওয়া‌লো। রা‌তে তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে নি‌য়ে শু‌য়ে পড়‌তেই তনয়া বলল………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন