অবেলার অভিলাষ - পর্ব ২০ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


আয়াত তনয়া‌কে বিছানায় শু‌য়ে দি‌লো।
তারপর তনয়ার গা মু‌ছে পরনের ড্রেস বদ‌লে মাথায় পা‌নি দিলো। প্রথমবার নি‌জে থেকে তনয়ার ‌ড্রেস বদ‌লে দি‌লো, শরীর মু‌ছে দি‌লো, তনয়া‌কে স্পর্শ কর‌লো আয়া‌তের কেমন যে‌নো লাগ‌ছে। য‌দি ধর্ম মতে ওরা এখন স্বামী স্ত্রী তবুও নি‌জে‌দের মা‌ঝের জড়তা এখ‌নো কা‌টে‌নি। তারপর ফোন ক‌রে গ্যাস আনি‌য়ে খাবার তৈরী করলে‌া। তনয়া‌কে খাই‌য়ে দি‌য়ে ঔষধ খাওয়া‌লো।

রা‌তে তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে নি‌য়ে শু‌য়ে পড়‌তেই তনয়া বলল,
__আয়াত শোন!

__হুমম ব‌লো।

কিন্তু তনয়া কোন কথা না ব‌লে আয়া‌তের দি‌কে অপলক চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল। তনয়ার ডান হাতটা প্রচন্ড ব্যাথা ফু‌লে গে‌ছে। তবুও ডান হাতটা দি‌য়ে আলতো ক‌রে আয়া‌তের গাল ছু‌ঁয়ে দি‌লো। আয়াত তনয়ার হাতটা ধ‌রে হা‌তে ক‌য়েকটা চু‌মো এঁকে দি‌লো। তনয়া তখনও আয়া‌তের দি‌কে ঘোর লাগা চো‌খে তা‌কি‌য়ে আছে। আয়াতও তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। আয়াত কিছু বল‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো, তার আগেই তনয়া আয়া‌তকে নি‌জের গরম নিশ্বা‌সে আবদ্ধ ক‌রে ফেল‌লো। প্রথমবার যখন তনয়ার ঠোঁ‌টের স্পর্শ পে‌য়েছি‌লো সেটা নেহাৎ একটা এক‌সি‌ডেন্ট ছি‌লো। আজও তনয়া যা কর‌ছে জ্বর আর অসুস্থতার ঘো‌রে। আয়াত চে‌য়েও নি‌জে‌কে আটকা‌তে পার‌ছেনা। এত মাস যাবত তনয়া‌র সা‌থে সম্পর্ক অথচ কখ‌নো তনয়ার এত কা‌ছে আসে‌নি। এমন না আয়া‌তের মন চায়‌নি, কিন্তু সবসময় নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্র‌নে রে‌খে‌ছে। আজ তনয়ার এমন করায় সব নিয়ন্ত্রন হা‌রি‌য়ে ফেল‌লো। নি‌জেও একহা‌তে তনয়ার চু‌লের ভিতর হাত নি‌য়ে অন্য হা‌তে তনয়াকে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ‌নি‌জের নিশ্বা‌সের সা‌থে মি‌লি‌য়ে ফেল‌ছি‌লো। কিছু সময় পর আয়া‌তের হাতটা তনয়ার কোম‌রে চ‌লে যে‌তেই আয়া‌তের ম‌নে হল, এখন বে‌শি না এগো‌নোই বেটার। কারন তনয়া‌কে এভা‌বে কা‌ছে পে‌তে চায়না। যখন তনয়া‌কে কা‌ছে টান‌বে তখন পু‌রোটা দি‌য়ে তনয়া‌কে অনুভব কর‌বে। আয়াত তনয়ার ঠোঁট ছে‌ড়ে দি‌তেই তনয়া আবার অস্থির হ‌য়ে আয়া‌তের ঠোঁ‌টের দি‌কে এগো‌লো। আয়াত তনয়া‌কে সামলা‌তে ধমক দি‌য়ে বলল,
__ক‌ন্ট্রোল ইউর সেলফ তনয়া। 

তনয়া চুপ‌সে গে‌লো। এভা‌বে ভা‌লোবাসার জন্য কেউ ধমক দেয়! লজ্জায় ম‌া‌টি‌তে মিশে যাচ্ছি‌লো তনয়া। খুব অপমানবোধ তৈরী হ‌চ্ছি‌লো নি‌জের মা‌ঝে। তাই অভিমান ক‌রে আয়া‌তের থে‌কে নি‌জে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে অন্যপা‌শে ফি‌রে শু‌য়ে পড়‌লো। জ্বরটা অনেকটা কম তনয়ার। কারন ব্যথায় জ্বর এসে‌ছি‌লো। পেইন কিলার নেয়ার পর জ্বর অনেকটা ক‌মে গে‌ছে। এভা‌বে কিছুক্ষন চুপ ক‌রে থাকার পর তনয়া বল‌লো,
__শীত কর‌ছে

আয়াত টান দি‌য়ে তনয়াকে নি‌জের কা‌ছে এ‌নে বুকের মা‌ঝে নি‌য়ে দুজ‌নেই এক কম্ব‌লে আবদ্ধ হ‌লো। 
তনয়ার চোখের বাঁধ ভে‌ঙে গে‌লো। কান্না কর‌তে কর‌তে নাক টান‌তে টান‌তে বলল,

__‌প্লিজ আয়াত ছে‌ড়ে যেওনা। আর একা থাক‌তে পার‌ছি না। এবার তো ক্ষমা ক‌রে দাও। নাহয় নি‌জের অজা‌ন্তে একটা ভুল ক‌রে‌ছি তাই ব‌লে এত‌দিন শা‌স্তি দি‌বে?

আয়াত কিছু বলল না। শুধু তনয়া‌কে গভীর ভাবে জড়ি‌য়ে ধর‌লো। আয়া‌তের এই চুপ থাকা তনয়া নি‌তে পার‌ছে না। কান্না কর‌তে কর‌তেই আয়া‌তের বু‌কে ঘু‌মি‌য়ে পড়‌লো।

   প‌রের দিন সকা‌লে তনয়া ঘুম থে‌কে উঠে দে‌খে আয়াত পা‌শে নেই। সারা ঘর ঘু‌রেও আয়া‌তের দেখা পে‌লোনা। ডায়‌নিং টে‌বি‌লে খাবার সাজা‌নো আর পা‌শেই গ্লাস দিয়ে একটা চিরকুট চাপা দেয়া। তনয়া চিরকুটটা খু‌লে পড়া শুরু কর‌লো। লেখা ছি‌লো,

          আমার অফি‌সে কিছু জরু‌রি কাজ থাকায় জল‌দি গেলাম। তোমার জ্বর ক‌মে গে‌ছে। নাস্তা বা‌নি‌য়ে রাখলাম খে‌য়ে ঔষধ খে‌য়ে নি‌বে। আর দুপু‌রের খাবার  দুপু‌রে তোমায় দি‌য়ে যা‌বে। খবরদার ঠান্ডা লাগাবে না। আমি রোজ রোজ নি‌জের কাজ ফে‌লে তোমার সেবা কর‌তে পারবো না। তাই নি‌জের খেয়াল রাখ‌তে শে‌খো।  আর পাকা‌মি ক‌রে য‌দি না খে‌য়ে থাক‌ছো ত‌বে যাও রাগ ক‌মে‌ছে তাও বে‌ড়ে যা‌বে। ম‌নে থা‌কে যে‌নো।

                                                        আয়াত

তনয়া চিরকুটটা প‌ড়ে রা‌গে ফুস‌ছে, ‌ফো‌নে আয়া‌তের ছ‌বি দেখে জিব দি‌য়ে ভেং‌চি কে‌টে নি‌জে নি‌জে বল‌ছে, 
__ব্যাটা‌কে কিছু‌তেই বা‌গে আনতে পার‌ছি না। আয়া‌তের বাচ্চা আয়াত তো‌কে আমি এত সহ‌জে ছাড়‌ছি না। নাহ আয়া‌তের বাচ্চা আয়াত কী ক‌রে হ‌বে? আমা‌দের বাচ্চার নাম তো আমি রাখ‌বো কারন আয়া‌তের বাচ্চার মা তো আমি হ‌বো। আমি ছাড়া ওর তো কোন গ‌তি নেই। অন্য কোন শাকচুুন্নির দি‌কে নজড় দি‌লে ওর চোখ আমি তু‌লে নি‌বো। অনেক সহ্য কর‌ছি আর না। আয়াতটা বড্ড খারাপ হ‌য়ে গে‌ছে। ব্যাটা‌কে শিক্ষা দেয়া জরু‌রি। তার আগে ফ্রেস হয় নি। শরীরটা ভা‌লো লাগছে, তারপর সে‌জেগু‌জে নি‌জের ড্রামা দি‌য়ে ব্যাটার মাথা খারাপ কর‌তে হ‌বে।

৪৮!!

        ‌বিকাল বেলা আয়াত অফিস থে‌কে বের হ‌য়ে গা‌ড়ি স্ট্রার্ড দি‌চ্ছে আর ভাব‌ছে তনয়ার জন্য বি‌শেষ কিছু প্ল্যান কর‌তে হ‌বে আজ। কিন্তু গা‌ড়ি‌তে বস‌তেই কেউ ওর মু‌খে কিছুটা‌ একটা চে‌পে ধর‌লো, তারপর কিছু ম‌নে নেই আয়া‌তের। যখন চোখ খুল‌লো তখন নি‌জে‌কে চেয়া‌রের সা‌থে বাঁধা পে‌লে। চারপাশটা ঘু‌রে ঘুরে দেখ‌তেই দেখ‌লো, ছোট্ট একটা রু‌মে চেয়া‌রের সা‌থে বাঁধা। সাম‌নের দি‌কে তাকা‌তেই ভূত দেখার মত চমকে উঠ‌লো, কারন সাম‌নের চেয়া‌রে তনয়া বাঁধা। 

আজ তনয়া‌কে এক পলক দে‌খে যে কেউ পাগল হ‌য়ে যা‌বে। কি সুন্দর ক‌রে শা‌ড়ি প‌রে হালকা সে‌জে‌ছে! আয়াত ভাব‌লো চেঁচা‌মে‌চি কর‌লে হিতে বিপরীত হ‌তে পা‌রে তাই। তাই মৃদু স্ব‌রে তনয়া‌কে ডাক‌লো।
__তনয়া! তনয়া!

‌কিছুক্ষন পর তনয়া চোখ খু‌লে তাকা‌লো। মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগ‌ছে তনয়ার। চোখ পিট পিট ক‌রে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কা‌লো। আয়াত তনয়া‌কে বলল,
__তনয়া তু‌মি এখা‌নে কী ক‌রে এলে?

__‌সেটা তো আমারও প্রশ্ন? অামি এখা‌নে কী ক‌রে এলাম! আর তু‌মি এখা‌নে কী কর‌ছো? আর আমরা এভা‌বে বাঁধা কেন?

__বুঝ‌তে পার‌ছি না কে কর‌ছে এসব! ত‌বে এটা বেশ বুঝ‌তে পার‌ছি আমা‌দের কিডনাপ করা হ‌য়ে‌ছে। আমি তো অফিস থে‌কে বের হ‌য়ে গা‌ড়ি‌তে ব‌সে‌ছিলাম তারপর মনে নেই। তু‌মি কিভা‌বে ?

__আ‌মি তো সে‌জেগু‌জে তোমার কা‌ছেই আস‌ছিলাম তোমার রাগ ভাঙ‌া‌তে। (গোমরা মু‌খে)। কিন্তু সিএন‌জি‌তে ওঠার পর আর ম‌নে নেই। 

বা‌কিটা আমি বল‌ছি, অপর পাশ থে‌কে 
মু‌খোশ পরা একজন লোক বলল। আয়া‌তের কা‌ছে এসে বলল,
__দেখ ভাই তো‌দের সাথে আমা‌দের কোন শত্রুতা নেই। কিন্তু গত কমাস যাবত যে কোম্পা‌নির যে প্র‌জে‌ক্টে তুই কাজ কর‌ছিস সে প্র‌জেক্টটা আমার চাই। তাই এই কাগ‌জে সাইন ক‌রে দে।

__অসম্ভব (আয়াত) 

__জানতাম তুই এটাই বল‌বি তাই তোর জিএফ কেও ধ‌রে আন‌ছি। একবার ভাব তোর জিএফ এর এই সুন্দর শা‌ড়ির ভিত‌রে থাকা সুন্দর শরীরটা থে‌কে য‌দি শা‌ড়িটা আলাদা ক‌রে ফে‌লি ত‌বে কেমন লাগ‌বে। তাও তোর সাম‌নে। তনয়া ভ‌য়ে কুক‌রে গে‌লো। আয়াত আর কিছু বলতে পার‌লো না, কারন তনয়ার সেফ‌টি ওর কা‌ছে সবার আগে। তাই ওদের কথামত সবগু‌লো কাগ‌জে সাইন ক‌রে দি‌লো। 

সাইন করার পর মু‌খোশ পরা লোকটা বলল, 
__তনয়া সব সাইন ঠিকমত হ‌য়ে গে‌ছে। এবার কী কর‌বো?

__হারা‌মি অামা‌র হাত আ‌গে খোল (তনয়া)

আয়াত চোখ বড় বড় ক‌রে ওদের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ওদের কথা শুন‌ছে। তনয়ার হাত খু‌লে দি‌তেই তনয়া দা‌ড়ি‌য়ে মু‌খোশ পরা ছে‌লেটার মুখোশ খু‌লে সেটার গা‌লে ঠাস ক‌রে একটও চড় দি‌য়ে বলল, 
__হারামজাদা এত টাইট করে কেন বাঁধছিস? আমার হা‌তে দাগ প‌ড়ে গে‌ছে।

মু‌খোশ পরা ছে‌লেটা‌কে দেখে আয়াত আরো অবাক হ‌লো কারন ছে‌লেটা তনয়ার ফ্রেন্ড। 
‌ছে‌লেটা তনয়ার চড় খেয়ে বলল, 
__স্য‌রি তনয়া। ও আস‌লে এ্যাক‌টিং কর‌তে গি‌য়ে ক্যা‌রেক্টা‌রে ঢুকে গে‌ছিলাম।
ও‌দের কান্ড দে‌খে আয়া‌ত অবাক ভঙ্গি‌তে তা‌কি‌য়ে রইল। তা দে‌খে তনয়া বলল,
__অবাক হবার দরকার নেই। পুরো প্ল্যান আমার ছি‌লো। আর তুমি কোন কোম্পা‌নির প্র‌জেক্ট ফাই‌লে নয় বরং আমা‌দের বি‌য়ের রে‌জি‌ট্রেশন পেপা‌রে সাইন কর‌ছো। খুব তো বলতা আমা‌দের বিয়ের ‌কোন লিগাল প্রমাণ নেই এবার প্রমাণ হ‌লো তো। এখন ধর্ম মতে আর আইন ম‌তে আমি তোমার স্ত্রী। এখন আমা‌কে মে‌নে নি‌তে না চাই‌লে সোজা আদ‌লতে যা‌বো। তখন বুঝবা ঠ্যালা কা‌কে ব‌লে! তনয়া ওর বন্ধু‌কে বলল, ঐ আশিককা তুই বা‌কি সবার কা‌ছে যা। আর পেপারটা কোন গোপন জায়গায় রাখ‌বি। 

__‌ঠিক আছে দোস্ত। কিন্তু আমা‌দের ট্রিট?

__আ‌রে ট্রিট তো‌দের দুলাভাই দি‌বে। নো টেনশন। তুই যা আমি ওকে স্বাভা‌বিক ক‌রে আস‌ছি। 

আ‌শিক যে‌তেই তনয়া আয়া‌তের হাত খু‌লে আয়া‌তের কো‌লের উপর ব‌সে ওর গলা জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। আয়াত হাস‌বে না কাঁদ‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছেনা। এ মে‌য়ে র্নিঘাত মহা পাগল নয়ত এমন কেউ ক‌রে! তনয়া বলল,
__‌দে‌খো আয়াত অন্যায় ক‌রে‌ছি ব‌লে গত ছা‌ব্বিশ সাতাশ দিন যাবত ক্ষমা চে‌য়ে যা‌চ্ছি। কিন্তু তু‌মি তো তোমার এটি‌টিউড নি‌য়ে প‌রে আছো। তারপর বি‌য়ের প্রমাণ চা‌চ্ছিলে তাই এমন করলাম। এখন তো আর রাগ ক‌রে থে‌কো না। দে‌খো অামার মত কোন মে‌য়ে নি‌জের হ্যাজবেন্ড এর রাগ এভা‌বে ভাঙা‌বে না। 

আয়া‌তের ম‌নে ম‌নে খুব রাগ কর‌তে মন চাই‌ছে, কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার ও চে‌য়েও রাগ কর‌তে পার‌ছে না। উল্টো তনয়ার পাগলামী‌তে ওর প্র‌তি ভা‌লোবাসা অনুভব কর‌ছে। ভিষন হা‌সি পা‌চ্ছে আয়া‌তের। আয়াত শত চে‌য়েও হা‌সিটা আটকা‌তে পা‌রে‌নি। হা হা ক‌রে হে‌সে দি‌য়ে বলল,
__আল্লাহ আমি এই পাগলীটা‌কে নি‌য়ে কী কর‌বো?

__‌কী আর করবা? আমা‌কে অনেক ভা‌লোবাসবা, তারপর আমা‌দের দশ পনেরোটা বাচ্চা হ‌বে, পাঁচটা তোমার মত দেখ‌তে হ‌বে আর পাঁচটা আমার মত বা‌কি গু‌লো তানভী আর মেঘার মত। ওদের নি‌য়ে আমি বি‌পিএল এ একটা টিম কিন‌বো, আমি হ‌বো দ‌লের মা‌লিক আর তু‌মি আয়োজক মা‌নে টাকা দিবা। আর টি‌মের নাম হ‌বে আয়াতনয়া টিম। কী কেমন হ‌বে?

আয়াত হা হা ক‌রে হাস‌ছে। তনয়া মুগ্ধ নয়‌নের আয়া‌তের ভুবন ভুলা‌নো হা‌সি দেখ‌ছে। তনয়া আয়া‌তের হা‌সিটা দে‌খে আয়া‌তের গা‌লে উমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমহ দি‌য়ে দি‌লো। অনেকক্ষন আয়া‌তের গা‌লে নি‌জের ঠোঁটটা চে‌পে ধ‌রে রাখ‌লো। আয়াত তনয়ার মুখটা তু‌লে তনয়ার ঠোঁ‌টে ঠোঁট বসা‌লো। প্রথমবার নি‌জে থে‌কে আয়াত তনয়াকে কা‌ছে টান‌লো। তনয়া আয়া‌তের চু‌লে টে‌নে ধ‌রে রাখ‌ছি‌লো। ফো‌নের রিং‌টো‌নে দুজন দুজন‌কে ছে‌ড়ে দি‌লো। মেঘা ফোন দি‌য়ে‌ছে, তনয়া ফোন রি‌সিভ ক‌রে বলল, 
__হ্যাঁ মেঘা বল

__ভা‌বি আমরা কখন থেকে ওয়েট করছি। পু‌রো হা‌নিমুন কী স্টোর রু‌মে ব‌সেই কর‌বে? তাহ‌লে আমরা এত কষ্ট ক‌রে তোমা‌দের বাসর কেন সাজালাম। 

__আচ্ছা আস‌ছি।

আয়াত‌কে বলল, চ‌লো সবাই আমা‌দের জন্য ওয়েট কর‌ছে।

__‌কিন্তু তু‌মি যে বল‌লে আমি শুধু তোমাকে ভা‌লোবাস‌বো। কিন্তু আমি ভা‌লোবাস‌বো কী ক‌রে? কারন তু‌মি তো আমার আজ রা‌তের সব প্ল্যান নষ্ট ক‌রে দি‌লে। 

__‌যেমন?

__আ‌রে আমি নি‌জেও আজ‌কে আমাদের বি‌য়ের রে‌জি‌ট্রি কর‌তে চে‌য়েছিলাম। সকা‌লে সব কাজ গু‌ছি‌য়ে‌ছি,শপিং ক‌রেছি, বিকা‌লে যা‌চ্ছিলাম হো‌টে‌লে সুন্দর সাজা‌নো রুম বুক কর‌তে যা‌তে আমা‌দের ফাস্ট নাইটটা সবসময় মে‌মো‌রেবল হ‌য়ে থা‌কে। তু‌মি তো সব পন্ড ক‌রে দিলে। 

__আমার কী দোষ! তু‌মি এত‌দিন ধ‌রে মান‌ছি‌লে না। তারপর সকা‌লে না ব‌লে চ‌লে আস‌লে। তাই তো আজ আঙ্কে‌লের কথায় এই প্ল্যান করলাম।

__‌হোয়াট আঙ্কেল মা‌নে? এক মি‌নিট তোমা‌কে এই কুবু‌দ্ধি বাবা দিয়ে‌ছে?

__‌হি হি হুমমম। 

__তনয়া একটা কথা ব‌লি তোমার সা‌থে যে এক‌দিন কাটা‌বে সে তোমার মত পাগল হয়ে যা‌বে। সেখা‌নে আমরা মা‌সের পর মাস কাট‌াচ্ছি। তো বুঝ‌তে পার‌ছো? আমরা সব পাবনার বা‌সিন্দা হ‌য়ে গে‌ছি। 

__‌ভে‌ং‌চি কে‌টে। হুহহ। চ‌লো।

__‌নি‌জে আমার কো‌লে ব‌সে আ‌ছো তো উঠ‌বো কি ক‌রে?

__‌কেন আমার গা‌য়ে কী বে‌শি ওজন?

আয়াত তনয়ার কোমর জ‌ড়িয়ে ধ‌রে বলল,
__না। আচ্ছা তু‌মি সালমান খা‌নের লা‌কি মু‌ভি দেখ‌ছো?

__হ্যাঁ অনেক বার।

__তু‌মি ঠিক লা‌কি মু‌ভির না‌য়িকা "স্নেহার" মত। চিকন  চাকন, খা‌টো, কিউট বাব‌রি ড‌লের মত। 

__হ্যাঁ আর তুুম সালমান খা‌নের মত ব‌ডি বিল্ডার। ঐ তোমার ওজন কত?

__৭৬+ কেন? সে জন্যই। তোমার গা‌ড়ি থে‌কে এ পর্যন্ত তোমা‌কে আন‌তে আমা‌দের অবস্থা বা‌রোটা বাজ‌ছে। 

__আচ্ছা? ত‌বে আজ রা‌তে আমার শরী‌রের পু‌রো ভারটা দি‌লে কেমন করবা? তখন তো চ্যাপ্টা হ‌য়ে যাবা।(দুষ্ট‌মি ক‌রে)

__যাহ পা‌জি।

__এখন চ‌লো। সবাই আমা‌দের জন্য অপেক্ষা কর‌ছে। আচ্ছা এটা কোন জায়গা?

__আরে আমার ফ্ল্যা‌টের স্টোর রুম। ভা‌লো ক‌রে তা‌কি‌য়ে দে‌খো?

আয়াত ভা‌লো ক‌রে তা‌কি‌য়ে দেখ‌লো। তারপর বলল, অামা‌কে এভা‌বে বোকা বানা‌নো। সব শোধ আজ রা‌তে তুল‌বো,  তনয়া লজ্জায় মাথায় নিচু ক‌রে ফেল‌লো।

তারপর সবাই মি‌লে খাওয়া দাওয়া কর‌তে বস‌লো। সবাই খা‌চ্ছে তনয়া চুপ ক‌রে ব‌সে আছে। কারন একে তো ডান হা‌তে তিনটা আঙুল তাই চামচ দি‌য়ে খে‌তো কিন্তু হা‌তে ব্যাথায় এখন চামচ ধর‌তেও কষ্ট হ‌চ্ছে। তাই চুপ ক‌রে ব‌সে আছে। ব্যাপারটা অায়াত বুঝ‌তে পে‌রে নি‌জেই তনয়া‌কে খাই‌য়ে দিলো। তানভী এর বিষয়টা বেশ ভা‌লো লাগ‌লো। তানভী এখন টেনশন মুক্ত কারন কেউ একজন আছে যে ওর বোন‌কে সব থে‌কে বে‌শি ভা‌লোবা‌সে, খেয়াল রা‌খে।

রাত সা‌ড়ে দশটা সবাই যার যার বা‌ড়ি চ‌লে গে‌লো। মেঘার যে‌তে হ‌বে কিন্তু আয়াত এত রা‌তে একা যে‌তে দি‌বে না। তখন তানভী বলল,
__আ‌রে ভাইয়া আমি মেঘা‌কে পৌঁ‌ছে দিবো। শত হ‌লেও আমার বো‌নের ননদ। সম্প‌র্কে আমার বেয়ান তো ত‌ার প্র‌তি আমারও তো কর্তব্য আছে। চ‌লেন বেয়ান, আপনা‌কে স্ব-সম্মা‌নে বা‌ড়ি পৌঁ‌ছে দি। ওরা দুজন চ‌লে যে‌তেই তনয়া দরজা বন্ধ ক‌রে ঘুর‌তেই আয়াত তনয়া‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। তনয়া বলল,

__‌কি কর‌ছো কী?

__এক জায়গায় নি‌য়ে যা‌চ্ছি তোমায়। (এটা ব‌লে আয়াত তনয়া‌কে কো‌লে নি‌য়ে রু‌মের দি‌কে এগো‌তে লাগল)

__‌কোথায় নি‌য়ে যা‌চ্ছো?

__ভা‌লোবাসার শহ‌রে

__সেখা‌নে গে‌লে কী হ‌বে?

__ভা‌লোবাসা হ‌বে!

__‌কী আছে সে শহ‌রে?

__ভা‌লোবাসার সমুদ্র।

__‌কী পা‌বো সে শহ‌রে?

__ভা‌লোবাসার অদ্ভ‌ুদ মুগ্ধতা।

__‌সেটা দি‌য়ে কী হ‌বে?

আয়াত রু‌মে ঢু‌কে হা হ‌য়ে গে‌লো। পু‌রো রুম সুন্দর ক‌রে ফুল দি‌য়ে সাজা‌নো। তনয়া বল‌লো, মেঘা কর‌ছে। আয়াত তনয়া‌কে বিছানায় শু‌য়ে তনয়ার গা‌লে আল‌তো ক‌রে হাত বু‌লি‌য়ে বলল,

__ভা‌লোবাসার অনুভূতির সাগ‌রে তোমায় ভাসা‌বো। তোমায় পাগল ক‌রে তোমার পাগলামী‌তে মাত‌বো। তে‌ামার অনুভূ‌তির নতুন সুরে ভা‌লোবাসার নতুন গ‌ল্পের রচনা কর‌বো। ‌লিখ‌বো হাজা‌রো ক‌বিতা।

__আচ্ছা সে শহ‌রে কারা থা‌কে?

__আয়াত তনয়ার মত ভা‌লোবাসায় আসক্ত মানুষগুলা। 

__আচ্ছা! আর_____

__হুসসস। তনয়ার ঠোঁটে আঙুল দি‌য়ে চে‌পে ধ‌রে আয়াত বলল, আজ কোন বাঁধা নেই তোমা‌কে স্পর্শ কর‌তে। নেই কোন অপরাধ‌বোধ। আজ তনয়া শুধু তার আয়াতের, আর আয়াতনয়ার। তনয়ার উপর সব অধিকার শুধু তনয়ার আয়াতের। আজ নি‌জের সবটা দি‌য়ে তনয়া‌কে পাগ‌লের মত ভা‌লোবাসার অধিকার আয়া‌তের আছে। ভা‌লোবা‌সি তনয়া, খুব ভা‌লোবা‌সি তোমায়। 

এতমাস পর আয়াত তনয়া‌কে ভা‌লোবা‌সি বলল, তনয়া চোখ বন্ধ ক‌রে বলল, 
__আয়াত‌ আবার ব‌লো?

__কী?

__ভা‌লোবা‌সি ব‌লো?

__ভা‌লোবা‌সি ভা‌লোবা‌সি ভা‌লোবা‌সি শুধু তোমা‌কেই ভা‌লোবা‌সি।

__বলতে থা‌কো আয়াত থে‌মো না। তোমার ভা‌লোবা‌সি শ‌ব্দে কী কোন জাদু মন্ত্র মেশা‌নো আছে? ত‌বে কেন আমা‌কে পাগ‌লের মত স‌ম্মোহন কর‌ছে। বল‌তে থা‌কো আয়াত, বলতে থা‌কো।

__আজ শুধু বল‌বো না। তোমায় নি‌য়ে ভা‌লোবাসার নতুন দু‌নিয়ায় বিচরন কর‌বো। ভা‌লোবাসাবা‌সি‌তে মাত‌বো দুজন। 

তনয়া শোয়া থে‌কে মাথাটা উঁচু ক‌রে আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। এভা‌বে বেশ কিছুক্ষন জ‌ড়ি‌য়ে থাকার পর আয়াত তনয়াকে শু‌য়ে দি‌য়ে তনয়ার চো‌খে অসজ্র চু‌মো‌তে ভ‌রি‌য়ে দি‌লো। তনয়া‌কে নি‌য়ে ভা‌লোবাসা নতুন আবে‌শে দুজন দুজনা‌তে হা‌রি‌য়ে গে‌লো।

—————
৪৯!!

       আজ‌কের সকাল যে‌নো তনয়ার জন্য বে‌শিই সুন্দর। নামাজ প‌ড়ে ভে‌জা চুলগু‌লো মুছ‌ছে। আয়াত নামাজ প‌ড়েই আবার ঘুমি‌য়ে পড়‌ছে। তনয়া আয়া‌তের কা‌ছে এসে আয়াতের কা‌নে ছোট্ট একটা চু‌মো একে দি‌য়ে রান্না ঘ‌রে গে‌লো। আয়া‌তের জন্য পা‌য়েস রান্না কর‌বে আজ। 

চুলগু‌লো খোপা ক‌রে কা‌ঠি দিয়ে আট‌কে শা‌ড়িটা কোম‌রে পে‌চি‌য়ে নি‌য়ে রান্নায় মন দি‌লো। আয়াত সকা‌লে সব‌জি খিচু‌রি খুব পছন্দ ক‌রে। তাই সব‌জি খিচুরি ব‌সি‌য়ে আরেক চুলায় পা‌য়ে‌সের চাল ধু‌য়ে ব‌সি‌য়ে দি‌লো। 

সুন্দর খাবা‌রের ঘ্রা‌নে ঘুম ভাঙ‌লো আয়া‌তের। চোখ মে‌লে পা‌শে তনয়া‌কে না দে‌খে সোজা রান্না ঘ‌রে চ‌লে গে‌লো। দূর থে‌কে কতক্ষন তনয়া‌কে দে‌খে, তনয়ার কা‌ছে গি‌য়ে চু‌লের খোপাটা খু‌লে দি‌লে‌া, চুলগু‌লো পিঠময় ছ‌ড়ি‌য়ে গে‌ছে। তারপর তনয়ার খোলা কোম‌র জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে তনয়ার কাঁ‌ধে থুতু‌নী ঠে‌কি‌য়ে বলল, 
__‌লো‌কে স‌ত্যি ব‌লে, বি‌য়ের পর মে‌য়েরা খুব বে‌শি সুন্দর হয়।

__‌আচ্ছা! কেন?

__এই যে, তোমায় আজ অন্য দি‌নের তুলনায় বে‌শি স্নিগ্ধ, সুন্দর আর প্রাণবন্ত লাগ‌ছে। তোমার পু‌রোটা জু‌রে আজ লজ্জাময় গোলাপী আভা। যা আজ গোলা‌পের সৌন্দর্য্যকেও হার মানায়। 

__যাহ্। বল‌ছে তোমা‌কে!

__সত্যি বল‌ছি তোমায় আজ দারুন লাগ‌ছে। এর কারন কী জা‌নো?

__কী?

__আমার ছোঁয়া। যা তোমার লুকা‌নো সৌন্দর্য্য‌কে বের ক‌রে‌ছে। (দুষ্ট‌মি ক‌রে)

তনয়া কনুই দি‌য়ে আয়া‌তের পে‌টে গু‌তো দি‌য়ে বলল,
__সবসময় শুধু দুষ্ট‌মি।

__এই রকম কিউট বৌ থাকলে মাথায় এম‌নি দুষ্টমি ঘো‌রে। আচ্ছা তু‌মি হা‌তে ব্যাথা নি‌য়ে কেন কর‌তে গে‌লে। আমায় ডাক দি‌লেই হ‌তো। দুজন মি‌লে করতাম।

__ব্যাথা অনেকটা ক‌মে গে‌ছে।

__জা‌নো সে‌দিন যখন তু‌মি নি‌জে‌কে আঘাত কর‌লে খুব রাগ হ‌য়ে‌ছি‌লো তোমার উপর। তাই তো সে‌দিন তোমায় ফে‌লে চ‌লে গে‌ছিলাম। এভা‌বে কেউ নি‌জে‌কে আঘা‌ত ক‌রে?

__‌কী কর‌বো ব‌লো? এ হাত দি‌য়েই তো তোমায় আঘাত ক‌রে‌ছিলাম। তাই শা‌স্তি দিলাম।

__‌বোকা তু‌মি তোমার আয়াত‌কে আঘাত ক‌রে‌ছো তা‌তে নি‌জে‌কে কেন শা‌স্তি দেয়া লাগ‌বে? আমি আর তু‌মি কী আলাদা। সে‌দিন চড়টা আমায় মার‌লেও আঘাতটা কিন্তু তু‌মিই পেয়ে‌ছো সেটা আমি জা‌নি। 

__হ্যাঁ আয়াত তু‌মি আমি একে অপ‌রের প‌রিপূরক। আয়াত আমরা কখ‌নো আলাদা হ‌বো না‌তো?

__কখ‌নো নয়। এভা‌বেই সারা জীবন এক হ‌য়ে থাক‌বো।
তনয়া‌কে আরো নীবিরভা‌বে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে মাথায় ভা‌লোবাসার পরশ একে দি‌লো।

তনয়া বলল,
__আচ্ছা আচ্ছা অনেক হ‌য়ে‌ছে। এবার চ‌লো খা‌বে। অফিস যা‌বে না?

__পাগল না‌কি? কোন এক মহান মানুষ ব‌লে গে‌ছে, বি‌য়ের প‌রের দিন অফি‌সে যাওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। 

__আচ্ছা সে মহান ম‌ানুষ‌টি কে?

__‌তোমার বর। হা হা হা। 

__‌হি হি। আস‌ছে মহান মানুষ। যাও এখান থে‌কে।

__প‌রে যা‌বো। এখন চ‌লো নাস্তা করবা। তারপর প্যা‌কিং।

__‌কি‌সের প্যা‌কিং?

__হা‌নিমু‌নে যে‌তে হ‌বে না। হা‌নিমু‌নে সি‌লেট যা‌চ্ছি। সেখা‌নে প্রায় রোজ বৃ‌ষ্টি হয়। সি‌লে‌টি চা‌য়ের সা‌থে সা‌থে আমার অভিলাষী বৃ‌ষ্টি বিলাশ কর‌বে আর আমি আমার অভিলাষী‌তে মাত‌বো। 

__‌কিন্তু আয়াত আমা‌দের প‌রিবার বি‌শেষ ক‌রে তোমার মা আমা‌দের বি‌য়েটা মান‌বে তো? য‌দিও তারা বি‌য়ের বিষয়টা জা‌নে তবুও ভয় কর‌ছে খুব।

__ওটা আমি দেখ‌বো তানুপা‌খি। তুুমি চিন্তা ক‌রো না তো। ভরসা রা‌খো আমার উপর।

__ হ্যাঁ সেটাই তো রাখ‌ছি আয়াত। 

সকা‌লের নাস্তা করার পর বারান্দায় ব‌সে দুজন এক ম‌গে ক‌ফি খাচ্ছে। তনয়া লাজুক চো‌খে বার বার আয়া‌তের দি‌কে তাকা‌চ্ছ। ওর এখ‌নো বিশ্বাস হ‌চ্ছে না, আয়া‌তের সা‌থে ওর বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। আয়াত আর ওর ভা‌লোবাসা প‌রিপূর্ণতা পে‌য়ে‌ছে। তনয়াকে মিট মিট হাস‌তে দে‌খে আয়াত তনয়া‌কে টে‌নে নি‌জের কো‌লে ব‌সি‌য়ে কোমর জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,

__কী ব্যাপার অভিলাষী এভা‌বে হাস‌ছো কেন?

__ভ‌াব‌ছি

__কী? 

__ক‌য়েকমাস আগেও আমরা একে অপর‌কে চিনতাম না। অথচ আজ ম‌নে হয় দুজন‌ দুজন‌কে ছাড়া বাঁচ‌তে পার‌বো না। ক‌য়েকমাস আগেও আমরা জানতাম না আমা‌দের বি‌য়ে হ‌বে অথচ আজ দুজন দুজনা‌তে প‌রিপূর্ণ।

আয়াত তনয়ার গা‌লে ঠোঁট ছুঁ‌য়ে দি‌য়ে বলল,
__এটাই জীবন তনয়া। আমরা অতীত ম‌নে রাখ‌তে পারি, বর্তমান অনুভব কর‌তে পা‌রি কিন্তু ভ‌বিষ্যৎ কখ‌নো জান‌তে পা‌রিনা। বুঝলা!

__হুমম। এখন ছা‌ড়ো তো দুপু‌রের রান্না কর‌তে হ‌বে।

__তার কোন দরকার নেই। দুপু‌রে বাই‌রে খা‌বো। 

__কিন্তু আয়াত! 

__হুসস। 

দুু‌পু‌রে বাই‌রে খাবার পর আয়াত বলল, চ‌লো শ‌পিং ক‌রে আসি।

__‌নো আয়াত। আমার এসব শ‌পিং ট‌পিং কর‌তে ভা‌লো লা‌গে না।

__আজব মে‌য়ে শ‌পিং কর‌তে পছন্দ ক‌রে না। বি‌য়ের আগেও তোমা‌কে শ‌পিং এ নি‌য়ে যে‌তে পা‌রি‌নি ত‌বে আজ বল‌লে শুনছি না। চ‌লো। ‌জোড় ক‌রেই নি‌য়ে গে‌লো।
তনয়া সবার জন্য কিছুনা কিছু গিফ্ট কিন‌লো আর আয়া‌তের জন্য কা‌লো র‌ঙের একটা পাঞ্জা‌বি কিন‌লো। 

রাত এগা‌রোটা, 
আয়াত সাম‌নে ব‌সে টি‌ভি দেখ‌ছে। তনয়া সেই কখন রু‌মে গে‌ছে এখনও আস‌ছে না। তখন আয়াতের ফো‌নে টুং করে মে‌সেস আস‌লো, রু‌মে আসো। আয়াত মি‌ষ্টি হে‌সে রু‌মে গি‌য়ে দে‌খে তনয়া টকট‌কে লাল একটা বেনার‌শী প‌রে ড্রেসিং টে‌বি‌লের সাম‌নে বসে আছে। এই শা‌ড়িটাই আয়াত গতকাল তনয়া‌কে দি‌বে ব‌লে কি‌নে‌ছি‌লো। কিন্তু তনয়ার কিডনা‌পের কার‌নে দি‌তে পা‌রে‌নি। অাজ সকা‌লে দি‌য়ে‌ছে। তনয়া আয়া‌তের দি‌কে ঘু‌রে বলল,
__‌কেমন লাগ‌ছে?

__একদম নতুন বৌ এর মত। ত‌বে আরেকটা জি‌নিস দেয়ার আছে। 

__কী?

আয়াত প‌কেট থে‌কে একটা ল‌কেট সহ চেইন বের ক‌রে তনয়ার গলায় প‌রি‌য়ে দি‌লো। ল‌কে‌টে AT লেখা মা‌নে আয়াতনয়া। আয়াত বলল,
__ফাস্ট নাই‌টে ওয়াইফ‌কে কিছু গিফ্ট দি‌তে হয়। কিন্তু তোমার উদ্ভট প্ল্যা‌নের কার‌নে সেটা হ‌লো না তাই আজ দিলাম।

__স্য‌রি। (মন খারাপ ক‌রে)

__আ‌রে স্য‌রি কেন বল‌ছো? বরং ভা‌লো হ‌লো। প্রিয় আমা‌দের বাচ্চা‌দের আমরা সুন্দর কাহী‌নি শুনা‌তে পার‌বো। তা‌দের বল‌তে পার‌বো তা‌দের মা আমা‌কে কিডনাপ ক‌রে বি‌য়ে কর‌ছে। হা হা হা।

তনয়া হে‌সে বলল,
__আচ্ছা! ত‌বে এখন তু‌মি ব‌লো সে‌দিন এক ঘন্টার ম‌ধ্যে বি‌য়ের ব্যবস্থা কী ক‌রে করলে? দেখো এটা ফাস্ট নাই‌টে বলার কথা ছি‌লো। কিন্তু ঝা‌মেলার কার‌নে হ‌য়ে ওঠে‌নি।এখন ব‌লো? সে‌দিন কিভা‌বে সব ম্যা‌নেজ কর‌লে। 

আয়াত তনয়া‌কে বিছান‌ায় ব‌সি‌য়ে ওর কো‌লে মাথা দি‌য়ে শু‌য়ে বলল,
__‌সে‌দিন তোমার কথা শুনে প্রথ‌মেই বু‌ঝেছিলাম তু‌মি মজা কর‌ছো। তো আমি ম‌নে ম‌নে বু‌দ্ধি খাটালাম , তোমার মজাটা‌কে স‌ত্যি রূপ করার। রে‌জি‌ট্রেশন ক‌রে বি‌য়ে কর‌তে হ‌বে এমন কোন কথা নেই। হাজার বছর আগেও তো লো‌কের বি‌য়ে হ‌তো তখন তো রে‌জি‌ট্রেশন কর‌তো না। হ্যাঁ এ যু‌গে আইনি ম‌তে রে‌জি‌ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক ত‌বে সেটা প‌ড়ে কর‌লেও হয়। আর মস‌জি‌দের ঈমামরাও দোয়া কলাম প‌ড়ি‌য়ে, আল্লাহর কালাম সা‌ক্ষী রে‌খে ধর্মম‌তে বিয়ে পড়ান। কিন্তু তখন মাথায় আস‌লো ঈমাম সা‌হেব বা এলাকার লোক য‌দি এটা নি‌য়ে কোন ঝা‌মেলা করে।
তাই ঈমাম সা‌হেব‌কে বললাম, তু‌মি আমার বিবা‌হিত স্ত্রী কিন্তু ‌তোমার মাথায় সমস্যা আছে। যখন যেটা ব‌লো সেটা না কর‌লে সুইসাইড করার চেষ্টা ক‌রো। তু‌মি এখন আমা‌কে আবার বি‌য়ে কর‌তে চাও। বিয়ে না কর‌লে সুইসাইড কর‌বে। ঈমাম সা‌হেব‌কে ভয় দেখা‌নোর জন্য বললাম তোমা‌র সা‌থে অপ‌রি‌চিত কেউ কথা বল‌লে তা‌কে পিটা‌নি দাও। আমার কাজটা তু‌মি আরো সহজ ক‌রে দি‌লে, যখন দু‌টো ছে‌লে তোমা‌কে দে‌খে শিস বাজা‌চ্ছি‌লো তু‌মি দু‌টো‌কে ধমক দি‌য়ে চড় মে‌রে‌ছি‌লে। তো সে সেটা দে‌খে ভাব‌লো তু‌মি সত্যি পাগল। তার আগেই বাবা‌কে আর মেঘা‌কে ফো‌নে ম্যা‌নেজ ক‌রে নিলাম। ঈমাম সা‌হেব তা‌দের সা‌থে কথা ব‌লে সব ব্যবস্থা ক‌রে দি‌লো।

__আয়াত তু‌মি কী খারাপ বি‌য়ে করার জন্য আমা‌কে পাগল প্রমাণ ক‌রে দি‌লে?

__প্রমাণ করার কী আছে? তু‌মি ‌তো স‌ত্যি পাগল। পাগল না হ‌লে কেউ এক ঘন্টার ম‌ধ্যে বি‌য়ে কর‌তে ব‌লে?

__তনয়া আয়া‌তের বু‌কে কতগু‌লো কিল দি‌য়ে বলল, তাই ব‌লে আমা‌কে পাগল বল‌বে। আর ঈমাম সা‌হেব‌কে মিথ্যা কেন বল‌ছো?

__হ্যাঁ এটা আমার ভুল ছি‌লো। তাই তো প‌রে বাবা‌কে সাথে নি‌য়ে গিয়ে ঈমাম সা‌হেব‌কে পু‌রো স‌ত্যিটা ব‌লে ক্ষমা চে‌য়ে‌ছি। প্রথ‌মে তি‌নি খুব রাগ কর‌লেও পরে বাবা বুঝা‌নোর পর ক্ষমা ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। 

__যাক তাও ভা‌লো।

তারপর দুজন বেশ কিছুক্ষন নীরব!
নীরবতা ভে‌ঙে আয়াত বলল,
__তনয়া!

__হুমম।

__ভা‌লোবা‌সি তোমায়।

__আমিও! 

__পু‌রোটা ব‌লো?

__নাহ। আমিও তোমার মত বি‌শেষ মুহূ‌র্তের অপেক্ষায়। আর তাছাড়া মু‌খে বল‌লেই বুঝি ভা‌লোবাসা হয়? আমরা যে এত মাস ব‌লি‌নি তো আমরা কী ভা‌লোবা‌সিনি।

__হ্যাঁ।

__আয়াত একটা ক‌বিতা শুনাও না।

__এত রা‌তে?

__হ্যাঁ

           অভিলাষীর অভিলা‌ষে হারা‌বো প্রিয়।
         হাত হাত রে‌খে ঠোঁ‌টে ঠোঁ‌টে কথা বল‌বো,
       ‌অভিলাষীর শা‌ড়ির আঁচলে সুখ খুঁ‌জে নিবো।
    অ‌ভিলা‌ষে হা‌রি‌য়ে বারবার অভিলাষী‌তে মাত‌বো। 

                                                   সাথী_____

ক‌বিতা শু‌নে তনয়া লজ্জায় নি‌জের হাত দি‌য়ে মুখ ঢে‌কে ফেল‌লো। আর আয়াত তনয়ার লজ্জা মাখা মুখটার অদ্ভুদ সৌন্দর্য্য উপ‌ভোগ কর‌ছে।
 
৫০!!

     এভা‌বেই চল‌ছি‌লো টোনাটু‌নির সংসার। দুজন হানিমু‌নে সি‌লেট ঘু‌রে আস‌ছে। আয়া‌তের মা ওদের বি‌য়ের কথা জে‌নে রাগ ক‌রে আয়াত‌কেও বা‌ড়ি থে‌কে বের ক‌রে দি‌লো। তার শর্ত ছি‌লো তনয়া‌কে না ছাড়‌লে বা‌ড়ি ঢুক‌তে পার‌বে না। অবশ্য আয়াত আর  আয়া‌তের বাবা দুজন নতুন ফ‌ন্দি আট‌ছে তা‌কে রা‌জি করা‌নোর। দুজন রোজ সকা‌লে একসা‌থে নাস্তা বা‌নি‌য়ে, খে‌য়ে অফিস যায় আবার একসা‌থে ফি‌রে রা‌তের রান্না ক‌রে। বেশ সু‌খে চল‌ছে সংসার। 
তনয়া প্রায়ই প‌রিবা‌রের কথা ম‌নে ক‌রে মন খারাপ করে। আয়াত ভাব‌ছে এখন সময় হ‌য়ে‌ছে তনয়ার বাবার সা‌থে কথা বলার। আগামীকাল আয়াত তনয়ার বাবার সা‌থে দেখা কর‌তে যা‌বে। রা‌তে তনয়া‌ আয়া‌তের বু‌কে মাথা দি‌য়ে র‌য়ে‌ছে আর আয়াত তনয়ার চু‌লে বি‌লি কাট‌ছে। তনয়া বলল,

__আয়াত!

__হ্যাঁ

__আমা‌দের একটা বাবু হ‌লে কেমন হ‌বে?

আয়াত তনয়া‌কে ঘু‌ড়িয়ে নি‌জে তনয়ার উপর ঝু‌কে বলল,
__‌কে তু‌মি?

__এ্যাঁ

__আমার তনয়া কোথায়?

__মা‌নে কী আয়াত!

__মা‌নে আমার তনয়া যে কিনা প্রথ‌মে বি‌য়ে কর‌তেই চাই‌তো না কারন তার ক্যা‌রিয়ার আছে। যে কিনা নি‌জের ইচ্ছা অভিলাষ পূরন করার জন্য বা‌ড়ি থে‌কে পালা‌লো। সেই তনয়া আমা‌কে বি‌য়ে করার জন্য পাগল হ‌য়ে গে‌লো। এখন আবার সে বাচ্চার কথা বল‌ছে। তাই স‌ন্দেহ হ‌চ্ছে তুুমি তনয়া কিনা।

__আগে আমি নরমাল ছিলাম। এখন আমি আয়া‌তের নেশায় আসক্ত হ‌য়ে‌ছি। এমন না যে, আমি আমার ক্যা‌রিয়ার বা ইচ্ছা নি‌য়ে ভা‌বি না। ত‌বে আমার প্রথম ইচ্ছা তোমার অভিলাষী হ‌য়ে থাকা।

__‌তো ম্যাডাম আয়া‌তের নেশায় ডু‌বে গে‌ছেন যেমন আয়াত তনয়ার নেশায় ডু‌বে আছে!

__‌সেটা তো ক‌বেই। আচ্ছা আ‌মি তনয়া কিনা দেখ‌বে?

__হুমমম

__ভা‌লোবাসায় অনুভব ক‌রি‌য়ে দি।

৫১!!

    কতক্ষন যাবত আয়াত তনয়ার বাবার অফি‌সের ওয়ে‌টিং রু‌মে ব‌সে আছে।
‌বেশ কিছুক্ষন পর তনয়ার বাবা তা‌লিব মাহমুদ আস‌লো। তা‌কে দে‌খে আয়াত দা‌ড়ি‌য়ে সালাম দি‌লো,

__আসসালামু আলাইকুম। 

__ওয়ালাইকুম আসসালাম। তোমা‌কে তো ঠিক চিনলাম না!

__আয়াত রহস্যময় একটা হা‌সি দি‌য়ে বলল, তনয়া মা‌নে আপনার মে‌য়ে‌কে তো চি‌নেন?

__আমার কোন মে‌য়ে নেই।

__দেখুন বাবা! আপনার অনু‌মো‌তি না নি‌য়ে বাবা ডাকার জন্য দুঃখী‌তো। ত‌বে আমি ভ‌নিতা ক‌রে কথা বল‌তে পা‌রি না। আর আমি যে, তনয়ার মা‌নে আপনার মে‌য়ের হ্যাজ‌বেন্ড সেটা আপনার অজানা নয়। কারন আমা‌দের বি‌য়ের কথা সবাই জা‌নে। আপ‌নি তনয়ার বাবা তাই আমিও আপনা‌কে বাবা ব‌লেই ডাক‌বো। সেটা আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। 

আয়া‌তের এমন শক্ত কথায় তনয়ার বাবা কী বল‌বে সেটা ভে‌বে পা‌চ্ছে না। তাই বল‌লো, কী চাই আমার কা‌ছে?

__যাক ভা‌লো সোজা প‌য়েন্ট এ আস‌ছেন। এখন ব‌লেন কেমন আছেন?

__‌ভা‌লো তু‌মি?

__আলহামদু‌লিল্লাহ আঙ্কেল আল্লাহ খুব সু‌খে রাখ‌ছে। এখন যেটা বল‌তে আস‌ছি সেটা হ‌লো, দয়া ক‌রে তনয়া‌কে মাফ ক‌রে দিন। ও অনেক কষ্ট পা‌চ্ছে।

__তা‌তে আমি কী কর‌বো? 

__বাবা দয়া ক‌রে এমন নিষ্ঠুর হ‌বেন না। অনেক দিন তো হ‌লো, এবার অন্তত বিষয়টা ভু‌লে যান। প্লিজ।

__কী ভু‌লে যা‌বো? ওর কার‌নে এত গু‌লো লো‌কের সাম‌নে আমা‌কে এত অপমা‌নিত হ‌তে হ‌য়ে‌ছে সেটা, না‌কি আমার বন্ধুর সা‌থে সম্পর্ক ভে‌ঙে গে‌ছে সেটা, না‌কি সমা‌জের লোক আমা‌কে যে কটু কথা শু‌নি‌য়ে‌ছে সেগু‌লো? না‌কি আমার মান সম্মান সব ধূলোয় মি‌শে গে‌ছে সেগু‌লো? বলো?

__আপ‌নি যে কথাগু‌লো বল‌লেন এত সমস্যার জন্য দায়ী আপ‌নি নি‌জেই।

__কী বল‌তে চাও তু‌মি?

__তনয়া অপনা‌কে বি‌য়ের অনেক আগে থে‌কেই বল‌তো ও রিসাদ‌কে বি‌য়ে কর‌তে চায় না। বি‌য়েটা ভাঙার জন্য আপনা‌কে অনেক অনু‌রোধও ক‌রে‌ছি‌লো। কিন্তু আপ‌নি শো‌নেনি। অন্য মে‌য়ে‌দের মত নি‌জের জীবন নষ্ট ধ্বংস হ‌তে তনয়া দেখ‌তে চায়‌নি, ওর আত্মসম্মান বোধ বাঁচা‌তে ও পা‌লি‌য়ে‌ছি‌লো। ওকে পালা‌তে আপ‌নি আর আপনার সিদ্ধান্ত বাধ্য ক‌রেছেন। আপ‌নি য‌দি ঠান্ডা মাথায় ওর কথাগু‌লো শুনে ওকে বোঝার চেষ্টা কর‌তেন ত‌বে ওকে পালা‌নোর কোন প্র‌য়োজন হ‌তো না। কিন্তু আপ‌নি সেটা কর‌লেন না।

আমার যতদূর ম‌নে হয় আপ‌নি ম‌নে কর‌ছেন তনয়া আমার জন্য বা‌ড়ি থে‌কে পা‌লি‌য়ে‌ছে ত‌বে বল‌বো আপ‌নি ভুল ম‌নে কর‌ছেন। কারন তনয়া বা‌ড়ি থে‌কে পালা‌নোর আগে আমা‌দের প‌রিচয় পর্যন্ত ছি‌লো না। তনয়া নি‌জের ইচ্ছা‌কে মূল্যয়ান কর‌তে পা‌লি‌য়ে‌ছি‌লো। 
 যাক এখন পিছ‌নের কথা বাদ দি‌য়ে দয়া ক‌রে নতুন ক‌রে শুরু করুন। আপনার মে‌য়ে স‌ত্যি খুব কষ্ট পা‌চ্ছে। ও তো কতবার আপনার কা‌ছে ক্ষমা চে‌য়ে‌ছে, এবার আমি ওর হ‌য়ে আবার ক্ষমা চা‌চ্ছি। 

__সম্ভব না। কারন ও শুধু পা‌লি‌য়েই যায়‌নি বরং তোমার মত একটা ছে‌লেকে বি‌য়ে করছে। 

এই কথাটা আয়া‌তের গা‌য়ে খুব লাগ‌লো। তাই বলল,
__আমার মত ছে‌লে বল‌তে কী বুঝা‌তে চা‌চ্ছেন? আমাকে কী রাস্তার থার্ডক্লাস ছিছ‌কে কোন ছে‌লে ম‌নে হয়? আপনার মে‌য়ের পা‌শে কোন অং‌শে বেমানান ব‌লে ম‌নে হয়না। দেখ‌তে কেউ খারাপ ব‌লে না, উচ্চ‌শি‌ক্ষিত প্র‌তি‌ষ্ঠিত আমি। এটা আমি নি‌জের গুন গাই‌ছি না বরং স‌ত্যিটা বল‌ছি। আমি নি‌জের যোগ্যতায় নি‌জের পা‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে‌ছি। নি‌জের ওয়া‌ইফের সব ধর‌নের চা‌হিদা পূর‌নের এ্যা‌বি‌লিটি আমাকে আল্লাহ দি‌য়ে‌ছে। এক‌লিস্ট আপনার পছন্দ করা রিসা‌দের মত মে‌য়ে‌দের অসম্মান ক‌রি না, আর বাবার টাকায় খবরদা‌রি ক‌রি না। অা‌মি যে টাকা খরচ ক‌রি সম্পূর্ণ আমার নি‌জের উপার্জন করা। 
আজ‌কে য‌দি তনয়া আমাকে পছন্দ ক‌রে বি‌য়ে না কর‌তো, আর প‌া‌রিবা‌রিক ভাবে য‌দি অামার বাবা আপনা‌দের বাসায় বি‌য়ের প্রস্তাব পাঠা‌তো তখন আপনারাই আমার বা‌য়োডাটা দে‌খে, খু‌শি খু‌শি নি‌জের মে‌য়েকে আমার হা‌তে তু‌লে দি‌তেন। এখন তনয়া নি‌জে পছন্দ ক‌রে‌ছে ব‌লে কী আমি থার্ডক্লাস ছে‌লে হ‌য়ে গেলাম? 

একটা কথা কী জা‌নেন বাবা? আমা‌দের দে‌শে মে‌য়েরা য‌দি নি‌জেরা হিরো পছন্দ ক‌রে ত‌বে বাবা মা‌য়ের কা‌ছে সেটা হারামজাদা থার্ডক্লাস ছে‌লে হয়। আর বাবা মা য‌দি বু‌ড়ো, কা‌লো, মোটা, টাক ওয়ালা হনুমান ধ‌রে বি‌য়ে দেয় তবে বাবা মা‌ সেই হনুমান‌কে হি‌রো ম‌নে ক‌রে। আপনা‌দের পছন্দ বাহ্ বাহ হ‌বে আর মে‌য়ের পছন্দ ছি ছি কেন? মে‌য়ে‌দের নি‌জে‌দের কী পছন্দ থাক‌তে পা‌রে না?

__তবুও প্রে‌মের বি‌য়ে কখ‌নো টি‌কে না।

__‌অপ‌নি কী ইনডায়‌রেক‌লি আপনার মে‌য়ের সংসার ভাঙার জন্য অভিশাপ দি‌চ্ছেন? 
আয়া‌তের এমন কথা শু‌নে তা‌লিব মাহমুদ কিছুটা ন‌ড়েচ‌ড়ে বস‌লো, পু‌রো থতমতা খে‌য়ে গে‌লো। 

আয়াত আবার বল‌লো, কে বল‌ছে আপনা‌কে এমন উদ্ভট কথা। একটা কথা ব‌লি বাবা, প্রে‌মের বি‌য়ে বে‌শি ভাঙার ৭০% কারন হয় বাবা মা, আর সো কল্ড আত্মীয় স্বজন। ব্যাখ্যা দি‌বো?
   ধরেন পা‌রিবা‌রিক বি‌য়ে‌তে সবাই নব দম্প‌ত্তি‌কে দোয়া ক‌রে এটা ব‌লে সুখী হও। 
    ‌কিন্তু যখন প্রে‌ম ক‌রে বি‌য়ে করার পর দোয়া চাই‌তে যায় তখন সবাই হতাসা গলায় ব‌লে প্রে‌মের বি‌য়ে টিক‌বে তো? 
এই একটা লাই‌নে নবদম্প‌ত্তির মন ৪০% ভে‌ঙে যায়। 
   তারপর নি‌জে‌দের ভিত‌রে কিছু ভুল‌বোঝাবু‌ঝির প্রব‌লেম হয় যেটার মেইন কারনও কিন্তু প‌রিবা‌রের লোক। কারন এ্যা‌রেঞ্জ ম্যা‌রে‌জে দম্প‌ত্তির ম‌ধ্যে কোন ক‌লোহ বাঁধ‌লে পু‌রো ফ্যা‌মিলি তাদের মিলা‌নোর জন্য সা‌পোর্ট করে। ‌কিন্তু লাভ ম্যা‌রে‌জে মিলা‌নো তো দূ‌রের কথা উল্টো সম্পর্ক যা‌তে আরো খারাপ হয় তার জন্য আগু‌নে ঘি ঢালার কাজ ক‌রে। 
এ্যা‌রেঞ্জ ম্যা‌রে‌জে মে‌য়ের কোন সমস্যা হ‌লে বাবা মা‌কে বল‌লে বাবা মা সেটা ঠিক করা স‌র্বোত্মক চেষ্টা ক‌রে কিন্তু লাভ ম্যা‌রে‌জে? বাপ‌রে বাপ! মে‌য়ে সমস্যায় প‌রে বাবা মা‌য়ের কা‌ছে গে‌লে বল‌বে কেন একলা গে‌ছি‌লি এখন নি‌জেই নি‌জের প্রব‌লেম দেখ। 
তারপর বাই‌রের লো‌কের কান ভাঙানী তো আছেই। আরো কিছু বল‌বো বাবা? না‌কি বুঝ‌তে পার‌ছেন?

বাবা বি‌য়ে লাভ বা এ্যা‌রেঞ্জ ব্যাপার না, ব্যাপার হ‌লো বি‌য়ে সম্প‌র্কের গভীরতা কতটা, সেখা‌নে একে অপ‌রের প্র‌তি সম্মানবোধ, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর ভা‌লোবাসা কতটু‌কো। 

হ্যাঁ আমি জা‌নি প‌রিবার‌কে কষ্ট দি‌য়ে বি‌য়ে করা ঠিক না। মস্তবড় পাঁপ। কিন্তু অনেকসময় প‌রিবার আমা‌দের সাম‌নে কোন পথই খোলা রা‌খে না তাই বাধ্য হ‌য়ে পালাতে হয়। তারপরও আমি জা‌নি প‌রিবার‌কে রা‌জি করা‌নোর স‌র্বোচ্চ চেষ্টা কর‌তে হ‌বে। কারন সবাই মি‌লে এক পা‌রিবা‌রে থাক‌লেই প্রকৃত সুখ, শান্তি আস‌বে।

 হ্যাঁ আমরা চাই‌লে আপনা‌দের অনুম‌তি নেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর‌তে পারতাম কিন্তু আমার ভয় হ‌তো খুব, আপ‌নি না আমার তনয়া‌কে আমার থে‌কে দূ‌রে নি‌য়ে যান তাই ওকে নি‌জের স্ত্রী ব‌ানালাম যাতে কেউ আমার তনয়া‌কে আমার থে‌কে দূ‌রে নি‌য়ে যে‌তে না পা‌রে। 

এতটা বলার পর আপনার কী মতামত সেটা বল‌লে সু‌বিধা হ‌তো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন