অবেলার অভিলাষ - পর্ব ২৩ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


তনয়া ভ‌য়ে আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
__আয়াত এত রা‌তে কে চিৎকার কর‌ছে?

__আমরা দুজ‌নেই তো এখা‌নে! কিভা‌বে জান‌বো?এটা তোমার কা‌জিন জে‌রি‌নের গলার মত মনে হ‌লো না?

__আ‌রে ডিসকাশন প‌রে কর‌বো চ‌লো এখন।

তনয়া দরজা খুল‌তে নি‌লে আয়াত বলল,
__আ‌রে এভা‌বে যা‌বে?

__‌কেন কী হয়েছে?

__তু‌মি কী প‌রে আছো খেয়াল ক‌রে‌ছো?

তনয়া একটা পাতলা নাই‌টি পরা ছি‌লো। 
__ওহ হ্যাঁ। আমার গাউনটা কোথায়?

__আ‌মি কিভা‌বে জান‌বো?

__তু‌মিই তো খুল‌ছিলা। 

__ও‌কে ব‌লে মুখ ভেং‌চি দি‌লো।

আয়াত গাউনটা খু‌ঁজে দি‌তেই তনয়া গাউনটা প‌রে, বাই‌রে বের হ‌য়ে দুজন দেখ‌লো, বা‌ড়ির সবাই জে‌গে গেছে। আর তনয়ার কা‌জিন জে‌রি‌নের রু‌মের দি‌কে যা‌চ্ছে। জে‌রি‌নের কাছে গি‌য়ে আয়াত জি‌জ্ঞেস কর‌লো __কী হ‌য়ে‌ছে জে‌রিন?

__ভাইয়া আমার রু‌মে ভূত আস‌ছি‌লো!

__কী ভূত! সবাই অবাক হ‌য়ে জে‌রি‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। 
‌জে‌রিন বলল, সত্যি বল‌ছি কিছুক্ষন আগে কে যে‌নো আমার রু‌মের দরজা নক কর‌ছে, আমি দরজা খুল‌তেই দেখলাম সাম‌নে ধবধ‌বে সাদা আর বি‌চ্ছি‌রি চেহারার এক ভূত আমাকে ধরার চেষ্টা কর‌ছে। আমি চোখ বন্ধ ক‌রে চিৎকার দেয়ার সা‌থে সা‌থে গা‌য়েব হ‌য়ে গে‌লো। জে‌রি‌নের মা জে‌রি‌নের মাথায় ঠুয়া মে‌রে ধমক দি‌য়ে বলল,
__রাত জে‌গে ভূ‌তের ছ‌বি দে‌খে আয়নায় হয়ত নি‌জের চেহারা দে‌খে নি‌জেই ভয় পে‌য়ে‌ছিস। রাত দেড়টার সময় পু‌রো বা‌ড়ি মাথা তু‌লে ফেল‌ছে। ফা‌জিল মে‌য়ে। যা ঘুমা।

‌__‌বিশ্বাস ক‌রো মা আমি স‌ত্যি ভূত দেখ‌ছি। (জে‌রিন)

__‌বেয়ান আপনার মা ঠিক বল‌ছে। আপ‌নি মেকাপ ছাড়া নি‌জের চেহারা নি‌জে আয়নায় দেখ‌ছেন তাই ভূত ভাব‌ছেন। (আয়াজ দুষ্ট‌মি হা‌সি দিয়ে কথা গু‌লো বলল)

‌জে‌রিন রা‌গি চো‌খে আয়াজের দি‌কে তাকা‌তেই আয়াজ চোখ মার‌লো। সবাই জে‌রিনের কান্ড দে‌খে ওকে পাগল ব‌লে হাস‌তে হাস‌তে যে যার রু‌মে চ‌লে গে‌লো। তনয়া আয়াত আর আয়াজ দা‌ড়ি‌য়ে হাস‌ছে। আয়াত জে‌রিন‌কে বলল,

__তা শালীকা ভূতটা মেইল ছি‌লো না‌কি ফি‌মেইল ছি‌লো?

__জে‌রিন রে‌গে বলল, আ‌মি কি জেন্ডার দেখ‌ছি না‌কি? 

__আ‌রে ভাইয়া শাকচু‌ন্নি হ‌বে হয়ত। কারন আমা‌দের বেয়া‌নের কা‌ছে ভূ‌লেও ‌কোন মেইল ভূত আস‌বে না। ভ‌য়ে পালা‌বে। (আয়াজ)

আয়াত হাস‌তে বলল,
__‌জে‌রিন তোমার ভূতের কার‌নে আমার রোমান্সের বা‌রোটা বাজ‌ছে। 

__‌তো এখন করুন কে নি‌ষেধ কর‌ছে। (রাগ ক‌রে)

আয়াত হাস‌তে হাস‌তে তনয়া‌কে নি‌য়ে চ‌লে গে‌লো। আয়াজ এখ‌নো জে‌রি‌নের সাম‌নে দা‌ড়ি‌য়ে আছে। জে‌রিন বলল,
__‌কী হ‌লো আপ‌নি কোন দুঃ‌খে এখা‌নে দা‌ড়ি‌য়ে আছেন।

__‌বেয়ান প‌রের বার যখন ভূত সে‌জে আস‌বো তখন দরজা খুল‌লে অবশ্যই গা‌য়ে ওড়না দি‌য়ে খুল‌বেন আপনি লজ্জা না পে‌লেও আমি পাই। 

__তারমা‌নে আপ‌নি? ইউ ব‌লে জে‌রিন আয়াজ‌কে মার‌তে গে‌লে।
আয়াজ জে‌রি‌নের হাতটা ধ‌রে ওর পিছ‌নে মু‌রে দেয়া‌লের সা‌থে চে‌পে ধ‌রে বলল, 
__প‌রের বার আমার সা‌থে লাগ‌,‌তে আস‌লে স‌ত্যি স‌ত্যি ভূ‌তের কা‌ছে পাঠা‌বো। 

__শালা লুচু হাত ছাড় আমার।

__আচ্ছা লুচ্চা‌মির কী করলাম? লুচু‌গি‌রি কর‌লেআপনার পিছ‌নে ঘা‌রের নি‌চে পিঠে যে, তিলটা দেখা যা‌চ্ছে এখন সেটায় কিস ক‌রে দিতাম। তা তো দেই‌নি।
জে‌রিন বিস্ফ‌রিত চো‌খে আয়া‌জের দি‌কে তাকা‌তে চেষ্টা কর‌ছে। কিন্তু আয়াজ হাত এত শক্ত ক‌রে ক‌রে ওকে দেয়া‌লের সা‌থে ‌চে‌পে ধর‌ছে যে, জে‌রিন চে‌য়েও নড়‌তে পার‌ছে না। আয়াজ বলল, এরপর আমার সা‌থে দুষ্ট‌মি করার পর ফিডব্যাক পাবার জন্য রে‌ডি থাক‌বেন প্যায়া‌রের বেয়ান।

__আপনা‌কে আমি দেখে নি‌বো!

__এখনই দে‌খে নিন। আর হ্যাঁ শরী‌রে ওড়না রাখার চেষ্টা কর‌বেন। মে‌য়ের শরীর ঢে‌কে রাখ‌লেই বে‌শি সুন্দর দেখায়। শুভ রা‌ত্রি। 

আয়াজ আর কিছু না ব‌লে চ‌লে গে‌লো। জে‌রিন কিছুক্ষন ওখা‌নেই থম মে‌রে দা‌ড়ি‌য়ে রইল। তনয়া রু‌মে এসে তখনও হাস‌ছে। আয়াত কা‌ছে এসে বলল, 
__ভূতটা কে ব‌লো তো?

__আমার ম‌নে হয় আয়াজ ভাইয়া। কারন ওখা‌নে সবার শে‌ষে সে আস‌ছি‌লো আর তার হা‌তে লাল র‌ঙের মেকাপ দেখ‌ছি। হয়ত জে‌রি‌নের সা‌থে দুষ্ট‌মি করতে কর‌ছে। আয়াজ ভাইয়া‌কে দেখ‌লে বোঝা যায়না সে এত দুষ্ট। সবসময় তো শান্ত‌শিষ্ট থা‌কে। 

আয়াত হা হা ক‌রে হে বলল, আয়াজ ছোট বেলা থেকেই এমন। কেউ ওর পিছ‌নে লাগ‌লে তা‌কে ফিডব্যাক দি‌য়েই ছাড়‌বে। চ‌লো ঘুমা‌বে। দু‌টো বা‌জে প্রায়। কাল সকা‌লে বা‌ড়ি যা‌বে না‌কি বিকা‌লে?

__হুমম। বাবা তো ‌বিকা‌লে যে‌তে বলল। সকা‌লে না‌কি কজন রি‌লে‌টিভ আস‌বে। ইশ এত‌দিন পর বা‌ড়ি আসলাম অথচ মাত্র দু‌দিন থাক‌তে পারলাম।

__‌ঠিক আছে তু‌মি ক‌দিন থা‌কো ত‌বে। কিন্তু আমার তো যে‌তে হ‌বে। দু‌দিন যাবত তু‌মি আমি কেউ অফিস যা‌চ্ছি না। বাবার উপর খুব প্রেশার যা‌চ্ছে। 

__হুমম তা ঠিক। কিন্তু স্যার আপনা‌কে ছাড়া যে, আমি এক‌দিনও থাক‌তে পার‌বো না। 

আয়াত তনয়াকে বু‌কে নি‌য়ে শু‌য়ে প‌ড়ে বলল, এখন তো তু‌মি যখন ইচ্ছা তখন আস‌তে পার‌বে। মা‌ঝে মা‌ঝে অফিস শে‌ষে বৃহস্প‌তিবার চ‌লে আস‌বে আর র‌বিবার যা‌বে কি ব‌লো?

__অনেক ধন্যবাদ মি হাজ‌বেন্ড। ভা‌লোবাসা নি‌বেন।

__নাহ এখন ভা‌লোবাসা দি‌বো। হা হা। 

তনয়া আয়া‌তের বু‌কের মা‌ঝে বাচ্চা‌দের মত ঘুমা‌চ্ছে। কিন্তু আয়া‌তের চো‌খে ঘুম আস‌ছে না। তাই ফোনটা হা‌তে নি‌লো। তখন দেখ‌ল সেই লোকটা অনেক্ষন আগে মে‌সেস কর‌ছে।

**বড় ভাই আমার তনয়াকে ক‌বে ছাড়‌ছেন**

আয়া‌তের রা‌গে শরীর কাঁপ‌ছে। উঠ‌তেও পার‌ছে‌ না। তনয়া আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে আছে ওকে। আয়াত এক হা‌তে কোন ম‌তে টাইপ কর‌লো, 

ই‌তো‌রের মত লু‌কি‌য়ে লু‌কি‌য়ে মে‌সেস না করে সাম‌নে আয়। বছ‌রে কয়‌দিন বু‌ঝি‌য়ে দি‌বো। আর যে চো‌খে তনয়া‌কে নোংড়া ভ‌ঙ্গি‌তে দেখ‌ছিস ‌সে চোখ অন্ধ ক‌রে দি‌বো। 

‌লোকটা সা‌থে সা‌থে রিপলাই কর‌লো, 
__আরে আস‌বো আস‌বো, এত তারা কি‌সের?

__‌দেখা যা‌বে। 

তারপর আর কেউ কাউ‌কে কোন মে‌সেস কর‌লো না।

৫৯!!

প‌রের দিন বিকা‌লে,
আয়াতনয়া নি‌জে‌দের বা‌ড়ি চ‌লে এলো। গত‌ তিন দিন তনয়ার কা‌ছে অনেক সুন্দর সাজা‌নো গোছা‌নো কে‌টে‌ছে। নি‌জের ফ্ল্যা‌টে এসে মনটা খারাপ লাগছে। কিন্তু আয়াত আছে না। তনয়া‌কে মন খারাপ করার সু‌যোগই ও দেয়না। 

এভা‌বেই চল‌ছি‌লো ওদের দিনগু‌লো সুন্দর সাজা‌নো গোছা‌নো ভা‌লোবাসাময়। তনয়া এখনও মা‌ঝে মা‌ঝে অনুভব ক‌রে কেউ ওকে ফ‌লো ক‌রে। কিন্তু কাউকেই দে‌খে না। লোকটা এখ‌নো আয়াত‌কে মে‌সেস দেয় কিন্তু পার‌সোনাল‌লি এ্যাটাক ক‌রে না। আয়াত প্রথ‌মে দীপু‌কে স‌ন্দেহ ক‌রে‌ছি‌লো। কারন তনয়া‌দের বা‌ড়ি থে‌কে আসার দিন সে প‌থে দীপু‌কে দেখে‌ছি‌লো। কিন্তু স‌ন্দে‌হের ভি‌ত্তিতে কাউ‌কে দোষী করা যায়না। আয়াত দীপুর সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে তেমন কিছুই জানতে পা‌রে‌নি। আয়াত ইদা‌নিং তনয়া‌কে বে‌শি সময় একা থাক‌তে দেয়না। খ্রব ভয় হয় আয়া‌তের। তাই একসা‌থে অফিস যায় আবার তনয়া‌কে সা‌থে নি‌য়ে ফি‌রে।

তনয়ার প‌রিবারের সবাই আয়া‌তের বা‌ড়ি ‌বেড়া‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লো। আয়া‌ত তনয়াও গে‌ছি‌লো। আয়া‌তের মা তনয়া‌কে মে‌নে না নি‌লেও তনয়ার প‌রিবা‌রের সবার সা‌থে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার কর‌ছে। আয়াত তনয়া তা‌কে মানা‌নোর সর্বোচ্চ চেষ্টা কর‌ছে। ইদা‌নিং তি‌নিও তনয়া‌কে মোটামুটি মান‌তে চেষ্টা কর‌ছে। 

এর ম‌ধ্যে তা‌মিম আর র‌শ্মির ব্রেকাপ হয়। কারন তা‌মি‌মের অতি‌রিক্ত প‌রিমান রাগ আর স‌ন্দেহ। র‌শ্মি ভাব‌ছি‌লো তা‌মিম ধী‌রে ধী‌রে ঠিক হ‌বে কিন্তু না তা‌মিম ওর রাগ ছাড়‌তে পা‌রে‌নি। আয়াত তনয়া এটা শোনার পর ওদের দুজনকে মিলা‌নোর চেষ্টা করছে। কিন্তু দুজনই এক‌রোখা। কেউ নি‌জেদের ইগো ছাড়‌তে চায়না।

‌দেখ‌তে দেখ‌তে আরো একমাস চ‌লে গে‌লো। 
এ মা‌সের আঠে‌রো তা‌রিখ ওদের রি‌সিপস‌নের তা‌রিখ ঠিক করা হ‌য়ে‌ছে। পনে‌রো তা‌রিখ আয়াত তনয়া যে যার বা‌ড়ি যা‌বে। তারপর গা‌য়ে হলুদ, আর তনয়া‌কে আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে আয়াত‌দের বা‌ড়ি নি‌য়ে আস‌বে। 

আজ আয়াত তনয়ার উপর খুব রাগ ক‌রে নি‌জের বাসায় চ‌লে গে‌লো। কারন তনয়া তানভী আর মেঘার সম্প‌র্কের কথা আয়াত‌কে ব‌লে‌নি। আয়াত প্রায়ই রাগ ক‌রে কিন্তু রাগ ক‌রে কখ‌নো এভা‌বে তনয়া‌কে একা ফ্ল্যা‌টে ছে‌ড়ে ‌নি‌জের বা‌ড়ি যায়‌নি। ওদের ভিতর ঝগরা হ‌লেও সেটা বে‌শি সময় স্থায়ী হ‌তো না। রাগ হ‌তো আবার দুজন দুজনার ভা‌লোবাসায় হারা‌তো। কিন্তু আজকে আয়াত রাগ ক‌রে চ‌লে যাওয়ায় তনয়া খুব কষ্ট পে‌য়ে‌ছে। আয়াত যে, কষ্ট পায়নি তা কিন্ত না। আয়াতও ভিষন কষ্ট পে‌য়েছে। কারন তনয়া ওর কাছ থে‌কে কিছু লুকায় না। সেই ও মেঘা আর তানভী এর সম্প‌র্কের কথা লুকা‌লো। আয়াত বিষয়টা নি‌তে পা‌রে‌নি। 

রাত একটা,
আয়াত নি‌জের রু‌মে রাগ ক‌রে ব‌সে ছি‌লো। তখন মেঘা এসে বলল,
__তুই কাজটা ঠিক ক‌রিস‌নি ভাইয়া! ভা‌বি‌কে এভা‌বে একলা ছে‌ড়ে এসে মো‌টেও ঠিক ক‌রিসনি।

__‌ঠিক বে‌ঠিক আমার তোর কাছ থে‌কে শিখতে হ‌বে না।

__হ্যাঁ শিখ‌তে হ‌বে। কারন আমিই ভাবি‌কে নি‌ষেধ কর‌ছিলাম আমার আর তান‌ভী এর সম্প‌র্কের কথা তো‌কে না বল‌তে। নয়ত ভা‌বি আর তানভী প্রথ‌মেই বলতে চে‌য়ে‌ছি‌লো। আমি চে‌য়ে‌ছিলাম তানভী আর আমি নি‌জে‌দের পা‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে সবাই‌কে সবটা জানা‌বো। তাছাড়া তো‌দের বি‌য়ের সপ্তাহ খা‌নিক পর তানভী বিএস‌সি করার জন্য বাহি‌রে চ‌লে যা‌বে। আমরা দুজন চে‌য়ে‌ছিলাম ও যাবার আগে তো‌কে জানা‌বো। তো‌কে জানাই‌নি কেন জা‌নিস ?
কারন তোরা ছে‌লেরা নি‌জেরা অন্যের বো‌নের সা‌থে প্রেম কর‌বি কিন্তু কেউ তো‌দের বো‌নের সা‌থে প্রেম কর‌লেই দোষ। একটা স‌ত্যি কথা বল ভাইয়া, য‌দি বলতাম আমি তানভী‌কে ভা‌লোবা‌সি ত‌বে কী তুই সহ‌জে মে‌নে নি‌তি?

__আয়াত নিশ্চুপ।

__এই কার‌নেই ব‌লি‌নি। ভাই‌য়েরা বোন‌দের জন্য সবসময় বেস্টটা চায়। তাই আমি চে‌য়ে‌ছিলাম তানভী উপযুক্ত হ‌য়ে তোর কা‌ছে আমার হাত দা‌বি করুক। কিন্তু আমা‌দের দুজনার কার‌নে তুই ভা‌বি‌কে কষ্ট দি‌তে পা‌রিস না। তুই কী ভা‌বিস তোর আর ভা‌বির ম‌ধ্যে সম্পর্ক খারাপ হ‌লে আমার আর তানভী এর সম্পর্কও খারাপ হ‌বে? নো নেভার! আমি বা তানভী কেউই তোর মত না। সামান্য কিছু ঝগরা হ‌লেই নি‌জের কা‌ছের মানুষটা‌কে ফে‌লে দূ‌রে যাই না। একবার ভাব‌তো ভাইয়া তোর এভা‌বে চ‌লে আসায় ভা‌বি কতটা কষ্ট পে‌য়ে‌ছে। হয়ত একা একা ব‌সে কাঁদ‌ছে। একা একা য‌দি কোন বিপদ আপদ হয় তখন কী হ‌বে!

আয়াত কিছু ভাব‌তে পার‌ছে না। মাথা হ্যাং হ‌য়ে গে‌ছে। আয়াত ভাব‌ছে, সত্যি মা‌ঝে মা‌ঝে আয়াত বেয়া‌ক্কে‌লের মত কাজ ক‌রে। আয়াত দা‌ড়ি‌য়ে বলল,
__মা‌কে ব‌লিস আমি চ‌লে গেলাম।

__রাত দু‌টো বা‌জে বের হ‌বি? তার থে‌কে সকা‌লে যাস।

__না‌রে আমি জা‌নি পাগলীটা কান্না ক‌রে নি‌জের অবস্থা বা‌রোটা বা‌জি‌য়ে ফেল‌ছে।

আয়াত এক মুহূর্তও দাড়া‌লো না। বাসায় গি‌য়ে ডোর বেল না বা‌জি‌য়ে নি‌জের কা‌ছে থাকা চা‌বি দি‌য়ে লক খু‌লে ভিত‌রে গিয়ে দে‌খে তনয়া সোফায় ঘু‌মি‌য়ে পড়‌ছে। আয়াত ভাব‌ছে নিশ্চিত মে‌য়েটা কিছু খায়‌নি। নি‌জের উপর রাগ হ‌চ্ছে খুব। কেন যে ওর এত রাগ ওঠে মা‌ঝে মা‌ঝে। তনয়ার পা‌শে ব‌সে ওর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তেই তনয়া জে‌গে উঠ‌লো। আয়াত‌কে দে‌খে অভিমান ক‌রে মুখ ঘু‌রি‌য়ে অপর পাশে ‌নি‌য়ে গে‌লো। আয়াত মৃদু হে‌সে তনয়াকে কা‌ছে টে‌নে বু‌কের মা‌ঝে নি‌য়ে বলল,

__স্য‌রি বল‌বো না। তবুও য‌দি পা‌রো তোমার এই বজ্জাত বরটা‌কে মাফ ক‌রে দাও। প্লিজ। তু‌মি তো জা‌নো আমার কথায় কথায় হুট ক‌রে রাগ ওঠে। এভা‌বে রাগ ক‌রে থে‌কো না অভিলাষী। মাফ ক‌রে দাও না। ভা‌লোবা‌সি তো।

__ভা‌লোবাস‌লে কেউ এভা‌বে রাগ ক‌রে ছে‌ড়ে যায় না। হ্যাজ‌বেন্ড ওয়াই‌ফের ভিতর ঝগরা হ‌বেই তাই ব‌লে এভা‌বে চ‌লে যে‌তে হ‌বে?

__আচ্ছা এই দে‌খো কান ধর‌ছি। আর যা‌বো না। তু‌মি চাই‌লে আমা‌কে শা‌স্তি দাও। যা শা‌স্তি দিবা, মাথা পে‌তে নি‌বো। প্র‌মিজ।

__‌তোমা‌কে শাস্তি দি‌তে চাই না। তোমার রাগ, ঝগরা, বকা দেয়া সব মে‌নে নি‌তে পার‌বো শুধু তোমার দূ‌রে যাওয়াটা মে‌নে নি‌তে পার‌বো না। আর শা‌স্তি কী দি‌বো! তোমায় শা‌স্তি দেয়া তো নি‌জে‌কে শা‌স্তি দেয়া। ত‌বে আমায় আগের থে‌কেও বে‌শি ভা‌লোবাস‌তে হ‌বে। আর কাল‌কে অফিস যেতে পার‌বে না।‌ আমা‌কে সময় দি‌তে হ‌বে।

__ও‌কে মহারানী আপনার শা‌স্তি মাথা পে‌তে নিলাম। এবার চলুন খা‌বেন। আমারও খি‌দে পে‌য়ে‌ছে। 

সারা রাত দুজনার খুনসু‌টি আর ভা‌লোবাসায় কাট‌লো। সকা‌লে আয়া‌তের একটা জরু‌রি কা‌জে যে‌তেই হ‌বে। ত‌বে দুপু‌রের আগে চ‌লে আস‌বে। জরু‌রি কাজ দে‌খে তনয়াও নি‌ষেধ কর‌লো না। যাবার সময় তনয়ার মনটা কেমন যে‌নো কর‌ছি‌লো, আয়া‌তেরও যে‌নো পা চল‌ছি‌লো না। তনয়া‌কে ছে‌ড়ে এক মুহূ‌র্তের জন্যও কোথাও যে‌তে মন চাইছে না ওর। আয়াত দরজা খুল‌তে নি‌লে তনয়া ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ব‌লে,
__‌মিস ইউ।

__‌মি টু মাই লাভ। 

তনয়া আয়া‌তের গলা জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে পা‌য়ের উপর পা তু‌লে আয়া‌তের নিশ্বা‌সে নি‌জের নিশ্বাস আবদ্ধ ক‌রে ফে‌লে। বেশ কিছুক্ষন এভা‌বে থে‌কে আবার আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে। আয়াত নি‌জেও বুঝ‌তে পার‌ছে না আজ মনটা এত অশান্ত লাগ‌ছে কেন। ম‌নে হ‌চ্ছে কিছু হা‌রি‌য়ে ফেল‌বে। কোন অশুভ শক্তি তিব্রভা‌বে ওদের পিছু ছুট‌ছে। আয়াত তনয়া‌কে নি‌জের বুক থে‌কে তু‌লে, তনয়ার সারা মু‌খে ভা‌লোবাসার পরশ দিয়ে বে‌ড়িয়ে গে‌লো। দুজনার চোখ থে‌কেই কোন অজানা কার‌নে জল ঝরছে। বুঝ‌তে পার‌ছে না কেন। ম‌নে হয় আর কেউ কাউ‌কে দেখ‌বে না। 

আয়াত যে‌তেই তনয়া ঘ‌রের কাজ গু‌ছি‌য়ে ওভে‌নে কেক বসা‌লো। আজ আয়াত‌কে বল‌বে ও কতটা ভা‌লোবা‌সে আয়াত‌কে। হ্যাঁ আজ সেই বি‌শেষ দিন যে দি‌নের জন্য তনয়া এত‌দিন আয়াতকে ভালোবা‌সি কথাটা ব‌লে‌নি। আজ বল‌বে। বল‌বে আজ ওর আর আয়া‌তের ভা‌লোবাসার অংশ ছোট্ট ভ্রুন রূ‌পে ওর গ‌র্ভে বে‌ড়ে উঠ‌ছে। আর কাল রা‌তের জন্য স‌্য‌রিও বল‌বে।

৬০!!

       মাত্র দু ঘন্টার ম‌ধ্যে কাজ শেষ ক‌রে আয়াত বা‌ড়ি চ‌লে আস‌লো। তনয়া‌কে ছাড়া নিশ্বাস বন্ধ হ‌য়ে আসছি‌লো। তনয়ার জন্য অনেক গিফ্ট আর কাল রা‌তের জন্য স‌্যরি বল‌বে আর ওকে মি‌ষ্টি কিছু মুহূর্ত উপহার দি‌বে। 
কয়েকবার বেল বাজা‌নোর পরও তনয়া দরজা খুল‌ছে না। আয়াত চা‌বি দি‌য়ে দরজা খুল‌তে গি‌য়ে দে‌খে দরজা খোলা, শুধু ভা‌লো ক‌রে ভেজা‌নো। আয়া‌তের কেমন যে‌নো ভয় কর‌ছে। দরজা খু‌লে ভিত‌রে গি‌য়ে দে‌খে তনয়া রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লো‌রে প‌রে আছে।
কিছু সম‌য়ের জন্য আয়াত স্তব্ধ হ‌য়ে গে‌লো। মাথা কাজ করা বন্ধ ক‌রে দি‌লো আয়া‌তের। ম‌নে হ‌চ্ছে কোন দুঃস্বপ্ন দেখ‌ছে বা স্বপ্ন আর বাস্ত‌বের সং‌মিশ্র‌ণে তৈরী পৃ‌থিবী‌তে চ‌লে আস‌ছে। কিন্তু না তনয়ার গোঙানী‌তে বাস্ত‌বে ফির‌লো।

তনয়ার মাথাটা কো‌লে নি‌তেই তনয়া পিট‌পিট চো‌খে আয়া‌তের দি‌কে তাকা‌লো। আয়া‌তের চোখ স্থির হ‌য়ে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। তনয়া খুব কষ্ট ক‌রে বলল,
__আয়াত আমাকে বাঁচাও। আমার খুব কষ্ট হ‌চ্ছে।

আয়াত কী কর‌বে ভেবে পা‌চ্ছে না। ওর শরী‌রের পু‌রো শ‌ক্তি যে‌নো নিঃশ্বেষ হ‌য়ে গে‌ছে। তবুও কথা না বা‌ড়ি‌য়ে তনয়ার ওড়না দি‌য়ে তনয়ার মাথা আর পিঠ পেট শক্ত ক‌রে বেঁ‌ধে দি‌য়ে। তনয়া‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। তনয়া আয়া‌তের গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,

__আয়াত আমি বাঁচ‌বো তো!

__‌তোমার কিছু হ‌বে না তানুপা‌খি। কিন্তু তোমার এ অবস্থা কে কর‌লো?

কথা বল‌তে বল‌তে আয়াত গা‌ড়ির কা‌ছে চ‌লে এলো। তনয়া‌কে গা‌ড়ি‌য়ে ব‌সি‌য়ে একহা‌তে তনয়া‌কে বু‌কের সা‌থে আঁক‌রে ধ‌রে অপর হা‌তে গা‌ড়ি ড্রাইভ কর‌ছে। তনয়া আয়াতের গা‌লে হাত দি‌য়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
__আমাকে বাঁ‌চি‌য়ে নিও আয়াত। আমার এখ‌নো অনেক স্বপ্ন আছে যা পূরন করবো। তোমার অনেক ভা‌লোবাসা পাওয়ার আছে। আমার ম‌ধ্যে তোমার যে অংশ বে‌ড়ে উঠ‌ছে তার সা‌থে খেলার ইচ্ছা আছে।

__কী?

__হ্যাঁ আয়াত! তু‌মি বাবা হ‌বে, আমি মা। আয়াত আমা‌কে আর আমাদের সন্তান‌কে বা‌ঁচি‌য়ে নিও। আমি মর‌তে চাই না আয়াত। তোমার সাথে শত বছর বাঁচ‌তে চাই। ভা‌লোবাস‌তে চাই। আমার দুই প‌রিবা‌রের সা‌থে থাক‌তে চাই। সংসার কর‌তে চাই। তোমায় আমার অভিলাষগু‌লো পূরণ কর‌তে চাই।

__তোমার কিছু হ‌বে না তনয়া। তু‌মি ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। কথা ব‌লো না প্লিজ।

হাসপাতা‌লে এসে। তনয়া‌কে অপা‌রেশন থিওয়টা‌রে ঢুকা‌নোর সময় তনয়া আয়া‌তের গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
__ভা‌লোবা‌সি আয়াত খুব ভা‌লোবা‌সি তোমায়। 

__আ‌মিও খুব ভা‌লোবা‌সি আমার অভিলাষী‌কে। 

__আয়াত আমার একটা কথা রাখ‌বে?

__হুমম।

__‌শেষ বা‌রের মত আমার ঠোঁ‌টে একটা চু‌মো খা‌বে। 
আয়াত কান্না কর‌তে কর‌তে নি‌চে ঝু‌কে তনয়ার ঠোঁ‌টে আল‌তো চু‌মো খে‌লো। আয়া‌তের চো‌খের প‌া‌নিটা তনয়ার গা‌লে পড়‌ছে। আর তনয়া নিশ্চুপ হ‌য়ে, চোখ বন্ধ ক‌রে ফেল‌লো। আর এখনও খুল‌লো না।

—————

তনয়া‌কে অপা‌রেশন থি‌য়েটা‌রে নেয়ার পর হাসপাতাল কতৃপক্ষ পু‌লিশ‌কে খবর দেয়। পু‌লিশ এসে আয়াত‌কে ধ‌রে নি‌লো। কারন আয়া‌তের ফ্ল্যা‌টে আয়াত ছাড়া কেউ আসে‌নি। আর পা‌শের বাসার আন্টি না‌কি বল‌ছে সে আয়াত‌কে দেখ‌ছে তনয়ার বাসা থে‌কে বের হ‌তে। পু‌লিশ তাৎক্ষ‌নিক স‌ন্দে‌হের ভি‌ত্তি‌তে আয়াত‌কে ধ‌রে নেয়।

তারপ‌রের ঘটনা‌তো আপনারা জা‌নেনই।
আয়াত পু‌লিশ‌কে মে‌সেসগু‌লো দেখা‌লো। সেই লোকটার কথা বল‌লো। যে তনয়াকে ফ‌লো কর‌তো। আর আয়াতের যা‌দের উপর স‌ন্দেহ হ‌য়ে‌ছি‌লো সবার নাম ব‌ললো। রিসাদ, দীপু, রিয়া এমন‌কি নি‌জের মা‌য়ের নামও। কারন সে‌দিন যখন আয়া‌তের মা বল‌ছি‌লো তনয়া যে‌নো আয়াত‌কে মুক্ত করে দেয়। সে‌দিন থে‌কে আয়া‌তের অব‌চেতন মন কেন জা‌নি তা‌কে স‌ন্দেহ কর‌তে শুরু করে। নি‌জের মা‌য়ের মুখ থে‌কে অমন কথা শুন‌বে তা কল্পনাও ক‌রে‌নি আয়াত। তারপর ভাব‌লো মা তো বরাবরই তনয়া‌কে অপছন্দ কর‌তো। য‌দিও আয়া‌তের মন বল‌ছে সে কিছু ক‌রে‌নি সে নি‌র্দোষ। কিন্তু ম‌স্তিষ্ক অন্য কিছু বল‌ছে। আর আয়া‌তের ম‌তে মন আর ম‌স্তি‌ষ্কের লড়াই‌য়ে সবসময় ম‌স্তি‌ষ্কের কথা শুন‌তে হয়। মন আবেগী হয় কিন্তু ম‌স্তিষ্ক নয়। পু‌লিশ সবাই‌কে জি‌জ্ঞেসাবাদ কর‌ছে কিন্তু তেমন কোন প্রমাণ পা‌চ্ছে না।

৬১!!

     তনয়া এখ‌নো নিস্তব্ধ র্নি‌লিপ্ত হ‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে আছে। আয়াত হস‌পিটালটা‌কেই নি‌জের ঘর বা‌নি‌য়ে ফেল‌ছে। সারা‌দিন তনয়ার কা‌ছে প‌রে থা‌কে। বা‌কি দু‌নিয়ার কোন খেয়াল নেই। আয়া‌তের এ অবস্থা দে‌খে আয়া‌তের বাবা আমজাদ হোসেন খুব ভে‌ঙে পর‌ছেন। ব্যবসা খারা‌পের দি‌কে যা‌চ্ছে দে‌খে আয়াজ আর মেঘা দুজ‌নেই অফি‌সে যাওয়া শুরু কর‌লো। ওর বাবা‌কে অার আয়াত‌কে পূর্ণ সহ‌যোগীতা কর‌ছে। ইদানিং তনয়ার আয়া‌তের গভীর ভা‌লোবাসা দে‌খে আয়া‌তের মা‌য়ের মনও গল‌তে শুরু কর‌ছে। বি‌শেষ ক‌রে যখন থে‌কে শুন‌ছে তার বংশধর তনয়ার গ‌র্ভে। তানভীও আর বা‌হি‌রে বিএস‌সি কর‌তে গে‌লো না। দে‌শেই ভ‌র্তি হ‌লো।

আর তনয়ার বাচ্চাটা!
হ্যাঁ তনয়ার বাচ্চাটা এখ‌নো বেঁ‌চে আছে। তনয়ার আঘাত লেগে‌ছি‌লো পি‌ঠে আর মাথায়। পি‌ঠের ঘা মোটামু‌টি শু‌কি‌য়ে গে‌ছে আর মাথার ক্ষত শুকা‌লেও নার্ভগু‌লো কাজ কর‌ছে না। তাই তনয়া কোমায় আছে। ডাক্তাররা ভে‌বে‌ছি‌লো তনয়ার অতি‌রিক্ত রক্তক্ষর‌নের ফ‌লে বাচ্চাটা মিসক্যা‌রেজ হ‌য়ে যাবে কিন্তু জাদুরমত ভ্রুনটা এখ‌নো বেঁ‌চে আছে। যার বয়স নয় কি দশ সপ্তাহ। ডাক্তারাও বিষয়টা নি‌য়ে খুব স্ত‌ম্ভিত। কারন যেখা‌নে মিসক্যা‌রেজ হবার সম্ভবনা এত বে‌শি সেখা‌নে বাচ্চাটা দি‌ব্যি সুস্থ আছে। হয়ত বাচ্চাটা‌কে পাবার তনয়ার গভীর ইচ্ছা ম‌নোবল ছোট্ট ভ্রুনটা‌কে এখ‌নো বাঁ‌চি‌য়ে রে‌খে‌ছে। 

তনয়া বেঁ‌চে থাকার সম্ভবনা এখন বে‌শি। কিন্তু কোমা থে‌কে ক‌বে বের হ‌বে তা ডাক্তারা বল‌তে পার‌ছে না। হয়ত ক‌য়েক মাস বা বছর নয়ত সারা জীবন। ডাক্তারা তনয়ার খুব কেয়ার দি‌চ্ছে কারন তনয়ার বেবিটা যখন পূর্ণ বয়স্ক হ‌বে তখন সিজার ক‌রে বের ক‌রে তা‌কে পৃ‌থিবীর আলো দেখা‌নো হ‌বে। এছাড়া কোন অপশন নেই। এটা ডাক্তার‌দের জন্য খুব বড় একটা চ্যা‌লেঞ্জ। তা‌দের ধারনা হয়ত বাচ্চাটার টা‌নে তনয়া সুস্থ হ‌বে। আর তাছাড়া বাচ্চাটা এবোশন কর‌তে গে‌লে, তনয়ার প্রা‌ণের ঝু‌ঁকি খুব বে‌শি। তাই আয়াত আর তনয়ার প‌রিবা‌রের সবার সিদ্ধান্ত নি‌য়ে বাচ্চা‌কে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হ‌য়ে‌ছে। 

আয়াত তনয়ার পে‌টে হাত বু‌লি‌য়ে দি‌চ্ছে আর ভাব‌ছে, 
__এখা‌নে আমার তনয়ার মত আরেকটা পুতুল আছে। আমার আর তনয়ার ভা‌লোবাসার অংশ। আয়াত তনয়ার গা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল, এবার তো ওঠো তনয়া। আর কত ঘুমা‌বে! দে‌খো আমা‌দের বাচ্চাটাও বড় হ‌চ্ছে। ও তো এখন তোমার দুরন্তপানা দেখ‌তে চায় কিন্তু তু‌মি তো নীরব হ‌য়ে আছো। আচ্ছা তনু আমা‌দের বাচ্চার নাম কী রাখ‌বো? তু‌মি কী নাম ঠিক ক‌রে রাখছিলা? য‌দি ঠিক ক‌রে রা‌খো ত‌বে সেটাই রাখ‌বো। নয়ত আমা‌দের মে‌য়ে হ‌লে নাম রাখ‌বো, অন‌ন্দিতা। কারন ও তোমার মতই সাহসী আর ভা‌লোবাসার নতুন রূপ হ‌বে। আর যা‌কে আমরা অন‌ন্দিতা ডাক‌বো। তু‌মি চাই‌লে অন্য কিছুও রাখ‌তে পা‌রো। আমার প্রব‌লেম নেই। আচ্ছা ছে‌লের নাম কী রাখ‌বো? এটা তু‌মি ঠিক করবা? আমা‌দের সন্তা‌নের নাম ঠিক করার জন্য হলেও ওঠো না তনয়া। এভা‌বে রোজ ঘন্টার পর ঘন্টা আয়াত তনয়ার পা‌শে ব‌সে ওর সা‌থে কথা ব‌লে। কিন্তু তনয়া জবাব দেয় না।

আয়াত বল‌ছে, বাচ্চা কন‌সিভ করার আগে থে‌কেই বাচ্চার নাম নি‌য়ে আমার সাথে ঝগরা কর‌তে আর আজ কেন কর‌ছো না। আমি তো ব‌লে‌ছিলাম তনয়া বি‌য়ের পর বছর খা‌নিক সময় নি‌য়ে বে‌বি নি‌বো, কিন্তু না, তু‌মি বি‌য়ের প‌রের সপ্তা‌হে বল‌লে, বি‌য়ের পর প্রথম বিবাহ বা‌র্ষি‌কে আমরা তিনজন থাক‌বো। অনেক হইহুল্লর আর মজা কর‌বো। বে‌বি যখন তোমার গ‌র্ভে থাক‌বে তখন তার প্র‌তিটা মুহূর্ত তু‌মি অনুভব কর‌বে। অনুভব কর‌বে বে‌বির অস্তিত্বকে। ত‌বে এখন কেন অনুভব কর‌ছো না? ওঠো না তনয়া! আমি আমার দুরন্ত দুষ্ট অভিলাষী‌কে দেখ‌তে অভ্যস্ত। এরকম নীরব তনয়া‌কে আমার ভা‌লো লা‌গে না। 

আয়াত তনয়ার পে‌টে নি‌জের মাথা দি‌য়ে কেঁ‌দেই যা‌চ্ছে। এ কান্নার শেষ ক‌বে কেউ বলতে পা‌রে না। কারন তনয়া আদৌ উঠ‌বে কিনা তারও ‌কোন নিশ্চয়তা নেই।

নি‌জের মাথায় কা‌রো হা‌তের স্পর্শ পে‌য়ে মাথা তু‌লে উপ‌রে তাকা‌লো আয়াত। তা‌কি‌য়ে দে‌খে আয়মন আয়া‌তের মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌চ্ছে। এ মুহূ‌র্তে আয়াত‌কে কী ব‌লে শ‌ান্তনা দেয়া উচিৎ তা আয়মন জা‌নে না। আয়মন ভাব‌ছে, 
__যখন আমার এত কষ্ট হ‌চ্ছে তখন আয়া‌তের ক‌ষ্টের কথা তো চিন্তা কর‌তেও পা‌রি না। 

আয়মনকে দে‌খে আয়াত বলল, 
__‌দে‌খো না আপু তোমার বাচ্চাটা এভা‌বে গত দেড় মাস যাবত ঘু‌মি‌য়ে আছে। দে‌খো তোমার কথা তো ও শো‌নে ওকে ব‌লো না উঠ‌তে। প্লিজ আপু। 

আয়মন আয়া‌তের মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
__‌চিন্তা ক‌রিস না ভাই। ও ঠিক উঠ‌বে। আল্লাহ আছে তো। তি‌নি ওর মত বাচ্চার সা‌থে কোন অন্যায় কর‌বে না। 

তারপর অনেকক্ষন নীরবতা। তনয়ার মা এসে আয়মন‌কে চা দি‌তে চাই‌লে আয়মন বলল, তনয়ার সুস্থতার জন্য রোজা রাখ‌ছে। সবাই যে যার মত তনয়ার জন্য দোয়া কর‌ছে। তনয়ার বাবা রোজ তনয়া‌কে দেখ‌তে আসে, ওর পা‌শে ব‌সে থা‌কে তারপর কান্না ক‌রে। নি‌জের রা‌গের কার‌নে মে‌য়েটা‌কে মা‌সের পর মাস দূ‌রে স‌রি‌য়ে রে‌খে‌ছি‌লো আর এখন কা‌ছে পে‌য়েও মে‌য়েটা‌কে হারা‌তে বস‌ছে। খুব রাগ হয় তার নি‌জের উপর। কেন সে তনয়া‌কে দূ‌রে রে‌খে‌ছি‌লো। এখন সবার শুধু এটাই প্রার্থনা তনয়া যা‌তে খুব দ্রুত সুস্থ হ‌য়ে যায়।

আয়াত আয়মন‌কে বলল,
__আপু তু‌মি ওর কা‌ছে একটু থাকবা? আমার আমা‌দের ফ্ল্যাটে ‌কিছু কাজ ছি‌লো। 

__আচ্ছা। তুই যা। আমি আছি তনয়ার কা‌ছে। 

আয়মন তনয়ার পা‌শে ব‌সে কোরআন তেলায়ত কর‌ছে। তনয়ার মা তস‌বিহ পড়‌ছে। আয়াত তনয়ার কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে নি‌জের ফ্ল্যা‌টের উদ্দে‌শ্যে রওনা দি‌লো।

৬২!!

    আজ কত‌দিন পর আয়াত নি‌জের ফ্ল্যা‌টে আস‌লো। ফ্ল্যা‌টে ভিত‌রে ঢুক‌তেই আয়া‌তের বুকটা মোচর দি‌য়ে উঠ‌লো। সেই সাজা‌নো গোছা‌নো সুন্দর ফ্ল্যাটটা আজ মানুষ‌ বিহীন প‌রিত্যাক্ত বা‌ড়ির মত লাগ‌ছে। ঘ‌রের প্র‌তিটা কোনায় তনয়ার হা‌তের ছোঁয়া ছি‌লো আজ ঘরটা আছে তনয়াও আছে কিন্তু তনয়া আজ জীবন মৃত্যুর মাঝামা‌ঝি অবস্থান কর‌ছে। 
‌মে‌ঝের যে জায়গাটায় তনয়া প‌রে ছি‌লো সেখা‌নে এখ‌ন আর র‌ক্ত নেই কিন্তু ছোপ ছোপ দাগ ঠিকই আছে। পু‌লিশ এত‌দিন ফ্ল্যা‌টে তদন্ত কর‌তো গতকাল ব‌লে দি‌ছে ফ্ল্যাট থে‌কে সব তথ্য সংগ্রহ করা শেষ। ফ্ল্যাটটা সম্পূর্ণ অগোছা‌লো। অথচ তনয়া থাকা‌তে সামান্য প‌রিমানও অগোছা‌লো হ‌তো না। আয়াত অগোছা‌লো ক‌রে রাখ‌লেও তনয়া রাগ কর‌তো। বকা দি‌তো আয়াত‌কে। 

সারাঘরময় তনয়ার স্মৃ‌তি যে‌নো আয়াত‌কে চে‌পে ধর‌ছে। দম বন্ধ লাগ‌ছে ওর। ঘ‌রে কেমন আশ‌টে একটা গন্ধ আস‌ছে। আয়াত জানালা দরজা সব খু‌লে দি‌লো। রুমের গুমট ভাবটা দূর হওয়া দরকার। আয়াত ভাব‌ছে তনয়া এই ঘরটাকে কত ভা‌লোবাস‌তো। যে‌দিন শুন‌ছি‌লো আয়াত ফ্ল্যাটটা ওর নামে কিনে‌ছি‌লো আর তনয়া প্র‌তিমা‌সে যে ঘর ভাড়া দি‌তো আয়াত তা তনয়ার না‌মেই ব্যা‌ংকে রে‌খে দি‌তো, সে‌দিন তনয়ার ভিষন রাগ হ‌য়ে‌ছি‌লো। আয়া‌তের সা‌থে কথাই ব‌লে‌নি। শে‌ষে আয়াত তনয়াকে অনেক বুঝা‌নোর আর ভা‌লোবাসার পর রাগটা ক‌মে‌ছি‌লো। কতটা ভা‌লোবাসাময় আর খুনসু‌টির স্মৃ‌তি জ‌ড়ি‌য়ে আছে ঘ‌রের প্র‌তি‌টি কোনায়। আর আজ সেই পাগলীটা দুষ্ট‌মি করার জন্য নেই।

আয়াত বেডরু‌মে ঢু‌কে স্থিরচো‌খে তা‌কি‌য়ে আছে বে‌ডের একটা বা‌লি‌শের দি‌কে। কারন তনয়া তো সবসময় আয়া‌তের বু‌কের মা‌ঝে ঘুমা‌তো তাই দু‌টো বা‌লি‌সের প্র‌য়োজন ওদের হ‌তো না। আয়া‌তের বুক‌চি‌ড়ে একটা দীর্ঘ‌নিশ্বাস বে‌ড়ি‌য়ে আস‌লো। 

সারা ঘ‌রে ধূল আর মাকরসা বাসা বেঁ‌ধে‌ছে। আয়াত  ধী‌রে ধী‌রে পু‌রো ঘরটা প‌রিষ্কার ক‌রে ফেল‌লো। কিন্তু সাম‌নের রু‌মের যে, জায়গাটায় তনয়া রক্তাক্ত অবস্থায় প‌রে ছি‌লো, সে জায়গাটায় গি‌য়ে আয়া‌তের বুকটা ধক ক‌রে উঠ‌লো। র‌ক্ত গু‌লো নেই ত‌বে ছোপ ছোপ দাগ এখ‌নো আছে। ওর তনয়ার র‌ক্তের দাগ। 

পু‌রো ঘরটা তেমন ভা‌বে গোছা‌লো ঠিক যেমন ভা‌বে তনয়া গু‌ছি‌য়ে রাখ‌তো। আয়াত প‌কেট থে‌কে ফোনটা বের ক‌রে আয়মন‌কে ফোন ক‌রে তনয়ার কথা জে‌নে নি‌লো। তারপর ফো‌নের দি‌কে তাকা‌তেই দে‌খে সেই লোকটার মেসেস। এত‌দিন লোকটা আয়াত‌কে কোন মে‌সেস দেয়‌নি। আজ কেন দি‌লো? মেসেটায় লেখা ছি‌লো,

          SORRY
আ‌মি তনয়া‌কে মার‌তে চাই‌নি। যা হ‌য়ে‌ছে সেটা একটা এক‌সি‌ডেন্ট মাত্র। Sorry.

আয়া‌তের এত রাগ হ‌চ্ছে যে, ওকে কী রিপলাই কর‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। কতক্ষন চুপচাপ বিছানায় ব‌সে ছি‌লো। তারপর ধপ করে শু‌য়ে পড়লো। বিছানার দি‌কে তাকা‌তেই কান্না পায় আয়াতের। যখনই আয়াত এভা‌বে শু‌য়ে পড়‌তো, তনয়া এসে ওর বু‌কে নি‌জের জায়গা করে নি‌তো। আজ তনয়াকে চাই‌লেও নি‌জের বু‌কে নি‌তে পার‌ছে না, তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তে পার‌ছে না। আর সব এ জা‌নোয়ারটার জন্য। বেশ কিছুক্ষন পর ফ্ল্যাট থে‌কে বের হ‌য়ে লক ক‌রে পা‌শের ফ্ল্যা‌টের আন্টির কা‌ছে গে‌লো কিছু কথা জান‌তে। তারপর সোজা থানায় গে‌লো। সেখা‌নে গি‌য়ে মে‌সেটা দেখা‌লো সা‌থে অনেক প্ল্যান কর‌লো কিভা‌বে খু‌নি‌কে ধরা যায়। 

     সন্ধ্যার পর আয়াত তনয়ার কা‌ছে আস‌লো। আয়মন কিছুক্ষন পর বিদায় নি‌য়ে চ‌লে গে‌লো। আয়াত তনয়ার পা‌শে ব‌সে ওর হাতটা নি‌জের হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌য়ে বলল, 
__তনয়া দোষী যেই হোক না কেন শা‌স্তি সে পা‌বেই। আমার তনয়া‌কে কষ্ট দি‌য়ে মো‌টেও শা‌ন্তি পা‌বে না সে। আয়াত তনয়ার সারা মু‌খে ভা‌লোবাসার পরশ দি‌তেই ম‌নে পড়লো তনয়ার কথা। একবার তনয়া বল‌ছি‌লো,

__আয়াত শোন, আমি যখন কন‌সিভ কর‌বো তখন তু‌মি রোজ আমার পে‌টে অনেকগু‌লো চু‌মো খা‌বে। এ‌তে আমা‌দের বে‌বি খু‌শি হ‌বে। বে‌বি ভাব‌বে তার বাবা তা‌কে আর তার মা‌কে খুব ভা‌লোবা‌সে।
‌মে‌য়েটা মাত্র একবছ‌রে আয়া‌তের জীব‌নের প্র‌তি‌টি কানায় কানায় নি‌জের জায়গা তৈরী ক‌রে নি‌য়ে‌ছে। আয়া‌তের অস্তি‌ত্বে মি‌সে গে‌ছে তনয়া।
আয়াত তনয়ার পে‌টে চু‌মো খে‌য়ে ওর দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। সারা জীবন দেখ‌লেও বু‌ঝি তনয়া‌কে দেখার পিপাসা ওর মিটবে না।

৬৩!!

বেশ ক‌য়েক‌দিন পর,
আয়াত মেঘা‌কে ফোন দি‌য়ে বলল,
__‌কোথায় তুই?

__বাসায় ভাই। কেন?

__বাবা মাকে নি‌য়ে জল‌দি হাসপাতা‌লে আয়। 

__‌কেন?

__তনয়ার জ্ঞান ফির‌ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন