প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ২৭ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


গত দুদিন ধরে অয়নের কোনো মেসেজ, কলস নেই। শাবিহা কল দিলে ধরছে না। মেসেজের রিপ্লাই করছে না। ছেলেটা কি খুব ব্যস্ত? নাকি সাইফুলের কথাগুলো শুনে রেগেছে? শাবিহা বুঝতে পারছেনা সে কি করবে! কার কাছে অয়নের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে? মন আনচান করছে। তার স্বচ্ছল পৃথিবীর আকাশে মেঘ জমেছে। দুদিন ধরে সেখানে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। ঝোড়ো হাওয়ায় তোলপাড় শুরু করেছে। ভস্ম করছে ভেতরের সবকিছু। গলাকাটা যন্ত্রনায় বুক ধরে আসছে।

জীবনে এই প্রথম সে প্রেমে পড়েছে। বা প্রেম করছে বলা যায়! প্রেমিককে কিভাবে মানাতে হবে বা কি করতে হবে সে-সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। বড়ো শূন্যতা অনুভব করছে। বিষন্ন মনে এই নিয়ে অগুনতি বার কল করেছে। এখন আবার করলো! রিং হচ্ছে তবে ধরছে না। 

শাবিহার চোখ জ্বলছে। কান্নার আগামী বার্তা! কিন্তু সে কাঁদবে না! এতটাই ইমোশনাল হয়ে গেল সে? একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে তার কান্না আসছে? ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! শাবিহা নিজের প্রতি ভীষণ বিরক্ত! এতো ব্যাকুল হওয়ার কি আছে? মাত্র দুদিন হয়েছে। তাতেই তার এই অবস্থা? অথচ, দিন শেষে কান্নার ইচ্ছেটা দমন করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। 

অফিস থেকে বেরিয়ে শাবিহা বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। আজও অপেক্ষা করছে! যদি অয়ন আসে? দুদিন ধরে নিম্নে একঘন্টা সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটাই আশায়! অয়ন আসবে। এই বুঝি অয়ন এসে মুখ ভর্তি হেসে ডাকবে, 'শাবিহা।'

কিন্তু সেই মুহুর্ত আসছেই না! দাঁড়িয়ে থেকে শাবিহা আবারো কল করলো। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না! ঘন্টা খানেক হয়ে গিয়েছে। শাবিহার আজ দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে। বাসে উঠবে এমন সময় তার সামনে একটি ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটাকে চিনতে তার মিনিট পাঁচেক লেগেছে। অয়নের বন্ধু সৌভিক না এটা? সবসময় এই ছেলেটা অয়নের সঙ্গেই থাকে। শাবিহা কিছু বলবে এর পূর্বেই সৌভিক বললো, 'আপু আমার কথায় রেগে গেলে একটা চড় মেরে দিয়েন। তবুও তন্ময় ভাইকে বিচার দিবেন না প্লিজ! আমি শুধু আপনার কাছে মেসেজ বিতরণ করতে এসেছি।'

শাবিহার কানে সৌভিকের এগুলো গেল না।সে নিজের মতো উতলা কন্ঠে শুধালো, 'অয়ন কোথায়?'

সৌভিক চমকে তাকাল। শাবিহার উতলা মুখমণ্ডল দেখে, মনের ভয় কিছুটা কেটে গেল। প্রাণ প্রিয় বন্ধু অয়ন যখন বলেছে, শাবিহাকে গিয়ে আনতে। সে রাজি হয়নি। কেন রাজি হবে? কে চাইবে ইচ্ছে করে জুতোপেটা হতে? কিন্তু অয়ন ভরসার সঙ্গে বলেছে, শাবিহাকে একবার অয়নের নাম বললেই চলে আসবে। দ্বিধাবোধ নিয়েই মুলত সৌভিক এসেছে। এখন শাবিহার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে হালকা অনুভব করছে। মনের গহীনে থাকা ভয় অনেকাংশে কেটে গিয়েছে। হাসিমুখে বললো, 'আপু সামনেই। পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে শুধু।'
'তাই? আচ্ছা, চলো।'

সৌভিক আগে হাঁটছে শাবিহা পেছনে। তারা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি রেস্টুরেন্টের। এখানেই তো সেদিন অয়নকে দেখেছে। নিজের বন্ধুবান্ধব নিয়ে এই রেস্টুরেন্টেই ঢুকেছিল শাবিহা। সৌভিকের পিছু পিছু ঢুকলো। ভেতরে কোনো লোকজন নেই।কালারফুল লাইটস জ্বলছে! ফুলের সাহায্য সাজানো চারপাশ। যেমন কেউ পুরোটা বুক করেছে। শাবিহা পুরোপুরি ভেতরে যেতেই অয়নকে দেখতে পেল। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে জাদুকরী হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। চিরচেনা সেই আদুরে চোখে তাকিয়ে। অয়ন সামনের বেলুন ফুটিয়ে উসখুস কন্ঠে বলল,
 ' শুভ জন্মদিন।'

শাবিহার নাক ফুসছে। চোখের ভেতরের কোণ লালচে হয়ে এসেছে। সে যথাসম্ভব নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। শাবিহাকে এভাবে দেখে, অয়ন দ্রুত পায়ে জিহ্বা কামড়ে এগিয়ে আসলো। 'রেগে আছ? সরি! আল্লাহ! দেখি... কান্না করছ?'

শাবিহার মুখশ্রী দু'হাতে ছুয়ে দিল। তাকে টেনে নিজের বাহুতে নিল। সমানে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 'আমি ব্যস্ত ছিলাম। সেলফোন চেইক করার সময়টুকু পায়নি।টেনশনে ছিলে বুঝি?'

সৌভিকের চোখজোড়া কপালে উঠে গেল। এই বান্দর পোলা শাবিহাকে পটিয়ে ফেলেছে? তাদের এলাকার সুন্দরী সিনিয়র আপুকে পটিয়ে ফেললো? সৌভিকের ইচ্ছে করছে, অয়নের পা ধরে বসে থাকতে! মাম্মা কি চিজ তুই!
_______________
'তোর গলার স্বর এতো মধুর শোনাচ্ছে কেন?'
'আমার গলায় মধু ঢুকেছে তাই!'

কথাটি বলে অরু স্তব্ধ হয়ে গেল। নিজের কথায় নিজেই কিংকর্তব্যবিমুঢ়। সঙ্গে শরীর শিরশির করে উঠলো। ভেতরে ঠান্ডা শ্রোত বয়ে গেল। কেন, সেটা ভাবতেও অরুর লজ্জা করছে। কথা ঘোরাতে বলল, 'না মানে মন ভালো।'
'ভালো মনের রহস্য নিশ্চয়ই তন্ময় ভাই।'

মেয়েটা বড্ড সেয়ানা। সব বুঝে ফেলে। অরু অজানা ভঙ্গিতে মিনমিন সুরে বলল, 'কি জানি কী বলছিস!'
'অ্যাহ। আদিখ্যেতা যত্তসব। সব জানি!কি পাকিয়েছিস চুপচাপ এসে বলবি।নাহলে... '
'রাখ, রাখ। আমার কাজ আছে।'
'সময় মতো চলে আসিস কাল সক্কাল সক্কাল।'
'আসব না। যা ভাগ!'

কল কেটে অরু মুচকি হাসলো। তার আকাশের প্রজাপতি রঙিন আলোয় জ্বলজ্বল করছে। মনের গহীনে উড়ছে প্রাণবন্ত ভাবে। সেই কি অমায়িক শান্তি। শান্তিতে অরুর নাচতে ইচ্ছে করছে। উড়তে ইচ্ছে করছে। দুলতে ইচ্ছে করছে। আর তন্ময়কে জ্বালাতন করতে ইচ্ছে করছে। দুদিন ধরে তার মনে হচ্ছে, তন্ময়ের মতো আদুরে পুরুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই। উপর দিয়ে গম্ভীর, রাগী মুখশ্রী নিয়ে থাকলেও ভেতরে সে নরম তুলতুলে। হাওয়াই মিঠাই একদম! অরুর ইচ্ছে করছে গপগপ করে খেয়ে ফেলতে। যখন সে একটু বাজিয়ে দেখে লোকটাকে, মুখের দিক তাকানো দায় হয়ে যায়। 

মেসেঞ্জারে অরুদের একটা কাজিন গ্রুপ খোলা আছে। সেখানে যুক্ত রয়েছে, রুবি, আকাশ, শাবিহা, তন্ময় অরু, ইব্রাহিম এবং অয়ন। ইব্রাহিম গত পরশু অ্যাড হয়েছে। অ্যাড করেছে আকাশ! আর অয়নকে আজই অ্যাড করা হয়েছে। রাতে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে অরু গ্রুপে একটি মিমি শেয়ার করলো। সঙ্গে সঙ্গে সিন করে রিয়েক্ট করেছে ইব্রাহিম এবং আকাশ! কিছুক্ষণ পর তন্ময়কে সিন করতে দেখা গেল। সময় নিয়ে অরু একটি মেসেজ পাঠাল, 'একটি ছেলে প্রপোজ করেছে। দেখতে সুন্দর। এক্সেপ্ট করবো?'

সবাই 'হা হা' রিয়েক্ট করেছে। তন্ময় শুধু সিন করেছে। তাকে বেশ কিছুক্ষন টাইপিং করতে দেখা গেল। তবে শেষপর্যন্ত কোনো মেসেজ এলো না। ইব্রাহিম এবং আকাশ রিপ্লাই করেছে। ইব্রাহিমের রিপ্লাই, 'এক্সেপ্ট করে ফেল।'
আকাশের রিপ্লাই, 'কোন গাঞ্জাখর?'

অরু রিপ্লাই করবে তার পূর্বেই দরজায় করাঘাতের শব্দ। হঠাৎ দরজা পেটানোর শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। বুকে হাত ডান হাত চেপে ধরলো। ভয় পেয়েছে! এতো দ্রুত চলে এলো? সেলফোন বালিশে লুকিয়ে অরু উঠে দাঁড়ালো। ঠোঁটের হাসি যথাযথ সম্ভব লুকিয়ে দরজা খুলতে অগ্রসর হলো। দরজা খুলতেই সামনে তন্ময়ের গম্ভীরমুখ। সে টিশার্ট-টাউজার পরে দাঁড়িয়ে। গম্ভীর স্বরে শুধালো,
'ছেলেটা কে?'
'কোন ছেলেটা?'
'ইয়ার্কি করছিস?'
'বড়ো ভাইয়ার সাথে কি কেউ ইয়ার্কি করে!'
'থাপ্পড় দিয়ে তোর সব-কয়টা দাঁত ফেলে দিব। বেয়াদব!'

অরু গাল পেতে দিল, 'এইযে দেন..তবে সবগুলো দাঁত কি সত্যিই পড়ে যাবে?'

তন্ময় ভাষা খুঁজে পেল না যেন কথা বাড়ানোর মতো। চরম বিরক্ত সুরে বলল,'এসব আর শুনলে তোর পা ভেঙে ফেলবো!'
'কেন?'
'তর্ক করছিস?চাচ্চুকে বিচার দিব?'
'আমিও দিব আপনার নামে।'

বলেই অরু অস্পষ্ট স্বরে ভেঙাল, 'তন্ময় ডাক।'

তন্ময়ের চাহনি হতভম্ব এবং বিমুঢ়! অরুকে কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে দেখল। পরপর হনহনিয়ে চলে গেল। অরু মাথাটা বের করে দেখে নিল। চোখের সামনে থেকে যেতেই শব্দ করে হাসলো। দরজা লাগিয়ে মনপ্রাণ জুড়িয়ে হেসেছে। হেসে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মেজাজ ফুরফুরে করার নতুন ঔষধ পেয়েছে। সেটি হলো তন্ময়কে জব্দ করা। কি'যে সুখ অনুভব করছে সে, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

রাতে অরু বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে। ভীষণ ভালো ঘুম হয়েছে। ঘুম থেকে উঠেছেও দ্রুত। চোখমুখে তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি ছেপে। দরজা খুলে উঁকি মারল। তন্ময়ের দরজা আটকানো। দরজার সঙ্গে কানের স্পর্শ ঘটালো। শুনতে চেষ্টা করলো, জনাব উঠেছে কি-না। টুকটাক শব্দ শুনতে পেল। উঠেছে তাহলে। অরু ফিরে এলো নিজের রুমে। ওয়াশরুম ছুটলো। বেরিয়ে সম্পুর্ন কালো রঙের চুরিদারি পরেছে। ওড়না গলায় ঝুলিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখল। চুল আঁচড়াতে গিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে নিল। তার এই রহস্যময় হাসার কারণ অজানা। কিন্তু এখন সে চুল নিয়ে দোটানায় পড়লো। চুলে বিনুনি গাঁথবে নাকি ঝুটি? ভেবেচিন্তে দুটো বিনুনি গেঁথে নিল। পরপর শুনতে পেল পাশের রুমের দরজা খোলার শব্দ। অরু তৎক্ষণাৎ হেলেদুলে বেরিয়ে পড়ল। তন্ময়ের সামনে যেতে নিয়ে, গুনগুন করে সুর তুললো। গানের বিশেষ লাইন গুলো গাইতে গাইতে অগ্রসর হচ্ছে, 

     'একখান পান চাইলাম পান দিলা না, 
                      তোমার সনে কিসের পিরিতি? '

স্তব্দ তন্ময়কে রেখে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাচ্ছে। তন্ময়কে বেশ সময় নিয়ে নামতে দেখা গেল। অরু তখন ছুটোছুটি করছে ডাইনিং রুম জুড়ে। নুপুরের রিনঝিন শব্দ চারপাশ হতে প্রতিধ্বনি তুলছে। মুফতি বেগম হেসে বললেন, 'মাশাল্লাহ। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। তা এতো সকাল সকাল সেজেগুজে তৈরি হয়েছিস যে?'

অরু পা দুলিয়ে চেয়ার টেনে বসেছে দীপ্তর পাশে। হেসে জবাব দিলো, 'মারজির বাসায় যাবো চাচী। আন্টি আমাকে ইনভাইটেশন দিয়েছে।সারাদিন সেখানে থাকতে। সন্ধ্যায় ফিরবো!'

আনোয়ার সাহেব বললেন,'সারাদিন থাকতে হবে কেন?'
'বাবা গল্প করবো! বাড়িতে বসে থেকেই বা কি করবো?'
'আচ্ছা ঠিকাছে।'

খেয়েদেয়ে অরু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সাইকেল বের করতে নিয়ে দেখল তন্ময়ের গাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে। গাড়িটা যেন দেখেনি এমন ভাবে সাইকেলে চড়ে বসলো। তন্ময় গাড়ির কাঁচ নামাল। বিরক্ত সুরে বলল,'উঠে আয়।'

অরু নড়ল না। একইভাবে বসে। যেন তন্ময়ের ডাক সে শোনেনি। তন্ময় শাসানো সুরে ডাকল, 'অরু!'
'জি, তন্ময় ভাইয়া!'

দুদিন ধরে তন্ময় বিরক্তের চরম পর্যায়ে। সে এতটাই বিরক্ত যে, যেকোনো কিছু নির্দ্ধিধায় খেয়ে ফেলবে। ঘনঘন কিছু নিশ্বাস নিয়ে পুনরায় বলল,'উঠে আয়।' 

অরু সাইকেল যেখানে ছিলো সেখানে রেখে গাড়িতে উঠে বসল। সিটবেল্ট বেঁধে পা দোলালো। মনযোগ সহকারে বাইরে তাকিয়ে। বা'হাতের অনামিকা আঙুলের আংটি ঘোরাচ্ছে। গুনগুন সুরে গান গাইছে। নিস্তব্ধ গাড়ির মধ্যে সে গুনগুন করলেও স্পষ্ট শোনাচ্ছে গানটি। মধুর স্বরে গানের একেকটি লাইন এতটাই মনোমুগ্ধকর শোনালো, যে স্ট্রিংয়ে রাখা তন্ময়ের হাত নড়ে উঠলো দৃশ্যমান রূপে। 

           'শুনতেহে যাব পেয়ার হো ত, 
        দিয়ে জ্বাল উঠতে হে
    তান ম্যা মান ম্যা, ওর নানান ম্যা  
 দিয়ে জ্বাল উঠতে হে।'

ঠোঁট কামড়ে অরু চুপসে গেল। গান গেয়ে আরেকটু বিরক্ত করতে চাচ্ছিল তন্ময়কে, তবে ভেবেচিন্তে করলো না৷ যদি লোকটা ফেটে উঠে? রেগে আবার তাকে চড় সত্যি না মেরে বসে! পেটে কথার ফুলঝুরি দমিয়ে আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাল। মুহুর্তেই চোখে চোখ পড়লো। তন্ময় তখন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। অরুর ছোট হৃদয় খানা কেঁপে উঠলো। 
_____________
মারজি সদরদরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অরুকে দেখতেই তাকে নিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। তাদের সামনে পড়েছে রোকেয়া বেগম। মারজির মা! তিনি অরুকে বেশকিছু প্রশ্ন করলেন পরিবার নিয়ে। কেমন আছে সবাই! অরু জবাব দিবে তার পূর্বে মারজি অধৈর্য ভঙ্গিতে অরুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। অরু বিছানায় বেসামাল হয়ে বসলো। মারজি প্রশ্ন করলো, 'কোন ছেলে প্রপোজ করেছে তোকে?'

চমকে তাকাল অরু। 'মানে?'
'মানে টানে আবার কি? তাড়াতাড়ি বল কোন ছেলে!'
'কিসব বকছিস!'
'তন্ময় ভাইয়া কল দিয়ে আমাকে বলেছে, ছেলেটার পরিচয় দিতে। যেই ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে।মনে হয় ধোলাই দিবে।'

অরু কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। কাহিনি বুঝতে তার খানিক সময় লাগলো। বুঝতে পেরে, হো হো শব্দে হাসতে শুরু করেছে। হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার পাশে মারজি ও শুয়ে পড়ল। দুজনের চাহনি চলন্ত ফ্যানে রয়েছে। অরু এতদিনে ঘটে যাওয়া সম্পুর্ন ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে মারজি লাফিয়ে উঠে বসলো। বলল,
'তুই কি বোকা? হতেই পারে তন্ময় ভাইয়া জানেনা। কলি না ফলির মা বলেছে দেখেই বিয়ে হবে? সুমনার পরিবার চাইছে তন্ময় ভাইয়ার সাথে সুমনার বিয়ে দিতে, তারমানে কি বিয়ে হচ্ছে? গাঁধি ছেমরি! তোর কি মনে হয়, এতবড় কথা সত্যি হলে কি তোর চাচ্চু তোদের সাথে শেয়ার করবে না?' 

অরু বিষন্ন সুরে বলল, 'তখন এতকিছু মাথায় আসেনি। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।'
'ঢং! এমন আজাইরা কষ্ট ডেকে এনেছিস কেন!'
'আমি ডেকে এনেছি?'
'তো? তুই ডিরেক্ট ভাইয়াকে প্রশ্ন করতি! সব খোলাসা হয়ে যেতো।'
'সাহস পাইনি।'
'তুই সাহস পাসনি? তুই না পেলে পাবে কে! তোর ভেতর ভয় আছে বুঝি?'
'আমি তাকে ভয় পাই।'
'কি ভয় পাস তার নমুনা তো শুনলাম।'
'রাগের মাথায় ভয় একটু কম পাই।'

মারজি হাসতে লাগলো। 'রাগ কমেছে?'
'হু।'
'তারমানে এখন আবার ভয় পাস?'
'হু।'
'কতটুকু?'
'উফ মারজি।'

অরু বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। মারজি হাসছে। হাসি থামিয়ে খুব উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
'তন্ময় ভাই ও তোকে ভালোবাসে। আমার মন বলছে।'

অরু মুখ লুকিয়ে আনমনে হাসলো। সে তো মারজিকে সেই রাতের কথা বলেনি! সেগুলো শুনলে মারজির রিয়েকশন কেমন হতো?
.
.
.
চলবে.............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন