প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ২৯ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


ডিসেম্বরের শুরু। এসময় হাড়কাঁপানো শীত নেমে থাকে। ছাঁদে পা ফেলা দায় হয়ে যায়। প্রকৃতি'তে কুয়াশায় ধকধকানো ধোঁয়া উড়ে বেড়ায়। বাইরে নজর বুলিয়ে এক মিটার দূরের জিনিস দেখতে পাওয়াও কষ্টসাধ্যের বিষয়। সেখানে ছাঁদে বসে থাকার কথা চিন্তা করাটাও মর্মান্তিক প্রায়। অথচ অরু দিব্বি ছাঁদের দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে বসে। একমনে চেয়ে আছে দূর আসমানে। আঁধার রাতে চাঁদের চারিপাশের নক্ষত্রগুলো জ্বলজ্বল করছে। দেখাচ্ছে, এক সৌন্দর্যের প্রতীক'কে পাহারা দেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে, পাহারাদার গুলো নক্ষত্র আর সৌন্দর্যের প্রতীক চাঁদ। এক অপরুপ চিত্র এ'যেন। দূর আসমানের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অগ্রাহ্য করলো বুকের চিনচিন ব্যথা। দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে এলোমেলো করে দিয়েছে নিকষকালো চুলগুলো। সঙ্গে শরীরের পশম গুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অনায়েসে। ওড়নার শেষের অংশটুকু স্বাধীনভাবে উড়ছে। 

ঠান্ডা হয়ে এসেছে অরুর শরীর। শীতল অনুভব করছে ভেতর বাহির সবখানে। তবে দোলনা থেকে উঠতে পারছেনা। পায়ের ধাপ ফেলে নিচে যে নামবে, তার শক্তি অবশিষ্ট নেই। শীতল তৃষ্ণায় ক্লান্তিতে ধুঁকছে শরীর। কোনো একটি বিষয় মনে দাগ কেটে দিলে, সেটি অগ্রাহ্য করা বেশ কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় অরুর জন্য। কিছুতেই পারেনা ভুলতে। এটা একটা বাজে স্বভাব বলা যায়। তিলেতিলে শেষ করে দেয় তার হৃদয়। খুব ক্ষীণ মনের অধিকারী সে। একটু কটূক্তি তাকে বিষন্ন করে তুলতে পারে। তছনছ করে দিতে পারে তার হাস্যজ্বল পৃথিবী। 

নিঃস্তব্ধতার মধ্যে দূর হতে ঘনঘন পায়ের শব্দ ভেসে আসছে। অরু মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারছে। শুনেও ঘুরে তাকাল না। দৃষ্টি তখনো আসমানে নিবদ্ধকৃত। পায়ের শব্দ এসে থেমেছে খুব নিকটে। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়েছে। তবুও আর কোনো প্রতিক্রিয়া শুনতে পারছেনা। না শুনতে পারছে কোনো সাড়াশব্দ বা ডাক। কৌতুহল বসত অরু অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে ঘুরে তাকাল। তন্ময় দাঁড়িয়ে! আঁধার রাতের চাঁদের আলোয় তার বিরক্তিকর মুখশ্রী দৃশ্যমান। ভুরু দু'য়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ। অরু পুনরায় মাথা ঘুরিয়ে বসে রইলো। আঁড়চোখে আরও দুবার তাকাল। একইভাবে দাঁড়িয়ে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!খেয়ে ফেলবে নাকি! মিনমিন কন্ঠ অরুর, 'কি সমস্যা!'

তন্ময়ের জবাব এলো না। তবে এবার সে অরুর সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। পেশিবহুল হাতের সাহায্যে একটানে দোলনা থেকে উঠিয়েছে অরুকে। অপ্রস্তুত অরু থুবড়ে পড়েছে তন্ময়ের বুকে। চিরচেনা সেই সুগন্ধি ঘ্রাণ ভেসে এসেছে নাকে। তন্ময়ের স্বাস্থ্যসম্মত শরীর গরম। উষ্ণ অনুভব করছে। সেই উষ্ণ অনুভবের নেশায় স্বেচ্ছায় পড়ে রইলো তন্ময়ের বাহুতে। উদ্বিগ্নতার সহিত মিশে গেল পুরোপুরি। ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজেই দুরু কেঁপে উঠলো। শিহরণ বয়ে গেল সম্পুর্ন শরীর জুড়ে। উপলব্ধি করতে পেল তন্ময়ের উঠানামা করা বুকের গতি। ধকধকানো শব্দ ও যেন শুনতে পারছে ভেতর হতে। 
দমকা বেসামাল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে দিতেই, থরথর করে কেঁপে উঠছে তার শরীর। 

তন্ময়ের ভুরু জোড়া এবার মাত্রাতিরিক্ত কুঁচকে গিয়েছে। তার পাতলা ঠোঁট জোড়া কাঁপছে ধমক দেবার জন্য। গলায় ধমক আটকে রেখে, সাবলীল ভঙ্গিতে শরীর থেকে নিজের জ্যাকেট খুলে ফেললো। পরপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে অরুর গায়ে পরিয়ে দিলো৷ জ্যাকেটে লেপ্টে থেকেও অরুর কাঁপুনি কমছে না। তন্ময় টেনে নিতে চাইলে, অরু যাচ্ছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে একইভাবে। তন্ময় থেকে ঘুরে দাঁড়াল। অভিমানে তার কন্ঠে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, 'আমি যাবো না।'
'কেন!'
'আপনার কি!আপনাকে তো ধরে রাখিনি। যান!'
'মাইর খেতে ইচ্ছে করছে?'
'না! আপনি ভাগেন।'
'অরু!'

অরু ঘুরে তাকাল। তার চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে। হিসফিস করছে মুখশ্রী। তন্ময়ের রাগী চেহারায় মুহুর্তে পরিবর্তন দেখাল। অদৃশ্যমান ভাবে নরম হয়ে এলো। এগিয়ে যেতে নিয়ে, মোলায়েম সুরে জিজ্ঞেস করলো,'কি হয়েছে?'
'আপনি.. '
'হু আমি?'

অরু এতো চেষ্টা করেও বাক্যটি মুখ দিয়ে বের করতে পারছেনা। পুনরায় মুখ খুলল। পারছেনা! তন্ময়কে খুব ধৈর্যবান দেখাল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।অরু অস্পষ্ট স্বরে শুধালো,'আপনি কি.. ওই কলি আপুকে পছন্দ করেন?'

তন্ময় তাজ্জব বনে গেল যেন। বিরক্তির রেশ ধরে বলল, 'তোর কি মনে হয়?'
'আপনি বলেন!'
'তুই এসব অদ্ভুত চিন্তাভাবনা মাথায় আনিস কিভাবে?'
'আমি এনেছি? ওই কলি আপু বলেছে সামনেই আপনাদের দুজনের বিয়ে! তার মা... মানে আপনার মামী ও বলেছে একই কথা। সিলেট থাকতেই! আপনি সবকিছুর দোষ শুধু আমাকে দেন! কেন! আপনি একটা বিয়ে করেন নাহলে দশটা। আমার কি!'

কোনো জবাব এলো না। না শোনা গেল পায়ের শব্দ। অভিমানী অরু আঁড়চোখে চোখ তুলে তাকালো। তন্ময় কপালে সূক্ষ্ণ ভাজ নিয়ে তাকিয়ে আছে। দৃঢ় তার চাহনি। রাগের মাথায় বকবক করেছে এতক্ষণ। হুশে ফিরে ছোট ঢোক গিলল অরু। গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। ঠোঁট জোড়া জিব 
দ্বারা ভিজিয়ে নিল। দ্রুত পায়ে সামনে অগ্রসর হলো। এখন সে কেটে পড়বে! তন্ময়ের মুখমণ্ডল দেখে সে বুঝে গিয়েছে, এ'বিষয়ে তার মাসুম তন্ময় ভাই কিছুই জানে না। না জানুক, তবুও দোষ এই মাসুম তন্ময়ের। 

তন্ময়কে রেখে অরু যেতে পা বাড়ালো। পাশ কেটে যেতে নিলে তন্ময় হাত চেপে ধরে। টেনে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, 'তুই কি সিলেট থেকে রাতারাতি এই কথা শুনে চলে এসেছিলি?'

অরু থমকাল। পিটপিট করছে আঁখিদুটি। কোন কথা কোথায় নিয়ে গিয়েছে। তন্ময়ের বিজনেস ম্যান না হয়ে, অ্যাডভোকেট হওয়া উচিৎ ছিল। অরু মিনমিন সুরে বলল,'ছাড়ুন।'

তন্ময় তার হাত পিঠের পেছনে পেঁচিয়ে ধরেছে,'উত্তর দিতে বলেছি!'

ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েছে অরু। ধমক শুনে কেঁপে উঠেছে খানিক। নাক ফুসছে তার। কম্পিত গলায় বলল,'চড় মারবেন আমাকে?এবার আমি সত্যি সত্যি চাচ্চুকে বিচার দিব আপনার নামে!'

পরপর ঘাড়ে স্পর্শ অনুভব করলো। লম্বা চুলে টান খেল। তন্ময় বা'হাতে পেঁচিয়ে নিয়েছে চুলগুলো,'জবাব দে।'

ভয়ে রীতিমতো জড়সড় হয়ে গিয়েছে অরু। তন্ময়ের ওই দানবীয় হাতের চড় ভীষণ রকমের ব্যথিত এবং লজ্জাজনক। পরমুহূর্তেই আবারো চুলে টান খেল। ব্যথায় আর্তনাদ করলো,'ব্যথা পাই।'
'উত্তর দে।'
'আপনার কি আমার উপর একটু মায়া হয়না।'
'অরু! রাগাস না আমাকে! '

কথা ঘোরাতে না পেরে, চুপসে গেল অরু। ভয়ে বুক দুরুদুরু কাঁপছে। তন্ময় এতটা ভয়ংকর হবে জানলে সে, কখনোই এই বিষয় তুলত না। চুপচাপ মুখ বন্ধ করে রাখতো। নিজের দোষে ফেঁসে বোকা বনে গিয়েছে একপ্রকার। নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে গিয়ে, থেমে গেল হুট করে। দূর থেকে ভেসে আসছে দীপ্তর, 'লাল লাল লাল লাল, লাললালা ওকে!'

দীপ্ত ছাঁদে আসছে নিশ্চয়ই! অরু পুনরায় ছটফট করতে লাগলো। তন্ময় তাকে ছেড়ে দিলো। অরু হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে এমন ভঙ্গিতে শ্বাস ফেলতে নিয়েছিলো, তবে তন্ময়কে শব্দ করে ছাঁদের দরজা লাগাতে দেখে শ্বাস গলায় আটকে গেল। না শ্বাস ফেলতে পারছে আর নাইবা নিতে পারছে। 

তন্ময়কে কাছে আসতে দেখে দোলনার পেছনে চলে গেল। তন্ময় অধৈর্য্য গলায় আদেশ সুরে বলল,'এদিকে আয়।'
'না। একদম না।'
'তোকে ধরতে পারলে কিন্তু খেয়ে ফেলব!'

অরুর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। এ ধরনের বাক্য সে এই প্রথম শুনছে তন্ময়ের মুখে। লজ্জায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সুযোগ পেয়ে মুহুর্তেই তন্ময় তাকে পেছন দিয়ে টেনে ধরল। ছাঁদের রেলিঙে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল, 'আর একবার জিজ্ঞেস করবো। এবার যদি জবাব না দেস, তাহলে তোর খবর আছে!'

এমন অবস্থায় অরু শুধু তন্ময়ের বেসামাল স্পর্শ অনুভব করছে। কম্পন সৃষ্টি করছে ভেতরে। গলা দিয়ে কথা বের হইতে চাইছে না। নজর ঘুরিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,'হ্যাঁ।'
'আমাকে কেন বলিস নি?'
'কেন বলবো!'

তন্ময় পুনরায় অরুর হাত বেঁকিয়ে ধরেছে। এবার কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করেছে। ব্যথায় অরুর আঁখিদুটি ভিজে উঠেছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করে গেল। তন্ময়ের কন্ঠে ক্রোধ স্পষ্ট,'তুই এতবড় কাহিনি ঘটিয়েছিস আমাকে না বলে! আমার থেকে কনফার্ম না হয়ে!'
'ছাড়ুন!'

দরজায় দ্রিমদ্রিম শব্দ করছে। সঙ্গে ভেসে আসছে দীপ্তর বাচ্চামিতে ভর্তি স্বর। অরু ভেজা নয়নে ছাঁদের দরজার দিক তাকিয়ে। ভুলেও তন্ময়ের দিক তাকাচ্ছে না। চোখে চোখ পড়লে সে ভয়ে জ্ঞান হারাবে। যেভাবে তাকিয়ে আছে যেন অরুকে সত্যি খেয়ে ফেলবে। 

পরপর জবেদা বেগমের গলার স্বরও শোনা গেল।
'এই অরু! কি রে এখনো ছাঁদে কি করছিস?'

অরু মৃদু স্বরে বলল,'ছাড়ুন নাহলে আমি চেঁচাব।'
'চেঁচিয়ে দেখ তুই!'
'এক্ষুনি যদি না ছাড়েন, আমি সত্যি চেঁচাব।'
'গো এহেএড!'

অরু দাঁতে দাঁত চেপে রাখল কিছুক্ষণ। কি ভেবেছে অরু চেঁচানোর সাহস পাবেনা? পাবে! আজ সকলের সামনে এই লোককে অপদস্ত করবে সে। অরু নাক ফুসিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, 'বড়ো মা...'

মুহুর্তেই অরুর অল্পসংখ্যক খোলা ঠোঁটে তন্ময় নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিল। আচমকা আক্রমণে অরু থরথর করে কেঁপে রেলিঙে মিশে গেল। চোখজোড়া শক্ত করে বুঝে গিয়েছে। কাঁপতে থাকা শরীরে স্পষ্ট তন্ময়ের বেসামাল স্পর্শ অনুভব করছে। ছটফট করে সরতে চাইলেও পারছেনা। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে তন্ময় তাকে। 

চুপ করানোর ভঙ্গিতে ঠোঁটে ঠোঁট মিলেছে ঠিকই তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। নেশায় হারিয়ে গিয়েছে তন্ময়। অনুভূতির সাগরে ভেসে অরুও ছটফট বন্ধ করে দিয়েছে। শক্ত করে চেপে রেখেছে তন্ময়ের টি-শার্ট।দুজনের নেওয়া ঘনঘন গরম একেকটি নিশ্বাস একত্রে মিলিত হচ্ছে। অরু লজ্জায় কয়েকবার মাথাটা ঘোরানোর চেষ্টা করেছে সফল হয়নি। তন্ময় পুনরায় তাকে নিজের দিক করে নিয়েছে। 

এই অনাকাঙ্ক্ষিত চুমুর ভেজা শব্দেও লজ্জায় হতভম্ব হয়ে পড়েছে অরু। সেদিন রাতে এতটা গাঢ় করে চুমু হয়নি তাদের মধ্যে। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে তন্ময় জ্ঞান হারিয়ে বসেছিল। তাই বলা যায়, এই অনুভূতি তার কাছে নতুন। 
______________
তন্ময় শান্ত হয়েছে খুব সময় নিয়ে। তবে এখনো ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। তার নেওয়া একেকটি শ্বাসপ্রশ্বাস অরুর ঘাড়ে পড়ছে। অরু খনেখনে কেঁপে উঠছে এখনো। মাথা ঘুরিয়ে রেখেছে। চোখের দৃষ্টি নিচে। ভুলবসতও ফিরে তাকাচ্ছে না। তন্ময় ডান হাতে অরুর দু'গাল চেপে ধরেছে। মুখ নিজের দিক ফিরিয়েছে। তার কন্ঠের স্বর আঁধার রাতের থেকেও গভীর, 'মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাই বেঁচে গেলি। তবে এই ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়!কোনো কিছু শুনলে সোজা আমাকে এসে বলবি!আমি জবাব দেব। মনে থাকবে?'

অরু বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দোলালো। আড়ষ্ট চোখে তাকাল। তন্ময় সময় নিয়ে বলল,'তুই ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারী নেই আমার জীবনে!'

অরু স্তব্ধ, বিমুঢ়। হকচকিয়ে গেল সে। পরপর নিজেকে হাওয়ায় ভাসমান অনুভব করলো। অস্পষ্ট স্বরে চিৎকার করে উঠলো। তন্ময় তাকে পাজা-কোলে তুলে নিয়েছে। অরুর ছটফট অগ্রাহ্য করে সামনে অগ্রসর হয়েছে তন্ময়। অরু তখনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে। কানের কাছটায় কেউ ড্রাম বাজিয়ে তন্ময়ের বলা বাক্যটি বারংবার বাজিয়ে চলেছে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে অরু। চোখের কোণ কখন ভিজে উঠেছে অজানা। 

কাঁচ ভাঙার শব্দে ঘোর কেটেছে অরুর। সে সামনে তাকাল।তার ছোট্ট চোখ জোড়া বড় আকার ধারণ করেছে। কলির হাতে কফির মগ ছিল হয়তো। সেটা জমিনে পড়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় মুখোমুখি তিনজন! অরু লজ্জায় হতভম্ব হলেও তন্ময়ের কোনো হেলদোল দেখা গেল না। সিঁড়ি বেয়ে নেমে চলেছে। বাকরুদ্ধ অরু একইভাবে পড়ে রইলো তন্ময়ের বাহুতে। সে এতটাই অবাক হয়েছে যে ছটফট করতে ভুলে গিয়েছে। 

অরুর রুমে ঢুকে তন্ময় তাকে বিছানায় ছুড়ে ফেলেছে। নরম তুলতুলে বিছানায় পড়ে রইলো অরু। ঘুরে তাকাল না। উঠে বসলো অবদি না। শুনতে পেল দরজার শব্দ। তন্ময় চলে গেছে। চোখজোড়া খিঁচিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। বুকে হাত চেপে ধরেছে। সবকিছু একত্রে মগজে ঢুকছে। তবে তন্ময়ের বলা সেই বাক্যটি অরু কিছুতেই ভুলতে পারছেনা। বারংবার হুংকার তুলছে। কাঁপিয়ে তুলছে বুকের ভেতরটা! 
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন