তনয়া আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
__এত ভালোবাসার কারন কী? মতলব কী তোমার?
__অনেক মতলব আছে। কিন্তু পরে বলবো।
__আচ্ছা আমাকে চট্টোগ্রাম নিয়ে পাচার করে দেয়ার মতলব নেই তো?
__আয়াত বুকে হাত দিয়ে বলল, মাঝে মাঝে তোমার কিছু কিছু কথায় আমার হার্টফেল হবার উপক্রম হয়। কপাল ভালো আমাদের বংশে কারো হর্টের সমস্যা নেই। নয়ত কবেই তোমার কথা শুনে স্টক করতাম। যাক তারাতারি খাবার শেষ করো, আমাদের স্পিড বোর্ডে উঠতে হবে।
__অসম্ভব আমি সাতার জানিনা।
__এ্যাঁ সাতার জানার সাথে স্প্রিড বোর্ডে ওঠার কী সম্পর্ক?
__ধরো স্প্রিড বোর্ড মাঝ পদ্মায় ডুবে গেলো তখন কী হবে?
আয়াত তনয়ার মাথায় ছোট্ট একটা চড় মেরে বলল, __সবসময় উল্টা পাল্টা কথা মাথায় ঘোরে। শোন আমি থাকতে তোমায় ভয় পাওয়া লাগবেনা। যতক্ষন আমার নিশ্বাস চলবে ততক্ষন তোমাকে কিছু হতে দিবোনা।
__হাউ ক্যান আই ট্রাস্ট ইউ মি: বস?
আয়াত চোখ বড় বড় করে বলল, মেয়েটা তো আচ্ছামত জ্বালাচ্ছে আজ। তোমাকে আমাকে ট্রাস্ট করতে হবেনা। আল্লাহকে ট্রাস্ট করলেই হবে। পাগলী কোথাকার। চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে।
__আমি তোমাকে খুব বেশী জ্বালাই তাইনা আয়াত? (মন খারাপ করে।)
তনয়ার হাতটা শক্ত করে বলল, এ জন্যই তো আমার তানুপাখিটা আমার জান। চলো।
স্প্রিড বোর্ডে উঠে তনয়া আয়াতের হাতের ভিতর নিজের হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে বসে রইল। আয়াত অন্য হাত দিয়ে তনয়ার আনেকটা হাত ধরে রাখছে। তনয়া আয়াতকে বলছে,
__আয়াত!
__হুমম
__আমরা অফিস ট্রাভেলে যাচ্ছি নাকি লাভ ট্রাভেল করতে?
__দুটোই।
__তাহলে একটা লিপকিস করি তোমাকে!
__চুপ করে ভদ্র মেয়ের মত বসে থাকো। নয়ত টুপ করে মাঝ পদ্মায় ফেলে দিবো।
__তনয়া মুখ বাকিয়ে বলল, তোমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে আমার খুব লস হয়ছে।
__যেমন?
__তুমি নাতো অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মত লিপকিসও করো না দুষ্টমিও করো না । টেস্টলেস নিরামিষ পারসোন।
আয়াত হা হা করে হেসে বলল,
__ও গুলোকে দুষ্টমি না লুচ্চামী বলে। বললাম না তোমায় পেতে চাই কিন্তু পুরো বৈধ ভাবে। নো অবৈধ সম্পর্ক।
__মুখ বাকিয়ে আসছে পবিত্র সাধু বাবা। হুহ।
আমায় মৃদু হেসে তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে তনয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, শোন তনয়া তোমায় যদি সেভাবে কাছে টানার ইচ্ছা থাকতো তবে এতদিনে তোমার নিজের বলে কিছু থাকতো না। কারন তুমি আমায় অন্ধের মত বিশ্বাস করো যেটা আমার একদমই পছন্দ না। এভাবে কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করা ঠিক না। পরে কষ্ট পেতে হয়।
__তাহলে কাকে করবো?
__একমাত্র আল্লাহকে অন্ধেরমত বিশ্বাস করবে আর কাউকে নয়। তাকেই সবটা দিয়ে ভালোবাসবা আর কাউকে নয়।
__মাঝে মাঝে তোমার কথা শুনলে তোমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। এত সুন্দর করে কথা কেন বলো! কী দিবে খেতে?
__বিয়ে করেনি তারপর দেখবো কত খেতে পারো সেটা আমায় হোক বা কিস। (চোখ মেরে।)
তনয়া লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। বোর্ড চলছে, তনয়া মুক্ত আবহায়াটাকে বেশ উপভোগ করছে। ওড়না দিয়ে আগেই মাথা পেচিয়ে নিয়েছিলো নয়ত চুল কাকের বাসা হয়ে যেতো। আয়াত তনয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখছে। বোর্ড থেকে নেমে সোজা ঢাকা বাসে উঠলো। এবার বাসে তনয়া পুরো দুবার বমি করে ক্লান্ত হয়ে পরলো। উত্তরায় ওদের কিছু কাজ ছিলো, সেটা সেরে উত্তরায় আয়াত হোটেল রুম বুক করলো। কারন তনয়া যা ক্লান্ত তাতে আজ জার্নি করাটা ঠিক হবেনা। তাই চট্টোগ্রাম কাল সকালে রওনা দিবে। আয়াত ডাবল বেডের একটা রুম বুক করলো। রুমে ঢুকে তনয়া ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লো। আয়াত তনয়াকে কোলে নিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে বলল, গোসল করে তবে বের হবা, ফ্রেস হলে মাথা ব্যাথা কমে যাবে। আমি ড্রেস দিচ্ছি। অনেক্ষন যাবত গোসল করার পর তনয়ার মাথাটা একটু ঠান্ডা হলো। গোসল সেরে দরজায় দাড়িয়ে আয়াতকে ডাক দিতেই আয়াত অন্য দিকে ঘুরে তনয়ার ড্রেস দিলো। কেন জানি আয়াতের এমন করায় তনয়ার খুব কান্না পাচ্ছে। তনয়া ভাবছে, একটা ছেলের এতটা নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কিভাবে থাকতে পারে। আয়াত চাইলে আমার সাথে যা খুশি করতে পারে। কিন্তু তাও সবসময় আমাকে বুঝায়।
তনয়া চেঞ্জ করে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়াত মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছে। তনয়া দৌড়ে আয়াতের বুকের উপর শুয়ে পরে ফুপিয়ে ফুুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। আয়াত অনেকটা অস্থির হয়ে বলল,
__কী হয়েছে তনয়া? শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে?
তনয়া কান্না করতে করতে বলল,
__প্লিজ আয়াত আর যাই করো কখনো আমায় ছেড়ে যাবার কথা বলোনা। সত্যি বলছি মরে যাবো। তোমাকে ছাড়া এখন নিশ্বাস নিতেও আমার কষ্ট হয়।
__এই পাগলী! কোথায় যাবো? তোমায় ছেড়ে আমি কী বাঁচতে পারবো? কিন্তু কান্না কেন করছো?
__আমার খুব ভয় করে আয়াত। মনে হয় আমি কোথাও হারিয়ে যাবো। আমার তোমায় নিয়ে বোনা শত শত অভিলাষ অবেলার হয়ে অজানায় হারিয়ে যাবে। আমি হারাতে চাইনা আয়াত। অামি তোমার কাছে তোমার বুকে থাকতে চাই। প্লিজ আমায় তোমার বুক থেকে সরিয়ে দিয়োনা। হারাতে দিওনা আমায়।
__আমার অভিলাষী। তুমি হারাতে চাইলেই কী আমি হারাতে দিবো? এভাবে শক্ত করে বুকে করে আগলে রাখবো। তুমি আমার বুকে ছিলে আর সারাজীবন আমার হয়ে আমার বুকেই থাকবে।
৩৭!!
তনয়ার হাতটা ধরে টুপটাপ কয়েকফোটা জল ঝড়িয়ে হাতটাকে বুকে আগলে ধরে রাখলো আয়াত। সেই দিন তনয়ার বলা কথাগুলো বিষের মত কানে বাঁজছে তনয়ার,
বারবার বলছে, আয়াত হারাতে দিওনা আমায়, তোমার বুকেই রেখো।
আয়াত তো তনয়াকে বুকেই রাখতে চায় কিন্তু তনয়া নিজেই অজানায় হারাতে চায়।
যে আয়াত হসপিটালে থাকা মোটেও পছন্দ করতো না। সে আজ ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন তনয়ার কেবিনে ওর বেডের সামনে বসে কাটিয়ে দেয়।
যে কাঁদতে লজ্জা পেতো, ভাবতো ছেলেদের কান্না লজ্জার। সে আজ তনয়ার বেডের সামনে বসে তনয়ার হাত ধরে শুধু চোখের জল ঝড়ায়।
তনয়ার উপর আয়াতের খুব অভিমান হচ্ছে। কী দরকার ছিলো আয়াতকে নিজের ভালোবাসায় পাগল বানানোর? কী দরকার ছিলো নিজের সবটা দিয়ে আয়াতকে ভালোবাসার! তাহলে আজ আয়াতকে এত কষ্ট পেতে হতোনা।
আয়াত নিজে নিজে বলছে, তনয়াকে দোষ দিয়েই বা কী লাভ? আমি নিজেই তনয়াকে বলতাম মানুষকে বেশি ভালোবাসতে নেই অথচ নিজেই তনয়াকে পাগলের মত ভালোবেসে ফেলছি। তনয়ার হাতটা ধরে হাজারো চুমো খেলো আয়াত।
আজ তনয়া চেতনায় থাকলে অভিমান করে বলতো, তুমি শুধু আমার হাতে এত চুমো কেন খাও। আমার গাল ঠোঁট কী সুন্দর না? আয়াত মৃদু হেসে তনয়ার সকল অভিমান ভেঙে দিতো। কিন্তু আজ তনয়া অভিমান করার মত অবস্থায় নেই। সেদিন রাতের ছোট্ট অভিমান আজ পর্যন্ত ভাঙাতে পারেনি আয়াত। আয়াত তনয়ার পাশে চেপে শুয়ে বললো,
__ওঠোনা তনয়া প্লিজ। সেদিন রাতের জন্য স্যরি। আর ওমন করবো না। তোমায় আর কষ্ট দিবো না। প্লিজ কথা বলো তনয়া। আজ প্রায় এক মাস যাবত তুমি এমন হসপিটালে শুয়ে আছো। আমার আর ভালো লাগছেনা। আচ্ছা তনয়া তুমি না বলতে আমার বুকে মাথা না রাখলে তোমার শান্তি লাগেনা, তবে আজ এক মাস ধরে হসপিটালের এই ধবধবে সাদা বালিশটায় কী করে শুয়ে আছো। তুমিই তো বলতে ঘুমাতে গেলে, আমার হৃদস্পন্দন তোমার শোনা লাগে তবে আজ কেন তুমি আমার হৃদয়ের আওয়াজ না শুনে এত দিন এত শান্তিতে ঘুমাচ্ছো? এই তনয়া, তানুপাখি লক্ষ্মীটি ওঠো না। তুমি তো আমার কান্না দেখতে পছন্দ করতে না আর আজ একমাস যাবত এত কাঁদছি তুমি কী বুঝতে পারছোনা। বুঝতে পারছোনা তোমার আয়াতটা তোমাকে ছাড়া কত কষ্ট পাচ্ছে।
তনয়া একবার উঠো? তোমায় খুব আদর করবো। খুব ভালোবাসবো। ঠিক যেভাবে তুমি চাইতে তবুও এভাবে আর চুপ থেকোনা। প্লিজ তনয়া। আয়াতের আকুতি ভরা কান্না শুনে তনয়ার চোখের কোন বেয়ে টুপ করে জল পড়ছে।
তনয়া হয়ত উঠতে চাইছে। ওর আয়াতের চোখের জল মুছে দিতে চাইছে কিন্তু সেটা পারছেনা। ডাক্তার যে, বলছে তনয়া সবার কথা শুনবে বুঝবে কিন্তু নিজে উত্তর দিতে পারবেনা। এভাবে কতদিন যাবে তার কোন নিশ্চয়তা ডাক্তার দেয়নি। তনয়া পিঠের ঘা মোটামুটি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু মাথার আঘাতের কারনে টেম্পরারি কোমায় চলে গেছে। আয়াত তনয়ার পেটে নিজের মাথা রেখে ভাবছে সেদিন ঢাকা হোটেলে বসে আয়াতের বুকে শুয়ে তনয়া কান্না করার পর রাতে কী কান্ডটাইনা করেছিলো।
৩৮!!
রাতের খাবার খাওয়ার পর আয়াত তনয়াকে পাশের বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সারাদিনের জার্নি আর ক্লান্তিতে বিছানায় শুতেই আয়াত ঘুম দেশে পারি জমালো। বেশ কিছুক্ষন পর বুকের উপর চাপ অনুভব করতেই চোখ মেলে দেখে তনয়া ওর বুকের উপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আয়াত মৃতু হেসে ধীরে ধীরে তনয়াকে বুক থেকে বিছানায় রেখে তনয়ার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আবার কিছুক্ষন পর বুকে চাপ অনুভব করতে দেখে তনয়া আবার ওর বুকে আয়াত বুঝলো তনয়া জেগে আছে।
তনয়া মাথায় চুমো খেয়ে বলল,
__আজ কী ঘুমোতে দিবা না?
__কে নিষেধ করছে ঘুমতে!
__এভাবে আমার এত কাছে আসলে আমার যে, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
__আমি অতসব বুঝিনা। আজ তোমার বুকেই মাথা রেখে ঘুমাবো। তাতে তুমি শত না করলেও।
__এত জ্বালাও কেন?
__ও তার মানে তোমার বুকে আমার কোন অধিকার নেই। ওকে আর জ্বালাবোনা বলে রাগ করে উঠতে নিলে আয়াত তনয়াকে বুকে সাথে জড়িয়ে ধরে বললো, এখানে শুধু তোমার অধিকার। সো নিজের জায়গায় তুমি নিজে শুয়েছো আমি না করার কে? তবে আমি তো ছেলে! বুঝতেই পারছো।
__তনয়া মৃদু হেসে বলল, ভয় নেই তোমাকে রেপ করবো না।
__আয়াত হা হা করে কসে তনয়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালবেলা ট্রেনে চট্টোগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ওরা।
—————
ট্রেনে বসেও তনয়ার দুরন্তপানার শেষ নেই। আয়াত তনয়াকে কতক্ষন পর পর ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখছে। কিন্তু তনয়া তো তনয়াই বাচ্চাদের মত কিছুক্ষন পর ভুলে গিয়ে আবার কথার ঝুড়ি আর দুষ্টমির খুলে বসে। কোল্ডড্রিংস খেয়ে খালি ক্যানটা নিয়ে তনয়া জানালার পাসে বসে ছিলো, আয়াত বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
__খবরদার তনয়া এমনটা করবে না।
আয়াতের বলতে দেরী কিন্তু তনয়ার করতে দেরী হয়নি। তনয়া হাতের খালি ক্যানটা চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে এক পথিকের গায়ে মারলো। লোকটার গায়ে ক্যানটা পড়তেই তনয়া জানালা দিয়ে মাথা ভিতরে ঢুকে নিয়ে গেলো। আয়াত চোখ বড় বড় রাগী লুকে করে তনয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তনয়া আয়াতের কাছে গিয়ে আয়াতের গালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আয়াতের রাগটা সাথে সাথে পানি হয়ে গেলো। মৃদু হেসে তনয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভাগ্যিস কেবিন বুক করেছিলাম নয়ত তোমার পাগলামী দেখে ট্রেনের লোক হা হয়ে থাকতো।
__তাতে কী হবে?
__অনেক কিছু হবে। আমার তানুপাখির পাগলামী আমি ছাড়া কেউ দেখতে পারবেনা।
__আচ্ছা আয়াত পৌঁছাতে কতক্ষন লাগবে?
__আরো তিন ঘন্টার মত।
__এতক্ষন? আমার ঘুম পাচ্ছে।
__ঠিক আছে ঘুমাও। এখানের সে সিট তাতে আরাম করে ঘুমাতে পারবে।
__ঠিক আছে তুমি আগে বসো।
আয়াত বসতেই তনয়া আয়াতের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আয়াতের পেটে মুখ গুজে রইল। আয়াত তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর ভাবছে জলদি পাগলীটাকে বিয়ে করে নিজের করে নিবো, যাতে কখনো দূরে না যাওয়া লাগে।
চট্টোগ্রাম পৌঁছে হোটেলে গিয়ে আয়াত তনয়াকে বলল,
__এটা তোমার রুম আর পাশেরটা আমার।
__দুটো রুম কেন? একটা নিলেই হতো। শুধু শুধু দুটোর টাকা খরচ হবে।
আয়াত হা হা করে হেসে তনয়ার গালে হাত দিয়ে বলল, যাও ফ্রেস হয়ে নাও তারপর একসাথে অামার রুমে বসে খাবো।
তনয়া মুচকি হেসে ফ্রেস হয়ে হালকা গ্রিন রঙের শাড়ি পরলো। আয়াত রুমে গিয়ে আয়মনকে ফোন দিলো।
__হ্যাঁ আপু কেমন আছেন?
__হ্যাঁ ভালো তোমরা কী এসে গেছো?
__হ্যাঁ। তবে আজ তো মিট করতে পারবো না। আজ সন্ধ্যায় মিটিং আছে। তবে কাল বিকালে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
__অাচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সাথের বাচ্চাটা কী করছে?
__আপনার বাচ্চাটা আমায় জ্বালিয়ে মারছে।
__ভালো যখন বেসেছো জ্বালাতো একটু সহ্য করতেই হবে ভাই।
__জানি আপু। আর আপনার বাচ্চাটা জ্বালায় বলেই তো তাকে এত ভালোবাসি।
তারপর আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে গোসল করতে গেলো।
আয়াত গোসল করে বের হতেই তনয়া দরজায় নক করলো। আয়াত তোয়ালে পরেই দড়জা খুললো। তনয়া হা হয়ে আয়াতের দিকে তাকিয়ে রইল। প্রথমবার আয়াতকে এমন ভেজে শরীরে, আর খালি গায়ে দেখছে তনয়া। লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
__তুমি চেঞ্জ করে নাও আমি পরে আসছি।
আয়াত দুষ্টমি হাসি দিয়ে বলল, ভিতরে আসো। তনয়া মাথা নিচু করে চুপচাপ বিছানায় বসে রইল। আয়াত চেঞ্জ করতে করতে তনয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
__এই লজ্জা নিয়ে নাকি কেউ আবার আমাকে রেপ করবে। হা হা হা।
তনয়া মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে ঘুরে রইল। ড্রেস বদলে আয়াত তনয়ার কাছে এসে বলল,
__এই তুমি সবার সামনে এভাবে শাড়ি পরে যাবেনা।
__কেন?
__অামি চাইনা অন্য কেউ আমার মত তোমাতে আসক্ত হোক।
__হিংসা হচ্ছে বুঝি?
__অবশ্যই। কেউ আমার কলিজার দিকে কু নজড়ে তাকাবে আর আমার হিংসে হবে না। তা কী হয় বলো?
আচ্ছা বাদ দি চলো খেয়ে নিবে। রুমে বসেই খাবার খেয়ে আয়াতের রুমেই দুজন বিশ্রাম নিলো। তনয়ার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। হয়ত থাইরয়েড লেভেল বেড়ে গেছে। লাস্ট কদিন যাবত টেনশন আর গত দুদিন জার্নি তনয়ার মাথার ভিতর খুব ঘুরান্টি দিচ্ছে বারবার। কিন্তু আয়াতকে বললে আয়াত টেনশন করবে তাই বলছেনা।
সন্ধ্যার পর আয়াত তনয়া অফিসিয়াল মিটিং শেষ করার পর খেতে গেলো। আয়াতের জোড় করার পরও তনয়া কিছুই খেলোনা। তনয়ার মাথার ভিতর প্রচন্ত পরিমানে চক্কর দিতেছিলো। রুমে এসেই শুয়ে পড়লো। আয়াতকে কিছু বুঝতে দিলোনা। কিন্তু ঘুম আসছেনা, অসম্ভব রকম অস্বস্তি লাগছে। নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। শেষমেষ বাধ্য আয়াতকে ফোন দিয়ে বলল, আমার রুমে আসবে প্লিজ।
আয়াত ভাবছে হয়ত কোন কাজ আছে। দরজা নক করতেই দরজা খুলে গেলো। তনয়া দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। আয়াত তনয়ার কাছে গিয়ে বলল,
__কী হয়েছে তনয়া? ঠিক আছো তো? এভাবে নিচে বসে আছো কেন?
__তনয়া অাস্তে করে বলল, শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।
আয়াত তনয়াকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বলল, কী হয়েছে বলো আমাকে?
__হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে হাত পা ব্যাথা করছে, মাথা খুব ঘুরাচ্ছে।
আয়াত তনয়ার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে পা একটু ফুলে গেছে। বুঝতে পারলো তনয়া থাইরয়েড লেবেল হয় বেড়ে গেছে নাহয় কমে গেছে। অবশ্য দোষটা আয়াতেরই কারন তনয়ার এত দিনের টেনশনের জন্য দায়ী আয়াত নিজেই তারপর আবার দুদিনের জার্নি। মেয়েটা একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে। আয়াত তনয়াকে বলল,
__রাতের ঔষধ খেয়েছো?
__না ।
__আয়াত রিসিপশনে ফোন দিয়ে খাবার অর্ডার করলো। ফাঁকে গিয়ে নিজের রুমটা লক করে ওর ফোনটা নিয়ে আসলো। তনয়ার ডাক্তারকে ফোন দিলে বলল, সমস্যা নেই অতিরিক্ত টেনশন আর জার্নির ফলে হয়েছে। খেয়ে ঠিকভাবে ঘুম হলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।
আয়াত তনয়াকে জোড় করে সামান্য কিছু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে শুয়ে দিলো। তনয়াকে রুমে এভাবে একা রেখে যেতে পারলোনা। তনয়ার হাত ধরে পাশে বসে ছিলো। তনয়া আয়াতকে জোড় করে নিজের পাশে শুইয়ে দিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে বলল,
__আয়াত আমি যে, বারবার তোমার কাছে আসি তোমায় কাছে টানি তুমি কী আমায় বেহায়া মনে করো?
__ছি তনয়া এগুলো কী বলছো?
__জানো আয়াত কতমাস যাবত আমি একা থাকছি অথচ আমি ছোট বেলা থেকে জয়েন ফ্যামিলিতে মানুষে ভরা ঘরে বড় হয়েছি। জানো বড় হবার পরও কত কত রাত বাবার বুকে তার পেটের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছি তার হিসাব নেই। মা প্রায় রাতে কোলে মাথা রেখে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। বড় দাদাভাই, মেজ দাদাভাই, তানভী সবাই আগলে রাখতো আমায়। ঘরের পুতুলের মত ছিলাম। যাকে সবাই আদর করতে ভালোবাসতো। সেই আমি সামান্য ভুলের কারনে পুরো পরিবার থেকে ছিটকে দূরে চলে গেলাম। বাবার কাছে কতবার মাফ চাইলাম সে মাফ করলোনা। জানো এত মাসে আমি শান্তিতে ঘুমতে পারিনি। একা থাকতে আমার খুব কষ্ট হয় জানো।
কদিন আগে যখন তুমি আমায় বুকে নিয়ে ঘুমালে তখন আমার সত্যি মনে হচ্ছিলো আমি একা না। আমার তুমি আছো। গতকাল রাতে এক রুমে থেকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর লোভটা সামলাতে পারিনি তাই তো মাঝরাতে চুপি চুপি তোমার বুকে মাথা রেখেছিলাম। জানো আয়াত তোমার বুকে মাথা রাখলে খুব শান্তি লাগে। আমার সব একাকিত্ব, চিন্তা, হতাসা, পারিবারিক দ্বন্দ কোথায় যেনো পালিয়ে যায়।মনে হয় সুখের রাজ্যে ভাসছি। তাই তো মেয়ে হয়েও নিজের লজ্জা ভেঙে বেহায়ার মত তোমার কাছে আসি। প্লিজ আমায় খারাপ ভেবো না। আমি যতটা তোমাতে পাগল ততটাই একটু ভালোবাসার পাগল। গত কমাস যাবত কারো ভালোবাসা পাইনি তো। তাই তোমার কাছে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বারবার ছুটে আসি।
আয়াত চুপ করে তনয়ার কথা শুনছে। তনয়া আবার বলছে,
আমার অবস্থা এখন এমন, একটা ফুল সাজানো বাগানে ছিলো হাঠাৎ একটা ঝড়ে ফু্লটা উড়ে বাগান থেকে ছিটকে রাস্তায় গিয়ে পরলো বহু লোক তাকে পিষে নষ্ট করতে চাইল কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সে বেঁচে গেলো, এক ফুল প্রেমী হৃদয়বার ব্যক্তি ফুলটাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নিজের বাড়ির সব চেয়ে দামী ফুলদানীতে জায়গা দিলো। ফুলটা এখন সে ফুলদানী থেকে বের হতে নাড়াজ। সে ফুলদানীটাতে আর সেই ফুলপ্রেমী লোকের সাথে সারা জীবন থাকতে চায়। জানো ফুলটা কে?
__কে?
__ফুলটা হলো তোমার তনয়া। সাজানো বাগানটা হলো তার পরিবার, রাস্তার লোক হলো, রিসাদ আর দীপুর মত লোক। আর ফুলপ্রেমী হৃদয়বান ব্যক্তিটি হলো তুমি আর ফুলদানীটা হলো তোমার হৃদয়। আমি তোমার হৃদয় থেকে কখনো বের হতে চাইনা। প্লিজ বের করে দিওনা।
তনয়ার কথা শুনে আয়াতের খুব খারাপ লাগছিলো। তনয়াকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
__সেই ফুলপ্রেমী লোকটা ফুলটাকে কখনোই ফুলদানী থেকে দূর করবেনা। কারন ফুলদানীটা থেকে ফুলটা দূরে গেলে ফুলদানীটা ভেঙে যাবে আর ফুলপ্রেমী লোকটা মরে যাবে। কারন ফুলপ্রেমী লোকটার হৃদয় ফুলদানীটা ঠিকই কিন্তু ফুলটা সেই ফুলপ্রেমীর হৃদয়ের হৃদস্পন্দন।
তনয়া আয়াতের বুকে বেশ কয়েকটা চুমো খেয়ে বলল, এখানটা এই হৃদয়টা, এই হৃদয়ের মালিকটা শুধু আমার। শুধুই আমার।
__আয়াত তনয়ার মাথায় চুমো খেয়ে বলল, তনয়া বিয়ে করবে আমায়? হবে কী সেই ফুলপ্রেমীর ফুলদানীর মালিক?
তনয়া চোখ পিটপিট করে আয়াতের দিকে তাকালো। এভাবে কেউ বিয়ের প্রপোজ করছে বলে তনয়ার জানা নেই। তনয়া পারলে আয়াকের বুকের ভিতর ঢুকে যায়। তনয়া আয়াতের নাকে নিজের নাকটা ঘষে বলল,
__কবে?
__যতদ্রুত সম্ভব।
তনয়া আর একটা কথাও বললো না, আয়াতকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে শান্তির ঘুম দিলো।
৩৯!!
পরের দিন বিকাল বেলা আয়াত তনয়াকে নিয়ে একটা পার্কে গেলো। তনয়া সেখানে আয়মনকে দেখে দৌড়ে গিয়ে আয়মনকে জড়িয়ে ধরলো।