কতক্ষন যাবত বাইকে নিয়ে জ্যামে আটকে আছে আয়াত। সামনে একটা মালবাহী বড় ট্রাকের চাকা রাস্তার খাদে পরে গেছে। প্রায় পনেরো বিশ মিনিট যাবত সেটা উঠানোর চেষ্টা করছে কজন। রাস্তায় বিশাল জ্যাম পড়ে গেছে। আয়াতের ভিষন বিরক্ত লাগছে।
তখন অনুভব করলো বাইকের পিছনে কেউ বসছে। আয়াত বাইকটা সামলে পিছনে তাকিয়ে দেখে তনয়া ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। আয়াত সামনে তাকিয়ে বলল,
__তুমি এখানে?
__আমিও জ্যামে আটকে গেছি। কতক্ষন যাবত সিএনজি থেকে তোমাকে খেয়াল করছিলাম। কিন্তু স্যার তো আসে পাশে কারো দিকে তাকায়ইনা। বলি চারপাশে তাকিয়ে দেখো, কত কত লাল, নীল, প্রজাপতি।
__ওসব প্রজাপতি দেখার কোন টাইম আমার নেই। কারন আমার কাছে পরী আছে। তাও তামিল নায়িকাদের মত তার ফিগার। উমমমম্মাহ।
তনয়া আয়াতের কোমরে একটা চিমটি কাটতেই আয়াত উহ শব্দ করে বাইকের লুকিং গ্ল্যাসের দিকে তাকালো। এতক্ষন তনয়াকে ঠিক ভাবে দেখেনি। সাদা আর নীল কম্বিনিকেশনের শাড়ি পরছে। হাতে ভর্তি সাদা আর নীল রঙের চুরি। চুলগুলো খোপা করা, কানের দু সাইড থেকে কিছুটা বাইরে বের করা। আর তেমন কোন সাজগোজ নেই। চোখে কাজল, টিপ, লিপস্টিক কিছুই নেই তবুও মেয়েটাকে কি অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে! তনয়া আয়াতের কোমরে আরেকটা চিমটি কাটলো।
__আউচ! বারবার চিমটি কেন কাটছো?
__ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
__নিজের জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকলে দোষের কিছু না।
__কে নিজের জিনিস?
__তুমি।
__কিভাবে?
__কদিন পর বিয়ে করলেই হয়ে যাবে।
__এত কনফিডেন্ট? যদি বিয়ে না হয়?
__চুপ (ধমক দিয়ে)। জোড় করে হলেও তোমাকে বিয়ে করবো। অামি থাকতে তনয়ার নামের পাশের অন্য নাম কি করে বসে তা দেখে নিবো না। আমি ব্যাতীত যে তোমার নামের পাশে নিজের নাম বসাতে চাইবে, তাকে পিটিয়ে আমি আমার শালা বানিয়ে ফেলবো। হুহ।
__কী খারাপ তুমি।
__ইয়েস ম্যাডাম। এবার ঠিক হয়ে বসুন। জ্যাম শেষ হয়েছে।
তারপর আয়াত নিজেই তনয়ার হাতটা ওর হাতের নিচ থেকে এনে বুকে রাখলো। ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে অফিসে গেলো। অফিসে সবাই চলে আসছে। আয়াত মাঝ খানে দাড়িয়ে বলল,
এ্যাটেনশন এভরিওয়ান! আমি কিছু বলতে চাই। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে রইল। আয়াত তনয়ার হাত ধরে, সবার সামনে এনে বলল,
এভরিবডি মিট মাই ওয়াইফ তনয়া। সবাই পুরো হা হয়ে গেলো, সাথে তনয়াও। আয়াত বলল, অবাক হবার কিছু নেই। তনয়ার সাথে আমার রিলেশন অনেকদিনের। ইভেন আমার অফিসে জয়েন করার আগে। এখন আপনারা ভাবছেন এতদিন কেন বলিনি? আসলে এতদিন প্রয়োজন হয়নি তাই বলিনি। তনয়া এখানে কিছুদিন জবও করবে, সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ব্যাপার। খুব শিঘ্রই আনুষ্ঠানিক ভাবেও আমাদের বিয়ে হবে। আপনাদের সবাইকে ইনভাইটও করা হবে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এবার পয়েন্টে আসি,
আমার ওয়াইফ আমার কেবিনে অনুমোতি নিয়ে ঢুকবে নাকি অনুমতি ছাড়া ঢুকবে সেটা আমাদের ব্যাপার। সে আমার সাথে গাড়ি যাবে না আমি তাকে কোলে করে নিয়ে যাবো, নাকি সে আমার সাথে বিছানায় যাবে সেটাও আমাদেরই ব্যাপার। আশাকরি আপনাদের এ বিষয়ে নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। যাদের নাক বেশি লম্বা, যারা আমার স্ত্রীকে নিয়ে এলার্জিযুক্ত কথা বলতে ইচ্ছুক তারা নিজের রেজিগনেশন লেটার আমার টেবিলে রেখে দ্যান তনয়াকে নিয়ে কথা বলবেন। আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আপনাদের সর্দিময় নাক গলাবেন না। খবরদার কেউ যদি আমার ওয়াইফকে বস আর পিএ এর মধ্যে নোংড়া সম্পর্কের উপাধি দিয়েছেন, তবে আমি ঠিক কতটা নোংড়া হতে পারি সে সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাও নেই।
সো মোরাল অব দ্যা কথোপকথন: আওয়ার বিজনেস ইজ আওয়ার বিজনেস ন্যান অফ ইউর বিজনেস। মাইন্ড ইট।
আশাকরি বুঝতে পারছেন। মিটিং শেষ এবার যে যার কাজে লেগে পড়ুন।
তনয়াকে বলল, তনয়া কেবিনে গিয়ে গত কালের ফাইলটা আমাকে দাও। তনয়া হা হয়ে আয়াতের কথা শুনছিলো। আয়াত এতগুলো কথা এভাবে অনায়াসে বলে দিবে সেটা তনয়া কল্পনাও করতে পারেনি। আয়াত কী তবে এই সারপ্রাইজটার কথাই বলছিলো?
তনয়া নিজের কেবিনে যেতেই আয়াত মনি, আর লিজার ডেক্সের সামনে গিয়ে বলল,
__তনয়া মানে আমার স্ত্রী, পিএ হয়ে ওর বসকে বিছানায় স্যাটিফ্যাইড করে নাকি অন্য কিছু করে নাকি আমার ওয়াইফ হবার দায়িত্ব পালন করে, আশাকরি সেটার উত্তর পেয়ে গেছেন আপনারা। এর পর তনয়াকে নিয়ে একটা নোংড়া কথা বললে আমি ঠিক কি করবো তা চিন্তা করতেও পারবেন না। না আপনাদের কথা তনয়া আমায় বলেনি, সেদিন যখন বলছিলেন তখন আমি ঠিক আপনাদের পিছনে ছিলাম। ও তো খুব ভালো, তাই মানুষকে বাঁচাতে ভালোবাসে কিন্তু আমি তো খুব খারাপ। অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিয়েই ছাড়ি সে যেই হোক না কেন। তনয়াকেও শাস্তি দিতে পিছ পা হইনা। তবে তো আপনারা থ্রাড পারসোন। সবসময় অন্যকে বদলানোর চেষ্টা না করে নিজের চিন্তা ধারা বদলান, সমাজ এমনি বদলে যাবে। মাইন্ড ইট।
আয়াত কেবিনে গিয়ে নিজের কাজ শুরু করলো। কিছুক্ষন পর তনয়া দরজায় নক করে বলল,
__ম্যা আই কাম ইন স্যার?
__শিওর ম্যাডাম। আপনাকে না করার সাহস আছে নাকি!
তনয়া আসতেই আয়াত তনয়াকে নিজের চেয়ারটায় বসিয়ে আয়াত তনয়ার সামনে টেবিলে বসলো। এরকম দুষ্টমি আয়াত প্রায়ই করে থাকে। তনয়ার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
__তা ম্যাডাম সারাপ্রাইজ কেমন লাগলো?
__পঁচা।
__কেন?
__বড় মুখ যে, সবার কাছে ওয়াইফ পরিচয় দিলেন! আমি কি আপনার ওয়াইফ?
__হুম।
__কীভাবে? কবুল বলে তো বিয়ে করিনি।
__তিনবার কবুল বললে বুঝি বিয়ে হয়? বিয়ে ততক্ষন হয়না যতক্ষন পর্যন্ত না মন থেকে, একে অপরকে মানতে না পারে। আর আমরা তো দুজকে মন থেকে কবেই মেনেই নিয়েছি। কী বলেন ম্যাডাম!
__হুমম। আয়াত দাড়াও তো!
__কেন?
__তুমি এত প্রশ্ন কেন করো? দাড়াও তো।
আয়াত দাড়াতেই তনয়া আয়াতকে জড়িয়ে ধরে রইল। আয়াত তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। তনয়ার চোখটা বার বার ভিজে যাচ্ছে। এভাবে এতগুলো লোকের মাঝে এত ভরসা দিয়ে ওয়াইফ বলতে সাহস লাগে। যেটা সবাই পারেনা। তনয়া বলল,
__এত সাহস করে, এত বিশ্বাস করে, ভরসা করে যে ওয়াইফ বললে ধরে রাখতে পারবে তো আমায়?
__ধরে না বুক দিয়ে আগলে রাখবো। শক্ত করে বেঁধে রাখবো। আচ্ছা এখনও রাগ করে আছো?
__হ্যাঁ একটু। কারন গত কদিন খুব কষ্ট দিছো তুমি আমায়।
__স্যরি বললাম তো পাখিটা। আচ্ছা সমস্যা নেই সব পুুশয়ে দিবো। কষ্টও দূর করে দিবো। আর একটা কথা ঝগরাটা করে বেশ ভালো হলো।
__যেমন?
__প্রথমত ভালোবাসা খুব গাঢ় হলো। আর দ্বিতীয়ত তুমি আমায় আপনি বলা বাদ দিয়ে তুমি বলছো।
তনয়া এ জিনিসটা একদম খেয়াল করেনি। কখন যে, আপনি থেকে তুমিতে এসে গেছে সেটা মনে পড়ছেনা ওর। তনয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল,
__আমি কখন তো___মানে আপনাকে।
__থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। এখন চলো আমাদের বাবা ওরফে বসের কেবিনে, তার সাথে কথা বলে, লাঞ্চ টাইমে তোমায় বাসায় ড্রপ করে দিবো।
__লাঞ্চ টাইমে কেন?
__আরে ভুলে গেলা, আগামীকাল সকালে না আমাদের চট্টোগ্রাম যেতে হবে। সকাল সাতটার বাসে যাবো। তো সেটার জন্য তোমাকে গোছাতে হবেনা?
__বাস জার্নি । না ভাই না আমি বাসে জার্নি করতে পারবো না। আমার খুব বমি হয়।
__স্যরি তনয়া কিছু করার নেই। আমাদের প্রথমে ঢাকা কিছু কাজ আছে, আর বাসে না গেলে সেটা সম্ভব না। তারপর দরকার হলে সেখান থেকে ট্রেনে গেলাম। কি বলো?
__ওয়াও ট্রেন! আই লাভ ট্রেন জার্নি। তাহলে যাবো।
__ওহ ম্যাডাম আরেকটা কথা। এখন কী রেজিগনেশন লেটারটার প্রয়োজন আছে?
__রেখে দিন। যদি কখনো লাগে।
__কী! ভ্রু কুচকে। আয়াত লেটারটা ছিড়ে ফেলে তনয়ার চোখে চোখ রেখে বলল, খবরদার দূরে যাবার কথা বললে খুন করে ফেলবো।
__তারপর?
__তারপর তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে অর্ধমৃত হয়ে থাকবো।
__ছি, সবসময় খালি, উল্টা পাল্টা কথা। চলো, কাজ শেষ করি।
অফিসের কাজ শেষ করে, আয়াত তনয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের কাজটা সারলো। তারপর আয়মন এর সাথে কথা বলল। সেও বর্তমানে চট্টোগ্রাম থাকে। আয়াত মূলত তনয়াকে আয়মন এর জন্যই চট্টোগ্রাম নিয়ে যাচ্ছে। নয়ত তনয়ার যাওয়া প্রয়োজন ছিলো না। তনয়াকে সারপ্রাইজ দিবে আয়াত।
—————
৩৫!!
সেদিন সন্ধ্যার পর আয়াত মেঘাকে নিয়ে তনয়ার বাসায় আসলো। এসে দেখে তনয়ার মা, তানভির-লাবিবা, আর তামিম তনয়ার সাথে কথা বলছে। আয়াত মনে মনে বলছে,
__মনে হয় ভুল সময়ে এসে পড়লাম। তারপর তাদের সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে চুপচাপ ভদ্র ছেলের মত বসে রইল। আর তাদের সাথে টুকটাক গল্প করছিলো। মেঘা গিয়ে তনয়ার সাথে নাস্তা বানাতে হেল্প করতে লাগলো। আর বলল,
__ভাবি তোমার মা আর ভাইয়ারা আসবে আগে তা তো বলোনি!
__তখন আমিও জানতাম না। হুট করে কতক্ষন আগে আসছে।
__ওহ।
__তুমি কেন ভয় পাচ্ছো মেঘা! ওপস স্যরি ভাবি। তোমার তো খুশি হবার কথা, কারন তোমার হবু শ্বাশুড়ি, জা, দুই ভাসুর সবার সাথে পরিচয় হতে পারবে।
__ভাবি তুমি না। খুব বাজে।
এর মাঝে লাবিবা এসে বলল, তোমাদের দুজনার সম্পর্কের নাম কী?
মেঘা বোকার মত লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
__মানে?
__লাবিবা বলল, মানে তুমি তনয়ার ভাবি নাকি তনয়া তোমার ভাবি। আবার তুমি তনয়ার ননদ নাকি তনয়া তোমার ননদ। কনফিউজিং সম্পর্ক। মেঘা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। তনয়া লাবিবা সেটা দেখে মেঘাকে নিয়ে আরো মজা করছিলো।
তনয়া লাবিবাকে বলল, বড় ভাবি চলো আমাদের হবু ছোট ভাবিকে তার শ্বাশুড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসি। মেঘা দুজনের হাত ধরে বলল,
__প্লিজ এমন করোনা। আমার ভয় করছে।
তনয়া, লাবিবা দুজনে হাসির রোল ফেলে দিলো। ওদের হাসির শব্দ ড্রয়িং রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। লাবিবা তনয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
__তুই এত হাসিস না। দাড়া শুধু মেঘা কেন লজ্জা পাবে! তোকে আর আয়াতকেও লজ্জা দিবো।
__প্লিজ ভাবি এমন করো না।
__মেঘা বলল, ভাবি ঠিক বলছো। তনয়া ভাবি আর আয়াত ভাইয়া কেন বাদ যাবে।
__হ্যাঁ ঠিক বলছিস মেঘা। দেখ আয়াত ভাইজানের অবস্থা কি করি! বেচারা ভদ্র সেজে বসে আছে। ভদ্র সাজাচ্ছি। তনয়া আটকাতে চেয়েও পারলো না। লাবিবা নাস্তার ট্রে নিয়ে সবার সামনে গেলো। তনয়ার মা নয়না সবার হাতে নাস্তা তুলে দিচ্ছে তখন লাবিবা বলল, মা আপনার মেয়ে জামাইকে আগে দিন। আয়াত চোখ বড় বড় করে লাবিবার দিকে তাকালো। তারপর নয়না আর বাকি সবার দিকে। নয়না মিটমিট হাসছে, হাসছে তানভিরও খালি মুখ গোমরা করে আছে তামিম। আসলে তানভী তাদের সবাইকে আয়াত তনয়ার বিষয়ে আগেই বলছে। যেটা আয়াত তনয়া জানেনা। আয়াত লজ্জায় মেয়েদের মত লাল হয়ে যাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। বাকি সবাই মিটমিট করে হাসছে। তামিম রাগে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে আয়াতকে খেয়ে ফেলে।তবে এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র তামিম না।
কিছুক্ষন পর তনয়ার পরিবার চলে যাচ্ছে। সবাই নেমে যেতেই নয়না আয়াতের কাছে এসে বলল,
__আয়াত!
__হ্যাঁ আন্টি!
__আমার মেয়েটার খেয়াল রাখবে তো?
__আয়াত তনয়ার মা নয়নার হাত ধরে বলল, আন্টি ভরসা রাখতে পারেন। আপনাদের ভরসা কখনো নষ্ট করবো না।
নয়না আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। মেঘা ওয়াশরুমে গেলো। মূলত আজ রাতে মেঘা আর আয়াত তনয়ার সাথে থাকবে। কারন কাল সকালে ওরা এখান থেকেই ঢাকার বাসে উঠবে। মেঘা সকালে তনয়ার ফ্ল্যাট বন্ধ করে চাবি নিয়ে যাবে সাথে তনয়ার বিড়াল ইতু, ইতুন আর তুতনকে নিয়ে যাবে।
তনয়া ওদের তিনজনের জন্য রাতের খাবার তৈরী করছিলো। রুটি বানাচ্ছে আয়াত পিছনদিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
__চলোনা তানু পাখি এখনই বিয়ে করে ফেলি!
__কেন?
__এভাবে তোমার এত কাছে থেকেও তোমায় কাছে টানতে পারছিনা। জানো ভালোবাসার মানুষটা কাছে থাকলে তাকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করে, তাকে ভালোবাসতে মন চায়। এগুলোকে যৌনতা বলা চলেনা। ভালোবাসায় শরীর আসবেই। কারন হৃদয়টা কিন্তু শরীরের ভিতরেরই একটা অংশ। আবেশে একে অপরের কাছে আসতে মন চাইবেই। এটাকে শরীরের টান বলে না, ভালোবাসার অন্য অনুভূতি বলে।
__আমি তো তোমায় নিষেধ করিনি আয়াত। তোমার ভালোবাসা তো আমি সবসময় অনুভব করি। তোমায় তো কখনো কিছু করার জন্য নিষেধ করিনা। আই বিলিভ ইউ।
__এটাই তো তোমার প্রবলেম তনয়া। তুমি আমায় এত বিশ্বাস করো যে, নিজের সবটা আমার হাতে তুলে দিতে দু বার ভাবোনা। তনয়া আমাকে এতটা বিশ্বাস করো না। পরে যদি কষ্ট পাও।
তনয়া আয়াতের দিকে ঘুরে বুকে মাথা দিয়ে কয়েকটা চুমো খেয়ে বলল,
__তোমায় বিশ্বাস করবো নাতো কাকে করবো?
__বিশ্বাস করবা তবে অন্ধ বিশ্বাস করবা না। আর হ্যাঁ তোমায় আমি বৈধ ভাবে কাছে পেতে চাই। এরকম অবৈধতার মোরকে পেচিয়ে তোমায় পেয়ে আমি আমার ভালোবাসাকে অপবিত্র করতে চাইনা। আমাদের সম্পর্কটায় সবসময় পবিত্রতার স্নিগ্ধ ছোয়া থাকবে। আর সেটা বিয়ে ছাড়া সম্ভব নয়। বুঝলা অভিলাষী।
__হুমম। তারপর নিজের হাতের ময়দা আয়াতের গালে লাগিয়ে দিয়ে পালাতে চাইলে আয়াত তনয়ার হাত দুটো চেপে নিজের গাল তনয়ার গালে ঘষে দিলো। দুজনকে দুজনকে রঙের মত আটা মাখাচ্ছে। মেঘা সেটা আড়াল থেকে দেখে মুচকি হেসে রুমে গিয়ে তানভীকে ফোন দিলো।
তানভী ফোন ধরে বলল,
__বাব্বাহ্ আজ যে, মেঘা ম্যাডাম নিজে থেকে আমায় ফোন দিলেন?
__আই মিস ইউ।
__আল্লাহ্ আমি আজ কী শুনছি! এটা কোন মেঘা? যে, ভুলেও এসব বলেনা আজ সে এত এত কথা বলছে। বাহ্ আজ তো তবে বিশেষ কিছু।
__মজা করোনা তো। কবে আসবা?
__তুমি বললে এখনই এসে পড়ি।
__আবার মজা করছো?
__আচ্ছা স্যরি। মাস দু এর আগে পারবো না।
__ওহ (মন খারাপ করে)
__মন খারাপ করোনা শিঘ্রই আসার চেষ্টা করবো। তারপর দুজন অনেক কথা বলতে লাগলো।
রাতের খাবার খেয়ে তনয়া মেঘা এক রুমে আর আয়াত পাশের রুমে শুয়ে পড়লো। তনয়ার কেন জানি ঘুম পাচ্ছেনা। মনটা কেমন যেনো অস্থির লাগছে। মেঘা পাশে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। তনয়া আস্তে করে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে গেলো। তখন আয়াতের রুম থেকে কারো সাথে কথা বলার আওয়াজ আসলো। তনয়া সেদিকে ভ্রক্ষেপ করলোনা। আয়াত আয়মন এর সাথে কথা বলছে,
__হ্যাঁ আপু কি খবর?
__আয়াত তোমার মনে হচ্ছেনা আমার এখন তোমাদের সবার জীবনে আসাতে কোন সমস্যা হতে পারে।
__আপু আমার মতে আপনি আসায় সমস্যাটা সমাধান হবে।
__আচ্ছা যা ভালো মনে করো। তবে তনয়াকে বলে নিয়ো। বাচ্চাটা নয়তো কষ্ট পাবে। আচ্ছা পাঁচ বছরে বাচ্চাটা মানে তনয়া খুব বড় হয়ে গেছে তাইনা?
__বড় কী আপু সে তো রীতিমত আমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।
__আয়মন উচ্চস্বরে হেসে দিলো। তারপর বলল, তোমরা সরাসরি আমার বাসায় আসতে পারো। হোটেলে ওঠার দরকার নেই।
__আরে না না আপু। আমাদের কাজ শেষ করে আপনার সাথে দেখা করবো।
__আচ্ছা। সাবধানে আসবে।
__জি আপু। দোয়া করবেন।
__আল্লাহ্ ভরসা। ভালো থেকো।
__আপনিও।
আয়াত ফোন রাখতেই তনয়া আয়াতের বুকের উপর শুয়ে পড়লো। আয়াত চমকে উঠে বলল,
__কী করছো কী?
__তার আগে বলো তুমি কার সাথে কথা বলছিলা?