আড়ালে আবডালে - পর্ব ৩৩ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ। হাজার তারাদের মাঝে ঐ একটি চাঁদই যথেষ্ট দৃষ্টি কাড়তে। নিকষকালো কুচকুচে রাতের অন্ধকারে রূপালি চাঁদের আলোয় দৃষ্টি স্থির রেখেছে অনল। রাত পার হয়ে যাচ্ছে। অথচ তার চোখে ঘুম নেই। জানালার কার্ণিশ ঘেষে বসে চাঁদের সৌন্দর্য অবলোকন করছিল। নিহিকেও এখন চাঁদের মতোই লাগছে তার কাছে। তার কারণ, চাঁদের চারপাশে যেমন সহস্র তারা,নক্ষত্র আছে তেমনই নিহির চারপাশেও অসংখ্য মেয়েরা রয়েছে। অথচ অনল আটকে গেছে ঐ চাঁদে। অর্থাৎ নিহিতে! সেই মেয়ের মাঝেই যাকে এক সময় খারাপ করেছিল পুরো কলেজের কাছে। শুধু কলেজই নয়, ছোট করেছিল নিজ পরিবারের কাছেও। একমাত্র তার জন্যই নিহি আজ এতদূরে। অভিনয় করেছিল ভালোবাসার। নিহির অনুভূতি নিয়ে খেলেছিল। এত সংশয় মনের মাঝে ঘেটে অস্থির হয়ে পড়ছে অনল।

বসা থেকে উঠে ঘরের মাঝে ফাঁকা জায়গায় পায়চারি করতে থাকে। মনে পড়ে যায় নিহিকে দেখা প্রথম দিনের কথা। কালো একটা জামা পরেছিল সেদিন। চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করা ছিল। দু'কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চারদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ফর্সা অঙ্গে কালো চুল, কালো জামা মুগ্ধ করেছিল অনলকে। সেই মুগ্ধতা সেদিন সে বোঝেনি। বোঝেনি চুলগুলো খোলার পর বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠার মানে। সেদিন যদি বুঝতে পারত তবে আজ হয়তো এমন নিহিকে আবিষ্কার করতে হতো না তার।

এরপর আসে সেদিনের কথা। সিলেটে যেদিন শেষ কথা হয়েছিল নিহির সঙ্গে। নিহির কথার প্রতিধ্বনি এখনো কানে বাজছে। 'অনিচ্ছাকৃত ভুল ক্ষমা করা যায়। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভুল নয়।' আচ্ছা একটা ভুল না হয় হয়েই গেছে তাই বলে এত পরিবর্তন? এই পরিবর্তনটা কি হওয়ারই ছিল? সেদিন নিহির ঐ কথাটা বলার পর অনল আর কথা খুঁজে পায়নি। পাবে কী করে? নিহি তো ভুল কিছু বলেনি। যা বলেছে তা সব সত্য। আর কিছু সত্য কাঁটার মতোই শরীরে বিঁধে। নিহির কথাগুলোও অনলের ভেতরকার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর রক্তক্ষরণ দৃশ্যমান হয়নি ঠিক। তবে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিল। নিহির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস হয়নি আর তার। সেই মুহূর্তেই নিহিকে যাওয়ার জায়গা করে দিয়ে ভেতরে চলে যায় সে। নিহি বাড়িতে আসার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বন্ধুদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়। নিহিকে ভোলার উদ্দেশ্য নিয়ে সিলেট আসলেও, অনলকে ফিরতে হয় নিহির কঠিন কঠিন কিছু কথার স্মৃতি নিয়ে। ঢাকায় ফিরেও গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করেছিল নিহিকে, তার কথাগুলো পুরোপুরি ভুলে যেতে। ভুলে যেতে চেয়েই আরো বেশি করে মনে করে ফেলেছে। তারপরের দশদিন আর কোনোরকম চেষ্টা করেনি নিহিকে ভোলার। জীবন যেভাবে চলছে চলুক। বৈঠাবিহীন নৌকার মতো কতদূর এগিয়ে যাওয়া যায় সেটাও সে দেখতে চায়।

অস্থিরতা আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না সে। পুরনো কথা মনে করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কী করলে শান্তি পাবে তাও তার জানা নেই। টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে যায়। সার্চলিস্টের প্রথমেই নিহির আইডি। আইডিতে শুধু প্রোফাইলেই একটা ছবি। তাও অনলি মি করে রাখা। এছাড়া আর কোনো ছবি নেই। দুম করে অনলের মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছের উদয় হলো। ইচ্ছে করল, নিহিকেও সে তার জন্য অনলি মি করে রাখবে। কী অদ্ভুত চিন্তা তাই না?

সে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। নিহির হাসিমাখা মুখখানা দেখে বিড়বিড় করল কিছুক্ষণ। হয়তো অজান্তেই ভালোবাসার কিছু প্রলাপ বকছে! ফোনটা নিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ আইডি ঘাটাঘাটি করে। এক ছবির দিকে আর কতকক্ষণই বা তাকিয়ে থাকা যায়? তবুও সে তাকিয়ে রইল ঘুম না আসা পর্যন্ত। আর যখন ঘুম চোখে এসেই গেল তখন সেও সুবোধ বালকের মতো শুয়ে পড়ল।


দমকা হাওয়া বারান্দায় অবস্থানরত আমান ও নিহিকে শিহরিত করে তুলছে। নিহির চুল খোঁপা করা ছিল। আলতো করে সেই খোঁপা খুলে দিল আমান। নিহি কিছু বলল না। এতবেশি লজ্জারা তাকে জেঁকে ধরেছে যে মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এক ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। আমানের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জাবোধ হচ্ছে তার। তার অস্থিরতা আমান বুঝতে পারে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
"লজ্জা লাগছে?"

এতক্ষণ সামান্য লজ্জাবোধ নিহিকে জেঁকে ধরলেও আমানের এই প্রশ্নে সে এবার লজ্জায় সংকুচিত হয়ে পড়ে। আমানের মজাই লাগছে। লজ্জা পেলে আরো বেশিই সুন্দর লাগে তাকে। নিহির নিরবতার মানে বুঝতে পেরেও আবারও একই প্রশ্ন করে। এদিকে নিহির মুখ দিয়ে কোনো কথাও তো বের হচ্ছে না। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করার পর বাকশক্তি বোধ হয় ফিরে আসে। সংকুচিত হয়েই বলে,
"ইচ্ছে করেই লজ্জা দেওয়ার জন্য এমন করছেন তাই না?"

আমান ফিক করে হেসে ফেলে। নিহিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
"লজ্জা পেলে নিহুপাখিকে যে আরো বেশি সুন্দর লাগে তা কি নিহু জানে?"
"আপনি একটা বদ লোক!"
"আরো বদ হব।"
"কেন?"
"কথা ছিল কিন্তু দুজনই দুজনকে তুমি করে বলার। তাও তুমি আমায় আপনি করে বলছো।"
"হুট করেই কি আর মুখ দিয়ে তুমি আসে নাকি? আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।"
"তাই? তাহলে আমিও আপনি করেই বলব।"
"এইটা কোনো কথা?"
"এটাই কথা।"
"আমি যা করব আপনি তাই করবেন?"
"প্রয়োজন হলে তাই করব।"
"না! তা হবে না।"
"আচ্ছা হবে না।"

নিহি হেসে ফেলে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে,
"আপনি আমায় ভালো কেন বাসেন?"
"তার আগে তুমি এটা বলো আকাশে চাঁদ কেন ওঠে?"
"এটা আবার কেমন প্রশ্ন হলো? চাঁদ, সূ্র্য দুনিয়ার সবকিছুই তো আল্লাহ্ তাআলার তত্ত্বাবধানে চলে। এরকম যুক্তিহীন প্রশ্ন করার কোনো মানে হয়?"
"আমার প্রশ্নটা যেমন যুক্তিহীন এবং এর কোনো উত্তর নেই ঠিক তেমনই তোমার প্রশ্নটাও উত্তর ও যুক্তিহীন।"
"বাবারে! কীরকম প্যাঁচিয়ে বললেন। আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্রশ্ন উল্টো আমাকেই করবেন।"
"করতাম। যদি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকত।"
"কোনো উত্তর নেই?"
"না। শুধু জানি, ভালোবাসার জন্যই ভালোবাসি। এবং তুমি ছাড়া আমি অপূর্ণ।"

নিহির মন ভরে যায় মুগ্ধতায়। একরাশ ভালোবাসারা দুলে দুলে মনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমানের বাহুবন্ধনে থেকেই হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।

দুজনের অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রাত জেগে গল্প করার। মুঠোফোনে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে আজ হয়েছে। দুজনেরই ধৈর্যের ফল। এজন্যই বোধ হয় বলা হয় সবুরে মেওয়া ফলে। তাই তো ভালোবাসার মানুষটির সাথে থেকেই সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। এতটা সময়ে গল্প করেও কারো চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুম আসেনি। আসবেই বা কী করে! অনেক প্রতীক্ষার পর সামনে আসা তো!

মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। ফজরের আজান দিচ্ছে। নিহি তখন তাড়া দিয়ে বলে,
"এবার আমাদের যেতে হবে।"
আমানের মন খারাপ হয়। নিহিকে দূরে যেতে দিতে ইচ্ছে করে না। তবুও ঠোটে হাসি রেখে প্রশ্ন করে,
"যেতেই হবে?"
"হ্যাঁ। আর সেটা ভোরের আলো ফোঁটার আগেই।"
"আচ্ছা আমি পৌঁছে দেবো। আগে দুজনে একসাথে নামাজ পড়ে নিই?"

ঠোঁটের হাসি চওড়া হয় নিহির।
"অবশ্যই।"
অজু করে এসে দুজনে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষ হতেই নিহি যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। আমান হাত টেনে ধরে। নিহির মুখে তখনো অজুর বিন্দু বিন্দু পানি। মাথায় ঘোমটা দেওয়া। কী স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে! আলতো করে হাত ছুঁয়ে দেয় নিহির গালে। সে আবারও লজ্জায় নুইয়ে গিয়ে অস্পষ্টভাবে বলে,
"দেরি হয়ে যাচ্ছে!"

তার কথা আমলে নেয় না আমান। দু'গালে হাত রেখে নিহির কপালে পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। নিহি চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমান বলে,
"তুমি আমার নিহু। সারাজীবন এভাবেই তোমাকে আমার পাশে চাই। সাথে চাই। কখনো দূরে চলে যেও না।"

নিহির চোখে পানি টলমল করছে। কান্না পাচ্ছে খুব। আমানের বুকে মাথা রেখে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে,
"তোমার ভালোবাসার কাছে যেখানে হেরে গিয়েছি, সেখানে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারব এই চিন্তা আমার কাছে মৃত্যুসম।"

নিহির চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আমান। গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
"আমার নিহু! যাও রেডি হয়ে নাও। আর তাদেরও ডেকে তোলো। আমি নিচে গিয়ে গাড়ি বের করছি।"
"আচ্ছা।"
আমান নিচে চলে যাওয়ার পর নিহি ওদের রুমে যায়। দরজা চাপিয়ে রাখা। রুমের লাইট অন করে দেখে দুজনে একত্রে ঘুমিয়ে আছে। উপমা আর তরুর কালই প্রথম দেখা এবং কথা হয়েছিল। কিন্তু একসঙ্গে দেখলে মনে হবে অনেক বছরের পরিচিত। সে দ্রুত পায়ে ওদের কাছে গিয়ে ডাকে।
"এই উপু! তরু! ওঠ। যেতে হবে আমাদের।"

একটু নড়েচড়ে ওরা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে দুইটাকে ঘুম থেকে তোলে নিহি। ওদের অবস্থা ঘুমে ঢুলুঢুলু। বোরকা পরতে পরতে নিহি বলে,
"চোখে-মুখে পানি দিয়ে আয়।"

তরু আর উপমার রেডি হওয়া হলে তিনজনে একসাথে নিচে নামে। আমান তখন ড্রাইভিং সিটেই বসা ছিল। নিহি গিয়ে আমানের পাশের সিটে বসে। আর পেছনে বসে ওরা দুজন। সারা রাস্তা কেউই তেমন কথা বলল না। উপমা আর তরুর ঘুম তখনো ছাড়েনি। নিহি আড়চোখে আমানকে দেখছিল। আমান তখন জিজ্ঞেস করে,
"আবার কবে দেখা হবে?"
"জানি না।"

আমান নিহির দিকে ফিরে তাকায়। তখন নিহিও তাকায়। আমানের ভ্রু কুঁচকানো। নিহি হেসে ফেলে। বলে,
"যাওয়ার আগে মিহি আপুর বাসায় একদিন নয়তো দু'দিন থাকব। তখন দেখা হবে।"
"আছো কয়দিন এখানে?"
"আছি কয়েকদিন!"
"আবুল আর টুকটুকি কিন্তু সবসময়ই তোমার কথা জিজ্ঞেস করে। তেমন সময় হয় না আমার তাই তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেওয়া হয় না। আর হ্যাঁ, ক্যাবলাকান্তও তোমায় মিস করে।"

নিহি এবার শব্দ করে হেসে বলল,
"এবার সবার সাথেই দেখা করে যাব। তাছাড়া আমি নিজেও সবাইকে খুব মিস করি।"
টুকটাক কথা বলতে বলতেই নিহির বলা ঠিকানায় আমান পৌঁছে যায়। সাবধানে গাড়ি থেকে নেমে ওরা বাড়ির ভেতর যায়। নিহি হাত নাড়িয়ে বিদায় দিতেই আমানও হাত নাড়িয়ে বিদায় দেয়। ওরা বাসার ভেতর যাওয়ার পর আমানও বাড়িতে চলে আসে।

বাড়িতে গিয়ে তিনজনে আবার শুয়ে পড়ে। নিহির চোখেও এখন প্রচুর ঘুম। সারারাত জেগে থাকার জন্যই এখন এত ঘুম আসছে। ঘুমে তলিয়ে গেলেও চলবে না। দশটার মধ্যে বাসায় যেতে হবে। আটটার দিকে উঠে তিনজনে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে নাস্তা করে। নিহির বাড়ির সামনে এসে তরু আর নিহি নেমে যায়। উপমা চলে যায় কলেজে। বাড়িতে গিয়ে নিহি বোরকা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তরু শিশিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। দুপুরের দিকে তমা ডেকে তোলে নিহিকে। ঘুমজড়ানো নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে সে বলে,
"ডাকছো কেন ভাবি?"
"আরে ওঠো। ঐ ছেলেটা এসেছে।"
"কোন ছেলেটা?"
"ঐযে চিঠি দিয়ে যায়।"

নিহির চোখ থেকে এবার ঘুম উধাও হয়ে যায়। চিঠির রহস্যটা বের করতেই হবে এবার। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে সে ড্রয়িংরুমে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আই গ্লাসে দেখে দেখতে পায় ঐ ছেলেটাকেই। দরজা খুলে দিতেই ছেলেটা অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
"আপু! আপনি? কবে এসেছেন?"
"চিঠি নিয়ে এসেছ?" উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে নিহি।

ছেলেটা পকেট থেকে চিঠি বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে,
"হ্যাঁ।"
নিহি চিঠিটা নিলো। এরপর জিজ্ঞেস করল,
"এই চিঠিগুলো কে পাঠায়। নাম কী তার?"
"বলা যাবে না।" বলেই ছেলেটা দৌঁড়ে নিচে নামতে থাকে। নিহিও এবার পিছু নেয়। হাতছাড়া করা যাবে না ওকে। একমাত্র এই ছেলেই বলতে পারবে কে এই চিঠির মালিক! ভরা রাস্তায় মানুষজন দেখছে এসব চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে না। শাড়ির কুঁচি শক্ত করে ধরে নিহিও দৌঁড়াচ্ছে। শাড়ি পরার কারণে ঠিকমতো দৌঁড়াতেও পারছে না। নিজের প্রতি রাগ লাগছে তার। কে জানতো এই ছেলে আজ আসবে! তাহলে তো বাড়িতে এসেই পোশাক পাল্টে নিতো। গলির মুখে যেতেই একটা গাড়ি এগিয়ে আসে গলি থেকে তখন। ছেলেটা চলে যেতে পারলেও নিহি গলির মুখেই থেমে যায়। হুট করে গাড়ি আসতে দেখে পা-ও আর চলছে না। মুখের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। আজ তো এক্সিডেন্ট নিশ্চিত!

"নিহু!"
নিহি চকিতে হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকায়। আমানকে দেখে চমকে যায়। পরক্ষণেই আশেপাশে তাকিয়ে ছেলেটাকে খোঁজে। আমান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
"ঠিক আছো তুমি? এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেন রাস্তায়?"
কী বলবে বুঝতে পারছে না নিহি। বোকার মতো তাকিয়ে আছে। নিহিকে সরু চোখে পর্যবেক্ষণ করছে নিহিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠে এসেছে। পায়ে জুতাও নেই। খালি পায়ে রাস্তায় দৌঁড়াচ্ছে! রাস্তাঘাটে কত ইট, কাঁচের টুকরো থাকে মেয়েটা জানে না? রাগ হচ্ছে আমানের। হঠাৎ করে নিহির হাতের দিকে চোখ আটকে যায় আমানের। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই নিহি ঢোক গিলতে শুরু হবে। কী হবে এখন? চিঠির মালিক কে তা জানতে চেয়ে এখন স্বামীর কাছে ধরা! কী বিচ্ছিরি কাহিনী! নিহি আমানকে চেনে। সবটা শুনে সে কখনোই নিহিকে ভুল বুঝবে না। তবুও বিষয়টা কীভাবে নেবে আমান?
.
.
.
চলবে........................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন