আড়ালে আবডালে - পর্ব ৪৭ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


দরজা খোলার শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে উপমা। উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় দরজার দিকে। অনল এসেছে। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে উপমার সামনা-সামনি বসে। কেন জানি উপমার এখন একটুও ভয় করছে না। সবকিছু জানার কৌতুহল ভয়কে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে। আগের মতোই মৃদু মুচকি হাসি অনলের ঠোঁটে। ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে উপমা।
"ঘুম কেমন হলো?" প্রশ্ন করল অনল।
এতকিছু করেও কত স্বাভাবিক প্রশ্ন! যেনো কিছুই হয়নি। অনলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করল,
"এই নাটকের মানে কী? কেন করছেন এসব? আর কী করতে চলেছেন?"

অনল ডান হাত তুলে বলে,
"রিল্যাক্স! বলব। তুমি খাবে এখন কিছু?"
"আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?"
"নাহ্ তো! শুধুমাত্র নিহির ফ্রেন্ড বলে এক্সট্রা কেয়ার নিচ্ছি।"
"কোনো প্রয়োজন নেই এসবের। আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।"
অনল লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
"আচ্ছা শোনো তাহলে।"

ঘনকালো মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে! কলেজ ছুটি হয়েছে বিশ মিনিটের মতো হবে। উপমা আর দীপ্ত লেকের পাশে হাঁটছে। দুশ্চিন্তায় কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিল না উপমা৷ নিহিকে মারার হুমকি উপমাকে দিশেহারা বানিয়ে দিয়েছিল। কাউকে বলার জন্য মনটা ছটফট করছিল। দীপ্তর কাছেই কথাগুলো শেয়ার করেছিল উপমা। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে দেখে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।
দীপ্ত দুটো কফির অর্ডার দিয়ে উপমাকে বলল,
"মাথা ঠান্ডা রাখ। এভাবে ঘাবড়ে যাস না।"
"কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।"
"আমান ভাইয়া আছে তো ওর সাথে। ভয়ের কিছু নেই।"
"তবুও! মন তো বোঝে না।"

এর মাঝেই কফি এসে পড়ে। উপমাকে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করে দীপ্ত। নানান রকম মজার কথা বলে হাসায়। আরো কিছুক্ষণ বসে ওরা রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে।

ওদের টেবিলের ঠিক পেছনের টেবিলে উল্টো দিক করে বসে ছিল অনল। থাই গ্লাস ভেদ করে বৃষ্টির ছলাৎ ছলাৎ করা অমায়িক দৃশ্য অবলোকন করছিল। বাড়িতে থেকে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি৷ কাউকে কিছু না বলেই একা হাঁটতে বের হয়েছিল। রিফ্রেশ হওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে এসে নির্জন জায়গায় বসেছিল। উপমা আর দীপ্তর গলার স্বর চিনতে অসুবিধা হয়নি তার। একবারও তাকায়নি পর্যন্ত ওদের দিকে। শুধু চুপচাপ শুনে গেছে ওদের কথোপকথন। নিহিকে খুন করার থ্রেট দিয়েছে শুনে মাথার রগ দপদপ করে কাঁপতে থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। পরক্ষণে নিজেই নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে। এতদিনে এইটা অন্তত একটু হলেও বুঝেছে যে রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। কে এই লোক যে নিহিকে খুন করতে চায় সেটাই আগে বের করতে হবে। ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি খুঁজে বের করে। কল রিসিভ করার পর এপাশ থেকে অনল জানায়,
"হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেয়ের ছবি আর বাড়ির এড্রেস পাঠাচ্ছি। মেয়েটার ওপর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স নজর রাখবে।"

অনল চুপ থেকে একবার বামদিকে, আবরেকবার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বসল। উপমা এখনো উৎসুক চাহনী দ্বারা নিবদ্ধকরণ করেছে অনলকে। অনলের নিরবতা উপমাকে পীড়া দিচ্ছে। সে নিজেই জিজ্ঞেস করে,
"তার মানে আপনি সেদিনই জেনেছিলেন কেউ নিহিকে মারার থ্রেট করছে?"
"হ্যাঁ।"
"তারপর? তারপর ঐ লোকগুলো কি আমার ওপর নজর রাখছিল?"
"অবশ্যই। তবে তুমি হয়তো জানো না আমার লোক লাগানোর আরো আগে থেকেই অন্য লোক তোমার ওপর নজর রাখতো।"
"মানে? তারা কারা?"
"আমি জানিনা। হতে পারে ভাইয়ার লোকজন। তোমার সেফ্টির জন্যই রেখেছিল। তবে এখানে আমার জন্য একটা ভালো খবর ছিল। ঐ লোকগুলো শুধুমাত্র তোমার বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার সময় এবং কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময়টুকু নজর রাখতো। রাতের বেলায় তারা থাকতো না। তোমার ওপর নজর রেখেও আমি কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না যে কারা নিহিকে মারতে চাচ্ছে। তবুও অপেক্ষা করেছি আমি। খুঁজে বের করতে সক্ষমও হয়েছি সেই কালপ্রিটকে।"
"সেই মেয়েটা? সামিয়া সুমাইয়ার বোন?"
"হ্যাঁ। ওরা টুইন। সামিয়া বাইরে থেকে পড়াশোনা করতো।"
"ঐ ছেলেটা আমায় ছেড়ে কেন দিলো?"
"তোমাকে যারা কিডন্যাপ করেছিল ওরা সামিয়ার লোকজন ছিল। সামিয়ার লোকজনের মাঝে ফাহিম মানে ঐ ছেলের সাথে আমার দলের জামিলের ভালো সম্পর্ক আছে। আমার লোকজন ওদেরকে ফলো করে। সামিয়াসহ বাকিরা চলে যাওয়ার পর জামিল ফাহিমকে ফোন করে। ফাহিমের সঙ্গে ওর কথা হলে আমি বলি আমার সাথে কথা বলিয়ে দিতে। তারপর ফাহিমের সাথে আমি একটা ডিল করি।"
"ডিল? কীসের ডিল?"
"টাকার! ওর দরকার ছিল টাকার আর আমার দরকার ছিল সামিয়ার মৃত্যু!"
"মানে?"
"মানে খুব ইজি৷ ওর চাহিদামতো টাকা আমি ওকে পেমেন্ট করেছি। তার বিনিময়ে ফাহিম সামিয়াকে দিয়েছে মৃত্যু।"

উপমা আৎকে উঠে মুখের ওপর হাত রাখে। শরীর কাঁপছে ভয়ে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
"ক...কীভাবে খুন করলেন তাকে?"
"আমি তো খুন করিনি। করিয়েছি। তুমি ওর হাত-পা বেঁধে চলে আসার পর জামিল ভেতরে যায়। ওর নাম্বার থেকে সামিয়াকে ফোন করে জানায়, 'আমরা উপমাকে নিয়ে যাচ্ছি। পারলে এসে ঠেকিয়ে দেখাও।' এতটুকু বলেই জামিল সিমটা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে ফেলে চলে আসে। তখনই অত রাতে সামিয়া সেখানে চলে আসে। তোমাকে না দেখে রেগে যায়। আরো ঘাবড়ে যায় ফাহিমকে বাঁধা অবস্থায় দেখে। সে তো আর জানতো না এসব আমাদের প্রি-প্ল্যানিং ছিল! ফাহিমের বাঁধন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে ফ্লোর থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় বারি দেয় সামিয়ার। মাথা ফেঁটে রক্ত বেরিয়ে আসে। নিজের ওপর ভর রাখতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর ফাহিম ওর আধামরা শরীরটা নিয়ে হাইওয়ের রাস্তায় রাখে। চলন্ত গাড়ি তার মধ্যে মাতাল ড্রাইভার! পিষে দিয়ে যায় ওর রক্তাক্ত দেহটাকে৷ ওর ব্যাগে পরিচয় পত্র ছিল বলে খুব সহজেই পুলিশ ওর বাড়িতে জানাতে পেরেছে।"

উপমা নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। অনলের ঠান্ডা মেজাজ যে খুন পর্যন্তও যেতে পারে এটা বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না। কিন্তু যেই মানুষ নিজের মুখেই অপকর্ম স্বীকার করে সেখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিশ্বাস না করে উপায় নেই! কান্না পাচ্ছে উপমার। অস্বস্তি নাকি ভয়ে তা বুঝতে পারছে না! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
"আপনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি!"
অনল রহস্যজনকভাবে মৃদু হেসে বলে,
"নিহির দিকে চোখ তুলে তাকালেও তার চোখ আমি তুলে নেব। সেখানে ঐ মেয়ে নিহিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে!"
"কেন করেছেন আপনি এসব?"

অনল এবার উপমার মুখের কিছুটা কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে বলে,
"কারণ আমি নিহিকে ভালোবাসি!"
তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। তখন উপমা বলে,
"আমায় কেন আটকে রেখেছেন? ছেড়ে দেন আমায়।"
"দেবো। তবে এখন নয়। আরো কয়েকটা দিন এখানেই থাকো।"
উত্তরের অপেক্ষা না করে দরজা লক করে দিয়ে অনল চলে যায়।
______________

বাড়িতে এসে নিহিকে না পেয়ে আমানের অবস্থা পাগলের মতো। পরিচিত অপরিচিত সব জায়গায় খুঁজেছে। কোথাও নিহির দেখা পায়নি। ভয়ে, আশঙ্কায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। এদিকে নিরবও নিঁখোজ। ফোনও বাসায়। নিরবকে তো পাঠিয়েছিল নিহির কাছে থাকার জন্য। সব জায়গায় খুঁজে যখন আবারও নিহির বাসায় ফিরে আসে তখন তরু বলে,
"ভাইয়া নিহি তো এখনো আসলো না!"

আমানের মনে হলো তরু জানে, নিহি কোথায় গেছে। বাড়ির মানুষ টেনশন করবে ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একাই খুঁজেছে। তরুর কথায় কিছুটা হলেও আশার আলো খুঁজে পেয়েছে। তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করে,
"তুমি জানো নিহি কোথায়?"
"উপমার বাবা-মা এসেছিল বাড়িতে। উপমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তাদের নিয়ে পুলিশের কাছে গেছিল। আমার খুব ভয় করছে ভাইয়া। নিহি এখনো কেন আসলো না?"

তরুর কতটা ভয় হচ্ছে তা আমান জানে না। কিন্তু ওর নিজের মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে ভয়টা এখন আরো অনেকবেশি গাঢ়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
"ভয় পেয়ো না। আমি নিহিকে খুঁজে আনব। তুমি বাড়ির মানুষকে সামলে রেখো।"

আমান সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। উপমা, নিহি, নিরব তিনজনেই নিখোঁজ। কীভাবে সম্ভব এটা? প্রথমে উপমার বাড়িতে গিয়ে জানলো তাদেরকে আগে নিরব আর নিহি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। নিরব তাদের সঙ্গেই ছিল। উপমা আগে থেকেই নিখোঁজ। আর আজ নিরব, নিহি নিখোঁজ। তাহলে কি তিনজনের উধাও হওয়ার পেছনে একজনেরই হাত? সেই একজনটা কে? নিহিকে মারার হুমকি যারা দিয়েছিল তারা?

আমানের মাথা কাজ করছে না। হ্যাং ধরে আছে। পুলিশ স্টেশনে গিয়েও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৪ ঘণ্টার আগে তারা কিছু করতেও পারবে না। রাস্তায় বসে পড়ে আমান। নিয়ে নিজের চুল ধরে নিজেই টানতে থাকে। কান্না আটকাতে পারছে না। রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমে আসছে মানুষজনের আনাগোনা।


স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার একটা জায়গা। চারপাশে মশা-মাছির উপদ্রব। কোথাও কোথাও সারি সারি লাল, কালো পিঁপড়া। নাম না জানা কিছু পোঁকাও আছে। গা ঘিনঘিন করার মতো পরিবেশ। কিন্তু নিহির কোনো ভাবান্তর নেই। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নিরবের খবর জানার জন্য উতলা হয়ে আছে। কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই। মুখ বেঁধে রাখা। একজন এসে নিহিকে অন্য একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। এই রুমটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নিভু নিভু আলো ঘরে। রুমটা বেশ বড়োসরো। কোনো আসবাব পত্র নেই। একটা কাঠের চেয়ার এনে সেখানে নিহিকে বসিয়ে আবারও হাত-পা বেঁধে দেয়। কিছু বলতে চাচ্ছে নিহি। কিন্তু বলতে পারছে না।

একজন নিহির পাশে বসে পাহারা দিচ্ছে। তখন তার ফোনটা বেজে ওঠে। লোকটা ফোন রিসিভ করে লাউড দেয়। হয়তো ইচ্ছে করেই নিহিকে কথাগুলো শোনানোর জন্য! নিহি এবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। এপাশ থেকে লোকটি জিজ্ঞেস করে,
"ছেলেটা বেঁচে আছে?"
ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসে,
"বেঁচে ছিল। কিন্তু বসের অর্ডার ছিল ওকে মেরে ফেলার। কোনে প্রমাণ যেন না থাকে তাই।"
"কী করেছিস? মেরে ফেলেছিস?"
"হ্যাঁ। লাশ গুম করাও শেষ।"

আর কোনো কথা শোনার জন্য সাহস হলো না নিহির। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মুখ বাঁধা অবস্থাতেই চিৎকার করছে৷ গোঙানির মতো শব্দ বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে। চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় থাকায় নিজেকে ছোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । সামনের লোকটি এসে এবার নিহির মুখের বাঁধন খুলে দেয়। নিহি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
"কেন ওকে মেরে ফেললি তোরা কেন! আমাকে নিয়ে তোদের এতো সমস্যা তোরা আমায় মেরে ফেল। কেন মারলি নিরবকে কেন!"

নিহির চিৎকারে আকাশ-পাতাল এক হওয়ার উপক্রম। কিছুতেই নিরবের মৃত্যু মানতে পারছে না। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে যায়। কাশি দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আল্লাহ্ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নিয়ে যাও আমায় তোমার কাছে। নিয়ে যাও!"

কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিরবের চেহারা। কত সহজ মনের একজন মানুষ! কী নিষ্পাপ হাসি তার। বোকা বোকা চাহনী৷ কথায় কথায় স্যার,ম্যাম ডাকা। নিহির মুখ থেকে 'ক্যাবলাকান্ত' শুনতে চাওয়ার আবদার! শুরু থেকে মানুষটা সাথে ছিল। পাশে ছিল। শেষ সময়টাতেও সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে নিহিকে। মার খেয়েও হাত ছাড়েনি। নিহিকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ! তার রক্তবর্ণ মুখটা! চোখ ছাপিয়ে পানি আসে নিহির। আকাশের দিকে মুখ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আপনার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী ক্যাবলাকান্ত!"

"আ'ম স্যরি ডিয়ার! নিরবকে মারার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না আমার। কিন্তু কী করব বলো? ওকে ছেড়ে দিলে যে আমি ফেঁসে যেতাম। আর জানোই তো, পাগলও নিজের ভালোটা বোঝে।আর সেখানে তো আমি! নিজের ধ্বংসের জন্য তো আর প্রমাণ রেখে দিতে পারি না। তাই না বলো?"

অশ্রুশিক্ত দৃষ্টি মেলে নিহি সামনে তাকিয়ে আছে। ওখান থেকেই তো কথাগুলো ভেসে আসলো। উঁচু জুতার খটখট শব্দ আসছে। হেঁটে আসছে নিহির দিকে। তার শাড়ির আঁচল ফ্লোর ছুঁয়েছে। শরীর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি গন্ধ। অনেকটা কাছে চলে এসেছে সে। ঘরের নিভু নিভু আলোতে তার মুখটা স্পষ্ট। নিহি বাকরুদ্ধ। তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
"চিনতে কষ্ট হচ্ছে? নাকি বিশ্বাস করতে?"
জিজ্ঞেস করল সেই আগন্তুক।
নিহি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,
"অনামিকা ম্যাম!"
.
.
.
চলবে......................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন