আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অবেলার অভিলাষ - পর্ব ২১ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


__বাবা আমি জা‌নি প‌রিবা‌রের বিরু‌দ্ধে গি‌য়ে বি‌য়ে করা মো‌টেও  ঠিক না। কারন প‌রিবা‌রে বিরু‌দ্ধে গি‌য়ে বি‌য়ে কর‌লে একজ‌নের ভা‌লোবাসা পে‌লেও বা‌কি প‌রিবা‌রের অভিশাপ কুড়া‌নো লা‌গে। তা‌তে সুখী হবার চেষ্টা ক‌রেও হ‌তে পা‌রে না। কিন্তু প‌রিবারই য‌দি বুঝ‌তে না চায় ত‌বে আমরা কী কর‌বো ব‌লেন? জীবন কখ‌নো একার বুঝ ব্যবস্থায় চ‌লে না। সবার বুঝব্যবস্থা ল‌া‌গে, হোক সেটা প‌রিবার বা আত্মীয়। হ্যাঁ পা‌লিয়ে যাওয়াটা অন্যায় তবে তার পিছ‌নে স‌ঠিক রিজনটা তো দেখ‌তে হ‌বে।

আচ্ছা একবার নাহয় মানলাম, য‌দি তনয়ার সা‌থে রিসা‌দের বি‌য়ে হ‌তো। ত‌বে কী হ‌তো? বড় জোড় রিসাদ তনয়ার সা‌থে ক‌য়েকমাস সংসার করে ছে‌ড়ে দি‌তো। নয়ত তনয়া ওর ঘ‌রের কো‌নে আগাছার মত প‌রে থাক‌তো। কিন্তু বর্তমা‌নে তনয়া একজন সফল নারী। ও নি‌জের পা‌য়ে দা‌ড়িয়ে‌ছে। সাবলম্বী আজ ও। এখন ওকে কা‌রো কা‌ছে জবাব দি‌হিতা কর‌তে হ‌বে না। নি‌জের মত ক‌রে নি‌জের জীবনের সিদ্ধান্ত নি‌তে সক্ষম তনয়া। আর আমি আপনার মে‌য়ে‌কে এতটা ভা‌লোবা‌সি ঠিক যতটা মানুষ বেঁ‌চে থাকার জন্য নি‌জে‌কে ভা‌লোবা‌সে।

তবুও যাই হোক তনয়া পা‌লি‌য়ে গি‌য়ে অন্যায় কর‌ছে। ত‌বে এতটাও অন্যায় ক‌রে‌নি যে আপ‌নি ওকে মে‌য়ে ব‌লে প‌রিচয়ই দি‌বেন না। তারপর গত ক‌য়েকমা‌সে কতব‌ার ক্ষমা চে‌য়ে‌ছে। কিন্তু আপ‌নি ক্ষমা ক‌রেন‌নি। এভা‌বে শক্ত ম‌নের হ‌বেন না বাবা। আমি তো জা‌নতাম একটা মে‌য়ে‌কে সব থে‌কে বে‌শি ভা‌লো তার বাবা বা‌সে। বাবার রাজকন্যা হয় একটা মে‌য়ে। ত‌বে আপ‌নি কেন আপনার রাজকন্যার একটা ভুল মাফ কর‌তে পার‌ছে না! ওর হ‌য়ে আমি ক্ষমা চাই‌ছি। প্লিজ বাবা এবার সব ভু‌লে যান, তনয়া স‌ত্যি অনেক কষ্ট পা‌চ্ছে।

আয়া‌তের কথা শু‌নে তা‌লিব মাহমুদ কিছুক্ষন থম মে‌রে ব‌সে রইল। কী বল‌বে সেটা বোধয় ভে‌বে পা‌চ্ছে না। তার ছে‌লের বয়‌সি একটা ছে‌লে তার মু‌খের উপর এতগু‌লো কথা ব‌লে দি‌লো! অথচ তি‌নি ছে‌লেটার ম‌ু‌খের উপর কিছু বল‌তে পার‌ছে না। কেন?
স‌ত্যি বল‌তে ছে‌লেটা তো একদম উচিৎ কথা ব‌লে‌ছে। নি‌জের দম্ভ আর রা‌গে এত‌দিন তি‌নি প্রায় বি‌বেগশূন্য হ‌য়ে প‌রে‌ছি‌লো। তাই নি‌জের মে‌য়ের দিকটাও দে‌খে‌নি তি‌নি। বেশ কিছুক্ষন চুপ ক‌রে থে‌কে তি‌নি আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, আমি এ বিষ‌য়ে তোমার সা‌থে প‌ড়ে কথা বল‌ছি। 

আয়াত ঠিক আছে ব‌লে তা‌কে সালাম দি‌য়ে বের হ‌য়ে গে‌লো। কারন তা‌লিব মাহমুদ এত‌দিন যে, ভু‌লের ম‌ধ্যে ছি‌লো হঠাৎ ক‌রেই কেউ তা‌র ভুলটা চো‌খে আঙুল দি‌য়ে ধ‌রি‌য়ে দিয়ে‌ছে তাই নি‌জেকে সাম‌লা‌তে সময় লাগ‌বে তার।

৫২!!

       আয়াত বাসায় ঢু‌কে দে‌খে সা‌ড়ে চারটা বাজে। আজ অফি‌সে হাফ ডে ছি‌লো, আর তনয়ার কা‌জের চাপ কম থাকায় তনয়া এগা‌রোটার দি‌কেই বাসায় চ‌লে আস‌ছে। আয়াত অফি‌সের কাজ শেষ ক‌রে তা‌লিব মাহমুদ এর সা‌থে দেখা ক‌রে বাসায় আস‌ছে। ব্যস্ততায় আজ দুপ‌ুরের খাবার খাবারও টাইম পায়‌নি। পে‌টের ভিতর ইদুর দৌড়া‌চ্ছে। রু‌মে ঢু‌কে দে‌খে তনয়া ঘুমা‌চ্ছে। দুপু‌রে তনয়া ফোন দি‌য়ে‌ছি‌লো আয়াত খে‌য়ে‌ছে কিনা জান‌তে? আয়াত মিথ্যা বল‌ছি‌লো খে‌য়ে‌ছে। নয়ত তনয়া খে‌তো না। আয়াত তনয়ার মু‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে হা‌সি দি‌লো। এ মে‌য়েটা‌কে দেখ‌তেই ওর সকল ক্লা‌ন্তি কোথায় যে‌নো উধাও হ‌য়ে গে‌লো। তনয়া বে‌ঘো‌রে ঘুমা‌চ্ছে। কাপড় আলোথা‌লো হ‌য়ে আছে। প্লা‌জোটা হাঁটু পর্যন্ত উঠে গে‌ছে, জ‌ামার বু‌কের কাছ থে‌কে ওড়নাটা সরে গে‌ছে। 

আয়াত হে‌সে বলল, কপাল ভা‌লো বাসায় আমরা দুজন থা‌কি, তাই তনয়া অগোছা‌লো ভা‌বে ঘু‌ম‌লেও কেউ দে‌খে না। কিন্তু যখন সবার সা‌থে থাকা শুরু কর‌বো তখন ওকে বল‌তে হ‌বে ঘুমা‌নোর আগে যে‌নো অবশ্যই রুম লক ক‌রে রা‌খে। আয়াত তনয়ার পা‌শে ব‌সে, কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে ওর জামা ঠিক ক‌রে দি‌লো। চু‌পি চু‌পি শাওয়ার নি‌লো, যা‌তে তনয়ার ঘুম না ভা‌ঙে। তনয়া জে‌গে ওঠার আগেই খে‌য়ে নি‌তে হ‌বে নয়ত য‌দি শো‌নে দুপু‌রে খায়নি ত‌বে আয়া‌তের অবস্থা বা‌রোটা বাজাবে। আয়াত ডায়‌নিং টে‌বি‌লে ব‌সে খাবার বা‌টি থে‌কে ঢাকনা উঠি‌য়ে খাবার দে‌খে বুঝ‌লো তনয়া দুপু‌রে খায়‌নি। যেমন রান্না কর‌ছি‌লো ঠিক তেমন ভা‌বেই আছে। আয়াত বল‌ছে, এই মে‌য়েটা‌কে নি‌য়ে আর পা‌রি না। ও আমা‌কে যতটা ভা‌লোবা‌সে ওকে খাবার খাওয়া‌তে আমা‌কে ততটাই প্যারা নি‌তে হয়। সবসময় খাওয়া নি‌য়ে বাহানা। বি‌য়ের আগে একা থাক‌তে কী কর‌তো আল্লাহই জা‌নে।

আয়াত রু‌মে গিয়ে তনয়ার মাথায় হাত বুলা‌তে বুলা‌তে মৃদু স্ব‌রে তনয়াকে ডাক‌লো। তনয়া ঘুম ঘুম চো‌খে আয়াত‌কে দে‌খে মাথাটা হালকা উচু ক‌রে আয়া‌তের কো‌লে মাথা দি‌য়ে পে‌টে মুখ গু‌জে দি‌লো। আয়াত বলল, 
__তু‌মি দুপু‌রে খাওনি কেন?

ঘুম ঘুম গলায় তনয়া বলল,
__তু‌মিও খাও‌নি তাই।

__তোমায় কে বল‌ছে আমি খাই‌নি?

__আমি অফি‌সে ফোন দি‌য়ে‌ছিলাম, তু‌মি ক্যা‌ন্টি‌নে খাও‌নি। আর তাছাড়া ইদা‌নিং তু‌মি বাই‌রের খাবার খে‌তে চাওনা। তাই অনুমান করলাম খাও‌নি। 

__অ‌নেক অনুমানগিরী কর‌ছেন এখন উঠো খাবে। 

__পার‌বো না।

আয়াত তনয়া‌কে কো‌লে তু‌লে বলল, এখন পার‌বে। তারপর বে‌সি‌নের সাম‌নে নি‌য়ে গি‌য়ে দাড় ক‌রি‌য়ে দি‌লো কিন্তু তনয়া ঘু‌মে ঢু‌লুমু‌লো কর‌ছে। আয়াত এক হা‌তে ওকে বু‌কের সা‌থে ধ‌রে, অন্য হা‌তে চো‌খে পা‌নির ঝাপসা দি‌তেই তনয়া চোখ মে‌লে ঠোঁট ব‌া‌কি‌য়ে বাচ্চা‌দের কান্না কর‌তে কর‌তে বল‌ল,
__তু‌মি আমা‌কে ঘুমতে দাও না‌ কেন?

আয়াত হা হা ক‌রে হে‌সে,কান্না করা অবস্থায় তনয়ার ঠোঁ‌টে চু‌মো খে‌য়ে বলল, আজ ঘুম‌তে দি‌বো। এখন চ‌লো খাবে। আমারও খুব ক্ষুদা পে‌য়ে‌ছে।
আয়াত ‌নি‌জেই তনয়া‌কে খাই‌য়ে দি‌লো। সা‌থে নি‌জেও খেলো। 

‌খাওয়া শেষ ক‌রে আয়াত ব্যালক‌নি‌তে গি‌য়ে বস‌তেই তনয়া এসে ওর পা‌শে ব‌সে মাথাটা আয়া‌তের বু‌কের কা‌ছে এলি‌য়ে দি‌য়ে বলল, 
__এত কেন ভা‌লোবা‌সো?

__ভা‌লোবাসার জন্য কোন বি‌শেষ কারন লা‌গে না। 

__তবুও ব‌লোনা প্লিজ।

আয়াত তনয়ার কপা‌লে নি‌জের কপাল ঠে‌কি‌য়ে, তনয়ার  না‌কে নাক ঘ‌ষে বলল,
__কারন এই অভিলাষী একটা জীবন্ত প্রানবন্ত পুতুল। আর এই পুতুলটার ভিতর আমার প্রাণ পা‌খিটা লু‌কি‌য়ে আছে। তাই এটা‌কে খুব খুব যত্ম ক‌রে রা‌খি যা‌তে পুতুলটার ভিতরে থাকা আমার প্রাণ পা‌খিটা আঘাত না পায়।

দুজন দুজনার খুনসু‌টিময় মি‌ষ্টি মি‌ষ্টি প্রে‌মে মে‌তে উঠ‌ছে।  সন্ধ্যার আগেই ঝুম বৃ‌ষ্টি শুরু হ‌লো। তনয়া বৃ‌ষ্টি‌তে ভিজ‌তে চাই‌লে আয়াত ভিজ‌তে দেয়নি তাই রাগ ক‌রে গোমরা মু‌খে ব‌সে আছে। 

রাত এগা‌রোটা, 
কিছুক্ষন আগে থে‌কে আবার ঝ‌ড়োবৃ‌ষ্টি শুরু হ‌য়ে‌ছে। এবার আয়াত তনয়া‌কে বলল, 
__চ‌লোনা একসা‌থে ভি‌জি। 

আয়াতের বল‌তে দে‌রি কিন্তু তনয়ার দৌ‌ড়ে ছা‌দে যে‌তে দেরী হ‌লো না। মাঝ রা‌তে দুজন প্রেমময়ী মানুষ ভা‌লোবাসাময় বৃ‌ষ্টি‌তে ভিজ‌ছে। কাঁপন ধরা‌নো হিম শীতল বৃ‌ষ্টির নহ‌ড়ের স্প‌র্শে কে‌ঁপে উঠ‌ছে তনয়া। ভিত‌রে পাগলামী বে‌ড়ি‌য়ে আস‌ছে। ঠোঁট দু‌টো কাঁপ‌ছে আর আয়া‌তের নেশা ধ‌রে যা‌চ্ছে। নিস্তব্ধ বৃ‌ষ্টি ভেজা রা‌তে, নির্জন ছা‌ঁদে ব‌সে দুজন মান‌বি একে অপ‌রের গরম নিশ্বা‌সে আবদ্ধ হ‌চ্ছে। দুজন‌ দুজন‌কে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে হিম শীতল বৃ‌ষ্টির ঠান্ডা স্পর্শ থে‌কে নি‌জে‌দের উষ্ম রাখ‌তে চাই‌ছে।
অনেকক্ষন ভে‌জার পর আয়াত বলল, চ‌লো তনয়া আরো ভিজ‌লে জ্বর বাঁধা‌বে। ‌কিন্তু তনয়া যে‌তে নাড়াজ। কোন উপায় না পে‌য়ে আয়াত তনয়াকে কো‌লে ক‌রে নি‌য়ে গে‌লো। তনয়ার ঠান্ডায় কাঁপ‌ছে। ঠোঁট দু‌টো ঠান্ডায় নীল বর্ন ধারন ক‌রে‌ছে। দা‌ঁতে দাঁত লে‌গে ঠকঠক ক‌রে কাঁপ‌ছে দুজন। ড্রেস বদ‌লে আয়াত তারাতা‌রি তনয়ার চুল মু‌ছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শু‌কি‌য়ে দিলো। গরম গরম চা ক‌রে দুজ‌নে খে‌লো, কিন্তু তবুও তনয়া কাঁপ‌ছে। আয়াত তনয়া‌কে বু‌কে নি‌য়ে ক‌ম্বোল মু‌ড়ি‌য়ে বলল, এখন ঠান্ডা চ‌লে যাবে। এভাবে আমায় জ‌ড়ি‌য়ে থা‌কো। 

তনয়া‌কে অনেক্ষন জ‌ড়িয়ে থাকার পর তনয়া আয়া‌তের উষ্ম পর‌শে স্বাভা‌বিক হ‌য়েই ঘুম রা‌জ্যে পা‌রি জমা‌লো। আয়াতও তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কের ম‌ধ্যে নি‌য়েই ঘু‌মি‌য়ে পড়‌লো।

৫৩!!

আজ শুক্রবার তাই দুজনারই অফ‌ডে। সকা‌লের নাস্তা করার পর আয়াত বলল,
__তনয়া একটা প্রশ্ন ক‌রি? 

__আজব আমাকে প্রশ্ন কর‌তে তোমার আবার অনু‌মো‌তি নেয়ার কী দরকার? বলো?

__তোমার ম‌তে লাভ ম্যা‌রেজ বে‌শি ভাঙার কারন কী?

__তনয়া কিছুক্ষন চুপ থে‌কে বলল, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন আয়াত?

__আ‌রে তেমন কিছু না। জাস্ট তোমার মতামত জান‌তে চাই। দে‌খো পা‌রিবা‌রিক বিষয়টা আমি জানি কিন্তু ছে‌লে‌-মে‌য়ে ভা‌লো‌বে‌সে বি‌য়ে ক‌রেও কেন প‌রে একে অপর‌কে ছে‌ড়ে দেয়?

__আস‌লে আয়াত আমি ম‌নে ক‌রি এখা‌নে দুজনারই বুঝব্যবস্থার অভা‌বের কার‌নে। বি‌শেষ করে মে‌য়ে‌দে‌র।

__‌যেমন?

__‌যেমন, যখন দু‌টো মানুষ ‌প্রে‌মের সম্প‌র্কে থা‌কে তখন দুজনার ফাস্ট প্রায়ো‌রি‌টি দুজন দুজনকে দেয়। তারপর মে‌য়েটার সকল রেসপন্স‌সিবি‌লিটি তার বাবার উপর থাকে। মে‌য়েটার সকল চা‌হিদা তার বাবা পূরন ক‌রে। মুক্ত পা‌খির মত থা‌কে থা‌কে সে। আর ছে‌লেটার ক্ষে‌ত্রেও তাই।‌ কারন বাবা মা বি‌য়ের আগে ছে‌লে‌দের উপর তেমন প্রেসার দেয়না। সংসা‌রের খরচ তখন ছে‌লেটা‌কে বহন কর‌তে হয় না। সে প্র‌তিষ্ঠিত ‌হোক বা না হোক। কিন্তু বি‌য়ের পর মে‌য়েটার সকল রেসপন্স‌সি‌বি‌লি‌টিস প‌রে ছে‌লেটার উপর। হ্যাঁ এ ক্ষে‌ত্রে মে‌য়েটা চাক‌রিজী‌বি হ‌লে ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু তবুও দা‌য়িত্ব তো দা‌য়িত্বই তাইনা!

‌তো বি‌য়ের পর ছেলেটা এটা ভা‌বে তার উপর এখন তার গাল‌ফ্রেন্ড না বরং স্ত্রীর দা‌য়িত্ব। গার্ল‌ফ্রেন্ড‌কে ফোন ক‌রে জানপা‌খি, সোনাপা‌খি ব‌লে চক‌লেট দি‌য়ে প্রেম নি‌বেদন করা গে‌লেও স্ত্রীর সম্পূর্ণ দা‌য়িত্ব ছে‌লেটার উপর থা‌কে। তখন ছেলেটা তার সবটা দি‌য়ে নি‌জের স্ত্রীর সকল চা‌হিদা পূরন ক‌রে তা‌কে ভা‌লো রাখার চেষ্টা করে। এখন স্ত্রীর সকল চা‌হিদা পূর‌নের জন্য অবশ্যই ছে‌লেটা‌কে অনেক প‌রিশ্রম কর‌তে হ‌বে। তো অতি‌রিক্ত প‌রিশ্রমে ছে‌লেটার মন থে‌কে প্রে‌মিক মনটা উঠে দা‌য়িত্বশীল স্বামীর মন হ‌য়ে যায়। যার কার‌নে বি‌য়ের পর ছে‌লেটা বি‌য়ের আগের মত মে‌য়েটা‌কে সময় দি‌তে পা‌রে না। যার ফ‌লে মে‌য়েটা ভা‌বে ছেলেটা‌ তা‌কে বি‌য়ের পর কম ভা‌লোবা‌সে। এখা‌নে ছে‌লেটা কিন্তু কম ভা‌লোবা‌সে না বরং সে তার ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে সুখী কর‌তে চায়। 

তারপর বি‌য়ের পর প‌রিবা‌রের লোক কেমন যে‌নো হ‌য়ে যায়। যে বাবা মা বি‌য়ের আগে ছে‌লের কাছ থে‌কে সংসার খরচ ছে‌লে দি‌তে চাই‌লেও নি‌তো না। কিন্তু বি‌য়ের পর প‌রিবার ছে‌লের উপর আরো বে‌শি প্রেসার দেয়। যার কার‌নে দুজ‌নের চা‌হিদা পূর‌ণের জন্য ছে‌লেটা‌কে আরো ক‌ঠোর প‌রিশ্রম ক‌র‌তে হয়। এদি‌কে লাভ ম্যা‌রে‌জে প‌রিবার তো এম‌নিও মে‌য়েটার সা‌থে তেমন ভা‌লোভা‌বে মি‌শে না আর ছে‌লে‌টি কা‌জের চা‌পে মে‌য়ে‌টি‌কে সময় দি‌তে পা‌রে না। ফ‌লে মে‌য়ে‌টি একাকি থাকে। আর এটা তো জানাও একা মানু‌ষের শূন্য ম‌স্তিষ্ক শয়তা‌নের আড্ডাখানা। তখন শয়তান তা‌র মন‌কে দখল ক‌রে আর মে‌য়ে‌টি ভাবে ছে‌লে‌টি কেন তা‌কে ছে‌লে‌টি আগের মত সময় দেয়না? হয়ত তা‌কে ভা‌লোলা‌গে না বা পরনারী‌তে আসক্ত হ‌য়ে পড়ছে আরো হ্যান ত্যান ভাবনা। 

‌কিন্তু স‌ত্যি বল‌তে একটা ছে‌লে যখন একটা মে‌য়ের দা‌য়িত্ব নেয় তখন সে তার সবটা দি‌য়ে মে‌য়েটা‌কে সুখী করার চেষ্টা ক‌রে। কিন্তু সেই সুখী করাটাই মে‌য়েটা‌কে দুঃখী ক‌রে দেয়। কারন একজন গার্ল‌ফ্রেন্ড এর ডিমান্ড অনেক থাক‌লেও একজন ওয়া‌ইফের ডিমান্ড শুধু তার স্বামীর থে‌কে কিছু সময়। 

‌কিন্তু ছে‌লেটা সে প‌রিবার, স্ত্রী আর ভ‌বিষ‌্যতের ভাবনায় টেন‌শ‌নে মাথার ভিতর যুদ্ধ শুরু ক‌রে দেয়। তারপর প‌রিবার স্ত্রীর দোষ ব‌লে আর স্ত্রী প‌রিবা‌রের দোষ ব‌লে তো মেন্টাল টর্চা‌রে বেচা‌রা আধা মেন্টাল হ‌য়ে যায়। যখন  টর্চার নি‌তে পা‌রে না তখন খুব রাগ ওঠে আর রাগ দেখায় মে‌য়েটার উপর। কারন প‌রিবা‌রের উপর তো রাগ দেখা‌নো সম্ভব নয় তাই মে‌য়েটার উপর রাগ করে। স‌ত্যি বল‌তে এদিক দি‌য়ে ছে‌লেরা বড় অসহায়। কারন আমরা মে‌য়েরা কষ্ট হ‌লে, স্ত্রী স্বামীর কা‌ছে আর মা ছে‌লের কা‌ছে বল‌তে পা‌রে কিন্তু একটা ছে‌লে তার ক‌ষ্টের কথাগু‌লো বলার মত কাউকে পায়না। তখন ভিত‌রে ভিত‌রে সে গুম‌রে মরে। 

জা‌নো ছে‌লেরা তার রাগটা তার স্ত্রীর উপর কেন দেখায়? কারন মানুষ রাগ বা ভা‌লোবাসা তা‌কেই দেখায় যা‌কে সে বন্ধু ভা‌বে। আর বি‌য়ের পর একটা ছে‌লে তার স্ত্রীর মা‌ঝে বন্ধুত্ব খোঁ‌জে কিন্তু আমরা মে‌য়েরা তার উপ‌রের রাগটা দে‌খে ভিতরটা পড়‌তে পা‌রি না। ফ‌লে আরো বে‌শি ঝগরা ক‌রি। যার কার‌নে সম্প‌র্কে ভাঙন হয়। আরো অনেক বিস্তা‌রিত আছে বল‌তে গে‌লে দু রাত পার হ‌য়ে যা‌বে। 

জা‌নো আয়াত সম্পর্ক কখ‌নো একার দা‌য়ি‌ত্বে সুন্দর হয়না। সম্পর্ক সুন্দর করার দা‌য়িত্ব দুজনার। মেয়েটা‌কে বুঝ‌তে হ‌বে আমার স্বামী যা কর‌ছে আমা‌দের সুন্দর ভ‌বিষ‌্য‌তের জন্য কর‌ছে। আর ছে‌লেটা‌কেও মে‌য়েটা‌কে একটু সময় দি‌য়ে ভা‌লোবাস‌তে হ‌বে। ত‌বেইনা হ‌বে হ্যা‌পি ম্যা‌রেড লাইফ। উক্ত ব্যাখ্যা শুধু লাভ ম্যা‌রে‌জের জন্য না, এরেঞ্জ ম্যা‌রে‌জের জন্যও। বুঝলা?

__বাপ‌রে আমার তানুপা‌খিটা কত কত জা‌নে। আমি তো এটা‌কে বাচ্চা ভে‌বে‌ছিলাম। কিন্তু এটা তো পুরাই জ্ঞা‌নের দা‌দি। 

__আ‌মি কী করলাম যা লেখার লে‌খিকা লিখ‌ছে আর তু‌মি যে জ্ঞা‌নের দা‌দি ডাকলা এটা লে‌খিকার হ্যাজবেন্ড এর ডায়লগ দিলা। হি হি হি

(আস‌লে লম্বা ব্যাখা শু‌নে বোর হ‌চ্ছি‌লেন তাই মজা করলাম। ;-) ;-)  চ‌লেন গ‌ল্পে যাই)

__আচ্ছা তনয়া যারা তোমার ব্যাখ্যার বিপরীত মা‌নে পরকীয়া করে তা‌দের কী বলবা?

__ওগু‌লো তো শয়তান, জা‌হিল, জা‌নোয়ার, ইতোর, বাদর, কুকুর, পৃ‌থিবীর সব থেকে নিকৃষ্ঠ জন্তু যারা নি‌জের হ্যাজ‌বেন্ড বা ওয়াইফ‌কে ধোকা দি‌য়ে প‌রকিয়ায় মা‌তে। ওদের কী কর‌তে হয় জানো? চৈত্র মা‌সের রো‌দে দশতলার ছা‌দে একটা চেয়ার পে‌তে চেয়া‌রে ব‌সি‌য়ে মাথায় বড় বর‌ফের গোলা চা‌পি‌য়ে চেয়া‌রের নি‌চে আগুন ধরি‌য়ে দি‌তে হয়। রো‌দে বরফ গল‌বে আর নিচ থে‌কে জ্বলবে।

__বাপ‌রে কী ভয়ংকর শা‌স্তি। 

__ঐ তু‌মি আমার সাম‌নে পরকীয়া নামক এই ফালতু ট‌পিকটা একদম উঠাবা না। চ‌লো দুপুরের রান্না কর‌তে হ‌বে। 

—————
৫৪!!

বিকালবেলা আয়াত তনয়ার হা‌তে মে‌হেদী দি‌য়ে দি‌চ্ছে তখন দরজার বেল বে‌জে উঠ‌লো।

__আয়াত! আবার পিঠ চুলকা‌চ্ছে।

__তনয়া তোমা‌কে মে‌হেদী দি‌তে বলাটাই ভুল হ‌য়ে‌ছে। (হা হা হা) মে‌হেদী দেয়ার পর থে‌কে কখ‌নো তোমার নাক চুলকায়, কখ‌নো গাল, কখ‌নো পেট, এখন আবার পিঠ।

__আমি তো এক হা‌তে দি‌তে চে‌য়ে‌ছিলা তু‌মি দু হা‌তে দি‌য়ে দি‌লে। দু হা‌তে দেয়ার পর এখন ম‌নে হ‌চ্ছে সারা শরী‌রে কোন পোকা হাঁট‌ছে। 

__হা হা হা। এটা শুধ‌ু তোমার না। যখনই দেখবা তোমার দু হাত কোন কা‌জে আট‌কে থাক‌বে তখনই সবার এমন হয়। নাও এবার হা ক‌রো। তা ম্যাডাম বল‌লেন না পা‌কোয়া কেমন হ‌য়ে‌ছে?

__অ‌নেক টে‌ষ্টি। বোঝায়ই যায় না তু‌মি আজ প্রথম বার বা‌নি‌য়েছো।

__আচ্ছা। আপ‌নিই কো শি‌খি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন ম্যাডাম। শুক‌রিয়া মহারানী।

__‌বে‌শি বে‌শি হ‌য়ে যা‌চ্ছে না।

__‌মো‌টেও না।

__আয়াত এখন হাত ধু‌য়ে ফে‌লি?

__না। আগে ঠিকমত মে‌হেদীর রঙ গা‌ড়ো হতে দাও। চুপচাপ ব‌সে থা‌কো। এই তু‌মি কী কখ‌নো স্থির থাক‌তে পা‌রো না?

__না পা‌রি না। আমার চুলটা বেঁ‌ধে দাও। বারবার চো‌খে পড়ছে।

__হায় আল্লাহ আজ তু‌মি আমার অবস্থা বা‌রোটা বা‌জি‌য়ে ছাড়‌বে। 
আয়াত তনয়ার চুলগু‌লো বেঁ‌ধে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে তনয়ার কা‌টে চু‌মো খে‌য়ে বলল। আমার অভিলাষী‌কে মে‌হেদীর র‌ঙে রাঙাবতী লা‌গে। তোমার হা‌তে মে‌হেদী বেশ মানায়। ভা‌লোবাসি রাঙাবতী। তনয়া একটা প্রশ্ন ক‌রি? 

__হুমম।

__তু‌মি পরকীয়া নামক কথাটা শুন‌লে রাগ কেন ক‌রো?

__রাগ না আয়াত! ঘৃণা লা‌গে খুব। একবার ভা‌বো নি‌জের হাজ‌বেন্ড ওয়াইফ থাক‌তেও পরনারী বা পরপুরু‌ষে আসক্ত কেন হ‌বে? য‌দি নি‌জের স্বামী বা ওয়াইফ‌কে ভা‌লো নাই লা‌গে বা তা‌দের মন মত না হয় ত‌বে ডি‌ভোর্স দি‌য়ে দি‌তে পা‌রে। এতে সেও সুখী হ‌বে আর তার হাজ‌বেন্ড বা ওয়াইফও সুখী হ‌বে। অন্তপ‌ক্ষে তারা নতুন ভা‌বে নি‌জে‌দের জীবন তো শুরু কর‌তে পার‌বে। রোজ রোজ ধোঁকার স্বীকার তো হ‌বে না। অনেকগু‌লো প‌রিবার আর জীবন বেঁচে যা‌বে। জা‌নো কত কত প‌রিবার এই পরকীয়া নামক নোংড়া‌মির কার‌নে ভে‌ঙে যায়। 

__হুম ঠিক বল‌ছো। আচ্ছা তনয়া আমার এমন কোন জি‌নিস বা অভ্যাস আছে যা তোমার পছন্দ নয়?

__হ্যাঁ।

__সেটা ব‌লো?

__অ‌তি‌রিক্ত প‌জে‌সিভ তু‌মি। 

__‌রি‌য়ে‌লি!

__ই‌য়েস। 

__‌কিভা‌বে?

__আবার জি‌জ্ঞেস ক‌রো কিভা‌বে? কোন ছে‌লে আমার সা‌থে বা আমি কোন ছে‌লের সা‌থে কথা বল‌লে বা হাত মিলা‌লে, তোম‌ার চোখ মুখ কেমন হয় দেখ‌ছো কখ‌নো! রা‌গে পু‌রো বেলু‌নের মত ভু‌লে যাও। ম‌নে নেই দীপুর সা‌থে হাত মিলা‌নোর পর কেমন কর‌ছিলা? বাপ‌রে! তোমার সেই কান্ড করার পর আমি ছে‌লে‌দের থে‌কে যথাসম্ভব দূ‌রে থা‌কি।

__‌সেটা তো দীপু তোমা‌কে নোংড়া নজ‌ড়ে দেখ‌তো ব‌লে।তোমার বন্ধু‌দের সা‌থে কথা বল‌লে তো কিছু ব‌লি না। 

__হ্যাঁ ব‌লো না ত‌বে তারা আমার হাত ধর‌লে বা দুষ্ট‌মি ক‌রে গা‌য়ে হাত দি‌লে তখন যে তোমার প্রচন্ড রাগ হয় সেটা আমি বুঝ‌তে পা‌রি। 

__‌তো রাগ হবে না কেন? বললাম তোমার পা থে‌কে মাথা পর্যন্ত পু‌রোটাই শুধু আমার। কেন তনয়া আমার অতি‌রিক্ত প‌জি‌সিভ হওয়া‌তে বু‌ঝি তু‌মি কষ্ট পাও? তাহ‌লে আমার প‌জেসিভ হওয়া কমা‌নোর চেষ্টা কর‌বো। আস‌লে তোমার আশে পা‌শে কোন ছে‌লে দেখ‌লে আমার মাথা ঠিক থা‌কে না। তখন তোমার উপর খুব রাগ ক‌রি।

__আরে কী ব‌লো? ইনফ্যাক্ট আমার কা‌ছে আরো ভা‌লো লা‌গে। কারন কী জা‌নো?

__কী?

__কারন আমি তখন বুঝতে পা‌রি তু‌মি পু‌রোটাই আমার। আর আমা‌কে বে‌শি ভা‌লোবা‌সো ব‌লেই তো তোমার রাগ হয়। স‌ত্যি বল‌তে মে‌য়েরা তোমার মত প‌জি‌সিভ হাজ‌বেন্ড ‌বে‌শি পছন্দ ক‌রে। যে রাগও দেখা‌বে অনেক ভা‌লোবাস‌বে। হি হি।

__পাগলী একটা আমার। আমি প‌জে‌সিভ কিন্তু স‌ন্দেহবাদী নয়। তোমায় ভা‌লোবা‌সি ব‌লে তোমার পা‌শে অামি ব্যাতীত অন্য কাউ‌কে চিন্তাও কর‌তে পা‌রি না। রাগ হয় খুব। ত‌বে তোমায় অনেক বিশ্বাস ক‌রি পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সি। জা‌নি আমার অভিলাষী এমন কিছু কর‌বে না যা‌তে আমা‌দের বিশ্বাস ভা‌ঙে।

__হ্যাঁ আয়াত জা‌নি‌ তো। তু‌মি তো আমার আয়াত। তাই।

আয়াত তনয়াকে অনেকগু‌লো ভা‌লোবাসার পরশ দি‌য়ে বলল,
__ম্যাডাম তনয়া আপ‌নি চা খা‌বেন?

__হুমম খে‌তে পা‌রি ত‌বে দুজন এক ম‌গে। 

__ও‌কে বসো নি‌য়ে আসছি। 

আয়াত রান্না ঘ‌রে যাবে তখন দরজার বেল ‌বে‌জে উঠ‌লো। আয়াত দরজা অল্প একট‌ু খু‌লে দেখ‌লো তানভী। তানভীকে দে‌খে আয়াত দড়জা খু‌লে বলল,
__আ‌রে শালাবাবু যে, আসেন আসেন। তা কেমন চ‌লে দিনকাল?

__ভালো ভাইয়া আপনার?

__ভ‌লো। আর আপ‌নি খুব ভা‌লো সময় এসে‌ছেন, আপনার বো‌নের জন্য চা বা‌না‌চ্ছিলাম। এখন চা আপ‌নি বানা‌বেন!

__আ‌রে ভাইয়া আস‌তেই কা‌জে লা‌গি‌য়ে দিলা?

__‌তোর বোন হা‌তে মে‌হেদী দি‌য়ে ব‌সে আছে। কতক্ষন যাবত বড্ড জ্বালা‌চ্ছে। আমা‌কে দি‌য়ে পা‌কোরাও বা‌নি‌য়ে‌ছে তাই এবার আমি তো‌কে জ্বালা‌বো। তনয়া‌কে তো কিছু বল‌তে পা‌রি না। তাই তো‌কে জ্বালা‌বো।

__তানভী হা হা ক‌রে হে‌সে বলল, ঠিক আছে। ত‌বে বাই‌রে আরো লোক আছে। সবার জন্যই তো নাস্তা বানা‌তে হ‌বে। 

__কারা?

আয়াত দরজা পু‌রোটা খুল‌তেই ভূত দেখার মত চম‌কে উঠ‌লো। কারন আয়াত বাবা, আর তনয়া বাবা মা, তান‌ভির, তা‌মিম, লা‌বিবা, মেঘা, আয়াজ, তৃ‌প্তি। আয়াত চোখ কচ‌লে আবার সাম‌নে তাকা‌লো। নাহ ভুল দেখ‌ছে না। আয়াত তা‌দের সালাম দি‌য়ে খুব বিন‌য়ের সা‌থে ভিত‌রে আস‌তে বলল। 

তারা ভিত‌রে আস‌ছে। তার আগে তানভী তনয়ার কা‌ছে গিয়ে বলল, 
__কী‌রে হাতে মে‌হেদী কেন লা‌গি‌য়ে‌ছিস?

__আয়াত দি‌য়ে দি‌ছে।

__ওহ। তোর ঐ হনুমান বরটা মে‌হেদী লাগা‌তেও জা‌নে?

__খবরদ‌ার তানভী আয়া‌তকে এসব বল‌বি না।

__আহা গা‌য়ে লাগ‌ছে। তা কী খা‌চ্ছিস?

__পা‌কোরা, আয়াত বা‌নি‌য়ে‌ছে। খে‌য়ে দেখ ভিষন টে‌ষ্টি। 

আয়াত তনয়ার সাম‌নে এসে বলল, প‌রে খে‌য়ো আগে পিছ‌নে তা‌কি‌য়ে দে‌খো। তনয়া দা‌ড়ি‌য়ে পিছ‌নে তাকা‌তেই চোখ বড় বড় ক‌রে ফেল‌লো। ভ‌য়ে কপা‌লে বিন্দু বিন্দু ঘাম জম‌ছি‌লো। ধী‌রে ধী‌রে আয়াতের পিছ‌নে লু‌কি‌য়ে গে‌লো। তনয়ার বাবা অবাক হ‌লো, কারন মে‌য়েরা ভয় পে‌লে বাবার কা‌ছে এসে লুকায়। এখা‌নে তার মে‌য়ে তা‌কে ভয় পে‌য়ে হাজ‌বেন্ড এর পিছ‌নে লুকা‌চ্ছে। বিষয়টা একজন বাবার জন্য সুখ দুঃখ মি‌শ্রিত। দুঃখ কারন বাবা তার মে‌য়ের এতটা ভরসা হ‌য়ে উঠ‌তে পা‌রে‌নি হয়ত, আর সুখের কারন তার মে‌য়ে এমন একজন‌কে পে‌য়ে‌ছে যা‌কে সে চোখ বন্ধ ক‌রে বিশ্বাস কর‌তে পা‌রে। আয়াত তনয়া‌কে সাম‌নে দাড় ক‌রি‌য়ে দি‌লো। তনয়া মাথা নিচু ক‌রে চুপ ক‌রে রইল। 

তনয়া বা তনয়ার বাবা কেউ কোন কথা বল‌ছে না। সবাই নিশ্চুপ। আয়াত সবাই‌কে বস‌তে ব‌লে, তনয়া‌কে বে‌সি‌নের সাম‌নে নি‌য়ে এসে মে‌হেদী তু‌লে হাত ধুয়ে দি‌য়ে বলল,
__বাবার সা‌থে কথা কেন বল‌ছো না?

__ভয় কর‌ছে। 

__পাগলী তোমার বাবা হয়। তোমা‌কে খে‌য়ে ফেল‌বে না। যাও কথা ব‌লো?

__য‌দি আবার বকা দেয়?

__এবার বকা দি‌বে না। আমি আছি তো। চ‌লো। 
আয়াত তনয়ার হাত ধ‌রে তা‌দের সাম‌নে নিয়ে গে‌লো। তনয়া মাথা নিচু ক‌রে রইল। আয়াত হালকা ধাক্কা দি‌য়ে বলল, কী হ‌লো কথা ব‌লো!
তনয়া ওর বাবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, 

__‌কেমন আছো বাবা?

__তনয়ার বাবা মাথা নিচু ক‌রে বলল, ভা‌লো। তুই?

__ভা‌লো। 

তারপর আবার সবাই চুপ। প‌রি‌বেশটা বেশ থমথ‌মে, আয়াত বিষয়টা বুঝ‌তে পে‌রে স্বাভা‌বিক করার জন্য তৃ‌প্তি‌কে বলল,
__তৃ‌প্তি আম্মু কেমন আছো?

__ভা‌লো আং‌তেল। তৃ‌প্তি আয়া‌তের কা‌ছে এসে বলল, আং‌তেল অাং‌তেল ইতু, ইতুন আর তুতন তোতায়? ওদেল আমি তুব মিস ক‌রি। 
তনয়া বিড়াল তিনটা‌তে ধ‌রে এনে তৃ‌প্তির কা‌ছে দি‌লো। তৃ‌প্তি সে দি‌ব্বি বিড়াল নি‌য়ে ছোটছু‌টি‌তে মে‌তে উঠ‌ছে। বা‌কি সবাই টুকটাক কথা বল‌ছে। তনয়া রান্না ঘ‌রে গে‌লো, সবার জন্য নাস্তা ব‌ানা‌তে আয়াত সা‌থে গে‌লো কিন্তু লা‌বিবা এসে বলল, 

__আয়াত ভাইয়া! সবসময় তো বৌ এর হেল্প ক‌রেন এবার নাহয় আমি ক‌রি। এম‌নি আপনারা আমার হক নষ্ট কর‌ছেন?

__‌কিভা‌বে ভা‌বি? (আয়াত)

__আ‌রে বি‌য়ের পর ননদ‌কে ভা‌বি সব শি‌খি‌য়ে দেয়। নন‌দের বরের কাছ থে‌কে নাঈয়ো‌রি‌তে মোটা অং‌কের সালা‌মি নেয় আমি তো কিছ‌ুই পেলাম না। আপনারা নি‌জেরা একা একাই সব কাজ শেষ কর‌লেন!

__আয়াত দুষ্ট‌মি ক‌রে বলল, ঠিক আছে আজ‌কে ক‌রে দিন এম‌নি‌তেও ক‌দিন যাবত আপনার ননদ দি‌চ্ছে না।

__‌কেন ভাই হরতাল চল‌ছে না‌কি?

__‌জি, আপ‌নি নাহয় আজ হরতালের অবসান ঘ‌টি‌য়ে দিন। মোটা অং‌কের ঘুষ দি‌বো গ্যারা‌ন্টি। 

__ভাবি! এই তোমরা দুজন এসব কী বল‌ছো? উল্টা পাল্টা কথা! লজ্জা ক‌রে না। (তনয়া)

__লা‌বিবা তনয়া‌কে ধমক দি‌য়ে বলল, তুই চুপ কর। ওনারা উল্টা পাল্টা কর‌তে পার‌বে আমি বল‌তে পার‌বো না। 

__‌তোমরা ব‌লো আমি গেলাম। (তনয়া)

আয়াত তনয়ার হাত ধ‌রে থা‌মি‌য়ে, পিছন দি‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, কোথায় যা‌চ্ছো জানপা‌খি! যা লজ্জা পাবার ভা‌বির সাম‌নে পাও। লা‌বিবা হে‌সে বলল,
__আপ‌নি ভাই বড্ড পা‌জি। 

__ভা‌বি ছে‌লেরা পা‌জি না হ‌লে তখন আবার আপনা‌দেরই প্রব‌লেম হ‌বে। হা হা হা। 

__যাক এমনই থাকুন দোয়া ক‌রি। আমাদের পাগলীটা‌কে খুব ভা‌লোবাসুন। 

__আমিও তো ভা‌লোবাস‌তে চাই কিন্তু আপনার ননদ দেয়না।

__‌‌তো নি‌জে আদায় ক‌রে নি‌বেন। 

আজ লা‌বিবার চো‌খে মু‌খে আলাদা সুখী সুখী ভাব। তনয়া আয়াত বুঝতে পার‌ছে তান‌ভির আর তার ম‌ধ্যে সব‌কিছু ঠিক হ‌য়ে গে‌ছে। আয়াত বলল,
__ভা‌বি একটা কথা বলুন, আমার বাবা আপনা‌দের সা‌থে কী ক‌রে আস‌লো?

__‌সে‌কি আমরা তো আপদের বা‌ড়ি থে‌কে এখা‌নে এলাম। 

আয়াত তনয়া দুজ‌নেই অবাক হ‌য়ে বলল,
__কী ব‌লেন?

__হ্যাঁ। বাবাই আপনা‌দের বা‌ড়ি নি‌য়ে গে‌ছি‌লো। আপনা‌দের প‌রিবা‌রের সবার সা‌থে মিট করলাম কিন্তু আপনার মা ছি‌লো না।

__হ্যাঁ মা গতকাল অামার খালা বা‌ড়ি গে‌ছে। সপ্তাহ খা‌নিক পর আস‌বে। (আয়াত)

__হ্যাঁ। আপনার বাবা বল‌ছে। তার সা‌থে আমার শ্বশুর আপনা‌দের বিষ‌য়ে কথা বলল।

__আম‌া‌দের বিষ‌য়ে? কী কথা ভা‌বি? (তনয়া)

__‌তো‌দের আবার আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে বি‌য়ে দি‌বে মা‌নে বড় রি‌সিপশ‌নের ব্যবস্থা কর‌বে। বাবা বল‌ছে তার একমাত্র মে‌য়ের বি‌য়ে এমন ভা‌বে অনুষ্ঠান কর‌বে যা‌তে সবার তাক লে‌গে যায়। (লা‌বিবা)

__কী বল‌ছো কী ভা‌বি? বাবা মা‌নে আমি তো কিছুই বুঝ‌তে পার‌ছি না।

__হ্যাঁরে পাগলী। বাবা এখা‌নে তোর সা‌থে সব ঠিক কর‌তে আস‌ছে। কিন্তু তুই তো বাবার সা‌থে কথাই বল‌ছিস না। 

__আ‌মি তো ভ‌য়ে।

__‌দেখ‌ছো আমি বললাম তোমা‌কে কথা বল‌তে। শোন তানুপা‌খি তোমার বাবা সে বড় তাই তার ভিতর আত্মসম্মান বোধটাও বে‌শি। আর সব থে‌কে বড় কথা বাবারা কখ‌নো সন্তা‌নের কা‌ছে ক্ষমা চায় না, সে ভুল বাবা‌দের হোক না কেন! বাবারা তো বড় তাই না পা‌খিটা। একটু বোঝার চেষ্টা ক‌রো। তু‌মি আরেকবার স্য‌রি বলো দেখবা বাবা সব ভু‌লে তোমায় ক্ষমা ক‌রে দি‌বে। (আয়াত)

__স‌ত্যি তো?

__হুমম। চ‌লো। 

আয়াত তনয়া‌কে নি‌য়ে গি‌য়ে ওর বাবার পা‌শে বসা‌লো। তনয়া মাথা নিচু ক‌রে বলল,
__বাবা মাফ ক‌রে দাওনা এবার!

তা‌লিব মাহমুদ তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
__কখ‌নো কখ‌নো বাবারাও ভুল ক‌রে। সন্তানরা কী তা‌দের মাফ ক‌রে দি‌তে পা‌রে না! আমাকেও মাফ ক‌রে দে মা।

তনয়া ওর বাবার হাত ধ‌রে বলল,
__না বাবা অন্যায় আমি করে‌ছি বা‌ড়ি ভ‌র্তি লোক জ‌নের ম‌ধ্যে থে‌কে পা‌লি‌য়ে এসে তোমার সম্মান হা‌নি ক‌রেছি। 

__আ‌মি তো‌কে বুঝ‌তে চেষ্টা কর‌লে, তোর আর পালাতে হ‌তো ন‌া। 

বাবা মে‌য়ে দুজন দুজ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কাঁদ‌ছে। আর বা‌কি সব‌াই খুশি‌তে ‌মি‌ষ্টি মি‌ষ্টি হাস‌ছে। একটা সম্প‌র্কে দীর্ঘ তিক্ততার পর ঠিক যেমন মধুরতা আসে ঠিক তেমন।

সবাই মি‌লে এটা ঠিক কর‌লো সাম‌নের মা‌সে বি‌য়ের তা‌রিখ ঠিক কর‌বে। যে‌হেতু আয়া‌তের মা উপ‌স্থিত নেই তাই দিনক্ষন তা‌র সা‌থে ব‌সে ঠিক কর‌বে। আর তাছাড়া আয়াত বা তনয়ার বাবা দুজ‌নেই এ মা‌সে ব্যস্ত। কিন্তু আগামীকাল আয়াত তনয়া তা‌দের বাসায় বেড়া‌তে যা‌বে। তনয়ার বাবা তনয়াকে একবা‌রে মা‌নে বি‌য়ের আগ পর্যন্ত তার কা‌ছে থাক‌বে ভে‌বে নি‌য়ে যে‌তে চাই‌ছি‌লো কিন্তু আয়াত প‌লি‌টিকস ক‌রে সেটা ঘু‌রি‌য়ে দি‌লো।
আয়া‌তের বাবা বলল, আপাতত ওদের দুজন‌কে  নি‌জে‌দের মত ক‌রে সময় দি। এক মাস সবসময় আমাদের সাথে ওরা যোগা‌যোগ কর‌বে যাওয়া আসা কর‌বে। এতে দু প‌রিব‌ারের ব‌ন্ডিং হিসা‌বে ওরা দুজন সু‌তো হ‌বে। তাছাড়া এক প‌রিবার থে‌কে আরেক প‌রিবা‌রে শিফট হ‌তে গে‌লে নি‌জে‌দের ভিতর কিছু বোঝাপারা দরকার তাছাড়া ওরা যে‌হেতু স্বামী স্ত্রী তো ওদের দুজন‌কে প্রাই‌ভে‌সি দেয়া হোক। বা‌কিটা ধীরে ধীরে সবাই মি‌লে ঠিক কর‌বো। 
সবাই তার কথায় সহমত হলো।

সবাই কথা বল‌ছে তখন আয়া‌তের বাবা এসে বলল, 
__‌তোরমত বদ ছে‌লে জীব‌নে দে‌খি‌নি।

__কী করলাম?

__হারামজাদা নি‌জের বাব‌া‌কে ব্ল্যাকমেইল ক‌রে আবার ব‌লিস কী করল‌াম! তখন কী বল‌লি? তনয়া‌কে যে‌নো ওর বাবা দেড় মা‌সের জন্য নি‌য়ে না যায়। আমি যেভা‌বে হোক আটকা‌বো, নয়ত 

__নয়ত তু‌মি যে রং নাম্বারে একটা আন্টির সা‌থে ফ্লা‌টিং কর‌ছিলা সেটা মা‌কে ব‌লে দি‌বো। য‌দিও রং নাম্বারে কথা আমি বল‌ছিলাম। কিন্তু সেটা আমি জা‌নি, তু‌মি জা‌নো মা‌ তো জা‌নে না। হি হি

__এ জন্যই তো‌কে বদ বললাম। 

__‌নি‌জের আপন ছে‌লের জন্য এতটু‌কো কর‌তে পার‌বে না। জা‌নো বাবা একটা বিষয় নি‌য়ে খুব টেনশ‌নে আছি।

__কী?

__ আচ্ছা বাবা মাকে কিভা‌বে মানা‌বো?

__ভাব‌তে দে। সব শুধু বাবার ঘা‌ড়ে চা‌পি‌য়ে দিস। 

__এ জন্যই তো তু‌মি পৃ‌থিবীর সেরা বাবা। তু‌মি তো আমার বন্ধু। আই লাভ ইউ।

__হ‌য়েছে হ‌য়ে‌ছে আর মাখন দি‌তে হ‌বে না। এখন চল পা‌জি ছে‌লে। সবার কা‌ছে চল। 

সবাই আরো কিছুক্ষন গল্প ক‌রে সন্ধ্যার পর চ‌লে গে‌লো।  আয়াতনয়া তা‌দের খে‌য়ে যে‌তে বল‌ছি‌লো কিন্তু তারা বল‌লো প‌রে এক‌দিন খা‌বে। তনয়া আজ ভিষন খু‌শি ওর তো আজই বা‌ড়ি যে‌তে মন চাই‌ছি‌লো। কিন্তু আয়াত প্রথমবার শ্বশুরবা‌ড়ি যা‌বে তো একটা প্রিপা‌রেশ‌নের ব্যাপার আছে। তাই কাল বিকা‌লে যা‌বে। ক‌দিন সেখা‌নে থাক‌বে। তনয়া শুধু কাল‌কের অপেক্ষা কর‌ছে। কতমাস পর কাল নি‌জের বা‌ড়ি যা‌বে। ভাব‌তেই খু‌শি‌তে মনটা নে‌চে উঠ‌ছে ওর। সবাই চ‌লে যে‌তেই তনয়া দরজা লক ক‌রে আয়া‌তের বু‌কে ঝা‌ঁপি‌য়ে পড়‌লো। 

আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, 
__Thank ,u thank u, thank u, thank u. তু‌মি জা‌নো না, আয়াত তু‌মি আমায় ঠিক কতটা খু‌শি দি‌য়েছো। 

__আ‌মি কী ক‌রে‌ছি?

__ঠঙ ক‌রো না। আমি জা‌নি এ কাজ তু‌মি ছাড়া কেউ ক‌রে‌নি। আয়াত খু‌শিতে আমার পু‌রো শরীর কাঁপছে একটু শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে রা‌খো না প্লিজ। একটু শান্তে ক‌রে দাও তো! সব কিছু অবিশ্বাস্য লাগ‌ছে।

আয়াত তনয়া‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌জের বাহু ডো‌রে আবদ্ধ ক‌রে ফেলল। নি‌জের গরম নিশ্বা‌সে তনয়ার নিশ্বাসটা আবদ্ধ করে ফেল‌লো। এভা‌বে অনেকক্ষন থাকার পর আয়াত বলল, 
__ম্যাডাম অনেক কাজ প‌ড়ে আছে। চলুন ঘরটা গু‌ছি‌য়ে ফে‌লি। 

তনয়া চোখ বন্ধ ক‌রে আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রেই রইল। কান্না পা‌চ্ছে খুব। চোখ থে‌কে দরদর ক‌রে জলকণা বে‌ঁয়ে আয়া‌তের শা‌র্টে মি‌লিয়ে যা‌চ্ছে। তনয়া কাঁদ‌ছে আর ভাব‌ছে এমন একটা মানুষ, যে ওকে পাগ‌লের মত ভালোবা‌সে, ওর সব দুঃখগু‌লো‌কে একটু একটু করে দূর ক‌রে দি‌চ্ছে, প্র‌তি নিয়ত ভা‌লোবাসার নতুন নতুন রঙ দেখা‌চ্ছে। এ মানুষটা‌র হা‌তে নি‌জের জীবনটা র্নিভ‌য়ে তু‌লে দেয়া যায়। না আয়াত‌কে কোন ভা‌বেই কষ্ট দি‌বো না। ও আমায় যতটা ভা‌লোবাসা দি‌য়ে‌ছে তার থে‌কেও বে‌শি ওকে দি‌বো। ভা‌লোবা‌সি আয়াত খুব ভা‌লোবা‌সি। আয়াত‌কে ভা‌লোবা‌সি কথাটা তনয়া প্র‌তি মুহূ‌র্তে ম‌নে ম‌নে ব‌লে কিন্তু শব্দ হ‌য়ে বের কর‌তে পার‌ে না। একটা খুব বি‌শেষ মুহূ‌র্তের অপেক্ষায় আছে।

নি‌জের শা‌র্টে তরল কিছু অনুভব ক‌রে আয়াত তনয়ার মুখটা উঁচু কর‌লো। তনয়া কাঁদ‌ছে আর কান্নার কারনটাও আয়াত জা‌নে। তনয়া চোখ বন্ধ করেই আয়া‌তের পা‌য়ের উপর নি‌জের পা তু‌লে আয়াতের গলা জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে উঁচু হ‌য়ে আয়া‌তের ঠোঁ‌টের ঠিক কা‌ছে নি‌জের ঠোঁট জোড়া নি‌য়ে গে‌লো। আয়াত তনয়া‌কে সামলাতে ওকে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। দুজনার নিশ্বাস এতটা কা‌ছে যে, দুজন দুজনের নিশ্বা‌সের শব্দ শুনে গুন‌তে পার‌ছি‌লো। তনয়া অধির হ‌য়ে আয়া‌তের স্প‌র্শের অপেক্ষা কর‌ছে। আয়াত মুচ‌কি হে‌সে তনয়ার অপেক্ষার অবসান ঘট‌লো। 

‌সে রা‌তে তনয়া তার পু‌রোটা ভা‌লোবাসা আয়া‌তের মা‌ঝে লু‌টি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি‌লো। সমার্পন ক‌রে‌ছি‌লো নি‌জের আত্মাটা‌কে। নি‌জে‌কে হা‌রি‌য়ে ওরা দুজন দুজনা‌তে সমা‌র্পিত হ‌য়ে‌ছি‌লো। ভা‌লোবাসার নতুন দু‌নিয়ায় বিরাজ ক‌রে‌ছি‌লো দুজন। 

৫৫!!

       প‌রের দিন বিকা‌লে আয়াত নতুন জামা‌য়ের মতই শ্বশুর বা‌ড়ি গে‌লো।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।