প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ১০ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


রাতের দুটো বাজছে৷তন্ময়কে শাহজাহান বাড়িতে দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় উপস্থিত সকলেই৷ তাকে দেখে সবাই খুশি হবে নাকি চিন্তা করবে বুঝে উঠতে পারছে না৷ মোস্তফা সাহেব ড্রয়িংরুমের চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে এলেন৷ সাথে দৌড়ে এসেছে অরুও৷ দীপ্তর ' তন্ময় ভাইয়া ' চেঁচানো শুনে অরুর ঘুম ভেঙে গিয়েছে৷ সে আপাতত ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তন্ময়ের দিক৷ সুমিতা বেগম এবং মুফতি বেগম কি রেখে কি করবেন দিশে পাচ্ছেন না খুঁজে৷ রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি বসিয়ে দিয়েছেন দ্রুত৷ তন্ময় এসেই হাতের সব ডক্যুমেন্টস পেপার্স টি-টেবিলে ছুঁড়ে মারল৷ মোস্তফা সাহেব তখন টি-টেবিলের সামনেই৷ এসব ডক্যুমেন্টস দেখে তিনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন৷ ছেলে তার নিশ্চয়ই কোম্পানির আপ-ডাউন সম্পর্কে জেনেছে। শান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসলেন৷ ছেলের চোখে চোখ না রেখে বললেন, 
- বিজনেস নদীতে ভেসে যাক৷ তাতে তোমার কী? তোমার তো কিছু না! বাবার অল্পকিছু কথাতেই রেগে কোম্পানি ছেড়েছ৷ তোমার মা আমার কিছু কথায় ঘরবাড়ি ছেড়েছে৷ ভালো কথা! এখন কোম্পানি ভেসে যাক, ঘরবাড়ি উড়ে যাক৷ 
তন্ময় উলটোদিকের সোফায় বসেছে৷ ডক্যুমেন্টস গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোস্তফা সাহেবের দিক এগিয়ে দিয়ে বলল,
- দাদার একটা কথায় তুমি শহর ছেড়েছিলে৷ আমিতো শুধুমাত্র কোম্পানি ছেড়েছি৷ 
- এখন তুমিও কী শহর ছাড়তে চাচ্ছ নাকি? 
- আমার বাবার মতো অতটা চাইল্ডিশ আমি নই৷ 
আনোয়ার সাহেব মুখ চেপে হেসে উঠলেন৷ মোস্তফা সাহেব চোখ রাঙাতেই চেহারা শক্তপোক্ত করার মিথ্যে চেষ্টা করলেন৷ তন্ময় বলল,
- যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলেছ৷ যোগ্যতা প্রমাণ করে দিলাম৷ তোমার টাকাপয়সা, দামী গাড়ি ব্যবহার না করে চলতে পেরেছি ৷ অন্যের কোম্পানিতে চাকরিও করতে পেরেছি৷ 
তারপর ডক্যুমেন্টের ফ্রোন্ট পেইজ মেলে দিয়ে পুনরায় বলল, 
- এসব কিছুর লিস্ট আমার চাই৷ গতকালেরর মধ্যে উল্লেখ্য সবগুলো কর্মচারীকে ডিসমিস করে দিবে৷ একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং বসাবে, বাকি কথা আমি কালই বলবো৷ শুভ রাত্রি! 
তন্ময় উঠে চলে যাচ্ছে৷ সুমিতা বেগম পিছু 
ডাকল, 
- তন্ময়! 
- মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক্ষুনি ফিরতে হবে চাচী! 
তন্ময় বেরিয়ে গেল৷ মোস্তফা সাহেব তখনো বসে৷ ডক্যুমেন্টসের দিক তাকিয়ে৷ ওহী সাহেব ভাইয়ের পাশে বসলেন। বড়ো ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখতেই, মোস্তফা সাহেবের কাঁধ কাঁপা উপলব্ধি করতে পারলেন৷ মোস্তফা সাহেব তখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, ছেলের কথাগুলো। ছেলের এসব কথাবার্তা বা কাজ একটা দিকে ইশারা করছে, তার ছেলে কাল থেকে নিজেদের কোম্পানিতে ফিরে আসবে৷ ওহী সাহেব হাসিমুখে বললেন, 
- আমি ফ্ল্যাটের লোকেশন দিয়ে, তন্ময়ের ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি গাড়ির চাবি নিয়ে সকালে পৌঁছে যেতে? 
মোস্তফা সাহেব মাথা দোলালেন৷ আনোয়ার সাহেব বললেন, 
- এইভাবে একদিন বাড়িতেও ফিরে আসবে ভাই৷ আপনি চিন্তা করবেন না৷ 
মোস্তফা সাহেব তো তাই চান৷ সেদিনের ভুলের মাসুল তো দুবছর ধরে গুনছেন৷ আর কতো? আর পারছেন না তিনি৷ ছেলে, স্ত্রী ফিরে আসুক, আপাতত শুধু এটাই তার চাওয়া৷ 

অরু তখনো দরজার দিক তাকিয়ে৷ ভ্যালেন্টাইন্সের সুন্দরতম তার তন্ময় বেশিদিন টিকলো না, আহারে!কয়েকদিন আগে আবেগে আপ্লূত হয়ে কল দিয়েছিল বলে খুব বড়সড় ধমক খেয়েছে তন্ময় থেকে৷ ধমকে ধমকে অরুকে শেষ করে দিয়েছিল। অভিমানে সে আজ দুদিন তন্ময়কে কল দেয়নি৷ কিন্তু তিনদিনের বেলায় ঠিকই কল দিয়ে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে ফেলল৷ 
- একটু কথা বললে কী হয়? 
- অনেক কিছু হয়৷ 
- যখন মেয়ে ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলেন, তখন কেন কিছু হয়না!
- কারণ তারা মেয়ে ফ্রেন্ডস৷ 
- আপনার কাছে কার গুরুত্ব বেশি? 
- আপাতত কাজের গুরুত্ব বেশি৷ ফোন রাখ৷ 
- আমারও তো পড়াশোনা আছে৷ আমি আমার পড়াশোনা থেকে আপনাকে বেশি গুরুত্ব দেই৷ 
- দে না করেছে কে! 
- তাহলে আপনি আমাকে কেন গুরুত্ব দেন না! আমি একাই কেন আপনার এতো গুরুত্ব দেই! আপনাকে নিয়ে এতো ভাবি কেন! আপনি আমাকে একটুও পছন্দ করেন না৷ আমাকে নিয়ে একটুও ভাবেন না৷
অরু নিজের কন্নার শব্দে তন্ময়ের মিষ্টি হাসির শব্দ মিস করে গেল৷ সে শুধু শুনল, 
- ফোন রাখ৷ 
তন্ময় যেমন অরুর কান্নাকাটি শুনেনা৷ তেমন ভঙ্গিতে কল কেটে দিল৷ তারপর মাসখানেকের মধ্যে কলেজ পোগ্রাম শুরু হয় অরুর৷ প্রোগ্রাম শেষ করেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের টেস্ট শুরু হয়ে গিয়েছে তার৷ পড়াশোনার চিন্তাভাবনা মাথায় গেঁথে আছে দেখে, তন্ময়ের চিন্তাভাবনা নিতে পারছেনা৷ তাই ডিসিশন নিয়েছে কিছুদিন তন্ময়কে কল, ম্যাসেজ করে বিরক্ত করবেনা৷ এভাবেও সে খেতে নিলে বা পড়াশোনায় ডুবলে পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যায়৷ এমনকি তন্ময়কেও৷ কাল অরুর হায়ারম্যাথমেটিকসের এক্সাম৷ সন্ধ্যায় বইখাতা নিয়ে দৌড় লাগিয়েছে তন্ময়ের বাসায়৷ কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে৷ আসায় আছে জবেদা বেগম দরজা খুলে দিবে৷ কিন্তু তার সামনে স্বয়ং তন্ময় দাঁড়িয়েছে৷ তন্ময়কে দেখে অরু অবাক হলো বটে৷ কিন্তু তার অবাক হওয়ার সময় নেই৷ সে তন্ময়কে সরিয়ে গটগট করে ঢুকে গেল ভেতরে৷ টেবিলে বইখাতা বিছিয়ে বসে পড়ল৷ যেসব ম্যাথ সে বুঝতে পারছেনা খোলাখুলি তুলে ধরলো তন্ময়ের সামনে৷ কিন্তু তন্ময়ের জবাব নেই৷ জবাব নেই কেন? অরু চিন্তিত ভাবে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল৷ তন্ময় বুকে দুহাত পেঁচিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে৷ অরু ডাকল, 
- ভাইয়া? 
তন্ময়ের কাঁটা গায়ে যেমন নুনের ছিঁটে লাগলো৷ ছ্যাত করে উঠে অরুকে চোখ রাঙিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল৷ আশ্চর্য! অরু বই হাতে তার পিছু ছুটেছে৷ দ্রুত ছুটতে গিয়ে পিছলে পড়তে নিয়ে, পেছন থেকে তন্ময়ের টি-শার্ট টেনে ধরলো৷ ছিঁড়ে যাবার মতো শব্দ হলো মুহুর্তেই৷ অরু দ্রুত ছেড়ে দিলো টি-শার্ট৷ বোকার মতো চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ ছেঁড়া টি-শার্ট পরিহিত তন্ময় অরুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ মুখের সামনে ঝুকে প্রশ্ন করলো, 
- আমাকে ফ্রী পেয়েছিস? 
- না তো! 
- যখন তখন আমার কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলিস, ভিজিয়ে দিস৷ এখানে সেখানে ধরিস৷ সেইম টু সেইম আমি করলে কেমন হবে? 
- শোধবোধ হবে৷ আমি কি পানি নিয়ে আসবো? 
তন্ময় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চলে গেল৷ অরু আশেপাশে নজর বুলিয়ে খেয়াল করলো জবেদা বেগম কোথাও নেই৷ অরু উচ্চস্বরে ডাকতে 
লাগলো, 
- বড়ো মা? ওই বড়ো মা! 
জবাব না পেয়ে, অরু ভয় পেয়ে বলল,  
- বড়ো মা কোথায়? দেখছি না কেন? বাইরে গেছে বুঝি? 
তন্ময়ের জবাব নেই৷ অরুর একটু খটকা লাগলো৷ তন্ময়ের নিশ্চয়ই মেজাজ ভালো নেই৷ রেগে আছে লোকটা৷ রেগে থাকলেই এমন নিশ্চুপ থাকে এবং জবাব দেয়না। অরু সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ৷ অনেকগুলো ইম্পর্ট্যান্ট ম্যাথম্যাটিকস বুঝতে পারছেনা। ভেবেছে তন্ময় থেকে বুঝবে তাই বাসার শিক্ষককে আসতে বলেনি৷ এখন তো মনে হচ্ছে আসতে বলতে হবে৷ অরু আবারো দৌড় লাগালো টেবিলে৷ বইপত্র গুঁছিয়ে নিলো৷ সে এখন বাড়িতে গিয়ে চাচ্চুকে বলবে, তার হোম টিচারকে এক্ষুনি আসতে বলতে৷ ম্যাথম্যাটিকস যতটুকু পারবে বুঝিয়ে দিবে৷ অরু বেশকিছু ম্যাথম্যাটিকস কভার করে ফেলেছে৷ তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে, চেঁচিয়ে উঠলো৷ হুট করে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল৷ অন্ধকারে অরু ভীষণ ভয় পায়৷ বলা যায়, তার ফোবিয়া আছে অন্ধকারে৷ বইপত্র ফেলে দৌড় লাগালো অন্ধকারের মধ্যে৷ সামনে যা পেয়েছে সেটাই জাপ্টে ধরলো৷ 
- তন্ময় ভাইয়া লাইট কীভাবে গেল?
- আমি কীভাবে বলবো? 
- দেখেন না কেন গেল! আমি ভয় পাই৷ 
- পেতে থাক৷ 
- মানে? কথা বলেন না কেন! আমি কিন্তু.. 
- কিন্তু, কী করবি? 
অরু ভয়ে একপ্রকার তন্ময়কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে,
- কিছুই করবো না৷ আপনি প্লিজ দেখেন না কি হইছে! নাহলে দরজাটা খুলে দেন, আমি বাসায় যাবো৷ 
- যা ধরেছে কে তোকে!
- অন্ধকারে কিভাবে যাবো? আপনার মোবাইলের ফ্ল্যাসলাইট ওন করেন না৷ 
- করবো না৷ 
তন্ময়ের ত্যাড়াত্যাড়া কথা শুনে অরুর গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ৷ আচমকা তার গাল চেপে ধরলো তন্ময়৷ ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো অরু৷ এতো শক্তি দিয়ে ধরেছে যে তার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে৷ 
- আমি কিন্তু কেঁদে দিব। 
- কেঁদে দে৷ 
- আমি কিন্তু হাঁচি দিব৷ 
- দে৷ 
নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, 
- দেখুন না লাইট ফাইট আছে নাকি কোথাও! 
-ছাড় আমাকে৷ দেখি গিয়ে! 
- না না আমি ভয় পাই৷ এভাবেই চলুন৷ 
দিশেহারা অরু অনুভব করলো তন্ময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে৷ তাকে যেতে না দেখে অরু বলল,
- কি হলো? চলুন!
- তোকে কল দিয়েছিলাম, ধরিস নাই কেন? 
- আমার ফোন তো বড়ো চাচ্চু নিয়ে গেছে৷ পরিক্ষা শেষ না হওয়া অবদি আর দিবেনা৷ 
তন্ময়ের জবাব এলো না৷ হঠাৎ তন্ময় তাকে ছেড়ে চলে গেল৷ অরু চিৎকার চেঁচামেচি করবে এর পূর্বেই ইলেকট্রিসিটি চলে এলো৷ বুকে থুঁ থুঁ ছিটিয়ে অরু আশেপাশে তাকাল৷ ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল৷ তন্ময় ফিরে এসে বলল,
- যা টেবিলে বোস! 
অরু দ্রুত পায়ে টেবিলে গিয়ে বসলো৷ তন্ময় এসে তার পাশে বসেছে৷ অরু নিজেকে পড়াশোনায় ডুবাতে তৈরি৷ হুট করে তার চোখ গেল তন্ময়ের গলায়৷ লোকটার গলার মধ্যে উঁচু হয়ে আছে৷ এটাকে যেনো কী বলে? কলারবোন? দেখতে খুব আকর্ষণীয় লাগছে৷ ইচ্ছে করছে ধরতে৷ অরু নিজের হাত জোড়া গুটিয়ে ফেললো৷ ওটা ধরলে তন্ময় তাকে জিন্দা মাটিতে পুঁতে দিবে৷ 
- এভাবে হবে, বুঝেছিস? 
তন্ময়ের কন্ঠে ভড়কে গেল অরু৷ বাজে চিন্তাভাবনায় বিভোর সে ম্যাথে মনোযোগ দেয়নি৷ তাহলে বুঝবে কীভাবে? নিজেকে মনেমনে বকাঝকা করে ভয়েভয়ে বলল, 
- আরেকবার বুঝিয়ে দিবেন? 
তন্ময় তার হাতের কলম ফেলে দিলো৷ চেয়ারে হেলান দিয়ে দুহাত বুকে গেঁথে তাকিয়ে রইলো৷ যেমন অরুকে খেয়ে ফেলবে৷ চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে এক্ষুনি৷ চোখ পিটপিট করে অরু ধীরে বলল, 
- আপনি আমাকে কেন কল করেছিলেন? 
- তোর কি মনে হয়? কেন করেছি? 
- বকাঝকা করতে? 
- থাপড়ে দাঁত ফেলে দিতে৷ 
- কল করে দাঁত ফালানো যায় নাকি? 
- সামনে আছিস ফেলে দেখাব? 
- না না৷ 
গম্ভীর স্বরে তন্ময় বলল 
- চুপচাপ মনোযোগ দে! 
অরু রোবটের মতো মাথা দোলাল৷ 
-------
শাবিহার ইদানীং অয়নের আপনি বলাটা পছন্দ হয়না৷ মনে হয় সে খুব বড় অয়নের৷ হ্যাঁ অবশ্যই শাবিহা অয়নের বড়, তাই বলে কী বারবার মনে করিয়ে দিয়ে, কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দিবে নাকি? 
আজকাল অয়নকে দেখা যায়না। খুব ব্যস্ত হয়ে গেছে৷ শুনেছে অয়ন তার বাবার বিজনেসে হাত লাগিয়েছে৷ কিছুদিন আগে চট্রগ্রাম গিয়েছে সেখানকার বিজনেসের ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা দেখতে৷ এখনো ফেরেনি৷ শাবিহা স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার চারপাশে নজর দিচ্ছে৷ যেমন উড়ে অয়ন তার সামনে উপস্থিত হবে৷ বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেছে৷ ফোনে বেশ কয়েকবার নজর দিলো৷ অয়ন কখনো ফোনে কল করেনি৷ বলা যায় তাদের কখনো ফোনে কথা হয়নি। সবসময় সামনাসামনি কথা হয়েছে৷ কিন্তু তার মন বলছে আজ অয়ন কল করবে৷ এবং মনের কথা সত্যি হয়ে অয়নের কল চলে এলো৷ দরজা লাগিয়ে সময় নিয়ে কল ধরলো শাবিহা৷ খুবই নার্ভাস সে৷ অয়নের সাথে কথা বলতে গেলেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়৷ লজ্জা, সংকোচ ঝেঁকে ধরে তাকে৷ বারবার মনে করিয়ে দেয় অয়ন তার ছোট৷ সে অয়নের বড়ো৷ আর এই সম্পর্ক ভীষণ লজ্জাজনক৷ মানুষ হাসবে তার উপর, তাকে কথা শোনাবে৷ এই বিষয় গুলো মস্তিষ্কে এলে কিছুই আর ভালো লাগেনা শাবিহার। ওপাশ থেকে অয়নের গভীর স্বর,
- শাবিহা! 
- হু৷ 
- খেয়েছেন? 
শাবিহা মিথ্যে বলে দিল,
- হ্যাঁ৷
- সত্যি? মাত্র আটটা৷ আপনি তো এতো তাড়াতাড়ি ডিনার করেন না। 
- আজ করেছি৷ 
- মেনে নিলাম তাহলে৷ আমাকে মিস করছেন? 
অয়নের স্বরে দুষ্টুমির আভাস৷ শাবিহা বলল, 
- না৷ মিস করছি না!
- প্রয়োজন নেই৷ আমিতো আপনাকে ভীষণ মিস করছি৷ এবং হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছি আগেকার রাজাদের কষ্ট৷ শুনেছি তাদের খুবই কষ্ট হতো সুন্দরী স্ত্রী ফেলে নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে ভ্রমণে যেতে৷ আমিতো ভাই এক শহর থেকে আরেক শহরে গিয়েই পাগল হয়ে গেছি৷ 
শাবিহার ঠোঁটে চলে এসেছিল, ' আমি কি তোমার স্ত্রী নাকি? ' কিন্তু সেটা ভাবতেই ভীষণ লজ্জা পেল৷ তাহলে বলবে কীভাবে? এই বিষয়ে কথা বলা অসম্ভব৷ পারবেনা সে৷ বরং বলল, 
- তোমার কাজ নেই? 
- আছে তো৷ কিন্তু কাজের থেকে আপনি বেশি ইম্পর্ট্যান্ট৷ 
- রাখি! 
- না একদম না৷ আপনাকে কতটা মিস করছি জানেন? 
শাবিহা চুপ হয়ে রইলো৷ অয়ন হেসে বলল, 
- আপনার জন্য কি আনব? কী চাই আপনার শাবিহা? 
- কিচ্ছু না৷ 
- শুনেছি আপনার নুপুর খুব পছন্দ! 
- একদম না৷ 
- তাহলে কানের দুল? 
- না৷ 
- নাকফুল? 
- অয়ন!
অয়ন হো হো করে হাসছে৷ পরপরই শোনা গেল একজন গম্ভীর স্বর৷ যেমন কেউ ওপাশ থেকে অয়নকে ডাকল৷ অয়ন বলল, 
- ডাকছে৷ রাখি এটি হ্যাঁ?
- আচ্ছা৷ 
কল কাটার পূর্বে অয়ন বলে গেল, 
- আম মিসিং ইউ অ্যা লট! 
ফোনের দিক তাকিয়ে রইলো শাবিহা৷ মনপ্রাণ, মস্তিষ্ক শরীর সবকিছু হালকা লাগছে৷ একটা চাপা কষ্ট গায়েব হয়ে গিয়েছে বুক থেকে৷ এখন শুধু ভালোলাগা বিরাজমান৷ শাবিহার ভাবতেও লজ্জা লাগে, অতটুকু ছেলের প্রেমের কথায় সে অনুভূতি পায়৷ ভালোলাগায় মন ছেয়ে যায় তার৷ অয়ন কি জানে সে কতটা দুর্বল করে ফেলেছে শাবিহাকে? শাবিহা ঠিক কতটা তাকে নিয়ে ভাবে জানে? কতটুকু অনুভূতি অনুভব করে আন্দাজ আছে ছেলেটার? 
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন