অবেলার অভিলাষ - পর্ব ২২ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


সকাল থে‌কে তনয়াদের বা‌ড়ি‌তে তো‌ড় জোড় শুরু হ‌য়ে গেছে। নতুন জামাই আস‌বে ব‌লে কথা। 
আয়াত তনয়াও সকাল থে‌কে শ‌পিং কর‌তে ব্যাস্ত। সবার জন্য কিছু‌না কিছু কিন‌লো। অনেক রক‌মের ফল মি‌ষ্টি, ম‌নে হয় পু‌রো দোকানসহ কি‌নে নি‌লো। তনয়া এত এত নি‌তে নি‌ষেধ কর‌ছে কিন্তু আয়া‌তের এক কথা প্রথম শ্বশুরবা‌ড়ি যা‌চ্ছে তাই যাবার মতই যা‌বে।

এত‌দিন পর তনয়া নি‌জের বা‌ড়ি যা‌বে ভাব‌তেই বুকটা ধরাম ধরাম কর‌ছে। গ‌ড়ি‌তে ব‌সে আছে আয়াত তনয়া, সাম‌নে আয়াজ গা‌ড়ি চা‌লাচ্ছে আর মেঘা পা‌শে বসা। আয়া‌তের দু বন্ধু আর আয়া‌তের বাবা আমজাদ হো‌সেন পিছ‌নের গা‌ড়ি‌তে আস‌ছে। তনয়া‌কে বার বার ঘাম‌ছে, আয়াত সেটা দে‌খে তনয়ার হাত ধ‌রে বলল,
__‌টেনশন হ‌চ্ছে?

__হুমম।

__‌ডোন্ট ওরি আমি আছি তো। 

__বু‌কের ভিতর কেমন যে‌নো কর‌ছে? ম‌নে হ‌চ্ছে কেউ হাতু‌রি পিটা কর‌ছে।

আয়াত তনয়ার বু‌কে হাত দি‌য়ে বলল, এখা‌নে?

তনয়া লজ্জায় লাল হ‌য়ে আয়া‌তের হাতটা স‌রি‌য়ে দি‌য়ে ফিস‌ফি‌সি‌য়ে বলল, একটু তো লজ্জা করো তোমার ছোট ভাই বোন এখা‌নে। 
আয়াত দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌য়ে তনয়ার হাতটা নি‌জের হা‌তের মু‌ঠোয় জ‌ড়ি‌য়ে নি‌য়ে বলল, টেনশন ক‌রো না। সব ঠিক হ‌বে।

সবাই মি‌লে তনয়া‌দের বাড়ি‌তে গেলো। আয়া‌তের মা সব জা‌নে এমন‌কি আয়াতনয়া‌র বি‌য়ে‌তে মতও দি‌য়ে‌ছে কিন্তু তি‌নি এখনও তনয়া‌কে মন থে‌কে মান‌তে পা‌রে‌নি। কিন্তু আয়াতের বিশ্বাস সম‌য়ের সা‌থে সা‌থে সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। 

শ্বশুর বা‌ড়ি পৌঁ‌ছে আয়াত দরজার সাম‌নে পা রাখ‌তেই তনয়ার কা‌জিনরা দরজা আট‌কে ধ‌রে বলল, 
__দুলাভাই সালা‌মি না দি‌লে কাজ হ‌বে না।

আয়াত সালা‌মি দি‌তে গে‌লে আয়াজ বলল, 
__আরে ভাইয়া তোর শা‌লী‌দের শর্ত এত তারাতা‌রি ‌কেন মে‌নে নি‌চ্ছিস। দেখ আমি কিভা‌বে হ্যা‌ন্ডেল ক‌রি। আয়াজ তনয়ার বোন‌দের সাম‌নে গি‌য়ে বলল, বেয়ানরা আমার ভাইয়ার মত হ্যান্ডসাম দুলাভাই আর আমার মত কিউট বেয়াই এর জন্য কি সালা‌মি সে‌ক্রিফাইজ করা যায় না? 
তনয়ার এক কাজিন ‌জে‌রিন বলল, 

__‌বেয়াই আপনা‌দের কিউট‌নেস দেখেই তো কম চাইলাম, নয়ত ডাবল চাইতাম। আচ্ছা আরো একশ ক‌মি‌য়ে দিলাম কেমন। খু‌শি এবার!

__আয়াজ মুখ ভেং‌চি কে‌টে বলল, আপ‌নি মহান। আপনার দয়ার সীমা নেই বেয়ান। দে ভাইয়া তোর পে‌ত্নি শালী‌দের সালা‌মি দে।

__জে‌রিন বলল, পে‌ত্নি যখন ঘা‌ড়ে কামর বসা‌বে তখন টের পা‌বেন। হুহ।

তারপর আরো কিছুক্ষন দুষ্টমি ক‌রে সবাই‌কে ভিত‌রে নি‌য়ে বসা‌লো। এতমাস পর নি‌জের বা‌ড়ি এসে তনয়া খু‌শি‌তে পাগল হ‌য়ে যা‌চ্ছি‌লো। সদ্য যৌব‌নে পা দেয়া কি‌শোরীর মত ছোটাছু‌টি কর‌ছিলো। তনয়া‌কে এত খু‌শি দে‌খে আয়া‌তের বেশ ভা‌লো লাগ‌ছি‌লো। 

তারপর সবাই‌কে যখন আপ্যায়ন করা হ‌চ্ছি‌লো তখন
আয়া‌তের শালীরা দুষ্ট‌মি ক‌রে আয়াজকে আর আয়া‌তের বন্ধু নাঈম, রাজু‌কে ঝাল শরবত খাওয়া‌লো। আয়াজ এম‌নি‌তে প্রচন্ড ভদ্র আর শান্ত কিন্তু কেউ ওর পিছ‌নে লাগ‌লে তা‌কে ছা‌ড়ে না। আয়াজ তনয়ার বোন‌দের উদ্দেশ্য ক‌রে বলল, সাবধা‌নে থাক‌বেন, বলা যায়না কখন কি হ‌য়ে যায়! পৃ‌থিবীটা গোল বেয়ান, আজ আপ‌নি যা কর‌ছেন কাল তা আপনার সাথেও হ‌তে পা‌রে। সেটা ব‌লে শয়তা‌নি একটা হা‌সি দি‌লো। 

তনয়া আস‌ছে পর থে‌কে তা‌লিব মাহমু‌দের কোল ঘে‌ষে ব‌সে তার কাঁ‌ধেই মাথা দি‌য়ে ছি‌লো। বাবা মে‌য়ে এত মাস পর গ‌ল্পে মে‌তে‌ছে। সা‌থে আয়া‌তের বাবাও। সবার মনটা আজ বেশ ভা‌লো। র‌শ্মিও এসে‌ছে আজ। ত‌বে কেন জা‌নি তা‌মি‌মের সা‌থে তেমন কথা বল‌ছে না। ত‌বে এত হইহু‌ল্লো‌রের মা‌ঝে বিষয়টা কেউই খেয়াল কর‌লো না। 

মাগ‌রি‌বের নামাজ প‌ড়ে আয়াত তনয়ার বাবারা তা‌দের সা‌থে কাজী সা‌হেব‌কে নি‌য়ে আস‌লো। আয়াত তনয়া কিছুই বুঝ‌লো না। তখন তা‌লিব মাহমূদ বল‌ল, 
__আয়াত, তু‌মি আর তনয়া তো ‌নি‌জে নি‌জে রে‌জি‌ট্রেশন বা ধর্মম‌তে ঈমাম সা‌হে‌বের কাছ থে‌কে বি‌য়ে ক‌রে‌ছো। তা‌তে তোমার বাবারও মত ছি‌লো বা আমা‌দের প‌রিবা‌রের সবার মত ছি‌লো কিন্তু আমি তো উপ‌স্থিত ছিলাম না। আর তোমা‌দের আইনি ম‌তে বি‌য়ে হ‌লেও ইসলা‌মে মে‌য়ের প‌রিবা‌রের অনুপ‌স্থি‌তি‌তে বি‌য়ে করা সমার্থন ক‌রেনা। য‌দিও তোমা‌দের তখনকার প‌রি‌স্থি‌তি আলাদা ছি‌লো তবুও আজ এখন সবার উপ‌স্থি‌তি‌তে তোমা‌দের দুজনার কাবিন হ‌বে। ‌তু‌মি য‌দি তোমাদের বি‌য়ের আগে আমা‌কে বুঝা‌তে হয়ত মানতাম বা মান‌তে সময় লাগ‌তো তবুও বি‌য়েটা সুষ্ঠ ভা‌বে হ‌তো। যাক যা হবার তা হ‌য়ে গে‌ছে। তাই এখন সম্পূর্ণ ইসলাম ধর্ম ম‌তে তোমা‌দের বি‌য়ে হ‌বে। য‌দিও তোমরা লিগাল হ্যাজ‌বেন্ড ওয়াইফ। আর আজকালকার ছে‌লে মে‌য়ে তোমরা লিগাল ডকু‌মেন্ট‌কে বে‌শি প্রধান্য দাও। কাজী ডে‌কে বি‌য়ে পরা‌নোটা তোমা‌দের কা‌ছে হয়ত তেমন মুখ্য নয়। ত‌বে আমরা তো সে‌কে‌লে মানুষ। তাই বি‌য়েটা দি‌তে চাই। এতে আমা‌দের গুরুজন‌দের ম‌নে খুত খুত থাক‌বে না। আর রি‌সিপশন তো সাম‌নের মা‌সে ধুমধাম ক‌রে হ‌বে। পু‌রো শহর দেখ‌বে আমার মে‌য়ের বি‌য়ের রি‌সিপশন। তোমার কী কোন আপ‌ত্তি আছে?

আয়াত তনয়া দুজনেই লজ্জায় প‌রে গে‌লো। বি‌শেষ ক‌রে আয়াত। হ্যাঁ আয়াত চাই‌লে বি‌য়ের অাগে তনয়ার বাবা‌কে রা‌জি করা‌নোর চেষ্টা কর‌তে পার‌তো। কিন্তু স‌ত্যি বল‌তে তনয়া‌কে হারা‌নোর ভয়টা আয়াত‌কে গ্রাস ক‌রে ফেল‌ছি‌লো যার কার‌নে তনয়ার সা‌থে নি‌জের বন্ধনটা শক্ত ক‌রে তারপর প‌রিবা‌রের মিল ঘটা‌তে চে‌য়ে‌ছে। যা‌তে প‌রিবা‌রের দ‌্বন্ধে তনয়া‌কে না হা‌রি‌য়ে ফে‌লে। তারপর আয়াত এ আয়াত তনয়া দুজ‌নেই তনয়ার বাবার কথায় সম্ম‌তি জানা‌লো। 

‌বি‌য়ের হবে এশার বাদ। বড়‌দের কথা শেষ হ‌তেই লা‌বিবা আর মেঘা ছো মে‌রে তনয়া‌কে লা‌বিবার রু‌মে নি‌য়ে গে‌লো। 

লাবিবা তনয়ার হা‌তে একটা হালকা গোলা‌পি র‌ঙের ল্যা‌হেঙ্গা দি‌য়ে বলল,
__এটা প‌রে নে। তারপর তো‌কে সাজা‌বো।

__কী বল‌ছো ভা‌বি এখন এসব কেন পর‌বো? আমি কী নতুন বৌ না‌কি?

__‌তো আজ আবার বি‌য়ে হবে ত‌বে তুই তো নতুন বৌ ই। আজ তোর বিয়ে বাসর সবই প্রথম দি‌নের মত হ‌বে। আর গতকাল তোর বরই তো বললো, হরতাল চল‌ছে। আমা‌কে ঘুষ দি‌বে। তার কী হ‌লো? এখন তো ঘুষ নেয়ার সময় আমার।

__ভা‌বি ও তো তোমার সা‌থে মজা কর‌ছি‌লো। ওমন কিছু না। 

__সে যাই হোক যা রে‌ডি হ‌য়ে নে। যখন বি‌য়ে হ‌বে তখন নতুন বৌ এর মত সে‌জেই বি‌য়ের পি‌ঁড়ি‌তে ব‌সে পর।

তনয়া আর কথা বাড়া‌লো না। ল্যা‌হেঙ্গা পর‌তেই মেঘা, লা‌বিবা, র‌শ্মি তনয়া‌কে নতুন বৌ এর মত সা‌জি‌য়ে দি‌লো। 
এশার বাদ সম্পূর্ণ ধর্মম‌তে বি‌য়ে হ‌য়ে গে‌লো। তনয়া এবার ম‌নের খু‌শি‌তে কবুল বলল কারন আজ ওর পু‌রো প‌রিবার ওর সা‌থে। আয়া‌তের নি‌জেরও বেশ ভা‌লো লাগ‌ছে। পু‌রো প‌রিবার‌কে খু‌শি রে‌খে বিবাহ বন্ধ‌নে আবদ্ধ হ‌তে পে‌রে আয়া‌তের মনটা স্নিগ্ধতায় ভ‌রে গে‌লো। আয়াত এখনও তনয়া‌কে দে‌খে‌নি। সেই তখন লা‌বিবা নেয়ার পর বি‌য়ে হ‌লো দুজনার দু রু‌মে ব‌সে। এমনকি খাবার সময়ও তনয়া আস‌লো না। আয়াত সবার সা‌থে ব‌সে গল্প কর‌ছে, ওর সা‌থে তান‌ভির, তা‌মিম আর তানভীও আছে। তা‌মি‌মের সা‌থে আয়াতের বন্ধুত্ব হয়ে গে‌ছে। সবার সা‌থে হে‌সে হে‌সে গল্প কর‌লেও আয়া‌তের ‌চোখ বারবার তনয়া‌কে খুঁজ‌ছে।

রাত সা‌ড়ে এগারোটা
লা‌বিবা তনয়া‌কে নি‌য়ে তনয়ার রু‌মে গে‌লো। আস‌ছে পর তনয়া একবারও নি‌জের রু‌মে আসে‌নি। কেউনা কেউ বাঁধা দি‌য়ে‌ছে। এখন তনয়া রুমে ঢু‌কেই হা হ‌য়ে গে‌লো, পু‌রো রুম ফুলসজ্জার রা‌তের মত ফুল দি‌য়ে সুন্দর ক‌রে সাজা‌নো। তনয়া লা‌বিবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, 
__ভা‌বি এসব কখন করলা? তারমা‌নে তোমরা সবাই জানতা আজ আবার বিয়ে হ‌বে?

__হ্যাঁ। সকা‌লে বাবা আর তোর শ্বশুর মি‌লে ফো‌নে কথা ব‌লে ঠিক কর‌ছে। সে জন্যই তো কাকা আর মামা‌রা আস‌ছে। এমনকি তোর চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর আরো কজন আত্মীয় আস‌ছে।

__এখন আমি কী কর‌বো?

__তুই মাঝখা‌নে সুন্দর ক‌রে বস বা‌কিটা আয়াত কর‌বে। শয়তা‌নি হা‌সি দি‌য়ে।

__ছি ভা‌বি তু‌মি বড্ড পা‌জি।

__অ‌া‌রে পা‌জি তো তোর বর। আজ ব্যাটার খবর আছে। তুই বস। দেখ একদম নড়‌বি না, যেভা‌বে ব‌সি‌য়ে রাখ‌বো সেভা‌বে ব‌সে থাক‌বি। তনয়া‌কে বিছানার মাঝখা‌নে ব‌সি‌য়ে লা‌বিবা র‌শ্মি আর মেঘা‌কে নি‌য়ে বাই‌রে গি‌য়ে তনয়ার রু‌মের দরজা তালা মে‌রে দরজার সাম‌নে দা‌ড়ি‌য়ে থা‌কে। 

‌কিছুক্ষন পর যে যার মত ঘুম‌তে গে‌লো। আয়াত তনয়ার রু‌মের সাম‌নে আস‌তেই দে‌খে লা‌বিবা, র‌শ্মি তনয়ার কা‌জিনরা দরজার বাই‌রে দা‌ড়ি‌য়ে আছে। আয়াত মুচ‌কি হেসে বলল,
__‌ভিত‌রে যাবার অনু‌মো‌তি কী পা‌বো?

__‌জে‌রিন বলল, কেন দুলাভাই এত কেন অস্থির হ‌চ্ছেন? 

__কেন শালীকা অস্থির হওয়া যা‌বে না?

__লা‌বিবা বলল, ভিতরে যে‌তে হ‌লে মোটা অং‌কের ঘুষ দি‌তে হ‌বে।

__না দি‌লে?

__সারা রাত বাই‌রে থাকুন। ভিত‌রে তো কি‌শোরী পরী‌কে ব‌সি‌য়ে রে‌খে‌ছি। ঘুষ না দি‌লে বু‌ড়া দাদার কা‌ছে ঘুমা‌তে হ‌বে। সে ভয়ংকর নাক টা‌নে। কী ব‌লেন?

__নাহ থাক। ব‌লেন কত দি‌তে হ‌বে?

__ওয়া‌লেটটা দিন প্র‌য়োজন মত নি‌য়ে নিচ্ছি। মেঘা আয়া‌তের প‌কেট থে‌কে ওয়া‌লেট নি‌য়ে লা‌বিবার কা‌ছে দি‌য়ে দি‌লো। আয়াত বলল, 
__‌মেঘা তুই বোন হ‌য়ে ভাই‌কে লুট কর‌লি?

__স্য‌রি ভাই আমি পা‌র্টি বদ‌লে‌ছি। 

__পুরাই রাজ‌নৈ‌তিক নেতা‌দের মত পা‌ল্টিবাজ তুই।

অব‌শেষে লাবিবা আয়াত‌কে ভিত‌রে ঢুক‌তে দি‌লো। আয়াত দরজা লক করে রু‌মের দি‌কে তাকা‌তেই হা হ‌য়ে গে‌লো। অনেক সুন্দর কা‌রে সাজা‌নো গোছা‌নো রুমটা। বিছানায় ফু‌লের সমা‌রোহ আর তার ঠিক মাঝাখা‌নে ঘামটা দি‌য়ে বসা একটা রাজকুমা‌রী। আয়াত গি‌য়ে ঘোমটা তু‌লতেই আৎ‌কে উঠ‌লো। আর অপর পাশ থে‌কে তনয়া হি হি ক‌রে হে‌সে উঠ‌লো। আয়াত দেখ‌লো বিছানায় বড় একটা পান্ডা ডল‌কে লাল শা‌ড়ি প‌রি‌য়ে ব‌সি‌য়ে রে‌খে‌ছে আর তনয়া বিছানায় অপরপা‌শে দা‌ড়ি‌য়ে হাস‌ছে। আয়াত তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌য়ে বলল,
__আজ‌কেও দুষ্ট‌মি?

__‌কেন আজ‌কে দুষ্ট‌মি কর‌তে ট্যাক্স দেয়া লাগ‌বে না‌কি?

__না ত‌বে দুষ্ট‌মির প‌রিব‌র্তে দুষ্ট‌মি পা‌বে। 
তনয়াকে কো‌লে তু‌লে বলল, আপনার রু‌মে আস‌তে মোটা অং‌কের ঘুষ দেয়া লাগ‌ছে। সবটা আপনার কাছ থে‌কে উসুল ক‌রে নি‌বো। 
তনয়া আয়া‌তের গলা জ‌ড়ি‌য়ে লজ্জা মাখা হা‌সি দি‌লো। আয়াত তনয়া‌কে বিছানায় ব‌সি‌য়ে বলল,
__‌তোমার রুমটা খুব সুন্দর। দেখ‌লে ম‌নে হয় কোন রাজকুমারীর রুম।

__হ্যাঁ বাবা সব আমার মন মত সা‌জিয়ে‌ছে। 

__সত্যি বলতে তনয়া একা একা বি‌য়ে করা ঠিক না। হ্যাঁ অনেকসময় প‌রি‌স্থিতি আমা‌দের এমন কর‌তে বাধ্য করে। ত‌বে জা‌নো একা একা বি‌য়ে কর‌লে তু‌মি কিন্তু পা‌রিবা‌রিক অনেক আনন্দ মিস কর‌তে হয়। এই যে দে‌খো আস‌ছি পর থে‌কে যে হা‌সি ঠাট্টা চল‌ছে এটা কিন্তু আমরা আমা‌দের প্রথমবার বি‌য়ের দিন কর‌তে পা‌রি‌নি। তখন দুজন দুজনার থাক‌লেও প‌রিবা‌রের শূণ্যতা কিন্তু খুব ভা‌লো ক‌রে আমা‌দের অনুভব ক‌রি‌য়ে‌ছে। প্রথমবার যখন তোমার কা‌ছে এসে‌ছিলাম তখন এইসব পা‌রিবা‌রিক দুষ্ট‌মি খুব মিস করছি। ‌কিন্তু স‌ত্যি বল‌ছি তনয়া আজ‌কের বি‌য়ের প্র‌তিটা মুহূর্ত আমি সুন্দরভা‌বে অনুভব কর‌ছি। 

__হ্যাঁ আয়াত ঠিক বল‌ছো। একা একা বি‌য়ে কর‌লে পা‌রিবা‌রিক আনন্দটা অসম্পূর্ণ থে‌কে যায়। হয়ত দুজন মানুষ দুজন‌কে পে‌য়ে খুব সুখী হয় কিন্তু পা‌রিবা‌রিক শূণ্যতা প্র‌তি মুহূ‌র্তে মনটা‌কে কু‌ড়ে কু‌ড়ে খায়। আর জা‌নো আয়াত নি‌জেরা বি‌য়ে কর‌লে হয়ত দুজন মানুষ আনন্দ পায় কিন্তু প‌রিবা‌রের দশজন কষ্টপায় আর দশজন‌কে কষ্ট দি‌য়ে কখ‌নো দুজন সুখী হ‌তে পা‌রে না। দশজ‌নের ক‌ষ্টের নিশ্বাসটা দুজনার সংসা‌রের সুখ‌কে ঢে‌কে দেয়। তাই কষ্ট ক‌রে হ‌লেও নি‌জের প‌রিবার‌কে রা‌জি করা‌নো উচিৎ।

__‌কিন্তু তনয়া অনেক সময় পরিবার‌কে শত বুঝা‌লেও প‌রিবার বুঝ‌তে চায় না। তখন কী করার ব‌লো?

__তনয়া একটা দীর্ঘ‌নিশ্বাস ছে‌ড়ে বলল, হ্যাঁ ঠিক বল‌ছো। আমার ক্ষে‌ত্রেও তেমন। ত‌বে যাই হোক শেষ পর্যন্ত আল্লাহ সব কিছু ঠিক কর‌ছে তার জন্য তার দরবা‌রে লাখ লাখ শুক‌রিয়া।

আয়াত তনয়ার গা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দি‌য়ে বলল, হুমম।

__আয়াত চ‌লো তোমা‌কে একটা সুন্দর জি‌নিস দেখাই। তনয়া আয়া‌তের হাত ধ‌রে জানালার কা‌ছে নি‌য়ে গি‌য়ে বড় জানালাটা খু‌লে দি‌লো, তারপর রু‌মের লাইট অফ ক‌রে দি‌তেই আয়াত অবাক হয়ে গে‌লো। কারন জানালা দি‌য়ে চাঁ‌দের আলোয় পু‌রো রুমটা জোসনাময় হ‌য়ে গে‌ছে। তনয়ার রু‌মের জানালাটা পূর্ব দি‌কে, যখন চাঁদ ওঠে তখন চাঁ‌দের আলোয় রুমটা ঝলমল ক‌রে। আয়াত তনয়া‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে গা‌লে, গলায় ভা‌লোবাসার পরশ দি‌চ্ছে আর গল্প কর‌ছে। 

মধ্যরাত, 
তনয়া অনুভব কর‌লো কেউ ওর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌চ্ছে। তার নিশ্বাস তনয়ার মু‌খে লাগ‌ছে। তনয়া চোখ বন্ধ ক‌রেই ভাব‌ছে আয়াত তো ওকে জ‌ড়ি‌য়ে আছে ত‌বে মাথায় কে হাত বু‌লিয়ে দি‌চ্ছে! তনয়ার পু‌রো শরীর ভ‌য়ে কাটা দি‌য়ে উঠ‌লো। একটু ন‌ড়ে চ‌ড়ে উঠ‌তেই হাতটা মাথা থে‌কে স‌রে গে‌লো, আর জানালা দি‌য়ে দুপ ক‌রে লাফ দি‌য়ে নে‌মে গে‌লো। তনয়া আয়াত আয়াত ব‌লে চিৎকার দি‌য়ে উঠ‌লো। আয়াত হচ‌কি‌য়ে উঠে বলল,
__কী হয়ে‌ছে তনয়া!

__আয়াত রু‌মে কেউ আস‌ছি‌লো। আমি উঠ‌তেই জানালা দি‌য়ে লাফ দি‌য়ে বের হ‌য়ে গে‌লো।

__কী বল‌ছো তনয়া! তু‌মি হয়ত ভুল ভাব‌ছো। তনয়া নি‌জের গা‌য়ে ক‌ম্বোলটা ভা‌লোভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। কারন তনয়া এতক্ষন ক‌ম্বোল‌ের নি‌চে আয়া‌তের বু‌কের ম‌ধ্যে ছি‌লো, গা‌য়ে পাতলা ফিন‌ফি‌নে একটা নাই‌টি পরা। আয়া‌ত জানালার কা‌ছে গি‌য়ে কাউ‌কে দেখ‌তে পে‌লো না ত‌বে কিছু বুঝ‌তে পার‌লেও তনয়া‌ ভয় পা‌বে দে‌খে ব্যাপারটা এড়ানোর জন্য বলল,

__‌নি‌চে কুকুর তনয়া। তু‌মি ভুল ভাব‌ছো। আয়াত জানালাটা ভা‌লোভা‌বে বন্ধ ক‌রে দিলো। তারপর তনয়া‌কে বু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ক‌ম্বোল দি‌য়ে ঢে‌কে বলল, হয়ত খারাপ স্বপ্ন দেখ‌ছো। ঘু‌মি‌য়ে প‌রো। তনয়া আয়া‌তের বু‌কে মুখ লু‌কি‌য়ে ভাব‌ছে এতবার ভুল কিভা‌বে হয়? আজ সকাল থে‌কে তনয়ার ম‌নে হ‌চ্ছে এক‌জোড়া চোখ ওর দি‌কে ভংয়কর নজড় দি‌চ্ছে। তনয়া অনুভব কর‌তে পার‌ছে কিন্তু দেখ‌তে পার‌ছে না। 

এমনকি ঘুমা‌নোর আগে আয়া‌তের সা‌থে ঘ‌নিষ্ট হবার সময়ও তনয়ার ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌লো কেউ ওদের দি‌কে নজর রাখ‌ছে। কিন্তু রু‌মের জানালা বন্ধ করার পর তনয়ার ভয়টা কে‌টে গে‌লেও কেমন যে‌নো লাগ‌ছি‌লো।

তনয়া আয়া‌তের বু‌কে মুখ লু‌কি‌য়ে আছে। আর আয়াত ভাব‌ছে, তনয়ার ভাবনা ভুল না। কারন রা‌তের বিষয়টা আয়াতও অনুভব কর‌ছে। আমা‌দের চোখ যেটা দে‌খে না আমা‌দের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সেটা বুঝ‌তে পা‌রে। আয়া‌তের নি‌জেরও ম‌নে হ‌চ্ছে কেউ ওদের উপর নজরদা‌রি কর‌ছে। 

আয়াত তনয়া‌কে আরো শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। নি‌জে নি‌জে বল‌ছে, কিছু হ‌তে দে‌বে না তনয়া‌কে। কোন আঁচ লাগ‌তে দে‌বেনা নি‌জের প্রাণ পা‌খি‌কে।

—————
৫৬!!

       প‌রের দিন সকা‌লে নামাজ প‌ড়ে তনয়ার আর ঘুম হ‌লো না। আয়াত নামাজ প‌ড়ে ঘুমা‌চ্ছে, তনয়া আয়া‌তের কাছে এসে ব‌সে মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তে দি‌তে অনেকক্ষন আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইলো। মনটা বারবার কু ডাক ডাক‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে আয়াত আর ওর মা‌ঝে কোন সমস্যা হ‌বে। এমন কথা ভাব‌তেই তনয়ার বুকটা কেঁ‌পে উঠ‌লো। আয়াত‌কে ছাড়া তো নি‌জের অস্তিত্ব কল্পনাও কর‌তে পা‌রে না তনয়া। আয়া‌তের মাথায় চু‌মো খে‌লো অনেকগু‌লো। 

বাই‌রে ভো‌রের আলো ফুট‌তে শুরু কর‌ছে। এখন তনয়ার মা ছাড়া বা‌কি সবাই হয়ত নামাজ প‌ড়ে ঘুমা‌চ্ছে। তনয়া চু‌পি চু‌পি রুম থে‌কে বের হ‌য়ে বাগা‌নে গে‌লো। কতমাস পর নি‌জের সাজা‌নো বাগা‌নে আস‌ছে। ইশ অনেক ফুল গাছ অয‌ত্নে ম‌রে গে‌ছে। তনয়া গা‌ছে কতক্ষন পা‌নি দি‌লো। তনয়ার বারবার ম‌নে হ‌চ্ছে ওকে কেউ দেখ‌ছে। কিন্তু চারপাশে তাকা‌লে কাউ‌কে দেখ‌তে পায়না। ভ‌য়ে শরীরটা ছমছম কর‌ছে তনয়ার। গাছে পা‌নি দেয়া শেষ। এখনও কেউ ঘুম থে‌কে ওঠে‌নি। তনয়া একটু হাঁটাহা‌ঁটি কর‌লো। তখন ওর ফোনটায় একটা মে‌সেস আস‌লো। মে‌সেসটা দে‌খে তনয়ার শিড়দাড়া বে‌য়ে ঠান্ডা স্রোত ব‌য়ে গেলো। মে‌সেস সাথে একটা ভি‌ডিও। কিন্তু মেসেস বা ভি‌ডিও দু‌টোই আয়া‌তের ফো‌নে আস‌ছে। তনয়া ভুল ক‌রে আয়া‌তের ফোন নি‌য়ে বের হ‌য়েছি‌লো। তনয়া আর এক মুহূর্তও বাইরে দাড়া‌লো না। দৌ‌ড়ে ভিত‌রে চ‌লে গে‌লো। রু‌মে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত কেবল ওয়াশরুম থেকে বের হ‌য়ে‌ছে। তনয়া আয়াতের কা‌ছে গি‌য়ে আয়া‌তের হাত ধ‌রে বলল,

__তু‌মি কী আমায় ছে‌ড়ে দি‌বে আয়াত? আমার উপর কী তোমার মন ভ‌রে গে‌ছে তোমার!

__কী বল‌ছো এসব তনয়া! তু‌মি ঠিক আছো তো?

তনয়া আয়াত‌কে ভি‌ডিওটা দেখা‌লো। তনয়া কতক্ষন আগে বাগা‌নে গা‌ছে পা‌নি দি‌চ্ছি‌লো সেই ভি‌ডিও। আর সা‌থে একটা মে‌সেস,

     তনয়া‌কে তো পে‌য়ে গে‌ছিস। এখন তনয়ার থে‌কে দূ‌রে চ‌লে যা। নি‌জের ভা‌লো চাই‌লে তনয়া‌কে ছে‌ড়ে দে। তাছাড়া তনয়া‌কে তো ভোগ করা হ‌য়ে গে‌ছে, এখন কী চাস ওর কা‌ছে? ওর সা‌থে তো ফি‌জিক্যাল‌লি ইনভলব হ‌য়ে‌ছিস তারপরও ওকে নিজের কা‌ছে কেন রাখ‌ছিস? ছে‌ড়ে দে ওকে। নয়ত আমি তো‌কে ছাড়‌বো না।

‌মে‌সেসটা দে‌খে আয়াত হতভম্ব হ‌য়ে গে‌লো। এমন নোংড়া ভ‌ঙ্গি‌তে কেউ মে‌সেস কর‌তে কিভা‌বে পা‌রে? আয়াত তনয়া‌র গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
__‌বিশ্বাস ক‌রো তনয়া, আমি বুঝ‌তে পার‌ছি না মে‌সেসটা কে পা‌ঠি‌য়ে‌ছে। অ‌া‌মি তোমায় ভা‌লোবা‌সি। তু‌মি আমার স্ত্রী। আর যা‌কে ভা‌লোবা‌সে যে, নি‌জের স্ত্রী তার সা‌থে ফি‌জিক্যাশ রি‌লেশ‌নের পর ভা‌লোবাসা, আরো বা‌ড়ে ‌কিন্ত‌ু ক‌মে না। আর তোমা‌কে ছে‌ড়ে দি‌য়ে আমি কী করে বাঁচ‌বো! তু‌মি আমায় আবার ভুল বুঝ‌বে না‌তো?

__‌ছি আয়াত এগু‌লো কী বল‌ছো? তোমা‌কে কেন ভুল বুঝ‌বো? আমি জা‌নি আমার আয়াত‌কে। আয়াত আমার কথা হ‌চ্ছে এগু‌লো কে কর‌ছে? এত সকা‌লে আমা‌দের বা‌ড়ির ভিতর ঢ‌ু‌কে এভা‌বে ভি‌ডিও কে কর‌লো?

__সেটা আমিও ভাব‌ছি। আয়াত ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছে, এটা বাই‌রের লো‌কের কাজ হ‌তে পা‌রে না। নি‌শ্চিয়ই সে বা‌ড়ির ভিতরে আছে। নয়ত রা‌তে অতদ্রুত পালা‌তে পার‌তো না। তনয়ার ডা‌কে ধ্যান ভাঙ‌তেই তনয়া‌কে বলল, আচ্ছা তনয়া তুমি ক‌বে থে‌কে বুঝ‌তে পার‌ছো যে তোমা‌কে কেউ ফ‌লো কর‌ছে?

__বি‌য়ের আগে প্রায়ই অনুভব করতাম কিন্তু কখ‌নো কাউ‌কে দে‌খি‌নি। কিন্তু বি‌য়ের পর গত একমাস যাবত এসব ‌তেমন কিছু অনুভব করি‌নি। আবার গতকাল থে‌কে অনুভব কর‌ছি।

__আমাকে কেন ব‌লো নি?

__অতটা খেয়াল দেই‌নি আয়াত তাছাড়া তখন কাউ‌কে স‌ন্দেহ হ‌য়‌নি। বা কেউ কোন ধর‌নের ক্ষ‌তি করে‌নি। তাই-----।

__আচ্ছা ওসব টেনশন বাদ দাও। সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে।

__পু‌লিশ‌কে ইনর্ফম করবা?

__আ‌মি দেখ‌ছি তনয়া। তু‌মি টেনশন ক‌রো না। আর ভয় ক‌রোনা। আমি সবসময় তোমার কা‌ছে আছি। 

তনয়া আয়া‌তের বু‌কে মাথা দি‌য়ে বলল, জা‌নিতো! তু‌মি পা‌শে আছো। তাইতো ভয় ক‌রেনা।

__আচ্ছা এখন এক কাপ চা পাওয়া যা‌বে।

__তু‌মি বসো আ‌মি নি‌য়ে আস‌ছি। 

তনয়া রুম থে‌কে যে‌তেই আয়াত মে‌সেসটার দি‌কে স্থির চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল। যে আইডি থে‌কে মে‌সেস আস‌ছে, তা‌কে রিপলাই কর‌লো, 
__‌কে আপ‌নি? কী চান?

__আই ওয়ান্ট ইউর তনয়া!

__কী সব বা‌জে বল‌ছেন? ও আমার স্ত্রী!

__সো হোয়াট! আই লাভ হার এন্ড আই ওয়ান্ট হার। 

__সাম‌নে পে‌লে খুন ক‌রে ফেল‌বো হারামজাদা।

__‌সেটা পার‌বে না ব্রো। এটা ফেইক আইডি, ফেইক জি‌মেইল থে‌কে খোলা, এটা হ্যাক ক‌রেও কোন লাভ হ‌বে না। আর তু‌মি তো আমা‌কে চি‌নো না। ওসব মারামা‌রি কাটাকা‌টির কথা বাদ দি‌য়ে ব‌লো তনয়া‌কে ক‌বে ছাড়‌ছো?

রা‌গে আয়া‌তের হাত নিস‌পিস কর‌ছে। সাম‌নে পে‌লে হয়ত খুন ক‌রে ফেল‌তো। কিন্তু এসব কাজ রা‌গের মাথায় করা ঠিক না। আয়াত যথাসম্ভব নি‌জে‌কে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা কর‌ছে। তারপর লোকটা‌কে মে‌সেস দি‌তে গি‌য়ে দে‌খে আইডি ডিএক‌টিভ ক‌রে রাখ‌ছে। 

আয়াত রা‌গে স‌জো‌ড়ে দেয়া‌লে একটা ঘু‌ষি মার‌লো। কে ওর তনয়ার দি‌কে নোংড়া নজর দি‌চ্ছে? আয়াতের মাথা কাজ কর‌ছে না। ধুপ ক‌রে বিছানার মাঝ বরাবর শু‌য়ে পড়লো।

‌কিছুক্ষন পর তনয়া চা নি‌য়ে এসে দে‌খে আয়াত চিৎ হ‌য়ে বিছানার মাঝ বরাবর শু‌য়ে আছে। তনয়া চায়ের মগটা টে‌বি‌লে রে‌খে আয়া‌তের উপর শু‌য়ে পড়‌লো। আয়াত শক্ত ক‌রে তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। তনয়া চুপ‌টি ক‌রে আয়া‌তের বু‌কে শু‌য়ে রইল। বেশ কিছুক্ষন পর তনয়া বলল,
__‌টেনশন ক‌রো না। হ‌তে পা‌রে কেউ প্রাংক কর‌ছে।

__এরকম প্রাংক কেউ ক‌রে না তনয়া।

__জা‌নি। তু‌মি টেনশন কর‌লে আমি কী কর‌বো?

__তু‌মি শুধু আমায় ভা‌লোবাস‌বে। আর কিছু লাগ‌বে না। ভা‌লোবা‌সি তনয়া। 

__আ‌মিও। এভা‌বে অনেকক্ষন একে অপর‌কে জ‌ড়ি‌য়ে থে‌কে দুজনার হৃদয়ই শান্ত হ‌লো। তনয়া মাথা উঁচু ক‌রে আবার আয়া‌তের গলায় মুখ ডুবা‌লো। অসম্ভব সু‌খের ভা‌লোবাসার অনুভূ‌তি আয়াত‌কে ঘি‌রে ধর‌ছে। তনয়া‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, 

__সকাল সকাল পাগল বানা‌বে না‌কি?

__হ্যাঁ। দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌য়ে। ওঠো তোমার চা এতক্ষ‌নে শরবত হ‌য়ে গে‌ছে। সবাই উঠে গে‌ছে। চ‌লো সব‌ার সা‌থে নাস্তা করবা।
তনয়া উঠ‌তে চাই‌লে আরো শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বল‌ল,
__এভা‌বেই থা‌কো কিছুক্ষন, ভিষন সুখ সুখ লাগ‌ছে।

__তাহ‌লে নাস্তা করা লাগ‌বে না?

__হ্যাঁ। ত‌বে আগে নি‌জের মনটা শান্ত ক‌রে‌নি

__এভা‌বে থাক‌লে আমার ঘুম পায়।

__কেন?

__কারন তোমার বু‌কে খুব শা‌ন্তি। অতি‌রিক্ত শা‌ন্তি‌তে ঘুম পে‌য়ে যায়। 

__তাহ‌লে ঘুমাও।

__এখন ঘুমা‌লে ভা‌বি বল‌বে, সারা রাত না ঘু‌মি‌য়ে এখন কেন ঘুমা‌চ্ছি? সারা রাত কী কর‌ছি। তখন কী বল‌বো? তু‌মি তো জা‌নো ভা‌বি কেমন দুষ্ট।

__‌তো ব‌লে দিব‌া। তোমার আয়াত তোমায় ভা‌লোবাস‌ছে। (দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌য়ে)

__যাহ্ পা‌জি। চ‌লো উঠো।

৫৭!!

সকা‌লে সবাই মি‌লে একসা‌থে নাস্তা কর‌লো। আজ বা‌ড়িতে অনেক হইহুল্লর। লোকজ‌নে ভরপুর। আসে পা‌শের সবাই আয়াত‌কে দেখ‌তে এসে‌ছে। নতুন জামাই ব‌লে কথ‌া। আয়া‌তের খুব বিরক্ত লাগ‌ছে। একেকজন আন্টি আসে আর কেমন অদ্ভুদ ভ‌ঙ্গি‌তে তা‌কি‌য়ে থা‌কে, উদ্ভট সব প্রশ্ন ক‌রে। আয়া‌তের অবস্থা দে‌খে তনয়ার বেশ মজা লাগ‌ছে। তনয়া আয়া‌তের ফো‌নে মে‌সেস কর‌লো,
__কী জনাব কেমন হালচাল?

__‌প্লিজ জানপা‌খি সেভ মি। আন্টিরা আমার অবস্থা বা‌রোটা বা‌জি‌য়ে ফেল‌ছে। 

আয়াত তনয়ার দি‌কে তাকা‌তেই তনয়া চোখ মে‌রে হাস‌ছে। আয়াত সেটা দে‌খে তনয়া‌কে মে‌সেস কর‌লো, খুব মজা নি‌চ্ছো তাই না! একবার রু‌মে আসি তোমায় মজা বুঝা‌বো।
তনয়া দেখ‌লো আন্টিরা আয়াত‌কে একটু বে‌শিই চে‌পে ধর‌ছে তাই তনয়া তা‌দের সাম‌নে গি‌য়ে তা‌দের সা‌থে গল্প কর‌তে লাগ‌লো। আর আয়াত ফা‌ঁকে টুপ ক‌রে উঠে গেলো। আয়াত পা‌শে দা‌ড়ি‌য়ে তা‌মিম আর তানভী এর সা‌থে কথা বল‌ছে। তখন এক আন্টি তনয়া‌কে বলল,

__বাব্বাহ তনয়া তুই তো ভা‌লোই ছক্কা মার‌লি?

__মা‌নে? (তনয়া)

__আয়াতের মত সর্বগুন সম্পন্ন একজন বর পে‌য়ে‌ছিস। আয়াত যেমন দেখ‌তে তেমন ব্যাকগ্রাউন্ট। আর তু‌ই দেখ‌তে শুধু ঠিকঠাক, ছক্কা না মার‌লে, তোর মত আট আঙু‌লী প্র‌তিবন্ধী মে‌য়ে‌কে আয়াতের মত ছে‌লে কেন বি‌য়ে কর‌বে?
তনয়া মাথা নিচু ক‌রে ফেল‌লো। স‌ত্যি মা‌ঝে মা‌ঝে তনয়া ভা‌বে ও কী আয়া‌তের যোগ্য! তনয়া কিছু না ব‌লে চুপ ক‌রে ব‌সে রইল। আয়াত আ‌ন্টির পিছন থে‌কে বলল, 
__কী হ‌লো? তু‌মি চুপ ক‌রে আছো কেন?

__ও আয়াত! আস‌লে?

আয়াত তনয়ার পা‌শে ব‌সে আন্টির সাম‌নে ব‌সে বলল,
__আ‌ন্টি আপনার মে‌য়ে আছে?

__‌কেন?

__আমার ছোট ভাই‌কে দেখ‌ছেন? আমার ফ‌টোক‌পি বল‌তে পা‌রেন। ওর জন্য মে‌য়ে খুঁজ‌ছি। আপনার মে‌য়ে আছে? তনয়া অবাক ভ‌ঙ্গি‌তে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। আয়াত আয়াজ‌কে ডাক দি‌লো। আয়াজ আয়া‌তের পা‌শে এসে বস‌লো। আন্টিও খু‌শি‌তে গদগদ হ‌য়ে তার মে‌য়ে‌কে ডাক দি‌লো। আয়াত মে‌য়েটা‌কে দে‌খে বলল, আপনার নাম?

__নিপূন!

__‌কিসে প‌ড়েন?

__চতুর্থ ব‌র্ষে এবার। 

তনয়া বলল, তুই তো আমার সা‌থে ছি‌লি নিপূন!

__আস‌লে HSC তে দুবার ফেল ক‌রে‌ছিলাম।

__আয়াত বলল, জব ক‌রেন?

__না। তার দরকার হয়না। হাত খরচ বাবা দেয়।

__আয়াত বলল, আন্টি কিছু ম‌নে কর‌বেন না তনয়া আর অাপনার মে‌য়ের কিছু পার্থক্য দেখাই।
লেখাপড়ায় আপনার মে‌য়ে দুবার ইন্টার ফেল অথচ তনয়া SSC, HSC দু‌টো‌তে A+। আপনার মে‌য়ে কেবল চতুর্থ ব‌র্ষে তনয়া অল‌রে‌ডি MBA শেষ কর‌ছে। আপনার মে‌য়ে বেকার, তনয়া খুব ভা‌লো প‌জিশ‌নে জব কর‌ছে। তনয়া‌কে নি‌জের প্র‌য়োজ‌নে কা‌রো কা‌ছে হাত পাত‌তে হয়না। বরং অন্য‌কে সাহায্য ক‌রে।

এবার আসি বা‌হি‌য্যিক গু‌নের কথায়!
য‌দিও মানু‌ষের শারী‌রিক সৌন্দর্য্য আমা‌দের কা‌ছে মুখ্য নয়। তবুও রূপ, রং, গুন আর সৌন্দ‌র্য্যে তনয়া আপনার মে‌য়ের থে‌কে বে‌শি ছাড়া কোন অং‌শে কম নয়। আর আপ‌নি আপনার নি‌জের মে‌য়ের দি‌কে না তা‌কি‌য়ে তনয়ার দু‌টো আঙুল নেই ব‌লে তা নি‌য়ে প‌ড়ে আছেন।
আয়াজ তোর কা‌ছে ওনার মে‌য়ে‌কে কেমন লা‌গে?

__ভাইয়া আমরা ছে‌লেরা মে‌য়ে‌দের রূপ দেখার আগে তা‌দের গুন, ব্য‌ক্তিত্ব আর প‌রিবারিক শিক্ষা দে‌খি। সো ওনার মে‌য়ে‌কে পছন্দ করার প্রশ্নই আসে না।

আ‌ন্টি মুখ বা‌কি‌য়ে যে‌তে নি‌লে আয়াজ বলল,
__আ‌ন্টি মানুষের ত্রু‌টি খু‌ঁজে তা‌কে ছোট করা খুব সহজ। কিন্তু তার ত্রু‌টি বাদ দি‌য়ে তা‌র সা‌থে উত্তম ব্যবহার করা ক‌ঠিন।

আয়াত উঠে আন্টির মে‌য়ে‌কে বলল, আপনার মা আমার তনয়া‌কে অপমান ক‌রে‌ছে ব‌লে আমি আপনার উদাহরন ‌দি‌য়ে তা‌কে বু‌ঝি‌য়ে‌ছি। তার জন্য আন্ত‌রিকভা‌বে দুঃ‌খী‌তো বোন। আমা‌কে ক্ষমা কর‌বেন। আপনার মাকে বুঝা‌বেন মানুষ তার ক‌র্মে বড় হয়, শারী‌রিক সৌন্দ‌র্য্যে নয় ।

‌মে‌য়েটা মৃদু হে‌সে ইট'স ওকে ব‌লে চ‌লে গে‌লো।

আয়াত আয়াজ দুজ‌নে হে‌সে তনয়া‌কে বলল,
__কী কেমন দিলাম?

তনয়া বলল, তোমরা দুজন বড্ড খারাপ। আয়াত আর আয়াজ দুজ‌নে হা হা ক‌রে হাস‌ছে। 

সারা‌দি‌নের হইহু‌ল্লো‌রে তনয়া সকা‌লের কথা একদম ভু‌লে গে‌লো। কিন্তু আয়াত ভুল‌লো না। ও ফোন ক‌রে থানায় একটা রিপোর্ট ক‌রে রাখ‌ছে। আয়াজ‌কে বিষয়টা খু‌লে বল‌ছে। আয়াজ বিষয়টা খু‌টি‌য়ে দেখ‌বে ব‌লে প্র‌মিজ কর‌ছে। 

৫৮!!

রা‌তে তনয়া আয়া‌তের পে‌টে মাথা দি‌য়ে শু‌য়ে শু‌য়ে কথা বল‌ছে। হঠাৎ তনয়ার ম‌নে হ‌লো, দরজার পাশ থে‌কে একটা ছায়া স‌রে গে‌লো। আজ রু‌মের সব জানালা বন্ধ।  তনয়া আয়াত‌কে বল‌তেই আয়াত তনয়ার মন ড্রাইভাট করার জন্য বলল, 
‌তোমা‌দের বাসায় এত লোক হয়ত কেউ হাঁটাহা‌ঁটি করছে। তনয়া আয়া‌তের কথাটা মান‌লেও তনয়ার কপা‌লে চিন্তার সূক্ষ্ণ ভাজ পড়‌লো। আয়াত তনয়ার মন ঘুরা‌নোর জন্য ওকে শুরশু‌ড়ি দি‌তে শুরু ক‌রে। তনয়া হা হা ক‌রে হাস‌ছে আর আয়াতকে থাম‌তে বল‌ছে। একটু পর আয়াত তনয়ার সা‌থে দুষ্ট‌মি কর‌তে কর‌তে গলায় মুখ ডুবা‌লো, ওম‌নি মাাাা__________ ব‌লে চিৎকা‌রে পু‌রো বা‌ড়ি জে‌গে উঠ‌লো। তনয়া ভ‌য়ে আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। আর ভাব‌ছে এত রা‌তে কে চিৎকার দি‌লো?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন