__আয়মন আপু তুুমি! এখানে? কিভাবে?
__সেটা পরে বলি আগে বল তুই কেমন আছিস?
__আমি খুব ভালো আছি। তুমি?
__এতদিন মোটামুটি ছিলাম কিন্তু এখন বাচ্চাটাকে দেখে একদম খুব ভালো হয়ে গেছি। এখন শরীর কেমন লাগছে? কাল রাতের থেকে বেটার?
__এক মিনিট আপু তুমি কিভাবে জানলা কাল রাতে আমার শরীর খারাপ ছিলো?
__আয়মন হেসে জবাব দিলো, আয়াত বলছে।
__কী? কিন্তু তুমি আয়াতকে কী করে চিনো?
__সেটা আয়াতের থেকেই পরে কখনো জেনে নিও। আচ্ছা চলো ভিতরে গিয়ে বসে কথা বলি।
তিনজন একটা টেবিলে বসে কফি অর্ডার করলো, তনয়া বলল,
__তা আপু তোমার হাজবেন্ড কোথায়? তাকে কেন দেখছি না?
__তনয়া আমার হাজবেন্ড থাকলে তো দেখবা!
__মানে কী আপু।
__আসলে বাচ্চা আমি এখনো বিয়ে করিনি।
__কী? (তনয়া বিস্ময়ের সপ্ত আসমানে তখন) কিন্তু তাহলে সবাই যে জানে!
__ওটা ভুল জানে। হ্যাঁ তখন ঐ কথাটা আমিই ছড়িয়েছিলাম।
__কিন্তু কেন আপু?
__তনয়া তোমার ভাইয়ার উপর খুব রাগ হয়েছিলো। না মানে তোমার বাবা আমায় অপমান করলো, ও পারতো তাকে সঠিকটা বুঝাতে কিন্তু ও ভীতুদের মত চুপ ছিলো। সব জেনেও কোন প্রতিবাদ করেনি। আমি এটা বলিনি, ও তোমার বাবার সাথে ঝগরা করুক বা তার সাথে বেয়াদবী করুক। কিন্তু আমার মতে যেটা ভুল, যেটা অন্যায় সেটাই অন্যায়ই। সে অন্যায় যেই করুক না কেন, হোক সে প্রেমিকা, ভাই-বোন বা বাবা-মা ও সেদিন আমাকে সাপোর্ট না করে উল্টো আমাকে তোমার বাবার কাছে আমাকে মাফ চাইতে বলে। আমি অন্যায় না করে কেনো মাফ চাইব! তারপরও তোমার ভাইয়াকে ছাড়ার ইচ্ছা ছিলোনা। কিন্তু সে তোমার বাবার কথা শুনে আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। বিষয়টা আমার আত্মসম্মানে খুব লেগেছে। তাই চলে এসেছি। কিন্তু আমি জানতাম ও আমায় খুঁজবে তাই রাগের মাথায় সবাইকে বলে দিলাম বিয়ে করে ফেলছি। আসলে ছোট বেলা থেকেই আমার আত্মসম্মান বোধ, একঘেয়েমিপানা আর রাগটা একটু বেশি। সে সব কথা বাদ দাও তানভির কেমন আছে? আর ওর ওয়াইফ আর বাচ্চা?
__হ্যাঁ ভালো কিন্তু আপু তুমি দাদাভাইকে ভুল বুঝে চলে না আসলেও পারতে।
__তনয়া সেটা আমি জানি। ভুল যতটা তানভিরের ছিলো ততটা আমারও ছিলো। পরে শুধরানোর চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু ততদিনে তানভিরের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ওর সংসারে অশান্তি চাইনি বলে আর তোর দাদাভাইয়ের সামনে যাইনি। জানিস বাচ্চা গুনিজনেরা বলে বা পৃথিবীর শুরু থেকে একটা কথা আছে, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিনটে জিনিস আল্লাহ নাকি ঠিক করে রাখছে। তো তানভির আর আমার প্রেমটা অবেলার ছিলো যেটা বেলা ফোটার আগেই অবেলায় থেমে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আমরা দুজন দুজনার জন্য জন্ম নেইনি তো বিয়ে কি করে হবে! উপরওয়াল বিধান বলেও তো একটা কথা আছে। আমি এখন ওসব নিয়ে কষ্ট পাইনা। তুই তো জানিস আমি বরাবরই খুব প্রাকটিক্যাল। যেটা গেছে সেটা গেছে, এখন নতুন করে জীবন সাজাতে ভালোবাসি।
__কিন্তু আপু দাদাভাই তো তোমার মত প্রাকটিক্যাল না। সে তো তোমাদের সেই সময়টাতেই আটকে আছে। তাই তো লাবিবা ভাবির সাথে বিয়ের পাঁচ বছর হবার পরও ভাইয়া ভাবিকে এখনও মেনে নিতে পারেনি। হ্যাঁ তাদের হয়ত ক্ষনিকের ভালোবাসার ফল তাদের মেয়ে "তৃপ্তি" কিন্তু তাদের ভিতর ভালোবাসার ছিটাফোটাও নেই। লাবিবা ভাবি দাদাভাইকে যত কাছে টানতে চায় দাদাভাই ততটাই দূরে চলে যায়। কারন সে এখনও তোমাকেই ভালোবাসে।
__তুই জানিস তোর দাদাভাইয়ের প্রবলেম কী?
__কী?
__সবসময় এক লাইন বেশি বোঝে। প্রথমে নিজের বোকামির কারনে আমাকে হারালো আর এখন নিজের আরেকটা বোবামির কারনে লাবিবা নামের মেয়েটিকে কষ্ট দিচ্ছে। আসলে ছেলেদের প্রবলেমই এটা এরা মেয়েদের বুঝতে চায়না। সবসময় নিজেদের মত ভাবে। সব ছেলেরা এক।
আয়াত কাশি দিয়ে বলল,
__এহেম এহেম আপু আপনি বোধয় ভুলে যাচ্ছেন আমি এখানে আছি।
__ওপস স্যরি। (আয়মন)
__তনয়া বলল, কিন্তু আপু দাদাভাইকে শত বুঝিয়েও লাবিবা ভাবির সাথে মিট করাতে পারিনি। এখন কী করবো তুুমি বলো?
__আচ্ছা আমি সপ্তাহ দু পর তোর দাতাভাইয়ের কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলবো।
__কিন্তু আপু ভাইয়া যদি জানে তুমি এখনও তার জন্য বিয়ে করোনি তখন?
__বিয়ে করিনি তবে সামনের সপ্তাহে করবো।
__মানে?
__আসলে গত দুবছর যাবত একজন আমাকে পছন্দ করে নাম হিমেল। বাসায়ও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে কিন্তু তোর ভাইয়াকে মন থেকে নড়াতে পারিনি বলে হিমেলকে হ্যাঁ বলিনি। তবে আজ হ্যাঁ বলবো আর এক সপ্তাহের মাঝে বিয়ে করবো। তারপর নিজের বর নিয়েই তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করবো।
__তো তুমি লাইফে মুভ অন করতে চাইছো?
__হ্যাঁ আসলে ২৭ বছর পেরিয়ে গেলো। ভাবছি জীবনের ২৮ তম বসন্ত হিমেলের হাতে হাত রেখে কাটাবো। কী বলিস কেমন হবে? তনয়া মৃদু হাসছে তা দেখে আয়মন বলল, একটা কথা কি জানিস তনয়া সময় যে কোন ঘায়ের মহা ঔষধ। সময়ের সাথে সাথে আমার তানভির নামক নেশাটা হয়ত কেটে গেছে। তানভিরেও কেটে গেছে কিন্তু ও ওর রেশটাকে কাটাতে চায়না তাই লাবিবার মত স্ত্রীকে কষ্ট দিচ্ছে। যাই হোক জীবনের ২৭ টা বসন্ত শূন্যতায় কাটিয়ে এবার আমি ২৮ তম বসন্তে হিমেলের হাত ধরে পূর্ণ হবো।
তনয়া আয়াত মৃদু হাসলো। তারপর তিনজন মিলে আরো অনেক গল্প করে, বিকালটা এক সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যার পর হোটেলে ফিরলো। আয়াত তনয়াকে বলল রুমে যেতে ও কিছু কাজ সেরে আসছে। তনয়া আচ্ছা বলে চলে গেলো।
আয়াত নিজের কাজ সেরে হোটেলের লবিতে এসে যা দেখলো তা চোখ তালের বিচির মত বড় বড় হয়ে গেলো। দেখলো তনয়া একটা ছেলের মাথার চুল ধরে টানছে, আর মারছে। আয়াত দৌড়ে এসে তনয়াকে ধরে ছেলেটাকে ছাড়িয়ে দিলো। তনয়া হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে। আয়াত তনয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে তুলে অপর পাশে নিয়ে বলল,
__কী হলো কে লোকটা? আর তুমি তাকে মারছো কেন?
__ঐ সেই হারামজাদা রিসাদ। ও তোমাকে লুচ্চা বলছে। ঐ হারামজাদাকে আমি খুন করে ফেলবো। ছাড়ো আমাকে।
পাশ থেকে রিসাদ বললো,
__তো লুচ্চা না হলে কেউ তোর মত বিয়ে পালাতক মেয়েকে বিয়ে করে। তনয়া আয়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুম করে রিসাদের নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দিলো। আয়াত কোন মতে তনয়াকে ঝাপটে ধরে ধমক দিলো। তনয়া চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। আয়াত তনয়াকে ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করলো,
__কী হয়েছে পুরোটা খুলে বলো?
__আয়াত আমি হোটেলে ঢোকার সময় ঐ রিসাদ হারামজাদা আমায় কী বলছে জানো?
__কী?
আসলে তনয়া যখন হোটেল রিসিপসনিস্ট এর কাছ থেকে কিছু কথা বলে রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখন রিসাদের সামনে পড়ে। তো কেজুয়ালি নিজের অপরাধ বোধ থেকে তনয়া রিসাদকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন? কারন সেদিন তনয়া শুনছিলো পালিয়ে আসায় রিসাদের খুব অপমান হয়েছিলো। তাই রিসাদের কাছে স্যরি বলার জন্য নিজে থেকে কথা বলছিলো। কিন্তু রিসাদ বললো,
__হুমম ভালো। তুমি? (গম্ভীর গলায়)
__হ্যাঁ ভালো।
__তা এখানে কিভাবে?
__অফিসের কাজে।
__ওহ তা শুনলাম অফিসের বসের পিএ হবার কাজ করার সাথে সাথে তার পারসোল চাহিদাও পূরন করছো।
__ভদ্রভাবে কথা বলবেন।
__বাহ্ এখন বুঝি অভদ্র হয়ে গেলাম! তা যদি সেই বিয়ের আগে বসকেই দিয়ে নিজেকে স্যাটিসফাইড করবি তবে আমার কী প্রবলেম ছিলো। তোর বসের থেকে আমিও কম না। ইভেন তোর বসের মত লুচ্চা না যে, অফিসের পিএ এর সাথেই।
কথাগুলো শুনে তনয়ার এত রাগ হলো যে, সবার সামনে বসেই রিসাদকে চড় মেরে চুল টেনে মারা শুরু করলো। আর পরের ঘটনাতো আগেই বললাম। তনয়ার কথা গুলো শুনে আয়াতেরও প্রচন্ড পরিমান রাগ লাগছে কিন্তু এত মানুষের সামনে আর সিনক্রিয়েট করতে চয়না তাই শান্ত গলায় তনয়াকে বলল,
__ওসব ফালতু রাস্তার লোকের সাথে কথা বলে নিজের ভাবমূর্তি কেন নষ্ট করাবা। চলো।
__রিসাদ চেচিয়ে বলল, যা যা নিয়ে যা এমনিতেও আমার ইউস করা সেকেন্ড হ্যান্ড মেয়ে। আর রাস্তার মেয়ে তোর বৌ।
রিসাদের কথায় আয়াতের এত রাগ উঠলো যে, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না। আচ্ছামত ধোলাই দিলো। হোটেলে মোটামুটি একটা ঝটলা পেকে গেলো। হোটেলের সবাই মিলে সব ঠিক করে দিলো।
তনয়ার খুব খারাপ লাগছে। ভিষন লজ্জাও লাগছে। এমন সিনক্রিয়েট হবে চিন্তাও করতে পারেনি। রিসাদ আবার বলা শুরু করলো,
__যেমন লুচ্চা বস তার তার তেমন পিএ।
তনয়া আবার রিসাদকে মারতে গেলে আয়াত তনয়াকে কোলে করে নিয়ে আসে। তনয়া হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো। আয়াত আসার পথে হোটেলের ম্যানেজারকে পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে বলল। ম্যানেজার বলল ঠিক আছে।
আয়াত তনয়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো। তনয়া বলল,
__আয়াত ঐ হারামজাদার নাক আমি কেটে দিবো।
__অলরেডি নাক ফাটিয়ে দিয়েছো আবার কাটা কেন লাগবে?
তনয়া আবার উঠে যেতে নিলে আয়াত তনয়াকে সহ বিছানায় পড়লো। তনয়ার উপর নিজের পুরো ভরটা ছেড়ে দিতেই তনয়া নড়ার মত শক্তি পাচ্ছিলো না। তনয়ার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
__এত রাগ কেন তোমার?
__রিসাদের বাচ্চা রিসাদ তোমায় কেন খারাপ কথা বলল!
__আমায় কেউ কিছু বললেই কী তাকে মারতে হবে?
__হ্যাঁ।
আয়াত তনয়ার গালে হাত দিয়ে বলল, শান্ত হও। তারপর আয়াত তনয়ার চোখের দিকে তাকাতেই যেনো কোন এক অজানায় হারিয়ে গেলো। একে অপরের দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে রইল। এভাবে কতক্ষন চলে গেলো তা দুজনের খেয়াল নেই। আয়াত তনয়ার কপালে চুমো একে দিয়ে বলল,
__এভাবে এতটা কাছে থাকলে তোমাকে আরো কাছে পেতে ইচ্ছা করে। ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। নিশ্বাসে মিশিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।
তনয়া লজ্জা পেয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল,
__তো আমি কী নিষেধ করছি নাকি?
__আমাদের বিবেক নিষেধ করছে।
তনয়া আয়াতের হৃদস্পন্দন স্পষ্ট অনুভব করছে। আয়াতের বুকের ধক ধক শব্দ গুলো সোজা তনয়ার হৃদয়ে আঘাত করছে। এখন কথা হচ্ছে দুজনার চোখে চোখে, আর হৃদয়ের আওয়াজে।
তনয়া আয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চোখ বন্ধ করে বুকে ছোট ছোট চুমো এঁকে দিচ্ছে। তনয়ার অতিরিক্ত ঘোরে ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। আয়াতের শরীরের গন্ধতে এত মাদকতা কেন? যেটা তনয়াকে পাগলের মত টানে। তনয়া আয়াতকে জিজ্ঞেস করলো,
__তোমার শরীরের গন্ধটা আমায় এত কেন টানে?
__যেমন তোমার মাদকতা আমায় টানে। জানো তোমার এতটা কাছে থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে কতটা কষ্ট হয়। আচ্ছা তনয়া, তোমায় কী আজ জাস্ট একটু ভালোবাসবো?
__একটু কেন বেশি করে বাসো?
__নাহ্। আমি রুমে যাচ্ছি তোমার কাছে থাকলে মাথা ঠিক থাকেনা।
আয়াত উঠতে নিলে তনয়া বলল,
__প্লিজ আয়াত যেওনা। কাল তো চলে যাবো। তারপর আবার দুজন দূরে থাকবো। আজ নাহয় তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই। প্লিজ।
তনয়ার মায়া ভরা আকুতি আয়াত ফেলতে পারলো না।
রাতে দুজন রুমে বসেই খাওয়া দাওয়া করলো। হোটেল রুমের বারান্দায় বসে রাতের চট্টোগ্রামটাকে দেখছে। কী অসাধারন সুন্দর। রাতের নিয়ন আলো শহরটাকে আরো মোহময়ী করে তুলছে। তনয়া আয়াতের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
__আয়মন আপুর খোঁজ কী করে পেলে?
__তুমি আয়মন আপুর যে, ডিটেইলস দিয়েছিলে সে অনুসারে আগের ঠিকানায় খোঁজ নিলাম একটু চেষ্টা করতেই পেয়ে গেলাম। পরে ফোন নাম্বার যোগার করে তোমার কথা বলতেই চিনে গেলো। আর বাকিটা তো তখন বললাম।
__আয়াত আরেকটা কথা জানার ছিলো।
__হুমম বলো?
__আয়মন আপু নাহয় দাদাভাই আর লাবিবা ভাবির সম্পর্ক ঠিক করে দিবে কিন্তু তোমার আর মেজদাদাভাই এর ঝগরা কবে ঠিক হবে?
__তোমার ঘারত্যারা ভাই চাইলে ঠিক হবে। এ ছাড়া সম্ভব নয়।
__তামিম দাদাভাই কবে যে তোমার উপর রাগ করা কমাবে কে জানে।
আয়াত তনয়াকে বুকের উপর নিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর বললো,
__পুরোনো কথা বাদ দাও তো। এখন ঘুমাও। আগামীল সকালে বাড়ি যাচ্ছি। আরো দু চার দিন থেকে কক্সবাজার ঘুরে যেতাম কিন্তু নয় দিন পর তোমার এমবিএ এর ফাইনাল পরীক্ষা। তাই চেয়েও তোমায় নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারছিনা। তবে তোমার পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ে করবো। তখন তোমায় নিয়ে সব জায়গায় ঘুরবো, তখন আমাদের মাঝে দেয়াল থাকবে না। থাকবে শুধু ভালোবাসা।
তনয়া আয়াতের বুকের মাঝে চুমো খেয়ে বলল, তোমার বুকে আছি এটাই বড় পাওয়া। বাকি পৃথিবী ভ্রমন পরে করবো। তুমিই তো আমার পৃথিবী।
আয়াত তনয়ার চোখে, কপালে মাথায় অনেকগুলো ভালোবাসার পরশ দিয়ে তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই তনয়া ঘুমিয়ে পড়লো।
আর আয়াত ভাবছে তামিম আর ওর কলেজ জীবনের ঝগরার কথা।
তখন ওরা অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে………
—————
তখন আয়াত আর তামিম দুজনেই অনার্স ৩য় বর্ষে ছিলো।
একই ডিপার্টমেন্ট এ দুজন পড়তো। দুজনার ভিতর বিশেষ বন্ধুত্ব না থাকলেও তেমন গাঢ় শত্রুতাও ছিলোনা। তবে দুজন দুজনকে বিশেষ পছন্দ করতো না। শুরু থেকেই তামিম আয়াতকে সহ্য করতে পারতো না, আয়াতও তেমন তামিমকে পছন্দ করতো না। কেন যে ওরা একে অপরকে পছন্দ করতো না তা নিজেরাও জানতো না। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কোন কারন ছাড়াই সহ্য হয়না। ওদের ক্ষেত্রেও তেমন।
ওদের পুরোপুরী শত্রুতার সূত্রপাত হয় আয়াতের একটা ভুলের কারনে হয়েছে।
একদিন আয়াত আর ওর বন্ধুরা মিলে ক্যামেরা দিয়ে নিজেরা নাটক এর অভিনয় করে ভিডিও করছিলো। ভিডিও শেষে আয়াত ফোনে কথা বলতে বলতে কলেজের পিছনে পুকুর পাড়ে চলে যায়। তখন দেখে তামিম একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। আসলে ওটা তামিমের গার্লফ্রেন্ড ছিলো। আয়াতের মনে শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো। ওর হাতে থাকা ক্যামেরা দিয়ে তামিমের ঐ অবস্থার কয়েকটা ছবি তুলে। আয়াত মজা করার উদ্দেশ্যে ছবিগুলো তুলছিলো। কিন্তু সেটাই ওদের জন্য কাল হলো।
সেদিন ছবি তুলে যাবার পর আয়াত বাড়ি গিয়ে ওর বন্ধুদের ক্যামেরা দিয়ে বলে ভিডিও ঠিক করতে। কিন্তু তামিম এর ছবিগুলোর বিষয়টা বেমালুম ভুলে যায়। ফলাফল হিসাবে আয়াতের বন্ধুরা তামিমের ছবিগুলো দেখে পুরো কলেজে ছড়িয়ে দেয়। কলেজের প্রিন্সিপাল তামিমকে অপমান করে কলেজ থেকে বের করে দেয়। তামিমের জিএফ এর বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা। এমনি তামিম প্রচন্ড রাগী ছেলে তারপর কলেজ থেকে বের করে দেয়া আর গার্লফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ওর রাগ তিনগুন বেড়ে যায়। আর যখন শুনে ওর ছবিগুলো আয়াত তুলছিলো তখন তো রাগ চুরন্ত সীমায় গিয়ে পৌঁছে। যার ফলাফল হিসাবে তামিম আয়াতকে অনেক মারে। সবাই তো ভেবেছিলো আয়াতের বাঁচা মুসকিল। তবুও আয়াত বেঁচে যায় কিন্তু টানা তিনমাস বিছানায় থাকতে হয়। আর পুরোপুরি সুস্থ হতে সাত আট মাস লেগে যায়।
আয়াত পুলিশের কাছে তামিমের নাম একবারও বলেনি আর পুলিশকেও তদন্ত করতে দেয়নি। কারন তামিমের ক্ষতির কারনটা আয়াত নিজেই, হোক সেটা ইনডায়রেকলী। ভুলটা তো আয়াতেরই, না ও ছবি গুলো তুলতো না তামিম এর এত বদনাম হতো। তারপরও আয়াত প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে সত্যিটা বলছিলো, কিন্তু রাগে অপমানে তামিম অন্য কলেজে ভর্তি হয়। আয়াতেরও ছোটবেলা থেকে দেখা স্বপ্ন ভেঙে যায়। ক্ষতি দুজনেরই হয়েছে, আর রাগও দুজনেই পুষে রেখেছিলো।
যতটা রাগ আয়াতের উপর তামিমের ছিলো, ততটা রাগ তামিমের উপর আয়াতেরও ছিলো কারন ওরও স্বপ্ন ভেঙেছিলো। কিন্তু তনয়াকে ভালোবাসার পর, তনয়ার জন্য তামিমের উপর থেকে সব রাগ চলে যায়। আয়াত ভাবছে, আমাদের অনেক সময় অজান্তে করা ভুলের কারনে অন্যদের অনেক ক্ষতি হয়। যেমন, আমার আর তামিমের ক্ষেত্রে হয়েছিলো। তাই সবসময় যেকোন কাজ করার আগে শতবার ভাবা উচিৎ।
আয়ারতর বুকে তনয়ার গরম নিশ্বাস পড়তেই আয়াতের ধ্যান ভাঙলো। তনয়া এখনও আয়াতের বুকের উপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। তনয়াকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে নিজে নিজে বলল,
__তোমার জন্য সব করতে পারি। নিজের শত্রুতাও ভুলে যেতে পারি। কিন্তু তোমার ভাইকে খুব ভয় হয়। কারন তোমার ভাইকে তো চিনি। ও রাগটা এত মাস যাবত চেপে রাখছে তারমানে যখন কিছু করবে সেটা মারাত্মক কিছু করবে। হয়ত আমাদের সম্পর্কও ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি আমার তনয়াকে কখনো ছাড়বো না। ভালোবাসি খুব বেশি তনয়াটাকে। তনয়াকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আয়াত চোখ বন্ধ করলো।
মাঝরাতে,
কেন জানি তনয়ার ঘুমটা ভেঙে গেলো। ইদানিং প্রায়ই মাঝরাতে তনয়ার ঘুম ভেঙে যায়। ও অনুভব করলো, এখনও আয়াতের উপর তনয়া শুয়ে আছে। তনয়া নিজে নিজে বলছে,
__ইশ আয়াতের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু চেয়েও নামতে পারছেনা, কারন আয়াত শক্ত করে জড়িয়ে আছে। তনয়া মৃদু হেসে আয়াতের মুখের দিকে তাকালো। সবুজ রঙের ডিমলাইট জ্বলছে রুমে, হালকা আলোয় আয়াতকে বেশ লাগছে। খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো আয়াতকে আরো আকর্ষনীয় করে ফেলছে। তনয়া নিজের গালটা আয়াতের গালে আলতো করে ঘষা দিতেই নিজে নিজেই কেঁপে উঠে।
অনেকক্ষন যাবত আয়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আয়াত গভীর ঘুমে। তনয়া আলতো করে আয়াতের চোখে, নাকে, কপালে, গালে ঠোঁট ছোয়ালো। অতঃপর বেশ কিছুক্ষন আয়াতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে হালকা একটা চুমো খেয়ে নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকালো।
তনয়া আয়াতের বুকে মুখ লুকাতেই আয়াত মৃদু হেসে তনয়াকে জড়িয়ে নিলো। তনয়া ভাবছে ও যে, আয়াতকে আদর করছে সেটা আয়াত ঘুমের থাকায় বোঝেনি। আর আয়াত তনয়ার আদরটা উপভোগ করার জন্য চুপ করে ঘুমের ভান ধরে ছিলো। একবার আয়াত চাইছিলো চোখ মেলে তনয়াকে লজ্জা দিবে কিন্তু পরোক্ষনে ভাবলো নাহ থাক কী দরকার লজ্জা দেয়ার। মেয়েরা এসব বিষয়ে এমনি লাজুক তারপর যদি হাতেনাতে ধরা পরে তবে লজ্জায় কান্না করে দিবে। তার থেকে কিছু ভালোবাসা নাহয় লুকোচুুরিতে থাকুক। লুকোচুুরির ভালোবাসাগুলো বেশ হয়।
৪০!!
পরেরদিন সকালের ফ্ল্যাইটে ঢাকা আর ঢাকা থেকে ডিরেক্ট বরিশাল এসে পড়লো আয়াত তনয়া। যাবার পথে জার্নিতে তনয়া যে পরিমান অসুস্থ হয়েছিলো, তার কারনে আসার পথে আর অতিরিক্ত জার্নির ঝুকি নেয়নি আয়াত। তনয়াকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়াত নিজের বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলে, আয়াতের মা লুবনা বেগম বলল,
__শুনলাম তোর সাথে নাকি ঐ মেয়েটাও গিয়েছিলো?
__কোন মেয়েটা?
__তনয়া, তোর বাবার পি এ।
__হ্যাঁ।
__কেন?
__কেন মানে কী? কাজে জন্য গেছিলো। কেনো বাবা বলেনি অফিসে কাজের প্রজেক্ট এর কারনে গিয়েছিলো।
__ওহ তা প্রজেক্ট এর কাজ বুঝি রাতে দুজন এক রুমে থাকতে হয়?
__ওহ সব খবর রাখো দেখছি।
__ছেলে মেয়ে যখন উচ্ছন্নে যেতে নেয় তখন বাবা মাকে সব খোঁজ খবর নিতে হয়। আয়াত এখনও বলছি মেয়েটার থেকে দূরে সরে যা। লোক জানাজানি হলে বিষয়টা নিয়ে লোক থু থু দিবে। মান সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে।
__কুল ডাউন মা। আমি তো বলছি তনয়াকে বিয়ে করবো। তোমার নিজের মান সম্মানের বেশি খেয়াল থাকলে অাজই তনয়াকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসি? তাহলে কোন সমস্যা হবেনা। তোমার মানও যাবে না। কী বলো?
লুবনা চোখ বড় বড় করে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, এই ছেলেটা বরাবরই এমন। সবসময় নিজের মনমর্জি মত কাজ করে। কারো কথার ধার ধারেনা। ওকে বেশি কিছু বললে কিনা তনয়াকে সত্যি সত্যি বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসে তখন করার কিছু থাকবে না। তার চেয়ে বরং চুপ থাকি। লুবনা চুপ করে নিজের খাওয়ায় মন দিলো। আয়াত ওর বাবার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। আয়াতের বাবা বিরবির করে লুবনা বেগমকে বলছে, তোমাকে একমাত্র আয়াতই হ্যান্ডেল করতে পারে। কারন বাকি সবাই ওনাকে খুব ভয় পায়।
দেখতে দেখতে আরো বিশ দিন কেটে যায়।
তনয়ার পরীক্ষার চলছে তাই অফিস যাচ্ছেনা। পড়শুনায় ব্যাস্ত। এর মধ্যে আয়মন আর হিমেল এর বিয়েও হয়ে গেছে। তেমন কোন আয়জন হয়নি, রেজিট্রি অফিসেও যায়নি। শুধু মাত্র কজন বড়রা মিলে বাড়িতে কাজি ডেকে এনে বিয়ে হয়েছে। আর সবাই মিলে টুকটাক খাওয়া দাওয়া।
আয়মন, আয়াত তনয়াকে ফোনে বলছে, আগামীকাল বরিশাল আসছে তানভিরের সাথে দেখা করতে। আজ তিনদিন যাবত আয়াত তনয়াকে দেখছেনা। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। তনয়া অফিস যাচ্ছেনা, সারাদিন পড়া নিয়ে ব্যাস্ত। আয়াতের অফিসের কাজের চাপ খুব বেড়ে যাওয়ায় ও দেখা করতে আসতে পারছে না।
দুপুরের পর তনয়া সামনে বসে পড়ছে তখন দরজায় টোকা পরলো। দড়জা খুলে দেখে আয়াত দাড়িয়ে। আয়াতকে দেখে মৃদু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
__কী খবর বস? কেমন চলে দিনকাল?
আয়াত কোন কথা না বলে ভিতরে ঢুকে দরজাটা লক করেই তনয়াকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
__আই মিস ইউ! আই মিস ইউ! আই মিস ইউ! আই মিস ইউ! তনয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আয়াত আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখো বাদরের মত লাফালাফি করোনা। তিনদিন পর তোমায় দেখছি, এখন তিন ঘন্টা জরিয়ে ধরে থাকতে দাও তো। নয়ত মনটা শান্ত হবেনা।
__সে নাহয় জড়িয়ে ধরো কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখো রুমে আরো লোক আছে।
আয়াত সামনে তাকাতেই তনয়াকে ছেড়ে দিলো। কারন সামনে তানভী মেঘা, তামিম আর রশ্মি বসা। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে আর তামিম রাগী চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় চোখ দিয়েই আয়াতকে মেরে ফেলবে। আয়াত তনয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল। রশ্মি বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল,
__আরে স্যার কেমন আছেন?
__হ্যাঁ ভালো তুমি? (আয়াত)
__জি ভালো।
আয়াত মেঘাকে দেখে বলল, তুই এখানে?
মেঘা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কারন মেঘা তো তানভী এর সাথে ঘুরতে গেছিলো। কোন রকম তুতলিয়ে বলল,
__ভাবির কাছে কিছু কাজ ছিলো, সেটার জন্য ভাবির সাথে দেখা করতে আসছি।
__ওহ।
মেঘার মুখ থেকে ভাবি ডাক শুনে তামিম আরো চমকে উঠলো। তনয়া বারবার তামিমের দিকে তাকিয়ে ঘামছে। কারন আয়াত আর তামিমের বিষয়টা এখনও ঠিক হয়নি। আয়াত তনয়ার অবস্থা দেখে বলল,
__টেনশন করোনা, ও শালাকে আমি দেখছি। আয়াত তামিমের কাছে গিয়ে হাতবাড়িয়ে লম্বা করে সালাম দিয়ে বলল, আসসালামু আলাইকুম মেজদাদাভাই! ভালো আছেন তো মেজদাভাই? আপনার শরীর স্বাস্থ্য কেমন? বাসার সবাই কেমন আছে?
আপনার সামনে কিছুক্ষন আগে বেয়াদপি করছি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে আমার আর তনয়ার বিষয়ে তো সবাই জানে, ইভেন আন্টি মানে আপনার মাও জানে। তাই ভাবলাম আপনিও বোধয় জানেন।
__তামিম গম্ভীর সুরে বলল, হুমম। তারপর আর একটা কথাও বললো না।
সবাই এসেছিলো তনয়ার সাথে দেখা করতে। আরো কিছুক্ষন গল্প করে সবাই চলে গেলো। তানভী, তামিম রশ্মি এক গাড়িতে চলে গেলো। আয়াত বাইক স্টার্ট দিতে যাবে তখন মেঘাকে বলল,
__চাবি উপরে ফেলে আসছি। তুই পাঁচ মিনিট দাড়া আমি চাবি নিয়ে আসি।
__মেঘা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, চাবি আনতে যাবি নাকি ভাবির সাথে দেখা করতে।
__চুপ ইদানিং তুই খুব পাকা হয়ে গেছিস।
মেঘা মুখ টিপে টিপে হাসছে। আয়াত তনয়ার ফ্ল্যাটে গিয়ে তনয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
__চলো বিয়ে করে ফেলি। এভাবে দূরে থাকতে আর ভালো লাগছে না। সবসময় তোমাকে নিয়ে টেনশন হয়। তোমাকে না দেখলে পাগল পাগল লাগে।
__তুমিই তো বললা, পরীক্ষার পর।
__তোমার পরীক্ষা কবে শেষ হবে? কে জানে?
__খুব শিঘ্রই। এবার যাও মেঘা নিচে দাড়িয়ে আছে।
আয়াত তনয়াকে আরো কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থেকে চলে গেলো। বুকটা ফাকা ফাকা লাগছে। সবসময় তনয়াকে চোখে চোখে রাখতে মন চায়।
৪১!!
আয়মন আর তানভির পার্কের একটা বেঞ্চে নিশ্চুপ বসে আছে। দুজনই শব্দহীন। কথাগুলো কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। এত বছর পর দেখা। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।