অলকানন্দা - পর্ব ৩০ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প

!!৮৭!!

"তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো রেজওয়ান? তুমি একটা দাগী আসামি কে নিয়ে সিলেট যেতে চাও!"

প্রলয় চ্যাটার্জী ভিষণ অবাক হয়েছেন। অবাক হলে তিনি আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসেন। সেই সাথে মিঃ সম্বোধনটাও করেন না। 
"স্যার, আমি যা বলছি ভেবে বলছি। আমাকে একটা সুযোগ দিন।"
"এই নিয়ে কতবার তো একই কথা বললে। এটাই কিন্তু তোমার শেষ সুযোগ রেজওয়ান। এরপরে আমি কেসটা সিআইডি কে হস্তান্তর করবো। তুমি ড্রা/গের কেসটা দেখবে। এই কেস নিয়ে এখন মিডিয়ায় বেশি মাতামাতি নেই। এটা সিআইডি আস্তে ধীরে সলভ করুক।"
"স্যার, তাহলে কি আমি সুযোগটা পাচ্ছি?"
"মিঃ রেজওয়ান তোমায় আমি ভরসা করি। তবে এটাই শেষ।"

রেজওয়ান কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো। অতঃপর বেরিয়ে এলো বাইরে। মুন্সিকে বললো,
"জেলখানায় যাবো একটু।"

অন্ধকার ঘরে কথা হচ্ছে দুজন মানব-মানবীর। তেজস্বী মানবী যেন সবটা জেনেও এই মানুষটার সামনে অপারগ। ভালোবাসা কি এতই শক্তিশালী! এতটা তেজস্বী মেয়েকেও বদলে দেয়। 
"আগামীকাল সিলেট যাবে। সাথে কড়া পাহারা থাকবে। প্লিজ তুমি কিছু করতে যেও না। নির্ঘাত ধরা পড়বে।"

বাঁকা হাসলো সামনের মানুষটা। এ যেন বাঘকে বলা শিকার করোনা। মানবী কিছুটা কষ্টমাখা গলায় বললো,
"তুমি কি আমায় কোনোদিনও বুঝবেনা? এতটাদিন তোমাকে এত সব ইনফরমেশন দিচ্ছি। তুমি কি বুঝতে পারোনা? আমি তোমাকে ভালোবাসি?"

হা হা করে হেসে উঠলো অন্ধকার মানব। অতঃপর গম্ভীর সুরে বললো,
"কেন? আমি খারাপ জানোনা? একজন দেশরক্ষী হয়েও আমার মতো অপরাধীর সাথে তোমার এতো সখ্যতা মানায় না। এই মুহূর্তে আমি ঠিক কি করতে পারি তুমি নিশ্চয়ই তা জানো?"
"আমি সব মেনেই তোমাকে ভালোবাসি।"
"একটু জুস খাবে?"

ঘাবড়ে গেলো অন্ধকার মানবী। কষ্টমাখা গলায় বললো,
"তুমি খুব খারাপ। খুব।"
"আমি তো তা জানি।"

মানবী বেরিয়ে গেলো। অন্ধকার মানব সোফায় বসে মাউথ অর্গান বাজাতে ব্যস্ত। সেই সাথে ছক কষে নিলো আগামীদিনের। বাঁকা হাসলো আবারও। যে কাজটা সে করে সে কাজটা তার ভিষণ প্রিয়। পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে এই কাজ থেকে ফেরাতে পারবেনা। ভোরের দিকে মাতব্বর শরীফকে নিয়ে রেজওয়ান রওনা দিলো সিলেটের পথে। কাকপক্ষীও এই খবর জানেনা। সাথে আছেন পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা। দুটো গাড়ি। সবাই ছদ্মবেশে আছে। মাতব্বর শরীফকে ভয়ানক লাগছে দেখতে। এতদিনপর বাইরের আলো গাঁয়ে লাগায় কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এত আলো সহ্য হচ্ছিলোনা তার। এখন সয়ে এসেছে অনেকটা। বড় বড় দাঁড়ি। লালচোখ। কতটা ভয়ানক লাগছে তাকে দেখতে! স্বয়ং পুলিশ কর্মকর্তারাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। মুন্সির রাগও হলো নিজের স্যারের উপর। কি দরকার দাগি আসামির কথা শোনার! স্যার কি বোকা? গাড়ি চলছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে। হঠাৎ থেমে গেলো গাড়ি। স্থানটা নির্জন। দুপাশে জঙ্গল। রেজওয়ান প্রশ্ন করলো,
"কি ব্যাপার মুন্সি? গাড়ি থামালে কেন?"
"স্যার, সামনের গাড়ি থেমে গেছে।"

!!৮৮!!

সামনের গাড়িতে মাতব্বর শরীফ রয়েছেন। রেজওয়ান তৎক্ষনাৎ বের হওয়ার জন্য গাড়ির দরজা খুলতেই ধোঁয়ায় ভরে গেলো চারপাশ। কাঁদুনে গ্যাসের দাপুটে প্রভাবে চোখ জ্বলছে সবার। রেজওয়ান সময় নষ্ট না করে জলদি বের হলো। পিস্তল হাতে নিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার বাম হাতে গুলি করলো কেউ। লাল রঙের তরল গলগল করে বের হচ্ছে। রেজওয়ান অসহায় হয়ে বুজে আসা চোখে কেবল দেখলো মাতব্বর শরীফকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন। এরপরের ঘটনা রেজওয়ান জানেনা।

রেজওয়ানের জ্ঞান ফিরলো দিন দুয়েক পর। ততদিনে সারাদেশে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। "পুলিশের ব্যর্থতায় নিখোঁজ হলেন সিরিয়াল কিলার মাতব্বর শরীফ"। প্রলয় চ্যাটার্জীসহ অন্যান্য বড় কর্মকর্তাদের উপর উপরমহল থেকে চাপ আসছে। সারাদেশে থমথমে পরিবেশ বিদ্যমান। আবার সেই ২০১২ কেউ দেখতে চায়না। রেজওয়ানের উপর অনেকটা ক্ষিপ্তও তিনি। কি দরকার ছিল একজন দাগী আসামি কে বাইরে আনার! প্রলয় চ্যাটার্জীকে দেখে উঠে বসার চেষ্টায় রেজওয়ান। সাথে আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। 
" আপনি অসুস্থ মিঃ রেজওয়ান। উঠার চেষ্টা না করাই ভালো।"
গম্ভীর গলায় বললেন প্রলয়। রেজওয়ান ভয় পাচ্ছে। 
"আপনি যে কাজটা করেছেন তা একদম ঠিক করেননি রেজওয়ান।"

হাতের ব্যথা নিয়েই উঠে বসলো রেজওয়ান। প্রলয় এবার গুরুগম্ভীর সুরে বললেন,
"একটা দাগী আসামি গায়েব। গত দুদিন যাবত মিডিয়া, মন্ত্রী পরিষদ সব জায়গা থেকে চাপ আসছে আমার উপর। আমি আপনাকে ভরসা করেছিলাম রেজওয়ান। আপনি ভরসার অবমাননা করলেন। আজ থেকে আগামী ছয়মাসের জন্য আপনাকে বরখাস্ত করা হলো। নোটিশ শীঘ্রই পৌঁছে দেওয়া হবে আপনাকে।"

কথাটুকু সেরেই বেরিয়ে গেলেন প্রলয় চ্যাটার্জী। এই ভয়টাই পাচ্ছিল রেজওয়ান। ভিতরটা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে তার। আশার আলো দেখতে পেয়েও আবার সেই তিমিরেই তলিয়ে গেলো যেন। 

মাহার পরীক্ষা আজ শেষ। এখন হাতে কিছুদিন ছুটি রয়েছে। মাহা ভেবেছে সার্থককে বলবে তাকে যেন একবার নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যায়। কত মাস পেরিয়ে গেলো। বাবাকে দেখা হয়না! বুকটা কেঁপে উঠে মাহার। বাবার কবর যিয়ারত করার জন্য ছটফট করে মন। সার্থক অনেক সুখে রেখেছে মাহাকে। মাহার একাকী জীবনে অপার্থিব সুখের সন্ধান দিয়েছে। মাহা মাঝে মাঝে ভাবে, "আচ্ছা, এতো সুখ তার কপালে সইবে তো! সে তো যাকে ভালোবাসে সেই হারিয়ে যায়। সার্থকও কি তবে....

আর ভাবতে পারেনা মাহা। ঝাঁকড়া চুলের মায়াময় মুখটা না দেখে মাহা বাঁচবে কি করে! মানুষটা যাদু জানে। এই কয়েকটা মাসে কত আপন করে নিয়েছে তাকে। তবে একটা ব্যাপার বড্ড বেমানান। রবার্ট বেশি একটা মাহার সামনে আসেনা। সার্থক বলেছে রবার্টের আশেপাশে বেশি না যেতে। সাইন্টিস্টদের মাথায় নাকি ঝামেলা থাকে। মাহার কাছে বড় অদ্ভুত ঠেকে এই রহস্যময় বাড়িটা। সিঁড়ি দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে উপরে উঠছিলো মাহা। হঠাৎই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। কিছু বুঝে উঠার আগেই.... 
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন