বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন। আবার বলা যায় বৈধ চুক্তি! যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক নয় সাথে দুটো পরিবারের বিশেষ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। বিয়ে নিয়ে পরিবারের থাকে হাজারো স্বপ্ন, সখ, আহ্লাদ, ইচ্ছে। ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়েতে বাবামা, আত্নীয় স্বজন অনেকেই অনেক কিছু করার স্বপ্ন বুনে থাকেন। তাই অবশ্যই বিয়েটা একান্ত ভাবে সেড়ে ফেলার মতো বিষয় নয়। শাহজাহান পরিবারের মতো সুনামধন্য পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য তো অবশ্যই নয়। তাদের জন্য কাজি অফিসে একান্ত গিয়ে বিয়ে করা আর গলায় ছু*রি তাঁক করা একই বিষয়। ব্যাপারটা সুমন সাহেব বড্ড ভালোভাবে বুঝে গিয়েছেন। এবং বেশ এলোমেলো হয়ে পড়েছেন। প্রেসার বেড়ে গিয়েছে তার। হাসফাস করছে বুক। তন্ময়ের পারমিশন পেয়ে গোসল ও করে নিয়েছে। তবুও দম বন্ধ হয়ে আসা অনুভূতি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। চিন্তিয় তিনি যেকোনো সময় হার্টএট্যাক করে ফেলতে পারেন। কী জবাব দিবেন সে মোস্তফা সাহেবকে?সেই তো গার্ডিয়ানের সাক্ষর দিয়েছে। সবকিছু স্ব-চোক্ষে হতে দেখেছে। সবকিছুই সে করেছে নিজ দু'হাতে। এগুলো নিশ্চয়ই মোস্তফা সাহেবের কানে পৌঁছে গিয়েছে! নাহলে এমন পাগলের মতো কলের উপর কল কেন করবেন! এইযে দুইশো ছাপ্পান্ন কল ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে। কলের নাম্বার দেখেই গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ তার। কপালে হাত চেপে সোফায় বসে পড়লেন শব্দ করে। স্বেচ্ছায় এই কি জ্বালা কাঁধে নিলেন। চাকরি তো যাবে সাথে প্রাণ খানাও। অসহায় দৃষ্টিতে তন্ময়ের দিক তাকালেন। তন্ময় লাঞ্চ করছে ডাইনিংয়ে বসে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে এতবড় তান্ডব করেছে। ছেলেটা কী বুঝতে পারছে সে কী করেছে? কতটা ভয়ানক কাজ করেছে? এদিকে সুমন সাহেব স্পষ্ট পাশের রুম থেকে অরুর অস্পষ্ট কান্নার শব্দ শুনতে পারছেন। মেয়েটা নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে! সেই সকাল থেকে অনবরত কেঁদে চলেছে। পানি পর্যন্ত গলায় দেয়নি। হুট করে কি হয়ে গেল! কোথাকার জল কোথায় এসে গড়ালো। তিনি অসহায় সুরে তন্ময়ের উদ্দেশ্যে বললেন,'স্যার মামণী না মানে..মেয়েটাকে.. মানে ম্যামকে থামাবেন না? সকাল থেকে কিছুই খায়নি! অনবরত কাঁদছে।'
'সুমন সাহেব!'
'জি স্যার!'
'আমার মনে হয় আপনার নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত।'
'স্যার আমার চাকরি কী থাকবে?'
তন্ময় টিস্যুতে হাত মুছতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সাবলীল গলায় বলল,'আমার থাকলে আপনার ও থাকবে।'
সুমন সাহেব অন্ধকার মুখে মিনমিন সুরে আওড়ালেন,'আমার চাকরি আর প্রাণ দুটোই গেল বলে!'
'এক্ষুনি বেরোতে হবে। সঙ্গে আসছেন তো?'
সুমন সাহেব মাথা দোলাল। না যেয়ে উপায় আছে বুঝি? ঝামেলা তো তাকে ঘিরে। সে না গেলে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। সুমন সাহেব নিজের অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন আপাতত। কিন্তু তার মধ্যে এতটুকু সাহস নেই মোস্তফা সাহেবের সামনাসামনি হবার।
তন্ময় অরুর রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কয়েকবার করাঘাত করেছে। কষাঘাতের শব্দে অরুর কান্না থেমেছে। তবে সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। তন্ময় পুনরায় করাঘাত করল। গম্ভীর স্বরে
বলল, 'ল্যাগেজ গুছিয়ে নে৷ এক্ষুনি বেরোবো।'
ভেতর থেকে অরুর বিষন্ন কন্ঠের স্বর শোনা গেল, 'আমি যাবো না। একদম যাবো না।'
'দরজা খোল। অরু!'
'যাবো না।'
'তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়ে আয়। আমি এসে যদি দেখি তুই রেডি!'
কথাটুকু বলে সে ব্যস্ত পায়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল। ড্রয়িংরুমে সাধারণ সুমন সাহেব বসে রইলেন মাথা নত করে। মোস্তফা সাহেবের কল পুনরায় আসছে। এটা নিয়ে ছাপ্পান্ন হবে। এই কল কী ধরবেন? ধরে কেঁদেকেটে মাফ চেয়ে নিবেন এখনই?
_____________
গতকাল রাতের ঝুম বৃষ্টির আভাস প্রকৃতেতি এখনো বিদ্যমান। রাস্তাঘাট, গাছপালা সবকিছু ভেজাচ্ছন্ন। সাথে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। শীতল আবহাওয়া। যাবো না বলতে থাকা অরু, শরীরে চাদর পেঁচিয়ে গাড়িতে বসে। তার পাশের জানালার কাঁচ নামানো বিদায়, হাওয়া এসে সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে দিচ্ছে। এতো সুন্দর আবহাওয়া অথচ সে উপভোগ করতে পারছেনা। ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছে হৃদয়। হাতপা ঠান্ডা হয়ে আছে। ঠিক কি রেখে কী নিয়ে ভাববে মাথায় আসছে না। মস্তিষ্ক বড্ড ফাঁকা। রাতে সেলফোন বন্ধ করেছে এখনো খোলেনি। বাবা-মা, চাচ্চু, বড়ো মা, ছোট চাচ্চু, চাচী তারা নিশ্চয়ই অরুর উপর নিরাশ হবেন। বকবেন হয়তো মারবেন ও! চিন্তিত অরু তন্ময়কে ভিষণ ভাবে অগ্রাহ্য করলো। তাকাল না অবদি। বাইরে তাকিয়ে রইলো। বুকের ভেতরটা দুরুদুরু কাঁপছে। কপালে হাত ছোঁয়াল। গরমে কপাল পুড়ে যাবার যোগাড়। জ্বর আসছে মনে হয়। অরু নিরুপায় ভঙ্গিতে মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে রাখল। তাদের কী মেনে নিবে পরিবার? এর উপর একটি বাজে সিচুয়েশন ঘটেছে। কলি সুইসাইড করেছে। তন্ময়ের জন্য। যেই তন্ময় এখন তার ভাই নয় তার স্বামী! তার জীবনসঙ্গী! কি হবে! কি বলবে!
সিলেটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত সন্ধ্যা ছ'টা। গাড়ি মৌলভীবাজার জেলায় পৌঁছে, খান বাড়ির উদ্দেশ্যে না গিয়ে সোজা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটেছে। তন্ময় দ্রুত পায়ে বেরিয়েছে। পিছু পিছু অরু এবং সুমন সাহেব ও যাচ্ছেন। সুমন কিংবা অরু দুজনের একজনের ও পায়ের গতি নেই। ধীরেসুস্থে এগোচ্ছেন। এদিকে তন্ময় তার পূর্বের রূপে সাচ্ছন্দ্যে হেঁটে অগ্রসর হচ্ছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সে হারিয়ে গেল অরুর চোখের সামনে থেকে। অরুর চোখের সামনের সবকিছু ঝাপসা লাগছে। দেখতে পারছেনা চারিপাশ। যতটা এগোচ্ছে সঙ্গে কেঁপে উঠছে বুকের ভেতর।
মোস্তফা সাহেব ব্যস্ত পায়ে করিডরে হাঁটছেন। দূর থেকেই তার চারিপাশে এক অদ্ভুত ভয়ংকরী আভাস ঘুরঘুর করছে যেন। কাছে ঘেঁষার সাহস পাওয়া মুশকিল। হুশিয়ার সাহেবকে তার থেকে কিছুটা দূরে দেখা যাচ্ছে। চোখমুখ শক্ত। ওহী সাহেব কপালে আঙুল চেপে বসে আছেন। আনোয়ার সাহেব উৎসুক দৃষ্টিতে চারপাশ তাকাচ্ছেন। কারো আসবার কথা যেমন! তাদের এমন করুণ অবস্থার একটাই কারণ হতে পারে। নিশ্চয়ই তারা জেনেছেন অরু তন্ময়ের বিয়ের ব্যাপারটা। তন্ময়কে দেখে মোস্তফা সাহেবের পা থেমে গেল। দৃষ্টি স্থির হলো। তার নেওয়া ঘনঘন রাগী শ্বাসপ্রশ্বাসের দেখা মিলছে, বুকের উঠানামার গতিতে। বাকরুদ্ধ, হতভম্ব হুশিয়ার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার থেকে। বৃদ্ধ তার হাতে শক্ত মজবুত লাঠি। তন্ময় সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়েছে। যেমন কোনো গুরুতর বিষয় ঘটেনি সেভাবে প্রশ্ন করলো,'কি অবস্থা কলির?'
তার বাচনভঙ্গি স্বাভাবিক। অত্যন্ত স্বভাবিক! তন্ময়ের গলার স্বরে পেসেন্ট রুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন জয়া বেগম, মোজাহিদ সাহেব। পরপর আরও অনেকেই বেরিয়েছে। লম্বা করিডর মুহুর্তে তাদের পরিবারের একেকটি সদস্যের দ্বারা জ্যাম হয়ে গেল। মোজাহিদ সাহেব অত্যন্ত রেগে। মুখমণ্ডল লাল এবং কঠিন। তিনি তেড়েমেরে এগোলেন। কিছু বলবেন পূর্বেই হুশিয়ার সাহেব বললেন,'এখানে কোনো কথা নয়। বাড়ি ফিরে নেই তারপর।'
গুরুজনের কথায় অবস্থা কিছুক্ষণের জন্য ধামাচাপা দেওয়া গেল। তবে কতক্ষণের জন্য? অরু দুরুদুরু পায়ে এসেছে। তাকে দেখে আনোয়ার সাহেব ছুটে গেলেন। চোখমুখে তার চিন্তার ছাপ। পিছু গেলেন সুমিতা বেগমও। কিন্তু তার মুখে ক্রোধ। চিন্তার ছিটেফোঁটা আপাতত অবশিষ্ট নেই। আনোয়ার সাহেবের পূর্বে মেয়ের কাছে চলে এলেন। স্পষ্ট শব্দে চড় বসিয়ে দিয়েছেন মেয়ের গালে। চড়ের শব্দ এতটাই প্রগাঢ় যে উপস্থিত সকলে শুনতে পেল। আনোয়ার সাহেব তাজ্জব বনে গেলেন। তার পায়ের গতি থেমে গেল মাঝপথে। মেয়েকে গিয়ে ধরতে অবদি পারেননি এখনো। সুমিতা বেগম আবারো হাত তুলবেন যেমন। তন্ময় খুব দ্রুত পায়ে অরুকে নিজের পেছনে টেনে নিয়েছে। অরু ততক্ষণে নিজের গাল ধরে রেখেছে। দুচোখের পাতায় অশ্রু টলটল করছে। ব্যথিত নয়নে মায়ের পানে তাকিয়ে সে। মানছে ভুল করেছে। এরজন্য এতগুলো মানুষের সামনে চড় মারবে বুঝি? সুমিতা বেগম তন্ময়ের দিক তাকালেন। তন্ময়ের চেহারায় কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে খুব দৃঢ় গলায় বলল, 'এভাবে ওকে মারবেন না চাচী। আমার পছন্দ না। কথাবার্তা যা হবে পড়ে। এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না।'
মোস্তফা সাহেব বুক ধরে চেয়ারে বসে পড়েছেন। খু খু শব্দে কেশে উঠলেন। তিনি অবিশ্বাস্য চোখে ছেলের দিক তাকিয়ে। বিশ্বাস করতে পারছেন না যা তিনি শুনেছেন এবং যা তার সামনে ঘটছে।
___________
হাত কাঁ'টার সামান্য চেষ্টা। অতটা গাঢ়তর ভাবে হাতের নলি কা'টতে পারেনি। কিছুটা কেটেছে। মুলত ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। রিস্ক থেকে মুক্ত। কলিকে বাড়িতে নেওয়ার পারমিশন দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। রাত দশটার মধ্যে খান বাড়িতে পৌঁছেছে সকলের গাড়ি। মেয়েকে মোজাহিদ সাহেব ধরে ভেতরে নিচ্ছেন। সোজা রুমে গিয়ে শুইয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীকে মেয়ের পাশে রেখে বেরিয়ে এসেছেন। ইতোমধ্যে সকলে উপস্থিত বৈঠক ঘরে। এমনকি সুমন সাহেব ও। তিনি যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে। এমতাবস্থায় চোখ রাঙিয়ে তার দিক তাকিয়েছেন মোস্তফা সাহেব। সেই চাহনিতে রয়েছে আগুনের ফুলকি। থরথর করে কেঁপে উঠে তিনি ডাকলেন, 'স্যার!'
মোস্তফা সাহেব বুকে হাত চেপে আছেন। চোখজোড়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করলেন। নিজের ত্যাড়া ছেলেকে জিজ্ঞেস করার থেকে উত্তম ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করা। তিনি চোখজোড়া খুলে কোনোরকমে প্রশ্ন করলেন সুমন সাহেবকে,'মাহবুব সাহেব যা বলেছেন তা কী সত্য?'
মাথা নত করে আছেন সুমন সাহেব। ভীত ছোট গলায় জবাব দিলেন, 'আজ্ঞে জি স্যার!'
মোস্তফা সাহেব হাঁসফাঁস করে উঠলেন। অরু ফ্রিজ থেকে একটি ঠান্ডা পানির বোতল হাতে সোফায় বসেছে। ঢকঢক শব্দে পানি খেয়ে বোতল টি-টেবিলে রাখল। বাবার উদ্দেশ্যে বলল,'বিয়েটা আমি করেছি। সুমন সাহেব নন।'
'তন্ময়!!'
চেঁচিয়ে উঠলেন মোস্তফা সাহেব। তিনি দাঁড়িয়ে গিয়েছেন রাগে। ভয়ে অরু কেঁপে নিঃশব্দে কেঁদে উঠেছে। সে আনোয়ার সাহেবের পেছনে দাঁড়িয়ে। আনোয়ার সাহেব বিন্দুমাত্র রেগে নন। আসলে সে রাগবেন নাকি হাসবেন বুঝতে পারছেন না। মানে তিনি রাগান্বিত হবার কোনো কারণ দেখছেন না। তন্ময় ভালো ছেলে। ঘরের ছেলে। নিজের মেয়ের জন্য উত্তম পাত্র যা তিনি স্বপ্নেও পাওয়ার কথা ভাবেননি। সে ছেলে স্বেচ্ছায় তার মেয়ে বিয়ে করেছে। এখন থেকে মেয়ে তার সারাজীবন নিজের কাছে থাকবে। আপন হয়ে। এটা তো দুঃখের বিষয় নয়। বরং তার মনে হচ্ছে এরথেকে উত্তম কিছু আর হতেই পারেনা।
হুশিয়ার সাহেব শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলেন। ঠান্ডা মাথা শুধালেন,'এভাবে হুট করে বিয়ে করার মানে কী তন্ময়? পরিবার নেই তোমার? কারো রায় নেবার প্রয়োজন বোধ করলে না! কেন?'
মোজাহিদ সাহেব নিজেকে চুপ রাখতে পারলেন না। চেঁচিয়ে উঠলেন,'আমি তো দেখছি সব দোষ এই মেয়ের। আমি শুনেছি তো! এই মেয়ে ইচ্ছে করে সঙ্গে গিয়েছে তন্ময়ের। ওর মাথা খারাপ করে দিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। আমার মেয়ে কলি এসেই বলেছে, এই মেয়ের সম্পর্কে! দুশ্চরিত্রা! এই মেয়েই আমার মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।'
হতবাক হয়ে পড়েছেন মোস্তফা সাহেব। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছেন মোজাহিদ সাহেবের দিক। তারপর তাকালেন হুশিয়ার সাহেবের দিক৷ তারপর নিজের স্ত্রীর দিক। এসব কথা তিনি মোটেও শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হুশিয়ার সাহেব শব্দ করে ছেলেকে চুপ থাকতে বললেন। এরমধ্যে যা বলার তা বলে ফেলেছেন মোজাহিদ সাহেব। তন্ময় স্তব্ধ মেরে বসেছিল। এবার উঠে দাঁড়ালো। মোজাহিদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে তাকাল। লাল হয়ে চোখের সাদা অংশটুকু। ক্ষিপ্ত মুখশ্রী। মোস্তফা সাহেব ছেলেকে আটকানোর সামান্য প্রচেষ্টা করলেন। পূর্বেই তন্ময় বলে ফেলেছে, 'আপনি যার সম্পর্কে কথা বলছেন সে আমার স্ত্রী। মুখ সামলে কথা বলবেন।'
আনোয়ার সাহেব নড়ে উঠলেন। হাতের শক্ত মুষ্টিবদ্ধ ঢিল হলো। আটকে রাখা প্রখর শ্বাস ফেললেন। লাল চোখজোড়া কিছুটা শান্ত হলো। কিন্তু রাগে থরথর করে কাঁপতে শরীর এখনো গরম। অরু বাবার হাত চেপে ধরেছে। নিঃশব্দে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে। মোস্তফা সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। শক্ত গলায় বললেন, 'ভুল আমার হয়েছে। আমাদের পরিবারের বিষয় এখানে তোলা ঠিক হয়নি। ছেলে আমার ভাতিজিও আমার। তাদের নিয়ে কথা বলার অধিকারও আমার। আমরা নিজেরাই হ্যান্ডেল করে নিব, বাবা। আসছি! নাতির বিয়ে খেতে চলে আসবেন। চলো জয়া!'
তিনি একমুহূর্ত দাঁড়াননি। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলেন। ছেলের উপর যত রাগ ছিলো সব উবে গেল। একরাশ যন্ত্রণা দিয়ে গেল বুকে। নিজের বাড়ির মেয়ে সম্পর্কে এসব কথা তিনি বরখাস্ত করবেনা না। ওহী সাহেব তার ভাই আনোয়ার সাহেবের কাঁধে হাত রাখলেন। অরুকে সহ সদরদরজার দিক এগোলেন। হুশিয়ার সাহেব উদ্ধিগ্ন সুরে মোস্তফা সাহেবকে ডেকে চলেছেন। কাজ হলো না। মোজাহিদ সাহেবও আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। জয়া বেগমও আর আশপাশ তাকালেন না। বাবামায়ের উদ্দেশ্যে কিছু বলে তিনিও বেরিয়ে পড়লেন।
.
.
.
চলবে.................................