প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৩৯ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে! রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে। প্রতিবেশীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। মুলত আজ শাবিহাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। বিকেল দিকে। মোস্তফা সাহেব দুপুরের আগ দিয়ে মেয়ের কক্ষে আসলেন গম্ভীরমুখে। শাবিহা তখন জড়সড় হয়ে বাবার সামনে দাঁড়ালো। মোস্তফা সাহেব চেয়ারে বসলেন। মেয়েকে ইশারা করলেন তার সামনে বসতে। শাবিহা বসলো। মোস্তফা সাহেব বললেন, 'শুনেছ তো তোমার মায়ের থেকে?'
'জি বাবা।'
'তোমার কোনো আপত্তি আছে?'

শাবিহা চুপ থাকলো। বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। তীব্র যন্ত্রণায় ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলছে। তবুও মুখ ফুটে সত্যটা বলার সাহস পাচ্ছে না। কীভাবে বলবে, কোন মুখে বলবে! এভাবেই তন্ময়ের বিষয়টি নিয়ে তার বাবা প্রচন্ড অস্বস্তিতে। এখন আবার সে যদি এগুলে বলে! শাবিহা বাবার আদুরে মেয়ে হয়ে সত্যটা প্রকাশ করতে পারলো না। আর না পারলো ' না ' বলতে! মাথা নত করে বসে থাকলো। মোস্তফা সাহেব বললেন, 'বিয়ে তো করতে হবে! আর কতদিন! আমাকে পিতার দায়িত্বটা পালন করতে দাও মা।'

মোস্তফা সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। কিছুক্ষণ মাথা বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। বাবা যেতেই কান্না'য় ভেঙে পড়লো শাবিহা। ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে নিঃশব্দে ! নিঃশব্দ কান্না কষ্ট হাজার গুন বাড়িয়ে দেয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতে না পারলে, সেই কান্নার সমাপ্তি পাওয়া যে বড়ো মুশকিল। কান্নার একপর্যায়ে বেশ ক্লন্ত হয়ে পড়লো শাবিহা। ফ্লোরে বসে মাথাটা বিছানায় এলিয়ে দিল। অশ্রুসিক্ত নয়নে সেলফোন হাতে নিল। অয়নের অনেক গুলো মেসেজ এসে আছে। লাস্ট মেসেজটা দেখে সে আবারো ফুঁপিয়ে উঠেছে। অয়ন একটা লেহেঙ্গার ছবি পাঠিয়েছে। সঙ্গে একটি মেসেজ, 'মামীর সাথে শপিং এসেছি শাবিহা। একটা ব্রাইডাল লেহেঙ্গা দেখলাম। আমার সেটা খুব পছন্দ হয়েছে তোমার জন্য। কিনবো বলে প্রাইস জানতে চাইলাম, শুনবে কতো বলল? পঁয়তল্লিশে হাজার। আমার কার্ডে আটাশ হাজার আছে। বাবার থেকে চাইলে ব্যাপারটা কেমন না! বিজনেসে প্রফিট করে প্রথমেই এই লেহেঙ্গা কিনবো! আমাদের বিয়েতে তুমি এটাই পরবে কেমন?'

কান্নায় শাবিহার শ্বাস আটকে যাবার যোগাড়। এই ছেলেটা কি বুঝতে পারছে কোন সিচুয়েশনে আছে তারা? তাদের সামনে সে তো কোনো রাস্তা দেখছে না! তার বাবা এই প্রেম একদম মেনে নিবেন না। কখনো না। 

ঘন্টাখানেক বাদে অয়নের কল এলো। শাবিহা ঘুমিয়ে পড়েছিল। চোখবুঁজে বিছানায় হাতড়ে সেলফোন হাতে নিল। সেভাবেই কল রিসিভ করলো। অয়ন হয়তো বাইরে। যানবাহনের তীব্র শব্দ কানে আসছে। ঘুম পুরোদমে ভেঙে গেল তার। উঠে বসলো। প্রশ্ন করলো, 'কোথায় তুমি?'

অয়ন যেমন প্রচন্ড বিরক্ত! খুব গম্ভীর স্বরে বলল,'পোলাপান জড়ো করছি।'
'কী!কেন!'
'কেন আবার! যে শালা আসছে তোমাকে দেখতে ওর কতবড় কলিজা বুকে, ওটার পোস্টমর্টেম করবো আজ আমি। মাঝরাস্তায় ধোলাই-ওয়াশ করে ফেরত পাঠিয়ে দিব। কার দিকে নজর দিয়েছে হাড়েহাড়ে টের পাবে!'

শাবিহা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য নির্বোধে পরিনত হলো। সময় নিয়ে ধমকে উঠলো, 
'তু..তুমি..এক্ষুনি বাড়িতে আসো বেয়াদব!'

অয়ন মুখ ভোঁতা করে ফেললো। অসহায় সুরে ডাকল,
'শাবিহা.. '
'আর কোনো কথা নেই আমাদের মধ্যে।'

কল কেটে গেল। অয়ন অন্ধকার মুখে ফোনের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে রইলো। সৌভিক তখন পোলাপানদের হাতের স্টিক, লাঠি গুলো হাতিয়ে দেখছে। ভয় দেখাতে এইসব অ'স্ত্রতেই হবে নাকি আরও লাগবে ভাবছিল। এমতাবস্থায় বন্ধুর নেতিয়ে থাকা মুখশ্রী দেখে নড়েচড়ে উঠলো। আন্দাজ সুরে বলল,'তুই কী ভাবীকে বলে দিলি?'
'হু। রেগে গেল।'
'তুই কি পাগল! কেন বলতে গেলি। সে এগুলো পছন্দ করবে না এটাই স্বাভাবিক।'

অয়ন সেলফোন পকেটে ঢুকিয়ে, হাতের ইশারায় সবাইকে যেতে বলল। ভোঁতা মুখে পোলাপানগুলো বিদায় হতেই, বাইকে চড়ে বসলো। পেছনে সৌভিক উঠে বসলো। ভেবেচিন্তে বলল,'দোস্ত এই দেখাদেখির বিষয়টা কীভাবে থামাবি? আন্টিকে জানাবি?'
'আর জানাব! সে তো পাত্রপক্ষ আসা নিয়ে বেশ এক্সাইটেড! দেখলাম নিজের সিগনেচার আইটেম গুলো রান্না করে শাবিহাদের বাসায় যাচ্ছে।'
'আহারে!'
'ওদের বাসার সামনে আগুন লাগালে কেমন হয়? নাকি শাবিহাকে তুলে নিয়ে আসব? নাকি সোজাসাপটা শ্বশুর আব্বার সামনে যাবো? নাকি... '

অয়ন বিষন্ন অনুভব করছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। সে কি ডিরেক্ট কাজি নিয়ে শাহজাহান বাড়ি চলে যাবে?
____________
লতা বেগম চল্লিশ বয়সের স্বাস্থ্যবতী মহিলা। লম্বাচওড়া দেহের গড়নের। অয়নের মুখশ্রীর সঙ্গে বড্ড মিল পাওয়া যায়। টানা ভুরু। উঁচু নাক। পাতলা ঠোঁট। গোলাকৃতি চেহারা। এমনকি ভুরুর উপরের ছোট্ট তিল খানা হুবহু অয়ন ও পেয়েছে। তিনি সবেমাত্র শাহজাহান বাড়ি ঢুকেছেন। দু'হাত ভর্তি খাবার। শাবিহাকে দেখতে আসবে এরথেকে আনন্দের বিষয় যেমন পৃথিবীতে দুটো নেই তার কাছে। তিনি নিজের রান্না করা আইটেমস গুলো সোজা ডাইনিংয়ে রাখলেন। সোফায় বসে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনায় মগ্ন হলেন। তাদের কানাঘুঁষা গল্পের মাধ্যমে জানতে পারলেন, তন্ময় আর অরুর বিয়ের কথা। বিয়ের বিষয়টি একান্তই গোপন। এখনো শাহজাহান পরিবার সরাসরি কাউকে বলেনি এ-বিষয়ে। প্রতিবেশী যারা জানে সবটাই কানাকানি ভাবে। সাহস করে সোজাসাপটা যে কেউ শুধাবে, তাও পারছে না। তবে লতা বেগম ভিন্ন। তার আবার শাহজাহান বাড়ির গিন্নীদের সঙ্গে বেশ ভাব। সোজা চলে গেলেন জবেদা বেগমের কাছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন। বিয়ের বিষয়টি তার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না! এটা কী বিশ্বাস করার মতো বিষয় নাকি! ভদ্রসমাজের বড়ো বাড়ির দুটো ছেলেমেয়ে কিনা একা-একা বিয়ে করে নিল! জবেদা বেগম তখন রান্নায় ব্যস্ত। তাকে সাহায্য করছে মুফতি বেগম। ধীর স্বরে লতা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, 'তন্ময় নাকি অরুকে বিয়ে করে নিয়েছে?'

এমন প্রশ্নে জবেদা বেগম মুচকি হাসলেন। তিনি কিছু বলবেন এর পূর্বেই মুফতি বেগম মুখ খুললেন,
' আর বলবেন না! এই বিষয়ে ঝড়তুফান হয়ে গেল বাড়িতে। বিয়েটা গতকাল করেছে। কাজি অফিসে গিয়ে। করবেনা কেন বলুন! চারপাশ থেকে ছেলেটার উপর যে হাড়ে নজর পড়ছে! আর এদিকে মেয়েটার ও রক্ষা নেই।'

লতা বেগম কিছুই বুঝলেন না। মুফতি বেগমের কথাবার্তা তার মাথার উপর দিয়ে গেল। জবেদা বেগম আঁচলে হাত মুছলেন। চায়ের কাপ লতা বেগমের হাতে দিলেন। দুজন অন্যদিকে হাঁটতে শুরু করলেন।এদিকটায় মানুষজন নেই। নিরিবিলি! চায়ে চুমুক দিচ্ছেন লতা বেগম। প্রত্যাশায় আছেন জবেদা বেগম কিছু বলবেন হয়তো! জবেদা বেগম বললেন ও,'আপনাকে যে জানাব তার উপায় ছিলো না। ছেলেমেয়ে দুটো না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। এমন বিষয় তো বলার মতো নয়।'
'তা তো অবশ্যই।'
'আমার ছেলেটা অরুর জন্য পাগল। সেই ছোট থেকে! আমরা ভেবে রেখেছিলাম অরু বড়ো হলে এই বিষয়ে কথা বলবো! কিন্তু ছেলে মানতে নারাজ। না জানিয়েই বিয়ে করে নিল হুট করে। অবশ্য তার দ্বারা এমন কান্ড আমরা কেউই প্রত্যাশা করিনি। খুব বুদ্ধিমান ছেলে আমার। সবসময় সবকিছু সামলে নিয়েছে এখনো সামলাচ্ছে! সে কীভাবে এই কাজ করে বসলো জানা নেই। এখন বিয়েটা তো আর অস্বীকার করা যাবেনা! আপনার ভাই এখনো রেগে। তিনি চাচ্ছিলেন না অরু এখনই বিয়ে করে নিক। মেয়েটা এখনো ছোটো। ইন্টার পাশ করলো সবেমাত্র। ভাই-জি'কে বড্ড ভালোবাসেন কিনা। চাচ্ছিলেন আরও সময় নিয়ে ভাববেন।'
'বিয়েটা হয়ে ভালোই হয়েছে। আমার তো এখন দুটোকে পাশাপাশি দেখতে ইচ্ছে করছে। নিশ্চয়ই খুব মানিয়েছে।'

জবেদা বেগম হাসলেন। আসলেই দুটোকে মানিয়েছে। তিনি তো চোখ ফেরাতে পারেন না। কতটা সুন্দর দেখায় ছেলেমেয়ে দুটোকে একত্রে তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না। এইতো সকালে অরু তন্ময় একসাথে খেতে বসলো। জবেদা বেগম আঁড়চোখে কতবার যে নজর দিলেন, অগুনিত। শুধু সে নয়! মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব খাওয়া বাদ দিয়ে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছেন। 
______________
তাদের বিয়ের কথা সকলেই ভুলে বসেছে, এ বিষয়ে আর মন খারাপ করে বসে থাকতে পারলো না অরু। বিবেকবান সে এখন শাবিহার চিন্তায় পাগল প্রায়। এইযে সকালে তন্ময় তাকে ধমক দিয়েছিল। ধমক খেয়ে অরু তন্ময়ের উপর আরও ক্ষিপ্ত। তবুও সে নিজের অভিমানী মন এবং ক্ষিপ্ত অনুভূতি একপাশে রেখে, তন্ময়ের রুমের সামনে হাজির হলো।আজ তন্ময় বাসায়। মোস্তফা সাহেব তাকে অফিস যেতে দেয়নি। শাবিহাকে দেখতে আসবে। বড়ো ভাই হিসেবে তাকে তো থাকতেই হবে। অরু অল্প খানিক দরজা ঠেলে মাথা ঢোকাল। তন্ময় বিছানায় শুয়ে টেলিভিশন দেখছে। খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। টেলিভিশন থেকে খবরের শব্দ আসছে। অরু ঢিপঢিপ মন নিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। ভেতরে যেতে দ্বিধাবোধ করছে মুলত। যাবে নাকি না দ্বিধাজড়িত অরুকে আঁড়চোখে তন্ময় দেখে নিয়েছে। মিনিট পাঁচেক হলো তবুও অরু ভেতরে প্রবেশ করছে না দেখে, এবার তন্ময় বলল, 'চেয়ার এগিয়ে দিব?'

ভড়কে অরু পড়ে যেতে গিয়ে নিজেকে সামলাল। ওড়নার কোণা দরজায় লেগে আছে। খেয়াল করেনি। কিছুটা যেতেই পেছনে টান খেল। এ অগোছালো অরুকে তন্ময় এক ধ্যানে দেখছে। খবর থেকে তার নজর সরে গিয়েছে খানিকক্ষণ হয়েছে। লজ্জিত অরু টেনেটুনে ছুটিয়ে নিল ওড়না। ছিঁড়ে যাবার শব্দও শোনা গেল। লজ্জা কাটিয়ে ধীরেসুস্থে ভেতরে আসলো। মিনমিনে সুরে বলল, 'আমিতো মাত্রই এলাম।'
'দেখলাম তো!'

অরু ভুরু দু'য়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ নিয়ে বলল,'আপনি এমন আরামসে কীভাবে শুয়ে আছেন!'
'কেন! আমার আরামসে শুয়ে থাকা বারন?'

অরু বিরক্ত সুরে বলল, 'শাবিহা আপু কাঁদছে।'
'তুইও যা মিলেমিশে কান্না কর গিয়ে।'
'আমি কেন কান্না করবো। আশ্চর্য!'

মুহুর্তে তন্ময় শোয়া থেকে উঠে বসলো। বিছানা থেকে নেমে অরুর সামনে এলো। লম্বা সে কোমর বেঁকিয়ে অরুর সমানতালে এসে, দু'গালে ছোট্ট করে চড় মেরে বসলো। অরুর তুলতুলে গাল দুটো হালকা লাল হয়ে গেল। আকস্মিক চড়ে সে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। বড়বড় চোখে তন্ময়ের পানে তাকাল। তন্ময় শুধালো, 'কান্না করার রিজন পেয়েছিস?'

অরু রেগেমেগে একাকার। নাক ফুলিয়ে বলল, 'আপনি..আপনি...'

রাগান্বিত সে সম্পুর্ন কথা বলতে পারল না। শব্দ করে চলে গেল। নিস্তব্ধতা কক্ষ জুড়ে। তন্ময় দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। বুকে দু'হাত পেঁচিয়ে দরজার দিক তাকিয়ে। কিছু একটার অপেক্ষায় যেমন৷ মিনিট খানিক পর অরুর ছায়ার দেখা মিললো। ধীরেধীরে সে পুরোটাই পুনরায় তন্ময়ের রুমের সামনে এসেছে। চিৎকার করে বলল, 
'একটা পাষাণ ভাই আপনি! আপনার ভেতর বিন্দুমাত্র দয়ামায়া কিছুই নেই।'

তন্ময় গম্ভীরমুখে বলল,'সামনে এসে বল।'
'না। এখান থেকেই বলবো। আপনি কিছু কেন করছেন না হ্যাঁ!'
'ভেতরে আয় বলছি।'

ভেতরে যাবার সাহস অরু করলো না। বরং আরও দূরে সরে দাঁড়ালো। তন্ময় টেলিভিশন ওফ করে দিল। বইয়ের সাইডে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। শেল্ফ থেকে একটা বই হাতে নিয়েছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অরু পুনরায় দরজার সামনে এলো। তন্ময়ের মনোযোগ না পেয়ে দু'পা ভেতরে গেল। গলার স্বর নামিয়ে বলল, 'শাবিহা আপু এই বিয়েটা করতে চায়না।'
'তো?'
'অয়ন ভাইয়া কতো ভালো। আপুর জন্য পারফেক্ট। চাচ্চুকে তাদের ব্যাপারে বলবেন না?'

তন্ময় বইটা রেখে অরুর সামনে দাঁড়ালো। মনোযোগ দিয়ে দেখছে। তীক্ষ্ণ নজরে নজর মেলাতে পারছে না অরু। সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তন্ময় বারান্দার দিক চলে গেল। অরু ঠাঁই দাঁড়িয়ে। জিহ্বা কামড়ে তন্ময়ের পিছুপিছু গেল। রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তন্ময়। হিমশীতল বাতাস বইছে। ঠান্ডা আবহাওয়া। তন্ময়ের দেখাদেখি অরুও রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালো। এই ঠান্ডা বাতাসে তার চোখবুঁজে আসছে। হঠাৎ পেছনে থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস অনুভব করলো। বিচলিত হয়ে চোখ মেলে তাকাল। তন্ময় পাশে নেই, তার পেছনে। ছুঁইছুঁই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দুপাশে রেলিং ধরেছে। তন্ময়ের বাম গালের চাপদাড়ির খোঁচা লাগছে তার ডান গালে। দুরুদুরু কাঁপছে অরুর হাত। তোলপাড় শুরু হয়েছে ভেতরে। গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ। তন্ময়ের গলার স্বর নরম এবং নিচুস্তরে, 'ভাই হিসেবে আমার কর্তব্য আছে। বোনকে সহিসালামত এমন কারো হাতে দেয়া, যে তাকে সুখী রাখবে, ভালো রাখবে। আমি চাই ও এমন কাউকে পাক যে ওকে রাজরানী করে রাখবে। আমার বোনকে রাজরানী করতে হলে, ঐ ব্যাক্তিকে আগে রাজা হতে হবে। শক্তিশালী, ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। তাই অবশ্যই আমার বোনকে পেতে হলে রাজা হয়ে আসতে হবে আমার সামনে। কেঁড়ে নিয়ে যেতে হবে, আমার সাহায্য ছাড়া! আমি দেখতে চাই অয়ন কতদূর যেতে পারে। এখন তোর মাথায় ঢুকেছে আমার কথা?'  

অরু মাথাটা পাশে ঘোরাতে চাইল। সঙ্গে সঙ্গে চাপদাড়ির খোঁচা খেল গালে গভীর ভাবে। 'উহ' শব্দ করে উঠলো। সরতে চাইল। তবে তন্ময় সরতে দিলো না। সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো মূর্তির মতো। একসময় অরু শাবিহা-অয়ন সব ভুলে গেল। পেছনে তন্ময় দাঁড়িয়ে শুধু তাই মগজে রয়ে গেল!
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন