প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৩১ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


ছাদে পা রাখতেই দেখতে পাওয়ার যাবে, পা'পাশে সবুজ বোর্ডে, বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা রয়েছে 'গ্রিন ল্যান্ডে স্বাগতম'। নামটির যথার্থ পরিচয় দিয়েছে। ফ্লোরে সবুজ ঘাসের মেলা। বোঝার উপায় নেই যে এখানে প্লাস্টিকের ঘাসের ব্যবহার হয়েছে। দেয়ালেও সমানতালে ঘাসের ব্যবহার। মধ্যখানে দু'লাইন গেঁথে বড়ো দুটো টেবিল গিয়েছে। আসন দেয়া রয়েছে মোট চল্লিশ জনের। ড্রাম, গিটার এমন নানান রকমের বাদ্যযন্ত্র রয়েছে আশপাশে। গোল কুশন বালিশ গুলোর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে অনেকেই। এতগুলো অজানা মানুষ একত্রে দেখে অরু হকচকিয়ে গেল। সেই মানুষ গুলোর নজর তন্ময়ের উপর পড়তেই, একেকজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সে তন্ময়ের পেছনে চলে এলো। ভয়ে ধকধক করছে ভেতরটা। একপ্রকার গুটিয়ে গিয়েছে সে। এমন হট্টগোল মোটেই আশা করেনি।

বারো, চৌদ্দ জন পুরুষ হবে একত্রে। এবং প্রত্যেকে স্যুট-কোট পরে। একেকজন পুরুষের পাশে সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। বোঝাই যাচ্ছে তাদের জীবনসঙ্গিনী। তারা দিব্বি তন্ময়কে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ডেকে চলেছে,'এই আমাদের চ্যাম্প চলে আসছে। সাইড, সাইড! যায়গা দেন।'
'এতবড় তন্ময় এতটুকু যায়গায় আটব ত?'
'এই ব্যাটা! এতবড় তন্ময় মানে! তোর'টা কি 
ছোটো?'
'এইযে বড়ো তন্ময় চাচা দেখে নেন চোখ খুলে, ঠিক কে আগে অশ্লীলতা শুরু করছে! চোখ খুলে দেখে নেন সবাই! মাহিননা শুরু করছে! আমি আবার সবসময় অশ্লীলতার খেতাবে অংশগ্রহণ করতে চাই না।'
'এই মাদার'বোর্ড তুই এতবড়ো বলতে কি বুঝাইছস এটা আগে বল।'
'এতবড় মানে বড়ো! বড়ো ইংলিশে হলো, 'বিগ'! বিগার বিগ!'
'শা'লা অশ্লীল! তুই দেখে আসছস বিগ না স্মল। গে একটা!'
'এই খবরদার! মুখ সামলে কথা বলবি, ছোটো মিয়া!'
'আহিস দেখাব ছোটো না বড়ো।'
'একদম খুলে?'

অরু ফ্যালফ্যাল নয়নে একেকজনের কথাবার্তা শুনে যাচ্ছে। ভীতু সে একটি কথার মানেও বুঝে উঠেনি। কি রেখে কী বলছে ভালোভাবে শুনতেই পারছেনা! বুঝবে তো দূরের বিষয়। সে বরং আলগোছে তন্ময়ের শার্টের একটি অংশ চেপে রেখেছে। তার দৃষ্টি ঘুরেফিরে সকলকে দেখছে। একসময় দৃষ্টি গিয়ে থামলো ইব্রাহিমের দিক। ইব্রাহিম একটি গ্লাস হাতে বসে। আপাতত ঠিক অরুর দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে চলেছে। গ্লাসের সাথে গ্লাস মেরে উচ্চস্বরে বলল, 'তোরা ইম্পর্ট্যান্ট গেস্ট মিস করে যাচ্ছিস!'

ইব্রাহিমের আঙুল তোলায় এবার সকলেই তন্ময়ের পেছনে তাকাল মনোযোগ দিয়ে। সুঠাম দেহের তন্ময়ের পেছনে পাতলা, ছোটো গড়নের অরুকে লক্ষ্য করা আসলেই কষ্টসাধ্যের বিষয়। কিছু সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা বয়ে গেল। পরপর পুনরায় হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ! মাহিন অধৈর্য গলায় শুধালো, 'এটা অরু না?'
'অরুকে এনেছিস? সিরিয়াসলি! সূর্য কোথা থেকে উঠছে?পূর্ব?'
'শা'লা অশিক্ষিত সূর্য পূর্ব দিক থেকেই উঠে!'
'সূর্যমামা আর আমি ভাইরা ভাই! এখন ভাই-ভাই হয়ে তো আর তাকে উল্টো দিক থেকে উঠতে বলতে পারিনা!'
'ইয়াক!'

অরু এখনো চমকে তাকিয়ে। সকলেই তার নাম জানে।কিভাবে জানে? সে তো এই প্রথম তাদের দেখছে। এর আগে কখনো দেখেনি। তন্ময় বন্ধুবান্ধব বাড়িতে আনেনা খুব একটা। ক্লোজ ফ্রেন্ড ইব্রাহিম হাতেগোনা দু'একবার এসেছে। আর সকলেই তাকে কেমন নাম ধরে, মজার সুরে কথা বলে চলেছে। যেনো বছর বছর ধরে তাদের সম্পর্ক, পরিচয়, চেনাজানা।

তন্ময় মাথা ঘুরিয়ে অরুর দিক তাকাল। এগিয়ে নিয়ে গেল তার বন্ধুবান্ধবদের সামনে। চোখে চোখ রেখে নরম সুরে বলল, 'দে আর মাই ফ্রেন্ডস।' 

অরু ছোটো স্বরে সালাম জানাল, 'আসসালামু আলাইকুম।'

'আলাইকুমস সালাম। আলাইকুমস সালাম।' জবাব খানা সকলের থেকে ফিরে আসলো। তন্ময় একটি কুশন এগিয়ে দিয়ে বসতে ইশারা করলো অরুকে। অরু বসলো জড়সড় হয়ে। তার পাশেই তন্ময় বসেছে ছুঁই ছুঁই হয়ে। 

সর্বদা গম্ভীরমুখের তন্ময়কে এখন আর গম্ভীর লাগছে না। সে মুচকি হেসে তাকিয়ে বন্ধুদের পানে। দু'একবার মাথা দুলিয়েছে। কথা বলছে! এক সুন্দর পরিবেশ। হাসাহাসির ঝড় বসেছে। ঠাট্টার সুরে রিহান বলে, 'এতবড় তন্ময়ের জন্য অরু ছোটো হয়ে গেল না!'

হাসাহাসির ঝড় নেমে এলো। ইব্রাহিম হাসতে লুটিয়ে পড়েছে। চোখের কোণে তার জল জমেছে। নিজেকে সামলে চোখে কোণ মুছে নিল। মাহিন অতিষ্ঠ সুরে ভেঙাল,' সেই তন্ময়েরটা নিয়েই ওর যত মাথা ব্যথা! দেখে আসছে যে বড়ো! আর তোর'টা! ওটা যে ছোটো শুহানি জানে? এই শুহানি এটাকে ডাক্তার দেখাস না কেন!'

রিহান সকলের থেকে বেশি দুষ্টু প্রকৃতির। তা তার হাবভাবে বোঝা যাচ্ছে। তার পাশে ফর্সা, লম্বাচওড়া দেখতে মেয়েটি হলো শুহানি। অরু মনোযোগ দিয়ে মেয়েটিকে দেখল।কথাবার্তায় বুঝে নিয়েছে মেয়েটিও তন্ময়ের ফ্রেন্ড সার্কেলের একজন। তুই তুকারি তো আর যে সে লোক করেনা। লক্ষ্য করেছে তন্ময়কেও তুই করেই সম্বোধন করেছে। ইভেন রিহানকেও! শুহানি নাক কুঁচকে বলেছে,'ডাক্তার দেখিয়েছি, সার্জারী করতে হবে!'

রিহান বুকে হাত চেপে রেখেছে, ' বেবি! ডার্লিং! সুইটহার্ট হাও ক্যান ইউ সে দিস!'
'চুপ থাক!'
'এভাবে বলেনা যান! কষ্ট পাই।'
'তুই মর।'
'আমি মরলে কেম্নে হবে জান!'

রসিকতা সকলের মধ্যে বিদ্যমান। মাহিনের বা'পাশের ছেলেটা সৈয়দ। শান্তশিষ্ট ধরনের। তবে এবার মুচকি হেসে অরুকে জিজ্ঞেস করলো,'অরু তো এবার ইন্টার পরিক্ষা দিয়েছ না? তুমি করে বলছি কারণ ভীষণ ছোটো। আমাদের সকলের মাস্টার্স কমপ্লিট বুঝলে? আমরা তোমার সিনিয়রদের ঘরের সিনিয়র। তা এতবড় সিনিয়র বয়ফ্রেন্ড পেয়ে কেমন বোধ করছ?'
'তারউপর সিনিয়র বয়ফ্রেন্ড কাজিন!
'ওহো!'

অরু আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাচ্ছে মাথা নত করে। ঠিক কতপ্রকার লজ্জা সে পাচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রীতিমতো গালে গরম আভাস পেয়ে চলেছে। মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা। তন্ময় ঠোঁটে স্মিথ হাসি রেখে আছে। অরু খুব সময় নিয়ে নিচুস্তর স্বরে বলল,'জি। ইন্টার দিয়েছি।'
'বি কম্ফোর্টেবল অরু! আমরা আমরাই তো।'

সৈয়দের পাশে রুবেল বসে। সে শুধু হেসেছে এবং টুকটাক মতামত দিয়েছে। এবার সেও কথা বলল,
'এমন সুন্দরী শান্তশিষ্ট পিচ্চি কাজিন আমাদের নেই কেন!তাহলে তো আর মেয়ে খুঁজতে হতোনা! বাচ্চাকাল থেকে পড়িয়ে, শিখিয়ে নিজের মতো বড়ো করে, বিয়ে করে ফেলতাম!'
'কাজিন গুলো সব বিয়েসাদী করে আঙ্কেল বানিয়ে ফেলেছে!'
'সব লাক তন্ময় চাচার।'

অরু টানটান হয়ে বসে। ঘনঘন তন্ময়ের দিক তাকাতে ইচ্ছে করছে। কারণ তন্ময়ের হাত তার পিঠে। একটু পরপর বুলিয়ে দিচ্ছে। যেমন শান্ত করছে অরুকে। কিন্তু অরুর তো অস্বস্তি হচ্ছে না। একটু লজ্জা এবং ভয় লাগছে। তেমন ভালোও লাগছে।

ইব্রাহিম শব্দ করে হেসে উঠলো, 'শান্ত? তাও অরু!অসম্ভব।'

শুহানি হেসে শুধালো, 'অনেক দুষ্টু নাকি?'
'দুষ্টু না! দুষ্টুর নানি। তন্ময়কে নাকে দরি লাগিয়ে ঘুরায়। অচেনা মানুষদের সামনে এমন পুতুল সেজে থাকে। কিন্তু বাড়িতে ও একটা জলজ্যান্ত জ্বালানি।' 

অরু লজ্জায় মাথা নত করে রেখেছে। মনেমনে ইচ্ছে মতো বকে দিল। পেয়ে নেক একবার সামনে। ইতর, বাটপার একটা। মাহিন ইন্টারেস্ট নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'সত্যি নাকি তন্ময়?'

তন্ময় উচ্চস্বরে করে হেসে উঠলো। হাসির শব্দে অরু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকাল। বন্ধুদের সঙ্গে তাহলে তন্ময় এমন থাকে? কতটা সুন্দর লাগছে তার আইডিয়া আছে লোকটার? অরুর বুক দুরুদুরু করে কেঁপে উঠছে। বুকে অশান্তি অনুভব করছে। এভাবে তার সামনে কেন হাসেনা? এইযে হেসেছে বলে গহব্বরে হারিয়ে গিয়েছে মায়াবী চোখ দুটো। ঠিক কতটা সুন্দর দেখাচ্ছে, তা তো অরু ভালোভাবে দেখতেই পারছেনা। 

তন্ময় হেসে বলল,'দুরন্তপনায় ঘেরা। ড্রামা বা মুভিস দেখতে হয়না। সি'জ এনাফ।'

শুহানি হেসে বলল, 'ড্রামা কুইন আহা! লটারি জিতছস দোস্ত!'

অরু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। শুহানির কথায় পুনরায় লজ্জায় হতভম্ব হয়ে গেল। পরপর বন্ধুদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। নানান রকমের বিষয় নিয়ে কথা বলছে। অরু মনোযোগ দিয়ে শুনছে। একসময় ওয়েটার এসে ড্রিংকস দিয়ে গিয়েছে। সে মেজেন্টা নিয়েছে। ধীরেসুস্থে একটু একটু করে খেয়ে চলেছে। এরমধ্যে শুহানি এবং উপস্থিত কিছু মেয়ের সাথে তার কথাবার্তা হলো! তাদের কথায় অরু বুঝতে পারলো তারা সবাই তাকে চিনে। তন্ময়ের সেলফোন থেকে নাকি ছবি দেখেছে। মজার মজার অনেক ইন্সিডেন্ট শুনেছে। অরু বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। নাহিন দুষ্টু সুরে বলল, 'তোমাকে মজার একটা বিষয় বলি অরু! তখন আমরা মাস্টার্স প্রথম বর্ষে। তন্ময়কে আমাদের ক্লাস লিডার তন্নি প্রপোজ করে। মাঠে ভরা জনগণ! পাব্লিক প্রপোজ বুঝো ত? পাব্লিক প্রপোজ করে বসে। সেই কি কান্ড! ভাবতেই হাসি চলে আসছে!'

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তার সঙ্গে বাকিরাও যোগদান করেছে। কিন্তু অরু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাকিটা শোনার জন্য। মাহিন বলল, 'বাকিটা আমি বলি শোনো। তন্ময় খুব নিট অ্যান্ড ক্লিন! এটা আমরা সকলেই জানতাম। ও আগে থেকে ছোট গার্লফ্রেন্ড বাড়িতে বড়ো করছে, তা তো আর তন্নি বেচারি জানে না! ও তন্ময়ের পেছনে আঠার মতো লেগে পড়ল। কি খাটনি না খেটেছিলাম এই মেয়েকে সরাতে।'

অরু চোখমুখ অন্ধকার করে তন্ময়ের দিক তাকাল। তন্ময় জিজ্ঞেস করলো,'খারাপ লাগছে?'
'না।'
'ঠান্ডা লাগছে?'
'উহু!'
'ডিসকম্ফোর্ট ফিল করলে জানাবি!'
'হু।'

নাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,'হাও কিউট! এই কেয়ারিং তন্ময়কে আমি প্রথম দেখছি!'
'মি টু!'
'আমিও!'

অরুর বলতে ইচ্ছে করলো, সেও এই প্রথম দেখছে। এমন কেয়ারিং, হাস্যজ্জ্বল সুন্দর তন্ময় আগে দেখেনি। দেখেনি বললে ভুল হবে। খেয়াল করেনি। মাহিন তন্ময়ের উদ্দেশ্যে বলল, 'এই তুই এভাবে তুই তুকারি করছিস কেন অরুকে!'
'অভ্যাস।' তন্ময়ের ছোট জবাব। থেমে আবারো বলল, 'পরিবর্তন করা যাবে বলে মনে হয়না।'
'জান, টান ডাকিস না? না মানে কোনো নিক-নাম দিস নাই?'

অরু লজ্জায় পুনরায় হতভম্ব হয়ে রইল। তন্ময় আগেই যেই ওয়ার্নিং দিয়েছে তাকে, তার যথাযথ কারণ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে অরুর। বন্ধুদের মস্করার গুলো তন্ময় কি ইজিলি হ্যান্ডেল করছে। যে যা বলছে, সে সেটাই মেনে নিচ্ছে। জবাব দিচ্ছে! অরু চুপচাপ জড়সড় হয়ে সকলের আলাপ-আলোচনা শুনে গেল। 
____________
ডিনার শেষ করে সকলে পুনরায় শুয়ে, বসে রয়েছে। মজামাস্তি থামেনি তাদের এক সেকেন্ডের জন্য। কিছুক্ষণ পর রুবেল গান নিয়ে কথা তুলেছে।ব্যস, সকলের রিকোয়েস্ট মেনে রিহান গান গাইল শুহানির জন্য। একটি বাংলা রোমান্টিক গান। অরু সমানে হাতে হাত, ছুঁয়ে তালি দিচ্ছে। লাজুক হেসে মনোযোগ সহকারে শুনছে। কি সুন্দর গেয়েছে! নিশ্চয়ই প্রায়শই গান গায় তারা! গান শেষ হতেই একসময় রূপম বলল, 'অরু তোমাকে তন্ময় গান শুনিয়েছে ত?'

অরু প্রায়সময় শুনেছে তন্ময় ভালো গান গায়। গিটার বাজাতে পারে। কিন্তু কখনো শোনেনি। অরু মাথা নাড়লো। শোনেনি! মাহিন চেঁচিয়ে উঠলো,'কি বলো! তোমাকে গান শোনায়নি? পৃথিবীতে এমন প্রেমিক আছে নাকি, যে নিজের প্রেমিকাকে গান শোনায় না?'
'আরে ওদের বিষয়টা তো ভিন্ন অন্যদের থেকে। দে আর কাজিনস!'
'তাতে কি! কাজিনদের চান্স আরও হাঈ মাম্মা!'
'এই ব্যাটা চল তাড়াতাড়ি গান গেয়ে শোনা একটা অরুকে! তুমি শুনতে চাও ত অরু?'

চুপসে গেল অরু। সকলের নজর তার উপর। এমনকি তন্ময়ের! সেও তাকিয়ে তার রায় জানার জন্য। লজ্জায় এখান থেকে অরুর লাফিয়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে তন্ময়ের মুখে গানও শুনতে চায়। অবশেষে হালকা মাথা দোলাল। মুহুর্তে রিহান তার হাতের গিটার ছুড়ে মা'রে তন্ময়ের দিক। 
ইব্রাহিম উৎসাহ দিল, 'চল শুরু কর!'

তন্ময় গিটার হাতে মাথা নত করে, গিটারে টুং টুং শব্দ করছে। অরু ধ্যান মে'রে দিয়ে তাকিয়ে। বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঠিক কতটা এক্সাইটম্যান্ট তার ভেতরে কাজ করছে, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে কখনো কল্পনা করেনি, তন্ময় তার জন্য গান গাইবে। গম্ভীর তন্ময়কে এভাবে কল্পনা করার সাহস সে জীবনেও পায়নি। 

পরিবেশ শান্তশিষ্ট হয়ে গেল মুহুর্তে। কোনো শব্দ নেই। সকলেই নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। তবে ঠোঁটে মৃদু হাসি! মাহিন আঙুলের সাহায্যে শিঁষ বাজিয়েছে দুবার। ইব্রাহিম মোবাইলের ক্যামেরা ওন করে দিয়েছে। তন্ময়ের ভারী, গভীর কন্ঠের স্বর ধীরে শোনা গেল। 

'চাহে কুছ না কেহনা, ভালে চুপ তু রেহনা 
মুঝে হে পাতা, তেরে প্যায়ার কা 
খামোশ চেহরা, আখো পে পেহরা 
খুদ হে গাওয়া, তেরে প্যায়ার কা, 

তেরি ঝুকি নাজার, তেরি হার আদা 
মুখে কেহ রাহি হে এ দাস্তা , 
কই শাকস হে যো কে ইন দিনোন
তেরে যেহেন-ও-দিল পে হে ছা গায়া!'
.
.
.
চলবে.............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন