প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৩২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


জবেদা বেগম শাবিহার রুমে এসেছেন। তিনি মেয়ের পছন্দের ভুনাখিচুড়ি প্লেটে সাজিয়ে এনেছেন। সঙ্গে গোস্তো এবং পাশে সামান্য আচার দিয়ে।শাবিহা কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে অফিস থেকে। তখন সে মোবাইল হাতে পায়চারি করছিলো কক্ষ জুড়ে। মায়ের হঠাৎ আগমনে দাঁড়িয়ে পড়ল। নাকে ভেসে এলো সুগন্ধ! ঘ্রাণে চারিপাশ মৌ মৌ করছে। হেসে শুধালো,'কি এনেছ? খিচুড়ি মনে হচ্ছে!'

জবেদা বেগম প্লেট টেবিলের উপর রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গে শাবিহা উড়ে গিয়ে বসলো চেয়ার পেতে। কোনোমত এক ঢক পানি খেয়ে, খিচুড়ি খেতে শুরু করেছে। জবেদা বেগমের রান্নার হাত চমৎকার। তার হাতের ভুনাখিচুড়ি চেটেপুটে খেতে হয়। সাধারণ একটি খাবারও জবেদা বেগমের হাতে, সুস্বাদু হয়ে উঠে। তিনি শাবিহার পাশে গিয়ে বসেছেন। আগ্রহী চোখে মেয়ের খাওয়া দেখছেন। 

খাওয়ার একপর্যায়ে শাবিহা হেসে বলল,'কিছু কী বলবে মা!'

জবেদা নড়েচড়ে বসলেন। তিনি কিছু নয় অনেককিছু বলতে এসেছেন। অনেকদিন ধরেই মেয়ের সাথে একান্তভাবে কথা বলতে চাচ্ছিলেন। তবে সময় হয়ে উঠছিল না। আজ বাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা। মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেব অফিসে আছেন। মুফতি বেগম পাশের বাড়িতে রয়েছেন। সুমিতা বেগম ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। দীপ্ত আকাশের সঙ্গে বেরিয়েছে। রুবি বান্ধবীর বাড়িতে! অরু তন্ময়ের সাথে বেরিয়েছে। বাড়িতে আপাতত তিনি আর তার মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। এটাই তো ভালো সুযোগ মেয়ের সাথে আলাপ করবার। তিনি বললেন, 'খেয়ে নে। ধীরেসুস্থে বলি।'
'এইতো খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে আসি!'

শাবিহা ওয়াশরুম ঢুকে হাত ধুয়ে ফিরেছে। একটা টিস্যু নিয়ে সেটায় হাত মুছতে নিয়ে জবেদা বেগমের সামনে বসলো, চেয়ার পেতে। হেসে বলল, 'দেখি বলো কি বলার আছে তোমার!'

জবেদা বেগম আলাপের সুর তুলেছেন মেয়ের শৈশব কৈশোরের বিষয় নিয়ে।'একটুখানি ছিলি! মনে হয়, এইতো গতকাল ড্রয়িংরুম জুড়ে ছোটছোট পা ফেলে দৌড়েছিস! তন্ময় ধমক দিতেই কেঁদেকেটে আমার পিছুপিছু ঘুরে বেড়াতি আঁচল ধরে৷'ভাইয়া মেরেছে, ভাইয়া মেরেছে' বলে গুনগুন করে চলতি। দেখ, সময় কতটা পরিবর্তন হয়ে যায়। সেই ছোট্ট মেয়েটা আমার কি সুন্দর ভাবে বড়ো হয়ে গিয়েছে। এখন তার বিয়ের সম্বন্ধ এসে চলেছে সমানে। নাকেমুখে দম ফেলার সময় নেই।'

শাবিহার ঠোঁটের স্মিত হাসি থমকে গেল। একসময় ঠোঁটের থমকে যাওয়া হাসি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। থমথমে অবস্থা মুখশ্রীর। মায়ের পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। জবেদা বেগম দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, 'মা আমার এভাবে জেদ ধরে থাকেনা! তুই এখন আর ছোটো নেই। বিয়ের বয়স পেড়িয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তোর কথায় তোর বাবা এতগুলো বছর বিয়ের বিষয় এড়িয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিবেশীদের কানাঘুঁষা, সমালোচনা তো চলছেই। আজকাল আত্নীয় স্বজন ও মুখের উপর কথা বলছে! এভাবে আর কতদিন?'

শাবিহা নিশ্চুপ হয়ে রইলো। তার বলার মতো কিছুই নেই। সে কি করবে বুঝতে পারছেনা! কি বলবে খুঁজে পাচ্ছেনা! পরিস্থিতি যে তার বোঝার বাইরে। দিশেহারা অবস্থায় উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল বেজে চলেছে। অয়নের কল! শাবিহা ফোন সাইলেন্ট করে টেবিলে রেখে দিল। জবেদা বেগম পুনরায় বললেন, ' আশরাফুল ভাইয়ের কথা মনে আছে? তোর বাবার বন্ধু! ওইযে আমাদের পাশে বাড়ি থাকতো। বাড়ি বিক্রি করে সুইজারল্যান্ড শিফট হয়েছিলো না? তারা ফিরে এসেছে। তার ছেলে মুবিনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? তোরা দুজন একসঙ্গে খেলেছিস মনে নেই, বুঝি? তোর বাবা ছেলের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে। ভীষণ ভদ্র এবং সুশীল। শিক্ষিত, মার্জিত! সবদিক দিয়ে পারফেক্ট। আশরাফুল ভাই প্রস্তাব দিতেই, তোর বাবা সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমারও ভালো লেগেছে। আগামী সপ্তাহে তোকে দেখতে আসবেন তারা। অবশ্য, তোকে তাদের দেখা। তবুও সামনাসামনি দেখে নিবে নাহয়। ছেলের সাথে একটু কথা বল, ভেবে দেখ তারপর! আমার মনে হয় তোর পছন্দ হবে!'

মেয়েকে ভাবনাচিন্তা করার সুযোগ দিয়ে, জবেদা বেগম প্লেট হাতে বেড়িয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় দরজা চাপিয়ে গেলেন। জমিনে স্তব্দ, বিমুঢ় দৃষ্টি রেখে শাবিহা দাঁড়িয়ে থাকলো। নড়ল না বেশ খানিক্ষন। পা জোড়া ধরে গিয়েছে, তবুও দাঁড়িয়ে।
মস্তিষ্কের মধ্যে জটিল জট বেধেছে। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে শাবিহার। কি করবে সে? 

ভারী পা জোড়া টেনে বিছানায় বসলো। মুখমণ্ডল দু'হাতের ভাঁজে গুঁজে ডুকরে উঠলো। সাধারণ একটা মেয়ে সে। বাবামায়ের, পরিবারের দুলালি। তেমন শক্তিশালী হৃদয় বা মস্তিষ্ক তার নেই। খুব অল্পতেই কষ্ট পায়, ভেঙে পড়ে। আজও একই অবস্থা! 
_____________
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে দশটা পঁয়তাল্লিশে। অরু তন্ময়ের পেছন পেছন গাড়িতে উঠে বসেছে। এখন তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোবে। রাত হয়েছে অনেক! মোস্তফা সাহেব বেশ কয়েকবার কল করেছেন। তন্ময় ঘন্টাখানেক আগে কল রিসিভ করে, আসছি বলে কেটে দিয়েছে। এখন অবদি আর একটি কল সে রিসিভ করেনি। সিটবেল্ট বেঁধে অরু গালে দু'হাত চেপে ধরলো। গাল গরম! শুধু গাল নয়, ঘাড় থেকে সম্পুর্ন মুখ গরম হয়ে আছে। এতটা ভয়ংকর লজ্জার সম্মুখীন যে হবে কে জানত? 

মস্তিষ্ক সম্পুর্ন ফাঁকা হয়ে আছে অরুর। কি রেখে কি নিয়ে ভাববে দিশে পাচ্ছে না। মনের ভেতর অনেক প্রশ্ন রয়েছে তার। অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে। সঙ্গে অভিমান করে বসেছে তন্ময় উপর। এতো লুকোচুরি কেন! সবকিছু অন্যদের থেকে কিংবা নিজ থেকে তাকে কেন বুঝে নিতে হবে!

তন্ময় আগেরকার মতো ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। অরু পিটপিট করে আঁড়চোখে তাকিয়েছে কয়েকবার। গলায় কথা আটকে আসছে। লজ্জা এবং সংকোচ এড়িয়ে কথা বলতে মুলত দ্বিধাবোধ করছে সে।

অরুর পাশের কাঁচ নামানো। ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করছে গাড়িতে। ঠান্ডা বাতাসে শরীরের পশম গুলো পরম আবেশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। শীতে জুবুথুবু খেয়ে গেল মুহুর্তে। চোখ বন্ধ করে শীতে কেঁপে উঠলো। একটা শাল বা কার্টিগ্যান কিছুই আনেনি সঙ্গে। আসলে তার মনে ছিলো না। তাড়াহুড়ো এবং আবোলতাবোল চিন্তা মস্তিষ্কে নিয়ে সবকিছু ভুলে বসেছিল। রেস্টুরেন্টের ভেতরে উষ্ণতা ছিলো বিদায় শীত তেমন গায়ে লাগেনি। তবে এখন শীতল অনুভব করে জড়সড় হয়ে আসছে শরীর। একসময় মনোযোগ বাইরে দেওয়ার চেষ্টা করলো। গাছের পর গাছ পেছনে চলে গিয়েছে নিমিষেই। গাড়ির পর গাড়ি ফেলে এগিয়ে চলেছে তাদের গাড়ি। 

নিস্তব্ধতা ভেঙে তন্ময়ের কন্ঠের স্বর শোনা গেল, 'কাঁচ লাগিয়ে দে।'
'থাক না।'

অরুর কথার অগ্রাহ্য করে, তন্ময় গাড়ি চালানোর ফাঁকে কাঁচ উঠিয়ে দিল। অরু সঙ্গে সঙ্গে মুখের খারাপ অবস্থা করে বসলো। ঠোঁট গাল ফুলিয়ে রাখল। ভুরু দু'য়ের পাশে সূক্ষ্ম ভাজ। তন্ময় দু'একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখল। এতটুকু বিষয় নিয়ে অরুর মুখ ফুলানোর কারণ খুঁজে পেল না। অবশেষে বিরক্ত সুরে বলল, 'এমন ঠান্ডা বাতাস আসছে, তবুও তোর আক্কেল আসছেনা কেন!'

অরু থমথমে গলায় বলল,'আপনি চুপ থাকেন!'
'আমার গাড়িতে আমি চুপ থাকব?'
'তো? আমাকে বের করে দিবেন? হ্যাঁ? আপনার সাহস আছে! ভীতু একটা! আপনি তাজা গোস্তের কুমির, জানেন সেটা?'

অরু এই লোকটার উপর চরম বিরক্ত। বিরক্ত হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে আজ। চোখের সামনে সবকিছু পরিষ্কার তার। ঝকঝকে পকপকে পরিষ্কার। তার বুঝতে আর বাকি নেই কিছু! এতক্ষণ যাবত সব কথা মিলিয়েছে। তন্ময় তাকে খুব আগে থেকে পছন্দ করে। তাইতো ক্লাসমেট তন্নিকে রিজেক্ট করেছিলো। একটাও প্রেমের রেললাইন চড়েনি অরুর জন্য। ফিরবার সময় তাকে মাহিন খুব সাবলীল গলায় বলেছিল, 'আমার বিশ্বস্ত বন্ধু তন্ময়। দেখে রেখ কিন্তু তাকে! উপরে একটু গম্ভীর তবে মনের দিকে তুলো একদম। অবশ্যই তুমি এগুলো জানো, তাও বলছি আরকি! জানো ত তোমাকে কতটা ভালো...'

কথাগুলো শেষ করতে পারেনি মাহিন। পূর্বেই রুবেল ডেকে উঠেছিলো। কিন্তু অরু স্পষ্ট বুঝেছে। সে তো বাচ্চা নয়। মাহিন নিশ্চয়ই বলতে নিয়েছিল, 'তন্ময় তাকে ভালোবাসে?' 

অরু পেছনে মাথাটা দুলিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো। সেই রাত্রের দৃশ্যটি চোখের পাতায় ভেসে উঠলো পুনরায়। মাতাল, দিশেহারা তন্ময় নিজের গাম্ভীর্যকে দূরে সরিয়ে স্বেচ্ছায় নিজেকে আত্নসমর্পণ করেছিল অরুর সামনে। জ্ঞান হারাবার পূর্বের কথাগুলো অরুর কানে এখনো স্পষ্ট। কমবেশি প্রতিদিন ভাবতে বসে আদৌও কী তন্ময়ের কথাগুলো সত্য ছিলো? আধার রাতে নিস্তব্ধ রুমে অরুর কানের কাছে অস্পষ্ট গম্ভীর স্বরে বলা, 'ভালোবাসি' এখনো সর্বাঙ্গ শরীর জুড়ে শিহরণ বইয়ে দিয়ে যায়। সেই অনুভূতি কাঁপিয়ে তুলে অরুকে। কতটা সাবলীলভাবে বলেছিল! অরুর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। কষ্ট হয়েছে বলে ভুল হবে, একপ্রকার সে ভেবে নিয়েছে মাতাল হয়ে আবোলতাবোল বকেছিল লোকটা। কিন্তু আজ? মাহিনের কথাগুলো অরুর চোখের সামনের পর্দা উঠিয়ে দিয়েছে। স্পষ্ট দেখতে এবং বুঝতে পারছে সবকিছু। তন্ময় কেন এতো লুকোচুরি খেলছে তার সাথে? 

'কি হয়েছে?'
'ব্রিজের উপর একটু থামাবেন গাড়ি?'

তন্ময় গম্ভীরমুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। নাচক করলেও শেষপর্যন্ত গাড়ি থামিয়েছে। কয়েক জোড়া কপোত-কপোতীর দেখা মিলছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা স্নিগ্ধ শীতল বাতাসে ভিজতে ব্যস্ত। অরু একটি ফাঁকা যায়গায় দাঁড়ালো। রেলিঙ ঘেঁষে নিচে তাকাল৷ জলের স্রোত বয়ে চলেছে। সঙ্গে বইছে তুমুল বাতাস। চুল উড়ে মুখের সামনে চলে আসছে বারংবার। বিরক্তভাবে চুলগুলো কানের পেছনে ঠেলে দিল। আনমনে বলল, 'এখান থেকে পড়লে কী আমাকে বাঁচানো যাবেনা?'

তন্ময় বিরক্ত ভঙিতে অরুর হাত ধরতেই থমকে গেল। ঠান্ডায় শরীর বরফের ন্যায় হয়ে গিয়েছে। ছোঁয়া দুষ্কর৷ তবুও মেয়েটার দুরন্তপনা ছুটে না। মহাবিরক্ত হলো সে। টেনে নিতে চাইল তবে অরু নড়ল না। সে ঘুরে দাঁড়ালো তন্ময়ের দিক। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চারিপাশে নজর বোলালো। কেউই আশেপাশে নেই। নির্জন এবং ফাঁকা রাস্তা। হুট করে দ্রুত পায়ে গিয়ে তন্ময়ের কোমর দু'হাতে পেঁচিয়ে ধরলো। তার মাথা ঠেকেছে তন্ময়ের বুকে। ঠিক এভাবেই সে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে। ভালোলাগায় আবেশে চোখ ভিজে এলো। তন্ময়ের বুকে মাথা রাখতেই পৃথিবী শুন্য মনে হতে লাগলো। জীবনে আর কিছুই লাগবে না তন্ময় ছাড়া, এমন অনুভূতি হচ্ছে। শান্তিতে তার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। পরপর অনুভব করলো তন্ময়ের হাত তার পিঠে। অগোছালো চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে যেন৷ অরু স্মিথ হাসলো। লজ্জার মাথা খেয়ে কী তন্ময়ের বুকে একটা চুমু খাবে? 
__________
অয়ন একটা সিগারেট ধরে রেখেছে দু'আঙুলের ফাঁকে। কয়েকবার সিগারেট জ্বালাতে গিয়েও জ্বালায়নি। আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে পাশের ছাঁদে। শাবিহা কল ধরছে না। মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে না। ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি? এতো দ্রুত তো ঘুমায়না। ব্যস্ত ভঙ্গিতে চারপাশে নজর বুলিয়ে আবারো কল করেছে। এইবার শাবিহা কল রিসিভ করল। অয়ন অশান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো, 'কল ধরছিলে না যে?'

শাবিহা নিজেকে সামলে নিয়েছে। তবে কিছুক্ষণ কান্না করেছে বিদায় মুখশ্রী লাল বর্নে ধারণ করেছে। গলার স্বর ভেজা এবং গম্ভীর, 'ওয়াশরুম ছিলাম।'
'কি হয়েছে? কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন! দেখি ছাঁদে আসো ত!'
'না এখন ঘুমাব। আসতে পারব না।'
'কি হয়েছে শাবিহা? আমাকে কি বলা যায়না?'
'কিছু হলেনা বলবো!'
'আচ্ছা। একটুখানির জন্য ছাঁদে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।'

শাবিহাকে আর কথা বাড়ানোর সুযোগ দিল না। মুহুর্তে কল কেটে দিলো। ব্যস্ত পায়ে পায়চারি করে চলেছে। শাবিহার কন্ঠের স্বর বড়োই চিন্তায় ফেলেছে অয়নকে। কান্না করেছিলো কী? নাহলে ওমন শোনাবে কেন! শাবিহাকে একবার সামনাসামনি দেখে না নিকে অয়ন অন্তরে শান্তি পাবেনা।

শাবিহা বেশ সময় নিয়ে এসেছে। একটা চাদর শরীরে পেঁচিয়ে রেখেছে। ছাঁদের লাইটস ওফ! আকাশের চাঁদে তার লাল মুখশ্রী দৃশ্যমান। অয়ন বাউন্ডারি পেড়িয়ে চলে এলো শাবিহার কাছে। বিচলিত ভঙ্গিতে শাবিহার মুখমণ্ডল দু'হাতে তুলে ধরলো চোখের সামনে। গালে আঙুল ঘষে বলে উঠলো, 'কান্না করেছিলে কেন?'

শাবিহা থমথমে গলায় বলল,'এভাবেই।'
'এভাবেই? এভাবেই কাঁদা যায় বুঝি? তাহলে আমিও কি একটু চেষ্টা করবো এভাবেই কাঁদার? কি বলো!'
'তুমি কি বলবে বলো! নাহলে আমি যাচ্ছি।'

বলতে বলতে শাবিহা ঘুরে পা বাড়ালো চলে যাবার উদ্দেশ্যে। অয়ন পেছন থেকে শাবিহাকে জড়িয়ে ধরলো। একটি সুন্দর সুভাষ নাকে লাগছে। শাবিহার চুলের ঘ্রাণ অয়নের ভীষণ পছন্দের। শুকলেই মাতাল মাতাল লাগে নিজেকে। ডান হাতে চুলের ক্লিপ খুলে দিলো, শাবিহার অমতে। লম্বা, ঘন রেশমি চুলে মুখ ডুবিয়ে দিল। লম্বা বড়ো বড়ো কয়েকটি শ্বাস নিল। সেভাবেই অস্পষ্ট স্বরে বলল, 
'কি সমস্যা আমাকে না বললে আমি কিভাবে জানব হু?'
_____________
অরু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তন্ময় যখন গান গেয়েছিল সেটার ভিডিও করতে দেখেছে ইব্রাহিমকে সে। তাই দ্রুত মেসেঞ্জারে ঢুকে ইব্রাহিমকে ম্যাসেজ করলো। বলল তখনকার করা ভিডিওটি সেন্ড করতে। ইব্রাহিম সময় নিয়ে পাঠিয়েছে। ভিডিও সেইভ করে ফেললো। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে প্লে করলো। লজ্জায় তখন ভালোমতো দেখতেই পারেনি। শুধু শুনেছে! এখন ভিডিওটা মনোযোগ দিয়ে দেখবে এবং শুনবে।

তন্ময়ের এই গম্ভীর স্বরে গাওয়া গান অরুর মস্তিষ্ক থেকে যাচ্ছেই না। এভাবে আর কখনো কি শুনতে পারবে? বাংলা গান শুনতে কেমন লাগবে এই স্বরে? ভাবতেই অরুর ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেল৷ 
.
.
.
চলবে................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন