অনুভবে - পর্ব ৩৩ - নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা - ধারাবাহিক গল্প


হঠাৎ ঐশি এভাবে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরায় সভ্য ঘাবড়ে যায়। সে ঐশির মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, "কী হয়েছে তোর? সব ঠিক আছে তো?"
ঐশি কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, "ঠিক নেই। আমার কিছু ভালো লাগছে না। অশান্তি লাগছে। আমার ইচ্ছে করছে আমি সব ছেড়ে..."
এতটুকুতেই সভ্য ঐশিকে থামিয়ে দেয়। তাকে উঠিয়ে গাল মুছে দিয়ে বলে, "এখন কথাগুলো বলা লাগবে না। আমরা একটুপর কথা বলব। বাহিরে সামি ও ইরফান আছে। ওরা তোকে কাঁদতে দেখলে নানান প্রশ্ন করবে।"
ঐশিকে থামানোর কারণ হলো সে চায় না ঐশির ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কথা তার অজ্ঞাতে কেউ জানুক। সে হোক ইনারা। যতক্ষণ পর্যন্ত ঐশি না চায় তার ব্যক্তিত্ব জীবনের কোনো কথা কেউ জানার অধিকার রাখে না। তাই তাকে থামিয়ে বুঝিয়ে রুম থেকে বের করে সভ্য। 

ঐশিকে বের করে সভ্য ইনারাকে আবারও খুঁজতে থাকে। তাকে পায় বারান্দায়। ইনারাকে সেখানে দেখে জিজ্ঞেস করে, "তুমি তাহলে এখানে?"
ইনারা মুখ অন্যদিকে করেছিলো। তাই তার মলিন মুখখানা দেখা যাচ্ছিল না। সে বলল, "তুমি চিন্তা করো না আমি জলদি ওদেরকে খাইয়ে বের করছি।"
"আচ্ছা।"
ইনারার কন্ঠে অন্যরকম এক উদাসীনতা ছিলো। যা ঠিকই ধরতে পেরেছে সভ্য। সে ইনারাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে সরু চোখে তাকে ভালো করে দেখল, "তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?"
ইনারা মাথা নাড়ায়, "না।"
"তাহলে তোমার মুখ এমন মলিন লাগছিল কেন? আর তোমার কন্ঠ কাঁপানো।"
"এমনিতেই। আমি বাসায় যাব। আপনার উনাদেরকে পাঠাতে হবে না। কেবল অন্যরুমে নিয়ে যান, আমি চলে যাব।"
"একা? অসম্ভব! আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।"
"প্রয়োজন নেই। আমি যেতে পারবো। তাদের হঠাৎ এভাবে বের করলে সন্দেহ করতে পারে।"
"কিন্তু.... "
"আমি বলেছি তো আমি যেতে পারবো। জেদ করছেন কেন?" খুবই রুক্ষ গলায় বলল ইনারা। তার কন্ঠে রাগান্বিত ভাব। সভ্য তার এমন আচরণ দেখে অবাক হয়। এ সময় তার সাথে এ বিষয়ে কথা না বলাটাই উচিত মনে করে। তাই সে রাজি হয়ে যায়, "আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু ড্রাইভারের সাথে যেতে হবে তোমার।"
ইনারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। 

এমন সময় দরজা খোলার শব্দ আসে। সামির কন্ঠ ভেসে উঠে, "সভ্য ভাই তুই কোথায়? জরুরী কথা আছে।" 

"এখানে..." সভ্য সম্পূর্ণ কথা বলে বাহির হবার পূর্বেই ইনারা তার শার্ট ধরে ভেতরের দিকে টেনে নেয়। চোখ দুটো বড় বড় করে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে, "পাগল হয়ে গেলেন না-কি? আমি এখানে লুকাচ্ছি আর আপনি তাকে আমন্ত্রণ দিয়ে আনছেন।"
সভ্য গেলে এমনিতেই সামি এদিকে আসতো না। আর না আসলে ইনারাকেও দেখত না। কিন্তু ইনারার এত কাছে আসার পর এ কথা তাকে বলতে মন চায়? তার-ই তো লাভ। সে ইচ্ছা করে ইনারার আরেকটু কাছে যায়। ইনারা জিজ্ঞেস করে, "করছেনটা কী?"
"আমাকে এখানে দেখে ফেললে তো সমস্যা। তাই লুকাচ্ছি।"
"ওহ আচ্ছা।" 

ইনারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সভ্য তার কাঁধের একপাশে হাত রাখে তাকিয়ে ছিলো। একদৃষ্টিতে। বাহিরের মিষ্টি ফাগুন হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে ইনারার সোনালী কেশ। বিরক্ত করছে তাকে। সে অবাধ্য কেশের এমন খেলা দেখে মন ভরছিল সভ্য। মুগ্ধতায় যেন জড়িয়ে ছিলো দৃশ্যটি। এই মুহূর্তে ইনারা গতকালের মতো সেজেগুজে নেই, খুবই সাধারণ। যেমনটা সবসময় থাকে। অথচ এই মুহূর্তে তাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। কোমল সোনালী রোদের অলংকার তার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো। এমন সাধারণ রূপে তাকে ভীষণ পবিত্র দেখাচ্ছে। যেন এই পৃথিবীর কোনো অপবিত্রতা তাকে স্পর্শ করে নি। তার খুব করে ইচ্ছে হলো তার চুলগুলো হাতে নিয়ে খেলা করতে। সে হাত বাড়ি তার আঁকাবাঁকা স্বর্ণোজ্জ্বল কেশ ছুঁতে নিলেই ইনারা তার দিকে তাকাল। চোখে চোখ মিলল। তার নীলাদ্রি দৃষ্টি তার বুকে আবারও আঘাত করল। সে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। ছুঁয়ে দেখল না আর অবাধ্য কেশের গুচ্ছকে। তার ইচ্ছাটা মনেই দাবিয়ে নিলো। কিন্তু নিয়তি যেন তার ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। এক তীব্র হাওয়া বয়ে এলো দক্ষিণা দিক থেকে। এলোমেলো হয়ে গেল ইনারার চুলগুলো। একগুচ্ছ চুল এসে ছুঁয়ে গেল সভ্যের মুখখানা। 

সভ্য চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়। নিশ্বাসের সাথে মাতোয়ারা এক ঘ্রাণ পায় সে। ইনারার রেশমি চুলের ছোঁয়ায় মাতাল হয়ে উঠে। 

অবশ্য তা বেশিক্ষণের জন্য নয়। ইনারা দ্রুত তার চুলগুলো হাতে নিয়ে একপাশে নিয়ে মুড়িয়ে বাঁধতে বাঁধতে বিরক্তির সুরে বলে, "উফফ এই চুল নিয়ে এক জ্বালা। ভালো লাগে না। এই জন্যই সারাক্ষণ বেঁধে রাখি। কচুর চুল।" 

সভ্যের রাগ উঠলো খুব। তার এত সুন্দর এক মুহূর্তটা কীভাবে নষ্ট করে দিলো মেয়েটা! আর চুল নিয়ে এত অনিহা কেন তার? এই চুলের বাহার তার হৃদয় কতবার হরণ করে তা কীভাবে বুঝাবে? মনটাই খারাপ হয়ে গেল সভ্যের। সে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। 

ইনারা সভ্যের চোখেমুখে ভাসা এমন রূক্ষতা দেখে মনে মনে বলে, "এই ব্যাঙের ছাতার আবার কী হলো? এইত্তো ভালো ছিলো। এখন মুখটা এমন হনুমানের নাতির মতো করে রাখল কেন? রাগ তো আমার হওয়া উচিত। একতো ওদিন ঐশির সাথে তার কিছু নেই বলে আমাকে বৃষ্টিতে গাড়ি থেকে বের করে দিলো, আর আজ তাকে জড়িয়ে ধরছিলো। সাহস কত ব্যাটার!" 
সে গলা পরিষ্কার করে জিজ্ঞেস করে, "আপনার হঠাৎ কি হলো?"
"কিছু না।"
"আচ্ছা একটা কথা বলেন তো, ব্যান্ডের সবার আপনার সাথেই কী এত ব্যক্তিগত কথা?"
সভ্য খানিকটা অবাক হয়ে তাকায় ইনারার দিকে, "মানে?"
"মানে এই'যে সামি এলো আপনাকে খুঁজতে। একটু আগে তো ঐশি এসে আপনাকে জড়িয়েই ধরেছিল।"
"এমনিতেই সবার কিছু জরুরী কথা থাকে। কিন্তু তুমি এত ক্ষেপে আছো কেন?"
"আমি ক্ষেপে আছি? কো-কোথায়?"
"তোমার কথায় বুঝা যাচ্ছে। ঐশি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে এতে কি তোমার রাগ হচ্ছে?"
"আজব তো আমার রাগ হবে কেন? আমি তো কেবল জিজ্ঞেস করলাম সাধারণভাবে। কেন জিজ্ঞাসা করতে পারিনা?" ইনারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল। 

বারান্দা থেকে সামি কন্ঠ শুনতে পারছিলো। সে অবাক হয়ে মেয়ের কন্ঠ শুনে। ঐশি তো বাহিরে তাহলে এখানে কে? সে এগিয়ে যায়। যেয়ে দেখে সভ্য এবং ইনারা একসাথে। তাদের দুজনকে একত্রে দেখে উৎসুক হয়ে যায় সে। সে কিছু বলতে নেবে তখনই সভ্য তার দিকে তাকায়। হাতের ইশারায় থামতে বলে চলে যেতে বলে। সে ইশারা ঠিকই ধরতে পারে। দাঁত কেলিয়ে হেসে হাতের ইশারায় 'চালিয়ে যেতে' বলে নৈশব্দ চলে যায়। 

অপরদিকে সভ্য ইনারাকে বলে, "আচ্ছা তোমার কি সত্যি গতকালের কোন কথা মনে নেই?"
"ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ছে। পরিষ্কার কিছুই না। আমি বিশেষ কিছু ভুলে যাচ্ছি না'কি?"
সভ্যের মনে পড়ে গতরাতে ইনারার তার কাছ আসা, তার গালে চুমু খাওয়াটা, বাচ্চাদের মতো তাকে চুমু দেবার আবদার করাটা, তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করাটা, এই দোলনাতেই তার কোলে বসে নিজের হৃদয়ে লুকানো হাজারো কথাগুলো মুখে আনাটা। 

সভ্য দোলনাটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, "তোমার মনে রাখার মতো কিছু ছিলো না।" আবার সে মনে মনে ভাবলো, "কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় একটি রাত ছিলো।" 

ইনারা জিজ্ঞেস করে, "সামির শব্দ পাচ্ছি না। চলে গেল না'কি?" 
জিজ্ঞেস করে সে নিজেই আবার উঁকি দেয় ঘরে, "হ্যাঁ চলে গিয়েছে। বলবেন না আপনি? আচ্ছা আপনি যান। সুযোগ পেলে আমাকে বের করার ব্যবস্থা করে দিবেন।"
"যা হুকুম করবেন মহারাণী।"
সভ্য চলে গেল। ইনারা কিছুটা অবাক হয়। লোকটা আজকাল বড্ড পরিবর্তন হয়েছে৷ আগে তো রুক্ষতা ছাড়া তার মুখে এক বচনও আসতো না। আর আজকাল যেন মুখে গুড় রেখে কথা বলে। ভাবতেই মৃদু হাসে ইনারা। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে ঐশির সভ্যকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য। সাথে সাথে মন উদাসীন হয়ে পরে। এই উদাসীনতায় সে নিজেই হতবাক। সভ্যকে নিয়ে তার উদাস হবার তো কোনো কারণ নেই। সভ্যের প্রতি তো তার কেবল খুনসুটি এবং কাজের সম্পর্ক। তাহলে তার এমন কেন অনুভব হচ্ছে। 

কক্ষে কেউ না থাকায় ইনারা বের হয়। রুমে যেয়ে খানিকক্ষণ পায়চারি করে। হঠাৎ তার চোখে একগুচ্ছ কাগজ। যা মুড়িয়ে নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। ইনারা সেখানে যায়। নিচে বসে একটি মুড়ানো কাগজ হাতে নিয়ে তা খুলে দেখে সেখানে লেখা, 

"প্রেমের উষ্ণ হাওয়ায় মাতাল তুমি আর আমি
তোমার আঁখি নীল সমুদ্র তোমাতেই আমি;
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে প্রণয়ী
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে প্রণয়ী। 

তুমিতে তুমিতে হারাই বারে বারে আমি;
তোমারেই ভালোবাসি কীভাবে বলি আমি?" 

এতটুকুই লেখা সে কাগজে। সম্ভবত কোনো গানের পঙক্তি। ইনারা জলদি করে আরও কিছু কাগজ খুলে দেখে। সবজায়গায় এই গানটির পঙক্তি লেখা। কিছু এলোমেলো শব্দ। হঠাৎ ইনারার তীব্র ইচ্ছা জাগে গানটা সভ্যের কন্ঠে শুনতে। সভ্যের হাতে থাকবে একখানা গিটার। চারপাশ থাকবে প্রকৃতির বাহার। সামনে কেবল সে বসে থাকবে। একটি শাড়ি পড়ে থাকবে সে। শাড়ি! আগে কখনো সে শাড়ি পরার কথা ভাবে নি। কখনো শাড়ি পরেও নি। তাহলে হঠাৎ কেন তার সভ্যের সামনে শাড়ি পরে যাবার ইচ্ছা জাগলো? 

উওর পাবার পূর্বেই ইনারার ডাক পড়লো। সভ্য দরজায় নক করে বলল, "ইনারা এখন বের হতে পারো।"
সে দ্রুত তার হাতের কাগজ পকেটে ভরে নিলো। আর বের হলো। লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে সে ড্রাইভারের সাথে যায় কিন্তু সম্পূর্ণ পথ পর্যন্ত গাড়ি নেয় না। মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেমে যায়। 

বাড়িতে ফিরে চুপচাপ নিজের রুমে যেতে নেয়। তার ফুপি ও আইজা বসে ছিলো সোফায়। তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই তার ফুফী তাকে তলব করে, "ইনু দাঁড়া, কথা আছে তোর সাথে। গতরাতে কোথায় ছিলি তুই? বাসায় আসতে এত দেরি হলো কেন?"
"আজ হঠাৎ কিভাবে তোমার খেয়াল এলো যে আমি বাসায় নেই। অন্যবার যখন বাসার বাহিরে থাকি তখন তো আসে না।"
"কথা ঘুরানোর চেষ্টা করিস না। আর আইজা বলল তুইও নাকি পার্টিতে ছিলি গতকাল। তুই ওখানে কীভাবে গেলি?"
"ওহ সভ্য আমাকে পাশ দিয়েছিল। ওর সাথে আমার ডান্স পার্ফোরমেন্স ছিলো।"
"তুই সভ্যকে কীভাবে চিনিস?" ফুপি এভাবে তাকিয়ে রইলো যেন তার চোখ দুটো এখনই কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। ইনারার তার চেহারা দেখে হাসি আসলেও সে নিয়ন্ত্রণ করল। 

সে হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে দাঁড়ায় বলে, "তো একারণে আজ আপনার আমার কথা পড়েছে?
তাও ভালো। ফুপি আমারও আপনার থেকে একটা প্রশ্ন করার ছিলো। গতকাল না আমার সৌমিতা আন্টির সাথে দেখা হয়েছে। সে বলল উনি কল করেছিলো। কিন্তু আপনি না'কি বলেছেন আমি উনার সাথে কথাই বলতে চাই না। অথচ আমি আন্টির সাথে কথা বলার জন্য কত ব্যাকুল ছিলাম। প্রতিদিন আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম, উনি কল করেছে কি-না? আপনি কি বলতেন? না, করে নি। আপনি এভাবে মিথ্যা বলেছেন কেন ফুপি?" 

ফুপির চোখ মুখ কালো হয়ে গেল। সে কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না। ইনারা তাকে আরও জোর করে বলল, "ফুপি আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। উওর দিন।" 

আইজা সেখানেই বসে ছিলো। তার হাতে একটা ম্যাগাজিন ছিলো। কিন্তু তার ধ্যান ম্যাগাজিনে নেই। সে গতরাতের কথাই ভেবে যাচ্ছে। গতরাতে সে পার্টি থেকে যাবার পূর্বে জোহানের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়েছিলো। জোহান তখন কথা বলছিলো সামির সাথে। সে যখন জোহানকে ডাক দিতে নিবে তখনই তার নাম শুনে। আর থেমে যায়। সে শুনে, "আইজার কোনো দিক ওর সাথে তুলনা হতে পারে না। কোথায় ইনারা, আর কোথায় আইজা। আর বিন্দুমাত্র সৌন্দর্যের অধিকারীও আইজা না।" 
এই এক কথা গতরাত থেকে তার কানে বাজছে। এটা নতুন না। ছোট থেকেই ঘরে বাহিরে সব জায়গায় তার সাথে ইনারার তুলনা হচ্ছে। কথাগুলো তাকে আঘাত করে। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেই। যতই হোক ইনারা তার ছোট বোন। কিন্তু এসব তার এখন ধৈর্যের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাচ্ছে। এইসব ভাবনার মাঝে ইনারার তার মা'য়ের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে তার ধৈর্য হার মানলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বলে উঠে, "ইনারা চুপ। এসব কোন ধরনের বেয়াদবি? তুই আম্মুর সাথে এভাবে কথা বলছিস কোন সাহসে?" 

ইনারা হতভম্ব। আজ পর্যন্ত যেকোনো পরিস্থিতি হোক না কেন আইজা কখনো তার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলে নি। আজ তার কী হলো? সে নিজের পক্ষ রেখে বলার চেষ্টা করল, "আপু তুমি জানো না ফুপি কি করে..."
"আমি জানতেও চাই না। আমি কেবল এতটুকু জানি তুই মা'য়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না। এখন উপরে যা।"
"কিন্তু.... "
"ইনু উপরে যেতে বলেছি।"
আইজার এমন ব্যবহারে খুব কষ্ট পেল ইনারা। সে একপলক ফুপির দিকে তাকিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল। রুমে যেয়ে বিরক্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আইজার কথাগুলো যেমন তাকে আঘাত করেছে তেমন তার রাগও উঠছে ফুপির উপর। 

হঠাৎ ফোন বেজে উঠে। নাম্বার দেখে সে চিনতে পারে না। রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করে, "কে?"
"আমি।"
"দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন?"
"প্রধানমন্ত্রী বলব কেন? "
"যেভাবে আমি বললেন মনে হলো কোনো দেশের প্রধান মন্ত্রী কন্ঠ শুনেই চিনে যাব।"
"আমার কন্ঠ শুনেই তো চেনার কথা ছিলো। এত জলদি ভুলে গেলে? জোহান বলছি।"
ইনারা একলাফে উঠে বসে। সে অবাক হয় হঠাৎ জোহান কেন তাকে কল দিবে?
"কোন বিশেষ কারণে কল দিয়েছেন বুঝে?"
"কেন এমনি দিতে পারি না?"
"না মানে..." ইনারা এক অস্বস্তিতে পরল। কী উওর দিবে? 

ফোনের ওপাশ থেকে জোহানের হাসির কন্ঠ শোনা যায়, "এক বিশেষ কাজের কল দিয়েছিলাম। তোমার থেকে একটা ফেভার লাগতো।"
"আমার থেকে? কী?"
"আসলে গতকাল বাসায় একটু সমস্যা হয়েছিলো। এতে মায়ের মন অনেক খারাপ। তুমি কী একটু বাসায় আসতে পারবে? তোমাকে দেখলেই মা'য়ের মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে।"
থতমত খেয়ে গেল ইনারা। এমনি কিছু হলে ইনারা মানা করতে এক মুহূর্তও ভাবতো না। কিন্তু সৌমিতা আন্টির ব্যাপার। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। 
.
.
.
চলবে...................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন