তন্ময়ের বন্ধুবান্ধব ধানমন্ডির আশেপাশেই আছে। আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। সবাই কাজ থেকে মুক্ত। সেই সুবাদে সকলে মিলে এক রেস্তোরাঁয় আড্ডা জমিয়েছে। আড্ডার মূল বিষয় হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ কীভাবে যাবে, কই যাবে, কী খাবে, কীসব করবে, তার একটি তালিকা তৈরি করছে। তন্ময়কে এখানেই আসতে বললো মাহিন। ছেলেটার মন তল্লাশি করবে আজ সে। মুখোমুখি জিজ্ঞেস করবে নারায়ণগঞ্জ যেতে চায় নাকি! কোনোমতে যদি চোখমুখ পড়ে বুঝতে পারে যে তন্ময় যেতে চায়! তাহলে সে আসমান জমিন এক করে ফেলবে তবুও তন্ময়ের প্রেয়সী সহ তন্ময়কে নিয়েই ছাড়বে এই ট্রিপে। রিহান নাকমুখ কুঁচকে মাহিনের ভাবনায় বিভোর মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করছে। দু আঙুলের সাহায্যে চুটকি বাজালো চোখের সামনে। ভরাট কন্ঠে ডাকল, 'এইযে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছোটো মাহিন মজুমদার দাদু! তন্ময় চাচা কী আসছে?'
মাহিন হতাশ গলায় বলল, 'বিশিষ্ট ডিজাইনার সর্বোচ্চ ছোট্ট রিহান শিকদার কাকাকে জানাচ্ছি, তন্ময় প্রায় চলে এসেছে। সঙ্গে তার প্রানপ্রিয় প্রেয়সী ও আছে। তাই মুখে দয়া করিয়া লাগাম মারিবেন।'
'লাগাম ছাড়া কখন হলাম,আশ্চর্য! আমার মতো ভদ্র মুখের অধিকারী দ্বিতীয় কেউ নেই। এইযে তুই 'স্টেমিনা একদম নেই' রোগে ভুগিস কই আমিতো বলতে যাইনা!'
সৈয়দ মাহিনের পাশে। সে অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা দোলাল। মাহিন তাকে ইশারা করে বলল, 'ও কী আমার বিছানায় এসেছিল? মানে ড্রাংক অবস্থায় মেয়েমানুষ মনে করে ওর সাথেই কিছু করেছিলাম নাকি! নাহলে জানল কীভাবে আমার স্টেমিনা নেই! ভাবার বিষয়।'
শুহানি উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে সে রিহানের বাহুতে পড়ে গেল৷ চোখের কোণ ভিজে উঠেছে। থেমে নেই বাকিরাও। রিহান বিরক্ত হলো। নাকমুখ কুঁচকে ফেলল, 'ইয়াক! শালা তুই ডাক্তার দেখা।'
ঠিকানা অনুযায়ী রেস্তোরাঁয় মাত্রই পৌঁছেছে গাড়ি।রসমালাই এবং মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার গুলো কিনে তবেই এসেছে। সেগুলো গাড়িতে রেখেই বেরোলো তন্ময়। অরুর ওড়না ফেঁসেছে সিটবেল্টে। খেয়াল করেনি। বেরোতে গিয়ে টান খেল। ফ্যাচ ফ্যাচ শব্দে ছিঁড়ে গেল অনেকখানি। বোকার মতো ছেঁড়া ওড়নায় নজর বোলালো। ইশ, কতখানি ছিঁড়েছে। ভাগ্যিস কোণঠাসা হয়ে ছিঁড়েছে। নাহলে তো বোঝা যেতো। ওড়না ধরে বেরোতে নিয়ে উঁচু জুতোর কারণে বা পা বেঁকিয়ে ফেললো। পড়তে নিয়েও গাড়ির দরজা ধরে নিজেকে সামলাল। পায়ের কোণা ছুলেছে কিছুটাও। তন্ময় সামনেই দাঁড়িয়ে। সে সাবলীল ভঙ্গিতে অগোছালো অরুকে দেখছে। এদিকে অরু কিছুটা বিরক্ত হলো বটে। নাকমুখ কুঁচকে বেরোলো। ওড়না পরিপাটি করলো। তন্ময়ের দু ভুরুর মাঝে ভাঁজ পড়েছে। সে প্রশ্ন করলো, 'তোর থেকে তোর জুতো বড়ো। দেখি, জুতো খোল। এসব জুতা আর পড়বি না। আমি যেনো না দেখি।'
আতঙ্কে হাসফাস করে উঠলো অরু। মাথা দু'পাশে
দুলিয়ে তন্ময়ের অগোচরে হেঁটে সামনে অগ্রসর হলো। যার জন্য চুরি করে সে বলে চোর। এইযে এতো উঁচু জুতো ত তন্ময়ের জন্য পরে। মানানসই একটা ব্যাপার আছে না। লম্বা তন্ময়ের সামনে উঁচু জুতো না পরলে, একটুখানি দেখায় অরুকে। বলা যায়, দেখাই যায়না। এরজন্যই তো পরে সে।
অরুর বিভ্রান্ত চিন্তাভাবনা তন্ময় বুঝবে কীভাবে! সে অরুর কাঁধ চেপে ধরেছে। দুজন একসাথে এগোচ্ছে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই সম্মুখীন হলো সকলের। হৈচৈ পড়ে গেল মুহুর্তেই। এটাসেটা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে তৎক্ষণাৎ। রিহান কথায় হেরে গিয়েছিল খানিক তবে সে পুনরায় শুরু হলো।এবার আর মাহিনের পিছু লাগেনি। তন্ময় আর সৈয়দের পিছু লেগেছে। হাস্যজ্বল পরিস্থিতি। অরুকে শুহানি এবং আশা'র মধ্যে বসিয়েছে তন্ময়। তারপর সে বসেছে মাহিনের পাশে। সাথে ইব্রাহিম আছে। রিহান ও পাশাপাশি। তাদের মধ্যে আলাদা আলোচনা। মাহিন কফিতে চুমুক বসিয়ে খুব স্বাভাবিক স্বরে শুধালো, 'কি সমস্যা? যেতে কেন চাচ্ছিস না!'
তন্ময় নিশ্চুপ রইলো। দৃষ্টি কিছুটা দূরে বসা অরুর পানে। শুহানি কিছু একটা বলছে অরুকে। তাতে লজ্জায় চোখমুখ নুইয়ে রেখেছে অরু। তন্ময় বেশ কিছুক্ষন দেখল। চোখ সেখানে রেখেই বলল, 'আজকাল আমি আর নিজের উপর কনফিডেন্ট নই।'
'বিয়েটা তো হয়েছে। এখন কনফিডেন্ট না থাকলেও চলবে!'
'তন্ময় চাচার যন্ত্রপাতি তাহলে ঠিকঠাক আছে।'
তন্ময় হাসলো। স্মিথ হাসি তার, 'বাবা মানবে না। পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হলে, তারপর নাহয়... '
'এতকিছু বুঝি না। আমার বন্ধু যেতে চায় এটাই ইম্পর্ট্যান্ট। আর তুই যাবি সাথে তোর লেঞ্জাও।'
রিহান মুখ ভোঁতা করল, 'তোর বাপের এতো মাথা ব্যথা কেলা?'
'আমার বাবার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে পরিবার। খুব যত্নে আগলে রেখেছেন। কোনো কারণে পরিবার ভেঙে যাবে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। তাই এতসব চিন্তা তার। আমাদের বিয়েটা ভবিষ্যতে হয়তো সমস্যা দাঁড় করাতে পারে, এটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অরু যেহেতু ছোটো তাই বাবার চিন্তা বেশি। তার মনে হয় আমাদের মতামত মিলবে না। বা বিয়েটা টিকবে না৷ আর যদি তেমন হয় পরিবার ভেঙে যাবে।'
মাহিন বিরক্ত হলো, 'তোর বাপের এসব চিন্তাভাবনা নদীতে ডুবে আছে। অযথা চিন্তা যত্তসব। সে কী জানে না তুই কে? তুই তো ভেজা বিড়াল। মাছ সামনে রেখে ছুঁয়েও দেখোস না, লাগলে কাতরে মরে পড়ে থাকবি। কতটা ভালোবাসোছ তা তো আমরা জানি। নিজের চোখে দেখছি। এইসব সমস্যা কোনোকালেই হবে না, আমার কথা মিলিয়ে রাখ। আর অরু এখন যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক। এমনতো নয় ও তোকে পছন্দ করেনা৷ খুব পছন্দ করে। এইযে আমি খেয়াল করলাম মিনিটে শতবার তাকিয়েছে। তোকেই তো দেখছে ঘুরেফিরে।'
গম্ভীরমুখের তন্ময় শব্দ করে হাসলো। নিরব হাসি। স্বচ্ছ প্রানবন্ত। মাহিন বলল, 'দোস্ত আমার কাছে ছুঁতো আছে। তুই শুধু ওয়েট কর। আমরা এবার সবাই মিলেই যাবো।'
_________
রবিবার সন্ধ্যা সাতটা। মোস্তফা সাহেব লিভিং রুমে বসে আছেন। নিউজ দেখছেন সঙ্গে চা খাচ্ছেন। সাথে ওহী সাহেব, আনোয়ার সাহেবও রয়েছেন। এমতাবস্থায় বিনা আমন্ত্রণে হাজির তন্ময়ের বন্ধুবান্ধব। একসাথে ছয়জন। ছেলেমেয়ে মিলিয়ে এসেছে। হাতে নানান সরঞ্জাম। হাত ভর্তি খাবার এনেছে। সেগুলো উঠিয়ে দিয়েছে সামনে দাঁড়ানো জবেদা বেগমের হাতে। সেসময় তন্ময় বাসায় নেই। অফিসে সে। হন্তদন্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন মোস্তফা সাহেব। ছেলের বন্ধুদের সে ভালোভাবেই চেনে। প্রায়শই কাজে অকাজে দেখা হয়েছে সকলের সাথেই। হঠাৎ তাদের আগমনে ভড়কে গেলেন কিছুটা। বসতে বললেন। মাহিন হাস্যজ্বল গলায় সালাম জানিয়েছে। চামড়া পাতলা রিহান ততক্ষণে ওহী এবং আনোয়ার সাহেবের মধ্যে চেপে বসেছে। গপ্পোবাজ সে এটাসেটা বলে আলোচনা শুরু করেছে। শান্ত বাড়িটি অশান্ত হয়ে উঠল মুহুর্তেই। চেঁচামেচির শব্দে বেরিয়ে এসেছে দীপ্ত, রুবি, শাবিহা এবং অরু। জবেদা বেগম অরু এবং রুবিকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে৷ ঝটপট খানাপিনা তৈরি করতে হবে। এভাবে শুকনো খাবার অলরেডি ট্রে করে নিয়ে এসেছেন।
সবাই আলোচনা করে এসেছে। আজ মুলত ট্রিপের কথা মাহিন বলবে। লজিক কথাবার্তায় সে এক্সপার্ট। বাকিগুলো ধাপ্পাবাজ একেকটা। তাই সময় পেয়েই মাহিন বলল, 'চাচা পারমিশন নিতে এসেছি আপনার।'
মোস্তফা সাহেব হাসলেন, 'কীসের জন্য? তোমাদের আবার পারমিশন লাগবে কীসে!'
'নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছি। বন্ধুবান্ধব সকলে মিলে।'
'তা তো বেশ। সাহায্য লাগলে বলো নির্দ্ধিধায়।'
'চাচা সবকিছু স্যাট। আগামী বৃহস্পতিবার রাতে বেরোবো। লঞ্চ করে যাবো। লঞ্চ রিহানের বাবা দিচ্ছে। আর নারায়ণগঞ্জ আমার নানাবাড়ি। তো খানাপিনা, থাকা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তিনদিনের ট্রিপ। আমরা চাচ্ছিলাম আপনারা সকলে যদি সামিল হোন, খুশি হব।'
মোস্তফা সাহেব উৎসুকভাবে হাসলেন, 'বাচ্চাদের ট্রিপ। সেখানে আমরা মুরব্বি যেয়ে কী করবো! না বাবা! সম্ভব নয়। এভাবেও কাজের চাপ আছে।'
'তাহলে বাচ্চাদের পাঠিয়ে দিন। মিলেমিশে যাই। আপনজন থাকলে ট্রিপ মজার হবে।'
'পাঠানোর কী আছে? তন্ময় যেতে চাইলে যাবে!'
'তন্ময় তো যাবেই। সাথে শাবিহা, রুবি আর অরু যদি যায়... '
মোস্তফা সাহেব থমকে গেলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। কিছু বলবেন পূর্বেই মাহিন পুনরায় বলল, 'আর শাবিহার জন্য এই ট্রিপ খুব ভালো হবে। মনমেজাজ সতেজ হবে। ডিপ্রেশন কেটে যাবে অনেকাংশে। এসময় ঘুরাফেরা খুব কাজে দেয়।'
আনোয়ার সাহেব সহমত হলেন। ওহী সাহেব ও ভাবুক ভাবে মোস্তফা সাহেবের দিক তাকাল। মোস্তফা সাহেবেরও মাহিনের কথাগুলো ভালো লাগলো। শাবিহার জন্য ঘুরাফেরা এখন খুব দরকার। মাইন্ড ফ্রেশ হবে। হয়তো অয়নকে ভুলেও যাবে। মায়া কাটবে। কিন্তু অরু....মোস্তফা সাহেব দোটানায় পড়লেন। ওহী সাহেব বলল, 'রুবির সামনে পরিক্ষা। ও তো যেতে পারবেনা। তবে তন্ময় তো যাচ্ছেই। শাবিহাকে দেখে রাখতে সঙ্গে অরুও যাক। তিনজন মিলে ঘুরেফিরে আসবে।'
খুব সাবধানে সিচুয়েশন হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল মাহিন। রিহান ও এদিকে সুরক্ষার বানি শোনাতে ব্যস্ত। মেয়েগুলো দিব্বি ভাব জমিয়েছে জবেদা বেগম, মুফতি বেগম এবং সুমিতা বেগমের সাথে। শাবিহাও ফাঁকে দু'এক কথা বলছে।
অবশেষে মোস্তফা সাহেব রাজি হলেন। বললেন, 'যেতে চাইলে যাক। ঘুরে আসুক।'
ব্যস। অরু রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে লাফিয়ে উঠলো। জড়িয়ে ধরলো শাবিহাকে। জাপ্টে ধরে নিঃশব্দে চেঁচাচ্ছে। লাফালাফি থামাতে শাবিহা দু'হাতে অরুকে ধরে রেখেছে। মেয়েটা ব্যথা না পেয়ে বসে৷
________
অরুর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। ধীরে ধীরে স্বর বেড়ে চলেছে। একসময় উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো। তার কান্নার শব্দে উতলা হয়ে সবাই বেরিয়ে এসেছেন। আনোয়ার সাহেব ছুটেছেন জুতো ছাড়া। অরু তখন ফ্লোরে বসে সমানে কাঁদছে। চোখ ফুলে কলাগাছ। তার সামনে তন্ময় দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে। হাতে কে'চি। পায়ের সামনে নানাজাতের উঁচু জুতোর সমাহার। সবগুলো জুতো আপাতত ছেঁড়া। এগুলো কেঁটে ফেলেছে তন্ময়। ফ্যাচ ফ্যাচ শব্দে সবগুলো কেঁটেছে। সেই জুতো জাপ্টে ধরেই কাঁদছে অরু। মোস্তফা সাহেব প্রশ্ন করলেন, 'কি হয়েছে?'
আনোয়ার সাহেব ও চিন্তিত সুরে শুধালেন, 'হয়েছে কী?'
অরু রেগেমেগে উঠে দাঁড়ালো। অস্থির গলায় বিচার দিল, 'আমার সব জুতো কেঁটে ফেলেছে। আমার জুতা...'
অরুর এমন করুণ কান্নায় মোস্তফা সাহেব রেগে গেলেন। চোখ রাঙিয়ে তাকালেন ছেলের পানে। এদিকে আনোয়ার সাহেব হাসলেন। মেয়েকে নিজের সাথে রেখে বললেন, 'আরও সুন্দর জুতো কিনে দিব মা। থাক কাঁদে না।'
বাবার এমন কথায় অরুর কান্না দ্বিগুণ হলো। আশ্চর্য! কিনে দিবে মানে! এই লোককে কিছু বলছে না কেন! অরুর মনের আশা পূরন করলো মোস্তফা সাহেব। ধমকে উঠলেন ছেলেকে, 'কেন করলে এমন!'
তন্ময় তখনো গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে অরুর দিক তাকিয়ে। এদিকে রুবি সহমত পোষণ করল, 'চাচ্চু তন্ময় ভাইয়া ঠিক করেছে। এই মেয়ে এক আনা, জুতো পরে দু আনার। পায়ে ফোসকা পড়ে আছে কতশত। দেখ, ওর পায়ের অবস্থা! আমি কতবার করে বললাম এমন প্যান্সিল হিল পরিস না। এগুলো অনেক উঁচু। না কথাই শোনে না।'
সুমিতা বেগম বিরক্ত ভঙ্গিতে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। যাবার আগে রাগান্বিত কন্ঠে বলে গেলেন, 'একদম ঠিক হয়েছে।মেয়েটা কোনো কথাই শোনে না।'
জবেদা বেগমের ছেলের কাজ পছন্দ হলো না। তিনি অসন্তুষ্ট স্বরে বললেন, 'এরজন্য এমন করবে। মেয়েটা কতো কষ্ট পেলো। বুঝিয়ে বললেও ত হতো।'
মোস্তফা সাহেবও বিরক্ত, 'তুমি কীসের বুঝদার হলে বলো ত! ছেলেমানুষী করে বিদায় তো এমন। বুঝলে কী আর এগুলো পড়বে!'
তন্ময় জবাব দিলো না। কেঁ'চি ফেলে চলে গেল। অরু বিছানার এক কোণে বসে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তার কতগুলো টাকার জুতো। সবগুলো এভাবে নষ্ট করে দিল। ইশ, দানব'টা মলম পট্টি করে যে এমন করবে কে জানত! এইযে কিছুক্ষণ আগেই নিজ হাতে পায়ের গোড়ালি'তে মলম লাগিয়ে পট্টি করে দিল। অরু তখন ভালোবাসার সমুদ্রে ভাসছিল। সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দিতে মানুষটার বুক কাঁপলো না। একটুও না।
জুতার বিষয় নিয়ে অরুর মন খারাপ রয়েই গেল। রাতের খাবার খেতে বসেও মনমরা হয়ে থাকল। মোস্তফা সাহেব বোঝালেন। জুতা নতুন অনেকগুলো কিনে দিবেন বললেন। তবুও কাজ হলো না। একসময় আলোচনা উঠলো ট্রিপের বিষয়টি নিয়ে। তন্ময় মাথা তুলে তাকালো। এই বিষয়ে সে একদম অজানা। তাকে না জানিয়েই এসেছে বান্দরগুলো তাহলে। তার বাবাকে মানিয়েও ফেলেছে। কীসব বলেছে কে জানে!
অরুর অভিমান রয়েই গেল। পরদিনও সে চুপচাপ বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করছে। তন্ময়ের কাছে ভুলবসতও ভিড়ছে না। তন্ময় কতবার ডেকেছে হিসেব নেই। শুনেও না শোনার ভাণ করে থাকলো। অরু এই লোকের সাথে কথাই বলবে না।
.
.
.
চলবে.............................