আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অলকানন্দা - পর্ব ৩৭ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প

!!১০৩!!

মাহা অনেকটা সুস্থ এখন। তবে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। আজ একসপ্তাহ যাবত হাসপাতালে রয়েছে তারা। মাহা দু-চোখ বুজতে পারেনা। ঘুম আসেনা তার। মনে হয় কে যেন ডাকছে। দূর হতে হাত বাড়িয়ে, "মা, মা" করে চিৎকার করছে। তখন মাহাও চিৎকার করে উঠে। হাত-পা কাঁপে তার। মাথার ভেতরটা ভোঁ ভোঁ করে। নার্ভসগুলো দপদপ করে। এই যে এখন। মাহা ঘুমিয়ে ছিলো কিছুক্ষণ আগে। রাতে নার্স নাজমা ঘুমের ইনজেকশন দেওয়াতে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে মাহা। মাঝরাতের দিকে। হঠাৎ নিজেকে একটা বিস্তৃত উদ্যানে আবিষ্কার করে মাহা। বুকের উপর তুলার পুটলির মতো আদুরে এক মানবশিশু। মায়ের স্তন পান করছে নির্বিঘ্নে। কি আশ্চর্য! মাহা সেই মায়ের ভূমিকায় রয়েছে। হঠাৎ ঝড় শুরু হলো। দূর হতে দানবাকৃতির বিশাল এক কালো হাত বাচ্চাটাকে মাহার বুক থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মাহা চিৎকার করছে। ভিষণ চিৎকার করছে। সব... সব অন্ধকার। নিস্তেজ হয়ে যায় মাহা। একটা বদ্ধ ঘর। চারিদিকে সাদা। ডানে, বামে, উপরে, নিচে। কেবল সাদা। দেয়ালগুলো আস্তে আস্তে ছোট হচ্ছে। চারদিক থেকে এগিয়ে আসছে। চেপে ধরার চেষ্টা করে মাহাকে। মাহা আবারও চিৎকার করে উঠে। হাতে কি যেন একটা বাঁধা। শিরার মাঝে। একটানে ছিঁড়ে ফেলে তা। গলগল করে লাল তরল বের হয়। তখনই কেউ একজন ছুটে আসে। উদভ্রান্ত মানব। ফিট বডির মানুষটা এই কয়েকদিনে যেন মমির মতো শুকিয়ে গিয়েছে। মুখভর্তি দাঁড়ি। দুটো চোখ লাল রঙা। মাহার হাতটা জলদি করে আঁকড়ে ধরে পরিষ্কার করে দেয় মানুষটা। মাহার ছটফটানি কমে আসে। নির্নিমেষ তাকিয়ে রয় মানুষটার দিকে। এত ধৈর্য্য কেন এই মানবের? র'ক্ত মুছিয়ে সেই স্থানে পরপর কয়েকটা ভালোবাসার পরশ দেয় সার্থক। নিরব থেকে হাতটা টেনে ধরে বুকের বাঁ পাশে। মাহা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। 
"কিছু অনুভব করো, মাহা?"

মাহা নিশ্চুপ। সার্থক মলিন হাসে। মাহার আদুরে গালটা অপর হাতে টেনে দিয়ে বলে,
"বুঝোনা কিছু? তুমি এতো অবুঝ কেন?"

মাহা নির্লিপ্ত তাকিয়ে রয়। সার্থক মাহার হাতটা আলতো করে বুকের বাঁ পাশটায় চেপে ধরেই আছে। মাহা অনুভব করছে সার্থকের হৃদপিণ্ডের ধুকপুক দ্রুত হচ্ছে। ভিষণ দ্রুত। মাহা আঁতকে উঠে। অস্বাভাবিক হৃদপিণ্ডের গতি। মুখ খুলে সে।
"আপনার.. আপনার কি হয়েছে সার্থক। এতোটা অস্বাভাবিক.. 
"শসস্"
সার্থক মাহার ঠোঁটের উপর আলতো করে আঙুল রাখে। চুপ হয়ে যায় মাহা। তাকিয়েই রয় কেবল।
"আমার এই হৃদপিণ্ডটা ভিষণ বেহায়া মাহা। একেবারেই অবাধ্য। এই বেহায়া খন্ডটাকে বাঁচাতে হলেও আমার তোমাকে প্রয়োজন। আমি ভিষণ একা মাহা। তুমি জানো বিগত দিনগুলোতে আমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে? আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না, মাহা। আমি খাবার খেতে পারছিলাম না। আমার পৃথিবী থমকে গেছে। আমি ছিটকে পড়েছি আমার পথ থেকে। কেন এলে মাহা? কেন আমার জীবনে এলে? আমার এই এলোমেলো জীবনে কেন তোমার আগমন ঘটলো মাহা? আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। এই সাদা বেডের উপর নির্লিপ্ত আবেগহীন মাহাকে তো আমি চিনিনা। তুমি যতবার যন্ত্রণায় ছটফট করেছো ততবার মনে হয়েছে আমার বুকে কেউ ব্লেড দিয়ে এলোমেলো দাগ কাটছে। আমার কষ্ট হয় মাহা। ভিষণ কষ্ট হয়। আমি কি করবো? আমার তো কেউ নেই। আমি না পারছি সহ্য করতে আর না পারছি দেখতে। তুমি তো সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। একবার তাকে আমার হয়ে জিজ্ঞেস করবে কেন এলোমেলো আমার জীবন? কেন আর পাঁচটা মানুষের মতো আমি বাঁচতে পারিনা?"

নিজের সমস্ত দুঃখ যেন মুহুর্তে ভুলে যায় মাহা। মানুষটা এত কষ্টে আছে! এতোটা কষ্ট! মুহূর্তের জন্য তার মস্তিষ্ক থেকে বিলীন হয়ে যায় নিজের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সার্থক কে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে মাহা। সার্থকের বুকে লাগছে সে কান্না। কিন্তু মাহাকে ইচ্ছে করেই মনের দুঃখগুলো এভাবে বলেছে সার্থক। মাহা বিগত কয়েকদিন যাবত নির্লিপ্ত হয়েছিলো। না কান্না, না হাসি। সম্পূর্ণ আবেগহীন এক মাংসপিণ্ড। ডক্টর ওয়াসিফ সার্থক কে ডেকে নিয়ে বলেছেন মাহার মানসিক কন্ডিশন খুবই খারাপ। ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো প্রয়োজন। মাহাকে কয়েকদিন যাবত হাসপাতালের ভিতরেই অবজারভেশনে রেখেছে সার্থকের এক বন্ধু। আফরান। সে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। অবজারভেশন শেষে বলেছে মাহার ভিতর থেকে বিগত কয়েকমাসের স্মৃতিগুলোকে ভুলিয়ে দিতে হবে। মাহার ভিতরের ইমোশন কে পুনরায় জাগ্রত করতে হবে। নয়তো মানসিক ভারসাম্য হারাবে মাহা। 

!!১০৪!!

সার্থক চায় না। এমন কিছু হোক। তার যে মাহাকে ভিষণ প্রয়োজন। তাই তো আজ মাহাকে ইচ্ছে করেই কাঁদালো সার্থক। সে তো জানে তার মাহা তার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। মাহার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় সার্থক। আজ তারা বাড়ি যাবে। 
"কাঁদছো কেন তুমি?"
"আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে তাই।"
"তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট লাগে জানোনা।"
"আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিচ্ছি, সার্থক। আমি..আমি একটা অপরাধী।"

মাহাকে টেনে নিজের মুখোমুখি করে সার্থক। কেঁদে কেটে হলদে ফর্সা মুখটা লালচে করে ফেলেছে একেবারে। তবে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। সার্থক খানিক হাসে। অভিমান হয় মাহার। লোকটা কত বজ্জাত! মাহা কাঁদছে আর লোকটা হাসছে!
"হাসছেন কেন আপনি?"
"তুমি নিজেকে কেন অপরাধী ভাবছো মাহা?"
"কারণ আমি আপনার যত্ন নিতে পারিনি। আপনি কষ্ট পেয়েছেন।"
"বোকা মেয়ে।"

মাহা আবার আঁকড়ে ধরে সার্থক কে। মুখ গুঁজে দেয় বুকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সার্থক। আস্তে আস্তে মাহাকে এভাবেই সুস্থ করতে হবে। দায়িত্ব সম্পূর্ণটাই এখন তার। আনমনা হয়ে উঠে সার্থক।
"শুনছেন?"
"হুম?"
"আপনার বোন আমার সাথে কেন এমনটা করলো সার্থক? আমি কি দোষ করেছি সার্থক? আমাকে নিভা আপু কেন পানিতে ফেলে দিলেন?"

আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে সার্থক। মাহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
"নিভা মানসিক ভাবে অসুস্থ। নিজের বাচ্চা হবেনা কোনোদিন। তাই তোমার বাচ্চা হবে বিষয়টা সহ্য করতে পারছিলোনা ও। তাই..

মাহা সার্থকের বুকেই মাথা রেখে বসে থাকে। চেনা মানুষগুলোও কত অচেনা। কেবল হিংসার বশবর্তী হয়েই নিভা এই কাজ করেছে? নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো গল্প আছে? সার্থক তো মাহাকে মিথ্যে বলবেনা। মাহার বিমূঢ় হয়ে রয়। নিভাকে বাড়ি গিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন করবে মাহা। কেন তার সাথে এত অন্যায় করা হলো! 

_______________

রেজওয়ান গাড়ি চালাচ্ছিলো। হঠাৎ রাস্তার সামনে জটলা দেখে গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো সে। মনের দৃশ্য পটে ভেসে উঠলো কয়েকটা পুরাতন স্মৃতি। বেকুব মেয়েটা তো প্রতিবারই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। দুনিয়ার সকল চোর আর ছিনতাইকারী তো কেবল ঐ মেয়েটার পিছনেই পড়ে। ব্যাপারটা দুঃখের হলেও মজার মনে হয় রেজওয়ানের। এই মেয়েকেই খালি চোখে দেখে সবাই! ভাবতে ভাবতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রেজওয়ান। পুলিশ দেখে মানুষজন সরে দাঁড়ায়। রেজওয়ান যা ভেবেছিলো তাই। সেই শ্যামবতীই রাস্তায় বসে। কে যেন ভিড় থেকে বলে উঠে, "স্যার, মাইয়াটার মোবাইল লইয়া ভাগছে এক পোলায়।" অকারণেই হা হা করে হেসে উঠে রেজওয়ান। এশা ভয়ানক চোখে তাকায় রেজওয়ানের পানে। মানুষজন অবাক। পুলিশ অফিসার হাসছে কেন! এশা রাগে নিজের পার্সটা রেজওয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারে। তা ধরে ফেলে রেজওয়ান। ভেঙচি দিয়ে অপরদিকে হাঁটা শুরু করে এশা। রেজওয়ানও ছুটে তার পিছুপিছু। 
.
.
.
চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।