প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৪৬ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


তন্ময় স্বভাবসুলভ গম্ভীর তবে ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ। বলাবাহুল্য, এধরণের মানুষ খু'ন করেও শান্তশিষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারদর্শী। তন্ময়ের স্বভাব অনেকটা একই। সে সচরাচর অশান্ত অথবা রেগে উঠে না। তার রাগান্বিত চেহারা দেখা দুঃসাধ্যের বাইরে। কিন্তু অরুর কারণে বেশ কয়েকবার তাকে রেগেমেগে অস্থির হতে হয়েছে। এর অবশ্যই যুক্তিযুক্ত করণ রয়েছে। তখন তন্ময় সতেরো বছরের যুবক। কিছুটা স্বাস্থ্যসম্মত এবং তরতাজায় ভরপুর। চেহারায় তেজ কন্ঠে গম্ভীরতা আনার প্রচেষ্টা! অরুর বয়স সবে সাত। হাঁটু সমান ফ্রোক পরে পায়ে নুপুর দিয়ে সম্পুর্ন বাড়ি দিব্বি নেচে-কুঁদে ঘুরেফিরে। এদিকসেদিক সবখানে তাকালেই শুধু সে। অরু যেন শাহজাহান বাড়ির একমাত্র সন্তান। তন্ময় স্কুল থেকে ফিরেছে মাত্রই। নিঃশব্দে কাঁধের ব্যাগ হাতে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চেঁচিয়ে উঠল। গলা ফাটানো চিৎকার। অস্থিরতা কন্ঠে স্পষ্ট। কম্পিত হাত ফসকে ব্যাগ কখন যেন পড়ে গেল ফ্লোরে। পা জোড়াও থমকে গিয়েছে। সম্পুর্ন সেই যেমন পাথরে রুপান্তরিত হয়েছে। তার চোখের সামনে ফ্লোরে অরু র'ক্তা'ক্ত অবস্থায় পড়ে। সাদা ফ্রোক লাল র'ক্তে মেখে। সম্পুর্ন শরীর র'ক্তে রাঙিয়ে। ফ্লোরে লম্বা লাল রক্তের লাইন এগোচ্ছে। থেমেছে তন্ময়ের থমকে থাকা পায়ের নিচে। এটা মোটেই কোনো সাধারণ দৃশ্য নয় মেনে নেবার মতো। অপরদিকে তন্ময়ের যুবক গম্ভীর স্বরের চেঁচানো শুনে, র'ক্তা'ক্ত অরু হুট করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। টানটান দাঁড়ানোর ভঙ্গি। চোখজোড়া বড়বড় বোয়াল মাছের ন্যায় হয়ে গেল মুহুর্তে। হাত থেকে পড়ে গেল লাল আলতার ডিব্বা। ভীতিকর অবস্থা তার ছোট্ট চেহারার। মুলত সে 'যেমন ইচ্ছে তেমন সাজো' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এক্টিং করছিল। এরজন্য সুমিতা বেগম ধমকে দিয়েছেন কয়েকবার। কিন্তু কে শুনে কার কথা! কোনো কথাই কানে নেয়নি। সে নিজের মতো পড়ে ছিলো ফ্লোরে। এসময় তন্ময় আসবে জানলে অরু কক্ষনো এমনটা করতো না। সেমুহুর্তে জবেদা বেগম ছুটে এসেছেন হন্তদন্ত ভঙ্গিতে। দেখলেন ছেলের এমন করুণ অবস্থা। আঁতকে উঠলেন। তন্ময় ঘেমেনেয়ে একাকার। কপালে বিন্দুবিন্দু ঘামের চিহ্ন। লম্বা নাক ঘামে চকচক করছে। পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে সে। চোখের পলক অবদি পড়ছে না। জবেদা বেগম ছেলের দিক ছুটলেন,'আব্বা অরু প্রেকটিস করতেছে। তুমি ভয় পাইছ!'
তন্ময় তখনো ধ্যান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে যেন। চোখ ঘুরিয়ে তার মায়ের দিক তাকাল। তারপর অরুর দিক। ধীরে ধীরে চোখের সাদা অংশটুকু লাল শিরায় ছেয়ে গেল। অত্যন্ত রাগে রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে। অরু আলগোছে পেছন দিকে পা ফেলে পিছিয়ে চলেছে। একসময় দৌড় লাগালো। আশেপাশে নজর দেবার সময় নেই। তার নেয়া একেকটা পায়ের ছাঁপ সাদা ফ্লোরে স্পষ্ট। তন্ময় সেই পায়ের ছাঁপ ফলো করে তেড়েমেরে এগোচ্ছে। জবেদা বেগম থামাতে চাইলেন কিন্তু সুমিতা বেগম দিলেন না। মেয়েটা এক নাম্বার বাদর। বাপ'চাচা কেউই কিছু বলেনা বলে, মাথায় চড়ে বসেছে। শিক্ষা পাক একটা। অন্যদিকে অরু লুকিয়েছে গুদামঘরে। অন্ধকার রুমে গুটিশুটি মেরে বসে। তন্ময় দরজা লাথি মেরে খুলে অরুকে ভাবার সময় দেয়নি। নরম তুলতুলে গালে শক্ত দুটো চড় মেরে বসেছে। টেনে ওয়াশরুম পাঠিয়েছে। সেই কী কান্না অরুর! সারারাত দিন কেঁদে কাটিয়েছে। তন্ময়ও স্বেচ্ছায় মন ভোলাতে যায়নি। বাধ্য হয়ে তিনদিন পর অবাধ্য অরুকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। পছন্দের জিনিস কিনে দিয়েছে। তবেই শান্ত হয়েছে মেয়েটা।  

সেই অবাধ্য মেয়ে অরু এখন বড়ো হয়েছে। শুধু নামে তার বড়ো হওয়া। পরিবার কিংবা ভালোবাসার মানুষের সামনে সে, সেই ছোট্ট অরু রয়ে গেল। রাতে ভালোভাবে খেলো না। সকালেও খেতে আসেনি। জবেদা বেগম ডেকে গেলেন দুবার। অরু দরজা খোলেনি। সুমিতা বেগম চেঁচিয়েছেন, কাজ হলোনা। ডাইনিংয়ে কমবেশি সবাই চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মাঝে তন্ময় এলো৷ অফিস যাবে। হাতে ব্যাগ। পরিপাটি সে টেবিলে নজর বোলালো। অরু নেই! শান্ত চেহারার ভুরু দু'য়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ পড়লো মুহুর্তে। ব্যাগ চেয়ারে রেখে জবেদা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, 'অরু কই?'

জবেদা বেগম হতাশ গলায় বললেন, 'শুধু শুধু এমন করলি। মেয়েটার পেটে কিছুই পড়েনি কাল রাত থেকে।'

তন্ময়ের গম্ভীর স্বর এবার আরও গম্ভীরে পরিনত হলো, 'ওকে আমি নারায়ণগঞ্জ নিব না। এমন অবাধ্য মেয়ে সাথে নেবার প্রশ্নই আসেনা।'

তন্ময়ের বলতে দেরি, পরপর দরজা খোলার শব্দ শুনতে দেরি হয়নি৷ অরু নাকমুখ কুঁচকে বেরিয়েছে। সকলের চোখের সামনে ডাইনিংয়ে এসে চেয়ার পেতে বসেছে। চুপচাপ মাথা নত করে খেতে লাগলো। এতক্ষণ যাবত মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে ছিলেন। আপাতত ঠোঁটে স্মিথ অদেখা হাসি ফুটে উঠতে চাইছে। তিনি ঠোঁট টেনে নিজেকে যথাসম্ভব ঠিকঠাক রেখেছেন। তবে আনোয়ার সাহেবের ঠোঁট জুড়ে অমায়িক হাসি বিচরণ করছে। সকলের এমন হাসার কারণ পেলো না অরু। বিরক্ত সে খানিক লজ্জায় পড়লো। আরে সে তো খেতে আসতে চায়নি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ যেতে চায় বিদায় আসা। খেতে না চাওয়ার ছোট্ট বিষয় ধরে তন্ময় যদি সঙ্গে না নেয়, অরু তো এবার কষ্টে মরেই যাবে। এভাবেই জুতো হারাবার দুঃখে তার বক্ষে রয়েছে একরাশ বিষন্নতা। বিষন্নতা জমে পাহাড় বনে গিয়েছে। বিরক্তিকর অনুভূতি তার সর্বাঙ্গে বহমান। তন্ময়ের উপর অভিমান তার মনের আসমান ছুঁয়ে গেল। এতবড় অভিমান কী তন্ময় আদোও ভাঙতে পারবে? অরু যতই রাগ দেখিয়ে থাকুক। সে আশায় ছিল তন্ময় রাগ ভাঙাতে আসবে। কিন্তু আসলো না! শুধু ধমকের সুরে কয়েকবার ডেকেছে! ব্যস, হয়ে গেল? 
অরু মিনমিন সুরে বলল, 'আমাকে না নিলে আমি আর কখনোই কোথাও যাবো না আপনার সাথে।'
__________
বুধবার রাত। ঘড়ির কাঁটা আটটা পঁয়তাল্লিশে। আজ ঠান্ডা আবহাওয়া। বাতাস ছেড়েছে। দখিনা বাতাস। কালো নিথর আকাশে গোলাকার চাঁদ। জ্বলজ্বল করছে। অরু বই হাতে বসে ছিল বারান্দায়। এমতাবস্থায় দীপ্তর চেঁচামেচির শব্দ। 'অরু আপু' বলে চিৎকার করে ছেলেটা যেমন এদিকটায় আসছে। অরু বই বন্ধ করলো। উঠে দাঁড়ালো। দীপ্ত দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তপ্ত ঘন নিশ্বাস ফেলছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার। স্বাস্থ্যসম্মত ছেলেটা এমন দৌড়ঝাঁপ করলে, অবস্থা এমন তো হবেই। অরুর কারণ জিজ্ঞেস করতে হলো না। দীপ্ত হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, 'তন্ময় ভাইয়া ডাকে।'

অরু 'কি হয়েছে' বলে দ্রুত পায়ে বেরোলো। একেকটা পায়ের ধাপ দ্রুততম গতিতে নেওয়া। ছুটে লিভিং রুমে এসেছে। তন্ময় দাঁড়িয়ে। সাথে বাড়ির বাকি সদস্যও। ফ্লোরে এক গাঁদা শপিং ব্যাগ রাখা।
রুবি ব্যাগে উঁকি মেরে দেখছে। সব জুতো। ফ্লাট জুতো, স্নিকার্স আর সামান্য উঁচু জুতো। শাবিহা হেসে নিজের জুতোর ব্যাগ নিয়ে চলে গিয়েছে। রুবি নিজের ব্যাগ থেকে জুতো বের করে পড়ে নিয়েছে।খটখট শব্দ তুলে রুমের দিক চলল। তন্ময় শপিং করলে কখনো একজনের জন্য। সবার জন্যই কমবেশ করে। জবেদা বেগম, সুমিতা বেগম এবং মুফতি বেগমের জন্যও জুতো আনএআনা হয়েছে। মুফতি বেগম মুখ ফুটে বললেন, 'কি দরকার ছিলো। অরুর জন্যই আনতি শুধু।' 

অরু ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে। সে মোটেও জুতো চায়না। তন্ময় এসে নরম সুরে কিছু কথা বললেই হতো। অরুর অভিমানের সমাপ্তি ঘটতো নিমিষেই। সে তো নরম তন্ময়ের জন্য খুব দুর্বল। একটু গলা নামিয়ে কথা বললেই, অরু আসমানে ভাসে। 

দীপ্ত অরুর শপিং ব্যাগ গুলো অরুর রুমে নিচ্ছে। ওর হাতে পি'স্তল। এটা তন্ময় এনে দিয়েছে। দেখতে সম্পুর্ন রিয়াল। তবে গু'লি করলে পানি বেরোয়। এবং অনেক দূর পর্যন্ত স্যাট করা যায়। দীপ্ত খুব খুশী। খুশিতে সে বাকরুদ্ধ। তাই অনায়াসে অরুকে সাহায্য করছে।

অরু একটু অসন্তুষ্ট তবুও মুখ ঘুরিয়ে যেতে পারছেনা। তার তন্ময় ভাই এতকিছু এনেছে তারজন্য , আর সে চলে যাবে? উঁহু পারবে না। এতটাও কঠিন হৃদয়ের নয় অরু। তার মন নরম তুলতুলে। তাই চুপসে দাঁড়িয়ে রইলো। আশেপাশে কেউ নেই। তাদের দুজনের অস্তিত্ব শুধু। অরু স্পষ্ট তন্ময়ের পারফিউমের ঘ্রাণ নিতে পারছে। তীব্রভাবে নাকে ভাসছে। কি সুন্দর সুভাষ! তন্ময় দু'এক কদম ফেলে এগিয়ে আসলো। দুজনের মধ্যে খানিক দুরত্ব রেখে, খুব ধীর গলায় শুধালো, 'অভিমান কমেনি? আর কী করতে হবে?'

সোজাসাপটা প্রশ্নের সম্মুখীনে, অরুর ব্যকুল হৃদয় মুহুর্তে শান্ত হয়ে গেল। প্রশান্তিতে চোখ বুজে এলো। ভালোলাগায় মন জুড়িয়ে গেল। ব্যস, এতটুকুই তো সে চেয়েছে। এমন সময় জবেদা বেগম রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললেন, 'তন্ময় কফি খাবি? করবো?'

তন্ময় সমানতালে জবাব দিলো, 'হ্যাঁ।'

নত করে রাখা অরু গালে স্পর্শ অনুভব করলো। গরম হাতের স্পর্শ। গাল টেনে মাথা উঁচু করতে বাধ্য করেছে তন্ময়। অরু বাধ্য মেয়ের মতো তাকাল। তার মুখশ্রী আর অন্ধকার নয়। তন্ময় পুনরায় শুধালো, 'কী!'
'কিছু করতে হবেনা।'
'আর মুখ গোমড়া করে থাকবি?'
'না তো।'
'কফিটা দিয়ে যা।'

সোফা থেকে ব্যাগ নিয়ে তন্ময় চলে গেল। অরু বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। বুকের ভেতরে তোলপাড় চলছিল। বুকে হাত চেপে দৌড় লাগালো। সে তো জুতো দেখেনি। 
______________
শাবিহার এই ট্রিপে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। মুলত অরুর মুখের দিক তাকিয়ে যেতে হচ্ছে। অরু খুশিতে বাকবাকম বনে গিয়েছে। শাবিহা সাথে যাবে বিষয়টি নিয়ে সে খুব এক্সাইটেড। একটু পরপর এসে প্রশ্ন করছে,'যাবে তো? সত্যি যাবে তো?' বাধ্যতামূলক ভাবে শাবিহা যাবে। তবে সে ফিজিক্যালি কিংবা মেন্টালি কোনোদিক দিয়েই ভালো নেই। অদ্ভুত যন্ত্রণায় আড়ষ্ট হয়ে আছে। এসময় ট্রিপ মানসিক শান্তি দিবে বলে মনে হয়না। খুব অগোছালো ভঙ্গিতে ব্যাগে সরঞ্জাম গুঁছিয়ে নিয়েছে, যেসব কিছু প্রয়োজন। রুমে দীপ্ত আছে। বিছানার উপর বসে বইপুস্তক পড়ছে। ফাঁকেফাঁকে শাবিহাকে দেখে নিচ্ছে। কিছু বলবে বলবে ভেবেও বলছে না। ব্যাপারটা বুঝে শাবিহাই প্রশ্ন করলো, 'কী বলবি?'
'একা যাবে। আমাকে নিবে না?'
'চল তাহলে।'
'আমাকে যেতে দিবেনা বলেই, এমনটা বলছ তাই না! মা বলেছে এগুলো বড়দের ট্রিপ। ছোটদের যেতে নেই।'
'তাহলে যাস না।'

দীপ্ত এই নিরামিষ শাবিহার সাথে কথা বলে ত্যক্ত। বইপুস্তক গুঁছিয়ে বেরিয়ে গেল। শাবিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলো। হাতে ফোন নিল। আনমনে তাকিয়ে থাকলো ফোনের দিক। অয়নের বেশকিছু ছবি সেভ করা। শাবিহা কয়েকবার ডিলিট করতে যেও পারেনি। হাঁত কাঁপতে থাকে। অয়নের করা শেষ ম্যাসেজ ও চোখের সামনে। বুকের ভেতর কামড়ে উঠছে। সেই কী অদ্ভুত যন্ত্রণা! না শয়ে থাকা যায় আর না স্থির বসে থাকতে দেয়। সেলফোন সরিয়ে বারান্দার দিক পা বাড়ালো। জীবন থেকে যা চলে যাবার, তা নিয়ে না ভাবাই উত্তম। শাবিহা নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আগের স্মৃতি ভুলে যাবার। অয়নকে ভুলে যাবার! 
______
রাত অরু খুব কষ্টে কাটিয়েছে। উত্তেজনায় ঘুম আসতে চাচ্ছিল না। বহু চেষ্টার ফলে ঘুমোতে পেরেছে। আজ বৃহস্পতিবার। ধবধবে পরিষ্কার আকাশ। অরু সকল সকল উঠে ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছে। এটাসেটার জন্য ছুটে চলেছে একেকদিকে। দুপুরের সময় মাহিনকে দেখা গেল। সঙ্গে ইব্রাহিম। লাঞ্চ করে একসাথে বেরোবে তারা। এরজন্য বেশ ভালো রান্না হয়েছে বাড়িতে। গিন্নীরা কমবেশি অনেক পদের আইটেম করেছেন। সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। 

খাওয়াদাওয়া শেষে রওনা হবার সময়। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে চারটায়। অরু তখনো ব্যস্ত ভঙ্গিতে তৈরি হচ্ছে। আজ কামিজ পড়েনি। চুরিদার পরেছে। কপালে ছোট কালো টিপ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। শাবিহা দাঁড়িয়ে। খুব সাধারণ ভাবে। কোনো সাজগোছ নেই। শুধু ড্রেসটাই পড়েছে। অরু এবিষয়ে কিছু বলবে পূর্বেই, শাবিহা তাড়া দিল, 'ভাইয়া দাঁড়িয়ে। আয়।'

অরু কিছু বলতে পারল না৷ চুপচাপ এগিয়ে গেল। তন্ময় আর মাহিন কথা বলছে। অরুকে দেখেই মাহিন হাসলো। পরিষ্কার, সুন্দর মিষ্টি হাসি। তন্ময়ের কাঁধ চাপড়ে বলল, 'জিতছোস মাম্মা!'

অরু লজ্জায় হতভম্ব। দ্রুত পায়ে গাড়িতে উঠে গেল। এভাবে বললে তার লজ্জা লাগেনা বুঝি। মুখের সামনে কেউ বলে এভাবে! শাবিহাও উঠে বসেছে। তন্ময় ড্রাইভিং সিটে বসলো। তার পাশে মাহিন। ইব্রাহিম বাইক নিয়ে এসেছে। সে সদরঘাট পর্যন্ত বাইক চড়েই যাবে৷ গাড়ি স্টার্ট হয়েছে। গাড়ির আগে ইব্রাহিমের বাইক সামনে চলে গেল। পরপর হাওয়া! অরু নিজের পাশের জানাল খুলে দিয়েছে। হুড়মুড়িয়ে বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে। এক আলাদাই প্রশান্তি ঘিরে ধরেছে। 

আধঘন্টা গিয়ে গাড়ি হুট করে থেমে গেল মাঝপথে৷ তন্ময় শাবিহার উদ্দেশ্যে বলল,'আয়।'

অবুঝের মতো শাবিহা বেরোলো। কোনো সিরিয়াস কিছু হলো নাকি! তাদের গাড়ির সামনে আরেকটি গাড়ি রয়েছে। সাদা রঙের। শাবিহা লক্ষ্য করেনি। তন্ময় বলল, 'ঘুরে আয়। ফিরে আসবি হাস্যজ্বল হয়ে। কোনো প্রয়োজন হলে কল দিবি!'

শাবিহা নির্বোধ, 'হু?'

গাড়ির পেছন দিকে অয়ন দাঁড়িয়ে ছিল। এবার ঘুরে সামনে এলো। চোখে কালো সানগ্লাস। সানগ্লাস খুলে তন্ময়ের সামনে দাঁড়ালো। তন্ময় তার কাঁধে হাত রাখল। শাসানো সুরে বলল, 'বি কেয়ারফুল।'
'হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভাই।'

শাবিহা বোকার মতো তন্ময়কে যেতে দেখল। তন্ময় গাড়িতে উঠতেই তার ধ্যান হলো। চেঁচিয়ে উঠলো, 'ভাইয়া! এসব হচ্ছে কী!''

তন্ময় হাতের ইশারায় বোঝাল যেতে। এদিকে অয়ন দ্রুততম ভাবে শাবিহার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তন্ময়কে ছেড়ে তার ধ্যান অয়নের উপর চলে গেল।
অনেক পরিবর্তন হয়েছে ছেলেটা। গাল জুড়ে চাপদাড়ি। লম্বায় বেরেছে কিছুটা। পুরুষ বনে গিয়েছে যেমন। শাবিহা তাকিয়েই রইলো। হুট করে ঘুরে দাঁড়ালো। সে একাই চলে যাবে। পা বাড়ালো। অয়ন তৎক্ষণাৎ হাত চেপে ধরেছে। শক্তি প্রয়োগ করে টেনে নিয়ে গাড়ির দিক অগ্রসর হয়েছে। শাবিহা হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় মত্ত। সে তো সব ভুলে যেতে চাইছিল। তাহলে কেন পুনরায় সেই অনুভূতি, সেই মানুষ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন