আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অলকানন্দা - পর্ব ৪০ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প

!!১০৯!!

মৃদু আলোর ঝলকানি তে ঘুম ভাঙে মাহার। মাথাটা ভনভন করছে। ধপধপ করছে নার্ভস। ভিষণ ব্যথা। মাহা সহ্য করতে পারলোনা। দু'হাতে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো সে। সার্থক পাশেই ছিলো। তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে ঝিম ধরে। মাহার চিৎকারে সচল হয় মস্তিষ্ক। 
"কি হয়েছে মাহা? বেশি ব্যথা করছে?"
"হুম।"

ভারী গলায় সায় দেয় মাহা। মাথায় কয়েকটনের বস্তা রেখেছে কি কেউ? অনেক ভারী লাগছে মাথাটা। 
"তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। ব্রেকফাস্ট খেয়ে ঔষধ খাবে।"

ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয় মাহা। সার্থক বিছানায় খাবারের প্লেট হাতে বসে আছে। মাহা এতক্ষণ যাবত খেয়াল করেনি। এই ঘর তো সম্পূর্ণ ভিন্ন! এটা কোথায়? টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মাহা বিছানার কাছে এগিয়ে আসে। 
"এটা তো আমাদের ঘর না। আমরা কোথায় আছি, সার্থক?"
"বসো, খাবে।"
"আপনি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।"
"বলবো সোনা। আগে খেয়ে নাও।"
মাহাকে পাশে বসিয়ে রুটি খাইয়ে দেয় সার্থক। অতঃপর ঔষধ। 
"এবার বলুন।"
"কেমন উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে চুলগুলো। আমি নারিকেল তেল গরম করে নিয়ে আসি। তুমি বসো চুপচাপ।"

সার্থক বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। চারবছরে মাহা সার্থক কে অনেকটুকুই চিনেছে। নিজে কোনো কথা বলতে না চাইলে সে কথা ওর মুখ হতে বের করা অসম্ভব প্রায়। হঠাৎ চোখ চলে যায় পাশের পর্দা দিয়ে ঢাকা বিস্তর কাঁচের দরজার পানে। মাহা এগিয়ে যায় সেদিকে। দু'হাতে পর্দা সরাতেই কাঁচের দরজা ভেদ করে দেখা মিলে কয়েক সারি পাহাড়ের। মাঝে বয়ে গিয়েছে নীলচে নাম না জানা এক বিস্তৃত নদী। মাহা পুলকিত, উচ্ছ্বসিত। ভুলে গেলো জাগতিক সকল ভাবনা। কাঁচের বিস্তর দরজাটা খুলে বৃহদাকার এক খোলা বারান্দা আবিষ্কার করে মাহা। হিমেল স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। সারি সারি পাহাড়। সবুজের সায়র যেন! দালানটা বেশ উচ্চতায় গড়া। নদীর ছলাৎ ছলাৎ জলের মুগ্ধ শব্দ কানে বাজছে। আকাশে হরেকরকম পাখি। মাহা আনমনা হয়ে যায়। কি সুন্দর প্রকৃতি! রেলিং ধরে অবলোকন করে প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম। 
"মাহা, ঘরে এসো।"

সার্থকের আহ্বানে ঘরে ফিরে মাহা। চারিদিক সে ভালো করে পরখ করে এতক্ষণে । অফ হোয়াইট রঙের দেয়ালে ঘেরা ঘর। একপাশে একটা খাট, খাটের পাশে ছোট একটা টেবিল, একটা আলমারি আর গুটিকয়েক আসবাবপত্র। বড়সড় ছিমছাম ঘর। সার্থক একটা বাটিতে নারিকেল তেল গরম করে দাঁড়িয়ে আছে। 
"তুমি নিচে বসো। আমি খাটে বসে তেল দিয়ে দেই।"
"আচ্ছা"

মাহা টাইলসে নিচে বসে পড়ে। সার্থক বসে খাটে। মাহার কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো, জট লাগানো। বহুদিন চুল আঁচড়ানো হয়নি বোধহয়। কোনোমতে একটা খোঁপা করা। আস্তে করে খোঁপাটা খুলে দেয় সার্থক। কোমড় সমান চুলগুলো সারা পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে লহমায়। চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জট ছাড়ায় সার্থক। অতঃপর গরম তেল দু হাতের তালুতে ঘষে অতি যত্নে মাহার চুলে লাগাচ্ছে সার্থক। মাহা চুপ করে অনুভব করছে সময়টা। মস্তিষ্ক ঠান্ডা, মন শান্ত। সার্থক একমনে চুলে তেল মালিশ করে যাচ্ছে।
"আপনি আমাকে দূরে নিয়ে এসেছেন, তাই না?"

কিছুক্ষণের জন্য হাত থেমে যায় সার্থকের তবে পুনরায় সচল হয় হাতদুটো। যেন মাহার কথা শুনেনি সার্থক। মাহার নার্ভস শান্ত রাখার ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দূরে চলে এসেছে তারা। মাহার অস্থিরতাও কমেছে অনেকটা। হয়তো সময়ের সাথে সাথে আরো কমে যাবে সকল অস্থিরতা। 

"আমরা এখন সিলেট রয়েছি। এটা আমার বাগান বাড়ি।"
"সিলেট?"
"আমি এখানকার একটা ভালো হসপিটালে জয়েন করেছি। অফারটা অনেকদিন আগেই পেয়েছিলাম। তোমাকে জানানো হয়নি।"

মাহা নিশ্চুপ। দৃষ্টি বারান্দায়। সার্থক মাহার চুলগুলো সরিয়ে ভালোবাসার পরশ একে দেয় মাহার গ্রীবাতে। বহুদিন বাদে সুপরিচিত সেই স্পর্শটা পেয়ে মাহা শিউরে ওঠে। সকল যন্ত্রণা ঠেলে দিয়ে নিজের মাঝে এক অন্য সত্তা আবিষ্কার করে মাহা। যার এই মুহূর্তে একান্ত স্পর্শ প্রয়োজন। বহুদিনের তৃষ্ণার্ত মাহা। আরো গভীর হয় সার্থকের স্পর্শ। বাইরে আসমানের পূর্বাংশে দিবাকর তেজস্বী হচ্ছে। ঘরে থাকা প্রাণদুটিও তেজস্বী হয়ে উঠছে ভালোবাসার দাবানলে। 

____________

দরজায় ঠকঠক করছে কেউ। মুইংচিনের গলা,
"সাতক, সাতক। একতু বাইরে আছো। জরুরি প্রয়োজন আছে।"

দুপুর দুটো বাজে প্রায়। সার্থকের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মাহা। আস্তে করে মাহাকে সরিয়ে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে দরজার কাছে আসে সার্থক। দরজার এপাশ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে, 
"আসছি। তুমি নিচে অপেক্ষা করো।"
"ওকে।"

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে সার্থক। মুইংচিন, মেরি, নাহার এই বাড়িতে এসেছে সার্থকের সাথে। পাহাড়ের উপরে দু’তালা ডুপ্লেক্স বাড়ি। আশেপাশে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো জনবসতি নেই। শুভ্র রঙের বাড়িটা। বাড়ির সম্মুখে বিস্তৃত বাগান। 
"ডেভিড দেকা করতে এসেছে সাতক।"
"আমাদের 'HBP' এর কি খবর?"

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে সার্থক। 
"আমি সতিক জানিনা।"
"কোথায় সে এখন?"
"বাইরে বাগানে।"
"আচ্ছা, ভিতরে আসতে বলো।"

বাড়ির ভিতরটা ভিষণ মনোরম। একপাশ ঘেরা কাঁচের দেয়াল। সেখান থেকে দেখা মিলে সারি সারি পাহাড়ের। কাঁচের দেয়াল ঘেঁষেই সোফা রাখা। মাঝে সেন্টার টেবিল। বড়সড় ছিমছাম বাড়িই বলা যায়। জাম্বিয়ার লুসাকা অঞ্চলের বাসিন্দা ডেভিড। বিশালাকৃতির দেহের কৃষ্ণাঙ্গ মানব। ডেভিড মূলত বামপন্থী। জন্মগতভাবে খ্রিস্টান হলেও সে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয়। সার্থকের ডানহাত বলা চলে। সার্থক কে গুরু হিসেবে মেনে আসছে ডেভিড সেই ছোটকাল থেকে। বিশ বছরের এই যুবক সার্থকের জন্য প্রাণ দিতে রাজি আর সময় আসলে সার্থকের কথায় প্রাণ নিতেও রাজি। 
"কি খবর ডেভিড?"
"গুড, ব্রো।"

আরো কিছু কথা হলো। অতি গোপন কিছু কথা।

!!১১০!!

নিচতলাটা উপরতলার চাইতেও সুন্দর। মাহা ঘুরে ঘুরে দেখছে বাড়িটা। মেরি পাশেই আছে। 
"বাড়িটা ভিষণ সুন্দর মেরি।"
"জ্বি, ডক্টর স্যার নিজের মতো সাজিয়েছেন সবটা।"
"কোথায় তোমার ডক্টর স্যার?"
"ডক্টর স্যার জরুরি কাজে বাইরে বেরিয়েছেন ম্যাম। আপনাকে বলেছেন খাবার খেয়ে নিতে।"

মাহা অবলোকন করছে চারপাশ। নিচতলাটা ভিষণ বড়। ঘরের মাঝ দিয়ে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স সূত্রের মতো প্যাঁচানো গোল সিঁড়ি উপরতলায় উঠে গিয়েছে। বাড়ির মূল ফটক সেগুন কাঠে নির্মিত। ড্রয়িং রুমটাও বিশাল। দেয়ালে একটা মৃত হরিণের মাথা সাজিয়ে রাখা। যা দেখে খানিক কষ্ট পেলো মাহা। এরকম মৃত প্রাণী ঘরে সাজিয়ে রাখা মাহার পছন্দ নয়। 
"ম্যাম, চলুন খেয়ে নিবেন। নয়তো স্যার আমাকে বকবেন।"
মাহারও ভিষণ ক্ষুধা লেগেছে। তাই কোনো দ্বিরুক্তি সে করেনি। খাবার খেয়ে সোফায় বসে মাহা। মাথার যন্ত্রণা কমেছে অনেকটা। তবে মাহার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। যার উত্তর কেবল সার্থকের কাছেই রয়েছে। এমন সময় বাইরে হতে একটা করুণ চিৎকার ভেসে এলো। মাহা দৌড়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। সাথে মেরি এবং নাহারও। বিস্তৃত অংশজুড়ে বাগান। পশ্চিম কোণে বাগানের দিক হতেই ভেসে আসছে আর্তনাদ। মাহা এগিয়ে যায় সেদিকে। নাহার ও মেরি একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। স্পষ্ট ভয় তাদের চেহারায়। তারাও ছুটে মাহার পিছুপিছু। মাহা বাগানের ভিতর প্রবেশ করে দেখে একজন মালি বয়স চল্লিশ কি পয়তাল্লিশ হাত চেপে বসে আছেন। হাত দিয়ে গলগল করে র'ক্ত পড়ছে। হাফ ছেড়ে বাঁচে মেরি ও নাহার। নাহারের ছিপছিপে পাণ্ডুর মুখে স্বস্তি। 
"কি হয়েছে আপনার?"
বিচলিত কন্ঠ মাহার।
"নাহার আপনি একটু ফার্স্ট এইড বাক্সটা নিয়ে আসুন জলদি।"

নাহার বাক্সটা আনতেই মাহা মধ্যবয়স্ক লোকটার হাত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। লোকটা চোখমুখ খিঁচে বসে। হয়তো পুরুষ বিধায় কাঁদতে পারছেন না তিনি। 
"ব্যথা কমেছে চাচা?"
কি মায়াময় মেয়েটার মুখ। কি মনোমুগ্ধকর মেয়েটার সুর। হিন্দু সজল দাস যেন দেবী দূর্গার দেখা পেলেন। মুখে কিছু না বললেও অপর হাত দিয়ে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি। হায়রে নিয়তি! পাপপুণ্যের মিলন ঘটিয়েছে। নিষ্পাপ মেয়েটার জন্য মায়া হলো সজল দাসের। সজল বোবা মানুষ। কথা বলতে পারেন না। মুখে আ আ করলেন। মেরি এবার বিচলিত হয়ে বললো,
"ম্যাম, ঘরে চলুন। বাগানে প্রচুর সাপ আছে। প্লিজ ম্যাম। আপনার কিছু হলে ডক্টর স্যারকে কি বলবো আমি।"
"মেরি তুমি ভিষণ ভয় পাও।"

অতঃপর সজল দাসের দিকে চেয়ে মাহা বলে,
"চাচা, বাড়িতে চলুন। একটু রেস্ট নিয়ে খাবার খাবেন।"

সজল ইশারায় বুঝায় সে ভালো আছে। মাহা যেন চলে যায়। সবাই এতো তাড়া দিচ্ছে। অগত্যা মাহাকে বাড়ির ভিতর ফিরে যেতে হলো। বাগান থেকে একটা লা'শ টেনে নেওয়া হচ্ছে বাড়ির দক্ষিণকোণে। বাগানে অশরীরী আত্মার ন্যায় হাতে ছুরি সমেত বাঁকা হেসে হাঁটছে চীন দেশের শান ধর্মের অনুসারী লোকটা। 
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।