বড় এক ইমারতের ভেতর ঢুকছে গাড়িটি। সে ইমারতের একপাশে কিছু একটা লেখা ছিলো যা ইনারা পড়তে পারে নি। গাড়িটি ঢুকছে ইমারতের পিছন দিক দিয়ে। ইনারা রহমানকে জিজ্ঞেস করে, "আমরা বিল্ডিংয়ের পিছন দিক দিয়ে কেনা যাচ্ছি?"
"ছোট স্যার বলেছে তাই।"
"সভ্য তাহলে এখানে কাজ করে?"
রহমান পিছনে ইনারার দিকে তাকাল মুখ কুঁচকে, "ম্যাম স্যার এই কোম্পানির মালিক।"
ইনারা বোতল থেকে পানি পান করছিলো। রহমানের মুখে কথাটা শুনে তার মুখ থেকে পানি পড়ে গেল। সে অবিশ্বাস্য সুরে বলে, "কী! এই বিল্ডিং সভ্যের? আমি মাত্র যে এত বড় স্টুডিও থেকে এসেছি তার থেকে দশগুণ বেশি বড় এটা।"
"মানে টেকনিকালি এটা বড় সাহেবের। কিন্তু একমাস হবে সভ্য স্যার কোম্পানি সামলাচ্ছেন। যেহেতু উনিই এটা সামলাবেন তাই ভবিষ্যতে উনার নামেই হতে পারে। আর আপনার সে স্টুডিওর থেকে বড় তো হবেই। সে স্টুডিওর বেশিরভাগ শেয়ারই বড়স্যারের নামে। ওই স্টুডিও আমাদের কোম্পানির সাব লেবেল। এমনকি বেশিরভাগ এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানিই আমাদের কোম্পানির আন্ডারে আছে।"
গাড়ি থামে। এই বিশাল গ্যারেজে কেবল তিনটা গাড়ি আছে। এবং একটা লিফট। লিফটে উঠে রহমান জানায়, "এটা কোম্পানির পিছনের দিকে। বড়স্যার এই দিকটা আলাদা রেখেছেন। এইখানে কেউ আসতে পারে না।"
"কেন?"
"যেন কোম্পানির বসকে কেউ না দেখে।"
"পাশাপাশি কি মাফিয়ার কাজ করে না'কি যে দেখলে সমস্যা হবে।"
দাঁত কেলিয়ে হাসে রহমান, "কি যে মজার কথা বলেন ম্যাম! ও আপনি মজা করছেন না?" এবার রহমান নিজেও গম্ভীর হয়ে বলে, "উনাদের অনেক বড় ব্যবসা তাই জানের ভয়ও থাকে। তাই স্যাররা সকলের চোখ থেকে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে। এমনকি একারণেই ছোট থাকতে তাদের দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনার জন্য। কেবল কোম্পানির হেডরা ছোট স্যারের সাথে দেখা করতে পারবে। তাকে কোম্পানির সকল তথ্য দেওয়া, সকল কাজের গবেষণা করা এবং তার থেকে অনুমতি নেওয়ার কাজ তারাই করে। সভ্য স্যারের সাথে কেবল তাদের দেখা করার অনুমতি আছে। আর আমার। আমি তার এসিস্ট্যান্ট বলে। আমার বাবাও বড় স্যারের এসিস্ট্যান্ট ছিলেন।"
"আপনার বড় স্যার অর্থাৎ সভ্যের দাদাজান এই কোম্পানি শুরু করেছিলেন?"
"হ্যাঁ, বড় স্যার যুদ্ধ শেষ হবার পরপর বিদেশে গিয়েছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে একটা ছবিতে স্টাফ বয় হিসেবে কাজ করতেন তারপর আস্তে-ধীরে কাজ শিখেন। তারপর নিজেও সেখানে সহায়ক পরিচালক হিসেবে কাজ করে। পড়াশোনা শেষে এক স্টুডিওতে কাজ নেন। অনেকবছর পর দেশের টানে ফিরে আসে। এখানে এসে নিজের কোম্পানি খুলে। আজ পঁচিশ বছর পর এই কোম্পানি দেশের বড় কোম্পানির মধ্যে একটি।"
ইনারা রহমানের কথাগুলো শুনে আগ্রহ সহকারে বলে, "বাহ উনার এত কথা শুনে তার ব্যাপারে জানার আগ্রহ বাড়ল। কী নাম আপনার বড় স্যারের?"
"শাহরিয়ার ইসমাত। সভ্য স্যারের নাম উনার সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে। ওহ ম্যাম এসে পড়েছি আমরা।"
রহমান লিফট থেকে নেমে একটু এগিয়ে দেখে ইনারা তার পাশে নেয়। পিছনে ফিরতেই দেখে ইনারা লিফটেই দাঁড়ানো। লিফটের দরজা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে ছুটে যেয়ে বাটন চাও দিতেই দরজা আবার খুলে যায়। সে আতঙ্কিত সুরে বলল, "ম্যাম আপনি নামেন নি কেন?"
ইনারা এখনো হতভম্ব, "এটা কী 'ইসমাত এন্টারটেইনমেন্ট'? "
"হ্যাঁ।"
ইনারার হঠাৎ মনে পড়ে সভ্যের নাম। সাফওয়াত ইসমাত সভ্য। সে নিজের কপালে হাত রেখে বলে, "ওই অসভ্যের নামেও ইসমাত ছিলো তাও আমার মাথায় ঢুকে নি ও এই কোম্পানির সাথে জড়িত হতে পারে। ইসমাত এন্টারটেইনমেন্ট তো দেশের সবচেয়ে বড় এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি। " ইনারার চোখে উৎসুক ভাব স্পষ্ট।
রহমান তা দেখে সুযোগ বুঝে ইনারাকে আরও খুশি করার জন্য বলে, "আর এখন তো আপনি এই কোম্পানির অংশ। সভ্য স্যারের ওয়াইফ আপনি।"
মুহূর্তে যেন ইনারার সকল উৎসুকভাব হাওয়ায় উড়ে যায়। সে লিফট থেকে বেরিয়ে বলে, "আপনার স্যারের সাথে কেবল দুই বছরের বিয়ে আমার। ভুলে যেয়েন না।"
"তা ভুলি নি ম্যাম। কিন্তু আপাতত তো আপনারও এই কোম্পানিতে অধিকার আছে। আপনি এত কষ্ট না করে সভ্য স্যারকে একবার বললেই স্যার আপনাকে যেকোনো বড় ফিল্মে প্রধান চরিত্রে নিতে পারে।"
ইনারা দেখে লম্বা করিডরের দুইপাশেই কতগুলো বডিগার্ড দাঁড়ানো। তারা মাঝখান দিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এরই মাঝে সে উওর দেয় রহমানকে,
"আমি যা করব নিজের যোগ্যতায় করব। প্রয়োজনে অপ্রধান চরিত্রই করে যাব সারাজীবন তাও কারও রেফারেন্স এ কাজ করব না। এটা এক ধরনের ঋণ। আমার ঋণী থাকা পছন্দ না। কিন্তু দাদাজান এত কঠিন সময় আমার যা সাহায্য করেছে তার ঋণ আমি কখনো পরিশোধ করতে পারব না। তবে একবার আমি কাজ শুরু করতে পারলে আপনার বড় স্যারের সব আর্থিক ঋণ পরিশোধ করে দিব।"
করিডরের শেষ প্রান্তের কক্ষের সামনে যেয়ে দাঁড়ায় রহমান। সেখানে দাঁড়ানো একটি বডিগার্ড বলে, "স্যার বলেছে কেউ আসলে বসতে। কোনো কথা বলতে না। স্যার কাজ করছে।"
"ঠিকাছে। আর উনাকে দেখে রাখো, উনি আমাদের ম্যাম। অর্থাৎ স্যারের ওয়াইফ। উনার এখানে আসার অনুমতি আছে। সবাইকে তা বলে দিবে।"
"ঠিকাছে।"
রহমান ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, "ম্যাম আপাতত একটু বসতে হবে। আর কথা বলা যাবে না। কাজের সময় শব্দ হলে স্যার ভীষণ রাগ করে। আপনি ভেতরে যান। আমি একটু কাজ সেরে আসছি।"
ইনারা রুমের ভেতর ঢুকে নীরবে। ঢুকেই দেখে সভ্য কাজ করছে। মগ্ন হয়ে। ইনারা দেখে রুমটা বিশাল। রুমটা সম্পূর্ণ মেরুন ও কাঠ রঙের। দেয়ালের রঙ, ফার্নিচার সব। কেবল একদিকে দেয়ালের পরিবর্তে কাঁচ দেওয়া। সেখান থেকে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যায়।সে গুটি গুটি পা'য়ে হেঁটে যেয়ে বসে সোফায়। সোফায় বসে অস্থির হয়ে আশেপাশে দেখতে থাকে। তার চোখ যেয়ে আটকায় সভ্যের উপর। তার চক্ষু সেখানেই আটকে গেল। সভ্য কালো শার্ট পরে বসে আছে। তার শার্টের হাতা কণুই পর্যন্ত মোড়ানো। হাতে কালো রঙের একটি ঘড়ি পরা। মুখের ভাব গম্ভীর। আগেও যখন সে কাজ করতো তখন এমন গম্ভীর দেখাত তাকে। এমন গম্ভীরমুখে তাকে সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম দেখায়। আর আজ তার মাত্রা যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এমন কেন? তাকে আগের থেকে বেশি ম্যাচিউরড দেখায় একারণে? না'কি ইনারার মনটা জানে দুই বছরের জন্য হলেও এই লোকটা তার একারণে?
ইনারার মনে হলো তার গাল দুটো লজ্জায় ভারী হয়ে গেছে। তার ঠোঁটের কোণে লজ্জামাখা হাসি এসে উপস্থিত হলো। সে গালে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো সভ্যের দিকে। অপলক। দেখতে দেখতেই তার মনে খেয়াল এলো, "বাসায় তো ঠিকই সাধারণভাবে ঘুরাফেরা করে। এখানে এত পরিপাটি হয়ে এলো কোন দুঃখে এই অসভ্যটা? কোনো মেয়ে কী কাজ করে নাকি ওর সাথে? মেয়েটার জন্য সেজে আসছে না'কি? আরে ইনু কী ভাবছিস এসব? থাকলেও তোর কী? তোদের বিয়ে তো আসল না। দুইবছরের জন্য কেবল।" নিজের এমন অদ্ভুত চিন্তায় নিজের কপালে মারে সে। আবার ভাবে, "দুই দিনের হোক বা দুইবছরের আপাতত তো আমারই স্বামী। অন্যমেয়ের দিকে নজর দিলে লোকটার হাত পা ভাঙার অধিকার তো আমার আছে। একবারে হাত পা ভেঙে দিব।"
সভ্য কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে গভীর নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে মাথা ঠেকায়। মুহূর্তে আবার মাথা উঠিয়ে ভালো করে দেখে ইনারাকে। অবাক হয়ে বলে, "তুমি কখন এলে?"
ইনারা চমকে উঠে। হঠাৎ এভাবে ডাকায় লাফিয়ে উঠে তার ভাবনার শেষ কথাটা বলে ফেলে, "একবারে হাত পা ভেঙে দিব।"
"হোয়াট?" অবাক হয়ে বলে সভ্য, "আমি তোমাকে কি করলাম? আর তুমি এসেছ জানাও নি কেন?"
সভ্য উঠে এগোয় ইনারার দিকে।
কথাটা বলে ইনারা নিজেই লজ্জিত হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সভ্যকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে উঠে সভ্যের দিকে এগিয়ে এসে বলে, "আপনি বলছেন কখন এলাম? আপনি নিজেই তো বাইরে দাঁড়ানো এক লোককে বললেন ভেতরে ঢুকে কোনো কথা না বলতে। এখন আবার জিজ্ঞেস করে জানি নি কেন? বলি কি না কথা বলতে হলে ডাকলেন কেন?" ইনারা সভ্যের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলে।
সভ্য বাঁকা হাসে। ইনারা অবাক হয়, "আপনাকে বকছি আর আপনি হাসছেন? কী অসভ্যরে বাবা!"
সভ্য ইনারার বাহু ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। তাকে নিজের কোলে বসিয়ে তার কোমরে হাত জোড়া আবদ্ধ করে।
ইনারা আঁতকে উঠল, "এটা কোন ধরনের বেয়াদবি। ছাড়ুন নাহয় চিল্লাচিল্লি করব আমি।"
"করো। এখানে আমার ছাড়া কারও চলে না। চিল্লিয়ে তুমিই লজ্জা পাবা।"
"মাইর দিব আপনাকে।"
"দেও, কে মানা করেছে? গাল পেতে দিলাম দেও।"
"উফফ বিরক্ত করেন না তো। ছাড়ুন।"
"আগে বলো সেদিনের পর থেকে আমার সামনে আসো নি কেন? এক ঘরে থেকেও তোমাকে ঠিকভাবে দেখি নি। দেখা হলেও দৌড় দেও। লজ্জা পাও না-কি? চুমুটা হৃদয়ে আঘাত করেছে তোমার?"
লজ্জায় লাল হয়ে গেল ইনারা। সভ্যর কাঁধে একের পর এক মারতে থাকে এবং বলে, "আপনার সামনে আসলে কখন কি করে ফেলেন কে জানে? তাই পালিয়ে গেছি?"
"বাহ বাঘিনীও ভয় পায়, আজ জানলাম। আচ্ছা ছেড়ে দিব। মিষ্টি করে বলো।"
"পারবো না।"
"সোজা বললেই তো হয় যে তোমার এভাবে থাকতে ভালো লাগছে।"
ইনারা বিরক্ত হয়, "আচ্ছা বলছি।"
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকায় সভ্যের দিকে। মুখটা কোমল করে। নম্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, "প্লিজ, ছাড়ুন না।"
সভ্য চোখ বন্ধ করে নেয়। তার বুকের ভেতর যেন এক তীর এসে লেগেছে। সে মনে মনে বলে, "এভাবে কেই বলে প্রণয়ী। এভাবে বললে তো যেকোনো পুরুষ তার জীবন দিয়ে দিবে।"
ইনারাকে ছাড়তেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বকা দেয় সভ্যকে "অসভ্য, বেয়াদব, ফাজিল। আপনার সাহস কত এভাবে আমাকে ধরেন?"
"মুহূর্তে আসল রূপ বেরিয়ে আসলো। আচ্ছা শুনো তুমি এখানে বসো আমি তোমাকে ল্যাপটপে কিছু দেখাচ্ছি।" সভ্য দাঁড়িয়ে বলে।
"আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আবার কিছু করে ফেললে?"
"কিছু করব না, প্রমিজ।"
ইনারা সভ্যের চেয়ার বসে। সভ্য ল্যাপটপের ফোল্ডার পরিবর্তন করে। কয়েকটি ছবি আনে। এর মধ্যে একটি ছবি দেখায়। ছবিতে মোট সাতজন আছে। এর মধ্যে একজন হলো সভ্য। বাকি ছয়জনকে সে চিনল না। সভ্য ছবিটা জুম করল। সোফাতে বসা একটি বয়স্ক লোক। তার দাঁড়ি, চুল সব পাকা। কোট প্যান্ট পড়ে আছেন। হাতে একটি কারুকাজ করা লাঠি। মুখটা গম্ভীর। তাকে দেখিয়ে সভ্য বলল, "এটা আমার দাদাজান। এই কোম্পানির মালিক। তাকে সকলে ভয় পায়।"
"কেন?"
"কারণ তিনি রাগী।"
"বলেন কি! কি কিউট দেখতে।"
"জীবনে আমাকে তো এ কথা বললে না কিন্তু আমার দাদাকে...। থাক বাদ দিলাম। তার পাশে বসা আমার দাদীজান।" দাদাজানের পাশে বসা শাড়ি পরা বয়স্ক মহিলাটি দিকে জুম করে সভ্য। আরও বলে, "উনিও রাগী। কিন্তু আমাদের প্রতি না। বিশেস করে আমাকে অনেক আদর করে। দাদাজান এই পৃথিবীতে কেবল তাকেই ভয় পায়। আর অনেক ভালোওবাসে।"
"ওহ কি কিউট।"
সভ্য মুখ বানায়। বিড়বিড় করে বলে, "আমি ছাড়া এই মেয়ের কাছে পৃথিবীর সব কিছুই কিউট লাগে।"
বিরক্ত হয়ে সামনের সবাইকে পরিচয় করায়, "দাদীজানের পাশে দাঁড়ানো আমার মা ও বাবা। আমার বাবা মাকে ছাড়া কিছু বুঝেনা। অনেক ভালোবাসে তাকে। আর আমার মায়ের জন্য তার পরিবারই তার প্রাণ। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুইট আমার মা।"
ইনারা দুইজনকে দেখে বলল, "দুইজনেই এত সুন্দর। নো ওয়ান্ডার আপনি এত হ্যান্ডসা...." সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই চুপ করে যায় ইনারা। জিহ্বায় দাঁত দিয়ে কামড় দেয়। সভ্য চেয়ারটা তার দিকে ঘুরিয়ে সেদিকে ঝুঁকে বলে, "কী বললে তুমি? আমি এত কী?"
ইনারার পিছনে হেলান দিতে থাকে। কথাটা ঘুরানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, "আপনার ভাই ছবিতে নেই কেন?"
সভ্য ইনারার দিক থেকে নজর সরায় না। ধীরে ধীরে তার কাছে আসতে থাকে। এবং বলে, "সে বিজি ছিলো।"
ইনারা আড়চোখে আরেকবার ভালো করে পরিবারের ছবিটা দেখে নেয়, "আর আপনার দাদাজানের পাশের দুইজন কে?"
সভ্য থেমে যায়। ছবির দিক তাকিয়ে বলে, "উনারা আমার ফুপি এবং তার মেয়ে। মানে আমার কাজিন।"
"আর আপনার কাজিন আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?"
সভ্য জোরপূর্বক হাসে। সরে যেতে নিলেই ইনারা তার কলার ধরে নিজের সামনে এনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, "আপনার ভঙ্গি আর হাসি কোনোটাই সুবিধাজনক লাগছে না। মেয়েটার আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার বিশেষ কারণ?"
"নেই তো।"
"হঠাৎ তাহলে ওর কথায় আসলে সরলেন কেন?"
"তাহলে তুমি চাও আমি তোমার কাছে আসি?"
"কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না খবরদার।"
সভ্য আবার কাছে আসতে থাকে ইনারার, "কেন? তুমি জ্বলাস ফিল করছ?"
ইনারা সভ্যের কলার ছেড়ে দেয়। ভেংচি কেটে বলে, "আপনার জন্য আমি জ্বেলাস ফিল করব কোন দুঃখে?"
সভ্য চেয়ারে হাত রেখে ইনারার একবারে কাছে চলে যায়। জিজ্ঞেস করে, "তাহলে তোমার নাকের ডগায় লাল কি বসে আছে? তুমি জানো রাগ করলে তোমার গাল ও নাক লাল হয়ে আছে। কিউট লাগে তোমায়।"
ইনারা একপলক সভ্যের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। তার গাল আরও লাল হয়ে আসে। সভ্য তার চিবুকে হাত রেখে মুখ তুলে। মৃদুস্বরে বলে, "লজ্জা পেলে মারাত্মক সুন্দর দেখায় তোমায়।"
বলে ইনারার দিকে ঝুঁকে। তার ঠোঁটে চুমু খাবে বলে।
ইনারা চায় তাকে আটকাতে। তার মস্তিষ্ক বারবার বাঁধা দেয়। কিন্তু হয়তো মনের বশে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়৷ ঠোঁটে সভ্যের ঠোঁটের খানিকটা ছোঁয়া পেতেই কারও কন্ঠ শুনে চমকে উঠে সে। সাথে সভ্যও। দুইজনে সরে যায়। ইনারা চকিতে তাকায় দরজার দিকে। সামি দাঁড়ানো। সে চোখদুটো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে দুইজনের দিকে। তারপর নিজের চুলে হাত বুলিয়ে হতবাক গলায় বলল, "ভুল সময় এলাম না'কি?"
.
.
.
চলবে...............................