মাহিনের হাতে সেলফোন। স্ক্রিনে একটি নাম্বার। কল দিতে নিয়েও সংকোচবোধ করছে। হাসফাস করছে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সে। বড়সড় কোম্পানি চালায়। শত মানুষ তার ইশারায় চলে। আর সে কিনা এক পুচকে মেয়ের ঝাঁজালো কন্ঠের স্বরে ব্যাকুল হয়ে গেল। এসব আদৌ মানা যায়? অল্পবয়সী ছেলেদের মতো হৃদয় ব্যাকুল হবার দিন কী তার আছে? তাও আবার একটুখানি মেয়ে! উর্ধ্বে গেলে চার-পাঁচ বছরের গ্যাপ মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এতটা! মাহিন দ্বিধায় জর্জরিত। মন ভেবে বসলো শুধু একটু কথাই তো। ক্ষতি কী! পুচকে মেয়েটাকে একটু বাজাবে। বেশ খানিক্ষন বিবেচনা করে এই রাতবিরেত কল লাগালো মাহিন। ওপাশে রিং হয়ে যাচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। শেষমুহুর্তে রিসিভ হলো। শান্ত কন্ঠের স্বরে পকপক করে উঠলো, 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, দ্রুত কথা বলে ফুটে পড়।'
মাহিনের ঠোঁট জুড়ে হাসির বিচরণ। হাসি দমিয়ে শুধালো, 'আত্নীয় স্বজন কিংবা মুরব্বি কেউ হতে পারতো। তখনো এভাবে কথা বলতে?'
'দেখেন ভাই! এটা আমার পার্সোনাল নাম্বার। বেস্ট ফ্রেন্ডস ছাড়া কেউ জানে না। তাই মুরব্বিদের কল আসার চান্স নেই। এখন ভালোয় ভালোয় নিজের পরিচয় দিয়ে দেন। কোন ভার্সিটি, কোন ইয়ার, নাম কী, ফোন নাম্বার কে দিল...'
'আমি মাহিন।'
মারজি থমকে গেল। মনে পড়লো তখনকার ভদ্রলোকের কথা। চাহনি কঠিন হলো। মুখশ্রী শক্ত হলো। কন্ঠের স্বর ঝাঁজালো, 'কী সমস্যা মিস্টার! ডিস্টার্ব করার ধান্দায় আছেন নাকি! আমার চাচা পুলিশে। কমপ্লেইম করে দিলে সোজা হাজতে বুঝলেন। ভালোয় ভালোয় শুধরে... '
'পড়াশোন কেমন চলছে!'
'আপনাকে বলবো কেন!'
'খাওয়া দাওয়া হয়েছে!'
'এই মিয়া!'
মাহিন নিঃশব্দে হাসলো, 'হু!'
'কি ব্যাপার বলেন তো!'
'ব্যাপারটা একটু ডিফিকাল্ট এক্সপ্লেইন করা। উম, এতো ঝাঁজালো কন্ঠ সচরাচর শোনা হয়না আমার। হঠাৎ শুনেছি তো। নিতে পারিনি। বুকে গেঁথে গেছে। তাই ভাবলাম আরেকবার শুনে নেই।'
কিছুক্ষণ ওপর পাশ হতে নিরবতা। পরপর টুট শব্দে কল কেটে গেল। মাহিন নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা বড্ড নাজুক, একটু লাজুক ও বটে। শুধু মুখেই সব চঞ্চলতা। এই চঞ্চল মেয়েটাকে মাহিনের দেখার স্বাদ জেগেছে। খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছে। কেমন হবে দেখতে? কন্ঠের স্বরের মতো ঝাঁজালো নাকি নরম তুলতুলে? যুবক বয়সে চুটিয়ে প্রেম করেছে কতশত। কই এমন অনুভব তো কখনো করেনি!
_________
তন্ময়ের ধৈর্যের সকল বাঁধ আজ যেমন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তার ব্যাকুলতা অরুর নরম তুলতুলে শরীরে তুফান উঠিয়ে ছেড়েছে, বিধস্ত করে ছেড়েছে। এখন মধ্যরাত। নিস্তব্ধ, নির্জন কক্ষ। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে তিনটে বিশে। মেঘেদের রাজত্ব শুরু হয়েছে আকাশের বুকে। চাঁদ হারিয়ে গিয়েছে। পুনরায় দেখা মিলেছে কালো মেঘের। চাঁদের আলো বিহীন কক্ষটি আঁধারে তলিয়ে গেল। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে বাহিরে। ভেজা ভেজা শব্দ তুলছে প্রকৃতি। খোলা জানালা দ্বারা দুমড়ে প্রবেশ করছে দমকা হাওয়া, সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা। দু'ধারে মেলে দেওয়া সাদা পর্দা গুলো শান্ত নেই। অশান্ত বেগে দুলছে। কক্ষে ফুলের সুবাস। সুবাস লেপ্টে চারিপাশে। গোলাপ, জবা এমন হরেকরকম ফুলের সুগন্ধী মিলেমিশে অনাকাঙ্ক্ষিত সুবাসের উৎপত্তি ঘটেছে।অরু অর্ধজ্ঞান। আবছায়া হয়ে সবকিছু উপলব্ধি করতে পারছে। তার নিশপিশ চোখের পাতা মৃদু কাঁপছে। ব্যথায় গুঙিয়ে উঠছে একটু পরপর। মুচড়ে উঠছে শরীর। ব্যথাতুর মায়াবী মুখশ্রী লাল বর্ণে রাঙিয়ে।
তন্ময় পাজাকোলে অরুকে তোলার প্রচেষ্টায়। দু'হাতে তুলতে নিলেই অরু অস্পষ্ট স্বরে কেঁদে দেয়। শরীরে সামান্য নড়াচড়া টুকুও সহ্য করছে না। একেকটি শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গেও ব্যথা জর্জরিত হয়ে আছে যেন। তন্ময় পুনরায় কোমর বেঁকিয়ে ঝুকে। বিছানার চাদর সহ অরুকে হুট করে ফট করে পাজা'কোলে তুলে নেয়। অরুর নাজেহাল অবস্থা! সে চোখ মেলে তাকাতে চায়। জানতে চায় তন্ময় এখনো এমন কেন করছে! তুলতুলে বিছানায় ঘুমোতে কেন দিচ্ছে না! অস্পষ্টভাবে চোখ মেলে তাকায় বহুক্ষণ পর। সে ওয়াশরুম। তন্ময় তাকে আড়ষ্টভাবে জড়িয়ে। পরপর ঠান্ডা পানি শরীর ছুঁতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। মৃদু আর্তনাদ করল, 'জ্বলছে!'
তন্ময়ের ধীর গলার স্বর 'একটু সহ্য করে নে জান।'
চোখের কোণ ভিজে গিয়েছে অরুর। শরীর জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে যেন। তন্ময়ের বাহু থেকে ছোটার আপ্রান চেষ্টা। তাকে ছোটার সুযোগ দেওয়া হলোনা। পুনরায় একজোট পানি এসে ছুঁয়ে গেল। গোসল করতে হচ্ছে! এতরাত করে! তন্ময়ের হাতে! তাও ঠান্ডা আবহাওয়ায়। লজ্জায় হতভম্ব অরুর জমিন ফাঁক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। তবে সেই শক্তিটুকুও নেই। সে'তো অজ্ঞান হবার পথে।
সোফায় শুয়ে আছে অরু। জড়সড় হয়ে। শরীরে শার্ট জড়ানো। তন্ময় শুইয়ে দিয়ে গিয়েছে কিছুক্ষণ হবে। অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পারছে ওয়াশরুম হতে আসা পানির শব্দের। তন্ময় গোসল নিচ্ছে। সময় নেয়নি বেশি। খুব দ্রুত ফিরে এসেছে। কোমরে তোয়ালে পেঁচানো। এসেই বিছানায় নতুন চাদর বিছিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে অরুকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। পাতলা কম্বল শরীরে মেলে রেখেছে। জানালার পর্দা টেনে দিল। তবে জানালা লাগালো না। মেলে রাখল। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। অরু বিছানায় হাসফাস করছে। ছটফট করছে। বড্ড অশান্ত সে। যন্ত্রণায় পেট গুলিয়ে আসছে। তন্ময় প্যান্ট পরে ফিরে এসেছে। আলগোছে অরুর পাশে বসেছে। কপালে হাত ছুঁয়েছে। ভেজা চুল মেলে দিয়েছে, 'খুব খারাপ লাগছে?'
দুর্বল হাতে অরু তন্ময়ের হাত ধরলো। হালকা টান লাগালো। অনুসরণ করে তন্ময় বিছানায় পা ওঠাল। পাশে শুয়ে পড়লো। অরু মুহুর্তে তন্ময়ের খোলা প্রসস্থ বুকে থুবড়ে লেপ্টে গেল। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। এতটুকু ব্যথা সে চুপসে সহ্য করে নেবে, যদি তন্ময় তার পাশে থাকে। তার কাছে থাকে। তাকে ধরে রাখে। তার যত্ন করে। আদর করে। তাকে আদুরে গলায় ছোট নামে ডাকে! এসবের জন্যে হলেও অরু এতটুকু কষ্ট সহস্রবার সুগভীরে মেনে নিবে। দুর্বল কন্ঠে বলল, 'খারাপ লাগছে না আমার। একটুও লাগছে না।'
তন্ময় অরুর মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছে সমানে। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। মুখশ্রী করুণ দেখাল। ব্যাকুলতা আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেপ্টে রয়েছে। বড্ড হেল্পল্যাস লাগছে তাকে। অরুর পিঠে থাকা হাতের বাঁধন দৃঢ় হল। আঁধার কক্ষে তার গলার স্বর বড়ো গভীর, 'তোর সব কষ্ট আমার হোক।'
___________
'শাবিহা!'
নরম মৃদুস্বরে নড়েচড়ে ওঠে শাবিহা। চোখ মেলে তাকায়। মুখের সামনে ঝুকে অয়ন। পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে। শাবিহা ভড়কে গেল। অয়ন শুধালো, 'খিদে পেয়েছে না!'
শাবিহাকে মুহুর্তে চিন্তিত দেখাল। হাত ঘড়িতে রাত তিনটা ত্রিশ। এতরাত করে কোনো হোটেল রেস্টুরেন্ট কি খোলা? তার খাবারের বিষয়টা মাথায় আসেনি। আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। অসহায় গলায় বলল, 'আশেপাশে হোটেল আছে? এতরাতে খোলা পাব?'
অয়ন হাসলো, 'খাবার নিয়েছি।'
চমকাল শাবিহা, 'কখন?'
'তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যখন।গাড়িটা কোথাও সাইড করে নেই। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে তাই না? আমারও। আজ জম্বেশ খেতে পারবো বুঝলে। খাবার গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে থাকবে না!'
শাবিহা অগোচরে তাকাল। মন খারাপ করল। নিঠুর অয়ন! কি সুন্দর অনায়াসে বলে দিল। কই শাবিহাও তো পর্যাপ্ত ঘুমোতে পারেনি, খেতে পারেনি। সে তো এভাবে বলতে যাচ্ছে না। অয়ন পুনরায় গাড়ি স্টার্ট করেছে। শাবিহা আলগোছে নিজের পেট ছুঁয়ে দিল। আসলেই অসম্ভব খিদে পেয়েছে তার। চোখের তৃষ্ণা মিটেছে ওমনি পেটের গহ্বর বেজে উঠছে।
বৃষ্টিস্নাত রাতে গাড়ি মেঠোপথ ধরে যাচ্ছে। কাঁচে স্পষ্ট বৃষ্টির রেখা বইছে। বাহিরে সবুজ গাছপালাদের ভেজা-ভেজা দৃশ্য। রাস্তাঘাট পরিষ্কার এবং নির্জন। আশেপাশে গাড়ি নেই। শুধু তাদের গাড়ি একান্তই ছুটে যাচ্ছে। শাবিহা দু'বার কাঁচ নামিয়েছে। অয়ন নির্বিকার ভঙ্গিতে লাগিয়ে দিয়েছে। খুলতে দিচ্ছে না। শাবিহা শক্ত চোখে তাকাল, 'কি সমস্যা!'
'অনেক সমস্যা!'
'পাগল।'
'শুধু তোমার জন্য।'
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো অয়ন। শাবিহার মুখশ্রীতে রাগরাগ ভাব লেপ্টে। তবে সত্যিকার অর্থে তার রাগ লাগছে না। বরং আড়চোখে অয়নের হাস্যজ্বল মুখশ্রী দেখে, তারও হাসতে ইচ্ছে করছে।
অন্যপাশ ফিরে নিঃশব্দে হেসেও নিল। নিস্তব্ধতা ভেঙে বলল, 'কাঁচ নামাতে দিচ্ছ না কেন!'
'এসি ছাড়া!'
'বন্ধ করে দাও।'
'বৃষ্টি আসে।'
'ফোঁটা ফোঁটা! ঝুম বৃষ্টি নামেনি তো।'
'ভিজে যাবে। ঠান্ডা লাগবে।'
'অয়ন তুমি কী খুলবে?'
এসি বন্ধ করে অয়ন কাঁচ নামিয়ে দিল শাবিহার পাশের। মুহুর্তে ঠান্ডা হাওয়া বেগতিক বেগে ছুটে এলো। চোখমুখে ছিটিয়ে দিল ঠান্ডা বৃষ্টির স্পর্শ। চোখবুঁজে এলো শাবিহার। শান্তিতে বুকে স্রোত বইছে। চোখ মেলে তাকাল। স্বতঃস্ফূর্ত নিয়ে বলল, 'গান ছাড়ো!'
অয়নের ইচ্ছে করছে গাড়িটা থামাতে। অনিমেষ নজরে শাবিহাকে দেখতে। কতটা আদুরে লাগছে সেটা কী জানে? একনজর দেখে হাত বাড়িয়ে রেডিও ছাড়লো। একটা গান প্লে হচ্ছে। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টির গান। গানটি শাবিহা বেশ কয়েকবার শুনেছে। একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখনো অনেকেই শোনে। গানের সঙ্গে অয়ন শব্দ করে গাইতে শুরু করলো,
'রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে।
এলো মেঘ যে এলো ঘিরে
বৃষ্টি সুরে সুরে শোনায় রাগিনী।
মনে স্বপ্ন এলোমেলো,
এই কি শুরু হল প্রেমের কাহিনী ।
হুট করে ঘুরে তাকাল অয়ন। দৃষ্টি ঠেকল শাবিহার অপলক মুগ্ধ নয়নে। চোখাচোখি হলো। শাবিহা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। ব্যস্ত হাতে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজতে লাগলো। অয়ন শব্দ করে হাসলো। দৃষ্টি সামনে রেখে বলল, 'তুমি একজন বেস্ট ভাই পেয়েছ শাবিহা!'
'হু? হ্যাঁ। সে তো সর্বদাই বেস্ট। সবকিছুতে বেস্ট!'
'তন্ময় ভাই আর অরুর বিয়েটা মেনে নিয়েছে? কোনো গন্ডগোল হয়নি?'
শাবিহা ভাবুক হয়ে পড়লো, 'সপরিবার রাজি। শুধু আত্নীয় স্বজন নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিকাছে। অরু ছোটো। সবে ইন্টার শেষ করেছে। বাবা এরজন্য দোটানায়। ভাবছে অরুর উপর চাপ না পড়ে যায়। পড়াশোনায় অমনোযোগী না হয়ে পড়ে!'
'অরু তো পাগল তন্ময় ভাইয়ের জন্য। ছোটাছুটি করতে থাকে পিছেপিছে। ওকে বেশ হ্যান্ডেল করতে পারে ভাইয়া। বিয়েটা মেনে নিলে তো আরও ভালো হয়। পড়াশোনায়ও দুর্দান্ত করবে।'
'এখনই না। অনুষ্ঠান করবে। বছর খানেক সময় নিবে হয়তো!'
__________
নতুন দিনের সূচনা। রাতের বৃষ্টির ছিটেফোঁটা নেই। সূর্য উঠেছে। সাদা পাতলা পর্দা ভেদ করে আসছে আলো। অতিষ্ঠ হয়ে চোখ মেলে তাকাল অরু। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো সিলিন ফ্যানের দিক বেশ কিছুক্ষণ। অদ্ভুত সব দৃশ্য মস্তিষ্কে হানা দিতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। দ্রুত পাশে ফিরল। তন্ময় নেই। কক্ষের কোথাও নেই! স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে, উঠে বসতে নিতেই লজ্জায় কুঁচকে গেল। দু'হাতে মুখ ঢেকে ফেললো। এসব কী হয়ে গেল! অরু বাকরুদ্ধ! বিমুঢ়! বড্ড অস্থির। গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ। শুকনো ঠোঁট জোড়া জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নিল। কম্বল সরাতে নিয়ে আবারো পেঁচিয়ে নিল। তন্ময়ের শার্ট শরীরে শুধু। ইশ!
অরুর বক্ষস্থলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধুকপুক ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। মস্তিষ্কে বেজে উঠছে তন্ময়ের বলা সব আদুরে কথাবার্তা। দূর হতে পায়ের শব্দ ভেসে আসছে। অরু হন্তদন্ত ভঙ্গিতে পুনরায় শুয়ে পড়েছে। কম্বল মাথা অবদি টেনে নিয়েছে। নিজেকে পুরোপুরি লুকিয়ে রেখেছে। এই মুখ সে তন্ময়ের সামনে কীভাবে নিবে! অরু বেশ উপলব্ধি করতে পারছে একজনের অস্তিত্ব। তন্ময় বিছানার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কম্বল মুখের সামনে থেকে নামাতে চেয়েছে। অরু শক্ত করে ধরে রাখল। তন্ময় ডাকল, 'অরু!'
অরু অস্পষ্ট স্বরে আওড়াল,'হু।'
জবাব দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। মুখটা এতো আগে আগে চলে কেন! তন্ময় বলল,'উঠে বোস। খেয়ে নে প্রথমে। ওষুধ খেতে হবে।'
'না।'
'আমার দিকে তাকিয়ে বল।'
অরু নাকমুখ কুঁচকে রাখল। ধমকানো হচ্ছে! রাতে, জানপ্রাণ, শোনা কে ডাকল! অরু নির্লজ্জ হলে ঠিক মুখের উপর বলে দিতো। দুষ্টু লোক! তন্ময় কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করেই সরিয়েছে কম্বল। অরু এবার দু'হাতে মুখ ঢেকে রাখল৷ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে তাকাল৷ দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলে গেল। তাজ্জব বনে অরু আবারো শক্ত করে চোখ ঢেকে ফেললো। তন্ময়ের গলার স্বর নরম হয়ে এলো,
'খারাপ লাগছে? ব্যথা হচ্ছে?'
লালিত মুখশ্রী ঢেকে রাখা অরু মাথা নাড়াল, 'অল্প!'
'ঔষধ নিলে চলে যাবে।'
অরু হাত সরাল। আঁড়চোখে তাকাল। তন্ময় প্যান্ট শার্ট পরে ফিটফাট হয়ে আছে। পারফিউম ঘ্রাণ আসছে নাকে। অরুর চোখের সামনে ভেসে উঠল তন্ময়ের নগ্ন সুঠাম দেহের দৃশ্য। লজ্জায় কাবু হয়ে পড়লো মুহুর্তে। অরুকে চমকে তন্ময় হুট করে মাথা ঝুকাল। তার ঠোঁটে শক্ত চুমু খেয়ে বসলো আচমকা। বড়সড় চোখে তাকানো অরুর ঠোঁটে আরেকদফা চুমু পড়লো।
ব্রেকফাস্ট খাওয়া হয়েছে। ঔষধ তন্ময় নিজ হাতে এগিয়ে দিয়েছে। অরু প্রশ্ন করল, 'কীসের ওষুধ?'
'ব্যথার।'
অরু মুখে পানি নিয়ে খেল। পরপর আরেকটি ওষুধ এগিয়ে দিল তন্ময়। অরু এবারও প্রশ্ন করল, 'এটা কীসের ওষুধ?'
'চুপচাপ খা।'
বাইরে থেকে ইব্রাহিমের চওড়া গলা শোনা যাচ্ছে, 'তন্ময় তাড়াতাড়ি আয়। দেখে যা...'
'আসছি।'
তন্ময় পুনরায় অরুকে বলল, 'খা।'
'খাচ্ছি তো।'
'খেয়ে নে, আমি একটু আসছি।'
টেবলেট তালুতে দিয়ে দরজার দিক অগ্রসর হলো। দরজার সামনে থেকে ফিরে তাকাল। পুনরায় খেতে বলে গেল৷ এতো তাড়া কীসের! অরু টেবিলের দিক এগোল৷ টেবলেটের পাতা রাখা। এখান থেকেই ওষুধ বের করেছিল। অরু নাম দেখল! কী মনে করে গুগলে নাম লিখে সার্চ করলো। 'বার্থ কন্ট্রোল'!
সময় নিয়ে পড়লো। সবকিছু জেনে সে আর টেবলেট খেল না। আলগোছে জানালা দিয়ে ফেলে দিল।
.
.
.
চলবে...........................