!!১১৫!!
দুদিন যাবত সার্থক মাহার সাথে কথা বলছেনা। সার্থকের এমন অদ্ভুত আচরণে বিস্মিত মাহা। ছোট একটা কথাই তো বলেছে। এত রাগ করার কি আছে! এত বয়সে এসেও এমন বাচ্চাদের মতো আচরণ কি মানুষ কে মানায়! মাহা তো নিজেও একটা খারাপ পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। সার্থক কি একটুও বুঝতে পারছেনা মাহার বর্তমান পরিস্থিতি। দুয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে মাহা। সার্থক কোনো কথারই জবাব দেয়নি। তাই মাহাও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। সব সময় এসব অদ্ভুত আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এই তবে ভালোবাসা! বাগানের এককোণে একটা স্টিলের তৈরি দোলনা রয়েছে। দোলনায় বসে সামনে তাকালে নয়নাভিরাম চমৎকার। দূরে কেবল পাহাড় আর পাহাড়ের সারি। নেশা ধরে যায়। প্রকৃতির মাঝে বিলীন হতে মন চায়। মাহা আনমনে বসে আছে দোলনায়। আজ মন বিষণ্ণ। তাই শত চেষ্টা চালিয়েও প্রকৃতি তে বিলীন হতে পারছেনা মাহা। সার্থক বাসায় নেই। সকালেই বেরিয়ে পড়েছে। নাস্তাও খেয়ে যায়নি। তাই মাহাও খায়নি। মাহা বিষণ্ণ গলায় গুণগুণ করছে রবিঠাকুরের গান,
আরো আঘাত সইবে আমার, সইবে আমারো।
আরো কঠিন সুরে জীবন-তারে ঝঙ্কারো ॥
যে রাগ জাগাও আমার প্রাণে বাজে নি তা চরম তানে,
নিঠুর মূর্ছনায় সে গানে মূর্তি সঞ্চারো ॥
লাগে না গো কেবল যেন কোমল করুণা,
মৃদু সুরের খেলায় এ প্রাণ ব্যর্থ কোরো না।
জ্ব'লে উঠুক সকল হুতাশ, গর্জি উঠুক সকল বাতাস,
জাগিয়ে দিয়ে সকল আকাশ......
চরণ পূর্ণ করার আগেই চুপ করে মাহা। কেউ কি পিছনে আছে? বাজ পাখির মতো তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে কেউ দেখছে কি তাকে? বাতাস বইছে শো শো করে। মাহার হৃদপিণ্ড থমকে আছে অজানা কোনো আতঙ্কে। কেউ কি আছে! মনে হচ্ছে এগিয়ে আসছে মাহার দিকে। একেবারে কাছে। আর একটু হলেই ছুঁয়ে ফেলবে। মাহা হকচকিয়ে যায়। সেই ব্যাক্তি হাত বাড়াচ্ছে। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ...
মাহা পিছন ফিরে চায়। ডেভিড দাঁড়িয়ে। মাহা দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কালো বৃহদাকার দানবের মতো এক প্রাণ দাঁড়িয়ে মাহার সামনে। মাহা নিজের ওড়নাটা মাথায় টেনে দেয়। ডেভিড এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মাহার পানে। মাহা চলে আসতে নিলে ডেভিড পিছু ডাকে,
"এই শুনুন"
কি বিকট আর অদ্ভুতুড়ে গলার সুর। মাহা পিছু ফিরে বলে,
"আমাকে বলছেন?"
"হ্যাঁ"
বলেই মাহার সর্বাঙ্গে একবার চোখ ঘুরিয়ে নেয় ডেভিড। মাহা আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে। বিরক্তি এবং রাগ উভয়ের সংমিশ্রণ হচ্ছে তার।
"আপনি এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আপনার কি বলার কিছু আছে?"
এমন কথায় কিছুটা থতমত খায় ডেভিড। এশিয়ার মেয়েদেরকে তার বরাবরই ভালোলাগে। এই মেয়ে যেমন মায়াবী তেমনই তার দেহের গঠন। হিংস্রাত্মক কামনায় হাত কচলায় ডেভিড। মাহা কোনো উত্তর না পেয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসে। এই বাড়ির মানুষগুলো বড়ই বিচিত্র। মেরি, নাহার, মুইংচিন এরা হঠাৎ করেই কোথায় যেন উদাও হয়ে যায়। কি যেন রহস্যময় আবহাওয়া বিরাজ করে চতুর্দিকে। ডেভিড দৌঁড়ে যায় মেরির ঘরে। দরজা আটকে দেয়। মেরি তখন সবে গোসল করে বেরিয়েছে। ডেভিড মেরিকে শক্ত করে জড়িয়ে এক উত্তপ্ত চুমো খায়। তারপর পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে মেরির উপর। মেরি প্রথমে খানিক অপ্রস্তুত হলেও পরে ডেভিডের ডাকে সাড়া দেয়। নিজের কামনা মিটিয়ে যখন ডেভিড ফিরে আসতে চাইলো তখন মেরি জড়িয়ে ধরে ডেভিড কে। ডেভিড এক ঝটকায় সরিয়ে দেয় মেরিকে। প্রত্যেকবারের মতো এবারেও কষ্ট পায় মেরি।
"আমাকে কেন বারবার ব্যবহার করো তুমি? আমি কি দোষ করেছি?"
"চুপ!"
"কেন চুপ করবো আমি!"
মেরি চিৎকার করতে নিলে ডেভিড তার মুখ চেপে ধরে। রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
"তোমরা সাদা চামড়ার মানুষ। আমি সাদা চামড়ার মানুষদের ঘৃণা করি।"
"তাহলে বারবার আমার কাছে কেন আসো?"
"চাহিদা মেটাতে। তুমি আমার ভোগ্যবস্তু।"
"খবরদার ডেভিড। মুখের ভাষা ঠিক করো।"
মেরি কে ছেড়ে দিয়ে হা হা করে হেসে উঠে ডেভিড। মেরির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
"মাহা সকল সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে।"
বলেই শার্ট হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায় ডেভিড। পাশে থাকা ফুলদানিটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে মেরি। মাহা, মাহা আর মাহা। লুবান, রবার্ট, সার্থক সবার কেবল একজনকে নিয়েই কেন এত আগ্রহ! কি আছে এই মেয়ের! এখন আবার ডেভিড যুক্ত হলো। নিভা ঠিকই বলতো মাহা মেয়েটা ধ্বংস ডেকে আনবে। এত বছরের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এই মেয়ের কারণে। যেই ধ্বংসের খেলা শুরু হয়েছে অনেক আগেই এবার সেটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। হুট করেই মাহার প্রতি এক ক্ষোভ জন্ম নেয় মেরির।
!!১১৬!!
"কোকিল রে আমার রাতুল কোথায় যেন হারিয়ে গেছে!" ফোনের উপারে কথাটা বলেই কেঁদে উঠে রুমানা।
"মানে! কি সব বলছিস রুমানা!"
বিস্মিত কন্ঠস্বর মাহার।
"প্লিজ, মাহা। তুই একটু রেজওয়ান ভাইকে আসতে বল। চব্বিশ ঘণ্টা না হওয়ায় পুলিশ কেস নিতে চাচ্ছেনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মাহা। অনিক পাগলের মতো সারা শহর খুঁজে এসেছে। কোথাও পায়নি আমার রাতুল কে।"
"শান্ত হ প্লিজ। আমাকে একটু বল কখন হারিয়েছে রাতুল?"
"প্রি-স্কুল থেকে প্রতিদিন অনিকই রাতুলকে নিয়ে আসে। আজকে অনিকের একটু লেট হয় যেতে। গিয়ে দেখে রাতুল নেই। সিকিউরিটি গার্ডও বলতে পারছেনা রাতুল কোথায় গেছে। এখন রাত দশটা আমার মানিক কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কি করছে, কেমন আছে কিছু জানিনা। পুলিশ স্টেশনে গেলাম তারা কিছুই করছেনা। তুই প্লিজ রেজওয়ান ভাইকে কল করে বল উনি যেন সিলেট পুলিশ স্টেশনে একটু যোগাযোগ করেন।"
"আচ্ছা, তুই টেনশন করিস না। আমি দেখছি কি করা যায়।"
রুমানার কল কেটে রেজওয়ান কে কল দেয় মাহা। রেজওয়ানের মোবাইল বন্ধ। খোলা থাকবে কি করে সে তো এখন ফ্লাইটে। বিশেষ প্রয়োজনে কয়েকমাসের জন্য বিদেশ যাচ্ছে। এদিকে বারবার ফোন দিয়ে মোবাইল বন্ধ পাচ্ছে মাহা। তাই সাবিনা বেগম কে কল করে মাহা। রেজওয়ানের বিদেশ যাত্রার খবর শুনে চিন্তায় পড়ে যায় সে। এখন কি হবে! রুমানার বাড়ির এড্রেস মাহার জানা আছে। তাহলে কি সার্থক কে একবার বলবে নিয়ে যেতে? বারান্দা থেকে ঘরে ফিরে মাহা। সার্থক কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে হাসপাতাল থেকে। সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে সার্থক।
"শুনছেন?"
কোনো জবাব নেই। মাহার হঠাৎ কি যে হলো। প্রচন্ড রাগে সে বললো,
"রুমানার ছেলে রাতুল হারিয়ে গিয়েছে। আপনি কি আমার সাথে যাবেন? নাকি আমি ড্রাইভার কে নিয়ে চলে যাবো?"
"কি!"
অবাক হয় সার্থক। সেসব দেখার সময় মাহার নেই। ও ওড়না মাথায় পেচিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সার্থকও ছুটলো মাহার পিছুপিছু। কিন্তু মন বলছে অন্য কথা। তবে কি সার্থকের ধারণা সঠিক! যদি এর পিছনে সত্যতা পায় তাহলে কথার খেলাপ করার জন্য ভয়াবহ শাস্তি পাবে সেই ব্যাক্তি।
.
.
.
চলবে..............................