মুক্তি - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - অনু গল্প


#মুক্তি 
#অনু_গল্প 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 



অন্ধকার রাত। তবে শহরের সোডিয়াম আলোর জন্য সবকিছুই প্রায় দিনের মতো লাগছে। সিয়াম শহরের ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে পাশে চলে যাওয়া তুলনামূলক ছোট একটা রাস্তায় পা বাড়ালো। হাটঁতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছে সে।আশেপাশে ঘন জঙ্গল।শহরের এই দিকে ছোট একটা জঙ্গল আছে। এখানে তেমন মানুষ চলাচল করে না। সিয়াম আরো সামনে এগিয়ে যায়। দেখতে দেখতে সে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে গেছে । সামনে তাকাতেই দেখে ছোট একটা কুটির। আর সেই কুটিরের ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে অদ্ভুত সব মন্ত্র পড়ার আওয়াজ।সিয়াম কোন কিছু না ভেবেই কুটিরের ভিতর প্রবেশ করে।সেখানে গিয়ে তার পরিচিত মুখ মায়াকে দেখতে পায়। মায়া ঠিক কুটিরের মাঝ বরাবর বসা আর তার সামনে যজ্ঞের আগুন জ্বলছে। যজ্ঞের আগুনের ডান পাশে কয়েকটা খুলি আর বাম পাশে সিঁদুর। কুটিরের আরেক পাশে কয়েকটা কঙ্কাল আর কালো গোলাপ রাখা আছে। সিয়াম এসব দেখে কিছু না বলেই পালিয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু তখনি মায়া ইশারা করতেই দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। সিয়াম ভয়ার্ত কন্ঠে মায়াকে জিজ্ঞেস করে এসব এখানে কি হচ্ছে? আর কোথায় মিরাজ! মিরাজ তাদের আরেক বন্ধু।
সিয়াম দোকানে বসে পাড়ার ছেলেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।এমন সময় মায়া কল করে জানায় মিরাজ আর সে একটা নির্জন জায়গায় সময় কাটাতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কিছু লোকজন তাদের আটকে রেখেছে।এখন ব্যাপারটা জানাজানি হলে মায়ার মানসম্মান কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। সে কারণে সিয়াম কাউকে না জানিয়ে বন্ধুদের বিপদ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্য এখানে চলে আসে। মায়া অট্টহাসি দিয়ে একটা কঙ্কাল দেখিয়ে বলে ওটা মিরাজের কঙ্কাল। এবার সিয়ামের কঙ্কাল পালা!
আসলে মায়া কালো জাদু চর্চা করে। তার গুরু তাকে বলেছে যদি এগারো জন একুশ বছরের যুবককে শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দিয়ে তাদের রক্তে গোসল করতে পারে তাহলে সে চির অমরত্ব লাভ করবে। আর অমরত্বের কারণে পৃথিবীতে কত অপরাধ হয়েছে তার কি হিসাব আছে! সিয়াম মায়ার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে । দৌঁড়ে পালানোর শক্তিও তার নেই। মায়া তার সম্মোহন শক্তি দিয়ে তাকে স্থীর করে রেখেছে। মায়া যখনই সিয়ামকে বলি দিতে অগ্রসর হতে যায় তখনই যজ্ঞের আগুনের মধ্যে থেকে কেমন ধোঁয়ার কুন্ডলী বের হতে শুরু করে। মায়া কিছুটা ভড়কে যায়। সিয়ামও বেশ অবাক হয়।দেখতে দেখতে ধোঁয়ার কুন্ডুলির ভেতর থেকে অদ্ভুত দেখতে একটা দানব বের হয়ে আসে। ভয়ংকর তার চোখের দৃষ্টি! চোখের ভিতর যেন আগ্নেয়গিরির লাভা দাউদাউ করে জ্বলছে। তার সমস্ত শরীর ছাই রঙের।পিঠে কুঁজো হয়ে আছে মাংস পিন্ড আর তার পাশ থেকে বের হয়েছে কয়েকটা কাঁটা।সবচেয়ে ভিন্ন ব্যাপার তার মাথা। শরীরের তুলনায় তার মাথা অনেকাংশেই ছোট। আর সেই ছোট মাথায় বেশ বড় বড় দুটি কান।কি অদ্ভুত চেহারা! মুখের ভিতরের হিংস্র দাঁতগুলো তাকে দেখতে আরো ভয়ানক করে তুলেছে।কুঁজো হয়ে থাকার কারণে তার হাত দুটো বেশ লম্বা দেখাচ্ছে। আর সেই হাতে তিনটা করে আঙুল। মায়া মনে মনে ভাবছে তাহলে কি এই কিম্ভুত প্রাণীটিই তার উপাসক শয়তানের কোন রূপ? সিয়াম আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়। 
.
পরেরদিন সকালে, 
ড. থমাস ধোঁয়া ওঠা গরম কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর পত্রিকার কলামে চোখ বুলাচ্ছিলেন।
"শহরের পাশের জঙ্গলের ভিতরের কুটির থেকে এক তরুণীর বিভৎস লাশ উদ্ধার। পুলিশ লাশের আশেপাশে বেশ কিছু কঙ্কাল পায়। সেই সাথে বেশ কিছু তন্ত্র সাধনার সরঞ্জাম! "
মি. থমাসের ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। তিনি হাতের পত্রিকাটা পাশের টেবিলে রেখে উঠে স্টোর রুমের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।মি.থমাস একজন চিত্রশিল্পী। স্টোর রুমে তার অধিকাংশ ছবি থাকে।সে স্টোর রুমে ঢুকে আস্তে ধীরে একটা ছবির সামনে দাঁড়ায়।এখানকার সব ছবিতেই পর্দা দেওয়া থাকে।মি. থমাস তার সামনে থাকা ছবির উপর থেকে পর্দা সরিয়ে মুচকি হেসে বলে ওয়েল ডান!
ছবিতে থাকা অদ্ভুত দানবটি মি.থমাসের উদ্দেশ্যে বলে কতকাল এই অভিশপ্ত পেইন্টিং -এ আটকে থাকতে হবে? আর কত জন কালো জাদুকরকে শাস্তি দিলে সে মুক্তি পাবে! যদি মি.থমাস তাকে এরকম কিম্ভুত চেহারা দিয়ে না আঁকতো তবে সে এভাবে অভিশপ্ত হতো না। সে কেন তাকে শয়তানের উদ্দেশ্যে উপহার দেওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছিল! মি.থমাস আবারও অট্টহাসি দিয়ে বলে আর মাত্র একজন কালো জাদুকরকে হত্যা করলেই সে মুক্তি পাবে। কিন্তু আফসোস তার শরীরের রঙ ইতোমধ্যে হালকা হয়ে গেছে। আর যতক্ষণ না মি. থমাস কোন প্রাণীর রক্ত দিয়ে তার ছবিতে রঙ না করবে সে বাহিরে যেতে পারবে না। আর মি.থমাস সেটা কখনোই করবে না। কারণ থমাস এই প্রাণীটিকে সামনের অমাবস্যায় শয়তানকে উপহার দিয়ে অনেক বড় একটা শয়তানি শক্তি লাভ করতে চায়।মি.থমাস স্টোর রুম থেকে বের হতে উদ্যত হতেই দানবটি হো হো করে হেসে ওঠে। মি.থমাস কিছু বলার আগেই দানবটি তার দানবীয় রূপ দেখায়।নিমিষেই তার ধারালো নক দিয়ে মি.থমাসের ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়।আর সেই সাথে সে মুক্তি পায় অভিশপ্ত পেইন্টিং থেকে। দানবটি হাওয়ায় উবে যাওয়ার আগে মি.থমাসের কানে ফিসফিসিয়ে বলে, শিল্পী আপনি কিন্তু শেষ ছবি আঁকলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন