!!১১৯!!
সিলেটের আবহাওয়া বড়ই অসহনীয় হয়ে উঠেছে রুমানার কাছে। জিদান তার কলিজাকে মেরে ফেলেছে! কি করে পারলো! এত ছোট একটা বাচ্চাকে মেরে ফেলতে। সম্পত্তির লোভ কি এতটাই তীব্র! অনিক রুমানাকে নিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছে। আজ একমাস হলো। সেদিন জ্ঞান ফিরার পর থেকে রুমানা খুবই পাগলামি করছিলো। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বললেন এখান থেকে দূরে কোথাও রুমানাকে নিয়ে যেতে। তারপরই রুমানাকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় অনিক। মাহা এই ঘটনায় খুবই ভেঙে পড়েছে। এই অচেনা শহরে একজন ভালো বন্ধু ছিলো। সেও ছেড়ে চলে গেলো। রাতুলকে যেন মস্তিষ্ক থেকে সরাতেই পারছেনা মাহা। ছোট বাচ্চাটা। কি মায়াবী! দীর্ঘশ্বাস আসে মাহার বুক চিড়ে।
এই বাড়ির ছাদটা ভিষণ সুন্দর। নাহার বাড়ির খেয়াল রাখে। ছাদটা মনোরম করে সাজিয়েছে নাহার। চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা। ছাদের মাঝখানে দোলনা রাখা। মাহা প্রায়শই আসে ছাদে। সার্থক বাসায় না থাকলে একাই সময় কাটে মাহার। কখনো ঢাকা থেকে আনা বই পড়ে, কখনো খাঁচায় বন্দী পাখিগুলোর সাথে কথা বলে। বাইরে বের হতে বেশি একটা ইচ্ছে করেনা। ডেভিডের নজর ভালো না। কেমন চোখে যেন তাকায়। সেই লুবানের মতো নোংরা নজর। পড়ন্ত বিকেল। স্বচ্ছ হিমেল হাওয়া বইছে। আকাশটা একদম রক্তবর্ণ। লাল টকটকে হয়ে আছে। কিছু পাখি ফিরছে নীড়ে। মাহা দোলনায় বসে আকাশ পানে চেয়ে আছে। নিজেকে অপয়া মনে হয়। সে যার সংস্পর্শে যায় তারই ক্ষতি হয়। প্রথমে চৈতি, এবারে রুমানা। সার্থককেও বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারেনি। লোকটা দ্বিতীয় বিয়েও করতে চায় না। একবার বলার পরই কতদিন কথা বলেনি। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে গা শিউরে ওঠে মাহার। অন্ধকার হয়ে এসেছে। আকাশের রক্তিম আভা সরে কালোর দল হানা দিচ্ছে। মাহা পিছনে না ফিরে উঠে দাঁড়ায়। আজকাল মুইংচিন কে বাসায় দেখা যাচ্ছেনা। খাজা নামের বিশাল দেহী লোক আর ডেভিডের হরহামেশাই চলাচল ঘটে বাড়িতে। মূলত মাহা এ কারণেই বাইরে বের হয়না। ডেভিড কে সুবিধার মনে হয়না তার। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ঝাঁপটে ধরলো মাহাকে। মাহা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিশালদেহী মানবটার থেকে কোনো ক্রমেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা মাহা।
"অনেকদিন পর পেলাম তোমায়। জানি মৃত্যু আমার হবেই। তোমাকে ছুঁয়ে দিলে সে আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু তারপরও একবারের জন্য হলেও তোমাকে চাই।"
ডেভিড? ডেভিডের কন্ঠস্বর না এটা। মাহা চিৎকার করে উঠে।
"আমাকে ছেড়ে দিন।"
হা হা করে হেসে উঠে ডেভিড। আজ মাহাকে সে কোনোক্রমেই ছাড়বেনা। মাহা নিজেকে মুক্ত করতে চাইছে। তবে বিশালদেহী মানবের কাছে মাহা যে বড়ই অসহায়। মাহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মাহার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ায় ডেভিড। মাহা শত চেষ্টা করেও তাকে সরাতে পারছেনা। মাহার দুটো হাত ডেভিড ধরে রেখেছে। এক পর্যায়ে মাহা নিজের হাঁটু দিয়ে ডেভিডের গোপনা'ঙ্গে আঘাত করে। ডেভিড একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে মাহাকে ছেড়ে দেয়। ভিষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। মাহা দৌড়ে ছাদের দরজার কাছে যায়। দরজা খোলার কালে ডেভিড দৌড়ে আসে। মাহার উড়না মাটিতে পড়ে আছে। ডেভিড মাহার থ্রি-পিসের হাতাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো। মাহার উপর প্রবল আক্রমণ করে সে। মাটিতে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ডেভিডের হাত মাহার পায়জামা স্পর্শ করেছে। যেকোনো সময় টেনে ছিঁড়ে ফেলবে। মাহার মুখ অপর হাত দিয়ে ধরা। মাহা চিৎকার করতে পারছেনা। কেবল গোঙাচ্ছে। তার মন চিৎকার করে বলছে,
"সার্থক। সার্থক কোথায় আপনি? আমাকে রক্ষা করুন সার্থক।"
মাহার ধস্তাধস্তিতে রাগ উঠে যায় ডেভিডের। থাপ্পড় লাগায় মাহার গালে। হলদে ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে উঠে। মাহা আর পারেনা। শরীর ছেড়ে দেয়। আজ হয়তো ও আর নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারবেনা। তখনই ডেভিডের মুখে তীব্র আক্রোশে ঘুষি লাগায় কেউ। মাহার উপর থেকে ছিটকে সরে যায় ডেভিড। লাল টকটকে হয়ে আছে সার্থকের চোখমুখ। মাহা সার্থক কে দেখার সাথে সাথেই জ্ঞান হারায়।
ডেভিড হকচকিয়ে যায়। শরীর নরম হয়ে আসে তার। মাথা ভনভন করে ঘুরছে। নিজের মৃত্যু নিজের চোখে দেখতে পারছে সে। পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে আঁকড়ে ধরে সার্থক। কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
"বুক কাঁপলো না একবারও?"
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে ডেভিডের। হঠাৎ সে টের পায় তার গলায় সূক্ষ্ম আঘাত। ছাদের কৃত্রিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ডেভিড। সার্থক মাহাকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। জামা পাল্টে দেয় মাহার। এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মাহার ঘুমন্ত মুখমণ্ডলের পানে। মাহার চুলে হাত বুলায়। সবকিছু ধ্বংস করে দিতে মন চাইছে তার। তার ফুল, তার অলকানন্দা। ডেভিড কি করে পারলো তার ফুলে আঘাত করতে!
"আমি তোমার জন্য আমার সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিবো, অলকানন্দা।"
মাহার কপালে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ায় সার্থক। একটা ইনজেকশন পুশ করে মাহার হাতে।
__________
ওয়েন্ডিগো এক তীব্র মাংসাশী প্রাণী। নিজের শিকার কে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে আহারেই তার সুখ। আজ বহুদিন বাদে মানুষের মাং'স গ্রহণ করে ছায়ামানব। বুক চিড়ে টকটকে লাল হৃদপিণ্ডে কামড় বসায় সে। নিজের শত্রুর মাং'স গ্রহণে সে যে বড়ই মজা পায়।
!!১২০!!
"আমার ডেভিড কোথায়?"
মেরির চিৎকারে ঠোঁটে হাত দিয়ে চুপ থাকতে বলে সার্থক। মেরি আক্রশে ফেটে পড়ে।
"কেন চুপ থাকবো আমি? আমার ডেভিড কে আমার ফেরত চাই।"
"ডেভিডের নাম আরেকবার উচ্চারণ করলে কি যে হবে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।"
সার্থকের ঠান্ডা আর শান্ত বুলিতে থমকে যায় মেরি। কোনো কথাই সে আর বলার মতো পায় না। সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে পড়ে মাহার উপর।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে মাহা। মাথাটা ভিষণ ভারী লাগছে। সে গতকাল বিকেলে ছাদে দোলনায় বসেছিলো। পরে? পরে কি হলো? কোনোভাবেই মনে পড়ছেনা।
"মাহা, উঠে গেছো। কাল তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে। আমি ছাদে উঠে দেখি তুমি দোলনা থেকে নিচে পড়ে আছো।"
সার্থকের কথায় অবাক হয় মাহা। সে নিচে পড়ে গিয়েছিলো? তার তো মনে পড়ছেনা!
"আমার কিছুই মনে পড়ছেনা সার্থক।"
"মনে থাকবে কি করে? জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিলো ম্যাডাম। আমাকে অশান্তিতে রেখে কি মজা পান বলেন তো? আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম জানো তুমি?"
মাহার নাকটা আলতো করে টেনে দিয়ে বলে সার্থক।
"যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি স্যূপ নিয়ে এসেছি।"
"হুম"
.
.
.
চলবে............................