প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৫৫ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


দুপুর গড়াতেই পরিষ্কার আকাশে মেঘ জমেছে। কালো মেঘেদের দল ভেসেছে। তাদের নিয়ে নানান জাতীয় ঐক্য বানানো যেতেই পারে। হুটহাট মেঘ ডাকছে তীব্র শব্দে। ভাপসা গরম খানা এখনো উপলব্ধি করার মতো। রোদের তাপমাত্রায় জমিন এখনো ভ্যাপসা গরম। মৃদু বাতাস বইছে। মারজি বাইরে নজর রাখতে চাচ্ছে। তবে প্রকৃতি আর তার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, জানালার কাঁচ৷ আগ বাড়িয়ে কথা বলবে কী লোকটার সাথে? নামাতে বলবে কী কাঁচটা? কাঠকাঠ অবস্থায় বসা মারজিকে পরখ করে নিয়েছে মাহিন। হুইলের হাতচারণ কমে এলো। ঘুরে তাকাল। আন্দাজ ধরে প্রশ্ন করল, 'কোনো সমস্যা? ফিল ফ্রি টু টেল মি!'  

মারজি ছোট্ট করে বলল, 'কাঁচ নামানো যায়?'
'এ.সি ওন করা তো।'
'বন্ধ করে দিন।'
'আর ইউ শিয়র?'

মারজি মাথা দোলাল। মাহিন এ.সি বন্ধ করে কাঁচ নামিয়ে দিল। মারজি প্রাণ খুলে শ্বাস নিল। সময় নিয়ে ফিরে তাকাল। মনে পড়লো তার কাছে টাকা নেই। মাত্র একশো আছে। রিক্সা ভাড়া। সম্পুর্ন দুহাজার টাকা ভেঙেছে আজ৷ রেস্তোরাঁয় গিয়েছিল। সাথে টুকটাক কেনাকাটা করলো। এখন? থতমত গলায় আওড়াল, 'আমার কাছে কিন্তু টাকা নেই। লাঞ্চ কী আপনি করাবেন? আমি কিন্তু হাফ পার্সেন্ট ও দিতে পারবো না।'

মাহিন মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। দৃঢ় দৃষ্টিতে মারহিকে দেখছে। তার এই গাঢ় চাহনি মারজির হজম হলো না৷ অপ্রস্তুত বোধ করলো। এভাবে তাকানোর কী আছে? অন্যকেউ হলে চওড়া গলায় ধমকে পুরো গুষ্টি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলত সে। কিন্তু সামনের এই সুদর্শন পুরুষকে যে তার পছন্দ হয়েছে। লম্বাচওড়া, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। একদম তার মনের মতো। বয়স'টাও মানানসই। তার তো সর্বদাই একটু বয়সী পুরুষের সখ ছিলো। ম্যাচিউরড অ্যান্ড কাম কালেক্টেড টাইপ। ইশ, এক দেখায় এতটা পছন্দ করে বসেছে যে, এখন মারজির একটু ভয় লাগছে। তাকে আবার রিজেক্ট করে দিবে নাকি? দিতেও পারে! তার চরিত্র তো ফুলের মতো পবিত্র। এই পবিত্র চরিত্র দেখে না আবার পালিয়ে যায় লোকটা! এইযে এতো করে একটু ঠিকঠাক সুচরিত্রবান হতে চাচ্ছে, পারছে কই? কথায় আছে স্বভাব যায় না ইহকালে। মারজি মুখশ্রী অন্ধকার করে রেখেছে আনমনে। ভাবনায় গভীর ভাবে বিভোর। মাহিন আনমনে হাসলো। দীর্ঘ হাসি। মারজিকে খুব করে দেখে নিয়ে বলল,'আজ নাহয় আমি দিলাম।'

মাথা দোলাল মারজি। পুনরায় বাইরে নজর রাখল। মারজির দৃষ্টির আড়াল হতেই মাহিন নিঃশব্দে হাসলো। ঝকঝকে সুন্দর দাঁত গুলো দৃশ্যমান। চোখের কোণ ডুবে গিয়েছে, ভাজে ভাজে৷ বিড়বিড়িয়ে আওড়াল, 'ইন্ট্রেস্টিং'। 
________
অয়ন বাড়ি ফিরছে না বেশ কিছুদিন ধরে। নিজের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। ঠিক তাদের অফিসের সামনে। আপাতত সেখানেই থাকে। লতা বেগম ছেলের জন্য কেঁদেকেটে অস্থির। খাওয়া দাওয়া একপ্রকার ছেড়ে দিয়েছেন। ঠিকমতো ঘুমোচ্ছেন না। সৈকত সাহেব হাজারো চেষ্টা করেও স্ত্রীকে সামলাতে পারছেন না। দুর্বল শরীর নিয়ে বিকেল দিকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন লতা বেগম। বাড়িতে ডাক্তার ডাকা হলো। সেইমুহুর্তে সৈকত সাহেব ছেলেকে খবর দিলেন। অয়ন ফিরতে সময় নেয়নি। হন্তদন্ত ভঙ্গিতে ছুটে এসেছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার সে মায়ের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তার তখনো বসে পরিক্ষা করছেন লতা বেগমকে। কিছু ঔষধ পত্রের নাম লিখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তাকে এগিয়ে দেবার জন্য সাথে গেলেন সৈকত সাহেব। অয়ন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। একমনে চেয়ে থাকলো মায়ের পানে। জন্মদাত্রী মায়ের এই অবস্থা মানতে পারলো না। দরজায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখল। কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাল। সামনে তার বাবা দাঁড়িয়ে। মাথাটা বাবার কাঁধে এলিয়ে দিল। সৈকত সাহেব ছেলেকে আস্থা দিলেন, 'ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।'

অস্বাভাবিক করুণ গলা শোনালো অয়নের, 'আমি খুব ভালোবাসি শাবিহাকে বাবা। আই কান্ট লিভ উইদাউট হার!'
'আমি জানি তো।'
'মা কেন বুঝতে চাচ্ছে না!'
'বুঝবে। তুই ভেঙে পরিস না!'

লতা বেগমের চোখজোড়া নড়েচড়ে ওঠে। বন্ধ চোখের কোণ ঘেঁষে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে ঘুরে শুলেন। অস্পষ্ট ভাবে চোখ মেলে তাকালেন। দৃষ্টি নিবদ্ধ দেয়ালে। ভাবনায় মশগুল তিনি। ছেলের কথাগুলো কানে বেজে উঠছে। মস্তিষ্কে পৌঁছে দিচ্ছে। 

অয়ন নিজ হাতে খাবার নিয়ে এসেছে। মায়ের পাশে বসেছে। প্লেট হাতে সে কিছুক্ষণ বসে রইলো। তারপর খুব ধীর স্বরে ডাকে, 'মা!'

লতা বেগমের জবাব নেই। তবে চোখ মেলে তাকালেন তিনি। অয়ন হাত বাড়ায়, 'উঠো। আমি খাইয়ে দেই।'

লতা বেগম উঠে বসলেন দুর্বল শরীর নিয়ে। চুপচাপ তাকিয়ে থাকলেন ছেলের পানে। অয়ন মুঠো ভাত এগিয়ে ধরতেই মুখ খুললেন। খেয়ে নিলেন চুপচাপ। সৈকত সাহেব হাসিমুখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকলেন। তিনি এখনো অফিস কোর্টে। হয়তো অফিস যাবেন। লতা বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, 'তৈরি হয়ে নাও। আমরা বেরোবো।'

সৈকত সাহেব ভুরু জোড়া কুঁচকে শুধালেন, 'কই বেরোবা?'
'শাহজাহান বাড়ি। শাবিহার হাত চাইতে। আমার ছেলের জন্য।'

অয়নের হাত থমকে গেল। ফট করে নজর তুললো। মায়ের নরম দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললো। লতা বেগম মলিন মুখে হাসলেন, 'আর দেরি নয়। আমরা আজই যাবো।'

অয়ন চমকে। পলকহীনভাবে তাকিয়ে। যেমন কথাগুলো এখনো সে হজম করতে পারিনি। সৈকত সাহেব শব্দ করে হাসলেন। কক্ষ জুড়ে তার হাসির বিচরণ বয়ে চলেছে। অয়ন চোখ বুঝল। স্তব্ধ খেয়ে বসে সে। হুট করে লতা বেগমকে জড়িয়ে নিল শক্ত করে। 'ধন্যবাদ মা।'
_________
তন্ময় ঢাকার বাইরে যাবে। কাজের সূত্রে। দুদিনের জন্য। রাতে বেরোবে। নয়টার আগ দিয়ে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে পাঁচটায়। অফিস থেকে মাত্রই ফিরেছে। টুকটাক কাজ গুলো বাড়িতে করে নিবে। বসার কক্ষে এসেই, সোফায় শরীর ছেড়ে বস পড়লো। চারিপাশে তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে নিল। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামতে থাকা দীপ্ত বিষয়টি খেয়াল করেছে। ফুটবল হাতে সে বাইরে যাচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে। যাবার পূর্বে তন্ময়কে তথ্যসূত্র দিয়ে গেল,'অরু আপু ঘরে। শুয়ে আছে। শরীর ভালো না। লাঞ্চও করেনি।'

তন্ময়ের শান্ত চেহারা থমথমে হয়ে উঠলো মুহুর্তে। কপালের মধ্যস্থানে ভাজ পড়ল। উঠে দাঁড়ালো। জবেদা বেগম রান্নাঘরে ছিলেন। গ্লাস করে পানি নিয়ে এসেছেন ছেলের জন্য। তাকে পেতেই তন্ময় শুধালো, 'অরু সারাদিন নাকি খায়নি! অসুস্থ?'
'কত করে ডেকে আসলাম! মেয়েটা কথা বলছে কই? বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ কী হলো! তোর চাচ্চু ডাক্তার ইমরানকে আনবে আজ। মেয়েটাকে দেখাতে হবে!'
'খাবার দাও। আমি যাচ্ছি।'
'বাড়া আছে। দিচ্ছি দাঁড়া!'

অরু হাসফাস করছে। এতো অস্থির কেন লাগছে। বিছানায় রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে। শান্তি পাচ্ছে না ঘুমিয়ে। তবুও মরার মতো চোখ বুজে। খিদে ও লেগেছে। তবে খেতে ইচ্ছে করছে না। দরজা খোলার কিঞ্চিৎ শব্দ শুনতে পেল অস্পষ্ট ভাবে। চোখ খুলে তাকাবে যে সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। আঁধারে তলিয়ে যাওয়া কক্ষে বাতি জ্বলে উঠলো। চোখে আলো লাগতেই অরু মৃদুস্বরে 'উফ' আওড়াল। চোখ মেলে তাকাল। তন্ময় দাঁড়িয়ে। হাতে প্লেট। গলায় এখনো টাই ঝুলানো। উষ্কখুষ্ক চুল। অরু চোখজোড়া পিটপিট করলো। তড়িতগতি উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়িতে চোখ বোলালো। মাত্র পাঁচটা বিশ। এতো তাড়াতাড়ি তন্ময় চলে এলো? নিশ্চয়ই কারণ আছে! অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরার লোক তো তন্ময় নয়। তাই ঘটা করে প্রশ্ন করল 'এতো তাড়াতাড়ি এলেন যে? আপনি কী বিজনেস ট্যুরে যাবেন?'

অরুর সন্দেহ সঠিক। তন্ময় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। বিজনেস ট্যুর নিয়ে অরুকে কিছু বলবে না ভেবেছিল! মেয়েটা শুনলেই মন খারাপ করবে! সঙ্গে যেতে চাইবে। বাহানা করতে বসবে! এতগুলো কারণ ধরে লোকাতে চেয়েছে। পারলো কই? তন্ময়ের জবাব না পেয়ে অরু পুনরায় জিজ্ঞেস করল, 'কোথায় যাবেন? কতদিনের জন্য?'
'বলছি। খেয়ে নে...'
'শুনি আগে। বলেন!'
'অরু!'

তন্ময়ের ধমকে দমে গেল অর। মিনমিনে গলায় বলল, 'খাইয়ে দেন।'

তন্ময় ওয়াশরুমের দিক এগোল। অরু চোখমুখ অন্ধকার করে রেখেছে। এভাবেই সকাল থেকে খারাপ লাগছিল। এখন তার খারাপ লাগা আকাশ ছুঁয়েছে। তন্ময় কাছাকাছি থাকবে না ব্যাপারটা সে মানতেই পারে না। কষ্ট হয়। দম আটকে আসে৷ তন্ময় ততক্ষণে হাত ধুয়ে এসেছে। প্লেট হাতে অরুর পাশে বসেছে। লম্বা আঙুল গুলো ভাত নাড়ছে। মেখে পাঁচ আঙুলের মুঠোয় নিয়ে, অরুর মুখের সামনে ধরলো। অরু ঝটপট খেয়ে নিল। মুহুর্তেই পেট নড়েচড়ে ওঠে। বমি বমি ভাব! নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে শুধালো, 'আপনি খেয়েছেন?'
'না।'
'আমি খাইয়ে দেই?'

তন্ময় মাথা তুলে তাকাল। অরুর ফোলা ফোলা ঘুমন্ত মুখশ্রী'তে নজর বোলালো। তবে মুখে কিছু বললো না৷ না হ্যাঁ কিছুই করলো না। কয়েক নালা খেয়ে অরু থমকে গেল। এবার প্রখর ভাবে পেট গুলিয়ে আসছে। আর খেতে ইচ্ছে করছে না। তন্ময় জোর করে আরও দু মুঠো খাওয়াতেই, বিপত্তি ঘটলো। তন্ময় অবস্থা বুঝে প্লেট সরিয়ে রাখল, 'খারাপ লাগছে? আর খেতে হবে...'

তন্ময়ের কথা শেষ হতে পারেনি। অরু মুখ চেপে ছুটে গেল ওয়াশরুম। গদগদ করে একগাদা বমি করে বসলো। পেটে যা ছিলো সবই ফেলেছে। তন্ময় ইতোমধ্যে ছুটে এসেছে। অত্যন্ত চিন্তিত সে দিশেহারা। অরুর মাথা আগলে ধরেছে। চুল গুছিয়ে মাথায় পানি ঢেলে দিল। মুখ পরিষ্কার করে বিছানায় এনে বসালো। কপালে হাত ছোঁয়ালো, 'কী হয়েছে? জ্বর তো নেই। তাহলে?'
'ভীষণ খারাপ লাগছে।'

অরুর মাথাটা তন্ময়ের কোলে হেলে পড়ল। চোখ বুজে সে সেভাবেই রইলো। হাত বাড়িয়ে তন্ময়ের কোমর জড়িয়ে নিল। সেই চিরচেনা পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। অরু কয়েক দফায় শুঁকে নিল। নেশা ধরে যায় এই ঘ্রাণে। এই ঘ্রান তো একান্তই তার তন্ময় ভাইয়ার৷ অরু তার ছোট নাক ঘষে দিল তন্ময়ের কোমরে। বিড়বিড়িয়ে বলল, 'আপনার থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে। আমার খুব ভালো লাগে।'
'শুয়ে পড়। দেখি...'

অরুকে বিছানায় শুইয়ে তার পাশে বসলো। চুলে আঙুল চালালো। অরু গভীর ভাবে তন্ময়ের বাম হাত দু'হাতের মুঠোয় নিয়েছে। সেভাবেই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল। তন্ময় তবুও ঠাঁই বসে। চুপটি করে অনেকক্ষণ, একমনে চেয়ে থাকলো। অধর জোড়া এগিয়ে নিয়ে অরুর কপালের মধ্যস্থান ছুঁয়ে দিল। ধীর স্বরে আওড়াল, 'এইযে মুগ্ধ নয়নে তোকে দেখতেই থাকি, তবুও তো দেখার সাধ মিটে না।'
_________
এখন রাত নয়টা। তন্ময় বেরিয়েছে সাতটায়। খুব ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং। নাহলে সে যেতো না। অরুকে এভাবে রেখে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্রুত গিয়ে দ্রুত ফিরবে বলেই বেরোনো। জ্যামে আটকে সে পুনরায় কল করলো বাবাকে। মোস্তফা সাহেব ধরলেন গম্ভীরমুখে, 'হ্যাঁ।'
'হ্যালো বাবা?'
'হু।'
'আশরাফুল আঙ্কেল এসেছেন?'
'না। আসবে এখনই।'
'অরু ঘুম থেকে উঠেছে? বেশি খারাপ... '

মোস্তফা সাহেব ভোঁতা মুখে বললেন, 'বাবা তুমি নিশ্চয়ই একা চিন্তিত নউ! আমরাও একইভাবে চিন্তিত। কাজ করতে গেছ, যাও। আমরা আছি অরুকে দেখার জন্য।'
'সিরিয়াস কিছু হলে বলো।'
'হু।'

জবেদা বেগম রান্না করছেন। অরুর পছন্দের তরকারি। চিংড়ির কোপ্তা। মেয়েটার মুখে সাধ নেই। তাই স্পেশাল কিছু রান্না করছেন। সুমিতা বেগম একটু পরপর উপরে যাচ্ছেন। মেয়েকে দেখে আসছেন। পায়েস, রসমালাই কতকিছুই নিয়ে গেলেন। কিচ্ছুটি মুখে তুলছে না। বমি করে বসছে। দীপ্ত ফিরেই অসুস্থ অরুর পাশে বসে। একেএকে বাড়ির সবাই অরুর কক্ষে চলে এলো। ডাক্তার আশরাফুলও ইতোমধ্যে চলে এসেছেন। আপাতত অরুর পাশে চেয়ার পেতে বসে হাতের নলি চেক করছেন। অরুর বন্ধ চোখ খুলে দেখে নিলেন। সময় নিয়ে বেশ কয়েকবার একইভাবে চেক করছেন। ভুরু জোড়া কুঁচকে এসেছে। লাগাতার আরও কয়েকবার একই পদ্ধতিতে কিছু চেক-আপ করে নিলেন। মোস্তফা সাহেব চিন্তায় পড়লেন। এগিয়ে এসে শুধালেন, 'কী হয়েছে আশরাফুল? সিরিয়াস কিছু নাকি?'

আশরাফুল সাহেব হাত উঁচিয়ে থামতে বললেন। সময় নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পরিক্ষা নিরিক্ষা করে, ফিরে তাকালেন। চোখমুখ উজ্জ্বল। মুচকি হাসি ঠোঁট জুড়ে লেপ্টে। মোস্তফা সাহেব ভড়কে গেলেন, 'কী হয়েছে?'
''আমার কাছে আয়।'

মোস্তফা সাহেব সামনাসামনি আসতেই, শব্দ করে হেসে আশরাফুল সাহেব মোস্তফা সাহেবের কাঁধে হাত রাখলেন। পাশাপাশি হেঁটে কক্ষ থেকে বেরোচ্ছেন। পেছন পেছন বাকিরাও আসছে। ঘুমন্ত অরুকে সকলে রেখে আসলো। অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় আশরাফুল সাহেব বললেন, 'বন্ধু বাড়িতে মিষ্টি আছে তো?'
'মানে! মিষ্টি....'
'না থাকলে আনা। মিষ্টি মুখ ছাড়া কিন্তু আমি যাচ্ছি না।'
'অ্যাহ?'
'বন্ধু! দাদা হতে যাচ্ছিস খুব শীগ্রই।'

নিস্তব্ধতা, নিরবতা বয়ে গেল। থমকে গেল চারিপাশ। রুখে গেল শ্বাসপ্রশ্বাস। চমকের চিহ্ন সকলের মুখশ্রীতে লেপ্টে। আনোয়ার সাহেব দু'কদম পেছনে চলে গেলেন। অবাকের চুড়ান্তে তিনি। কাঁধ রীতিমতো কেঁপে উঠেছে৷ সুমিতা বেগম কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরেছেন। চোখজোড়া বড়বড়। শাবিহা চিৎকার করে বসেছে। মোস্তফা সাহেব তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তার পা জোড়া থমকে যেমন। কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস নিতেও ভুলে গেলেন।
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন