প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল - পর্ব ৫৬ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


স্তব্ধতায় আবব্ধ শাহজাহান বাড়ি৷ অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে গেল। মোটেও বিশ্বাস করার মতো নয়। আপন বন্ধুর মুখ থেকে না শুনলে, কখনোই বিশ্বাস করতেন না মোস্তফা সাহেব। কতটা পারদর্শী ডাক্তার তার বন্ধু সে খুব ভালোভাবে জানে। অহেতুক ফাজলামো করার মানুষ সে নয়। তাহলে? বুকের ভেতর চিনচিন করছে। বুক ব্যথাটা আবারো শুরু হয়েছে! বুক আঁকড়ে বসে পড়লেন সোফায়৷ চোখমুখ থমথমে। বড্ড নাজেহাল অবস্থা তার! মানুষ ঠিক কতটা আশ্চর্য হলে, এভাবে থমকে যায়? 

সুমিতা বেগম এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে আছেন৷ নড়ছেন অবদি না। বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। স্তব্ধ আনোয়ার সাহেব ঘুরে তাকালেন, বড়ো ভাইয়ের দিকটায়৷ পিটপিট চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, পরপর স্ত্রীর দিক দৃষ্টিপাত ফেললেন। সুমিতা বেগম তার নজর উপলব্ধি করে, ফিরে তাকালেন। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলে গেল দুজনের। আনন্দে বিমোহিত সুমিতা বেগম মুহুর্তে অস্পষ্ট স্বরে কেঁদে দিলেন। ডুকরে কেঁদে স্বামীর উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে বললেন, 'আমাদের অরু! ওগো, আমাদের অরু.. আমাদের ছোট্ট অরু... ' তার কথাগুলো জড়িয়ে আসছে। গুলিয়ে ফেলছেন। ঠিকভাবে বলতেও সক্ষম হচ্ছেন না। খুব বড়সড় শক পেয়েছেন। এতো দ্রুত কাটাতে পারবেন না।

সর্বপ্রথম শাবিহা নড়েচড়ে উঠলো। থমকে যাওয়া পা'জোড়া বহুক্ষণ লাগিয়ে সামনে বাড়ালো। কম্পিত গলা উঁচিয়ে ডাকল, 'আশরাফুল চাচা।' 

ডাক্তার আশরাফুল সাহেব ভীষণ বিরক্ত তখন। সরু চোখে শাহজাহান বাড়ির সদস্যদের মেপে নিচ্ছেন দুচোখে। বিশেষ করে অবাস্তবিক মোস্তফা সাহেবকে। এমন রিয়াকশন তিনি মোটেও আশা করেননি। কই ভাবলেন, তাকে কোলে তুলে এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি হবে। চেঁচামেচি হবে, সোরগোল হবে। অথচ হলো কী? তার দেখা এই প্রথম পরিবার যারা, এতো মিষ্টি সুসংবাদ শুনে স্তব্ধীকৃত হয়ে গিয়েছে। শাবিহার ডাকে সেদিকে দৃষ্টিপাত করলেন আশরাফুল সাহেব। ছোট্ট 'হু' শব্দ করলেন গম্ভীরমুখে। শবিহা ফটফট চোখে তাকিয়ে। খুব মেপে তোতলানো স্বরে জিজ্ঞেস করলো, 'সত্যি.. অ..অরু প্রেগন্যান্ট?'
'হু।'

শাবিহা চেঁচাল। উচ্চকণ্ঠে। পরপর লাফাল। দু'হাতে মুখ ঢেকে সমানে চেঁচিয়ে চলেছে সে। তার উদ্ভট আচরণে মোস্তফা সাহেব বাস্তবে ফিরলেন যেনো। বড়ো বড়ো চোখে তাকালেন। শব্দের তোড়জোড়ে কমবেশি সবাই নিজেদের ভাবনার সাগর হতে বেরিয়েছে। শাবিহা ছুটে জবেদা বেগমকে আঁকড়ে ধরেছে। মুখ গুঁজেছে বক্ষস্থলে। কন্ঠের স্বর ছটফট করছে, 'মা! আমি খালামণি হতে চলেছি। খালামণি' একটু ভেবে পুনরায় আওড়াল, 'খালামণি নাকি ফুপিমণি? কোনটা হব? মা তুমি কী হতে যাচ্ছ? নানু নাকি দাদী? আমরা সব হতে যাচ্ছি মা। সব!'জবেদা বেগমের অধর জুড়ে হাসি। চোখ জুড়ে জল। অস্বাভাবিকভাবে মাথা দোলালেন। 

আনোয়ার সাহেবের নয়ন জোড়া অজান্তে, আনমনে, বড্ড লুকিয়ে ভিজে উঠেছে। অত্যন্ত ঠান্ডা শ্রোত বয়ে চলেছে বক্ষস্থলে। হৃদ-স্পন্দন রুখে আসছে। তার ছোট্ট মা কখন বড়ো হয়ে গেল? মনে হচ্ছে, এইতো সেদিনই ছোট্ট টুকটুক পদক্ষেপ ফেলে সামনে এসেছে। সমানতালে কেঁদে বায়না ধরেছে, তার সঙ্গে অফিস যাবে। পিছু ছাড়বে না কোনোমতেই। তার সেই ছোট্ট মেয়েটা, তার অরুর কোল জুড়ে সন্তান আসছে! সে নানা হতে যাচ্ছে। এরথেকে সুখের সংবাদ কী হয়? হয়না! 

মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়েছেন। আনচান করছেন সে। ছোট ভাইয়ের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। এতো বড়ো সু-সংবাদ শুনেও, গোপনীয় কারণ বসত সুখের বহিঃপ্রকাশ করতে পারছেন না। কীভাবে পারবেন? নিজের মেয়ে মাস্টার্স শেষ করে ফেলেছে। এখনো বিয়ে দেননি। এতো সময়, আহ্লাদ দিয়েছেন। অথচ নিজের আরেক মেয়েকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, তারই ছেলে। ভাইকে কীভাবে মুখ দেখাবেন সে? স্বল্প বয়সের অরু। কতটুকু বুঝ আছে তার? বিয়ের বা কতমাস হলো? আনুষ্ঠানিক বিয়েটাও এখনো দেননি। ভেবেছিলেন অরুর অনার্স শেষ করুক। তারপর নাহয় ধুমধামে বিয়ে দিবেন ছেলেমেয়ের। তারপর মাস্টার্স শেষ করল। তারপর নাহয় নিজেদের ভবিষ্যত নিজেরা বেছে নিবে। কিন্তু কী হলো? তাদের অরু যে খুব ছোট, অবুঝ! কেবলই জীবন শুরু হয়েছে তার। এখনই তো ভার্সিটি জীবন উপভোগ করার সময়। এসময়...! মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তাভাবনা, দাদা হবার অগাধ খুশি ঢেকে দিয়েছে। দাউদাউ জ্বলছে ভেতরটা।

আনোয়ার সাহেব যেমন নিজের ভাইকে বুঝতে পেরেছেন। এগিয়ে গেলেন কাছাকাছি। খুব ভদ্রভাবে ডাকলেন, 'ভাইজান!'

মাথা তুলে তাকালেন মোস্তফা সাহেব। আনোয়ার সাহেব প্রাণবন্ত রূপে হেসে বললেন, 'নানা হচ্ছি।'

মোস্তফা সাহেবও দমে গেলেন। ঠোঁটের দু'প্রান্ত উঁচিয়ে আসছে, 'আমি দাদা।'

মুহুর্তেই আনোয়ার সাহেব দুহাত মেলে দিলেন। খুব আলগোছে সমানতালে লম্বাটে, দু'ভাই বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হলো। ঠোঁটে দীর্ঘ হাসি তাদের। হাজারো অমত, হাজারো নগন্য চিন্তাভাবনা, এই আকাশকুসুম সুখের সামনে ফিকে পড়ে গেল মুহুর্তেই। 

আশরাফুল সাহেব ছোট্ট স্বরে কাশলেন। গম্ভীরমুখে বললেন, 'শাহজাহান বাড়ির মিষ্টি কী আমার নসিবে হবে?'

ওহী সাহেব হাসলেন। শব্দময় হাসি। হাসির রেশ ধরেই বললেন, 'এই সু-সংবাদের জন্য তাজা মিষ্টি দ্বারাই মিষ্টিমুখ করাব। কতরকম মিষ্টি খাবেন, সবরকম খাওয়াবো। এই আকাশ! যাও...যতরকম মিষ্টি আছে, নিয়ে আসো।'

আকাশ হেসে মাথা দোলাল। পা বাড়াবে, পূর্বেই শুনল মোস্তফা সাহেবের গম্ভীর স্বর, 'আকাশ! হতচ্ছাড়া'টাকে কল করো। এক্ষুনি ফিরতে বলো। 
ওর সাথে আমার বোঝাপড়া আছে। অভদ্র ছেলে!'
_________
ভিন্নভাবে ভিন্ন অনুভূতি'তে ভেসে বেড়ানো শাহজাহান বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো হুট করে! এমন সময় কে এসেছে? কারো তো আসার কথা নয়! তন্ময়ের ফিরতে তো নিম্নে দু'ঘন্টা। বেশ খানিকটা দূরে চলে গিয়েছে সে। তাহলে কে? দীপ্ত লাফিয়ে ইতোমধ্যে ছুটে গিয়েছে দরজা খুলতে। খুশিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে সে। কখন যাবত খুশিতে লাফাচ্ছে সে, বলা মুশকিল। সদর দরজা সটানভাবে মেলে দিলো। দুয়ারে দাঁড়িয়ে লতা বেগম, পাশেই সৈকত সাহেব। অয়ন তাদের পেছনে লম্বাটে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। মাথা উঁচু। তার সাথে ড্রাইভার রোহান সাহেব ও উপস্থিত। হাত জুড়ে হরেকরকম মিষ্টান্ন। যতরকম মিষ্টি আছে, সবইতো এনেছেন মনে হচ্ছে!

 অ-সময়ে এমন রাত করে, বিনাআমন্ত্রণে তাদের দেখতে পেয়ে ইতস্তত অনুভব করলেন মোস্তফা সাহেব। বড্ড চিন্তায়ও পড়লেন। এতসব মিষ্টি দেখে খানিক ভড়কেও গেলেন। সুসংবাদ তো মাত্রই এলো, সবেই শুনেছেন তারা। কাউকে তো বলা হয়নি। তাহলে এরা জেনেছে কীভাবে? মিষ্টি নিয়েও হাজির? তারাই তো এখনো মিষ্টিমুখ করতে পারেন নি! আনোয়ার সাহেব এগিয়ে গেলেন। প্রচেষ্টার সহিত হাসিমুখে স্বাগতম করলেন। লিভিং রুমে নিয়ে আসলেন। বসতে বললেন। নিজেও অপর পাশে বসলেন। অয়ন ঠিক মোস্তফা সাহেবের পাশে বসেছে টানটান হয়ে। আঁড়চোখে চারিপাশে তাকাচ্ছে। খুশিতে বাগবাকম মোস্তফা সাহেবের ভুরু-জোড়া খানিকটা কুঁচকালো। মনে মনে ছেলেটাকে আচ্ছা করে ধমকে দিলেন। অসভ্য পোলাপান আজকালকার! কই গুরুজনের সামনে মাথা নত করে, চুপসে লাজুক চোখে বসে থাকবে, তা না! 

এতক্ষণ যাবত উৎসুক ভঙ্গিতে লাফানো শাবিহাও দমে গিয়েছে। মায়ের পেছনে লুকিয়েছে। আলগোছে আড়ালে আবডালে, রান্নাঘরে ছুটেছে।
সেখান থেকেই কয়েকবার লুকিয়ে তাকিয়েছে। হৃদকম্পন খেলায় মেতেছে হৃদয়। ধড়ফড় করছে ভেতরটা। নানান প্রশ্ন ভেসে উঠছে মস্তিষ্কে। এসময় কী করছে এখানে অয়ন? কই তাকে তো কিছুই বলেনি? উত্তেজিত শাবিহা, ঘাবড়ে গিয়েছে। ওড়নায় কোণ সমানে ঘষছে। পেছন দরজা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। কামরায় ফিরে মোবাইল হাতে নিল। অয়নকে মেসেজ দিল, দ্রুত হাতে। অয়নের জবাব এলো না। আরও কয়েকবার মেসেজ করলো, নো রিপ্লাই! বড্ড অস্বস্তিতে পড়েছে শাবিহা৷ আজ চারপাশ থেকে শুধু উত্তেজনা। উত্তেজনায় কী শাবিহা মরে টরে যাবে? 

বাড়ির গিন্নি রা আপ্যায়নের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রুবিও তাদের সাহায্যের জন্য রয়ে গিয়েছে। এটাসেটা করে দিচ্ছে। হঠাৎ বুক চেপে দাঁড়িয়ে পড়লো। মায়ের চোখে তাকিয়ে বলল, 'অরুকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব করে। মা আমি ওকে একটু দেখে আসি।' বলেই সে ছুটে গেল। মুখ চেপে সিঁড়ি বাইছে। সে খুব ভালোভাবে একটু অরুকে দেখবে। কপালে একটা চুমুও খাবে। তার মন হাসফাস করছে। তাদের ছোট্ট অরুটা মা হতে যাচ্ছে, ইশ! 

লিভিং রুমে বড়দের আসর। বড়দের সামনে শুধু ছোট্ট দীপ্ত দাঁড়িয়ে। দাঁত কেলিয়ে চলেছে সে। উৎসুক আচরণ করছে, অজানা তথ্য ছড়িয়ে দেবার জন্য। ওহী সাহেব চোখ রাঙিয়েছেন দু'বার। তাতে কাজ হলো বলে মনে হচ্ছে না। দীপ্ত মুচকি হাসছে। অয়ন হাতের ইশারায় ডাকল। দীপ্ত ছুটে তার রানে চেপে বসলো। অয়ন ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'এতো খুশি কেন?
'সুসংবাদ।'
'কীসের?'
'আমি মামা, চাচা হতে চলেছি।'
অয়নের হাস্যজ্বল মুখশ্রী থমকে গেল। দু'চোখ বড়সড় আকার ধারণ করেছে। অবিশ্বাস্য স্বরে মিনমিন করে আওড়াল, 'কী!'
__________
তীব্র বর্ষণ। ঝোড়ো হাওয়া। অশান্ত আঁধারে প্রকৃতি। রিমঝিম সুরে দুলছে গাছপালা। ফ্যাচফ্যাচে রাস্তা। ভ্যাপসা প্রাকৃতিক গন্ধ ভেসে আসছে। অত্যন্ত মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়া লেপ্টে। পিচ্ছিল রাস্তা ধরে চলছে আকাশী রংয়ের গাড়িটি। ছুটছে প্রগল বেগে। অগ্রাহ্য করছে বর্ষণ'কে, অশান্ত প্রকৃতিকে। নিস্তব্ধ গাড়ির মধ্যে সেলফোনটা বেজে উঠলো। তন্ময় পাশ ফিরে তাকাল। স্ক্রিনে আকাশের নাম ভেসে উঠেছে বড়সড় অক্ষরে। তন্ময় গাড়ি থামাল না। সেভাবেই ডান'হাতে হুইল সামলিয়ে, বা'হাতে এয়ারপোড কানে ঢোকাল৷ মুহুর্তেই আকাশের বিচলিত স্বর শোনা গেল। সে বেগতিক গতিতে বলল, 'তাড়াতাড়ি বাসায় ফির। সর্বনাশ হয়ে গেছে।'

তন্ময়ের হৃদ স্পন্দন থমকে গেল। শ্বাসপ্রশ্বাস রুখে গিয়েছে। তার আতঙ্কিত জবাবের অপেক্ষা করলো না আকাশ। নিজের বক্তব্য শেষ করে, পরপর কল কেটে দিয়েছে আকাশ। তন্ময় ছটফটিয়ে ফের কল লাগালো। অশান্ত প্রকৃতি, পিচ্ছিল ফ্যাচফ্যাচে রাস্তার কথা মস্তিষ্ক থেকে ফেলে দিল। অসাবধানতার সহিত গাড়ি না থামিয়ে, হুইল ঘুরিয়ে গাড়ি বাড়ি ফেরা পথে নিতে উদ্বিগ্ন হলো। সর্বোচ্চ রিচ বাড়ালো গতির। কল লাগছে না। কেন? কী হয়েছে? তন্ময় ধড়ফড়িয়ে মোস্তফা সাহেবের সেলফোনে কল লাগাল। রিং হচ্ছে, রিসিভ হচ্ছে না। সবকিছু উলটপালট হয়ে আসছে চোখের সামনে। প্রকৃতির থেকেও অশান্ত তন্ময়ের ভেতরটা। ভয়ে রীতিমতো তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। অরুর ছটফটানো শরীর, ব্যথিত চেহারা ভেসে উঠছে চোখের সামনে বারংবার। তাকে দু'হাতে আঁকরে ধরে রেখেছিল। যেতে দিতে চাচ্ছিল না কোনোভাবেই। তন্ময় সেগুলো উপেক্ষা করে এসেছে। এগুলো ভাবতেই চাপা কষ্টে বুকে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। মস্তিষ্ক নানান খারাপ, বিশ্রী চিন্তাভাবনায় ভরে গিয়েছে। নাজেহাল করে তুলছে। গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধছে অরুর মুখশ্রী। তার আজ আসাটা ভুল হয়েছে। একদম ঠিক হয়নি! তার অরুর কিছু হলো না তো? হুইলে থাকা হাতটা কাঁপছে তন্ময়ের। বড্ড গোপনে দগ্ধ উত্তেজনায় বুক ধড়ফড় করছে। বক্ষস্থল অশান্ত সাগরের ন্যায় নিমজ্জিত। কিছু সেকেন্ডর জন্য দু-চোখ বুজে এলো যেমন। ঝোড়ো বর্ষণ ভেদ করে দেখা মিলছে ট্রাকের! সামনে বড়ো হলদে ট্রাক! সমানতালে, সমান গতিতে ছুটে আসছে এই ছোট্ট রাস্তা জুড়ে। চোখ মেলে তাকাতে দেরি করে ফেলেছে তন্ময়। ইতোমধ্যে ট্রাক তার গাড়ির সামনে চলে এসেছে। এতটা নিকটে, জরুরি বেগে ছুটে আসা গাড়িটি দেখে ভড়কে গেল সে। হইলে থাকা হাতটা স্তব্ধা খেয়ে বসলো। নিজের গাড়ির গতিও সে সর্বোচ্চ বাড়িয়ে রেখেছে। হুট করে ব্রেক কষাও অসম্ভব বটে। তন্ময় হন্তদন্ত ভঙ্গিতে হুইল ঘোরাতে চাইল। আশেপাশে কী আছে খেয়াল করলো না। তীব্র বৃষ্টির তন্দ্রাঘোরের আঁধারে বিলীন হলো যেন, আকাশী রঙের গাড়িটি। হুংকার ছুটিয়ে শব্দ করলো নিস্তব্ধ রাস্তায়। চারপাশ জুড়ে পোড়ানো ধোঁয়া উড়ছে। অস্পষ্ট আর্তনাদ, চিৎকার শোনা গেল। খানিকক্ষণের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে গেল, একই নিস্তব্ধতা। পরমুহূর্তেই চারপাশ হতে ছুটে এসেছে জনগণ। চেঁচামেচি শুরু হয়েছে অনেকের। এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে তোড়জোড় করছে সকলে।
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন