আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অলকানন্দা - পর্ব ৪৮ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প

!!১২৩!!

গালে পরিচিত মানুষটার স্পর্শে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে মাহা। চোখ মেলতে কষ্ট হয়। লাইটের কড়া আলোয় চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে চোখে। সহনশীল হয়ে উঠে আলোর মাত্রা। সার্থক কে চোখের সামনে দেখে জড়িয়ে ধরে মাহা। হাত পা কাঁপছে তার। সার্থক মুখে কিছু বলেনা। কেবল একখানা চুমু খায় মাহার অগোছালো চুলের ভাঁজে। 
"ভয় পেয়ো না মাহা। আমি আছি তো। চারপাশে তাকিয়ে দেখো। এটা একটা লাইব্রেরি বোকা মেয়ে।"

মাহা সার্থক কে জড়িয়ে ধরেই চোখ বুলায় চারপাশে। সত্যিই তো। গুলশানের বাসার লাইব্রেরির মতো এটাও একটা লাইব্রেরি। তবে মাকড়সার জালে ভরপুর। উপরে দু একটা বাদুড়ও উল্টে শুয়ে আছে তারে। তখন বোধহয় এই বাদুড়গুলোই উড়ছিলো। মাহা মুখ খুলে কিছুই বলতে পারছেনা। ভিষণ ভয় হচ্ছে তার। সার্থক কথা না বাড়িয়ে মাহাকে কোলে নিয়ে নিজ ঘরে চলে আসে। মাহা তখনও ভয়ে স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। মাহাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় কতক্ষণ বসে থাকে সার্থক। 
"কি হয়েছে মাহা? ভিষণ ভয় পেয়েছিলে?"
"হু"
"এখনও ভয় লাগছে?"

মাহা মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ তার ভয় লাগছেনা। 
"কি হয়েছিলো?"
"কে যেন পিছু নিচ্ছিলো আমার। আমি ভয় পেয়ে ঐখানে লুকিয়ে পড়ি।"
"চোর ছিলো বোধহয়। সজল দেখেছিলো কে যেন গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি পুলিশে জানিয়েছি। ভয় নেই আর।"

মাহা সার্থকের বুকে মাথা রাখে। এত সুখ, এত শান্তি কেন এই বুকটায়? 

_____________

বিগত কয়েকদিন যাবত মেরিকে বাসায় দেখতে পাচ্ছেনা মাহা। কি আশ্চর্য! একে একে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সবাই? লুবান, নিভা, রবার্ট, মুইংচিন, ডেভিড আর এখন মেরি। সার্থক কে জিজ্ঞেস করবে করবে করেও আর করা হয়নি। আজ রুমানার সাথে কথা হয়েছিলো মাহার। মেয়েটা একটু স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু ক্ষ'ত কি এত সহজে মুছে যায়? বাগানের অলকানন্দা ফুলগুলো ভিষণ ভালোলাগে মাহার। ফুলগুলোই দাঁড়িয়ে দেখছিলো সে। হঠাৎ পিছন থেকে সার্থক জড়িয়ে ধরে। 
"কি দেখো?"
"ফুলগুলো ভিষণ সুন্দর। তাই না?"

মাহাকে ছেড়ে দিয়ে একখানা অলকানন্দা ফুল ছিঁড়ে সার্থক। মাহার কানে গুঁজে দেয় ফুলখানা। হলদে মুখশ্রী তে কি অপূর্ব দেখাচ্ছে তার অলকানন্দা কে। কুঁকড়া চুলের এই রমনীকে যত দেখে ততই তৃষ্ণা বাড়ে তার। মাহা মাথা নুইয়ে আছে। লজ্জা লাগছে তার। সার্থক মাহার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। মাহার কোমড় ধরে নিজের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
"আমার অলকানন্দার কাছে এই ফুল তুচ্ছ। আমার অলকানন্দার রূপে চাঁদও যে লজ্জা পায়।"

বলেই ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার দশা মাহার। বাইরে দাঁড়োয়ান আছে। একটু দূরে সজল মালি দাঁড়িয়ে। নাহার আছে। এত মানুষের সামনে এমন বেহায়াপনা মানায়! লোকটা কি নির্লজ্জ হয়ে গেলো নাকি! মাহা নিজেকে ছাড়িয়ে বাসায় ছুটে যায়। সার্থক হাসতে হাসতে কাজে বেরিয়ে পড়ে। 

বিকেলবেলা মাহা বই পড়তে আসে সেই লাইব্রেরিটায়। সেদিনের পর সার্থক লাইব্রেরিটা পরিষ্কার করিয়েছে। সার্থকের ইচ্ছে ছিলো না। মাহার জিদে। অনেক অনেক বই এখানে। মাহা প্রায়শই এখানে বসে বই পড়ে। ডানদিকের দেয়ালে বড় একটা জানালা রয়েছে। খুলে দিলে আলো সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। মাহার বেশ লাগে। তবে বেশ গাঁ ছমছমে এই ঘরটা। কেমন যেন বসে থাকলেই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে হঠাৎ করে। মাহা হুমায়ুন আহমেদের নন্দিত নরকে বইটি খুলে আনমনে বসে আছে। আসলে সে একটা কথা জানতে পেরেছে। যদিও বিষয়টা এখনো সার্থক কে জানায়নি। সার্থক ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে কিনা তাও মাহা জানেনা। ডাক্তারের চোখ বলে কথা। কিংবা ব্যস্ততার কারণে এতদিকে খেয়াল করেনি। মাহা একটা প্রেগ্ন্যাসি কিট এনে পরীক্ষা করেছিলো। স্পষ্ট দুটো দাগ। এরমানে বুঝায় মাহা প্রেগন্যান্ট। কিন্তু ডাক্তার যে বলেছিলো সে কখনো মা হতে পারবেনা? হুট করে একটা শব্দ হয়। পিনপতন নীরবতার মাঝে ভয়ংকর শুনায় কানে। মাহা সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটা বই নিচে পড়ে আছে। নিশ্চয়ই কোনো ইঁদুর ফেলেছে হয়তো। মাহা বইটা উঠিয়ে রাখতে এগিয়ে যায় বুক সেলফের পাশে। নিচে ঝুঁকে বইটা নিয়ে রাখার সময়ই বড় বুক সেলফের ভিতরে একটা ডায়েরি চোখে পড়ে মাহার। লাল রঙের একটি ডায়েরি। বহুদিনের পুরানো হয়তো। কৌতূহলী হয়ে ডায়েরিটা হাতে নেয় মাহা। কিন্তু বিবেক বাঁধা দেয়। কার না কার ডায়েরি। কত পার্সোনাল কথা লিখা আছে হয়তো। খুলবে কি খুলবেনা? বইটা সেলফে রেখে কাঠের চেয়ারে বসে মাহা। ডায়েরিটা খুলেই ফেলে৷ প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লিখা, "The story of a shadow man". সেডো ম্যান মানে তো ছায়া মানব? আচ্ছা, কি ঘটেছে তার জীবনে? মাহা কৌতূহলী হয়ে পৃষ্ঠা উল্টায়। উপরে স্পষ্ট করে ইংরেজিতে একটি লাইন লিখা,

"No darkness, no pain, no sorrow"

আমি ছায়ামানব। অন্ধকার রাজ্যের রাজা। বিধ্বংসী খেলায় আমার বেশ নাম ডাক। ডার্ক সোসাইটি তে আমি বেশ শক্তপোক্ত অবস্থান গড়েছি। কিন্তু এই অন্ধকার আমার পছন্দ না। একসময়ের নাজুক আমি আজ মানুষ খুন করি, ভক্ষণ করি। মানুষের মাং'সে অদ্ভুত স্বাদ। বড়ই জিভে জল আনা স্বাদ। আজ খুব একাকিত্বে ভুগছি। তাই লিখবো। লাজুক এক বালকের হিংস্র ওয়েন্ডিগোর ন্যায় হয়ে উঠার গল্প আজ লিখবো।  

এতটুকু পড়েই মাহার শরীর কাটা দিয়ে উঠে। কার ডায়েরি এটা! মানুষের মাংস ভক্ষণ করে! কি ভয়ানক! 
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।