আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অলকানন্দা - পর্ব ৫৩ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প

!!১২৮!!

নাহার হলরুমের বাথরুমে গিয়েছে। তার মোবাইলটা সোফায় রাখা। সোফার সামনেই মেঝেতে মাহাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। বাগানে ঝুলানো টিমটিমে লাইট থেকেই ঘরে আলো ঢুকছে। মাহা হাতের বাঁধন খুলে ফেলে। সার্থক শিথিল করেই বেঁধেছিলো। মাহা যেন ব্যথা না পায়। মাহা উঠে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর দৌড়ে আসে সোফার কাছে। শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে তার। মস্তিষ্ক বিরান হয়ে আছে। এক বুক ভালোবাসে মাহা সার্থক কে। কিন্তু তাই বলে একটা নরপি'শা'চ, নরখাদক কে মাহা কি করে ছেড়ে দিতে পারে! কত কত প্রাণ গিয়েছে তার হাতে! আরো হয়তো যাবে। নিজের চোখে সবটা দেখে মাহা কি করে চুপ করে থাকবে! সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মন বলছে, "তাকে রেজওয়ানের হাতে তুলে দেওয়া মানে তার ফাঁ'সি নিশ্চিত।" মাহা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে। মোবাইলটা সোফায় রাখা। লক নেই। এটা মাহা জানে। রেজওয়ানের নাম্বার মাহার মুখস্থ। 
"সৃষ্টিকর্তা, এমন পরিস্থিতি কেন দিলে আমাকে? যার সামান্য জ্বর, সামান্য ব্যথা আমি সহ্য করতে পারিনা আমি কেমন করে তার মৃ'ত্যু সহ্য করবো! আমি কেমন করে তাকে ছাড়া থাকবো? আমার মানুষটা কেন আমার হয়েও আমার হলোনা? এই দুঃখ আমি সইবো কেমনে? আমার পৃথিবী যাকে ঘিরে সেই মানুষটা বিনে আমি থাকবো কেমনে!"

হু হু করে কেঁদে উঠে মাহা। মাহা তো তাকে ভালোবাসে। সার্থকের ফাঁ'সি হলে মাহা কি করে বাঁচবে! মাহার মনে হয় থাকুক না আমার মানুষটা অপবিত্র। আমি তার সাথেই থাকবো। সার্থক কে ছাড়া পৃথিবী মাহা কল্পনাও করতে পারেনা। কেন মাহার সাথেই এমন হয়! যাদের মাহা ভালোবাসে তারাই ছেড়ে চলে যায়। সার্থক কে ছাড়া মাহা থাকতে পারবেনা। না, সার্থক কে ছাড়া মাহার পৃথিবী অচল। মাহার জীবন অচল। সোফায় কতক্ষণ বসে থাকে মাহা। মাথায় ভিষণ ব্যথা হচ্ছে। মাথা চেপে ধরে বসে থাকে সে। হালকা চোখ বুজে আসে। চোখের সামনে চৈতির অবয়ব। মাহার উপর হাসছে চৈতি। মাহাকে চিৎকার করে বলছে, "তুই একটা বিবেকহীন মানুষ মাহা। তুই একটা স্বার্থপর। ভালোবাসার কাছে আজ তোর বিবেক বিবর্জিত! ছিঃ! ধিক্কার তোকে।" মাহা চোখ মেলে তাকায়। নাহার দরজা ধাক্কাচ্ছে। বারবার বলছে, "ম্যাডাম, দরজা খুলেন। মাহা ম্যাডাম।" মাহার সেসবে খেয়াল নেই। সে কাঁপা হাতে মোবাইল হাতে নেয়। ছোট করে একটা মেসেজ পাঠায় রেজওয়ানের কাছে। 
"আমাকে সাহায্য করুন রেজওয়ান ভাই। আমি খুব বিপদে আছি।"

পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা লুকায় মাহা। উঠে দাঁড়াতেই দেখে সার্থক পিছনে দাঁড়িয়ে। 
"কি করছিলে তুমি মাহা?"

সার্থকের শান্ত সুরে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে মাহার। তুঁতলিয়ে সে বলে, "ক..কই। কিছু না তো।"
"আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো না মাহা। আমি কিন্তু সব ধ্বং'স করে দিবো।"

সার্থক ঠান্ডা সুরে বলে। চোখ দুটো অদ্ভুত লাল। বাম হাত মুঠ করে রাগ নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে সে। মাহার লুকানো মোবাইলটা এক টানে নিয়ে মেঝেতে আছাড় মারে সার্থক। মাহা ভয়ে চোখ বুজে আছে। টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের প্লেটের মতো শো পিসটা মেঝেতে ফেলে দেয় সার্থক। 
"আমাকে রাগিয়ো না মাহা। আমি রাগলে কতটা ভয়ং'কর হতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।"

মাহা মাথা নুইয়ে কাঁদছে। সার্থক মাহার গাল চেপে ধরে। যদিও আলতো করে। তবে কঠোর সুরে বলে,
"আর এক ফোঁটা অশ্রু যদি এই চোখ থেকে পড়ে। আমি এই মুহূর্তে বাইরে গিয়ে দশটা খু'ন করবো। তুমি অনামিকা আঙুলের আমার দেওয়া আংটি কেন ফেলে দিয়েছো মাহা? আনসার মি!"

সার্থকের চিৎকারে আঁতকে উঠে মাহা কান্না থামানোর চেষ্টা করে। আংটিটা কখন মেঝেতে পড়েছে মাহা নিজেও জানেনা। মাহার হাত ধরে তাকে উপরে নিজেদের ঘরে টেনে নেয় সার্থক। সব ব্যবস্থা সে করে এসেছে। রবার্টের রেখে যাওয়া ফর্মুলা এখনো তার কাছে আছে। ডেভিড যেদিন মাহার সাথে খারাপ আচরণ করলো সেদিন রাতেও মাহার শরীরে তা প্রবেশ করিয়েছিলো সার্থক। যাতে মাহা কোনো ডিপ্রেশনে না থাকে। আজ যখন অর্ধেক সত্য জেনেই ফেলেছিলো তাই সম্পূর্ণ সত্য মাহাকে জানিয়ে দেয় সার্থক। এবারে ফর্মূলা প্রবেশ করাবে শরীরে। মাহার যখন চোখ খুলবে এখনকার কোনো কথাই মনে থাকবেনা তার। নতুন জায়গা, নতুন পরিস্থিতি, নতুন জীবন। সার্থকের মাহাকে চাই! মিথ্যা, ছল সব করে হলেও তার মাহাকে চাই। যেকোনো মূল্যে চাই। নিজেদের ঘরে ঢুকে মাহাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সার্থক। পাগলের মতো ড্রয়ারে ফর্মূলার কাঁচের বোতল খুঁজে। মাহা চুপ করে বসে আছে খাটে। ভাষাহীন হয়ে পড়েছে। সার্থকের ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো। চোখে মুখে উদভ্রান্ত ভাব। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে চুবচুবে। অদ্ভুত ভাবে মাহার গাঁয়েও আজ সাদা থ্রি পিস। সার্থক ফর্মুলা খুঁজে পায়। আরেক ড্রয়ার খুলে ইনজেকশনের ভিতর ফর্মুলা প্রবেশ করায়। ঘরে কড়া লাইটের আলো। ড্রয়ারের ভিতর প্রেগ্ন্যাসি কিট দেখে থমকে যায় সার্থকের হাত। স্পষ্ট পজিটিভ। সার্থক চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে, "তুমি প্রেগন্যান্ট মাহা?"

মাহা নিশ্চুপ। সার্থক আরো ক্ষেপে যায়। ডাক্তারের মাধ্যমে মাহাকে জানিয়েছিলো মাহা মা হতে পারবেনা। গর্ভ নিরোধক ঔষধ দিতো মাহাকে সে। তাও মাহা প্রেগন্যান্ট হলো কি করে! 
"তুমি আমার দেওয়া ঔষধ খাওনি মাহা!"

মাহা কোনো উত্তর দেয়নি। সার্থক রেগে আশেপাশে থাকা সবকিছু ভাঙচুর শুরু করে। 
"কেন আমার কথার অবাধ্য হও তুমি! আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি! এই বাচ্চার কারণে মৃ'ত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছো তুমি। আমার বাচ্চা চাইনা। এই বাচ্চা আমি এবরসন করাবো।"

সার্থকের কথায় চমকে উঠে মাহা। হাত চলে যায় পেটে। নিজের সন্তানকে মে'রে ফেলতে চাচ্ছে সার্থক। 
"আপনি এতটা নির্দয়!"
"তোমার জন্য আমি অনেক অনেক নিষ্ঠুর হতে পারি।"

সার্থক ড্রয়ারের কাছে ছুটে যায়। সেখানে ইনজেকশন রাখা। মাহা বুঝতে পারছে এই ইনজেকশন যদি মাহার শরীরে একবার পুশ করা হয় তাহলে মাহা সব ভুলে যাবে। বাচ্চার কথাও ভুলে যাবে। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে মাহা। সার্থক পিছন থেকে চিৎকার করছে, "আমার আসল রূপ দেখতে না চাইলে চুপচাপ ফিরে এসো। আমি কিন্তু ভয়ং'কর হতে পারি।"

মাহা উদভ্রান্তের মতো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। সার্থক পিছনে আসছে। হাতে ইনজেকশন। নরপিশাচের মতো লাগছে তাকে। নরম, কোমল সার্থক যেন রাগের তাড়নায় হিং'স্র হয়ে উঠেছে। 
"মাহা, থামো। মাহা, আমি রেগে গেলে কিন্তু সব ধ্বং'স করে দিবো।"

হলরুমটায় আলো আঁধার। মাহা সোফার পিছনে গিয়ে লুকায়। সার্থক হলরুমের মাঝে দাঁড়িয়ে। নরম গলায় ডাকছে,
"মাহা, সোনা। সামনে আসো। আমি কিছু করবো না সোনা।"

ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে মাহা। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। হাত কামড়ে কান্নার আওয়াজ বন্ধ করে মাহা। হিঁচকি উঠে গেছে তার। সার্থক ডাকছে কোমল সুরে, "মাহা, অলকানন্দা আমার।"
"মাহা। আমি জানি তুমি টেবিলটার নিচে।"

সুর টেনে বলে সার্থক। উঁকি দেয় ডাইনিং টেবিলের নিচে। ভয়ংকর শীতল সার্থকের গলা। নিরব রজনী চিড়ে ভুতুড়ে লাগছে সে সুর। মাহাকে না পেয়ে টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। সার্থক সোফার দিকটায় আসতেই হামাগুড়ি দিয়ে বড় পিলারটার পিছনে ছুটে যায় মাহা। সার্থক আবার সুর করে বলে,
"মাহা, তুমি কি এখানে?"

মাহাকে সোফার পিছনে খুঁজে না পেয়ে টি-টেবিলে লাথি মারে সার্থক। 'মাহা!' বলে চিৎকার করে উঠে। মাহা পিলারের পিছনে দাঁড়িয়ে। পাশে থাকা টেবিলে একটা ছাই রঙের চিনামাটির ফুলদানি রাখা। বেশ শক্ত। সার্থকের প্রাচীন জিনিসের অনেক শখ। এই ফুলদানিটা নিলামে বড় শখ করে চীন থেকে কিনেছিলো সার্থক। মাহা ফুলদানিটা হাতে নেয়। সার্থক আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে পিলারের কাছে। মাহা ফুলদানি হাতে দাঁড়িয়ে। সার্থক 'মাহা' বলে উঁকি দিতেই শরীরের সমস্ত জোরে মাহা আঘাত করে সার্থকের মাথায়। 
.
.
.
চলবে..............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।