!!১২৯!!
মাহা যখন সার্থক কে আঘাত করে তখন সার্থকের চোখে ছিলো বিস্ময়। সার্থক বিশ্বাস করতে পারে না তার মাহা, তার অলকানন্দা তাকে আঘাত করেছে। মাহা সার্থক কে আঘাত করার কালে তার শরীরে কোথ থেকে যেন পৈশাচিক শক্তি এসে জড়ো হয়। অত্যধিক জোরে আঘাত করে সে সার্থক কে। সার্থকের হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায় ইনজেকশন। সার্থক মাথা চেপে ধরে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। যতটা জ্বালা সে শরীরে অনুভব করছে তার থেকে অধিক জ্বা'লা হচ্ছে তার অন্তরে। তার অন্তর চিৎকার করে বলে, "আমি মা'রা গেলে তোমার কি হবে মাহা? তোমার যে এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তুমি যে একা হয়ে যাবে। মাহা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
সৃষ্টিকর্তা, কখনো আপনার কাছে কিছু চাইনি। অনেক ভুল করেছি জীবনে। আজ চাচ্ছি, আমার মাহাকে আপনি ভালো রাখবেন।"
মুখে বলার মতো সময় সার্থক পায়না। মাহা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাল তরলে মেঝে ভেসে যাচ্ছে। সার্থকের চোখ বুজে আসছে। যন্ত্রণায় মেঝেতে কাঁতরাচ্ছে সে। মাহা ঝাঁপিয়ে পড়ে সার্থকের বুকে। চিৎকার করে বলে,
"না, না সার্থক। প্লিজ না, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। সার্থক, সার্থক...
মাহা পাগলের মতো চিৎকার করছে। সার্থকের গালে হাত রেখে ডেকে চলেছে তাকে। সার্থক অবশ হয়ে আসা শরীরে বিড়বিড় করে,
"ভালো থেকো মাহা। ভালোবাসি।"
চেষ্টা করে মাহার এলোমেলো চুলে একখানা চুমু খেতে। পারেনা। অনেক র'ক্তক্ষরণ হয়েছে তার । ক্রমাগত হচ্ছে। সারাজীবনের মতো এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে সার্থক। রেখে যায় ক্রন্দনরত অসহায় এক প্রেয়সীকে। পেটে নিজের সন্তান কে। নিজের সাম্রাজ্যকে। সুখী হয়ে সংসার করা সার্থকের আর হয়না। মাহা পাগলামি করে। সার্থকের চুলে, গালে, ঠোঁটে হাত বুলায়। চুমু খায় অজস্র। নাম ধরে ডাকে। সার্থক কথা বলেনা কেন! সার্থকের কপালে চুমু খেয়ে মাহা বলে,
"আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি তো। রাগ করেছেন? প্লিজ উঠুন না। আমার ভয় লাগছে তো। এই সার্থক। উঠুন না। এই যে আমি কানে ধরছি। আর আপনার অবাধ্য হবো না। আপনার সব কথা মেনে নিবো। আপনি যা বলবেন তাই করবো। আপনি আমার নাম ধরে একবার ডাকুন না সার্থক।"
মাহার সাদা জামা সার্থকের র'ক্তে মাখামাখি। মাহা অহেতুক কথা বলতে বলতে সার্থকের বুকে মাথা রেখেই অজ্ঞান হয়।
_______________
পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে মাহা আর সার্থক কে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় রেজওয়ান। মিস তাজও আছে সাথে। তাজের ভিতরটায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিছু ভালোবাসা থাকে নিরবে। তাজের ভালোবাসাটাও ঠিক তেমনি ছিলো। সকালবেলা মাহার মেসেজ দেখার সাথে সাথেই প্লেনে করে সিলেট ছুটে আসে রেজওয়ান। অতঃপর সিলেট পুলিশ ফোর্স কে নিয়ে প্রবেশ এই বাংলো তে। মাহাকে বারবার ফোন করেও তার খোঁজ পায়নি রেজওয়ান। তাই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছিলো তার। হাসপাতালে নেওয়ার সাথে সাথেই সার্থক কে মৃ'ত ঘোষণা করে কর্তব্যরত ডাক্তার। মাহাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল। বেশি চাপ পড়লে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। 'মাহা প্রেগন্যান্ট' শুনে আরো অবাক হয় রেজওয়ান। রুমনাকে কল করে হাসপাতালে আসতে বলে। রুমানা, অনিক রওনা দিয়েছে। এশা সিলেট থাকায় ওকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলে রুমানা। ইনভেস্টিগেশন চালানো হয় বাংলোতে। লাইব্রেরির সেই ঘর থেকে বের করা হয় শত খানেক লা'শ। নাহারকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মাঝে সার্থকের ডায়েরি খুঁজে পায় তাজ। আশেপাশে অন্যরা আছে। তবুও সে পাতা উল্টোয়। কয়েক জায়গায় নিজের নাম দেখে সেই পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলে তাজ। এটা সত্যি সার্থক কে তাজ ভালোবাসতো। অদ্ভুত মায়া কাজ করতো মানুষটার প্রতি। সেই পূর্ণিমার রাতে ক্রস ফায়ার করার সময় দুটো চোখ দেখে তাজ বুকে ধাক্কা অনুভব করে। মন বলে এই মানুষটার সাহায্য না করলে তোর জীবন বৃথা তাজ। তাকে কাছে চাইনা। কেবল একটু সান্নিধ্য চাই। কতশতবার সার্থক কে বাঁচিয়েছে তাজ। বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে তবুও এখনো বিয়ে করেনি। এএসপি রেজওয়ান কে ভুল ফাইল দেওয়া, চৈতি যে নাম্বারে কথা বলতো লুবানের সাথে সে সিমের তথ্য গোপনসহ আরো কত ছলনা। সার্থকের মৃ'ত্যুতে তাজেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এসবে তার নাম জড়ালে ফাঁ'সি নিশ্চিত। বাড়িতে প্রতিবন্ধী ভাই, অসুস্থ মা-বাবা তাদের কি হবে! নিজের নাম কোনোভাবেই এসবে জড়াতে চায় না সে। সার্থকসহ যারা তাকে চিনতো তারা সবাই মা'রা গিয়েছে। তাই ডায়েরির যে পৃষ্ঠাগুলোতে তার নাম পেয়েছে সব ছিঁড়ে ফেলেছে সে। তারপর ডায়েরি তুলে দেয় রেজওয়ানের হাতে। সব পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় রেজওয়ান। এসবও সম্ভব! লাইব্রেরি অনুসন্ধান কালে আরো একটা ডায়েরি খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে WCS এর সকল সদস্যের নাম, ঠিকানা লিখা আছে। সারাদেশে স্রোতের চেয়েও অধিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। কারফিউ জারি করা হয়। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও মাহার জ্ঞান ফিরেনি। পোস্ট'মর্টেম করা হয় সার্থকের দেহ। যে নিজ হাতে চিড়ে ফেলতো মানব দেহ। আজ তার দেহ চিড়ে ফেলে ক্ষ'ত বি'ক্ষ'ত করা হয়। রেজওয়ানসহ কয়েকটি টিম মিলে খুঁজে খুঁজে ক্রসফায়ার করে WCS এর সদস্যদের। উপরমহল থেকে এটাই নির্দেশ করা হয়েছে। সবাই ভাবছে মাহারও এসবে সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাহার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষায় দেশবাসী। রেজওয়ানের কষ্ট হচ্ছে। প্রিয় মানুষটার সুখ তো সে সবসময় আল্লাহর কাছে চাইতো। তার সব দোয়ায় মাহা থাকতো। আজ... দীর্ঘশ্বাস আসে রেজওয়ানের বুক চিড়ে। আইসিইউ তে শোয়ানো মাহার নিথর দেহের পানে চেয়ে থাকে সে। এশার সাথেও দেখা হয়। কথা হয়না। রুমানা, অনিক এসে পৌঁছেছে।
______________
তিনদিন পর যখন মাহার জ্ঞান ফিরে মাহা সম্পূর্ণ এক পাথর মানবী। পাণ্ডুর তার মুখখানা। চুপচাপ, গুরুগম্ভীর তার আচরণ। রেজওয়ান সহ আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার নানা রকম প্রশ্ন করে তাকে। মাহা শুধু একটাই কথা আওড়ায়,
"আমি সার্থক কে মে'রে ফেলেছি।"
আর কোনো কথা তার মুখে নেই। ঢাকার গুলশানের বাড়ি থেকেও উদ্ধার করা হয় লা'শ, মানব শরীরের অংশ। মিডিয়া, দেশবাসী সরগরম। চ্যানেলে চ্যানেলে এই খবর। রেজওয়ান মাহাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। মাহাকে কি করে নির্দোষ প্রমাণ করবে সে!
ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করা হয় তাদের। লা'শবাহী গাড়ি দিয়ে যখন সার্থকের লা'শ ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছিলো তখন হুট করেই মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায় গাড়ি। দুপাশে ঘন জঙ্গল। কর্তব্যরত অফিসার ও ড্রাইভার দেখেন গাড়ির চারপাশে ঘোর অন্ধকার। কারা যেন ঘুরছে। জ্ঞান হারান তারা। চোখ খুলে তারা আর সার্থকের লা'শ খুঁজে পাননি। সমস্ত জায়গা হতে সার্থকের ছবিগুলোও উধাও হয়ে যায়।
.
.
.
চলবে..............................