হবু বর - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - অনু গল্প


#হবু_বর 
#অনু_গল্প 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 



দিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের শহর দেখছে।এলোমেলো চুলে শহরের ব্যস্ততা দেখছে।আর নিজের ভালোবাসার মানুষটির ব্যস্ততার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার শহরের দিকে নজর দিচ্ছে মেয়েটা। নিয়ন বাতির আলোতে শহরের বুকে কৃত্রিমতার ছড়াছড়ি। তার সাথে ব্যস্ত সড়কের মাঝে গাড়ির পাল্লা দিয়ে চলাও বেশ উপভোগ করছে সে।আসলে রেসিং খুব ভালো লাগে মেয়েটার। কিন্তু এসবের চেয়েও বেশি উপভোগ্য বিষয় হচ্ছে রাতের আকাশ। আকাশের দিকে তাকালে দিয়া অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে যায়। তারার পর তারার ছড়াছড়ি! কোনটা অল্প মিটিমিটি করছে আবার কোনটা তুলনামূলক বেশি মিটিমিটি করে জ্বলছে। ঠিক যেন তারার শহর! দিয়ার সকল ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে কলিংবেলটা বেজে উঠলো। না দেখলেও বলার অপেক্ষা রাখে না অনিক এসেছে। আসলে বিকেলে অনিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। বিষয় ছিল অনিক তাকে আগের মতো ভালোবাসে না! আসলেই পাগলামি এটা। অনিক আসলে খুব সোজাসাপটা একটা ছেলে। অত ন্যাকামি আসে না তার। সারাদিন অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত থাকে। ফ্রী হলে অবশ্য কথা বলে দিয়ার সাথে। তবে দিয়া আসলে একটু বেশিই ভালোবাসে তাকে। তাই এক ধরনের বেশি সিরিয়াস অনিকের ব্যাপারে।
দুজনের পরিবার তাদের সম্পর্কে কোন হস্তক্ষেপ করেনি। বরং খুশি মনে মেনে নিয়েছেন। তবে দিয়ার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবার পরই বিয়ে হবে বলে ঠিক করে অনিক।আপাতত এনগেজমেন্ট করে রেখেছে দুই পরিবার। তাই মাঝে মধ্যে অনিক দিয়াদের বাসায় যাওয়া আসা করে। 
দিয়া দরজা খুলে কোন কথা না বলে জোরে হাঁকিয়ে তার মায়ের উদ্দেশ্য বলে তার হবু জামাই এসেছে। কিন্তু মজার কথা হলো শিরিন আক্তার এখন কিছুতেই বসার ঘরে আসবেন না। কারণ উনি জানেন দোষটা দিয়ার। হুটহাট রাগ করে উল্টো পাল্টা বলা দিয়ার স্বভাব। তাই শিরিন আক্তার নিজের রুমে বসেই দিয়াকে জানায় তার মাথা ব্যাথা করছে। সে এখন নিজের রুম থেকে বের হতে পারবে না।অনিক দিয়াকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে দিয়া তাকে সরিয়ে দিয়ে বলে আলগা পিরীত দেখানোর দরকার নেই। সে যেন তার অফিস নিয়ে থাকে। অনিক মুখে কিছু না বলে আবারও দিয়াকে জড়িয়ে ধরে।দিয়া রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলে ছাড়ো আমাকে! তুমি আমাকে আগের মতো আমাকে ভালোবাসও না।অনিক দিয়াকে আরো শক্ত করে ঝাপটে ধরে উল্টো রাগ দেখিয়ে বলে, "দিয়া তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।তারপরও সেই এক টপিক নিয়ে এখন আবার ঝগড়া করতেছো?"
দিয়া অনিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
"তাহলে আবার রাগ দেখাও কেন? "
"তুমি তোমার ইগো নিয়ে বসে আছো।অথচ আমও এত কাজ কি নিজের জন্যই করি?সেই সকাল থেকে আমি একটানা অফিসে কাজ করে অফিস ছুটির পরপরই তোমার কাছে ছুটে এলাম!আর তুমি? একবারও জিজ্ঞেস করছো আমি খেয়েছি কি-না? আমি ঠিক আছি কি-না! "
অনিক কথার ফাঁকে ফাঁকে দিয়ার কপালে ভালোবাসার চিহ্ন একে দেয় কয়েকটা।কী! ব্যাপারটা অদ্ভুত তাই না? আসলেই অদ্ভুত। ওদের যতই ঝগড়া ঝামেলা থাকুক ঝগড়ার মাঝেও ভালোবাসা থাকে। 
" সরি অনিক। চলো ফ্রেশ হয়ে এসো।আম্মু মনে হয় নাস্তা তৈরি করছে। আমি পরিবেশন করছি।"
" হ্যাঁ আমি তো খেতে এসেছি এখানে। "
" উফ তা কখন বললাম আমি? ধুরর তোমার সাথে যে আমি কেমনে সংসার করবো আল্লাহ জানে! "
অনিক দিয়ার মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো,
" কথা কম বলো আমি তোমার হবু বর বলে কথা। সো সব মানতে হবে।এখন একটা মিষ্টি দাও খেয়ে চলে যাই।উঁহু কোন না শুনতে চাই না ।"
দিয়া আর কথা না বাড়িয়ে অনিকের গালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়। 
.
অনিক আর দিয়া একসাথে নাস্তা করছে।দিয়ার মা দুজনকে খাবার পরিবেশন করেছেন।আসলে উনি জানেন দুজনে কথা বললেই ঝামেলা মিটবে। তাই নিজে তখন রান্নাঘরে খাবার তৈরি করতে করতে বলেছেন মাথা ব্যাথা। যদিও শিরিন আক্তারের শরীরও বিশেষ ভালো না।তবুও জামাই বলে কথা! 

.
দিয়া আর অনিক সোডিয়াম আলোর নিচে হাত ধরে হাঁটছে।ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে একটা পার্কে গিয়ে দুজনে বসে। দিয়া অনিকের কাঁধে মাথা রেখে বলে,
" একটা কথা কি জানো? যখন তুমি আমার জীবনে ছিলে না আমার বান্ধবীদের বলতাম যাকে ভালোবাসো তার ব্যস্ততাকেও ভালোবাসতে হয়।অথচ আজ নিজে সেই অবস্থানে এসে বুঝতে পারছি। বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন! আমার ইচ্ছে করে সারা দিন তোমার সাথে সময় কাটাতে। তবে আমি বুঝি তোমারও ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি কতটা দায়িত্বশীল সেটাও আমি জানি। আমাকে ক্ষমা করে দিও।বিকেলে হুদাই ঝামেলা করছি। "
" আরে পাগলি আমি জানি তুমি এসব বলবে হাহা। এই কাহিনী তো নতুন না।আমি তো শুধু বয়ফ্রেন্ড নই আপনার ম্যাডাম। আপনার হাফ বর।এজন্য এসব পাগলামি তো সহ্য করতে হবে। "
" কি বললে আমি পাগলামি করি!"
দিয়া অনিকের বুকে ঘুষি মারতে শুরু করে। অনিক হাসি মুখে সব অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে। আসলে এই মেয়েটার ছেলেমানুষী বড্ড বেশি ভালোলাগে ওর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন